ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Hindusim

Post Top Ad

স্বাগতম

14 April, 2024

ছান্দোগ্য উপনিষদ

14 April 0

 

ছান্দোগ্য উপনিষদ


সামবেদ-তাণ্ড্য শাখার-
ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের অন্তর্গত

শঙ্কর ভাষ্য ও বৈদিক ভাষ্য সহঃ

পরিচয়

ছান্দোগ্য উপনিষৎ সামবেদোক্ত ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের অন্তর্ভূত। কেহ কেহ মনে করেন, ইহা সামবেদীয় কৌসুমীশাখার অন্তর্ভূত, কিন্তু এ বিষয়ে নিঃসন্দিগ্ধ প্রমাণ কিছুই পাওয়া যায় না।

উপনিষীদতি প্রাপ্নোতি ব্রহ্মায়ভাবোহনয়া" এই ব্যুৎপত্তি অনুসারে উপনিষৎশব্দে ব্রহ্মপ্রতিপাদক গ্রন্থকে বুঝায়। এই গ্রন্থে সম্যক্ জ্ঞানলাভ করিতে পারিলে ব্রহ্মায়ৈকা জ্ঞান লাভ হয়। "ছন্দঃ সামবেদং গায়তি ইতি ছন্দোগঃ সামবেদাধ্যায়ী বিপ্রাদিঃ" ছন্দোগ শব্দের অর্থ সামবেদ অধ্যয়নকারী ব্রাহ্মণাদিবর্ণ- ত্রয়, এই ইন্দাগদিগের মন্ত্র-ব্রাহ্মণাত্মক শাস্ত্রবিশেষকে হান্দোগ্য উপনিবৎ বলে সুগভীর। আধ্যাত্মিক ভাবযুক্ত এই উপনিষৎখানি বিদ্বজ্জনগণের নিকট বিশেষরূপ সমাদৃত। ইহার ভাব। যেমন সরল, তেমনই শ্রুতিমধুর, ইহার সমাবেশের সুশৃঙ্খলতা, অনন্যসাধারণ উপদেশপরিপাট্য তত্ত্বজিজ্ঞাসুমাত্রেরই চিত্তকে বিমুগ্ধ ও সমাকৃষ্ট করে। সর্বসাধারণের অনুষ্ঠেয় কর্ণ হইতে আরম্ভ করিয়া মুমুক্ষুদিগের একাত্ত কাম্য ব্রহ্মজ্ঞান লাভের উপায় পর্যন্ত অতি সরলভাষায় সুনিপুণভাবে উপদিষ্ট হওয়ায় এই উপনিষৎ চতুরাশ্রমীর পক্ষেই বিশেষ উপযোগী।

উপনিষৎ-সমূহের মুখ্য উদ্দেপ্তই হইতেছে-সদুপদেশের দ্বারা বিষয়াসক্ত মানবদিগকে ব্রহ্মাভিমুখীন করা, ভোগ পরিণামবিরস, ত্যাগ আপাততঃ বিরস হইলেও পরিণামে যে সুখপ্রদ, ইহাই প্রতিপাদন করিয়া, মানবগণ যাহাতে ভোগবিমুখ হয়, তদ্রূপযোগী উপদেশ দেওয়াই উপনিষদ্বিপ্তার উদ্দেশ। তবে ভোগবিমুখ হইতে হইবে যে, সকলকে সংসার ত্যাগ করিয়া একেবারে বনবাসীই হইতে হইবে, ইহাও উপনিষৎ বলেন নাই, গৃহস্থাশ্রমে বাস করিয়াও অনাসক্ত- ভাবে কৰ্ম্মানুষ্ঠান দ্বারাও মোক্ষলাভ করা যায়, ইহাই বলিয়াছেন। জ্ঞান বা ব্রহ্মবিয়া অপেক্ষা কৰ্ম্ম হীন হইলেও কর্ম্মের হীনতা প্রচার করিয়া কর্মাসক্ত মানবগণকে কর্ম্মে বিমুখ করিবার কোন প্রয়াসও করেন নাই; পরন্ত বৈধ কর্ম্মানুষ্ঠানের দ্বারাই যে ক্রমণ: জানলাভ করা যায়, ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিতে হইলে কি ভাবে ফর্ম্মানুষ্ঠান করা কর্তব্য, এ সমস্ত বিষয়ের উপদেশ উপনিষদ শাস্ত্রে বর্ণিত হইয়াছে॥

প্রথম প্রপাঠকে-

প্রথম খণ্ডে-উদ্‌দীথ উপাসনার বিধি, উদ্‌দীথের স্বরূপ ও প্রণবের প্রশংসা।

দ্বিতীয় খণ্ডে-উদ্‌দীথের আধ্যাত্মিকতাপ্রদর্শন, দেবাসুরসংগ্রামবর্ণনা, দেব ও অনুরশব্দের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা, দেবগণ কর্তৃক নাসিকাদি প্রাণসমূহকে উদ্‌দীখরূপে উপাসনাকরণ, অসুরগণ কর্তৃক তাহাদের পাপবিদ্ধ হওয়া ও তজ্জন্য সেই প্রাণসমূহের দুর্গতি ভোগ। অনন্তর দেবগণ কর্তৃক মূখ্য প্রাণকে উদ্‌দীথরূপে উপাসনাকরণ, মুখ্য প্রাণ কর্তৃক অসুরগণের পরাজয় ও মুখ্য প্রাণের শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদন। অঙ্গিরা বৃহস্পতি ইত্যাদি ঋষিগণ কর্তৃক মুখ্য প্রাণকে উদ্‌দীথরূপে উপাসনাকরণ উদ্‌দীপ্ত উপাসনার ফল।

তৃতীয় খণ্ডে-উদ্‌গীদের আধিদৈবিকত্ব প্রদর্শন। উদ্‌দীথ মনে করিয়া সূর্য্য ব্যান বায়ু ইত্যাদির উপাসনার কর্তব্যতা, ব্যান বায়ুর কার্য্যনির্দেশ, উদ্‌দীথ এই শব্দের প্রত্যেক অক্ষরের অর্থপ্রদর্শন ও ঐ অর্থানুযায়ী উপাসনার ফল প্রদর্শন। কর্ম্মফলের উৎকর্ষসাধনা উপাসনা, সামযাগের অঙ্গস্বরূপ মন্ত্র ও ছন্দঃ প্রভৃতি বিষয়ে দৈবতচিন্তার উপদেশ।

চতুর্থ খণ্ডে-ওঙ্কারোপাসনার কর্তব্যতানির্দেশ, মৃত্যুভয়ে ভীত দেবগণ কর্তৃক বৈদিক কর্মানুষ্ঠান, তাহাতেও মৃত্যুভয় অতিক্রম করিতে না পারায় ওঙ্কারের উপাসনা দ্বারা উক্ত ভয় হইতে অব্যাহতি লাভ। মন্ত্রসমূহের ছন্দ নাম হইবার কারণ প্রদর্শন। ওঙ্কারোপাসনার ফল প্রদর্শন। 

পঞ্চম খণ্ডে-প্রকারান্তস্তরে উদ্‌দীখোপাসনা নির্দেশ। কৌবীতকী ঋষি ও তাঁহার পুত্রের কথোপকথন, প্রণব ও উদ্‌দীখের একত্বনির্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

ষষ্ঠ খণ্ডে-প্রকারান্তরে উদ্‌দীখোপাসনার বিবরণ, পৃথিবী প্রভৃতি মহাভূক্ত সমূহের ঋবেদাদিস্বরূপত্বকথন, ঐরূপ উক্তির হেতুনির্দেশ। চন্দ্র-সূর্য্য-নক্ষত্রা- দিতে সামবেদাদি চিন্তার উপদেশ, আদিত্যের শুরু ও কৃষ্ণ আভার সামস্বকখন। আধিদৈবিক উপাসনার ফল।

সপ্তম খণ্ডে-আধ্যাত্মিক উপাসনা বর্ণনা-প্রসঙ্গে বাক্, মুখ্যপ্রাণ, চক্ষুঃ, ছায়ায়া ইত্যাদিতে ঋক্ সামাদি দৃষ্টিতে চিন্তা করার উপদেশ, ঈশ্বরোপাসকগণের ধনবান হওয়ার বিবরণ, উপাসনার ফলকীর্তন।

অষ্টম খণ্ডে-অন্য ভাবে উদ্‌দীখোপাসনা প্রসঙ্গে উদ্‌দীথাভিজ্ঞ শিলক, চৈকি- তায়ন ও প্রবাহণ এই তিন জনের উদ্‌দীপবিঘ্নাবিষয়ে আলোচনা, শিলক কর্তৃক চৈকিতায়নকে সামাদির গতিবিষয়ক প্রশ্ন ও চৈকিতায়ন কর্তৃক তাহার উত্তর প্রদান। চৈকিতায়ন কর্তৃক শিলককে সামাদির প্রতিষ্ঠাবিষয়ে প্রশ্ন, শিলক কর্তৃক তাহার উত্তর প্রদান।

নবম খণ্ডে-শিলক কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া প্রবাহণের পৃথিবী প্রভৃতি লোকের আশ্রয়বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর প্রদান প্রসঙ্গে আকাশাখ্য ব্রহ্মের সর্ব্ব- লোকাস্রয়ত্বনির্দেশ। পরোবরীয়স্বাদিগুণসম্পন্ন পরমাত্মস্বরূপ উদ্‌দীধোপাসনার ফলনির্দেশ। শৌনক অভিধন্বনামক ঋষি কর্তৃক উদরশাণ্ডিল্য নামক শিষ্যকে উপদেশদানের প্রসঙ্গ।

দশম খণ্ডে-উষস্তি নামক ব্রাহ্মণ ও তাঁহার বালিকা স্ত্রীর আখ্যায়িকা, বজ্রাঘাতে কুরুদেশ দগ্ধ ও তজ্জন্য দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হওয়ায় ক্ষুধার্ত ঐ ব্রাহ্মণের স্ত্রী সমভিব্যাহারে ইভ্যগ্রামে গমন ও সেস্থানে কোন হস্তিপালখে 'পঙ্গু মাহুত) উচ্ছিষ্ট পৰ্য্যুষিত মাষকলায় সিদ্ধ ভক্ষণ, তাহার উচ্ছিষ্ট জল পান করিতে সম্বীকৃতি, সমীপস্থ রাজার যজ্ঞভূমিতে গমন, সেই যজ্ঞস্থলে প্রস্তোতা (প্রস্তাবপাঠক), উদ্‌দাতা (উদ্‌দীৎপাঠক) ও প্রতিহর্তার (প্রতিহারপাঠক) প্রতি প্রশ্ন, প্রস্তোতা প্রভৃতির উত্তরদানে অক্ষমতা ও তৃষ্ণীস্তাবে অবস্থান।

একাদশ খণ্ডে-উক্ত রাজার সহিত উধস্তির কথোপকথন ও রাজা কর্তৃক ঋত্বিক্ পদে বরণ, উষস্তি প্রস্তোতা প্রভৃতিকে যে প্রশ্ন করিয়া তাহার উত্তর পান নাই, সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান; প্রস্তাব, উদ্‌দীথ ও প্রতিহারের অনুগত দেবতাকে না জানিয়া প্রস্তাবাদি পাঠ করিলে তাহার অনিষ্টকর ফল প্রদর্শন।

দ্বাদশ খণ্ডে-শৌব উদ্‌গীথ অর্থাৎ কুকুররূপধারী ঋষিগণ কর্তৃক উদগীথ গান, বক ও মাৰ নামে দুই জন ঋষি উদ্‌দীথ অধ্যয়নের নিমিত্ত নির্জন স্থানে গমন করিয়া সাম গান করিলে, তাঁহাদের সামগানে সন্তুষ্ট হইয়া অনুগ্রহ প্রদর্শনের নিমিত্ত কোন ঋষি খেতবর্ণ কুকুরের রূপ ধারণ করিয়া তাঁহাদের নিকট উপস্থিত হইয়াছিলেন, ও আরও কয়েক জন ঋষি ঐরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুকুররূপ ধারণ করিয়া সেইস্থানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। পরদিন প্রাতঃকালে সকলে সমবেত হইয়া অন্নলাভের নিমিত্ত 'হিং'কার গান করিয়াছিলেন, বক ও গ্লাব কর্তৃক সেই হিষ্কার ত্রয়োদশ খণ্ডে-রখস্তর নামক সামে প্রসিদ্ধ 'হাউকার' 'হাইকার' ইত্যাদি স্তোভনামক সামের উপাসনাবিধি বর্ণনা, পৃথিবী, বায়ু, চন্দ্র, হাউকার, হাইকার," অথকার ইত্যাদি স্তোভাক্ষরসমূহের বিন্যাস বা আরোপ পূর্ব্বক উপাসনা, উক্তপ্রকার উপাসনার ফলনির্দেশ।

দ্বিতীয় প্রপাঠকে-

প্রথম খণ্ডে সমস্ত সামের উপাসনার সাধুত্বনির্দেশ, সাম ও অসাম শব্দের ব্যবহারিক অর্থ, সামের সাধুতা সম্বন্ধে চিন্তা করিয়া উপাসনার ফল।

দ্বিতীয় খণ্ডে -পৃথিব্যাদি লোকদৃষ্টিতে হিষ্কারাদি পঞ্চবিধ সামের উপাসনার কর্তব্যতানির্দেশ। ছ্যুলোকাদিতে হিঙ্কারাদি পঞ্চবিধ সামের উপাসনার কর্তব্যতা- নিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

তৃতীয় খণ্ডে-বৃষ্টিতে পঞ্চবির সামের উপাসনা, পূর্বদিক্ হইতে প্রবাহিত বায়ুতে হিস্কার, মেঘে প্রস্তাব ইত্যাদি দৃষ্টিতে সামোপাসনার কর্তব্যতানিন্দেশ। পঞ্চবিধ সামাক্তির নাম। উক্ত উপাসনার ফল।

চখণ্ডে-বর্ব্ববিধ জলে পঞ্চবিদ সামের উপাসনা, মেঘাদিতে হিঙ্কারাদি দৃষ্ট করিবার উপদেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

পঞ্চম খণ্ডে-বসন্তাদি পঞ্চ ঋতুদৃষ্টিতে হিঙ্কারাদি পঞ্চবিধ সামোপাসনার কর্ত্তব্যতানিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

ষষ্ঠ খণ্ডে-ছাগ-মেবাদি পশুদৃষ্টিতে হিস্কারাদি পঞ্চবিধ সামোপাসনার কর্তব্যতানিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

সপ্তম খণ্ডে-পঞ্চবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণ ও বাগাদি ইন্দ্রিয়দৃষ্টিতে পরোবরীয় স্বাদিগুণবিশিষ্ট হিস্কারাদি পঞ্চবিধ সামোপাসনার কর্তব্যভানির্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

অষ্টম খণ্ডে-সপ্তবির সামের উপাসনা, বাগদৃষ্টিতে হিষ্কারাদি সপ্তবিধ সামো- পাসনার কর্তব্যতানিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

নবম খণ্ডে-আদিত্যদৃষ্টিতে সপ্তবিধ সামের উপাসনার কর্তব্যতানিদ্দেশ, আদিত্যে সামবুদ্ধি স্থাপনের হেতুপ্রদর্শন। উক্ত উপাসনার ফল।

দশম খণ্ডে-সপ্তবিধ সামের মধ্যে মৃত্যুভয়নিবারক পরস্পর সমানাক্ষর- বিশিষ্ট হিঙ্কারাদি সপ্তবিধ সামোপাসনার কর্তব্যতানিন্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

একাদশ খণ্ডে-নামোল্লেখ পূর্ব্বক সপ্তবিধ সামের উপাসনা, মন, বাক্ ইত্যাদি দৃষ্টিতে হিষ্কারাদি সপ্তবিধ সামোপাসনার কর্তব্যতানিদেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

দ্বাদশ খণ্ডে-অগ্নিমম্বনাদিতে যডুবিধ সামের উপাসনা, যজ্ঞীয় অগ্নি প্রথা- পনের নিমিত্ত কাঠঘর্ষণাদিবিষয়ে হিষ্কারাদি ষড়বিধ সামোপাসনার কর্তব্যতা- নির্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

ত্রয়োদশ খণ্ডে-স্ত্রী-পুরুষসংযোগবিষয়ে বড় বিধ সামের উপাসনা, স্ত্রী-পুরুষে

পরস্পর সঙ্গত হইবার বাসনায় পুরুষ কর্তৃক সঙ্কেতাদিবিষয়ে হিষ্কারাদি ষড় বিধ সামোপাসনার কর্তব্যতা নির্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

চতুর্দশ খণ্ডে উদীয়মান সূর্য্য, উদিত সূর্য্য ইত্যাদি দৃষ্টিতে হিস্কারাদি সামো- পাসনার কর্তব্যতানিদেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

পঞ্চদশ খণ্ডে - সজলমেঘের বিভিন্ন অবস্থায় হিষ্কারাদি সামোপাসনার কর্তব্যতানির্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল!

ষোড়শ খণ্ডে- প্রকারান্তরে বসন্তাদি পঞ্চ ঋতুতে হিষ্কারাদি সামোপাসনার কর্তব্যতানিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

সপ্তদশ খণ্ডে-প্রকারান্তরে পৃথিবী অন্তরীক্ষ ইত্যাদি দৃষ্টিতে হিঙ্কারী।মো- পাসনার কর্তব্যতানিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

অষ্টাদশ খণ্ডে-প্রকারান্তরে ছাগ-মেবাদি পশুদৃষ্টিতে হিঙ্কারাদি সামো-পাসনার কর্তাভানির্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

একোনবিংশ খণ্ডে-হজ্ঞাযজ্ঞীয় উপাসনাবিষয়ে লোম 'হক্ ইত্যাদি দৃষ্টিতে হিষ্কারাদি সামোপনার কর্ত্তব্যতানিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

বিংশ খণ্ডে-রাজনাধ্য সামবিষয়ে অগ্নি বাবু ইত্যাদি দৃষ্টিতে হিস্কারাদি সামো- পাসনার কর্তব্যতানিদ্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

একবিংশ খণ্ডে -ত্রয়ী বিদ্যা (বেদবিদ্যা) ইত্যাদি দৃষ্টিতে হিষ্কারাদি সাধো- পাসনার কর্তব্য তানিন্দেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

দ্বাবিংশ খণ্ডে-সামোপাসনা প্রসঙ্গে উদ্ভ্রাতার সঙ্গীতবিদ্যাবিষয়ে উপদেশ; স্বরভেদানুসারে বিশের বিশেষ দেবতাবিষয়ে এঐ সমস্ত সামের প্রয়োগবিষয়ে উপদেশ; দেবগণ, পিতৃগণ, মনুষ্যগণ ও পশুগণের নিমিত্ত সামগান করার উপদেশ; স্বরবর্ণ, উন্নবর্ণ ও স্পর্শবর্ণবিষয়ক উপদেশ। উক্ত উপাসনার ফল।

ত্রয়োবিংশ খণ্ডে-যজ্ঞ অধ্যয়ন দান, তপস্তা ও ব্রহ্মচর্যাশ্রম এই তিন প্রকার ধর্ম্মন্তগুনিরূপণ: অমৃতত্ব লাভ করিতে হইলে বন্নিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন, তাহার নিজগণ। প্রজাপতির লোকাদিবিষয়ে তপা ও তাহার ফলে ত্রয়ীবিদ্যা এবং ব্যাহৃতি প্রভৃতির আবির্ভাব বর্ণন।

চলবে >>
Read More

অথর্ব্বেদ ১৮/৩/১

14 April 0

 বিষয়-নিয়োগ বিধানের উপদেশ-

ঋষি-য়ম,মন্ত্রোক্তদেবতা-ত্রিষ্টুপ্ছন্দঃ-অথর্বাসূক্তম্- পিতৃমেধ সূক্ত।।

ইয়ম্ নারীপতিলোকম্ বৃণানা নি পদ্যত উপ ত্বা মর্ত্য প্রেতম্।
ধর্মপুরাণমনুপালয়ন্তী তস্যৈ প্রজাম্ দ্রবীণম্ চেহ ধেহি।।

পদ০-ইয়ম্। নারী। পতিऽলোকম্। বৃণানা। নি। পদ্যতে। ইপ। ত্বা। মর্ত্য। প্রऽহতম্। ধর্মম্। পুরাণম্। অনুऽপালয়ন্তী। তস্যৈ। প্রऽজাম্। দ্রবিণম্। চ। ইহ। ধেহি।

অথর্ব্বেদ ১৮/৩/১

পদার্থ-( মর্ত্য) হে মনুষ্য! (ইয়ম্) এই ( নারী) নারী ( পতিলোকম্) পতির সংসার [ গৃহাশ্রমের সুখকে] ( বৃণানা) কামনা করে এবং ( পুরাণাম্) পুরানো [ সনাতন ] ( ধর্মম্) ধর্মকে ( অনুপায়ন্তী) নিরন্তর পালন করে ( প্রতম্) মৃত [ পতির ] ( উপ) স্তুতি করে ( ত্বা) তোমাকে ( নিপদ্যতে) প্রাপ্ত হয়ে,(;তস্যৈ) সেই [ স্ত্রীর ] ( প্রজাম্) সন্তান ( চ) এবং ( দ্রবিণম্) বল এখানে ( ধেহি) প্রাপ্ত করবে।।

ভাবার্থ-যদি বিধবা স্ত্রী মৃতপতির গুণগান করে সন্তান উৎপন্ন করতে চায়,ওই মৃতের স্ত্রী পুরুষকে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ করে নিজ কুলের বৃদ্ধির জন্য সন্তান উৎপন্ন করা। একই প্রকার মৃতের স্ত্রী পুরুষ নিজ কুলকে বৃদ্ধির জন্য সন্তান উৎপন্ন করতে বিধবা স্ত্রী দ্বারা বিধিবত্ নিয়োগ করা। এই মন্ত্র মহর্ষিদয়ানন্দকৃত ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা নিয়োগবিষয়ে ব্যাখ্যাত্ আছে।

টিপ্পণী-
১,( ইয়ম্) দৃশ্যমানা বিধবা ( নারী) ঋতোऽঞ্। পা০ ৪/৪/৪৯। নরাচ্চেতে চক্রব্যম্। ইতি তত্রৈব বার্ত্তিক চ। নৃ, নর,অঞ্। শার্ঙ্গরবাদ্যঞোঙীন্। পা০ ৪/১/৭৩। ইতি ঙীন্। নুননরস্য বা ধর্মাচারোऽস্যাম্ সা। স্ত্রী ( পতিলোকম্) পতিগৃহম্। গ্রহাশ্রমসুখম্ ( বৃণানা) বাচ্ছন্তী ( নিপদ্যতে) প্রাপ্রোতি ( উপ) প্রজায়াম্। উপগচ্ছন্তী। স্তুবানা ( ত্বা) ত্বাম্ মৃতস্ত্রীতম্ (;মর্ত্য) হে মনুষ্য (;প্রেতম্) প্র+ইণ্ গতৌ-ক্ত। মৃতম্ পতিম্ ( ধর্মম্) ধারণীয় নিয়মম্ ( পুরাণম্) পুরানঅগ্র নিয়তে। পীঙ্-ড। সনাতনম্ ( অনুপায়ন্তী) নিরন্তরম্ রক্ষন্তী ( তস্যৈ) বিধবাযৈ ( প্রজাম্) সন্তানম্ ( দ্রবিণম্) বলম্-নিঘ০ ২/৯ (:চ) ( ইহ) গ্রহাশ্রমে ( ধেহি) ধারয়।। ( ভাষ্য-পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী)
Read More

তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২/৬

14 April 0

 সোহকাময়ত বহু স্যাং প্রজায়েয়েতি। স তপোহতপ্যত। স তপস্তপ্ত্বা। ইদং সর্বমসৃজত। যদিদং কিন্ঞ্চ। তৎ সৃষ্ট্বা। তদেবানুপ্রাবিশৎ। ( তৈত্তি ২/৬)

পদার্থঃ (সঃ) সেই পরমাত্মা ( অকাময়ত) কামনা করিলেন ( বহু) অনেক প্রকার ( স্যাম্) হইব, ( প্রজায়েয়) উৎপন্ন হইব ( ইতি) এই কথা। ( সঃ) পরমাত্মা ( তপঃ তপ্ত্বা) সৃষ্টি বিষয়ক অালোচেনা করিয়া ( ইদম্) এই ( সর্বম) সমুদয় (যৎ ইদম্ কিম্ চ) এই যাহা কিছু অাছে তৎসমুদয়ই ( অসৃজত) সৃষ্টি করিলেন। ( তৎ) সেই সমস্ত ( সৃষ্ট্বা) সৃষ্টি করিয়া ( তৎ এব) সেই সকলের মধ্যে ( অনুপ্রাবিশৎ) অনুপ্রবেশ করিলেন। সরলার্থঃ সেই পরমাত্মা কামনায় বহু প্রজা( মনুষ্যাদি + অন্যান্যপ্রানী বর্গ) উৎপন্ন হইলেন। অামি উৎপন্ন করিব। তিনি সৃষ্টি বিজ্ঞান বিষয় ও কার্য কারন অবলম্বনে সব কিছু সৃষ্টি করিলেন এবং সৃষ্টির মধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন। ২।। অজামেকাং লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং বহ্বীঃ প্রজাঃ সৃজমানাং সরূপাঃ। অজো হ্যেকো জুষ মানো হনু শেতে জহাত্যেনাং ভুক্তভোগামজোহন্যঃ ( শ্বেতাশ্বর উ ৪/৫) পদার্থঃ ( সঃ) পরমাত্মার ( রূপাঃ) সত্ব, তম,রজ প্রকৃতি ( বহ্বীঃ) অনেক ( প্রজাঃ) সন্তান বা মনুষ্যাদি + অন্যান্যা প্রানীসকল ( সৃজমানাম্) সৃজনকারিনী ( লোহিত শুক্ল কৃষ্ণাম্) রক্ত, শ্বেত ও কৃষ্ণাবর্ন বিশিষ্টা (একাম্) একমাত্র ( অজাম) জন্ম রহিত প্রকৃতিক ও পরমাত্মা ( একঃ হি) কোন ( অজঃ) জন্মরহিত অবিদ্যাগ্রস্থ জীব ( জুষমাণঃ) সেবা পরায়ন হইয়া ( অনুশেতে) ভোগ করে ( অন্যঃ) মুক্ত জীব ( ভুক্ত ভোগাম্) ভোগ করে বিরত হয়েছে ( এমাম্) এই প্রকৃতিকে ( জহাতি) ত্যাগ করে।

সরলার্থঃ প্রকৃতি,জীব এবং পরমাত্মা এই তিন অজ অর্থাৎ 'যাহার কখন ও জন্ম হয় না এবং ইহারা কখনও জন্ম গ্রহন করেন না। অর্থাৎ এই তিন সমগ্র জগতের কারন নাই। অনাদিজীব, এই অনাদি প্রকৃতিকে ভোগ করিতে আবদ্ধ হয় কিন্তু পরমাত্মা ও মুক্ত পুরুষ তাহাতে অাবদ্ধ হন না এবং ভোগ করেন না। সেই পরমাত্মা বহু মনুষ্যাদি সৃজন করেছিলেন।।
অনেকে বলে থাকে যে, শতরূপা ও মনু নাকি প্রথমে সৃষ্টি হয়েছিলেন কিন্তু এ কথা নিত্যান্ত মিথ্যা কথা। উপনিষদ বচনে প্রমানিত হয় যে পরমাত্মা সৃষ্টির প্রারম্ভে এক সাথে বহু প্রজার সৃষ্টি করেন অতএব মনু আর শতরূপার গল্প সত্য নয়।
Read More

শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ ৩/১৯

14 April 0

 অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা পশ্যত্যচক্ষুঃ স শূণোত্যকর্ণঃ।

স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্ ॥শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ-৩/১৯।।

পদার্থঃ (সঃ) সেই পরমাত্মা (অপাণিপাদঃ) হস্ত-পদাদি রহিত হয়েও (গ্রহীতা) নিজের অনন্ত শক্তি দ্বারা সবকিছু গ্রহণ অর্থাৎ ধারণ করেন [এবং] (জবনঃ) সর্বব্যাপক হওয়ার কারণে সর্বাধিক বেগবান (অচক্ষুঃ) চক্ষু-রহিত হয়েও (পশ্যতি) যথাযথ দর্শন করেন (অকর্ণঃ) কর্ণ- রহিত হয়েও (শৃণোতি) সবই শ্রবণ করেন (সঃ) তিনি (বেদ্যং) সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় (বেত্তি) জানেন (চ) অথচ (তস্য) তাঁর (বেত্তা) জ্ঞাতা (ন অস্তি) কেউ নেই। [এজন্য জ্ঞানিগণ] (তম) তাঁকে (অগ্রগ্র্যম) সর্বাগ্রণী (মহান্তম) সর্বাপেক্ষা মহান (পুরুষম) পুরুষ (আহুঃ) বলেন ॥১৯॥

সরলার্থঃ সেই পরমাত্মার হাত নেই, তবুও নিজের অনন্ত শক্তি দ্বারা তিনি সবকিছু গ্রহণ অর্থাৎ ধারণ করেন। তাঁর পা নেই, তবুও তিনি সর্বব্যাপক হওয়ার কারণে সর্বাধিক বেগবান। তাঁর চক্ষু নেই, তবুও তিনি সবকিছু দর্শন করেন। তাঁর কর্ণ নেই, তবুও তিনি সবই শ্রবণ করেন। তিনি সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় জানেন, অথচ তাঁকে কেউ সম্পূর্ণরূপে জানে না। এজন্য জ্ঞানিগণ তাঁকে সর্বাগ্রণী, সর্বাপেক্ষা মহান পুরুষ বলেন ॥১৯॥

ব্যাখ্যাঃ এই শ্রুতিবাক্যে স্পষ্টভাবে পরমাত্মার ইন্দ্রিয়ের প্রতিষেধ করা হয়েছে। পরমেশ্বর চক্ষু-কর্ণাদি জ্ঞানেন্দ্রিয় ও হস্ত-পদাদি কর্মেন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়াই গ্রহণ, দর্শন, শ্রবণাদি কার্য সিদ্ধ করতে পারেন, আর এটিই তাঁর সর্বশক্তিমত্তা। সংসার সাগরে নিমজ্জিত অল্পজ্ঞ মানব সেই সর্বজ্ঞ ব্রহ্মকে জানতে পারে না। কিন্তু বৈরাগ্য-প্রাপ্ত, শ্রদ্ধাবান, ধার্মিক মনুষ্যগণ ব্রহ্মবিদ্যার চর্চা ও ধ্যানাদি যোগাভ্যাস দ্বারা তাঁকে জানতে সমর্থ হন। কিন্তু সেই বাক্যমনাতীত ব্রহ্মকে কেউ পূর্ণরূপে জানতে পারে না (কেন০ ২।৩ দ্রষ্টব্য)। তাই বর্তমান শ্রুতিতে বলা হয়েছে, তাঁর জ্ঞাতা কেউই নেই। এজন্য জ্ঞানিগণ সেই জগদীশ্বরকে সর্বাগ্রণী, সর্বাপেক্ষা মহান পুরুষ বলেন ॥১৯৷

টীকাঃ এই শ্রুতির ব্যাখ্যায় মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন- "পরমেশ্বরের হস্ত নেই, কিন্তু তিনি নিজের শক্তিরূপ হস্ত দ্বারা সমস্ত রচনা এবং গ্রহণ করেন। তাঁর চরণ নেই, কিন্তু তিনি ব্যাপক হওয়ার কারণে সর্বাপেক্ষা অধিক বেগবান। তাঁর চক্ষুগোলক নেই, কিন্তু তিনি সমস্ত যথাবৎ দর্শন করেন। তাঁর শ্রোত্র নেই, তবুও তিনি সকলের কথা শ্রবণ করেন। তাঁর অন্তঃকরণ নেই, কিন্তু তিনি সমস্ত জগৎকে জানেন। তাঁকে সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে, এমন কেউ নেই। সনাতন, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বত্র পূর্ণ হওয়ার কারণে তাঁকে 'পুরুষ' বলা হয়। তিনি ইন্দ্রিয় ও অন্তঃকরণ ব্যতীত সব কর্ম নিজের অনন্ত সামর্থ্য দ্বারা করেন। (সত্যার্থ প্রকাশ, ৭ম সমুল্লাস)” ॥১৯॥
Read More

29 March, 2024

গীতা ৭/৪

29 March 0

ভূমিরাপোऽনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ।

অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।।

গীতা-৭/৪

পদ০-ভূমিঃ।আপঃ। অনলঃ। বায়ুঃ। খম্। মনঃ। বুদ্ধিঃ। এব। চ। অহঙ্কারঃ। ইতি। ইয়ম্। মে। ভিন্না। প্রকৃতিঃ। অষ্টধা।

পদার্থ-( ভূমিঃ) পৃথিবী ( আপঃ) জল ( অনলঃ) অগ্নি ( বায়ুঃ):বায়ু ( খম্) আকাশ ( মনঃ বুদ্ধিঃ) মন বুদ্ধি ( চ) এবং অহঙ্কার ( ইতি) এই ( মে) আমার ( ভিন্না) ভিন্ন-ভিন্ন ( অষ্টধা প্রকৃতি) অট প্রকারের প্রকৃতি।।

ভাষ্য-এখানে প্রকৃতি শব্দের অর্থ "প্রক্রিয়তেऽনয়া ইতি প্রকৃতিঃ" এই ব্যুৎপত্তি উপাদান কারণের অর্থাৎ যার দ্বারা এ জগৎ নির্মিত হয় তার নাম "প্রকৃতি" এখানে সাংখ্য শাস্ত্রের মান্য প্রকৃতিকে ব্যাসজী লিখেছেন যার প্রমাণ হল এই যে- "সত্ত্বরজস্তমসাং সাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ প্রকৃতের্মহান্ মহতোऽহ- কারোऽহংকারাৎপঞ্চতন্মাত্রাণ্যুভয়মিন্দ্রিয়ঃ তন্মাত্রেভ্যঃস্থূ-

লভূতানি পুরুষ ইতি পঞ্চবিংশ-তির্গণঃ=সত্ত্ব,রজ,তম এই তিনটি গুণের সাম্যাবস্থাকে প্রকৃতি বলা হয়, প্রকৃতি থেকে মহান্ মহতত্ত্ব,মহতত্ত্ব থেকে অহংকার, অহংকার থেকে পঞ্চতন্মাত্র= শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, এর থেকে পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় এবং মনকে মিলিয়ে ছয়টি জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং এই পঞ্চতন্মাত্র থেকে পঞ্চ স্থূল ভূত হয় এবং পুরুষ,এই ( পঞ্চবিংশতি) পঁচিশটি গণ যা সাংখ্যা শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করে এখানে এই আট প্রকারের প্রকৃতি গীতায় লেখা হয়েছে এবং ভূমি আদি শব্দ দ্বারা এখানে পঞ্চতন্মাত্রের গ্রহণ রয়েছে। মায়াবাদি লোক এখানে প্রকৃতির অর্থ মায়ার গ্রহণ করেন যা এদের মতে ব্রহ্মের আশ্রয়ে থাকা অজ্ঞানের নাম এবং এই অজ্ঞান এদের মতে জ্ঞান মাত্রের দ্বারা নিবৃত্ত হয়ে যায়, এইজন্য সেগুলিকে কোন ভাব পদার্থ বলা যেতে পারে না। 

যদি গীতায় প্রকৃতি শব্দ এদের মায়ার বাচক হত তবে "য় এবং বেত্তি পুরুষং প্রকৃতি চ গুণৈঃ সহ" গীতা-১৩/১৩ এখানে কেন বলা হল যে,গুণ সহিত প্রকৃতিকে যারা জানে তারা বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। এদের মতে তো সেই মায়ারূপী অজ্ঞানের নাশ দ্বারা বন্ধন রহিত হয়, নাতো অন্য কোন জ্ঞান অথবা অনুষ্ঠান থেকে হয়। শুধুই নয় গীতা-১৩;৫ এ সাংখ্য শাস্ত্রের মান্য উক্ত পঞ্চবিংসতিগণ স্পষ্ট পাওয়া যায়, পুনরায় প্রকৃতি শব্দের অর্থ অদ্বৈতবাদি মায়া কীভাবে করেন ? অস্ত,সেই স্থলে এই কথাকে বিস্তারপূর্বক লেখা হবে যে স্থলে মায়াবাদি লোক নিজ মিথ্যা ভাষ্য দ্বারা এই পঞ্চবিংশতি- গণকে গোপণ রাখে। এখানে এতটাই প্রকৃতি ছিল যে,এই আট প্রকারের প্রকৃতি দ্বারা ব্যাসজীর অভিপ্রায় উপাদান কারণের এবং সেই উপাদান কারণকে যা জীব এবং ব্রহ্ম হতে ভিন্ন মান্য হয়,এইজন্য এর অর্থ মায়ার হতে পারে না। মায়াবাদিদের সিদ্ধান্তের অনুকূল মায়া ব্রহ্ম হতে ভিন্ন কোন বস্তু নয় কিন্তু ব্রহ্মের আশ্রয়ে রহিত এক অজ্ঞানেরই নাম মায়া,এইজন্য গীতায় প্রকৃতি শব্দের অর্থ মায়াবাদিদের মায়ার হতে পারে না।।

( ভাষ্য-শ্রী পণ্ডিত আর্যমুনি পরিব্রাজক)

ভূমিরাপোऽনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ।

অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।। গীতা-৭/৪

পদ০-ভূমিঃ।আপঃ। অনলঃ। বায়ুঃ। খম্। মনঃ। বুদ্ধিঃ। এব। চ। অহঙ্কারঃ। ইতি। ইয়ম্। মে। ভিন্না। প্রকৃতিঃ। অষ্টধা।

পদার্থ-( ভূমিঃ) পৃথিবী ( আপঃ) জল ( অনলঃ) অগ্নি ( বায়ুঃ):বায়ু ( খম্) আকাশ ( মনঃ বুদ্ধিঃ) মন বুদ্ধি ( চ) এবং অহঙ্কার ( ইতি) এই ( মে) আমার ( ভিন্না) ভিন্ন-ভিন্ন ( অষ্টধা প্রকৃতি) অট প্রকারের প্রকৃতি।।

ভাষ্য-এখানে প্রকৃতি শব্দের অর্থ "প্রক্রিয়তেऽনয়া ইতি প্রকৃতিঃ" এই ব্যুৎপত্তি উপাদান কারণের অর্থাৎ যার দ্বারা এ জগৎ নির্মিত হয় তার নাম "প্রকৃতি" এখানে সাংখ্য শাস্ত্রের মান্য প্রকৃতিকে ব্যাসজী লিখেছেন যার প্রমাণ হল এই যে- "সত্ত্বরজস্তমসাং সাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ প্রকৃতের্মহান্ মহতোऽহ- কারোऽহংকারাৎ পঞ্চতন্মাত্রাণ্যুভয়মিন্দ্রিয়ঃ তন্মাত্রেভ্যঃস্থূ- লভূতানি পুরুষ ইতি পঞ্চবিংশ-তির্গণঃ= সত্ত্ব, রজ, তম এই তিনটি গুণের সাম্যাবস্থাকে প্রকৃতি বলা হয়, প্রকৃতি থেকে মহান্ মহতত্ত্ব,মহতত্ত্ব থেকে অহংকার, অহংকার থেকে পঞ্চতন্মাত্র=শব্দ,স্পর্শ,রূপ,রস,এর থেকে পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় এবং মনকে মিলিয়ে ছয়টি জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং এই পঞ্চতন্মাত্র থেকে পঞ্চ স্থূল ভূত হয় এবং পুরুষ,এই ( পঞ্চ বিংশতি ) পঁচিশটি গণ যা সাংখ্যা শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করে এখানে এই আট প্রকারের প্রকৃতি গীতায় লেখা হয়েছে এবং ভূমি আদি শব্দ দ্বারা এখানে পঞ্চতন্মাত্রের গ্রহণ রয়েছে। মায়াবাদি লোক এখানে প্রকৃতির অর্থ মায়ার গ্রহণ করেন যা এদের মতে ব্রহ্মের আশ্রয়ে থাকা অজ্ঞানের নাম এবং এই অজ্ঞান এদের মতে জ্ঞান মাত্রের দ্বারা নিবৃত্ত হয়ে যায়, এইজন্য সেগুলিকে কোন ভাব পদার্থ বলা যেতে পারে না। যদি গীতায় প্রকৃতি শব্দ এদের মায়ার বাচক হত তবে "য় এবং বেত্তি পুরুষং প্রকৃতি চ গুণৈঃ সহ" গীতা-১৩/১৩ এখানে কেন বলা হল যে,গুণ সহিত প্রকৃতিকে যারা জানে তারা বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। এদের মতে তো সেই মায়ারূপী অজ্ঞানের নাশ দ্বারা বন্ধন রহিত হয়, নাতো অন্য কোন জ্ঞান অথবা অনুষ্ঠান থেকে হয়। শুধুই নয় গীতা-১৩;৫ এ সাংখ্য শাস্ত্রের মান্য উক্ত পঞ্চবিংসতিগণ স্পষ্ট পাওয়া যায়, পুনরায় প্রকৃতি শব্দের অর্থ অদ্বৈতবাদি মায়া কীভাবে করেন? অস্ত,সেই স্থলে এই কথাকে বিস্তারপূর্বক লেখা হবে যে স্থলে মায়াবাদি লোক নিজ মিথ্যা ভাষ্য দ্বারা এই পঞ্চবিংশতি- গণকে গোপণ রাখে। এখানে এতটাই প্রকৃতি ছিল যে,এই আট প্রকারের প্রকৃতি দ্বারা ব্যাসজীর অভিপ্রায় উপাদান কারণের এবং সেই উপাদান কারণকে যা জীব এবং ব্রহ্ম হতে ভিন্ন মান্য হয়,এইজন্য এর অর্থ মায়ার হতে পারে না। মায়াবাদিদের সিদ্ধান্তের অনুকূল মায়া ব্রহ্ম হতে ভিন্ন কোন বস্তু নয় কিন্তু ব্রহ্মের আশ্রয়ে রহিত এক অজ্ঞানেরই নাম মায়া,এইজন্য গীতায় প্রকৃতি শব্দের অর্থ মায়াবাদিদের মায়ার হতে পারে না।।

( ভাষ্য-শ্রী পণ্ডিত আর্যমুনি পরিব্রাজক)

Read More

গীতা ১/৪২

29 March 0

 সংকরো নরকায়ৈব কুলম্নানাং কুলস্য চ।

পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ ।।

গীতা-১/৪২

পদ০ – সংকরঃ। নরকায়। এব। কুলম্নানাম্। কুলস্য। চ। পতন্তি। পিতরঃ। হি। এষাম্। লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ ।।
পদার্থ –( সংকর)-বর্ণসংকর (কুলগ্নানাং, কুলস্য, চ)= কুলের নাশকারী- দের এবং কুলের (নরকায়, এব) -নরকগামী হয় এবং (লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ)= যাদের খাদ্য-জলাদির ক্রিয়া দূরীভূত হয়েছে এরূপ (এষাং, কুলয়ানাম্)-এই কুলের নাশকারীরা (পিতরঃ)= পিতৃপুরুষগণ (পতন্তি)-নরকে পতিত হন ।।

ভাষ্য – "'লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ"' শব্দের বহু আধুনিক লোক এই অর্থ করেন যে, উক্ত শব্দের অর্থ মৃতক শ্রাদ্ধের, কিন্তু এই অর্থ এই শব্দ থেকে নির্গত হয় না, কারণ বর্ণসংকরের উৎপত্তি অর্থাৎ ব্যভিচার থেকে উৎপন্ন হওয়া সন্ততি নিজের বৃদ্ধ পুরুষের সম্মান করবে না, এইজন্য "'লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ"' এ পিতরের বিশেষণ দেওয়া হয়েছে এবং এই ভাবকেই পরবর্তী শ্লোকে প্রকট করা হয়েছে যে, বর্ণসংকরকারী দোষ থেকেই জাতি নষ্ট হয়, মৃতকশ্রাদ্ধ না করলে হয় না। যদি পুত্রের মৃতক শ্রাদ্ধের অধিকার না থাকলে জাতি নষ্ট হয় তবে স্বামী শংকরাচার্যাদি যেসব সন্ন্যাসী হয়েছেন তাঁদের পিতৃব্যদেরও নরকবাস হওয়া উচিত, কিন্তু এ স্থলে মৃতক শ্রাদ্ধবাদীদের এই অভিমত নয় যে, মৃতক শ্রাদ্ধের অভাবেই পিতরগণ নরকে পতিত হন ।।

এবং বিষয় এই যে, যদি এখানে পিতৃ শব্দ দ্বারা মৃত পিতরের গ্রহণ হত তবে যারা ধর্মযুদ্ধে নিহত হয়েছে সে কিভাবে নরকে পতিত হবে! যদি মৃত ক শ্রাদ্ধ না করানোই মৃত পিতরদের নরকের হেতু হয় তবে ধর্মযুদ্ধাদির ফল তুচ্ছ হয়ে যাবে, এবং তারপর "ধর্য্যাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছুেয়োন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে" গীতা ২/৩১ ইত্যাদি শ্লোক নিষ্ফল হয়ে যাবে, এর দ্বারা এই সার নির্গত হয় যে, এখানে বর্ণসংকরের উপরেই গ্রন্থের তাৎপর্য, যদি এর সঠিক অর্থ করা হয় যে, '"পিণ্ডোদকক্রিয়াঃ"' দ্বারা তাৎপর্য সেই ক্রিয়ারই যা আধুনিক গ্রন্থকারগণ মৃত পিতরদের নিমিত্ত মেনেছেন তবে এর উত্তর এই হল যে, মৃতক শ্রাদ্ধবাদীদের মতে ক্ষেত্রজ পুত্রেরও পিন্ডদান দেওয়ার অধিকার রয়েছে তবে পিতর কিভাবে নরকে পতিত হবে? যদি এ বলা হয় যে, ক্ষেত্রজের তো অধিকার রয়েছে কিন্তু বর্ণসংকর ক্ষেত্রজের নেই? তবে উত্তর হল এই যে, ব্যাসজির নিয়োগে যেখানে পাণ্ডু আদির উৎপত্তি স্বীকার করা হয়েছে সেখানে ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়দের সম্বন্ধে বর্ণসংকর নয় কেন? অতএব বাস্তবে এর অর্থ হল যে, ব্যভিচার দোষ থেকে যে সন্ততি উৎপন্ন হয় তাকে 'বর্ণসংকর' বলা হয়, এবং সেই সংকরদের পিতর এইজন্য নরকে পতিত হয় যে, তারা নিজ বয়স্কদের যথাযোগ্য সৎকার করে না অর্থাৎ সেই বৃদ্ধ পিতরদের জীবিত অবস্থায় সেবা না হওয়াই তার নরক- পাত।

( ভাষ্য-শ্রী পণ্ডিত আর্যমুনি পরিব্রাজক)
Read More

ব্রহ্মসূত্র ১/১/২০

29 March 0

 ব্রহ্মকে আনন্দময় সিদ্ধ করে এখন পূর্বপ্রকৃত নিরাকার ব্রহ্মের শাস্ত্রে সমন্বয় দর্শানোর জন্য অন্তরাধিকরণের আরম্ভ করা হয়েছে-

অন্তস্তদ্ধর্মোপদেশাত্।।
ব্রহ্মসূত্র-১/১/২০
পদ০-অন্তঃঃ। তদ্ধর্মোপদেশাত্।

পদার্থ-( তদ্ধর্মোপদেশাত্) পরমাত্মসম্বন্ধে ধর্মের উপদেশ পাওয়া যাচ্ছে ( অন্তঃ) আদিত্যের মধ্যে হিরণ্ময় পুরুষ পরমাত্মা।

ভাষ্য-পরমাত্মসম্বন্ধে ধর্ম ব্যতীত অন্য কিছুতে হতে পারে না,এইজন্য হিরণ্ময়াদি পদ পরমেশ্বরের স্বয়ং প্রকাশতাকে বোধন করা হয়েছে,যেমন- "অথ য এপোऽন্তরাদিত্যে হিরণ্ময়ঃ পুরুপো দৃশ্যতে হিরণ্যশমশ্রুর্হিরণ্যকেশা আপ্রণখাত্সর্বএব সুবর্ণঃ" ছা০ ১/৬/৬।

অর্থ-যিনি আদিত্যের মধ্যে হিরণ্ময় পুরুষ তাঁর সুবর্ণ দাড়িযুক্ত, সুবর্বণ কেশযুক্ত, এবং নখ থেকে নেওয়া সম্পূর্ণ সুবর্ণময়, ইত্যাদি বাক্য এই অধিকরণের বিষয় বাক্য, এখানে এই সন্দেহ হয় যে, সূর্যমণ্ডলের মধ্যে বস্তুতঃ আকার যুক্ত কোন দেব-বিশেষ উপাস্য আছেন কিংবা পরমাত্মা ?

এখানে প্রথমপক্ষ পূর্বপক্ষী এবং দ্বাতীয়পক্ষ সিদ্ধান্ধের, পূর্পবক্ষীর কথন হয় যে, "অথাকারচিন্তনম্ দেবানাংপুরুষ বিধাঃস্যুঃ"=দেবতাদের আকার চিন্তনের আরম্ভ করি, সেই দেবতা পুরুষের সমান আকার যুক্ত হই, ইত্যাদি বাক্য দ্বারা বেদ পরিপন্থি সম্বন্ধী শাস্ত্রের মধ্যে দেবতাদের আকার পাওয়া যায়,

এইজন্য বেদসম্বন্ধী শাস্ত্রের মধ্যে দেবতাদের আকার পাওয়া যায়, এইজন্য বেদসম্বন্ধী উপনিষদ বাক্যের মধ্যেও উক্ত আকার পাওয়াতে সূর্যলোকের অধিষ্ঠাতার সাকার বিশেষ উপাস্য ঈশ্বরের নয়, কারণ নিরাকার হওয়াতে হিরণ্যশমস্রু আদি পদের সঙ্গতি হতে পারে না অথবা উক্ত হিরণ্য কেশাদি পদ পাওয়াতে সাকার ব্রহ্মই বেদান্তের বিষয় নিরাকার নয়! এর উত্তর এই যে,
"তস্য ধর্মাঃ তদ্ধর্মাঃ জ্যোতির্ময়ত্বাদয়-স্তদুপদেশাদাদিত্যমণ্ডলে পরমাত্মৈবোপাস্যো নান্যঃ কশ্চিদেববিশেষো নাপিস্বমতিপরিকল্পিতম্ সাকারংব্রহ্মঃ" =আদিত্য পুরুষের মধ্যে পরমাত্মসম্বন্ধী জ্যোতির্ময়ত্বাদি ধর্মকে পাওয়াতে নিরাকার ব্রহ্মই উপাস্য দেব এতে অতিরিক্ত কোনো দেব বিশেষ বা পৌরাণিক সাকার ব্রহ্ম নয় অর্থাৎ হিরণ্ময়াদি বিশেষণ কেবল অলঙ্কার রূপ দ্বারা ঈশ্বরের সর্বব্যাপকতা বোধন করানোর জন্য দেওয়া হয়েছে সাকারতার অভিপ্রায় থেকে নয়, যেমন-স্বা০ শঙ্করাচার্যজী একই সূত্রের ভাষ্যে বর্ণনা করেছেন যে,"নচ পরমেশ্বরস্যরূপবত্তম্ যুক্তমশব্দাস্পর্শসরূপসব্যয়মিতি- শ্রুতেঃ"=পরমেশ্বর রূপযুক্ত হতে পারেন না, কারণ তাঁর স্রুতিবাক্যের মধ্যে শব্দ,স্পর্শ, রূপাদি থেকে রহিত অন্বয় প্রতিপাদন করেছেন, এইজন্য আদিত্য মণ্ডলে নিরাকার ব্রহ্মকে মান্যই সমীচীন।।
( ভাষ্য-মহামহোপাধ্যায় পঃ আর্যমুনি)
Read More

শ্রীরাম

29 March 0

শ্রীরাম


মহাপ্লাবনের পর তিব্বতের দেবলোকে পরিশ্রমী দেবতারা বসবাস করতে থাকেন এবং অন্যান্য অঞ্চল যে সকল স্থান জলমগ্ন ছিলো না সেখানে কিছু মনুষ্য বসবাস শুরু করেন। দেবাভূমিতে যারা উন্নতি করছিলেন ও পরিশ্রমী ছিলেন তাঁরা বাদে যে সমস্ত ভায়েরা পরিশ্রমী ছিলেন না বা উন্নতি করতে পারছিলেন না তাঁরা বৃদ্ধ ব্রহ্মাজীর সাথে পরামর্শের পর তাঁর নির্দেশ মতো দক্ষিনের ছোট বড় দ্বীপ গুলিতে বসবাস করার জন্য দেবলোক ত্যাগ করে, চলে আসেন।

দ্বীপ গুলির রক্ষক এই সকল দেবতাদের বংশধরেরা ছিলেন ! রক্ষক শব্দ পরে বিকৃত হয়ে রাক্ষস অর্থাৎ মানুষরূপী মাংসভুক প্রাণী হয়ে যায়। সেই সময় "রাক্ষস" খারাপ শব্দ মনে করা হতো না কিন্তু হাজার বছর পর বন্য মানুষ দেখে তারাও খারাপ কাজ করতে শুরু করেন এমনকি মাংস খেতে শুরু করে পরে পরে এরা মানুষের মাংসও খাওয়া শুরু করে ফলতঃ তাদের শরীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। ধীরে ধরে তারা সেই দ্বীপগুলিতে কয়েক হাজার বছর বসবাস করে। ততক্ষণে দেবলোকের অন্তর্গত পৃথিবীও শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষ সেখানেও বসবাস শুরু করে এবং কঠোর পরিশ্রমীরা উন্নতি করতে থাকেন। আর্যবর্ত্ত দেশ ছিল সেইসব মানুষের আদি নিবাস, এই আর্যবর্ত্তের এক বিশাল অংশ যা আজ ভারতবর্ষ নামে পরিচিত। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণে অসুরদের বাস ছিল।

এই অসুর বংশের এক রাজা ছিলেন বিদ্যুৎকেশ ও তাঁর রাণী ছিলেন ভোগ-বিলাসে নিমগ্না সালকটদক্টা। রাণী সালকটদক্টা কাউকে পরোয়া করতেন না, তিনি ভোগ-বলাসের জন্য সেবকদের তাঁর সদ্যোজাত পুত্র কে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন, তাঁরা সেই শিশুকে পর্বতের এক অংশে ফেলে আসেন। সেই সময় কৈলাশপতি শঙ্কর ও দেবী পার্বতী নিজেদের বিমানে করে ভ্রমণ করতে করতে বিদ্যুৎকেশের পুত্র কে দেখতে পায়। পার্বতী জী শিশুটিকে তাঁদের নিবাস-স্থান কৈলাসে নিয়ে গিয়ে লালন-পালন করতে থাকেন ও শিশুর নাম "সুকেশ" রাখেন। বিদ্যুৎকেশের পুনঃ পুত্র না হওয়ায় দুঃখী হতে থাকেন, সুকেশ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে একসময় শঙ্কর জী সুকেশকে তাঁর আসল পরিচয় অবগত করিয়ে এক বিমান উপহার দিয়ে তাঁর পিতার কাছে পাঠিয়ে দেন। সুকেশ বলশালী ও বুদ্ধমান এবং শঙ্কর-পার্বতী জী দ্বারা পালিত ও তাঁর নিকট বিমান থাকার কারনে ক্রমশ অহঙ্কার বাড়তে থাকে। সুকেশের তিন পুত্র উৎপন্ন হয় যথা মাল্যবান, মালী ও সুমালী। 

তিন ভাই অত্যন্ত বলশালী তাঁরা ঘোর তপস্যা ও শাস্ত্র অভ্যাস করার কারনে নিজেদের অতিশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি মানতে থাকে এবং এক সময় আসে যখন দেবতা, গন্ধর্ব ও মানব আদি সব এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হতে থাকে। এদের পিতা সুকেশ, শঙ্করজীর খুব প্রিয় থাকার কারনে অন্যরা তিন ভায়ের কেউ বিরোধ করতেন না। বেশ কিছু জন মিলে শঙ্করজীর কাছে সুকেশের সন্তানদের বিষয়ে অবগত করানোর জন্য কৈলাশে গেলেও শঙ্করজী তাদের সাহায্য করতে পারবেন না জানিয়ে দেন কারন সুশেক পার্বতীজীর খুব প্রিয়। শঙ্করজী বলেন তারা যেন নিজেরা পার্বতীজীর নিকট গিয়ে সব কথা জানান।

এদিকে পার্বতী জী যখন জানতে পারেন সুকেশের বিরূদ্ধে সকলে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন তখন তিনি তাদের সাথে দেখা করতে অস্বীকার কারেন। পুনঃ শঙ্করজী সকলকে দেব লোকের রাজা ইন্দ্রের ছোট ভাই শ্রী বিষ্ণুর নিকট যেতে বলেন, দুখীজন সাগরপতি শ্রীবিষ্ণুর নিকট প্রস্থান করেন। 

বিষ্ণু তাঁর পত্নী লক্ষী দেবীর সাথে মহাসাগরের কোন দ্বীপে বসবাস করতেন। সমস্ত বৃত্তান্ত শোনার পর বিষ্ণু রাক্ষসদের ওপর আক্রমণ করার ঘোষণা করেন। ষোষণা শোনার পর কোন প্রতীক্ষা না করেই রাক্ষসরা প্রথমেই বিষ্ণুলোক আক্রমণ করেন। বিষ্ণুজী রাক্ষসদের ওপর দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করতে থাকেন এবং বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়। দিব্যাস্ত্রের প্রয়োগে বিশাল রাক্ষস সেনা গাজর-মুলার মতো কাটা পড়ে মারা যেতে থাকে। সমস্ত রাক্ষসদের সমূলে বিনাশের জন্য বিষ্ণুজী এবার লঙ্কাপুরী যা অজেয় মানা হতো সেখানে আক্রমণ করেন এবং সেখানে সুদর্শন চক্রের আঘাতে মাল্যবান ও মালী মারা যায়।

তাঁদের মৃত্যু দেখে যে কিছু রাক্ষস বেঁচে ছিলো তাঁরা লঙ্কাপুরী ছেড়ে চলে যায় এবং লঙ্কাপুরী জন শুন্য হয়ে যায়। জন শুন্য লঙ্কাপুরীতে দেবরাজ ইন্দ্র মহর্ষি পুলস্ত্যের পৌত্র বৈশ্রবণকে ওখানের লোকপাল নিযুক্ত করেন। বৈশ্রবণ অতি বলবান, তেজময় তথা জ্ঞানবান ছিলেন তিনি লঙ্কাপুরীতে বসবাস করতে থাকেন ও রাজ্য চালনা করতে থাকেন। এই বৈশ্রবণ পরে পরে কুবের নামে বিখ্যাত হয়ে ছিলেন। 

পাতাল লোকে জঙ্গল এবং হিংস্র প্রাণীতে ভর্তি ছিলো বনবাসী সর্বথা নবীন ছিলেন। রাক্ষসরা জানতে না কি খাওয়া সঠিক হবে আর কি খাওয়া অনুচিত হবে ? সুমালী তাঁর পিতার বিমান কে বাচিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। সেই বিমানে করে ঘুরে খোঁজ করে নিয়ে ছিলেন কোথায় ফল-মূল যুক্ত বৃক্ষ বেশী রয়েছে, এবং পান যোগ্য জল আর কোথায় কৃষি উপযুক্ত ভূমি রয়েছে সেখানে সজাতিদের বসতি স্থাপনে সফল হয়ে ছিলেন। সব কিছু থাকা সত্ত্বেও লঙ্কাপুরীর মতো সমৃদ্ধি সেখানে ছিলো না। সুদর্শন চক্রের আগুনে তার পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু রাক্ষস তাদের স্ত্রী এবং পরিবারকে বাঁচাতে ও তাদের নিয়ে যেতে সক্ষম হয়ে ছিলেন।

সুমালী পুনঃ বিবাহ করে এক কন্যা সন্তান প্রাপ্ত হয়। ধীরে ধীরে কিছু রাক্ষস নিজ অবস্থায় দুঃখী হওয়ায় তারা লঙ্কায় গিয়ে বসবাস করতে থাকে। দেবতা ও মনুষ্যষের পক্ষে লঙ্কা বসবাস যোগ্য ছিলো না তাই কুবের তাদের পুনরায় লঙ্কাতে বসবাসের কোন বাধা দিলো না এবং লঙ্কার জন সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এইসময় রাক্ষসদের পুনরায় লঙ্কাতে যেতে দেখে সুমালীর মনে লঙ্কাতে গিয়ে থাকার ইচ্ছা হতে থাকে কিন্তু যে খানে সে একসময় রাজা ছিলো সেখানে সে সাধারন প্রজা হিসেবে থাকতে অনিচ্ছুক ছিলো। কিন্তু মনে এক বিচার আসে যে তার কন্যার বিবাহ যদি লঙ্কা অধিপতি কুবেরের সাথে দিতে পারে তবে সে নিশ্চয় সেই রাজ্যের এক অধিকারী হতে পারে। অতঃ বিমানে তাঁর কন্যাকে নিয়ে লঙ্কা পৌঁছান।

কিন্তু রাজপ্রাসাদে গিয়ে সুমালী জানতে পারেন কুবের বিবাহিত ও তার পত্নী অধিক সুন্দরী। সুমালী তার নিবাস-স্থানে ফিরে চিন্তা করেন যদি কুবেরের পিতার সাথে তার কন্যার বিবাহ দিতে পারেন তবে তার দ্বারা লঙ্কায় অধিকার জমাতে পারবেন। এই বিচার মনে আসায় তিনি বিমানে করে দেবলোকে ঋষি বিশ্রবার (বিশ্বশ্রবা) আশ্রমের সামনে পৌঁছান। অধিক তেজ্বস্বী ঋষিকে এক বৃক্ষের নীচে আসনে স্বাধ্যায় করতে দেখে সুমালী বিমানে ফিরে আসেন এবং তার কন্যা কৈকসীকে তার মনে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কৈকসী (অন্য নাম নিকষা) ঋষিকে দেখার পর তাঁর নিকট গিয়ে উপস্থিত হন এবং ঋষিপুত্র কুবেরের ন্যায় এক সন্তান পেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঋষি কন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে তাকে পত্নীরূপে স্বীকার করে নেন।

মুনি বিশ্রবার প্রথম পত্নী রৌহিণী যিনি কুবেরের মাতা, রৌহিণী বিশ্রবার আশ্রম থেকে কিছু দূরে বাস করতেন এবং বিশ্রবা পুনঃ বিবাহের পর ব্রহ্ম ঋষি বিশ্রবার ঔরসে কৈকসীর গর্ভে চার সন্তান উৎপন্ন হয়। প্রথম সন্তান এক বলশালী বুদ্ধিমান পুত্র, যার উচিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর নাম রাখা হয় "দশগ্রীব"। যিনি পরে রাবণ নামে বিখ্যাত হয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্রের শরীর বিশালাকার হওয়ার কারনে কুম্ভকর্ণ নাম রাখা হয়। তৃতীয় সন্তান এক সুন্দরী কন্যা যার নাম রাখা হয় শূর্পণখা। কৈকসীর চতুর্থ সন্তান বিভীষণ যিনি অধিক সুন্দর ও মধুর স্বভাব যুক্ত এবং ঈশ্বরভক্ত ছিলেন।

বিভীষণ পিতার নিকট সহজেই শাস্ত্রের জ্ঞান প্রাপ্ত হন এবং হয়গ্রীব ও কুম্ভকর্ণ শাস্ত্র অধ্যয়নের চেয়ে খেলাধুলা বেশী পছন্দ করতেন। হয়গ্রীব যখন আঠারো বছরে উপনীত হয় তখন সুমালী তাঁর কন্যার সাথে তাঁদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ কারার জন্য হয়গ্রীব এবং কুম্ভকর্ণকে ব্রহ্মলোকে শিক্ষা দেওয়ার বিচার করতে থাকেন। হয়গ্রীব (রাবণ) এবং কুম্ভকর্ণকে ব্রহ্মলোকে শিক্ষার জন্য মনের দিক থেকে তৈরী করতে থাকেন। রাক্ষসদের সন্তান হওয়ার জন্য বাস্তবে রাবণ যে লঙ্কার রাজা এটা সুমালী দ্বারা বুঝতে পারেন এবং রাজ পদের জন্য অর্থাৎ কুবেরকে পরাস্ত করার জন্য নিজেও ব্রহ্মলোকে শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হন কিন্তু দেবতা ছাড়া অন্য কেউ ব্রহ্মলোকে শিক্ষা লাভ করতে পারতো না, সেই কারনে পিতা বিশ্রবা মুনি দ্বারা ব্রহ্মাজীকে দেওয়া পত্র নিয়ে দুই ভাই ব্রহ্মলোকে শিক্ষা লাভের জন্য পৌঁছেছিলেন। যদিও প্রথমে ব্রহ্মলোকে খুব ঠান্ডা হওয়ার কারনে কুম্ভকর্ণ আসতে আগ্রহ ছিলেন না।

পাঁচ বছর কঠোর শিক্ষা গ্রহণ করায় দুই ভাই যুদ্ধবিদ্যায় নিপুন হয়ে ওঠেন। এই সময়ে দশগ্রীব বেদাদি শাস্ত্রওে জ্ঞান অর্জন করায় ব্রহ্মাজী খুব প্রসন্ন হন, শিক্ষা লাভের পর প্রসংসা পত্র নিয়ে দুই ভাই প্রথমে পিতা মাতার দর্শন করেন পরে নানা সুমালীর কাছে চলে আসেন, সেখানে নানার নিকট লঙ্কার পূর্ণ ইতিহাস জানতে পারেন। সুমালীর পথ নির্দেশ মতো দশগ্রীব (রাবণ) পিতার নিকট গিয়ে বলেন তিনি শিক্ষা প্রাপ্তের পর এখন কোন রাজ্যের রাজা হওয়ার যোগ্য হয়েছেন এবং বড় ভাই কুবেরকে বলতে বলেন যেন রাবণকে লঙ্কাপুরীর ভার দিয়ে দেন। বিশ্রবা শুনে রাবণকে পরামর্শ দেন যেন রাবণ কুবেরের কাছে থেকে রাজকার্যে সহায়তা করেন এবং পরে নিজ যোগ্যতায় কুবেরের চেয়ে অধিক মান-প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করেন।  


     

    

continue>

তথ্যসূত্রঃ পুস্তক "শ্রীরাম", লেখক-গুরদত্ত, বাল্মীকি রামায়ণ 

Read More

শ্বেতাশ্বতর ৩/৫

29 March 0

 এখন পরমাত্মার কল্যাণময় স্বরূপের বর্ণনা করছেন- য়া তে রুদ্র শিবা তনূরঘোরাৎপাপকাশিনী। তয়া নস্তনুবা শন্তময়া গিরিশন্তাভি চাকশীহি॥

শ্বেতাশ্বতর-৩/৫॥
(যজু০ ১৬।২)

পদার্থঃ (রুদ্র) হে দুষ্টদের রোদনকারক পরমাত্মা! তুমি (গিরিশন্ত)১ সত্যোপদেশের বাণী দ্বারা সুখের বিস্তারকারী (তে) তোমার (য়া) যে (অঘোরা) ঘোর উপদ্রব রহিত অর্থাৎ সদা প্রসন্ন (অপাপকাশিনী) সত্য ধর্ম প্রকাশকারী (শিবা) কল্যাণময় (তনূঃ)২ বিস্তৃত স্বরূপ (তয়া) সেই (শন্তময়া) অত্যন্ত শান্তিপ্রদ (তনুবা) বিস্তৃত স্বরূপ দ্বারা (নঃ) আমাদের (অভি চাকশীহি) অবলোকন করো অর্থাৎ আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি দান করো ॥

সরলার্থঃ- হে পরমাত্মা! তুমি সত্যোপদেশের বাণী দ্বারা সুখের বিস্তারকারী। তোমার যে সত্য ধর্ম প্রকাশকারী, কল্যাণময়, প্রসন্ন, বিস্তৃত স্বরূপ; সেই অত্যন্ত শান্তিপ্রদ বিস্তৃত স্বরূপ দ্বারা আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি দান করো ॥

ব্যাখ্যাঃ পরমাত্মা মানুষদের সুখ প্রদানের জন্য বেদবাণী দ্বারা জ্ঞান দান করেছেন, যাতে আমাদের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়। তিনি ধার্মিকদের রক্ষার জন্য সর্বদা দুষ্টদের দণ্ড দিয়ে রোদন করান, এজন্য তিনি রুদ্র। নির্দোষ পুণ্যবান উপাসককে তিনি সর্বদা সুখ প্রদান করেন, কেননা স্বরূপত তিনি সুখস্বরূপ ও নিষ্কলুষ। যেমন সূর্যোদয়ের সময় সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে যায়, তেমনই পরমাত্মার শুদ্ধ স্বরূপের শরণাগত হলে হৃদয়ের সমস্ত পাপপ্রবৃত্তি সমূহ নষ্ট হয়ে যায়। পরমাত্মা যেন নিজের সেই অত্যন্ত কল্যাণময় সুখপ্রদ স্বরূপ দ্বারা আমাদের কৃপা করেন অর্থাৎ আমাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান দ্বারা সংযুক্ত করেন, যাতে আমাদের জাগতিক ও পারমার্থিক সুখ লাভ হয় ॥

>টীকাঃ (১) 'গিরা' শব্দের অর্থ, বাণী অথবা স্তুতি। যথা- 'গীরিতি বাঙ্গামসু পঠিতম্' (নিঘন্টু ১১), গির স্বতয়ো গৃণাতে' (নিরুক্ত ১।১০), 'গিরা গীত্যা স্তত্যা' (নিরুক্ত ৬।২৪), 'বাশ্বৈ গী' (শত০ ব্রা০ ৭।২।২৫)। এছাড়া 'পিরি বাচি স্থিতঃ শং তলোজীতে বা" ( মহীধর)। সুতরাং "য়ো গিরিণা সত্যোপদেশেন শং সুখং তলোতি স গিরিশন্ত পরমেশ্বরঃ" যিনি সত্যোপদেশরূপ বাণী দ্বারা সুখের প্রেরণা দান করেন, সেই পরমেশ্বরই গিরিশল্পা।

(২) শ্রুতিতে স্তনু' শব্দের দ্বারা ঈশ্বরের দেহধারী হওয়ার শঙ্কা উৎপন্ন হতে পারে। কিন্তু বেদ ও উপনিষদ যাঁকে 'অকায়ম্', 'অশরীরম্' বলে ঘোষণা করেছে, তাঁর শরীরের কল্পনা কীভাবে করা যেতে পারে? 'তনু বিশ্বারে (তনা০) ধাতোর্লোটি রূপাণি। 'উতশ্চ প্রত্যয়াচ্ছন্দো বা বচনম্' অষ্টা০ ৬।৪।১০৬ [মহাভাস্যোক্ত পাঠ) সূত্রেল ছন্দসি হর্লোপে বিকল্প।” পাণিনীয় ধাতুপাঠ- ১৪৬৪ সূত্রানুসারে, 'তনু বিস্তারে' অর্থাৎ তন্ (বিস্তার করা).. তনু। শতপথ ব্রাহ্মণ অনুসারে, "আত্মা বৈ তনু" (শত০ ব্রা০ ৬/৭।২।৬) অর্থাৎ পরমাত্মার বিস্তৃত স্বরূপ।

য়া তে রুদো শিবা তনূরঘোরাऽপাপকাশিনী।
তয়া নস্তনুবা শন্তময়া গিরিশন্তাভিচাকশীহি।।
শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ-৩/৫

পদার্থ-( রুদ্র) হে রুদ্র দেব! ( তে) তোমার ( যা) যে ( অঘোরা) সৌম্য ( অপাকাশিনী) পাপকে দূরকারী ( শিব) কল্যাণকারী ( তনূঃ) স্বরূপ ( গিরিশন্ত) সকলের হৃদয়রূপী গুহায় বিরাজমান ( তথা) সেই ( শান্তময়া) শান্তি দানকারী ( তনুবা) দিব্য স্বরূপ দ্বারা ( অভিবাচকশীহি) আমাদের হৃদয়কে প্রকাশিত করো।

ব্যাখ্যা-এই এবং পরের দুটি মন্ত্র যজুর্বেদ ১৬ অধ্যায় ২,৩ থেকে এসেছে এগুলিতে বিদ্বানদের বেদের জ্ঞাতা তথা পরমাত্মা নিকট ভক্ত প্রার্থনা করে। হে রুদ্র! দুষ্টোকে রুদন- কারী,সত্যকে সুখ দানকারী তোমার যে সৌস্য কল্যাণকারী তথা যাঁর স্বরণে পাপ ও মন্দের নাশ হয়ে যায় এমনি গিরিশন্ত! গিরৈ স্থিত্বা শম্ সুখ অর্থাৎ যেমন শক্তি পর্বতের অভ্যন্তরে বা যে প্রত্যকের হৃদয়রূপী গুহায় স্থিত শান্ত- সচ্চিদানন্দন স্বরূপ সেই নীতি থেকে সুখের বিস্তারকারী ৪্রভু অভিচাকশীহি অভি-পশ্য-আমাদের-আমাদের দেখো অর্থাৎ আমাদেরও কল্যাণকারী পথে চলতে কৃপা করো।।
( ভাষ্য-বিশ্বম্ভরদেব শাস্ত্রী)
Read More

শ্বেতাশ্বতর ২/১৬

29 March 0

এষ হ দেবঃ প্রদিশোহনু সর্বাঃ পূর্বো হ জাতঃ স উ গর্ভে অন্তঃ।

স এব জাতঃ স জনিষ্যমাণঃ প্রত্যঙ্ জনাংস্তিষ্ঠতি সর্বতোমুখঃ ॥

শ্বেতাশ্বতর-২/১৬।
(যজু০ ৩২।৪)
পদার্থঃ হে মনুষ্য! (এষঃ) এই (হ) প্রসিদ্ধ (দেবঃ) পরমাত্মদেব (সর্বাঃ) সকল (প্রদিশঃ) দিশা-উপদিশা, অর্থাৎ সর্বদিকে (অনু) অনুকূলতা দ্বারা ব্যাপ্ত হয়ে আছেন (পূর্বঃ) পূর্ব কল্পের সৃষ্টিতে (সঃ উ) তিনিই (গর্ভে) [সকলের] অন্তঃকরণের (অন্তঃ) মধ্যে (হ) নিশ্চিতরূপে (জাতঃ) প্রকট হয়েছেন (সঃ এব) তিনিই (জাতঃ) সৃষ্টিকে নির্মাণ করে প্রকট হয়েছেন [এবং] (সঃ) তিনি (জনিষ্যমাণঃ) ভবিষ্যৎ কল্পের সৃষ্টিতেও প্রকট হবেন। [তিনি] (সর্বতোমুখঃ) সর্বত্র মুখ- বিশিষ্ট [সকলের অন্তর্যামীরূপে উপদেষ্টা] (প্রত্যঙ্) প্রত্যেক (জনান) জীবের মধ্যে (তিষ্ঠতি) অবস্থিত ॥১৬॥

সরলার্থঃ হে মনুষ্য! এই প্রসিদ্ধ পরমাত্মদেব সকল সর্বদিকে অনুকূলতা দ্বারা ব্যাপ্ত হয়ে আছেন। পূর্ব কল্পের সৃষ্টিতে তিনিই সকলের অন্তঃকরণের মধ্যে নিশ্চিতরূপে প্রকট হয়েছেন। তিনিই সৃষ্টিকে নির্মাণ করে প্রকট হয়েছেন এবং ভবিষ্যৎ কল্পের সৃষ্টিতেও প্রকট হবেন। তিনি সর্বত্র মুখ-বিশিষ্ট (সকলের অন্তর্যামীরূপে উপদেষ্টা) এবং প্রত্যেক জীবের মধ্যে অবস্থিত।১৬॥

ব্যাখ্যাঃ প্রত্যেক সৃষ্টির শুরুতে পরমাত্মা জগৎকে রচনা করে সেই সৃষ্টিতে প্রকট হন। মনু এই বিষয়ে বলেছেন- “ততঃ স্বয়ম্ভূর্ভগবানব্যক্তো ব্যঞ্জয়য়িদম্। মহাভূতাদিবৃত্তৌজাঃ প্রাদুবাসীয় ডমেনদঃ।। (মনুস্মৃতি ১।৬)” অর্থাৎ 'তম'-রূপ প্রকৃতির প্রেরক স্বয়ম্ভূ পরমাত্মাই অগ্নি, বায়ু আকাশাদি মহাভূত সমূহের উৎপাদক। তিনি এই সম্পূর্ণ জগৎকে ব্যক্ত অবস্থায় এনে নিজেই সৃষ্টিতে প্রকট (প্রকাশিত) হলেন। পরমাত্মার প্রকট হবার অভিপ্রায় হলো, কার্যরূপ জগৎকে দেখেই এর কর্তা অর্থাৎ পরমাত্মার অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুভব হয়। এজন্য জগতের প্রকাশাবস্থাই পরমাত্মার প্রকটিত অবস্থা এবং জগতের প্রলয়ই পরমাত্মার অপ্রকট অবস্থা। এভাবে পরমাত্মা জগৎকে উৎপন্ন করার পর স্বয়ং প্রকাশিত হয়ে, সকল দিশাতে পরিব্যাপ্ত আছেন। তিনি শুধু এই জগতেই নয়, বরং সকল প্রাণীর হৃদয়াকাশেও ব্যাপ্ত হয়ে অন্তর্যামীরূপে বিদ্যমান। তিনি চক্ষু-কর্ণাদি জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং হস্ত-পদাদি কর্মেন্দ্রিয়ের সহায়তা ছাড়াই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়াদি কার্য করছেন এবং সকল প্রাণীর হৃদয়ে স্থিত আছেন। তিনি কল্পের প্রারম্ভে সৃষ্টি রচনা করে এই সৃষ্টিতে যেমন প্রকট হয়েছেন, তেমনই ভবিষ্যৎ কল্পেও প্রকট হবেন। তিনি কেবল ধ্যানশীল ব্যক্তির দ্বারাই জানার যোগ্য, অন্য কারো দ্বারা নয় ॥১৬॥
Read More

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ছান্দোগ্য উপনিষদ

  সামবেদ-তাণ্ড্য শাখার- ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের অন্তর্গত শঙ্কর ভাষ্য ও বৈদিক ভাষ্য সহঃ পরিচয় ছান্দোগ্য উপনিষৎ সামবেদোক্ত ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের অ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ