ঊর্জা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

03 April, 2023

ঊর্জা

 ঊর্জার অনেক বিভিন্ন রূপ যেমন - স্থিতিজ ঊর্জা, গতিজ ঊর্জা, বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ঊর্জা, ডার্ক এনার্জি, ভ্যাক্যুম এনার্জি, ধ্বনি, ঊষ্মা আদি। বৈদিক বিজ্ঞানে বল এবং প্রাণের সঙ্গে যুক্ত পদার্থকেই ঊর্জা বলে। বলের কারণে পদার্থ একে-অপরের দিকে গতিশীল হয়, বিশেষ করে আকর্ষণ বলের কারণে এবং প্রতিকর্ষণ বলের কারণে একে-অপরের থেকে দূরেও যায়। বল হচ্ছে সেই গুণ, যা কোনো পদার্থকে ধারণ ও পোষণ করে এবং বল কোনো পদার্থের ভিতরে আত্মারূপ হয়ে বিচরণ করে।

ঊর্জা

এইভাবে ঊর্জা হচ্ছে সেই পদার্থ, যার কারণে বিভিন্ন পদার্থ ধারণ করে বা গতি করে থাকে। একই সঙ্গে ঊর্জার কারণেই পদার্থের অস্তিত্ব স্থির বা সার্থক থাকে। এই ঊর্জা মূলত চেতন তত্ত্বের দ্বারা প্রকৃতিরূপী জড় পদার্থের মধ্যে উৎপন্ন হয়। জড় জগতে এটা "ওম্" রশ্মি ও মনস্তত্ত্বের রূপে উৎপন্ন হয়। তার পশ্চাৎ প্রাণ ও ছন্দ বা মরুত্ আদি রশ্মির রূপে বৈদিক স্বরূপের ঊর্জা উৎপন্ন হয়।
স্থিতিজ ঊর্জাঃ________ প্রত্যেক কণা বা পিণ্ড বিভিন্ন ছন্দ, মরুত্ বা প্রাণ রশ্মির মিলন দ্বারা উৎপন্ন হয় তথা সেই স্বরূপে সেটা বিদ্যমান থাকে, এমনকি সেটা গতিশীল হোক বা স্থির হোক। তারমধ্যে এই রশ্মিগুলো সংঘর্ষ রূপে বিদ্যমান থাকে। এদের প্রভাবে সেই কণা, তরঙ্গাণু বা পিণ্ডের কোনো অস্তিত্ব নেই। সেই কণা বা পিণ্ডকে সূত্রাত্মা বায়ু ও বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলো সবদিক থেকে আবৃত্ত করে থাকে অথবা এই রশ্মিগুলোই প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মিগুলোকে ঘনীভূত করে সেই কণা বা পিণ্ডকে উৎপন্ন করার জন্য উত্তরদায়ী হয়। যেকোনো কণা বা পিণ্ড সর্বদা সেই স্থিতিতে থাকতে চায়, যারমধ্যে রশ্মির মাঝে নিম্নতম পারস্পরিক ক্রিয়া বা চাপ থাকবে।
বিরাম অবস্থাতে কোনো কণা পিণ্ডের সবদিকে প্রাণ ও অপান রশ্মিগুলোর বিদ্যমানতা থাকে, যাদের মধ্যে অপান রশ্মিগুলো তার ভিতরের দিকে এবং প্রাণ রশ্মিগুলো বাইরের দিকে স্পন্দিত হতে থাকে। যখন সেই কণা বা পিণ্ডের উপর কোনো বহিরাগত বল লাগানো হয়, সেই সময় বলপ্রয়োগকারী কারক সেই পিণ্ডের মধ্যে ঊর্জার সঞ্চরণ করে। এই ঊর্জা সেই কণা বা পিণ্ডের মধ্যে সঞ্চিত হয়ে তারমধ্যে বিদ্যমান প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মির বিন্যাসকে প্রভাবিত ও পরিবর্তিত করে। যখন আমরা পাথরকে হাত থেকে নিচে ফেলে দিই, তখন পৃথিবীর গুরুত্বাকর্ষণ বল তাকে নিচের দিকে আকৃষ্ট করতে থাকে অর্থাৎ সেই পিণ্ডের উপর বল কাজ করতে থাকে। এরফলে সেই পিণ্ডের ভিতরে ও বাইরের রশ্মি বিন্যাস পুনঃ প্রভাবিত ও পরিবর্তিত হতে থাকে। এরফলে তার স্থিতিজ ঊর্জা গতিজ ঊর্জাতে পরিবর্তিত হতে থাকে।
গতিজ ঊর্জাঃ_______ যখন পাথরকে আমরা নিচে ফেলে দিই অথবা কোনো পাথরকে আমরা ছুড়ে ফেলি, সেই সময় সেই পাথরের উপর পৃথিবীর গুরুত্বাকর্ষণ বল অথবা পৃথিবীর গুরুত্ব বলের সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের প্রক্ষেপক বলও কাজ করে। এরফলে সেই পাথরের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ছন্দ ও প্রাণাদি রশ্মির বিন্যাস পরিবর্তিত হতে থাকে।
ধ্বনি ঊর্জাঃ_______ বর্তমান বিজ্ঞান বাণীর বৈখরী রূপকেই ধ্বনি ঊর্জার নাম দেয়। বৈদিক বিজ্ঞানের অনুসারে যেকোনো ধ্বনি পরা, পশ্যন্তী আর মধ্যমার স্তর দিয়ে যাওয়া বৈখরী অবস্থাকে প্রাপ্ত করে।
বৈদিক বিজ্ঞানের মান্যতা হল আমাদের স্বরযন্ত্র মধ্যমা ছন্দ রশ্মিগুলোকে বৈখরীতে পরিবর্তিত করে বাইরে নির্গত করে। সেই ছন্দ রশ্মিগুলো বায়ুমণ্ডল অথবা কোনো অন্য পদার্থ রূপী মাধ্যমে বিদ্যমান বিভিন্ন ছন্দ রশ্মির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলে চাপ উৎপন্ন করে। এই চাপের গতিকেই বর্তমান বিজ্ঞান ধ্বনি তরঙ্গ বলে। যখন পদার্থ ঘন হবে, তখন তারমধ্যে ছন্দ রশ্মির ঘনত্বের কারণে চাপ ক্ষেত্র অধিক তৈরি হয়ে যাবে, যার ফলে তাদের গতি অধিক প্রতিত হবে অর্থাৎ ধ্বনি তরঙ্গের গতি অধিক হবে। যখন নির্বাত (vacuum) হবে, তখন তারমধ্যে ছন্দ রশ্মিগুলো নির্বাতের মধ্যে অবস্থিত বিরলাবস্থায় বিদ্যমান প্রাণ ও ছন্দাদি রশ্মির মধ্যে সেই চাপ উৎপন্ন করতে পারবে না, যা আমাদের কান দ্বারা শোনা যেতে পারে। এর কারণ এই হচ্ছে যে আমাদের কান রশ্মির কম্পনগুলোকে গ্রহণ করতে পারে না, অথচ অণুর কম্পনের অনুভব করতে সক্ষম। এর ফলে আমাদের এই ভ্রম হয় যে ধ্বনির জন্য কোনো পদার্থ রূপী মাধ্যমের হওয়াটা অনিবার্য। বস্তুতঃ এটা আমাদের কানের শোনার ক্ষমতার একটা সীমার কারণে হয়, বাস্তবে এমনটা হয় না। এখানে এটাও মনে রাখা উচিত যে ধ্বনি ঊর্জা অর্থাৎ বৈখরী বাণী বিনা মাধ্যমে গমন করতে পারে না। তার জন্য দৃঢ়, দ্রব বা গ্যাস কিছু না কিছু পদার্থ মাধ্যমের রূপে হওয়াটা আবশ্যক, কিন্তু শব্দ আকাশের গুণ মানা হয়েছে, এই কারণে বাণীকে এই স্থূল মাধ্যমের প্রত্যাশা নয়, বরং তার স্থানই হচ্ছে আকাশ। আর এই কারণে পশ্যন্তী ও মধ্যমা বাণীর গমন আকাশও হয়, এটা মানা উচিত। তবে হ্যাঁ, বৈখরীর গমন হয় না।
ভ্যাক্যুম ঊর্জাঃ____________সম্পূর্ণ আকাশের মধ্যে সূত্রাত্মা বায়ু এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রাণ, মরুত্ ও ছন্দ রশ্মির মিশ্রণ ভরা থাকে। রশ্মির এই মিশ্রণই হল ভ্যাক্যুম ঊর্জার রূপ। দুই সমন্বিত পদার্থ নিকটে আসলে পরে তাদের মাঝে অবস্থিত ভ্যাক্যুম ঊর্জা থেকে ফিল্ড কণার উৎপত্তি হয়। দুই পদার্থ থেকে নির্গত প্রাণ, বিশেষ করে ধনঞ্জয় ও মিরুত্ রশ্মিগুলো ভ্যাক্যুম ঊর্জার রূপে বিদ্যমান প্রাণ, মরুত্ ও গায়ত্রী আদি ছন্দ রশ্মির মিলন থেকে মধ্যস্থ কণাকে উৎপন্ন করে। সেই কণা কাল্পনিক হয় না, যেমনটা বর্তমান বিজ্ঞান মনে করে, তবে তার আয়ু অত্যল্প হয়, এটা সত্য।
মনে রাখবেন, প্রাণ ও মরুত্ এবং প্রাণ ও ছন্দের মিথুনই হচ্ছে বল ও ঊর্জার রূপa, একাকী কোনো রশ্মি ভ্যাক্যুম ঊর্জার রূপ হতে পারে না। এই ঊর্জা সম্পূর্ণ আকাশকে একরস রূপে ভরে থাকে। একে ভ্যাক্যুম ঊর্জা এই কারণে বলা হয়, কারণ এটা ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে সম্পূর্ণ রিক্ত স্থানকে ভরে থাকে। সামান্য রূপে এরমধ্যে কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না, কিন্তু যখনই দুই কণা বা পিণ্ডের মাঝে আকর্ষণ ও প্রতিকর্ষণ বলকে উৎপন্ন করতে হয় অর্থাৎ যখনই সেই দুটো পদার্থ পরস্পর নিকটে আসে, তখনই তাদের মাঝে বিদ্যমান ভ্যাক্যুম ঊর্জার মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি হতে থাকে। যদি এই হ্রাস-বৃদ্ধি না হয়, তাহলে আকর্ষণ ও প্রতিকর্ষণ বল আর মধ্যস্থ কণা উৎপন্নই হবে না।
ডার্ক ঊর্জাঃ__________এর বিষয়ে অসুর ঊর্জাতে লেখা আছে। তবে হ্যাঁ, এটা নিশ্চিত যে ব্রহ্মাণ্ডের বিস্তার ও মহাবিস্ফোরণ দিয়ে সৃষ্টির সূচনাকারক কোনো ডার্ক ঊর্জা এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে না তো কখনও বিদ্যমান ছিল আর না এখন আছে। এই সৃষ্টিতে পঞ্চমহাভূত পদার্থের সঙ্গে-সঙ্গে কিছু এরকম পদার্থও বড়ো মাত্রায় উৎপন্ন হয়, যা প্রায়শঃ অপ্রকাশিতই থাকে তথা যারমধ্যে প্রতিকর্ষণ, প্রক্ষেপণ আদি বলের প্রাধান্য থাকে। এই পদার্থকে সমস্ত রূপে অসুর নামে জানা যায়। এই পদার্থ প্রক্ষেপক ও প্রতিকর্ষণ বল দ্বারা যুক্ত হওয়ার পরেও অতি নিম্ন মাত্রায় আকর্ষণের ভাবও রাখে। এই আকর্ষণের ভাব স্বয়ংয়ের প্রতি অর্থাৎ অসুর পরমাণুগুলোর একে-অপরের প্রতি অবশ্যই হয়, তা না হলে এটা পদার্থ রূপে কখনও বিদ্যমান হতো না, বরং সম্পূর্ণরূপে ছড়িয়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়ে যেত। দুই সূক্ষ্ম কণা থেকে শুরু করে বিশাল লোক পর্যন্তর মাঝে সংযোগের সময়ে এই ঊর্জা বাধক হওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু দৃশ্য ঊর্জার প্রহারে এটার চেষ্টা বিফল হয়ে যায়, তবুও কণা বা লোকের পারস্পরিক সংঘাতের মধ্যেও এই সূক্ষ্ম ঊর্জা তাদের মাঝে একটা অন্তরাল (অবকাশ) বানিয়ে রাখতে সহায়ক হয়। যদি এরকমটা না হতো, তাহলে সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড একটা ঘনতম সংঘাতকে প্রাপ্ত করে নিম্নতম আয়তনকে প্রাপ্ত করে নিতো। এই পদার্থের অন্য গুণ নিম্নানুসারে হয় -
1. দৃশ্য এবং অদৃশ্য দুই প্রকারের পদার্থ একই উপাদান পদার্থ থেকে উৎপন্ন হয়।
2. মনস্ তত্ত্ব এবং বাক্ তত্ত্ব থেকে উৎপন্ন অসুর পদার্থ অন্ধকার যুক্ত থাকে।
3. অসুর পদার্থে মনস্তত্ত্ব অতিরিক্ত থাকে, কিন্তু সেই মনস্তত্ত্বের ভিতরে "ওম্" রশ্মির দেব পদার্থের তুলনায় নিম্ন থাকে, এই কারণে এই পদার্থ দেব পদার্থের তুলনায় প্রকাশহীন হয়।
4. সৃষ্টির প্রত্যেক কর্মের মধ্যে আকর্ষণ ও ধারণ বলের সঙ্গে-সঙ্গে প্রতিকর্ষণ ও প্রক্ষেপণ বলও মূলত সক্রিয় থাকে। কোথাও-কোথাও এই দুই বলের সংঘর্ষ হয়, তো কোথাও-কোথাও দুই পদার্থ মিলিত হয়ে সৃষ্টি রচনাতে নিজের-নিজের ভূমিকাও সঙ্গে-সঙ্গে পালন করে। কেবল আকর্ষণ ও ধারণ বলেরই আধারে সৃষ্টির রচনা কখনও সম্ভব নয়। এই সৃষ্টিতে কখনও দুই বা দুইয়ের অধিক পদার্থ (লোক, কণা বা রশ্মি আদি) যেকোনো প্রবলতম আকর্ষণ বলের প্রভাবে পূর্ণতঃ মিলিত হয়ে এক হতে পারবে না। এমনকি তারা পরস্পর সরাসরি স্পর্শও করতে পারে না, বরং তাদের মাঝে কিছু না কিছু অবকাশ অবশ্যই থাকে। একই সঙ্গে এই সৃষ্টিতে ছেদন, ভেদন, সংমিশ্রণ এবং বিয়োজনের ক্রমও সর্বত্র চলতে থাকে। এই ক্রমের মধ্যে দেব ও অসুর দুই প্রকারেরই পদার্থের অবদান থাকে। অসুর পদার্থ নিজের প্রতিকর্ষণ বলের প্রভাবে বিভিন্ন লোকের মাঝে সঠিক অবকাশ বানিয়ে রাখতে সহযোগী হয়ে তাদের ধারণ বা স্থায়ীত্ব প্রদান করতেও সহযোগী হয়। দেব এবং অসুর পদার্থের মধ্যে দেব পদার্থের উৎপত্তি আগে তথা অসুর পদার্থের উৎপত্তি তার পশ্চাৎ হয়।
5. এই পদার্থ হচ্ছে অপ্রকাশিত বায়ু রূপ, যা অপবাদ পরিস্থিতিকে ছাড়া কখনও প্রকাশিত অবস্থাকে প্রাপ্ত করতে পারে না।
6. "ওম্" রশ্মিবিহীন মনস্তত্ত্বও হচ্ছে অসুর তত্ত্বের রূপ।
7. এই পদার্থের মধ্যে আসুরী ছন্দ রশ্মি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের ছন্দ রশ্মি বিদ্যমান থাকে না, বরং কেবল প্রাণ রশ্মিগুলোই বিদ্যমান থাকে।
8. যে ছন্দ রশ্মিগুলো মনস্তত্ত্ব দ্বারা প্রেরিত আর সংযুক্ত থাকে, তারাই দৃশ্য পদার্থের অঙ্গ হয়ে সৃষ্টি প্রক্রিয়াতে ভাগ নিতে পারে। এর বিপরীত যে ছন্দ রশ্মিগুলো মনের দ্বারা প্রেরিত হয় না, তারা অপ্রকাশিত ঊর্জা বা পদার্থের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
9. সৃষ্টি প্রক্রিয়াতে কিছু ছন্দ রশ্মির কিছু সার ভাগ আকাশের মধ্যে রষে যায়। তারপর সেই সার ভাগ হতে রহিত থাকা রশ্মিগুলো আসুর তত্ত্বের রূপে উৎপন্ন হয় অথবা সেই অসুর তত্ত্বকে উৎপন্ন করে।
10. যখন ব্যান রশ্মিগুলো মনস্তত্ত্বের দ্বারা পূর্ণতঃ সঙ্গত ও প্রেরিত হয় না, তখন প্রাণ-অপান এবং প্রাণোদান রশ্মিগুলো অসুর রশ্মির রূপ ধারণ করে নেয়।
11. প্রলয়কালের প্রক্রিয়া প্রারম্ভ হলে পরে অসুর পদার্থ নিরন্তর শক্তিশালী হওয়া প্রারম্ভ করে তথা তাকে নষ্ট ও নিয়ন্ত্রণকারী রশ্মিগুলো নিরন্তর দুর্বল বা নষ্ট হতে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন লোক আদি পদার্থের বিনাশ হতে থাকে। সুপারনোবা আদির বিস্ফোরণেও অসুর পদার্থের অনিবার্য অবদান থাকে।
12. যে ছন্দ রশ্মির সঙ্গে অনুষ্টুপ্ ছন্দ রশ্মিগুলো সংযুক্ত থাকে না, সেই রশ্মিগুলো অসুর রশ্মিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
13. যে ছন্দ রশ্মিগুলোর সঙ্গে প্রাণ রশ্মিগুলো পরস্পর ছড়িয়ে থাকা অবস্থায় বিদ্যমান থাকে, সেই ছন্দ রশ্মিগুলো দেব পদার্থকে উৎপন্ন করে তথা যে ছন্দ রশ্মির মধ্যে প্রাণ পরস্পর অতি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত হয়, সেগুলো আসুরী ছন্দ রশ্মিতে পরিবর্তিত হয়ে অসুর পদার্থকে উৎপন্ন করে।
14. যখন প্রাণ এবং অপান তত্ত্বের মধ্যে পারস্পরিক সামঞ্জস্য হতে পারে না, সেই সময় বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিগুলো ছন্দ রশ্মির সঙ্গে সঠিক সংযোগ করতে পারে না আর তার পরিণামস্বরূপ সেই প্রাণ রশ্মিগুলো সূক্ষ্ম অসুর রশ্মিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
15. অসুর তত্ত্বের মধ্যেও বিশেষ প্রকারের বিধ্বংসী ও প্রতিকর্ষক বিদ্যুৎ বিদ্যমান থাকে। এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে এই পদার্থেরও ধারা সর্বত্র নিরন্তর প্রবাহিত হতে থাকে।
16. যে ছন্দ রশ্মিগুলো নিজের ধারক ধায়্যা বিশেষ্য ছন্দ রশ্মির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না তথা যে প্রাণ রশ্মিগুলো মরুত্ রশ্মির সঙ্গে সংমিশ্রণ বানাতে পারে না, তারা আসুরী পদার্থের জন্মদাতা হয়ে যায়।
এই সম্পূর্ণ প্রকরণ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে এই সৃষ্টির মধ্যে সেই পদার্থ, যার দ্বারা সৃষ্টি নির্মিত হয়েছে, সেটা ছাড়াও এমন একটা পদার্থও বিদ্যমান থাকে, যেটা হচ্ছে অদৃশ্য বা অপ্রকাশিত। দৃশ্য পদার্থ সৃষ্টিতে নানা লোক নির্মাণের মুখ্য কারণ হয়, অথচ অদৃশ্য পদার্থ কোনো লোকের নির্মাণ করতে পারে না। এতকিছু হওয়ার পরেও দৃশ্য ব্রহ্মাণ্ড নির্মাণে অদৃশ্য পদার্থের অনিবার্য ভূমিকা থাকে। বৈদিক ভৌতিকীর মধ্যে দৃশ্য পদার্থকে দেব তথা অদৃশ্য পদার্থকে অসুর বলা হয়। বর্তমান বিজ্ঞানও দুই প্রকারের পদার্থকে স্বীকার করে। তারা অপ্রকাশিত পদার্থকে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি নাম দেয়। বর্তমান ভৌতিকী এই ডার্ক পদার্থকে এখনও পর্যন্ত ভালো করে সংজ্ঞায়িত করতে পারেনি আর না এর কার্য ও অস্তিত্বকে পূর্ণভাবে সিদ্ধ বা স্পষ্ট করতে পেরেছে। বর্তমান বিজ্ঞান এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে 4.6% দৃশ্য পদার্থ ও দৃশ্য ঊর্জা, 24% ডার্ক ম্যাটার তথা 71.4% ডার্ক এনার্জি মানে।
আসুরী ঊর্জা (কথিত ডার্ক এনার্জি)
বৈদিক অসুর তত্ত্বের পশ্চাৎ এখন আসুরী ঊর্জার চর্চা করবো।
1. এরকম প্রাণ-অপান অথবা প্রাণোদান রশ্মি, যা মনস্তত্ত্বের সঙ্গে ভালো করে সঙ্গত না হয়ে ব্যান প্রাণের সঙ্গে সঙ্গত হয়, তখন সেই প্রাণ-অপান অথবা প্রাণোদান রশ্মিগুলো সূক্ষ্ম অসুর রশ্মিগুলোকে উৎপন্ন করে।
2. এরকম প্রাণ রশ্মিগুলো যা ছন্দ অথবা মরুত্ রশ্মিদের সঙ্গে সঙ্গত হতে পারে না, তারাও সূক্ষ্ম অসুর রশ্মিগুলোকে জন্ম দেয়।
উপরিউক্ত অসুর পদার্থ হল আসুরী ঊর্জার রূপ। এদের মধ্যে প্রথম ঊর্জা মন থেকে অনিয়ন্ত্রিত ব্যান থেকে সম্বদ্ধ প্রাণ-অপান ও প্রাণোদান থেকে নির্মিত হয় তথা অন্য ঊর্জা ছন্দ রশ্মি ছাড়াই কেবল প্রাণ রশ্মির রূপে হয়। এই দুই প্রকারের ঊর্জা হল অপ্রকাশিত ঊর্জার রূপ। বর্তমান বিজ্ঞান যাকে ডার্ক এনার্জি বলে, তার সঙ্গে এটার এতটুকু সাদৃশ্য আছে যে বৈদিক ডার্ক এনার্জিও প্রতিকর্ষিত প্রভাব দর্শায়। এর কারণ এই হচ্ছে যে এরমধ্যে কেবল প্রাণ রশ্মিগুলোই থাকে, ছন্দ রশ্মিগুলো থাকে না। বর্তমান বিজ্ঞান ডার্ক এনার্জির স্বরূপ হতে অধিকাংশতঃ অপরিচিত আর না তাদের এই বিষয়ের জ্ঞান আছে যে ডার্ক এনার্জির প্রভাব কেন কেবল প্রতিকর্ষক হয়? আমাদের বৈদিক বিজ্ঞান এটার বিষয়ে পর্যাপ্ত ও স্পষ্ট প্রকাশ তুলে ধরে।
দুই কণার মাঝে প্রতিকর্ষণের কারণ
যখন একটা অ্যাটম বা মূল কণা বা অণু পরস্পর অতি নিকটে আসে, তখন তারা পরস্পর আকর্ষিত হওয়ার পরেও একটা নিশ্চিত সীমাতে এসে থেমে যায় আর একে-অপরকে প্রতিকর্ষিত করতে থাকে।

কখনও দুটো কণা পূর্ণতঃ স্পর্শ করতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে এটাই যে প্রত্যেক কণা সর্বদা ডার্ক এনার্জির সূক্ষ্ম আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। সেই আবরণই কোনো কণাকে অন্যের সঙ্গে সর্বদা সংযুক্ত হতে দেয় না। যত-যতটা দূরত্ব কম হয়, সেই আবরণ কম হওয়ার কারণে হয়। সংযুক্ত কণার মধ্যেও কিছু না কিছু অবকাশ থাকেই। বর্তমান বিজ্ঞানও একথা স্বীকার করে যে একটা নিশ্চিত দূরত্ব (R০) থেকে কম হওয়ার পর দুটো পরমাণুর মাঝে প্রতিকর্ষণ বল প্রভাবী হয়ে যায়, কিন্তু তারা এর কারণগুলো থেকে অনভিজ্ঞ।

অত্যল্প কালের জন্য আপেক্ষিকতার উলঙ্ঘন
যে সময় তীব্র ঊর্জার বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গগুলো ডার্ক এনার্জির উপরে প্রহার করে, সেই সময় তাদের বেগ অকস্মাৎ বেড়ে যায়, এর থেকে অধিক বেগ বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের অন্যত্র কোথাও হয় না। এখানে আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা সিদ্ধান্তের উলঙ্ঘন মনে হয়, কারণ এই পরিস্থিতির মধ্যে স্বয়ং বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গগুলো নিজের সর্বমান্য নির্বাতের মধ্যে গতি 3 লক্ষ কিলোমিটার প্রতি সেকেণ্ডের অতিক্রমণ করে অধিকতম গতিকে প্রাপ্ত করে নেয়। এই গতিকে অন্যত্র কোথাও দেখা যায় না। উল্লেখনীয় যে এই অধিকতম গতি বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের জন্য হয়, না কি প্রাণাদি রশ্মির জন্য হয়। যেমনটা আমি পূর্বে লিখেছি যে এই সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক গতি হচ্ছে ধনঞ্জয় প্রাণের, যার অতিক্রমণ কেউই করতে পারবে না। ডার্ক এনার্জির উপরে প্রহার করার সময়ে বিভিন্ন তরঙ্গাণু নিজের পূর্ব ভাগ থেকে শক্তিশালী মরুত্ রশ্মিগুলোর প্রক্ষেপণ করে। এই প্রক্ষেপণের কারণে ডার্ক এনার্জিকে নষ্ট বা নিয়ন্ত্রিত করা যেতে পারে, এই মরুত্ রশ্মির তীব্র প্রক্ষেপণের কারণে তরঙ্গাণুর গতি বিপরীত দিশাতে প্রতিক্রিয়াবশ আরও তীব্র হয়ে যায়। এখানে আপেক্ষিকতার উলঙ্ঘন স্থায়ী রূপে নয়, বরং অত্যল্প কালের জন্যই হয়।

বৈকুণ্ঠ ইন্দ্র বিশেষ্য সর্বাধিক সূক্ষ্ম বিদ্যুৎ, যা প্রাণ ও অপান রশ্মির বিশেষ যোগ দ্বারা উৎপন্ন হয়, তার প্রাণ, ব্যান ও ধনঞ্জয় রশ্মির সঙ্গে সম্মিশ্রণ হয়। এদের মধ্যে ত্রিষ্টুপ্ ছন্দের অস্তিত্বও থাকে, সেই সময় দ্রব্যমান গুণ উৎপন্ন হয়। এটা বিদ্যুৎ বিশেষ রূপে নিস্তেজ হয়। এই মিশ্রণের মধ্যে অপানের অপেক্ষায় প্রাণের প্রাধান্য থাকে। ধনঞ্জয় মিশ্রিত ব্যান রশ্মির মিশ্রণ দ্বারা প্রাণ তত্ত্বের আকর্ষণ বল প্রধান থেকে অপানের প্রতিকর্ষণকে গৌণ বানিয়ে দেয়। এই রশ্মির এটা এরকম বন্ধন হয় যে এর কারণে যেকোনো পদার্থ আকর্ষণেরই ভাব রাখে তথা কোনো গতি বা স্থিতিতে পরিবর্তনের প্রতিরোধ করে। এই প্রতিরোধী গুণকেই বর্তমান বিজ্ঞান জড়ত্ব রূপী দ্রব্যমান নাম দেয়। এর স্বরূপ ও ক্রিয়াবিজ্ঞান হল এইরকম -
অপান এবং তার পেক্ষায় প্রাণের অধিকতার সঙ্গে-সঙ্গে ব্যান, এইসব রশ্মিগুলোকে ত্রিষ্টুপ্ ছন্দ রশ্মিগুলো তিন দিক দিয়ে আবদ্ধ করে। এর পশ্চাৎ সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির জাল সবাইকে সব দিক থেকে ঘিরে বেঁধে দেয়। এইভাবে এটা একটা সংঘাত রূপ ধারণ করে। এই সংঘাত কণা বা তরঙ্গাণু দুটোর মধ্যে যে কেউ হতে পারে। যখন এই সংঘাত গতি করে, তখন আকাশের মধ্যে বিদ্যমান সূক্ষ্ম প্রাণাদি রশ্মির সঙ্গে সেই সংঘাতের প্রতিরোধ হয়। যদিও আকাশ তত্ত্বের রশ্মিগুলো প্রাণ ও ছন্দাদি সমূহের মধ্যদিয়ে সহজে এপারওপার আবাগমনে সক্ষম হয়, কিন্তু সূত্রাত্মা ও ত্রিষ্টুপের বিশেষ জালের কারণে এরমধ্যে তাদের প্রতি অবরোধ উৎপন্ন হয়ে যায় আর এটাকে অবরোধ দ্রব্যমান বলে। যে সংঘাতে যত অধিক রশ্মি এবং যত মাত্রায় সেই জালের দ্বারা বাঁধা ও ঘনীভূত হয়, সেই কণার দ্রব্যমান ততই অধিক হয়। বর্তমান বিজ্ঞান এই সূক্ষ্ম বিজ্ঞানকে একটুকুও বোঝে না।
বৈকুণ্ঠ ইন্দ্র বিশেষ্য ব্যাপক বিদ্যুৎ আর প্রাণ তত্ত্ব দুটোর মিশ্রণ দ্বারা, তারসঙ্গে ধনঞ্জয় আর ব্যানের যোগ দ্বারা পদার্থের মধ্যে দ্রব্যমান আর জড়ত্বের গুণ উৎপন্ন হয়। বিদ্যুৎ তত্ত্বের কারণে ব্রহ্মাণ্ডের সব পদার্থ পরস্পর একে-অপরের সঙ্গে বাঁধা, কিন্তু বিদ্যুতের মধ্যে অপান বিদ্যমান থাকাতে একটা নিশ্চিত অবকাশের সঙ্গে একে-অপরের থেকে আলাদাও থাকে। এই ধরনের বিদ্যুৎ তত্ত্ব আর অপান প্রাণ পরস্পর সমন্বিত হয়ে কাজ করে। এই বিদ্যুৎ তত্ত্ব ডার্ক এনার্জির প্রক্ষেপক প্রভাবকে নষ্ট বা নিয়ন্ত্রিত করে। এটা পদার্থের মাঝে কার্যরত অনিষ্ট বলকে থামিয়ে বিকৃত পদার্থের উৎপত্তিকে থামিয়ে দেয়। এটা ডার্ক এনার্জি দ্বারা আক্রান্ত বিভিন্ন কণা বা রশ্মিগুলোকে আকৃষ্ট করে নিজের সঙ্গে সঙ্গত করে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জুড়ে যায়।
দ্রব্যমান ও ঊর্জার সংরক্ষণ সিদ্ধান্ত
এই সৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের বিভিন্ন প্রকারের তত্ত্বের অর্থাৎ প্রাণাদি পদার্থের সঙ্গে নিকট সম্বন্ধ থাকে। বায়ু বা প্রাণাদি পদার্থই সংকুচিত হয়ে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ অর্থাৎ ঊর্জাকে উৎপন্ন করে। বর্তমান বিজ্ঞান বায়ু বা প্রাণাদি পদার্থের স্বরূপকে নিজের টেকনিক দিয়ে অনুভব করতে পারবে না। ঊর্জা ও দ্রব্যমানের সংরক্ষণ যেখানে ভঙ্গ হতে দেখা যায়, সেখানে দুটোর প্রাণ তত্ত্বের মধ্যে পরিবর্তিত হওয়ার পরিণাম মানা উচিত। ভ্যাক্যুম ঊর্জা হচ্ছে বায়ু তত্ত্বেরই রূপ। যখন এর সংকোচন দ্বারা তরঙ্গাণু বা কণার নির্মাণ হয়, তখন দ্রব্যমান ও ঊর্জার সংরক্ষণ সিদ্ধান্ত ভঙ্গ হওয়ার মতো মনে হয়। বস্তুতঃ বায়ু তত্ত্ব ও ঊর্জা একে-অন্যের মধ্যে পরিবর্তনীয় হওয়ায় মূলতঃ একই হয় তথা একই মূল উপাদান কারণ থেকে উৎপন্ন ও তারমধ্যেই লয় হয়। প্রায়শঃ যেখানে-যেখানে বায়ু আছে, সেখানে-সেখানে ঊর্জাও বিদ্যমান আছে। এছাড়াও ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে প্রত্যেক প্রকারের কণা ও তরঙ্গ আদি সবার মধ্যে কোনো না কোনো মাত্রায় ঊর্জা অবশ্যই বিদ্যমান থাকে অর্থাৎ ঊর্জাবিহীন কোনো পদার্থ এই সৃষ্টির মধ্যে হওয়া সম্ভব নয়। কিছু পদার্থ ঊর্জার রুপান্তরণ দ্বারা দ্রব্যাদিতে পরিবর্তিত হয়েছে, তো কিছু পদার্থ (বায়ু আদি) ঊর্জার রূপে পরিবর্তিত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ঋগ্বেদ ১০/৩৪/১৪

  মিত্রম্ কৃণুধ্বম্ খলু মূলতা নো মা নো ঘোরেণ চরতাভি ধৃষ্ণু। নি বো নু মন্যুর্বিশতামরাতিরন্যো বভূণম্ প্রসিতৌ ন্বস্তু।। ঋগ্বেদ-১০/৩৪/১৪ পদার্থ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ