ও৩ম্
[বিশ্বানি দেব সবিতর্দু রিতানি পরাসুব....]
আমি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী সংক্ষেপে নিজের জন্ম-চরিত্র লিখছি।’
[আমাকে অনেক লোক জিজ্ঞেস করে, আপনি ব্রাহ্মণ—আমরা কীভাবে জানব? আপনি আপনার ইষ্ট-মিত্র, ভাই-বান্ধবের পত্র মঙ্গিয়ে দিন অথবা কারো পরিচয় দেখান—এইরূপ বলে। এই জন্যই নিজের বৃত্তান্ত বলছি। গুজরাট দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় মোহ-ভাব বিশেষ। যদি আমি ইষ্ট-মিত্র, ভাই-বান্ধবের পরিচয় দিই, অথবা পত্র-ব্যবহার করি, তবে আমার উপর বড় উপাধি আসবে। যেসব উপাধি থেকে আমি মুক্ত হয়েছি, সেই উপাধিগুলিই আবার আমার পেছনে লেগে পড়বে। এই কারণেই পত্রাদি মঙ্গানোর চেষ্টা করি না।] পূ০ চ্যা০
[[প্রথম দিন থেকেই আমি যেসব লোককে আমার পিতা
১. এই মন্ত্রটি আমরা লিখেছি।
২. শ্রী স্বামীজি মহারাজের লিখিত পত্রসমূহে জন্ম-চরিত্রের এই শিরোনাম আছে। [দেস্ত্রো, পত্র-ব্যবহার, পৃষ্ঠা ১৫৬]
নিজের নাম এবং নিজের কুলের স্থান জানাতে অস্বীকার করেছি—এর একমাত্র কারণ এই যে, আমার কর্তব্য আমাকে এই বিষয়ের অনুমতি দেয় না। যদি আমার কোনো আত্মীয় আমার এই বৃত্তান্তের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যেত, তবে সে অবশ্যই আমাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করত। এইভাবে তাদের সঙ্গে দু’চারবার সাক্ষাৎ হলে, আমার পক্ষে তাদের সঙ্গে গৃহে যাওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ত। সুতরাং একবার আবার আমাকে হাতে ধন গ্রহণ করতে হতো, অর্থাৎ গৃহস্থ হতে হতো। তাদের সেবা-শুশ্রূষাও আমার পক্ষে কর্তব্য হয়ে দাঁড়াত। আর এইভাবে তাদের মোহে পড়ে, সর্বসাধারণের সংস্কারের সেই উৎকৃষ্ট কাজ—যার জন্য আমি আমার জীবন অর্পণ করেছি, যা আমার প্রকৃত উদ্দেশ্য, যার জন্য নিজের জীবন বলিদান করতেও আমি কখনো চিন্তা করিনি, নিজের আয়ুকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছি এবং যার জন্য নিজের সবকিছু স্বাহা করাকে নিজের কর্তব্য মনে করেছি—অর্থাৎ দেশের সংস্কার এবং ধর্মের প্রচার—সেই দেশ আবার পূর্বের মতো অন্ধকারেই পড়ে থাকত।]]’
সংবৎ ১৮৮১ সালের মধ্যে দক্ষিণ গুজরাট প্রদেশ, দেশ
১. এই পাঠ পুনা-ব্যাখ্যানেও নেই।
পূ০ ব্যা-তে এইরূপ আছে—শ্রাঙ্গধারা নামে গুজরাট দেশে এক রাজস্থান আছে। তার সীমান্তবর্তী মজোকঠা নদীর তীরে মোরঘী নামে একটি নগর আছে।
কাঠিয়াওয়াড়ের মজোকঠা দেশ, মোরশী রাজ্যে, ঔদীচ্য ব্রাহ্মণের ঘরে আমার জন্ম হয়েছিল। [যদিও ঔদীচ্য ব্রাহ্মণরা সামবেদী, তবু আমি অত্যন্ত কষ্টসাধ্যভাবে শুক্ল যজুর্বেদ অধ্যয়ন করেছিলাম।]
(১৮৮৬)¹ আমি পঞ্চম বছরে দেবনাগরী অক্ষর পড়া আরম্ভ করেছিলাম। এবং আমাকে কুলের রীতি-নীতি সম্বন্ধেও মাতা-পিতা প্রভৃতি শিক্ষা দিতেন। [অত্যন্ত ১. সন্ ১৮৮৭ সালে ফতেহগড়ে “শ্রীযুত স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী জি মহারাজের কিছু দিনচর্যা” দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হয়েছিল। এর লেখক ছিলেন পণ্ডিত গণেশপ্রসাদ। এই পুস্তকের অন্তে পণ্ডিত জ্বালাদত্ত কৃত নিম্নলিখিত শ্লোকটি মুদ্রিত আছে—
ক্ষোণীভাহীন্দুভিরভিযুতে বৈক্রমে বৎসরে বঃ প্রাদুর্ভূতো দ্বিজবরকুলে দক্ষিণে দেশভাগে।
মূলনাসৌ জননবিষয়ে শঙ্করেয় পরেণ খ্যাতি পরাপৎ প্রথমবয়সি প্রীতির্দা সজ্জনানাম্।।১।।
২. ( ) বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া সংবৎ মূলপাঠে নেই। ঋষি দয়ানন্দের জন্ম সং০ ১৮৮১ সালে হয়েছিল—এতটুকু নিশ্চিত। কিছু মহানুভাব ভাদ্রপদ মাসে মানেন, কেউ সং০ ১৮৮১ সালের শেষে (আমাদেরও এই মত; দেখুন পৃষ্ঠা ১৫-এর টীকা)। যদি সং০ ১৮৮১ সালের শেষে ধরা হয়, তবে এখানে সংবৎ ১৮৮৬ হওয়া উচিত। এই রূপে পরবর্তী নির্দেশগুলিতেও প্রতি বছরে এক এক বছর বৃদ্ধি করা উচিত, যা করা হয়েছে। ভাদ্র মাসের পক্ষেও মুদ্রিত সংবৎ সঠিক হতে পারে।
উপাসনাই সর্বশ্রেষ্ঠ। এইভাবে ১৪ চৌদশতম বছর থেকেই ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতির শ্লোক এবং সূত্রাদিও কণ্ঠস্থ করানো হতো। ]
প্রবস্থার আরম্ভ পর্যন্ত যজুর্বেদের সংহিতা সম্পূর্ণ এবং (১৮৮৯) তারপর ৮ অষ্টম বছরে আমার যজ্ঞোপবীত করানো কিছু ২ অন্যান্য বেদের পাঠও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এবং হয়েছিল। গায়ত্রী-সন্ধ্যা এবং তার ক্রিয়াকলাপও শিখিয়ে শব্দরূপাবলী প্রভৃতি ছোট ২ ব্যাকরণের গ্রন্থও শেষ দেওয়া হয়েছিল। এবং আমাকে যজুর্বেদের সংহিতার হয়ে গিয়েছিল। পাঠ আরম্ভ করিয়ে তার মধ্যে প্রথম রুদ্রাধ্যায়
পড়ানো হয়েছিল। [এই একই বছরে (১৮৯৫) যেখানে ২ শিবপুরাণ প্রভৃতির কথা হতো, আমার এক ভগিনীর জন্ম হয়েছিল।] এবং আমার কুলে শৈব সেখানে পিতাজি বিনা পারিশ্রমিকে পাশে বসিয়ে শুনিয়ে মত ছিল, সেই শিক্ষাও দিতেন। এবং পিতাজি দিতেন। গৃহে ভিক্ষাবৃত্তির জীবিকা ছিল না, বরং জমিদারি প্রভৃতি লোকেরা এই কথাও বলত যে, পার্থিব পূজা অর্থাৎ এবং লেনদেনের মাধ্যমে জীবিকার ব্যবস্থা করে সমস্ত কাজ মাটির লিঙ্গ তৈরি করে তুমি পূজা কর। এবং মাতা (আমার চালাতেন। এবং পিতার হঠে, মাতার নিষেধ সত্ত্বেও, বলতেন) এটি প্রাতে আহার করে ফেলে। এতে কখনো পূজা আমাকে পার্থিব পূজার আরম্ভ করানো হয়েছিল। হতে পারবে না। পিতা হঠ করতেন যে পূজা অবশ্যই
করতে হবে, কারণ তা কুলের রীতি। এবং কিছু ২ ব্যাকরণ [এই বছরে আমার পিতা আমাকে শিবরাত্রির ব্রত রাখতে প্রভৃতি বিষয় এবং বেদের কেবল পাঠও আমাকে পড়াতেন। বলেছিলেন, কিন্তু আমি প্রস্তুত হইনি।] যখন শিবরাত্রি এল, পিতাজি আমাকে সঙ্গে করে নানা স্থানে মন্দির ও মেলামেশায় তখন (পিতা) ১৩ ত্রয়োদশীর দিনে কথার মাহাত্ম্য নিয়ে যেতেন এবং বলতেন যে শিবের শুনিয়ে শিবরাত্রির ব্রত করার দৃঢ় সংকল্প করিয়ে পূজা করতে হবে। দিয়েছিলেন। [সেই কথা আমার খুব প্রীতিকর লেগেছিল। ১. তুলনা কর ‘আমি আমার গৃহে কিছু বেদের পাঠ ও বিদ্যা তখনই আমি উপবাসের দৃঢ় সংকল্প করে নিয়েছিলাম।] কিন্তু পড়েছি’। পত্র বিজ্ঞাপন পৃষ্ঠা ২১ (দ্বিতীয় সংস্করণ)। মাতা নিষেধ করেছিলেন যে এতে ব্রত পালন করা সম্ভব ২. মূলপাঠে এখানে এতটুকু পাঠ ত্রুটিপূর্ণ। কেবল ‘আমার’-এর হবে না; তথাপি পিতাজি ব্রতের আরম্ভ করিয়েই মকার অর্ধেক পড়া যায়।
[আমাদের এখানে নগরের বাইরে একটি বড় শিবালয় আছে। শিবরাত্রির কারণে সেখানে রাত্রিকালে বহু লোক যাতায়াত করে এবং পূজা-অর্চনা করে।] এবং যখন ১৪ চতুর্দশীর সন্ধ্যা হল, তখন বড় বড় বসতির ধনী ব্যক্তিরা নিজ নিজ পুত্রসহ মন্দিরে জাগরণ করতে গেলেন। সেখানে আমি আমার পিতার সঙ্গে গেলাম। প্রথম প্রহরের পূজা সম্পন্ন করে পূজারিরা বাইরে বেরিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ল।
[দ্বিতীয় প্রহরের পূজাও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ১২টার পর লোকজন যেখানে-সেখানে ঢুলতে ঢুলতে ভুলে যেতে লাগল এবং ধীরে ধীরে সবাই শুয়ে পড়ল। আমি শুনে রেখেছিলাম যে ঘুমিয়ে পড়লে শিবরাত্রির ফল হয় না। এইজন্য নিজের চোখে জলের ছিটে দিয়ে নিজেকে জাগিয়ে রাখছিলাম। পরে পিতা প্রভৃতিও সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন।]
[এমন সময় এমন এক চমৎকার ঘটনা ঘটল যে মন্দিরের গর্ত থেকে একটি ‘ইঁদর’ বেরিয়ে এসে পিছড়ির চারদিকে ঘুরতে লাগল। এবং পিছড়ির উপর রাখা অক্ষতাদি উঠে খেতেও লাগল। আমি তো জাগ্রতই ছিলাম, অতএব আমি সব]
১. এই শব্দটি কাঠিয়াওয়াড়ের ভাষার। এর অর্থ চূড়া। সত্যার্থপ্রকাশেও ঋষি এই শব্দের ব্যবহার করেছেন। দেখো তুর্তায়াবৃত্তি, পৃষ্ঠা ৩২।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ