যোগীশ্বর যাজ্ঞবল্ক - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

30 December, 2025

যোগীশ্বর যাজ্ঞবল্ক

আ শী বা দ

‘যাজ্ঞবল্ক্য’ হে ভারতীয় তত্ত্বজ্ঞানের ‘পিতৃ-তীর্থ’ আছে। ‘অহং ব্রহ্মাস্মি’ এই বৈদিক মহাবাক্যের দ্রষ্টা, শুক্ল যজুর্বেদের এবং শতপথ ব্রাহ্মণের প্রণেতা, এবং যজ্ঞসংস্থার সংশোধক যাজ্ঞবল্ক্য তাঁদের
তত্ত্ব-স্থণ্ডিলে ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতি সু-স্থির হয়ে আছে।

আমার পরম স্নেহভাজন বিদ্বদ্রত্ন কোলাঙ্গড়ে বৈদিক ভারতীয় সংস্কৃতির বিশ্লেষক হিসেবে এগারোটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। একাগ্রতার সঙ্গে বিস্তৃত বৈদিক সাহিত্যকে তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণকারী এই ভাষ্যকার যেন আধুনিক মহারাষ্ট্রের ‘ম্যাক্স মুলার’। বৈদিক চিন্তাজগতের পটভূমি তুলে ধরে তিনি বুদ্ধ, মহম্মদ, জরথুস্ত্র, যিশু—এঁদের জীবনচরিতও নতুনভাবে পুনর্গঠন করেছেন।

যাজ্ঞবল্ক্যের এই চরিত্রগ্রন্থটি পড়ে আমার মনে হয়েছে এই একটি গ্রন্থই বৈদিক সংস্কৃতির গভীর রহস্যার্থ স্পষ্ট করে তুলতে যথেষ্ট। বিদ্দল কোলাঙ্গড়ে গভীর নিষ্ঠা ও তেজস্বিতার সঙ্গে তাঁর বক্তব্য প্রকাশ করেন। তাঁর ভাষাশৈলী দৃঢ়, স্পষ্ট ও গভীর প্রভাববিস্তারকারী। যাজ্ঞবল্ক্যের তত্ত্বদর্শনের মেরুদণ্ডস্বরূপ রত্ন হলো আত্মতত্ত্ব। আত্মসত্যের অনুসন্ধানকারী হিসেবেই ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে তাঁর স্থান অগ্রগণ্য। অবশ্য তাঁর পূর্বেও ঋগ্বেদীয় ঋষিরা আত্মতত্ত্বের সাক্ষাৎকার লাভ করেছেন, তা উচ্চারণ করেছেন, চিন্তা করেছেন ও প্রচার করেছেন। কিন্তু যাজ্ঞবল্ক্য আত্মতত্ত্বকে সুসংহত দার্শনিক প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ‘অন্তর্যামী’—এই ধারণার মাধ্যমে আত্মতত্ত্বের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে যাজ্ঞবল্ক্যের প্রতিভার অলৌকিকতা প্রকাশ পায়। আত্মতত্ত্বের প্রত্যয় কীভাবে লাভ হয়? আত্মতত্ত্বকে কীভাবে চেনা যায়? যাজ্ঞবল্ক্য বলেন—আত্মতত্ত্বই দৃষ্টির দৃষ্টি, শ্রবণের শ্রবণ এবং মনের মননকারী আদিশক্তি। সমস্ত ইন্দ্রিয় আত্মতত্ত্বের কারণেই শক্তি লাভ করে। শতপথ ব্রাহ্মণ → śatapatha brāhmaṇa এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদিক ব্রাহ্মণ গ্রন্থ, যা শুক্ল যজুর্বেদের সঙ্গে সম্পর্কিত।

‘অন্তর্যামী’ অর্থাৎ অন্তঃচেতনার, ভিন্ন ইন্দ্রিয়ের, জ্ঞানেন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রণকারী আত্মা। আত্মতত্ত্বের এত সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রথমে যাজ্ঞবল্ক্যই করেছেন। শতপথ (১৪, ৬, ৭) মৈত্রেয়ীকে দেওয়া আত্মতত্ত্বের উপদেশে (বৃহদারণ্যক) বলা হয়েছে – আত্মার জন্য, আত্মাকামের জন্য, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি প্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে এর অর্থ করা হয়, সব প্রেম স্বার্থপর হয়; কিন্তু যাজ্ঞবল্ক্যের বক্তব্য গভীর এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রেক্ষিতে বোঝা উচিত।

বৃহদারণ্যক উপনিষদের (অধ্যায় ৪, ব্রাহ্মণ ৫) ‘আত্মনস্তু কামায় সর্ব-প্রিয়ত্ব’ এই সুপরিচিত পদটির অর্থ দেখুন। আত্মতত্ত্ব হল বিভু, অর্থাৎ সর্বশক্তিমান একত্ব দ্বারা স্বয়ংসিদ্ধ তত্ত্ব। তাই আত্মতত্ত্ব ধারণকারীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে জীবের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এই ‘প্রিয়ত্বের’ আধ্যাত্মিক অর্থ হলো – দুটি ব্যক্তির মধ্যে প্রেম মূলত তাদের আত্মরূপ একত্বের সাক্ষ্য।

দুটি দেহ এবং জীবের মধ্যে একই আত্মতত্ত্ব থাকে। তাই প্রেমের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। জড় বস্তু যেমন ধন-সম্পদের মধ্যে প্রেম থাকে, তার কারণও বিভু আত্মতত্ত্ব। ‘প্রিয়ত্ব’ হলো আত্মার একত্ব-অনুভূতির প্রকাশ।

যাজ্ঞবল্ক্য বলেন, আদিত্য, চন্দ্র ও অগ্নি অস্তমিত হলেও মানুষের কাছে আত্মজ্যোতি উপলব্ধ থাকে। (বৃহদারণ্যক অ. ৫, দ্বা. ৩, মং. ২-৬) আত্মা হল সমস্ত তেজের আধার, সমস্ত ব্যক্তির, জাতির এবং অস্তিমাত্রার মূলাধার তত্ত্ব। এই তাদের তত্ত্ব এত সূক্ষ্ম এবং বিস্তৃত যে, তাকে সংযুক্তি বা অতিব্যাপ্তি কোথাও কখনো সম্ভব নয়। আত্মা নিজেই স্বয়ং সিদ্ধ মহাসত্য।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যোগীশ্বর যাজ্ঞবল্ক

আ শী বা দ ‘যাজ্ঞবল্ক্য’ হে ভারতীয় তত্ত্বজ্ঞানের ‘পিতৃ-তীর্থ’ আছে। ‘অহং ব্রহ্মাস্মি’ এই বৈদিক মহাবাক্যের দ্রষ্টা, শুক্ল যজুর্বেদের এবং শতপথ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ