(যুদ্ধপ্রকরণম্) যুদ্ধের প্রকরণ
প্রতি দহ য়াতুধানান্ প্ৰতি দেব কিমীদিনঃ ৷
প্রহীচীঃ কৃষ্ণবর্তনে সংদহ য়াতু ধাতুধান্যঃ।।
অথর্ববেদ ১।২৮।২
আধিভৌতিক ভাষ্য— (আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক)
দুষ্ট অপরাধীদের দণ্ড প্রদানকারী রাজা (যাতুধানান্, প্রতি, দহ) রাক্ষসী স্বভাবসম্পন্ন অপরাধীদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর আচরণকারী হবেন, যাতে সেই অপরাধীদের অপরাধপ্রবৃত্তি নষ্ট হয়ে যায় অথবা প্রয়োজনে সেই অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। (কিমীদিনঃ, প্রতি, দহ) ‘এখন কী’, ‘এটা কী’ ইত্যাদি সদা নেতিবাচক প্রশ্ন করতে থাকা কিন্তু কোনো পুরুষার্থ না করা প্রমাদী কিংবা চুগলখোরদেরও রাজা দণ্ডিত করবেন। (যাতুধান্যঃ, প্রতীচীঃ, কৃষ্ণবর্তনে) [প্রতীচীঃ = প্রতিকূলং বর্তমানাঃ (ম.দ.ঋ.ভা. ৩.১৮.১)] পাপান্ধকারে লোকহিতের প্রতিকূলে বর্তমান রাক্ষসী প্রবৃত্তিসম্পন্ন দুষ্টদের প্রতি (সম্, দহ) দহনশীল হবেন, অর্থাৎ সেই দুষ্টদের কঠোর দণ্ড প্রদানকারী হবেন।
ভাবার্থ—যে ব্যক্তিরা অন্যের ধন হরণ করে, তাদের কষ্ট দেয় অথবা তাদের হত্যা করে, রাজাকে উচিত এমন দুষ্টদের কঠোর দণ্ড দেওয়া এবং প্রয়োজন হলে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা। যে ব্যক্তিরা অলস ও প্রমাদী হয়ে সর্বদা সন্দেহে ডুবে থাকে, অন্যদেরও বিভ্রান্ত করে এবং যারা পাপপঙ্কে নিমজ্জিত হয়ে একে অপরের নিন্দা করে ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিভ্রান্ত করে অরাজকতা সৃষ্টি করে তাদের সকলকে কঠোর দণ্ড দেওয়া উচিত। যে রাষ্ট্রে অপরাধীদের কঠোর দণ্ড দেওয়া হয় না, সেই রাষ্ট্রের প্রজারা ভয়াবহ দুঃখ ভোগ করে এবং দণ্ড না দেওয়া রাজা ও অপরাধী উভয়েই পাপের অংশীদার হয়। অতএব অপরাধ অনুযায়ী অপরাধীদের দণ্ড দেওয়া অপরিহার্য। মনে রাখা উচিত যে অলস নাগরিকও রাষ্ট্রের জন্য বোঝাস্বরূপই হয়।
আধ্যাত্মিক ভাষ্য— (যাতুধানান্, প্রতি, দহ) যোগসাধকের উচিত নিজের অন্তরে উদিত রাক্ষসী ও হিংস্র চিন্তাগুলোকে সাধনার মাধ্যমে দগ্ধ করে নষ্ট করা। একইভাবে দক্ষ চিকিৎসকের উচিত রোগনাশক ঔষধির মাধ্যমে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে বায়ু ও জল প্রভৃতিতে বিদ্যমান জীবাণু ও ভাইরাসকে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করা। (কিমীদিনঃ, প্রতি, দহ) যে কুচিন্তাগুলি সাত্ত্বিক চিন্তা কিংবা মনের একাগ্রতাকে ভঙ্গ করে, সাধকের উচিত নিজের নিরন্তর অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা সেই কুচিন্তাগুলিকে দগ্ধ করা। একইভাবে চিকিৎসকের উচিত উৎকৃষ্ট ঔষধ ও পাথ্য–অপাথ্যের যথাযথ নির্দেশনার মাধ্যমে মনের চাঞ্চল্য, বিভ্রান্তি ও অবসাদ প্রভৃতি দূর করার চেষ্টা করা, অর্থাৎ সেই মানসিক রোগকে নষ্ট করা। (যাতুধান্যঃ, প্রতীচী, কৃষ্ণবর্তনে) যে প্রবৃত্তিগুলি যোগপথের প্রতিকূলে অবস্থান করে অজ্ঞান বা পাপান্ধকারের দিকে নিয়ে যায়, সেই অনিষ্ট আসুরী প্রবৃত্তিগুলির প্রতি (সম্, দহ) যোগীর দহনশীল হওয়া উচিত, অর্থাৎ নিজের আত্মিক তেজে সেগুলিকে দগ্ধ করে দেওয়া। একইভাবে বৈদ্যের উচিত রোগীর শরীরে যে সকল ক্ষতিকর জীবাণু আছে, সেগুলিকে উপযুক্ত আহার–বিহার ও ঔষধির দ্বারা নষ্ট করা।
ভাবার্থ— প্রত্যেক মানুষের উচিত সাধনার মাধ্যমে নিজের মনে উদিত কুচিন্তাগুলিকে দূর করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। একইভাবে যোগ্য বৈদ্যের উচিত রোগী ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশকেও জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা করা। মনে উদিত কুচিন্তাগুলি ভালো চিন্তাকে মনে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এবং মনের একাগ্রতাকে ভঙ্গ করে। এগুলি নিরন্তর অভ্যাস, বৈরাগ্য ও সাত্ত্বিক আহার প্রভৃতির মাধ্যমে দূর করা যেতে পারে। যোগী নিজের আত্মিক তেজের দ্বারা এই সমস্ত চিন্তা ও কুসংস্কারকে নষ্ট করে দেন।
সারাংশ:
প্রত্যেক মানুষের উচিত শৃঙ্খলার মাধ্যমে মনে উদিত নেতিবাচক চিন্তাগুলি দূর করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করা। একইভাবে একজন দক্ষ চিকিৎসকের উচিত রোগী ও তার আশপাশের পরিবেশকে ক্ষতিকর জীবাণু থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করা। মনে উদিত নেতিবাচক চিন্তাগুলি ভালো চিন্তাকে প্রবেশ করতে দেয় না এবং একাগ্রতাকে ব্যাহত করে। নিয়মিত অভ্যাস, বৈরাগ্য ও শুদ্ধ আহারের মাধ্যমে এগুলি দূর করা যায়। যোগী নিজের অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক শক্তির দ্বারা এই ধরনের চিন্তা ও নেতিবাচক সংস্কার ধ্বংস করেন।
নোট— এই ভাষ্যের তুলনা অন্যান্য বিদ্বানদের দ্বারা রচিত ভাষ্যের সঙ্গে করে অবশ্যই দেখুন।
শোন, বেদে বয়ে চলে এক অমৃতের ধারা,
যে এই অমৃত পান করেছে, সে তার জন্ম সার্থক করেছে।
তিনিই তো মহাজ্ঞানী, সবই তাঁর কৃপা,
এখনও নাদানি ছেড়ে দাও, শোন বেদের অমৃতবাণী।।
এই জীবন তো একদিন চলে যাবে,
ফিরে আর কখনও আসবে না...
ভাষ্যকার— আচার্য অগ্নিব্রত
প্রধান, বৈদিক ও আধুনিক ভৌতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান
(শ্রী বৈদিক স্বস্তি পন্থা ন্যাস দ্বারা পরিচালিত)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ