বেদে মনুষ্য শরীরের মহিমার উপদেশ

#অষ্টাচক্রা নবদ্বারা দেবানাং পূর্যোধ্যা।
তস্যাং হিরণ্যযঃ কোশঃ
#স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতঃ। অথর্ব০ ১০।২।৩১

পদার্থঃ (অষ্টাচক্রা) [যোগের অঙ্গ অর্থাৎ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধ্যান, ধারণা, সমাধি, এই] আটটির কর্ম [বা চক্র] স্থিতকারী/ধারণকারী, (#নবদ্বারা) [সাত মস্তকের ছিদ্র এবং মন ও বুদ্ধিরূপ] নবদ্বারবিশিষ্ট (পূঃ) পূর্তি [সম্পূর্ণ দেহ] (দেবানাম্) উন্মত্তদের জন্য (অয়োধ্যা) অজেয়। (তস্যাম্) সেই [পূর্তিতে] (হিরণ্যয়ঃ) অনেক বল যুক্ত (কোশঃ) কোশ [ভাণ্ডার অর্থাৎ চেতন জীবাত্মা] (স্বর্গঃ) সুখ [সুখস্বরূপ পরমাত্মার] দিকে গমনশীল (জ্যোতিষা) জ্যোতি [প্রকাশস্বরূপ ব্রহ্ম] দ্বারা (আবৃতাঃ) আবৃত ॥
ভাবার্থঃ শরীরের গতি অজ্ঞানী দুর্বলেন্দ্রিয় লোকেরা বুঝতে পারে না। শরীরের অভ্যন্তরে চেতন জীবাত্মা রয়েছেন ॥
বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার জীর টিপ্পণীঃ 
[অষ্টাচক্রা= সুষুম্ণা নাড়ী এবং মস্তিষ্কে আটটি চক্র আছে, যথা “মূলাধারচক্র, স্বাধিষ্ঠানচক্র, মণিপূরচক্র, অনাহতচত্র, বিশুদ্ধ চক্র, আজ্ঞাচক, সহস্রারচক্র। অষ্টম চক্র সম্ভবতঃ ব্রহ্মরন্ধ্র, যা আজ্ঞা-চক্র এবং সহস্রারচক্রের মধ্যবর্তী। অথবা অষ্টম চক্র সম্ভবতঃ "কুণ্ডলিনী”। এর বিস্তৃত বিবরণ "পাতঞ্জল যোগ প্রদীপ" (আর্য সাহিত্য মণ্ডল, অজমের) এ দ্রষ্টব্য। নবদ্বারা = দুই চোখের ছিদ্র, দুই নাসিকারন্ধ্র, দুটি কর্ণছিদ্র, ১ লিঙ্গের, এবং ১ গুদা/পায়ু ছিদ্র- এই ৯ দ্বার আছে।
#অযোধ্যা= পরমেশ্বর প্রদর্শিত মার্গে গমন করলে রোগ, তথা কাম ক্রোধ আদি শত্রুদের দ্বারা শরীর পুরী পরাজিত হয়না, এবং না রোগ আদি এই পুরীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তিসম্পন্ন। হৃদয়কে হিরণ্যয় কোশ বলা হয়েছে যা ব্রাহ্মীজ্যোতি দ্বারা আবৃত, এই হৃদয় হলো স্বর্গ, যেখানে ব্রহ্মের সন্নিধান দ্বারা সুখ-বিশেষ প্রাপ্তি হয়]। ভষ্যকারঃ ক্ষেমকরণ ত্রিবেদী

বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কারকৃত পরবর্ত্তী মন্ত্রের পদার্থ ভাষ্য ও টিপ্পণীঃ
তস্মিনহিরণ্যয়ে কোশে ত্র্যরে ত্রিপ্রতিষ্ঠিতে।
তস্মিন্যদ্যক্ষমাত্মন্বত্তদ্বৈ ব্রহ্মবিদো বিদুঃ॥ অথর্ব০ ১০।২।৩২
পদার্থঃ (তস্মিন্ হিরণ্যয়ে) সেই সুবর্ণ সদৃশ দীপ্ত, (ত্র্যরে) তিনটি অর বিশিষ্ট, (ত্রিপ্রতিষ্ঠিতে) তথা তিনটি বন্ধন দ্বারা স্থিত কোশে অর্থাৎ (তস্মিন্) এমন সেই (কোশে) কোশে (যক্ষম্)১ পূজ্য ব্রহ্ম (আত্মন্বৎ) যা জীবাত্মা সম্পন্ন, জীবাত্মার সাথী (তদ্) তাকে (বৈ) নিশ্চিতরূপে (ব্রহ্মবিদঃ) ব্রহ্মবেত্তা (বিদুঃ) জানে।
টিপ্পণীঃ [হিরণ্যয়কোশ হলো হৃদয় (মন্ত্র ৩১)। ত্র্যরে=অর [Spokes] হলো চক্রের ঘটকাবয়ব যা চক্রের নাভি তথা পরিধির মাঝে যুক্ত থাকে। এইভাবে হৃদয়ের ঘটক তিন গুণ, অর্থাৎ সত্ত্বগুণ, রজোগুণ, তথা তমোগুণ, তিনটি অর দ্বারা অভিপ্রেত প্রতীত হয়। হৃদয় ভাবনার স্থান মানা হয় (মন্ত্র ২৬)। ভাবনাও তিন প্রকারের হয়, সাত্ত্বিক, রাজসিক তথা তামসিক। সুপ্রতিষ্ঠিতে= হৃদয়, শরীরে সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত, স্থিত। ইহা তিন প্রকারের বন্ধনের দ্বারা সুদৃঢ়রূপে স্থিত। ইহার তিন প্রকারের বন্ধন আছে। এক প্রকারের বন্ধন হৃদয়কে ফুসফুসের সাথে যুক্ত করে, ফুসফুসে অশুদ্ধ-রক্ত শুদ্ধ হয়। দ্বিতীয় প্রকারের বন্ধনে সেই নাড়ি-সমূহ আছে যা শরীরের অশুদ্ধ-রক্ত হৃদয়ে নিয়ে আসে। তথা তৃতীয় প্রকারের বন্ধনে সেই নাড়ি-সমূহ আছে, যার দ্বারা শুদ্ধ-রক্ত শরীরে প্রবাহিত হয়। অশুদ্ধ-রক্ত১ নীল বর্ণের বা কালো হয়, এবং শুদ্ধ-রক্ত২ লাল বর্ণের হয়। এইভাবে ত্রিবিধ বন্ধন দ্বারা হৃদয় বাঁধা আছে। যক্ষম্=যক্ষ পূজায়াম্ (চুরাদিঃ) ব্রহ্ম পূজনীয়, তাই ব্রহ্মকে "সুয়ুজা সখায়া" বলা হয়েছে (অথর্ব০ ৯।১৪।২০)। অর্থাৎ একসাথে থাকা দুই সখা, মিত্র। হৃদয় সুবর্ণসদৃশ দীপ্ত [হিরণ্যয়ে কোশে, মন্ত্র ৩২], সম্ভবতঃ লালরক্তের কারণে বা ব্রাহ্মপ্রকাশের কারণে, অথবা "বিশোকা বা জ্যোতিষ্মতী" (যোগ ১।৩৬) এর কারণে]।

[১. কেনোপনিষদে "যক্ষ" দ্বারা ব্রহ্মের বর্ণনা হয়েছে (১৫।২)। ২. অশুদ্ধ-রক্ত ডানদিকে দুই প্রকোষ্ঠে থাকে, এবং শুদ্ধ-রক্ত বামদিকের দুটি প্রকোষ্ঠে। হৃদয়ের চারটি প্রকোষ্ঠ।]
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ