(বুদ্ধিবৃদ্ধ্যুপদেশঃ) বুদ্ধির বৃদ্ধির জন্য উপদেশ।
অর্থবা। পর্জন্যঃ। অনুষ্টুপ্
বিদ্মা শরস্য পিতরং পর্জন্যং ভুরি ধায়সন্।
বিদ্মা স্বস্য মাতরং পৃথিবীং ভুরি বর্পসম্ ।। অথর্ব০ ১।২।১
(পদার্থঃ দীনবন্ধু) (শরস্য) শত্রুনাশক বাণধারী বীর পুরুষের (পিতরম্) রক্ষক (পর্জন্যম্) সিঞ্চনকারী মেঘের ন্যায় (ভুরিধায়সম্) বহু প্রকারে পোষণকারী পরমেশ্বরকে (বিদ্ম) আমরা জানি। (অস্য) এই বীর পুরুষের (মাতরম্) মাননীয়া মাতা (পৃথিবীম্) বিস্তৃত পৃথ্বী রূপ (ভুরি বৰ্পসম্) বহু পদার্থ যুক্ত ঈশ্বরকে (সু) ভাল ভাবে (বিষ্ম উ) আমরা জানিই।। (শরস্য) শৃণাতি শত্রুণ্। শৃ হিংসে অপ্। যে শত্রুকে নাশ করে । বাণ বা বীর । (মাতরম্) মান্যতে পূজাতে সা মাতা । মান পুজায়াম্ তৃন্ বা তুচ। যিনি মাননীয়া পূজনীয়া তিনি মাতা।।
ভাবার্থঃ পরমাত্মা শত্রুনাশক বাণধারী বীর পুরুষের রক্ষক পিতা এবং সিঞ্চনকারী মেঘের ন্যায় বহু প্রকারে পোষণকারী । তিনি বীর পুরুষদের নিকট পূজনীয়া মাতা, পৃথিবীর ন্যায় বহু পদার্থ যুক্ত। তাহাকে আমরা ভাল ভাবেই অবগত হইয়াছি।।
টিপ্পণীঃ (ক্ষেমকরণজী) ১− বিদ্ম। বিদ্ জ্ঞানে–লট্। অদাদিত্বাত্ শপো লুক্। দ্ব্যচোऽতস্তিঙঃ। পা ৬।১।১৩৫। ইতি সাংহিতিকো দীর্ঘঃ। বয়ং জানীমঃ। শরস্য। শৃণাতি শত্রূন্। ঋদোরপ্। পা ৩।৩।৫৭। ইতি শ্রূ হিংসায়াম্–অপ্। শত্রুনাশকস্য বাণস্য। অথবা, শরো বাণঃ তদস্যাস্তি। অর্শআদিভ্যোऽচ্। পা ৫।২।১২৭। ইতি মত্বর্থে অচ্। বাণবতঃ শূরপুরুষস্য। পিতরম্। নপ্তৃনেষ্টৃত্বষ্টৃ। উ ২।৯৫। ইতি পা রক্ষণে–তৃন্ বা তৃচ্ নিপাতনাত্ সাধুঃ। রক্ষকম্। জনকম্। পর্জন্যম্। পর্ষতি সিঞ্চতি বৃষ্টিং করোতীতি পর্জন্যঃ। পর্জন্যঃ। উ ৩।১০৩। ইতি পৃষু সেচনে–অন্য় প্রত্যয়ঃ, ষস্য জকারঃ। পর্জন্যস্তৃপেরাদ্যন্তবিপরীতস্য তर्पয়িতা জন্যঃ পরো জেতা বা জনয়িতা বা প্রাৰ্জয়িতা বা রসানাম্–নিরু ১০।১০। সেচকম্। মেঘম্। মেঘবদ্ উপকর্ত্তারম্। ভূরি–ধায়সম্। বহিহাধাভ্যশ্ছন্দসি। উ ৪।২২১। ইতি ভূরি+ডুধাঞ্ ধারণপোষণয়োঃ দানে চ–অসুন্, স চ ণিত্। আতো যুক্ চিণ্কৃতোঃ। পা ৭।৩।৩৩। ইতি যুক্। বহুপদার্থধারয়িতারং সৃষ্টেঃ পোষয়িতারং পরমেশ্বরং বিদ্মো ইতি। বিদ্ম–উ। বয়ং জানীম এব। সু। সুষ্ঠু। অস্য়। শরস্য। মাতরম্। মান্যতে পূজ্যতে সা মাতা। নপ্তৃনেষ্টৃত্বষ্টৃ। উ ২।৯৫। ইতি মান পূজায়াম্–তৃন্ বা তৃচ্ নিপাতঃ। মাননীয়াম্। জননীম্। পৃথিবীম্। ১।৩০।৩। প্রথিমৃদিভ্রস্জাং সম্প্রসারণং সলোপশ্চ। উ ১।২৮। ইতি প্রথ প্রখ্যানে–কু। ভোটো গুণবচনাত্। পা ৪।১।৪৪। ইতি। পৃথিবু–ঙীপ্। বিস্তীর্ণা প্রখ্যাতা বা পৃথিবী। অথবা, প্রথতে বিস্তীর্ণা ভবতীতি পৃথিবী। প্রথেঃ ষিবন্ষবন্ষ্বনঃ সম্প্রসারণং চ। উ ১।১৫০। ইতি প্রথ খ্যাতৌ বিস্তারে–ষিবন্, সম্প্রসারণং চ। ষিদ্গৌরাদিভ্যশ্চ। পা ৪।১।৪১। ইতি ঙীপ্। ভূমিম্। ভূমিবদ্ গুণবন্তম্। ভূরিবর্পসম্। ধ্রিয়তে স্বীক্রিয়তে তৎ। বর্পো রূপম্–নিঘ ৩।৭। বৃঙ্শীঙ্ভ্যাং রূপস্বাঙ্গয়োঃ পুট্ চ। উ ৪।২০১। ইতি বৃঙ্ স্বীকারণে–অসুন্, পুট্ আগমঃ। ভূরীণি বহূনি রূপাণি বস্তুনি যস্মিন্ স ভূরিবর্পাঃ। অনেকবস্তুযুক্তং পরমেশ্বরম্ ॥
পদার্থঃ (শরস্য) শত্রুনাশক [বাণধারণকারী] বীর পুরুষের (পিতরম্) রক্ষক, পিতা, (পর্জন্যম্) সিঞ্চনকারী মেঘ রূপ, (ভূরিধায়সম্) বিবিধ প্রকারে পোষণকারী [পরমেশ্বর] কে (বিদ্ম্) আমি জানি। (অস্য) এই বীরের মাননীয় মাতা, (পৃথিবীম্) বিখ্যাত বা বিস্তীর্ণ পৃথিবীরূপ (ভূরিবর্পসম্) অনেক বস্তু যুক্ত [ঈশ্বর] কে (সু) উত্তম রূপে (বিদ্ম উ) আমি জানি ॥১॥
ভাবার্থঃ যেভাবে মেঘ, জলের বর্ষা করে এবং পৃথিবী, অন্ন আদি উৎপন্ন করে প্রাণীদের উপকার করে, তেমনই সেই জগদীশ্বর পরব্রহ্ম সব মেঘ, পৃথিবী আদি লোক-লোকান্তরের ধারণ এবং পোষণ নিয়মপূর্বক করেন। জিতেন্দ্রিয় শৌর্যশালী বিদ্বান্ পুরুষ সেই পরব্রহ্মকে নিজের পিতার সমান রক্ষক এবং মাতার সমান মাননীয় এবং মানকর্ত্তা জেনে (ভূরিধায়াঃ) অনেক প্রকারে পোষণকারী এবং (ভূরিবর্পাঃ) অনেক বস্তু যুক্ত হয়ে পরোপকারে যেন সদা প্রসন্ন থাকে ॥১॥
টিপ্পণীঃ (বিশ্বানাথ বিদ্যালঙ্কার)
[পর্জন্যম্ =পালয়িতা চাসৌ জন্যঃ, জনহিতকারী চ মেঘঃ। ভূরিধায়সম্ = ভূরি+ধা (ধারণ-পোষণ-কর্তা)+যুক্ (আতো যুক্ চিণ্কৃতোঃ)+ কর্তরি অসুন্ । ভূরিবর্পসম্=ভূরি+ বর্পস্ হল রূপনাম (নিঘং০ ৩।৭) । অথবা শর=আত্মা, “প্রণবো ধনুঃ শরো হ্যাত্মা” (মুণ্ডক০ ২।২।৪)। সূক্ত আধ্যাত্মিকার্থকও । মন্ত্রে পর্জন্য, শর ও ভূরিধায়সম্, পরমেশ্বরার্থকও হয়। এইভাবে সূক্ত ১ ও ২ এ বিষয়-সাম্য হয়ে যায়। পর্জন্যম্=পৄ পালনে +জন্যম্ ।]
(বুদ্ধিবৃদ্ধ্যুপদেশঃ) বুদ্ধির বৃদ্ধির জন্য উপদেশ।
অর্থবা। পর্জন্যঃ। অনুষ্টুপ্
জ্যাকে পরি ণো নমাশ্মানং তন্বং কৃধি।
বীডুর্বরীহয়োরাতীরপ দ্বেষ্যাংস্যা কৃধি।। অথর্ব০ ১।২।২
পদার্থঃ (জ্যাকে) জন্মের জন্য (নঃ) আমাদিগকে (পরি) সর্বপ্রকারে (নম) নমিত কর (তন্বম্) শরীরকে (অশ্মানম্) প্রস্তর রং (কৃধি) কর। (বীড়ুঃ) দৃঢ় হইয়া (অরাতীঃ) বিরোধী ও (দ্বেয়াংসি) দ্বেষ (অপ) অপসারণ করিয়া (বরীয়ঃ) বহৃ দূরে (আ কৃধি) রাখ।। (দীনবন্ধুজী)
ভাবার্থঃ হে পরমাত্মন! জন্ম লাভের জন্য তুমি আমাদিগকে কর্মে প্রবৃত্ত কর, শরীরকে প্রস্তর রং দৃঢ় কর। তুমি দৃঢ় হইয়া আমাদের বিরোধ ও দ্বেষকে বহু দূরে নিক্ষেপ কর।।
পদার্থঃ [হে ইন্দ্র] (জ্যাকে) বিজয়ের জন্য (নঃ) আমাদের (পরি) সর্বদা (নম্) আপনি নত করুন, (তন্বম্) [আমাদের] শরীরকে (অশ্মানম্) পাথরের মতো [সুদৃঢ়] (কৃধি) করুন। (বীড়ুঃ) আপনি দৃঢ় হয়ে (অরাতীঃ) বিরোধ এবং (দ্বেষাংসি) দ্বেষ (অপ্=অপহৃত্য) দূর/অপসারিত করে (বরীয়ঃ) বহু দূরে (আকৃধি) করুন/করে দিন ॥২॥ অথবা, (জ্যাকে) জয়ের দুই সাধন [মেঘ ও ভূমি]কে (নঃ পরি) আমাদের দিকে (নম্) আপনি নত করুন- এই অর্থ প্রযুক্ত করা যায়। (ক্ষেমকরণজী)
ভাবার্থঃ পরমেশ্বরের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস করে মনুষ্য আত্মবল এবং শরীরবল প্রাপ্ত করে/করুক এবং সমস্ত বিরোধ দূর করুক। সায়ণাচার্য অর্থ করেছেন, (জ্যাকে) হে কুতসিৎ জ্যা ! (নঃ) আমাদের (পরি) পরিত্যাগ করে (নম্) নত হও। কিন্তু এটা অসঙ্গত, সম্পূর্ণ সূক্তের দেবতা ইন্দ্র ॥ জ্যাকে শব্দের অর্থ বিষয়ে ভগবান মাস বলেছেন, জ্যা জয়তের্বা জিনাতের্বা প্রজাবয়তীষূনিতি বা−নিরু০ ৯।১৭ ॥
টিপ্পণী (বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার)- [জ্যা= জিহ্বা জ্যা ভবতি (অথর্ব০ ৫।১৮।৮)। জিহ্বা কায়/আকারে এ হ্রস্ব, ছোটো (হ্রস্বে, অষ্টা০৫।৩।৮৬)। জিহ্বাকে বলা হয়েছে যে, তুমি সুদৃঢ় হয়ে আমাদের প্রতি প্রহ্বীভূত হও, নত হও, যাতে আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়, মন্ত্রের ভাবের কথনে। এই কথন মন্ত্রের উত্তরার্ধে হয়েছে। যদ্যপি অথর্ব০ ৫।১৮।৮ এ ব্রাহ্মণের জিহ্বাকে জ্যা বলা হয়েছে। কিন্তু সূক্তেও যতঃ “শর” দ্বারা আত্মার বর্ণনা হয়েছে, যা ব্রাহ্মণের আত্মার সূচক। নিঘণ্টুতেও জিহ্বাকে বাক্ বলা হয়েছে (১।১১)।]
টীকা (ক্ষেমকরণ জী)
২−জ্যাকে জ্যা জয়তের বা জিনাতের বা প্রজাওয়য়তিষূণিতি বা–নিরু ৯।১৭ ॥ খজেরাকঃ। উ ৪।১৩। ইতি জি জয়ে–আকপ্রত্যয়ঃ। নিপাত্যতে চ। সপ্তম্যধিকারণে চ। পা ২।৩।৩৬। অত্র। নিমিত্তাত্ কর্মসংযোগে সপ্তমী বক্তব্যা। বার্তিকম্। ইতি নিমিত্তে সপ্তমী। জয়নিমিত্তে = জয়ার্থম্। যদ্বা ১।১।৩। জ্যা–স্বার্থে কন্, টাপ্ চ। জয়সাধনে [উভে পর্জন্য–পৃথিব্যৌ] − স্ত্রিয়াঁ দ্বিতীয়াদ্বিবচনম্। পরি। পরিতঃ সর্বতঃ। নঃ। আস্মান্। নাম। নাময়, প্রহ্বীকুরু। অশ্মানম্। অশশকিভ্যাঁ ছন্দঃসিঃ। উ ৪।১৪৭। ইতি অশূ ব্যাপ্তৌ বা অশ ভোজনে–মনিঃ। অশ্মা মেঘনাম–নিঘ ১।১০। পাষাণম্, প্রস্তারবদ্, দৃঢ়ম্। তন্বম্। ১।১।১। ছন্দসিঃ যণ্। উদাত্তস্বরিতয়োর্যণঃ স্বরিতো’নুদাত্তস্য। পা ৮।২।৪। ইতি স্বরিতঃ। তনূম্, শরীরম্। কৃধি। ডুকৃঞ্ করণে–লোট্। করু। ভিডুঃ। ভৃমৃশিঙ্০। উ ১।৭। ইতি উইল সংস্থম্ভে–উ, লস্য ডঃ। উইলু বলনাম্ নিঘ ২।৯। উইলয়তিঃচ্ ভ্রীলয়তিঃচ্ সংস্থম্ভকর্মানৌ। নিরু ৫।১৬। ভিড্ভী দৃঢ়া। ভারীয়ঃ প্রিয়স্থিরেত্যাদিনা। পা ৬।৪।১৫৭। ইতি উরু–ঈযসুন্ বরাদেশঃ। ক্রিয়াবিশেষণম্। উরুতরং দূরতম্। আরাতিঃ। ন রাতি দদাতি সুখং স আরাতিঃ শত্রুঃ। ক্তিচ্ক্তৌ চ সংজ্ঞায়াম্। পা ৩।৩।১৭৪। ইতি রা দানে–ক্তিচ্, নঞ্সমাসঃ। সুপাঁ সুলুকপূর্বসর্বর্ণঃ। পা ৭।১।৩৯। ইতি পূর্বসর্বর্ণঃ। আরাতীন্ শত্রূন্। যদ্বা ক্তিন্ প্রত্যয়ান্তে, শত্রুভাউন্, বিরোধান্। অপ্। আপহৃত্য। দ্বেষানসি। দ্বিষ্ অপ্রীতৌ ভাবে–অসুন্। দ্বেষান্ আ। ঈষদার্থে।
(বুদ্ধিবৃদ্ধ্যুপদেশঃ) বুদ্ধির বৃদ্ধির জন্য উপদেশ।
অর্থবা। পর্জন্যঃ। ত্রিপদা বিরাণনামগায়ত্রী
বৃক্ষং য়দ্ গাবঃ পরিষাস্বজানা অনুসফুরং শরমচর্জ্যভুম্।
শরুমল্মদ্ য়াবয় দিদ্যু মিন্দ্ৰ।। অথর্ব০ ১।২।৩
দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রীকৃত পদার্থভাষ্যঃ
(পদার্থঃ(য়ং) যখন (বৃক্ষম্) ধনুতে (পরিসস্বজানাঃ) সংলগ্ন (গাবঃ) ছিলা (অনুস্ফুরং) স্ফুর্তিযুক্ত (ঋভুম্) জ্ঞানবান (শরম্) বাণধারী বীর পুরুষকে (অর্চস্থি) স্তুতি করে, তখন হে পরমাত্মন! (শরম্) বাণ ও (বিদ্যুৎ) বজ্রকে (অস্মাৎ) আমা হইতে (য়াবয়) তুমি পৃথক রাখ।। (বৃক্ষং) ব্ৰচু ছেদনে কস্ প্রত্যয়ঃ। ‘বৃক্ষে বৃক্ষে ধনুষি ধনুষি বৃক্ষো ব্রশ্চনাং। নিরুক্ত ২.৬। ধনুদ্বারা শত্রুকে ছেদন করা হয় এজন্য ধনুর এক নাম বৃক্ষ।(গৌঃ) গম্ল্ গতৌ ডো। জ্যাপি গৌরুচ্যতে গব্যা চেৎ তাদ্বিদমথ চেন্ন গব্যা গমম্নতীয়ু নিতি। নিরুক্ত : ২.৫। চিল্লার এক নাম গো কেননা ইহা দ্বারা বাণ চালিত হয়।। ৩।।
ভাবার্থঃ যখন ধনুতে সংলগ্ন ছিলা-রজ্জু তেজস্বী, জ্ঞানবান বীর পুরুষকে স্তুতি করে তখন হে ঐশ্বর্যবান জগদীশ্বর! আমাদিগকে বাণ ও বজ্র হইতে পৃথক রাখ।। ঘোর সংগ্রামে বুদ্ধিমান সেনাপতির বীরত্বকে যোদ্ধাগণ প্রশংসা করে এবং সেনাপতি পরমাত্মার শরণ গ্রহণ করিয়া শত্রু দমন করে।।
ক্ষেমকরণজীকৃত পদার্থঃ (যৎ) যখন (বৃক্ষম্) ধনুকের সাথে (পরিসস্বজানাঃ) লিপ্ত থাকা (গাবঃ) ছিলার দড়ি (অনুস্ফুরম্) স্ফূর্তিময় (ঋভুম্) বিস্তীর্ণ জ্যোতির্ময় অথবা সত্যের দ্বারা প্রকাশমান বুদ্ধিমান্ (শরম্) বাণধারী শৌর্যশালীপুরুষের (অর্চন্তি) স্তুতি করে; [তখন] (ইন্দ্র) হে পরম ঐশ্বর্যবান জগদীশ্বর ! [বা হে বায়ু !] (শরুম্) বাণ এবং (দিদ্যুম্) বজ্রকে (অস্মৎ) আমার থেকে (যাবয়) তুমি পৃথক রাখো ॥৩॥
ভাবার্থঃ যখন দুই দিক থেকে (আধ্যাত্মিক ও আধিভৌতিক) ঘোর সংগ্রাম হয়ে থাকে, বুদ্ধিমান চতুর সেনাপতি এমন সাহস প্রদর্শন করুক যেন সমস্ত যোদ্ধারা তাঁর প্রশংসা করে এবং সে পরমেশ্বরের আশ্রয় নিয়ে এবং নিজের প্রাণ বায়ুর সাধন করে শত্রুদের নিরুৎসাহী করুক এবং জয় প্রাপ্ত করে আনন্দ উপভোগ করুক ॥৩॥ নিরুক্ত অধ্যায় ২, খণ্ড ৬ ও ৫ এর অনুসারে (বৃক্ষ) এর অর্থ [ধনুক] এইজন্য যে, তা দিয়ে শত্রুকে নাশ করা যেতে পারে এবং (গৌ) এর নাম ছিলা [ধনুকের দড়ি] এজন্যই যে তা দিয়ে বাণ চালানো যায় ॥ (ক্ষেমকরণ)
টীকা (বিশ্বানাথ বেদালঙ্কার)- [দিদ্যুদ্ বজ্রনাম (নিঘং০ ২।২০)। অভিপ্রায় এটাই, ইন্দ্রিয়-সমূহ যখন নিজ স্ফূর্তি অর্থাৎ সঞ্চরণ করে জীবাত্মার অর্চনা করে, তাকে নিজ পূজ্য করে, তখন পরমেশ্বর পাপরূপী হিংস্র বজ্রকে আমাদের থেকে পৃথক্ করে দেয়, অপসারণ করেন। গাবঃ= গৌঃ ইন্দ্রিয়ম্ (উণা০ ২।৬৮; দয়ানন্দ)। বৃক্ষম্= বৃশ্চ্যতে ইতি, ওব্রশ্চূ ছেদনে (তুদাদিঃ), ছেদনীয় শরীর হল, বিনাশী শরীর। বৃক্ষ পদের নানার্থ হয়-(১) প্রকৃতি, যথা “কিং স্বিদ্ বনং ক উ স বৃক্ষ আস যতো দ্যাবাপৃথিবী নিষ্টতক্ষুঃ” (যজু০ ১৭।২০) । (২) “বৃক্ষে-বৃক্ষে নিয়তা মীময়দ্ গৌঃ।“ (ঋ০ ১০।২৭।২২)= বৃক্ষেবৃক্ষে=ধনুষি ধনুষি (নিরুক্ত ২।১।৬)। (৩) বৃক্ষম্= বৃক্ষবিকারং ধনুর্দণ্ডম্ (সায়ণ)।] [১. জীবাত্মা হল ভাসমান, প্রকাশস্বরূপ, তাই তা ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধিকে প্রকাশিত করে। যে স্বয়ং প্রকাশমান নয় সে/তা অন্যকে প্রকাশিত করতে পারে না।]
অর্থবা। পর্জন্যঃ। অনুষ্টুপ্
য়থা দ্যাং চ পৃথিবীং চান্তস্তিষ্ঠতি তেজনম্ ।
এবা রোগং চাস্রাবং চান্তষ্ঠিতু মুঞ্জইৎ।। অথর্ব০ ১।২।৪
দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রীকৃত পদার্থভাষ্যঃ (য়থা) যেমন (তেজনম্) প্রকাশ (দ্যাং) সূর্যলোক এবং (পৃথিবীং) পৃথিবী লোকের (অঃ) মধ্যে (তিষ্ঠতি) অবস্থান করে (এব) তেমনই (মুঞ্জঃ) শোধন কর্তা পরমেশ্বর বা ঔষধ (ইং) ও (রোগং) রোগ (চ) এবং (আস্রাবং) রক্ত প্রবাহের (অন্তঃ) মধ্যে (চ) এবং (তিষ্ঠতু) অবস্থান করে।। ‘তেজনম্’ তিজ তীক্ষণীকরণে। তেজঃ প্রকাশঃ । ‘রোগং’ রুজ ভংগে হিংসে চ ঘঞ্। রুজতি শরীরম্। শরীর ভঙ্গম্। যাহা শরীর ভঙ্গ করে বা নাশ করে তাহাই রোগ। ‘মুঞ্জঃ’ মুঞ্জতে মৃজ্যতে অনেন। মুজি মার্জনে শোধনে অচ্। পরমেশ্বর বা সংশোধক পদার্থ।।
ভাবার্থঃ প্রকাশ যেমন সূর্যলোক ও পৃথিবীলোকের মধ্যে অবস্থান করে শোধন কর্তা পরমেশ্বর বা ঔষধও তেমন রোগ ও রক্ত প্রবাহের মধ্যে অবস্থান করে।।
ক্ষেমকরণজীর পদার্থভাষ্যঃ
পদার্থঃ
(যথা) যেভাবে (তেজনম) প্রকাশ (দ্যাং চ) সূর্যলোক (চ) এবং (পৃথিবীম) পৃথিবীলোকের (অন্তঃ) মধ্যে/মাঝখানে (তিষ্ঠতি) বর্তমান/থাকে, (এব) তেমনই (মুঞ্জঃ) শোধনকারী পরমেশ্বর [বা ঔষধ] (ইৎ) ও (রোগং চ) শরীরভঙ্গ (চ) এবং (আস্রাবম্) রক্তক্ষরণ বা ক্ষত এর (অন্তঃ) মধ্যে (তিষ্ঠতু) স্থিৎ হোক॥৪॥
ভাবার্থঃ যে মনুষ্য নিজের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ ক্লেশে (মুঞ্জ) হৃদয়সংশোধক পরমেশ্বরের স্মরণ রাখে, সে দুঃখ থেকে উদ্ধার/পার হয়ে তেজস্বী হয়। অথবা যেভাবে সৎ বৈদ্য (মুঞ্জ) সংশোধক ঔষধি দিয়ে/দ্বারা বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ রোগের প্রতিকার করেন, সেভাবেই আচার্য বিদ্যাপ্রকাশের মাধ্যমে ব্রহ্মচারীর অজ্ঞানতার নাশ করে/করুক ॥৪॥ সায়ণভাষ্যে (তেজনম্) নপুংসকলিঙ্গকে [তেজনঃ] পুংলিঙ্গ মেনে [বেণুঃ] অর্থাৎ বাঁশ অর্থ করা হয়েছে, যা অসঙ্গত ॥
টীকা (বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার)
[অভিপ্রায় হল, যেমন দ্যৌ ও পৃথিবীর মধ্যে/মাঝখানে সূর্য স্থিত আছে, তেমনই রোগ অর্থাৎ মূত্রকৃচ্ছতে, এবং আস্রাব অর্থাৎ মূত্রের স্রবণে, মুঞ্জই স্থিত আছে, অর্থাৎ রোগ ও আস্রাবের পরস্পর সম্বন্ধ মুঞ্জের সাথে, মুঞ্জই রোগের নাশ করে, আস্রাব উৎপন্ন করে দেয়। মুঞ্জের ক্বাথ বা এর অন্য আয়ুর্বেদিক যোগ উত্তম মূত্রস্রাবী, তাই “ইৎ” অর্থাৎ ‘ই’ এর প্রয়োগ হয়েছে।] [মুঞ্জ=reed/ উলুখাগড়া/নলখাগড়া গাছ]
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ