অসতিসত্প্রতিষ্ঠিতং সতি ভূতং প্ৰতিষ্ঠিতম্। ভূতং হ ভব্য আহিতং ভব্যং ভূতে প্ৰতিষ্ঠিতং তবেদ্বিষ্ণো বহুধা বির্যাণি।
ত্বং নঃ পৃণীহিপশুভির্বিশ্বরূপৈঃ সুধায়াং মা ধেহি পরমে ব্যোমন্॥
আয়ুর্বৃদ্ধ্যর্থমুপদেশঃ--
পদার্থঃ (অসতি) অনিত্য [কার্যে] (সৎ) নিত্য বর্ত্তমান [আদিকারণ ব্রহ্ম] (প্রতিষ্ঠিতম্) প্রতিষ্ঠিত/স্থিত, এবং (সতি) নিত্য [ব্রহ্মের] মধ্যে (ভূতম্) সত্তাবান জগৎ [অথবা পৃথিবী আদি ভূতপঞ্চক] (প্রতিষ্ঠিতম্) প্রতিষ্ঠিত/স্থিত। (ভূতম্) ভূত/অতীত (ভব্যে) ভবিতব্যের মধ্যে (হ) নিশ্চিতরূপে (আহিতম্) স্থাপিত, এবং (ভব্যম্) ভবিতব্য (ভূতে) অতীতের মধ্যে (প্রতিষ্ঠিতম্) প্রতিষ্ঠিত/স্থিত, (বিষ্ণো) হে বিষ্ণু ! [সর্বব্যাপক পরমেশ্বর] (তবইৎ) তোমারই (বীর্যাণি) বীরকর্ম [পরাক্রম] (বহুধা) অনেক প্রকার। (ত্বম্) তুমি (নঃ) আমাদের (বিশ্বরূপৈঃ) সব রূপবিশিষ্ট (পশুভিঃ) প্রাণীদের দ্বারা (পৃণীহি) ভরপূর করো, (মা) আমাকে (পরমে) সর্বোচ্চ/পরম (ব্যোমন্) বিশেষ রক্ষাপদে (সুধায়াম্) পূর্ণ পোষণশক্তির মাঝে (ধেহি) রাখো/ধারণ করো ॥১৯॥
ভবার্থঃ যে ওম্ তৎসৎ পরমাত্মা নিজের মহিমা দ্বারা সকলের আদি কারণ হয়ে সকলের ভেতরে/অভ্যন্তরে এবং বাহিরে এবং ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্ত্তমানে একরস/সমানভাবে ব্যাপক হয়ে সব ব্রহ্মাণ্ডকে ধরে রেখেছেন, আমরা সবাই উনার উপাসনা করে সুখী হই ॥১৯॥
টিপ্পণীঃ—
[অসতি সৎপ্রতিষ্ঠিতম্ =অসৎ অর্থাৎ সদ্রূপে অপ্রতীত প্রকৃতি হল কারণ, উপাদান-কারণ, এবং সৎ অর্থাৎ বিদ্যমান জগৎ হল কার্য। কার্যের স্থিতি উপাদান-কারণের মধ্যে দর্শানো হয়েছে। ইহার দ্বারা সৎকার্যবাদের সিদ্ধান্তের পরিপুষ্টি হয়। সৎকার্য নিজ উপাদান-কারণের মধ্যে শক্তি রূপে থাকে; উপাদান-কারণ থেকে-উৎপন্ন হওয়ার-যোগ্যতা রূপে থাকে, যেমন অঙ্কুর, নিজের কারণ বীজের মধ্যে উৎপন্ন হওয়ার যোগ্যতা-রূপে থাকে। "সতি ভূতম্” “ভব্যে ভূতম্” “ভূতে ভব্যম্" = এগুলোর অভিপ্রায় এটাও হয়, "সত অর্থাৎ বিদ্যমান পদার্থে উহার ভূতরূপ অর্থাৎ অতীতরূপও থাকে," এবং "ভব্য অর্থাৎ যে পদার্থ উৎপন্ন হবে উহার মধ্যেও উহার ভূতরূপ অর্থাৎ অতীত-রূপ নিহিত থাকে, “তথা ভূত পদার্থের মধ্যে উহার ভব্য/ভবিষ্যত/ভবিতব্যরূপও স্থিত থাকে"। তবেই মহাযোগী ত্রিকাল-দর্শী হতে পারে। এইজন্য যোগ-এ বলা হয়েছে “পরিণামত্রয়সংয়মাদতীতানাগতজ্ঞানম্" (যোগ০ ৩।১৬) অর্থাৎ তিনটি পরিণামে সংযম করলে ভূত এবং ভবিষ্যতের জ্ঞান হয়, ইহার কারণ যোগ-এ ইহা দর্শানো হয়েছে “ক্রমান্যত্বং পরিণামান্যত্বে হেতুঃ" (যোগ০ ৩।১৫), অর্থাৎ যে যে পদার্থের মধ্যে উহার যে যে রূপ প্রথম উৎপন্ন হয়ে যায়/হয়, এবং যা যা ভবিষ্যতে হবে, এই সবকিছুর মধ্যে ক্রম নিয়ত রয়েছে। ক্রম-এর ভেদ/পার্থক্যই পরিণামের ভেদ/পার্থক্যের কারণ, নিয়ামক, অতঃ যে যোগী বস্তুর উৎপত্তির এই নিয়ত ক্রমকে জেনে নেয় সে সেই বস্তুর ভূতরূপ এবং ভাবী/ভবিতব্য রূপেরও দ্রষ্টা হয়ে যায়। যোগ-এ অন্য সূত্রগুলোতে ত্রিকাল দ্রষ্টৃত্ব-এর পর্যাপ্ত বর্ণনা হয়েছে২] [১. মন্ত্রোক্ত সিদ্ধান্তকে নিম্নলিখিত দৃষ্টান্ত দ্বারা সুগমতাপূর্বক বোঝা যেতে পারে। যথাঃ - মাটি থেকে/দ্বারা ঘড়া/কলস তৈরি হয়েছে। সৎ-ঘড়া মাটি রূপ কারণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত, নিজের স্থিতি রাখে। ইহাই । "অসতি সৎ প্রতিষ্ঠিতম্" অর্থাৎ প্রকৃতিতে সৎ জগতের স্থিতি। যেমন মাটি থেকে/দ্বারা নির্মিত ঘড়া-এর মধ্যে, ঘড়া/কলসের পূর্বরূপ যে মাটি তা স্থিত থাকে, এইভাবে "সতি ভূতং প্রতিষ্ঠিতম্” অর্থাৎ সৎ-জগতে, জগতের ভূতরূপ অর্থাৎ পূর্বরূপ প্রকৃতিও স্থিত থাকে। যেমন কলসের ভবিতব্যরূপ ঠিকরা-এর মধ্যে ঘড়ার ভূতপূর্ব মাটি স্থিত থাকে, এইভাবে "ভব্যে ভূতম্ আহিতম্" অর্থাৎ ভবিষ্যৎ কালে সম্ভাব্য জগতের স্বরূপের মধ্যেও প্রকৃতি স্থিত থাকে। তথা যেভাবে ঘড়ার ভব্য অর্থাৎ ভবিষ্যৎ-কালে সম্ভাব্য ঠিকরা-এর--স্বরূপ ভূতস্বরূপ মাটি তথা ঘটে স্থিত হয়/থাকে, এইভাবে "ভব্যং ভূতে প্রতিষ্ঠিতম্" অর্থাৎ জগতের ভব্য অর্থাৎ ভবিষ্যৎ-কালে পরিবর্তিত স্বরূপও, ভূতরূপ প্রকৃতির মধ্যে তথা উহার পূর্ব পরিণামেও স্থিত থাকে। এইভাবে এক উপাদান-প্রকৃতিকে বিবিধ নামরূপে পরিণত করা, -সর্বব্যাপক পরমেশ্বরের নানাবিধ বীর্য অর্থাৎ সামর্থ্যের কাজ, "তবেদ্ বহুধা বীর্যাণি। মন্ত্রে এই নানাবিধ নামরূপকে পরমেশ্বরের সামর্থ্যরূপ বলা হয়েছে। এই ভাবনাকে "নামরূপে ব্যাকরবাণি" (ছান্দো০ উপ০ অধ্যায় ৬, খং০ ৩) এ বলা হয়েছে। মন্ত্রে ইহা দর্শানো হয়েছে, বস্তুর বর্তমান স্বরূপে উহার পূর্ববর্তী পরিণাম-সমূহ তথা ভবিষ্যম্ভাবী পরিণাম-সমূহের স্থিতিও অনভিব্যক্তাবস্থায় থাকে, যার জ্ঞান যোগীর সূক্ষ্মপ্রবেশী চিত্ত দ্বারা যোগীর হয়ে যায়। বাচ্চা যখন জন্ম হয় তখন তাঁর বর্তমান চিত্তেও পূর্বজন্মের ভূতকালের পরিণাম সংস্কার রূপে থাকে, তথা ভবিষ্যৎ কালে উদ্ভূত পরিণাম-সমূহের অর্থাৎ ভাবীপরিণামের সংস্কারও অনুদ্ভূতাবস্থায় থাকে। এইভাবে অন্য বস্তুরও স্থিতি। এই সিদ্ধান্তকে "সনং সর্বরূপ"---এই মহাব্যাপী নিয়ম দ্বারাও প্রকট করা হয় ॥ ২. মন্ত্রোক্ত ভাবনার পরিপুষ্টিতে নিম্নলিখিত, যোগদর্শনের সূত্রগুলো দেখা উচিৎ। যথাং "অতীতানাগতং স্বরূপতোঽস্ত্যধ্বভেদাদ্ধর্মাণাম্ ॥ তে ব্যক্তসূক্ষ্মাঃ গুণাত্মানঃ ॥ পরিণামৈকত্বাদ্বস্তুতত্ত্বম্ ॥ তদা সর্বাবরণমলাপেতস্য জ্ঞানস্যানন্ত্যাজ্জ্ঞেয়মল্পম্" ॥ (যোগ ৪।১২, ১৩, ১৪, ৩১)। তথা— “সত্ত্বপুরুষান্যতাখ্যাতিমাত্রস্য সর্বভাবাধিষ্ঠাতৃত্বং সর্বজ্ঞাতৃত্বং চ ॥ তারকং সর্ববিষয়ং সর্বথাবিষয়ম্ অক্রমং চেতি বিবেকজং জ্ঞানম্" (যোগ ৩।৪৬, ৫৪) ॥]
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ