ঋগ্বেদ ১/১/১ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 July, 2025

ঋগ্বেদ ১/১/১

অগ্নিমীল়ে পুরোহিতং য়জ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্।
হোতারং রত্নধাতমম্।।১।। (ঋগ্বেদ ১।১।১) 

বিষয়

এখানে প্রথম মন্ত্রে ‘অগ্নি’ শব্দ ব্যবহার করে ঈশ্বর তাঁর আত্মিক ও ভৌত অর্থের উপদেশ প্রদান করেছেন।

পদার্থ

আমরা (যজ্ঞস্য) বিদ্বানদের সন্মান, সংমিলনের মহিমা এবং কর্মের (হোতারম্) প্রদান ও গ্রহণকারী (পুরোহিতম্) উৎপত্তির সময় থেকে প্রমাণিত, পরমাণু ইত্যাদি সৃষ্টির ধারণ ও (ঋত্বিজম্) বারবার উৎপত্তির সময়ে স্থূল সৃষ্টির রচনাকারী এবং ঋতু-ঋতুতে উপাস্য (রত্নধাতম্ম) এবং নিশ্চিতভাবে মনোহর পৃথিবী বা সোনার মতো রত্ন ধারণকারী বা (দেবম্) প্রদানকারী এবং সমস্ত পদার্থের প্রদর্শক পরমেশ্বরের (ঈলে) স্তুতি করি।

এবং উপকারার্থে আমরা (যজ্ঞস্য) বিদ্যা ইত্যাদি দান ও শিল্পকর্ম দ্বারা উৎপন্নযোগ্য পদার্থের (হোতারম্) প্রদানকারী এবং (পুরোহিতম্) সেই পদার্থের উৎপত্তির সময় থেকে পূর্বেই ছেদন, ধারণ ও আকর্ষণ ইত্যাদি গুণ ধারণকারী (ঋত্বিজম্) শিল্পবিদ্যা ব্যবহারের জন্য (রত্নধাতম্ম) উত্তম সোনার রত্ন ধারণ নিশ্চিতকারী এবং (দেবম্) যুদ্ধ ইত্যাদিতে কলাযুক্ত শস্ত্র দিয়ে বিজয় প্রদানকারী ভৌত অগ্নির (ঈলে) বারবার প্রার্থনা করি।

এখানে ‘অগ্নি’ শব্দের দুইটি অর্থকে প্রমাণিত করা যায় —
(ইন্দ্রং মিত্রম্) এই ঋগ্বেদ মন্ত্র থেকে জানা যায় যে এক সৎব্রহ্মের ইন্দ্র ইত্যাদি বহু নাম রয়েছে।
এবং (তদেবাগ্নি) এই যজুর্বেদ মন্ত্র থেকেও অগ্নি ইত্যাদি নাম দ্বারা সত্যচেতনানন্দাদির লক্ষণযুক্ত ব্রহ্মকে জানার কথা বলা হয়েছে।
(ব্রহ্ম হ্য) ইত্যাদি শতম্পথ ব্রাহ্মণ প্রমাণ থেকে অগ্নি শব্দ ব্রহ্ম ও আত্মা এই দুই অর্থ বহন করে।
(অয়ং য়া) এই প্রমাণে অগ্নি শব্দ দ্বারা প্রজা শব্দের মাধ্যমে ভৌত এবং প্রজাপতি শব্দ দ্বারা ঈশ্বরের ধারণ ঘটে।
(অগ্নি) এই প্রমাণ থেকে সত্যাচরণের নিয়মাবলী যথাযথভাবে পালন করাই ‘ব্রত’ বলা হয়, এবং এই ব্রতের প্রভু পরমেশ্বর।
(ত্রিভিঃ পবিত্রৈঃ) এই ঋগ্বেদের প্রমাণে জ্ঞানী এবং সর্বজ্ঞ প্রদর্শক বিশেষণ দ্বারা অগ্নি শব্দে ঈশ্বরের ধারণ হয়।

নিরুক্তকার যাস্কমুনি জিও ঈশ্বর ও ভৌত উভয় অর্থকে অগ্নি শব্দের ভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা সংস্কৃতিতে যথাযথভাবে দেখা যায়। তবে সুবিধার্থে সংক্ষেপে বলা যায় — যাস্কমুনিজি স্থৌলাষ্ঠীবি ঋষির মত অনুযায়ী অগ্নি শব্দের সর্বোত্তম অর্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন, অর্থাৎ যা সব যজ্ঞে প্রথম প্রকাশ পায়, সেটিই সর্বোত্তম।

এই কারণে অগ্নি শব্দ দ্বারা ঈশ্বর এবং দাহগুণসম্পন্ন ভৌত অগ্নি—এই দুইই অর্থে ধারণ হয়।
(প্রশাসিতারং; এতমে) মনুজির এই দুটি শ্লোকে পরমেশ্বরের অগ্নি ইত্যাদি নাম প্রচলিত।
(ঈলে) এই ঋগ্বেদের প্রমাণে অসীম বিদ্যাশক্তি ও চেতনারূপ গুণসম্পন্ন পরমেশ্বরের ধারণ হয়।

এবার ভৌত অর্থের প্রমাণ দেখানো হল —
(যদঅশ্বং) ইত্যাদি শতম্পথ ব্রাহ্মণের প্রমাণ থেকে অগ্নি শব্দ দ্বারা ভৌত অগ্নির ধারণ হয়।
এই অগ্নি বৃষ ও অশ্বের মতো সমস্ত দেশান্তরে পৌঁছায়, কারণ এটি কলাযন্ত্র দ্বারা প্রেরিত হয়ে দেব-শিল্পবিদ্যা জানেন এমন বিদ্বানদের বিমান ইত্যাদির মাধ্যমে দূর-দূরান্তরে পৌঁছে দেয়।
(তূর্ণি) এই প্রমাণ থেকেও ভৌত অগ্নির ধারণ হয়, কারণ এটি উক্ত দ্রুততা ও হব্যবাট ইত্যাদির জন্য তূর্ণি নামে পরিচিত।
(অগ্নিঃ ভৈ য়ো) ইত্যাদি আরও অনেক প্রমাণে অশ্ব নাম দ্বারা ভৌত অগ্নির ধারণ করা হয়েছে।
(বৃষঃ) যখন এই ভৌত অগ্নি শিল্পবিদ্যাশক্তি সম্পন্ন বিদ্বানরা যন্ত্রকলায় যাত্রীদের প্রজ্জ্বলিত করে সজ্জিত করেন, তখন (দেববাহনঃ) সেই যাত্রীদের দেশান্তরে বৃষ বা অশ্বের মতো দ্রুত পৌঁছে দেন।

এই গুণসম্পন্ন অশ্বরূপ অগ্নির গুণগুলি (হবিষ্মন্তঃ) হব্যুক্ত মানুষের কর্মসিদ্ধির জন্য (ঈলতে) খোঁজা হয়।
এই প্রমাণ থেকেও ভৌত অগ্নির ধারণ নিশ্চিত হয়। ১॥

(অগ্নিম্) পরমেশ্বর বা ভৌতিক।
ইন্দ্রং মিত্রং বরুণং অগ্নিমাহুরথো দিউযঃ, স সুপর্ণো গরুত্মান্। একং সদ্বিপ্রা বহুধা বলেন অগ্নিঃ যমঃ মাতরিশ্বানমাহুঃ॥ (ঋ. ১.১৬৪.৪৬)
এ দ্বারা জানা যায় যে এক সৎব্রহ্মের ইন্দ্র ইত্যাদি বহু নাম রয়েছে।
তদেভ অগ্নি, তদাদি আদিত্য, তদ্বায়ু, তদুচন্দ্রমাঃ।
তদেভ শুক্র, তদ ব্রহ্ম, তা আপঃ, স প্রজাপতিঃ। (যজু ০৩২.১)
যত্ সত্যচিদানন্দাদির লক্ষণযুক্ত ব্রহ্ম, তা এখানে অগ্নি ইত্যাদি নাম দ্বারা বোঝা যায়।
ব্রহ্ম হ্য অগ্নিঃ। (শ.ব্রা. ১.৪.২.১১)
আত্মা বা অগ্নিঃ। (শ.ব্রা. ৭.২.৩.২)
এখানে অগ্নি শব্দ দ্বারা ব্রহ্ম ও আত্মার ধারণ হয়েছে।
অয়ং অগ্নিঃ প্রজা ও প্রজাপতিঃ। (শ.ব্রা. ৯.১.২.৪২)
এখানে প্রজা শব্দ দ্বারা ভৌতিক, প্রজাপতি শব্দ দ্বারা ঈশ্বর বোঝা যায়।
অগ্নিঃ দেবানাং বৃতপতিঃ। এই অনুযায়ী দেবরা তাদের ব্রত পালন করে যা সত্য। (শ.ব্রা. ১.১.১.২,৫)
সত্যাচরণ নিয়ম পালন করাই ব্রত এবং ব্রতের প্রভু ঈশ্বর।
ত্রিভিঃ পবিত্রৈঃ ঋগ্বেদে হৃৎদয় জ্ঞানের আলো দ্বারা প্রজা জানে।
বর্ষিষ্ঠং রত্নমকৃত স্বধাভিঃ আদিদ্যাভা পৃথিভী পর্যপশ্যৎ॥ (ঋ. ৩.২৬.৮)
এখানে অগ্নি শব্দের অনুবৃত্তি দ্বারা জ্ঞানের দ্বারা প্রজা পর্যপশ্যৎ, অর্থাৎ সর্বজ্ঞ ঈশ্বরকে বোঝা যায়।

যাস্কমুনি এখানে উভয় অর্থের জন্য অগ্নি শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন—
অগ্নিঃ কস্মাদ অগ্রণীঃ ভবতী। অগ্রম্ যজ্ঞে প্রথমে উপস্থাপিত হয়, সর্বোত্তম।
স্থৌলাষ্ঠীবি ঋষি বলেন: অগ্নি ন ক্নোপয়তি, ন স্নেহয়তি, ত্রিভ্য আখ্যাতে জায়ত।
শাকপূণিঃ বলেন, দাহ বা নীতি অনুযায়ী এটি প্রয়োগ হয়।
অগ্নিমীলে অগ্নিঃ আমি প্রার্থনা করি—অধ্যেষণাকর্ম বা পূজাকর্মের জন্য।
দেব দান বা দীপন বা প্রদর্শনের জন্য। যিনি দেব, তিনি দেবতা।
হোতারম্ হ্বাতারম্ জুহোতেঃ হোতেঃ — রত্নধাতম্ রমণীয় ধনদাতা। (নিরু. ৭.১৪-১৫)

ভাবার্থ

এই মন্ত্রে শ্লেষালঙ্কার দ্বারা দুইটি অর্থ ধারণ হয়।
পিতার সদৃশ দয়ালু পরমেশ্বর সমস্ত জীবের কল্যাণ এবং সকল বিদ্যার প্রাপ্তির জন্য কালক্রমে বেদ উপদেশ দেন।
যেমন পিতা বা শিক্ষক তার শিষ্য বা পুত্রকে শিক্ষা দেন — “এমন কর, এমন কথা বল, সত্য বল” ইত্যাদি; শিক্ষার শুনে শিশু বা শিষ্যও বলে, “আমি সত্য বলব, পিতা ও আচার্যের সেবা করব, মিথ্যা বলব না।”

ঠিক এইভাবে, পরস্পরের মধ্যে শিক্ষক শিষ্য বা শিক্ষার্থীদের উপদেশ দেন, তেমনি ‘অগ্নিমীলে’ ইত্যাদি বেদমন্ত্রেও জানা উচিত। কারণ ঈশ্বর বেদ প্রকাশ করেছেন সমস্ত জীবের সর্বোত্তম সুখের জন্য।
এই বেদের উপদেশের পরোপকার ফল হিসেবে ‘অগ্নিমীলে’ মন্ত্রে ‘ঈডে’ — এই মহান পুরুষের উল্লেখও আছে।

(অগ্নিমীলে) এই মন্ত্রে পরমার্থ ও বাস্তবজ্ঞান অর্জনের জন্য অগ্নি শব্দ দ্বারা ঈশ্বর এবং ভৌত অর্থ দুটোই ধরা হয়েছে।
যে প্রাচীনকালে আর্যজনেরা অশ্ববিদ্যার নামে দ্রুত গমনসাধনের জন্য শিল্পবিদ্যা আবিষ্কার করেছিলেন, তা অগ্নি বিদ্যারই উন্নতি ছিল।
পরমেশ্বর নিজে সবকিছু প্রদর্শনকারী এবং অসীম জ্ঞানী হওয়ায়, ভৌত অগ্নি রূপে দাহ, প্রজ্জ্বলন, গতি, ছেদন ইত্যাদি গুণ এবং শিল্পবিদ্যার প্রধান সাধক হওয়ায় অগ্নি শব্দের প্রথম অর্থ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১॥

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ঋগ্বেদ ১০/১৯১/১

সংসমিদ্যুভসে বৃষন্নগ্নে বিশ্বান্যর্য আ।  ইळস্পদে সমিধ্যসে স নো বসূন্যা ভর॥ ঋগ্বেদ ১০।১৯১।১ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজকৃত পদার্থ ভাষ্যঃ (বৃষণ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ