বৈদিক দৃষ্টিতে গয়াতে পিণ্ডদান - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

05 September, 2025

বৈদিক দৃষ্টিতে গয়াতে পিণ্ডদান

 

বৈদিক দৃষ্টিতে গয়াতে পিণ্ডদান

✨ গয়ার তথাকথিত “বিষ্ণুপদ” ও পিণ্ডদানের আসল রূপ ✨
গয়াতে আধুনিক স্বার্থান্বেষী লোকেরা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এক ভ্রান্ত তীর্থ তৈরি করেছেন।
👉 গয়া, বিষ্ণুপদ, গয়শির—এসব শব্দের প্রকৃতার্থ গোপন করে, সাধারণ মানুষকে ভুল পথে চালিত করার আশায় ফল্গু নদীর তীরে একটি পাষাণে মানুষের পদচিহ্ন খোদাই করে তার নাম দেওয়া হয়েছে “বিষ্ণুপদ”।
এরপর প্রচার করা হয়—
“এখানে যদি কেউ পিতৃপুরুষের নামে শ্রাদ্ধ করে, তবে তাঁদের মুক্তি নিশ্চিত!”
⚠️ অর্থাৎ জীবনে যত পাপই কেউ করুক না কেন, যদি একবার গয়ায় গিয়ে ‘পিণ্ডদান’ করা হয়, তাহলেই মুক্তি মিলবে—এমন ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হয়।
আসলে কী হয়❓
এই সুযোগে তথাকথিত ধর্মব্যবসায়ী মহাশয়েরা ধনীদের বিভ্রান্ত করে—
🔹 জোরপূর্বক মাথা মুণ্ডন করান,
🔹 নানা প্রকার কৃত্রিম আচার-অনুষ্ঠান চাপিয়ে দেন,
🔹 এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের সর্বস্ব লুটে নেন।
👉 এ সমস্তই মিথ্যা প্রচার এবং ভ্রান্তির ফাঁদ।
👉 সত্যশাস্ত্রের আলোয় স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, এ সবের সঙ্গে পরমাত্মার সত্য জ্ঞান ও মুক্তির কোনো যোগ নেই।
👉 এ সমস্ত পরস্বধন লুটে খাওয়া উদরপালক শঠ মহাত্মাদের লীলা সীমাহীন, আর তা কেবল মিথ্যার ভাণ্ডার ছাড়া আর কিছু নয়।
সত্যশাস্ত্রের প্রমাণ থেকেই জানা যায় প্রকৃত বিষয়—
🔹 (প্রাণো বৈ বলং) ইত্যাদি বচনের অভিপ্রায় এই যে, অত্যন্ত শ্রদ্ধার সহিত গয়া সংজ্ঞক প্রাণাদি দ্বারা পরমেশ্বরের উপাসনা করলে, জীব মুক্তি লাভ করতে সমর্থ হন। এই গয়ারূপী প্রাণমধ্যে, সত্য ও বল প্রতিষ্ঠিত। পরমেশ্বর এই প্রাণেরও প্রাণস্বরূপ হন, এবং গায়ত্রী মন্ত্রকে ঐ প্রাণের প্রতিপাদনকারী বলা হয়। (পুনশ্চ) এই গায়ত্রীকে 'গয়াও' সংজ্ঞা দেওয়া যায়, যেহেতু উক্ত গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থ জ্ঞাত হইয়া, তদ্বারা শ্রদ্ধার সহিত পরমেশ্বরের ভক্তি ও উপাসনা করিলে, জীব সকল প্রকার তাপ বা দুঃখ হইতে ত্রাণ পাইয়া মুক্ত হন। প্রাণ শব্দেও গয়া বুঝায়। (যোেগশাস্ত্রানুসারে) প্রাণায়াম দ্বারা ঐ প্রাণকে রুদ্ধ করিয়া, ঈশ্বরপ্রণিধানরূপ পরমেশ্বরের একান্ত ভক্তি করলে, পিতর অর্থাৎ জ্ঞানীলোকসকল সর্বপ্রকার তাপ হইতে পরিত্রাণ পাইযা, দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তিরূপ মুক্তি প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। যেহেতু পরমাত্মা প্রাণেরও রক্ষাকর্তা,এজন্য ঈশ্বরের নাম গায়ত্রী (অর্থাৎ ঈশ্বরকে গায়ত্রী বলা যায়-অনুবাদক) এবং গায়ত্রী শব্দেও গয়া বুঝাইয়া থাকে।

🔹 বৈদিক নির্ঘন্টু গ্রন্থে ‘গয়া’ শব্দের অর্থ গৃহ, সন্তান ও প্রজা। এদের প্রতিও শ্রদ্ধা করা গয়া শ্রাদ্ধ।
— যেমন, সন্তানকে সুশিক্ষা ও লালন-পালন করা গয়াশ্রাদ্ধ।
— প্রজাদের সুষ্ঠু পালন, সুখবৃদ্ধি, বিদ্যা প্রদান, সত্যোন্নতি সাধন—এসবই গয়াশ্রাদ্ধ।


বৈদিক কোষরূপ নির্ঘন্টুগ্রন্থে 'গয়া' শব্দে গৃহ, সন্তান ও প্রজা এই তিন প্রকার অর্থ বুঝায়, এই তিনটি পদার্থকেও গয়া বলা যায়। এজন্য মনুষ্যের উপরোক্ত তিন প্রকার পদার্থের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা করা আবশ্যক। এইরূপে মাতা, পিতা, আচার্যা ও অতিথি আদি গুরুজনের সেবা তথা সকলের যাহাতে উপকার সাধিত হয়, তদ্বিষয় অত্যন্ত শ্রদ্ধার সহিত কার্য্য করাকেও গয়া শ্রাদ্ধ বলা যায়।


⚠️ কিন্তু দুঃখজনক বিষয়, এ ধরনের মহান কর্মকে ফেলে দিয়ে অশিক্ষিত, ধর্মভ্রষ্ট, শঠ ও ধর্মধ্বজীরা মিথ্যা প্রপঞ্চ দাঁড় করিয়েছে। যেমন—একখণ্ড পাথরে পদচিহ্ন খোদাই করে তার নাম দিয়েছে “বিষ্ণুপদ”! অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, এবং মানুষের জানা উচিত যে এর কোনো ভিত্তি নেই।


👉 সর্বব্যাপক পরমেশ্বরই আসল বিষ্ণু। যিনি সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা।
নিরুক্তকার বলেছেন— অর্থাৎ বিষ্ণু ধাতুর ব্যাপকার্থ বাচক অর্থাৎ সমস্ত চরাচর জগতে প্রবিষ্ট বা স্থিত থাকা অথবা জগৎকে আপনার ব্যাপকতায় স্থাপন করা অর্থে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। এজন্য নিরাকার সর্বব্যাপক পরমেশ্বরকেই বিষ্ণু বলা হয়। (ক্রমুপাদ বিক্ষেপে) এই ধাতুর অর্থ এইরূপ যে, দ্বিতীয় বস্তুকে পদ দ্বারা চাপা বা স্থাপন করা অর্থাৎ ইহার অভিপ্রায় এইরূপ যে, ভগবান নিজ পাদ অর্থাৎ প্রকৃতি পরমাণু আদি সামর্থরূপ অংশ দ্বারা, সমগ্র জগৎকে তিন স্থানে স্থাপন করিয়া রহিয়াছেন, যথা ভারযুক্ত ও প্রকাশরহিত জগৎকে পৃথিবীতে, লঘু রূপ বায়ু ও পরমাণু আদি সূক্ষ্ম দ্রব্যকে অন্তরীক্ষে, ও প্রকাশমান সূর্য্য ও জ্ঞানেন্দ্রিয়াদিকে প্রকাশ মধ্যে রচনা করিয়া স্থাপন পূর্বক ধারণ করিয়া রহিয়াছেন।


তিনি প্রকৃতির পরমাণু শক্তি দ্বারা জগৎকে তিন স্তরে স্থাপন করেছেন—
1️⃣ ভারযুক্ত ও প্রকাশহীন জগৎকে পৃথিবীতে,
2️⃣ সূক্ষ্ম বায়ু ও পরমাণুকে অন্তরীক্ষে,
3️⃣ আর সূর্য ও জ্ঞানেন্দ্রিয়াদি প্রকাশমান জগতকে আলোর মধ্যে।
(যদিদং কিঞ্চ ইত্যাদি) — এই 'বিষ্ণুপদ' বিষয় যাস্কমুনিও এরূপ ব্যাখ্যান করিয়াছেন যে, এই সব সর্বব্যাপক পরমেশ্বর সৃষ্টি করিয়া, ত্রিধা = ইহাতে তিন প্রকার রচনা দেখাইয়াছেন। যাহাতে মোক্ষপদ, প্রাপ্ত হওযা যায়, তাহাকে সমারোহণ বলে।

বিষ্ণুপদ গয়শির অর্থাৎ প্রাণেরও উপরে।
মানুষ প্রাণে স্থির হয়ে, প্রাণ থেকেও প্রিয় অন্তর্যামী পরমেশ্বরকে লাভ করে থাকে। অন্য কোনো উপায়ে পরমাত্মাকে পাওয়া যায় না। কারণ, তিনি প্রাণেরও প্রাণ এবং জীবাত্মায় ব্যাপ্ত পরমেশ্বর। জীব তাঁর থেকে দূরে থাকতে পারে না, আর তিনিও জীব থেকে দূরে নন।

সূক্ষ্ম ভৌতিক পদার্থগুলো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু যখন প্রকৃতিগুলো স্থূলরূপে দৃশ্যমান হয়—তখন এই দৃশ্যমান ও অদৃশ্য দুই ধরনের জগৎ যাঁর মধ্যে অবস্থান করছে এবং যিনি উহার মধ্যে পূর্ণরূপে বিরাজমান, তাকেই “বিষ্ণুপদ” বলা হয়।

কিন্তু এই সত্যার্থ না জেনে (অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে স্বার্থসিদ্ধির জন্য গোপন করে) অবিদ্বান ও পাষণ্ড লোকেরা একটি পাথরে মানুষের পদচিহ্ন খোদাই করে তার নাম দিয়েছে “বিষ্ণুপদ”। সেই কল্পিত বিষ্ণুপদকে সবাই মিথ্যা বলে জেনে রাখবেন।

এইভাবে তীর্থ শব্দের প্রকৃত অর্থ না বুঝে এবং তার ভ্রান্ত অর্থকে সত্য মনে করে অজ্ঞ ও স্বার্থপর লোকেরা ভ্রান্ত মানুষকে প্রতারণা করে সর্বস্ব লুটে নেয় এবং নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নানা মিথ্যাচার চালু করেছে। কিন্তু এগুলো কখনোই সত্য নয়।

👉 তাহলে সত্য তীর্থ কী?
যে দ্বারা জীব দুঃখসাগর থেকে মুক্ত হয়ে নিত্যসুখ লাভ করে, অর্থাৎ শাস্ত্রসম্মত তীর্থ, যা প্রাচীন আর্যরা অনুষ্ঠান করতেন এবং যা জীবকে দুঃখ থেকে মুক্তি দিয়ে সুখপ্রাপ্তির উপায়—সেই সমস্ত সাধনাকেই তীর্থ বলা হয়।

বেদোক্ত তীর্থ
অগ্নিহোত্র থেকে অশ্বমেধ পর্যন্ত যে কোনো যজ্ঞ শেষে যে স্নান করা হয় তাকেই তীর্থস্নান বলা হয়। কারণ এই বৈদিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জল, বায়ু ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদার্থের শুদ্ধি হয়, যা মানুষের সুখ বৃদ্ধি করে। ফলে এই কর্ম বা যজ্ঞকারী ব্যক্তি সুখ ও শুদ্ধি লাভ করেন।

ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে—
সকল মানুষের উচিত বৈরভাব ত্যাগ করে এমন কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া, যা সবার সুখবৃদ্ধি করে এবং কোনোভাবেই কাউকে দুঃখ না দেওয়া। অপরদিকে, যারা বেদবিরুদ্ধ আচরণ করে, অন্যায় করে, স্বার্থে নিমগ্ন হয়ে অন্যকে পীড়া দেয়, তারা শাস্তিযোগ্য। তাই যারা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করেন, তারাও তীর্থস্বরূপ।

তীর্থের আসল অর্থ
বেদাদি শাস্ত্রকে তীর্থ বলা হয়। কারণ এর পাঠ ও অনুশীলন মানুষকে দুঃখ থেকে মুক্তি দেয় এবং সুখ এনে দেয়।
আবার অষ্টাধ্যায়ীর সূত্র অনুযায়ী, বেদশাস্ত্রের শিক্ষক তথা আচার্য, মাতা, পিতা ও অতিথিকেও তীর্থ বলা হয়। কারণ তাঁদের শ্রদ্ধা ও যত্নসহকারে সেবা করলে, এবং তাঁদের আদেশ পালন করলে জীবাত্মা শুদ্ধ হয় ও দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করে।

👉 এই হলো “তীর্থ” ও “বিষ্ণুপদ”-এর প্রকৃত ব্যাখ্যা।

নিরুক্ত ২২।১৮ বিষ্ণুস্ত্রিধা নিধত্তে পদম্...

🔗 সত্যকে জানুন, ভ্রান্তিকে প্রত্যাখ্যান করুন।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মার অজাচারের সত্যতা

  শতপথ ব্রাহ্মণের পৌরাণিক ভাষ্য  অনুসারে প্রজাপতি তার কন্যা দৌঃ বা ঊষার প্রতি কামার্ত হয়ে তার সাথে সহবাস করেছিলেন। দেবতাদের চোখে প্রজাপতির ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ