ব্রহ্মার অজাচারের সত্যতা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

05 September, 2025

ব্রহ্মার অজাচারের সত্যতা

 

ব্রহ্মার অজাচারের  সত্যতা
শতপথ ব্রাহ্মণের পৌরাণিক ভাষ্য  অনুসারে প্রজাপতি তার কন্যা দৌঃ বা ঊষার প্রতি কামার্ত হয়ে তার সাথে সহবাস করেছিলেন। দেবতাদের চোখে প্রজাপতির এই কর্ম পাপ বলেই বিবেচিত হয়েছিল। দেবতারা তখন পশুপতি রুদ্রকে ডেকে বললেন, “নিজের মেয়ের সাথে, আমাদের বোনের সাথে যে এমন আচরণ করে সে নিশ্চয় পাপ করে । বিদ্ধ কর তাকে রুদ্র, লক্ষ্য স্থির করে তাকে বিদ্ধ কর। “

শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৭/৪/১-৩ ;Translated by JULIUS EGGELING ; motilal banarsidass publishers PRIVATE LIMITED

মহাভাগবত পুরাণেও এই কাহিনীটি একইরকমভাবে পাওয়া যায়। [  মহাভাগবত পুরাণ/ ১ম খণ্ড/ ২১ অধ্যায় ; অনুবাদক- শ্যামাপদ ন্যায়ভূষণ ]

মৎস্য পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মার মনে তার কন্যা শতরূপার প্রতি কাম জেগেছিল। শতরূপা যখন ব্রহ্মাকে প্রণাম করার জন্য প্রদক্ষিণ করছিলেন, তখন তার রূপ দেখার জন্য ব্রহ্মার বাকি তিন দিকে তিনটি মাথার সৃষ্টি হয়। আগে তিনি এক মস্তকধারী ছিলেন, এরপর হলেন চতুর্মস্তকধারী।এছাড়াও তার কামাতুরতার কারণে উপরের দিকেও একটি মাথার সৃষ্টি হল। এর ফলে ব্রহ্মা পঞ্চমস্তকধারী হলেন।  ব্রহ্মা যে আগে পঞ্চমুখবিশিষ্ট ছিলেন, একথা অনেক শাস্ত্র হতেই জানা যায়। যাইহোক,  এরপর ব্রহ্মা তার কন্যা শতরূপাকে বিয়ে করেন এবং একশ বছর পদ্মপাতার ভেতরে শতরূপার সাথে সঙ্গম করেন। এর ফলে ব্রহ্মার ঔরসে শতরূপার গর্ভে মনু নামে এক পুত্রের জন্ম হয়।- সূত্রঃ মৎস্য পুরাণ/৩য় অধ্যায়; শ্রী পঞ্চানন তর্করত্ন কর্তৃক সম্পাদিত

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত ও শ্রীমদ্ভাগবতাদি গ্রন্থগুলো, যেগুলো ব্যাসদেবের নামে সম্প্রদায়ভুক্ত লোকেরা রচনা করেছেন, সেগুলোকে কখনোই পুরাণ বলা যায় না। বরং সেইসব গ্রন্থকে নবীন বলা উচিত। সম্প্রতি তাদের মিথ্যাত্ব প্রমাণের জন্য এখানে সংক্ষেপে কিছু বলা হচ্ছে।

নবীন গ্রন্থকারেরা নিচের রূপকালঙ্কারটা না বুঝে ভ্রান্তিবশত মিথ্যারূপে বর্ণনা করেছেন— যেমন: (প্রজাপতির্বৈ স্বাং দুহিতরম্ ইত্যাদি)। এখানে প্রজাপতি শব্দে সূর্যকে বোঝানো হয়েছে, যার দুই কন্যা হলো ১ম প্রকাশ ও ২য় উষা। কোনো বস্তু যেখান থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে সেই বস্তুর সন্তান বলা যায়। এজন্য উষা, যা রাত শেষে তিন-চার ঘটিকা সময়ে পূর্বদিকে রক্তবর্ণ হয়ে দেখা যায়, সূর্যকিরণ থেকে উৎপন্ন হওয়ায় সূর্যের কন্যা বলা হয়েছে।

উষার সামনে প্রথম যে সূর্যকিরণ পড়ে, তাতেই বীর্য স্থাপনরূপ কার্য সম্পন্ন হয়। এই দুইয়ের মিলনে পুত্র অর্থাৎ দিবস জন্ম নেয়। শতপথ ব্রাহ্মণে প্রজাপতিসবিতা—এই দুই পদই সূর্যের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এভাবে নিরুক্ত-এও রূপকালঙ্কার বিষয় উল্লেখ আছে, যেমন: (তত্র পিতা দুহিতু গর্ভ দধাতি পর্জন্যঃ পৃথিব্যাঃ)

অর্থাৎ, পিতার রূপ যে পর্জন্য বা জলরূপ মেঘ, তার কন্যারূপ হলো পৃথিবী, কারণ পৃথিবীর উৎপত্তি জল থেকেই হয়েছে। যখন সেই মেঘ পৃথিবীর বুকে বৃষ্টি বর্ষণ করে জলরূপ বীর্য ধারণ করায়, তখন পৃথিবী গর্ভবতীর মতো কিছুদিন থাকে এবং পরে ঔষধাদি বা উদ্ভিদের মতো অনেক সন্তান জন্ম দেয়।

এই বিষয়ের মূল কথা ঋগ্বেদে আছে, যেমন: (দৌর্মে পিতা ইত্যাদি)
দ্যৌ বা সূর্যের প্রকাশ সর্বপ্রকার সুখের কারণ হওয়ায় তাকে পিতার সমান বলা হয়েছে। আর পৃথিবী বৃহৎ স্থান ও ক্ষেত্রস্বরূপ হওয়ায় মাননীয় হয়ে মাতারূপে গণ্য হয়েছে।

পুনরায় (উত্তান০) যেরকম উপরে ও নিচে কাপড় বা ছাউনি এবং বসার আসন রাখা যায়, বা যেমন দুই সেনা মুখোমুখি দাঁড়ায়, সেইভাবে সূর্য ও পৃথিবীকে বুঝতে হবে। অর্থাৎ, ওপরের আলোক বা চন্দ্রতাপের মতো সূর্য এবং নিচের আসনরূপ পৃথিবী—এরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে যোনি অর্থাৎ গর্ভস্থাপনের স্থান হলো পৃথিবী, আর গর্ভস্থাপনকারী পতি হলো মেঘ। সে তার বিন্দুরূপ বীর্য দ্বারা পৃথিবীকে গর্ভধারণ করায় এবং অন্ন ও ঔষধিরূপ বহু সন্তান জন্ম দেয়, যার দ্বারা সমগ্র জগতের পালন হয়।

(শাসদ্ধহি০) সকলের ভোগ্য বস্তু দানকারী পরমেশ্বর মানুষের জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য রূপক-আলঙ্কারের মাধ্যমে কার্যকারণ শিক্ষা দিয়েছেন। আর সেই (ঋতস্য) জলধারক (ন্যাঙ্গা০) জগতে পুত্র-নাতি ইত্যাদির পালন ও উপদেশ দিয়ে থাকেন। (পিতা যত্র দুহিতং০) সুখময় ব্যবহারের মধ্যে থেকে পিতা কন্যার মধ্যে বীর্য স্থাপন করেন—যেমন আগেই লেখা হয়েছে, এখানেও তাই বোঝা দরকার। যিনি এইসব পদার্থ ও তাদের সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন, তাঁকেই আমরা প্রণাম করি।

এইরকম রূপক-আলঙ্কারযুক্ত কথা খুব সুন্দরভাবে বেদ, নিরুক্ত ও ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু সেই রূপক-আলঙ্কারের মর্ম নষ্ট করে ব্রহ্মবৈবর্ত ও শ্রীমদ্ভাগবত প্রভৃতি মিথ্যা গ্রন্থে ভ্রান্ত অর্থ তৈরি করা হয়েছে। এরকম আরও নানা মিথ্যা বিষয় ঐসব গ্রন্থে লেখা আছে, যা বিদ্বানরা সবসময় এড়িয়ে চলবেন, যাতে সত্যকে ভুল না করেন।

📌রেফারন্সঃ

📕প্রজাপতির্বৈ স্বাং দুহিতরমভ্যধ্যায় দিবমিত্যন্য আহুরুষসমিত্যন্যে।তামৃশ্যো ভূত্বা রোহিতং ভূতামভ্যৈৎ। তস্য য়দ্ রেতসঃ প্রথমমুদদীপ্যত তদসাবাদিত্যোSভবৎ। ঐ০ব্রা০ ৩।৩৩,৩৪

📙প্রজাপতির্বৈ সুপর্ণো গরুত্মানেষ সবিতা॥ শত০ব্রা০ ১০।২।২।৪

📘তত্র পিতা দুহিতুর্গর্ভং দধাতি পর্জন্যঃ পৃথিব্যাঃ॥ নিরু০ ৪।২১

📗 দ্যৌর্মে পিতা জনিতানাভিরত্র বন্ধুৰ্ম্মে মাতা পৃথিবী মহীয়ম্।
উত্তানয়োশ্চম্বো৩র্যোরন্তরত্রা পিতা দুহিতুর্গর্ভমাধাৎ॥ ঋগ্বেদ ১।১৬৪।৩৩

📙শাসদ্বহ্নিদুহিতুর্ন্যসাদ্বিদ্ধা ঋতস্য দীধিতিং সপৰ্য্যন্।
পিতা য়ত্র দুহিতুঃ সেকমৃঞ্জনৎসং শগ্ম্যেন মনসা দধন্বে॥ ঋগ্বেদ ৩।৩১।১

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মার অজাচারের সত্যতা

  শতপথ ব্রাহ্মণের পৌরাণিক ভাষ্য  অনুসারে প্রজাপতি তার কন্যা দৌঃ বা ঊষার প্রতি কামার্ত হয়ে তার সাথে সহবাস করেছিলেন। দেবতাদের চোখে প্রজাপতির ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ