সাগর পার না যাওয়ার বাঁধন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 August, 2025

সাগর পার না যাওয়ার বাঁধন

সাগর পার না যাওয়ার বাঁধন

কিছু মানুষের ধারণা, হিন্দু পরম্পরা মানুষকে সাগর পার যেতে নিষেধ করেছিল। এমন অবস্থায় ভারতীয়দের বন্দিক সংস্কৃতি সারা বিশ্বে ছড়ানো সম্ভব হতো না। কিন্তু এই ধারণা এবং তার থেকে যে সিদ্ধান্ত টানা হয় তা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা আগেই বলে এসেছি যে মাদ্রাজের পূর্বদিকে দুই সহস্র মাইল সাগর পেরিয়ে বহু দেশে ভারতীয় ক্ষত্রিয়েরা সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। এর বিপুল উল্লেখ ইতিহাসে রয়েছে। সুতরাং হিন্দুরা সাগর পার হতে ভয় পেতেন বা ভীত হতেন—এই ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। আফগানিস্তানের দিক দিয়ে তো সাগর না পেরিয়েই ভারতীয় সেনারা ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে এশিয়ার সুদূর পূর্ব সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারত। তৃতীয়ত, অনাদি কাল থেকেই বৈদিক সংস্কৃতি ও সংস্কৃত ভাষা শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বে প্রসারিত হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের যাওয়া-আসা নিয়মিত ঘটত।


পশ্চিম এশিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যে সন্ত্রাস সৃষ্টি হলো এবং ভারতের ওপরও যে ভয়ঙ্কর ইসলামি আক্রমণ হলো, তাতে কিছু সময়ের জন্য ভারতে এই গুজব ছড়ানো স্বাভাবিক ছিল যে দেশের বাইরে গেলে বিপদ আছে। যেমন গ্রামে দাঙ্গা হলে মায়েরা বাচ্চাদের দাঙ্গাগ্রস্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করে, তেমনই ইসলামি সন্ত্রাসের সময় ভারতীয়দের বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ভারতীয় পরম্পরায় সীমান্ত পেরোনো নিষিদ্ধ ছিল। যদি তা-ই হতো তবে ‘वसुधैव कुटुम्बकम्‌’ (সমস্ত বিশ্ব এক পরিবার), বিশ্বদিগ্বিজয়, রাজসূয় যজ্ঞ, অশ্বমেধ যজ্ঞ ইত্যাদির সংজ্ঞা ভারতীয় সংস্কৃতিতে থাকতই না।


কর্নেল টড লিখেছেন— “অনাদি কাল থেকেই হিন্দুরা সমুদ্র ভ্রমণ করত। দূরবর্তী দ্বীপগুলোতে তাদের সংস্কৃতির বিস্তারই হিন্দুদের সাগর যাত্রার কঠিন প্রমাণ।” অন্য একজন পণ্ডিত এডওয়ার্ড পোকক লিখেছেন— “সিন্ধু উপকূলের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রযাত্রায় অভ্যস্ত ছিল। তার উল্লেখ মনুস্মৃতিতেও আছে। সাগর পার দেশ থেকে আনা দ্রব্য রাজাকে উপহার দেওয়ার প্রথার কথাও মনুস্মৃতিতে উল্লেখিত।” রামায়ণ এ-ও নৌকা ভ্রমণের উল্লেখ আছে। হিরেনের লেখা 0095 নামক গ্রন্থের ১২৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে যে সাগর পার ভ্রমণ করায় হিন্দুদের মধ্যে কোনো নিষেধ ছিল না। বরং মনুস্মৃতিতে বিদেশ থেকে ব্যবসা বা লেনদেনে যদি ক্ষতি হয় তবে তার ক্ষতিপূরণের নিয়ম দেওয়া আছে, যা স্পষ্ট করে যে বিদেশের সঙ্গে যাতায়াত ও লেনদেন চলত। সত্যনারায়ণের কাথায়ও সাগর পার বাণিজ্যের উল্লেখ আছে।


রামাবতারের পূর্বে বীর পরশুরাম একুশ বার সমগ্র বিশ্বে দিগ্বিজয় করেছিলেন। তিনি ইরানেও যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর সেনাদের অস্ত্র ছিল ‘পরশু’। পোকক তাঁর গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে পরশুধারী সেনারা যেসব অঞ্চল জয় করেছিল, সেই পারস্য দেশের নামকরণ হয়েছিল ‘পরশুয়’।


খাল্ডীয় নামে যে প্রাচীন জাতি ছিল, পোককের মতে তা মূলত প্রাচীন ব্রাহ্মণদের উপনাম ছিল। ইরান ও পারশু দেশ, কোলচিস ও আর্মেনিয়ার প্রাচীন মানচিত্র দেখলে ভারতীয়দের বসতির অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া যায়। রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি মহাকাব্যে উল্লেখিত অনেক ঘটনার নিদর্শনও সেইসব অঞ্চলে মেলে। প্রাচীনকালে ব্যাপকভাবে ভারতীয়রা সেখানে বসতি স্থাপন করেছিল, মানচিত্রগুলোই তার সাক্ষ্য দেয়।


ব্রোক্সস নদীর নামকে গ্রিক ভাষার মনে করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা সংস্কৃত শব্দ “উক্ষস্‌” (ষাঁড় বল) থেকে উদ্ভূত। ইংরেজি শব্দ Ox আসলে তারই সংক্ষিপ্ত রূপ। অক্সফোর্ড শহরের নাম এবং লন্ডনের Uxbridge অঞ্চলও সেই “উক্ষস” শব্দ থেকে এসেছে।


স্ক্যান্ডিনেভিয়া

পোককের গ্রন্থের ৫৫ পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে স্ক্যান্ডিনেভিয়া, ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চল ও ভারতের ক্ষত্রিয়রা একই বংশপরম্পরার।


পুরাণ অনুসারে শিবের পুত্রের নাম স্কন্দ। স্কন্দ ছিলেন দেবসেনাপতি। তাই ইউরোপের উত্তরাংশে নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক প্রভৃতি অঞ্চলকে যে ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়া’ নাম দেওয়া হয়েছে তা আসলে সংস্কৃত শব্দ “স্কন্দনাবীয়” থেকে এসেছে। স্কন্দের নাবিক দলের সেই এলাকায় ঘাঁটি ছিল।


কৈলাসঃ

গ্রীক জাতির মানুষ স্বর্গকে কৈয়লান্ (Koilan) বলে, রোমানরা বলে কোয়েলাম (Coelum)। দুটিই সংস্কৃত “কৈলাস” শব্দের অপভ্রংশ—এমন উল্লেখ পোকঙ্ক গ্রন্থের ৬৮ পৃষ্ঠায় আছে।


থেসালিয়া

ইউরোপের যে অঞ্চলকে থেসালিয়া বলা হয়, তার প্রাচীন নাম ছিল সংস্কৃত “শালিনদেশ” (চাল উৎপাদক দেশ)—এমন বর্ণনা পোককের গ্রন্থের ৫৯ পৃষ্ঠায় আছে। গ্রিক অভিধানে উল্লেখিত অথ্রস পর্বত আসলে সংস্কৃত “আদ্রিশ” শব্দ।


কাশ্যপীয়

গ্রিকদের মধ্যে কার্পীয় জাতির উল্লেখ আছে। তারা ছিলেন কাশ্যপ ঋষির বংশধর বা অনুসারী।


বিশ্বজুড়ে প্রাচীন স্থাপত্য

বিশ্বের বিখ্যাত স্থাপত্যগুলো ভারতীয় ইতিহাসের ভয়াবহ ভুলে যাওয়া অধ্যায়। আমার দুটি গ্রন্থ বিশ্ব ইতিহাসের গোপন অধ্যায় অনুযায়ী, বিশ্বের যত দর্শনীয় স্থাপত্য আছে—যা আজকে খ্রিষ্টীয় গির্জা বা ইসলামি মসজিদ-কবর নামে পরিচিত—আসলে সেগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ও মুহাম্মদপূর্ব বৈদিক মন্দির ও প্রাসাদ। লন্ডনের সেন্ট পল’স ক্যাথেড্রাল ছিল প্রাচীন কালে গোপাল কৃষ্ণের মন্দির। ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে অগ্নিকাণ্ডে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কতটা ক্ষতি হয়েছিল তা জানা যায় না, তবে পরে তৈরি নতুন ভবন হিসেবে জনমনে প্রচলিত হয়। কিন্তু আজও সেখানে কৃষ্ণ-পরম্পরার অনেক চিহ্ন সংরক্ষিত আছে।


পোককও লেখেন— “উত্তর ভারতের সূর্যবংশীয় মানুষের বিশ্বব্যাপী বিস্তার তাদের নির্মিত বিশাল স্থাপত্য থেকেই বোঝা যায়। যে সব দুর্গ, মন্দির, প্রাসাদ, জলাশয় প্রভৃতি আমরা রোম, ইতালি, গ্রীস, পেরু, মিশর, সিলোন প্রভৃতি অঞ্চলে দেখি, তার বিশালতা বিস্ময় জাগায়।”


এই মতকে সমর্থন করে বলা যায়, স্পেনের কার্ডাভা, বাগদাদ, বুখারা, সমরকন্দ, ইস্তাম্বুল, কাবুল প্রভৃতি শহরের বিশাল স্থাপত্য খ্রিষ্টান বা মুসলমানদের নয়। এগুলো আরও প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃতির সৃষ্টি, যদিও বর্তমানে এগুলোকে গির্জা বা মসজিদ বলা হয়।


👉 সংক্ষেপে: ভারতীয়রা প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রযাত্রা ও বিদেশে বসতি স্থাপনে সক্রিয় ছিল। সাগর পার হওয়া নিষিদ্ধ—এই ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত।


ইউরোপের প্রাচ্য সংস্কৃতি

আজকের দিনে কোট-প্যান্ট পরা ইউরোপীয় জীবনযাপনকে পাশ্চাত্য সভ্যতা বলা হয় এবং ধুতি পরা, তিলক লাগানো প্রভৃতি অভ্যাসকে প্রাচ্য বা পূর্বদেশীয় সভ্যতা বলা হয়। কিন্তু এই ভেদ মাত্র ১০০০–১৫০০ বছর আগে থেকে করা শুরু হয়েছে। মূলতঃ সারা বিশ্বেই বৈদিক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। তাই “ইউরোপের প্রাচ্য সংস্কৃতি” শিরোনাম দেখে কারও বিস্ময় বোধ করার কিছু নেই।


ইউরোপের সেই প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃতির উল্লেখ নানা গ্রন্থে ও বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। ৩ জানুয়ারি, ১৮৬৮ সালে বেলজিয়ামের গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক (কিউমঁ) তাঁর এক গ্রন্থে প্রাচীন ইউরোপীয় সমাজজীবনের বিবরণ দেন। এর ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। কিউমঁর আরেক গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণে খ্রিষ্টধর্মের পূর্ববর্তী রোমান সমাজজীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।


তিনি লেখেন, খ্রিষ্টধর্ম আসার আগে ইউরোপে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মতবাদ বা সম্প্রদায় ছিল। প্রত্যেকটির নিজস্ব তত্ত্ব, আচার ও অনুষ্ঠান ছিল এবং সেগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা চলত। তাদের অনুষ্ঠানাদি, আধ্যাত্মিক সাধনা, শাস্ত্রচর্চা, দান-ধ্যান, দেব-উৎসব, আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষলাভের ধারণা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। তার তুলনায় খ্রিষ্টধর্ম শুষ্ক ও নিরস মনে হতো। তাই খ্রিষ্টধর্মের নেতারা এক কৌশল নিলেন—তারা সেই প্রাচীন উৎসব-অনুষ্ঠানগুলো নিজেদের ধর্মে মিশিয়ে নিলেন।


কিউমঁ লিখেছেন, “খ্রিষ্টধর্মের উৎসবগুলো আসলে খ্রিষ্টপূর্ব প্রাচীন পরম্পরা থেকে নেওয়া।” যেমন—৪র্থ শতক থেকে বড়দিন ২৫ ডিসেম্বর পালিত হতে শুরু করে, কারণ সেই দিন সূর্যের উত্তরায়ণ উৎসব (শীত অয়নান্ত) হতো, যাকে নাতালিস সোলিস ইনভিক্টি বলা হতো।


তিনি আরও লিখেছেন, প্রাচীন পূর্বদেশীয় সভ্যতাগুলোতেই বিদ্যা, শিল্প, শাস্ত্র, প্রজ্ঞা, সম্পদ ও শিল্পোদ্যোগের প্রাচীনতম ধারা দেখা যায়। খগোলশাস্ত্র, গণিত ও আধ্যাত্মবিদ্যার প্রবর্তকরা প্রায় সকলেই পূর্বদেশীয় ছিলেন। যেমন—থেলিস ও পাইথাগোরাস ছিলেন মিশরীয়; ফিলোন ছিলেন সিরীয়; হিপোক্রেটিস এবং গ্যালেনও এশীয় ছিলেন।


অতএব স্পষ্ট—সকল বিদ্যার মূল উৎস ছিল পূর্বদেশীয় অঞ্চল। প্রাচীনকালে ইউরোপের সাহিত্য-সংস্কৃতিও পূর্বদেশীয় প্রভাবেই বিকশিত হয়েছিল। গ্রীক পরম্পরার যেসব গুণকে আজ অনন্য বলা হয়, তার বেশিরভাগ উৎসও ছিল এশিয়া, সিরিয়া ও মিশরে। সুতরাং ইউরোপীয়দেরই নানা ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিল—এমন ধারণা ভুল। সেই যুগে রোমান সভ্যতাও তখনও গড়ে ওঠেনি, বরং রোম তখন পূর্বদেশীয় দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিল।


👉 সহজ করে বললে: খ্রিষ্টপূর্ব ইউরোপে বৈদিক/প্রাচ্য সংস্কৃতির গভীর প্রভাব ছিল। খ্রিষ্টধর্মের অনেক উৎসব ও প্রথাই আসলে পূর্বদেশীয় পরম্পরা থেকে নেওয়া। ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পের উৎসও মূলত এশিয়া ও মিশরেই ছিল।


এ পর্যন্ত বহু গ্রন্থকারের সমস্ত সাহিত্য এমনভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল যে, সে সময়ের ইতিহাসের কোনো তথ্যই জানা যায় না। ফলে সেই সময়ের বৈদিক পন্থার ইতিহাস অজ্ঞাত থেকে গেছে।


বৈদিক পরম্পরার প্রতি খ্রিস্টানদের উপহাস

ইউরোপে খ্রিস্টধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য খ্রিস্টান নেতারা দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শতক পর্যন্ত লোকজীবনের ইতিহাসের কঠোর ধ্বংসযজ্ঞ চালান। শুধু তাই নয়, সেই সময়কার বৈদিক প্রথাগুলিকে বিকৃত করে তাদের উপহাস করাই ছিল তাদের রীতি।

উদাহরণস্বরূপ, ঈসিস দেবীর ভক্তরা দেহযন্ত্রণা দিয়ে সাধনা করতেন।

ইউরোপীয় খ্রিস্টান বিদ্বানদের ভ্রান্তি

শওয়ারম্যান-এর ধারণা যে খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে অন্যান্য পন্থার প্রতিযোগিতা ছিল, আংশিক সত্য। মহাভারতের যুদ্ধোত্তরকালে খণ্ডিত বৈদিক সংস্কৃতির নানা উপপন্থা তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল কৃষ্ণ বা হৃষ্টপন্থ।


ইউরোপীয় বিদ্বানদের ধারণা যে হিস্প বা যিশু খ্রিস্ট নামে কোনো অবতার মহাপুরুষ ছিলেন এবং তিনি যে ধর্ম চালু করেন সেটিই খ্রিস্টধর্ম, সম্পূর্ণ ভুল। বাস্তবে খ্রিস্ট বা যিশু নামে কোনো ব্যক্তি কখনো ছিলেন না। কৃষ্ণ নামের উচ্চারণ কৃষ্ট রূপে প্রচলিত হয়েছিল। কৃষ্ণের নীতি ভগবদ্‌গীতায় আলোচিত। সেই গীতার অনুসারীদের কৃষ্ণনীতি-পন্থ ছিল। কিন্তু দিনে দিনে সংস্কৃত ভাষাজ্ঞানের অভাবে কৃষ্ণপন্থীরা কৃষ্ণচরিত্র ও ভগবদ্‌গীতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।


তবুও খ্রিস্টপন্থ, ঈশানী, স্মার্ত, সাত্ত্বিক, মেলেনসিয়ান (ম্লেচ্ছ), কাশিওপিয়ান (কশ্যপীয়), ফিলিস্তিন (পুলস্তিন), জ্ঞান-আস্তিক, অজ্ঞান-আস্তিক প্রভৃতি বিভিন্ন পন্থার মধ্যে জনপ্রিয়তা, সম্পদ, মান-সম্মান ও ক্ষমতার প্রতিযোগিতা চলছিল। সেগুলির মধ্যে খ্রিস্টপন্থীরা ভাগ্যক্রমে সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন-এর সহায়তা পায়। সেই সুযোগে রোমান সেনাদের জোরপূর্বক ছয় বছরের মধ্যে সমগ্র ইউরোপকে খ্রিস্টান বানানো হয়।


এইভাবে জবরদস্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠা খ্রিস্টধর্ম নিজেকে বৈদিক পরম্পরা থেকে পৃথক করে নেয় এবং কৃষ্ণের পরিবর্তে এক কল্পিত ব্যক্তিত্ব কৃষ্ট-এর চরিত্র বানিয়ে নিজস্ব অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।


ইউরোপীয় বিদ্বানদের ভুল উদাহরণ📜

১. সার মনিয়ার উইলিয়ামস-এর সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধানে “কঞ্চিদেক” শব্দকে একটি মহাভারতকালীন গ্রামের নাম বলা হয়েছে। বাস্তবে এর অর্থ “যে কোনো একটি”। কৃষ্ণ যখন দুর্যোধনের সভায় বলেন—

“ইন্দ্রপ্রস্থ, বৃকপ্রস্থ, জয়ন্ত, বারাণাবৃত দাও, আর পঞ্চম হিসেবে যে কোনো একটি গ্রাম দাও”—

তখন মনিয়ার উইলিয়ামস ভুল বুঝে কঞ্চিদেককে আলাদা গ্রামের নাম ভেবেছেন।


২. আরেকটি উদাহরণ, এক পাদ্রী তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন যে প্রফেসর উইলসন সংস্কৃত কাশিরাজ শব্দকে সবসময় “তীর্থরাজ কাশী” অর্থে নিয়েছেন, অথচ মূলত এর অর্থ “কাশিরাজা”।


এমন ভ্রান্ত উদাহরণ দেখে বোঝা যায় পাশ্চাত্য বিদ্বানদের বক্তব্যে আস্থা রাখা কতটা অনুচিত। শুধু ভ্রান্তি নয়, খ্রিস্টানরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ইতিহাস বিকৃত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা যেসব গ্রন্থকে বেদের অনুবাদ বলে ছেপেছিল, সেখানে নানান বিকৃত তথ্য ঢুকিয়ে দিয়েছিল, যাতে পাঠকরা বৈদিক ধর্মের প্রতি বিরূপ হয় এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচার সহজ হয়।


📜কিছু ইউরোপীয় বিদ্বানের বিপরীত মত

তবে সবাই এমন ছিলেন না। কিছু পাশ্চাত্য বিদ্বান মনে করেছিলেন যে প্রাচীন কালে কেবল বৈদিক সংস্কৃতিরই বিস্তার ছিল। আরেক লেখক তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন—

“প্রাচীনতার বিচারে হিন্দুধর্মের সমকক্ষ আর কিছু নেই। আর্যাবর্তেই ব্রাহ্মণ্যধর্মের জন্ম হয়েছে এবং শ্রেষ্ঠ হিন্দু সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে। সেই সম্পদ পশ্চিমে ইথিওপিয়া, মিশর, ফিনিশিয়া, পূর্বে সিয়াম থেকে চীন-জাপান পর্যন্ত, দক্ষিণে সিলোন থেকে জাভা-সুমাত্রা পর্যন্ত এবং উত্তরে ইরান থেকে ক্যাল্ডিয়া-কলচিস হয়ে গ্রিস-রোম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি সুদূর [पए७७००7€७॥8] দেশ পর্যন্তও বৈদিক প্রভাব বিস্তার করেছিল।”


অতএব বোঝা যায়—



ইউরোপে একসময় বৈদিক প্রভাব গভীর ছিল।


খ্রিস্টানরা নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে ইতিহাস মুছে দিয়েছে, বৈদিক প্রথাকে বিকৃত করেছে।


তবু কিছু সৎ চিন্তক স্বীকার করেছেন যে ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতিই ছিল বিশ্বের মূল সাংস্কৃতিক ধারা।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ১৪/১/১৯

অথর্ববেদ ১৪/১/১৯ ( মন্ত্রাঃ ৬-৬৪। বিবাহসংস্কারোপদেশঃ- ) ঋষিঃ — আত্মা। দেৱতা — তৃষ্টুপ্। ছন্দঃ — সবিত্রী, সূর্যা। সূক্তম্ — বিবাহ প্রकরণ সূক্...

Post Top Ad

ধন্যবাদ