وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى
ٱلصَّلَوٰةِ ٱتَّخَذُوهَا هُزُوًۭا وَلَعِبًۭا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌۭ لَّا
يَعْقِلُونَ
https://quran.com/5/58
মুছলমানেরা পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজের আযানের পরে দোয়া পাঠ করে থাকে। আবার অনেকে
খুব তাজিমের সাথেও পাঠ করে। আবার অনেকে সওয়াবের আশায় এবং জান্নাতের আশায় আযানের
দোয়া পাঠ করে থাকে। কিন্তু কেউ কি চিন্তা করে দেখেছেন যে, আযানের
দোয়ার মধ্যে নবীজিকে অপমান করা হচ্ছে, নবীজিকে ছোট করে দেখা
হচ্ছে, নবীজিকে সাধারণ মানুষ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আযানের
দোয়া পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই-
(আল্লাহুম্মা
রাব্বা হাযিহিদ দা'ওয়াতিত্তা-ম্মাতি ওয়াসসালা-তিল
ক্বা-ইমাতি আ-তি সায়্যেদানা মুহাম্মাদানিল ওয়াসী-লাতা ওয়াল ফাদ্বী-লাতা ওয়াদ
দারাজাতার রাফী-'আতা ওয়াবআসহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী
ওয়া'আদতাহূ ওয়ারযুক্বনা শাফা-'আতাহূ
ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাতি ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী-'আদ)
অর্থাৎ “এই পবিত্র আহবান এবং এই
নামাজের তুমিই প্রভু। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে দান কর ওয়াসিলা, সর্বোচ্চ
সম্মানিত স্থান ও সুমহান মর্যাদা এবং বেহেশতের শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে (মাকামে
মাহমুদা) তাঁকে অধিষ্ঠিত কর যার প্রতিশ্রতি তুমি তাকে দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি
ওয়াদা ভঙ্গ কর না।”
এখানে পাঁচটি বিষয় পরিলক্ষিত
হচ্ছেঃ
১. আযান এবং নামাজের মালিক আল্লাহ
২. হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে ওয়াসিলা দান করার
জন্য দোয়া
৩. হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান
করার জন্য দোয়া
৪. হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বেহেশতের শ্রেষ্ঠতম
প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদা) অধিষ্ঠিত করার জন্য দোয়া
৫. আল্লাহ যেন অঙ্গিকার ভঙ্গ না করে তা স্মরণ
করিয়ে দেয়া
উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ের
প্রথমটি তেমন কোন গুরুত্ব বিষয় নয়। কিন্তু পরবর্তী চারটি বিষয় খুবই মারাত্মক।
প্রথম বিষয়: আযান এবং নামাজের
মালিক আল্লাহ। এটি নিঃসন্দেহে ভাল কথা। আযান এবং নামাজই নয় এই বিশ্ব এবং বিশ্বে
যা কিছু সবকিছুর মালিক আল্লাহ। তাইতো শুকরিয়া স্বরূপ আমরা সূরা ফতিহা তেলাওয়াত করে থাকে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন) অর্থাৎ
“যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ যিনি সকল সৃষ্টি জগতের রব (প্রতিপালক/পালনকর্তা)।”
দ্বিতীয় বিষয়: হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ) কে ওয়াসীলা দান করার জন্য দোয়া।
এ বিষয়টি একজন মুমিন ও
নবীপ্রেমিক হিসেব নবীজির শানে অপমানমূলক দোয়া। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা নবীজি
(সাঃ) কে ওয়াসীলা করেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি নিজে ওয়াসীলা হয়ে মুছলমানদের ক্ষমা করাবেন। শুধু তাই নয়, তিনি পৃথিবীতে
জাহেরীভাবে আবির্ভাবের পূবেই ওয়াসীলা হিসেবে বিদ্যমান ছিলেন। যেমন হযরত আদম (আঃ)
নবীজির ওসিলায় ক্ষমা পান। অথচ হযরত আদম (আঃ) এর বহু পরে নবীজি (সাঃ) জাহেরীভাবে
এই পৃথিবীতে আগমন করেছেন। হযরত আদম (আঃ) কে আল্লাহ যখন পৃথিবীতে নামিয়ে দেন,
তখন হযরত আদম (আঃ ) প্রার্থনা জানান, হে প্রভু
! আমার সন্তান মুহাম্মাদ রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওসিলায়
আমাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ্ তাঁর প্রার্থনা কবুল করে নেন এবং তাঁকে ক্ষমা করে
দেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নবীগণও ওসিলা মানতেন। (সূত্রঃ
তফসীরে রূহুল বয়ান; সুরা মায়েদার ১৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা
দ্রষ্টব্য)। অতএব মুছলমানদের নবী Azaner Doya(সাঃ) কে পৃথিবীতে আসার পূর্বেই আল্লাহ পাক তাঁকে ‘ওয়াসীলা’ র মর্যাদা দান
করেছেন, তাই তাঁর জন্য পুনরায় আযানের দোয়া ‘ওয়াসীলা দান
করার’ কথা বলা সম্পূর্ণ বেয়াদবী এবং নবীজির শান ও মর্যাদাকে ছোট করার সমান।
হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)
তাঁর টুপিতে হযরত রাসূল (সাঃ) এর চুল মুবারক রাখতেন। একবার এক যুদ্ধে তাঁর ঐ টুপি
মাথা হতে পড়ে গেল। তখন তিনি ঐ টুপি খোঁজার জন্য তৎপর হয়ে উঠলেন। কারণ ঐ টুপির
ওসিলায় তিনি বহু সংখ্যক শত্রু হতে জয় লাভ করেছিলেন। যখন তিনি টুপি খোঁজার জন্য
ব্যস্ত তখন একজন সাহাবী এই ব্যাপারে আশ্চর্য হয়ে তাঁকে বিদ্রুপ করলেন। তখন হযরত
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বললেন, আমি শুধু টুপির জন্য ব্যস্ত
হইনি। কেননা ঐ টুপির মধ্যে হযরত নবী করিম (সাঃ) এর চুল মুবারক রয়েছে। আমি যেন
তাঁর বরকত হতে বঞ্চিত না হই এবং তা যেন কাফিরদের হাতে না পড়ে। এ জন্য আমি বিচলিত
ছিল। বুখারী হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, “হযরত
উমর (রাঃ) দুর্ভিক্ষের সময় হযরত আব্বাস বিন মোত্তালিবের ওসিলায় বৃষ্টির জন্য
প্রার্থনা করতেন। হযরত উমর (রাঃ) বলতেন হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নবী (সাঃ) এর ওসিলা
ধরে তোমার নিকট প্রার্থনা করতাম। তখন তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করতে। এখন আমরা
নবীজি (সাঃ) চাচার (হযরত আব্বাস রা.) ওসিলায় প্রার্থনা করছি। তাই তুমি আমাদেরকে
বৃষ্টি প্রদান কর। তিনি বলেছেন, তখন বৃষ্টি হতো।” নবীজির
চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) ছিলেন সাহাবী। তিনি যদি ওসিলা হতে পারেন, তবে নবীজি কি ওসিলা নন? তাই নবীজিকে ওয়াসীলা দান
করার জন্য দোয়া করার দরকার নেই। বরং তা নবীজির শানে চরম বেয়াদবী।
তৃতীয় বিষয়: হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ) কে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করার জন্য দোয়া
সাধারনত নাস্তা
পাপী মানুষেরা প্রতিদিন পাঁচবার আযানের সময় আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছে, হে আল্লাহ রাসূলের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দাও। রাসূলের মর্যাদা কি কোনদিক
দিয়ে কমে গেছে? আল্লাহ যাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করে
পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তাঁর আবার নতুন করে মর্যাদা বৃদ্ধির কি
হলো? তাও আবার পাপী বান্দাদের দোয়ার দ্বারা, এগুলো কোন ধরণের ভীমরতি?
এ বিষয়টি একজন মুমিন ও
নবীপ্রেমিক হিসেব নবীজির শানে অপমানমূলক দোয়া। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা নবীজি
(সাঃ) কে ওয়াসীলা, সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান ও সর্বোচ্চ
মর্যাদা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা নবীজি (সাঃ) কে সর্বোচ্চ
মর্যাদা দান করেছেন। নবীজিকে মর্যাদা দান করার জন্য আমাদের মত পাপী-গুনাহগার
বান্দার দোয়ার প্রয়োজন নাই। কেননা নবীজির ওসিলায় আমরা আল্লাহর নিকট মর্যাদা
প্রার্থনা করবো। নবীজিকে আল্লাহ সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন।
যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ
অর্থাৎ “আমি রাসূলদের মধ্যে
একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। তাঁদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে যার সাথে
আল্লাহ পাক কথা বলেছেন, আবার কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত
করেছেন” (সূরা বাকারা-২৫৩)
উল্লেখিত আয়াত হতে জানা যায়
যে,
আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলগণের মধ্যে একজনকে অন্যজনের উপরে মর্যাদা
দান করেছেন। আর সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ করেছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) কে। নবীগণ প্রেরিত হয়েছেন তাঁদের নির্দিষ্ট কওমের জন্য, কিন্তু আমার নবী (সাঃ) কোন নির্দিষ্ট কওমের জন্য নয়। তিনি সারা বিশ্বের
সকলের জন্য। যেমন আল্লাহ তায়ালা নবীজির শানে এরশাদ করেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
(ওয়ামা
আরসালনাকা ইলা
রাহমাতুলিল
আলামিন)
অর্থাৎ “আমি আপনাকে সমগ্র
বিশ্বের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি (সূরা আম্বিয়া-১০৭)।” বিশ্বে যারা বসবাস করছে
হোক তারা বিভিন্ন গোত্রের, হোক সে পুশু-পাখি-মাছ-গাছপালা ইত্যাদি।
সবার জন্য আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুলাহ (সাঃ) হলেন রহমতস্বরূপ। শুধু
তাই নয়,
নবীজিকে আল্লাহ এতই মর্যাদা দান করেছেন যে, নবীর
ভালবাসাই আল্লাহর ভালবাসা, নবীর আনুগতই আল্লাহর আনুগত্য
ঘোষনা করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ করেন, “মাইউতির
রাসূলা ফাক্বাদ আতা আল্লাহ” অর্থাৎ “যে রাসুলের আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো।” এরপরও কি দোয়া করে নবীর মর্যাদা বৃদ্ধির দরকার
আছে? যারা আজও অন্ধ, নবীকে চিনে না,
তারাই এরকম দোয়া করে। জ্ঞানী চিন্তাশীল কখনও এরকম বানোয়াট দোয়া
করে না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবীদেরকে
বিভিন্ন উপাধীতে ভূষিত করেছেন। যেমন- আদম সফিউলাহ, মুসা কালিমুলাহ, ইব্রাহিম
খলিলুল্লাহ, ইসমাইল জবিউলাহ, ঈসা
রুহুলাহ।
কিন্তু আমাদের নবীকে আল্লাহ অনেক উপাধী দান করেছেন। যেমন- শাফিয়্যিল মুজনাবিন, রাহমাতুলিল আলামিন, আনিসিল
গারিবীন, খাতামান নাবিয়্যিন, রাহাতিল
আশিকীন, সিরাজুস সালেকীন, নূরুল্লাহ,
সাহিবু কাবা কাউসাইন, হাবিবুল্লাহ ইত্যাদি।
হুজুরে পাকের এরকম এক হাজারেরও বেশী উপাধী আছে। এ সমস্ত উপাধীর মধ্যে একটি হচ্ছে
হাবিবুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু। অর্থাৎ মহান আল্লাহ নবীর এমন বন্ধু যে, নবীজির খুশির জন্য সবকিছু করতে পারেন (সুবহানআল্লাহ)। নবীজি মনে মনে ইচ্ছা
পোষন করছিলেন যে, কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস পরিবর্তন হয়ে
বায়তুলাহ
(মাসজিদুল হারাম) হলে ভাল হতো। সাথে সাথে আল্লাহ ওহি নাজিল করে কেবলা পরিবর্তন করে
দিলেন। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে
বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি
আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি
মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে
মুখ কর।” (সূরা বাকারা-১৪৪)
আমাদের নবীজিকে কেবলা স্বরূপ
দান করা হয়েছে। যখন মক্কা বিজয় হয়ে গেল, তখন একদিন নবী
করিম (সাঃ) হযরত বেলাল (রাঃ) কে খানায়ে কাবার ছাদে উঠে আজান দিতে নির্দেশ করলেন।
হযরত বেলাল (রাঃ) খানায়ে কাবার ছাদে ওঠে আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! মদীনায়
থাকতে কাবার দিকে মুখ করে আজান দিতাম। এখনতো কাবা আমার নিচে আমি কাবার উপরে- কোন
দিকে ফিরে এখন আজান দিব।? নবী করিম (সাঃ) নিজের দিকে ইশারা
করে বললেন “আমার দিকে”। মোহাদ্দেসীন কেরাম এই হাদীসের তাৎপর্য্য এভাবে বর্ননা
করেছেন-“কেবলার অবর্তমানে নবী করীম (সাঃ) এর পবিত্র সত্তাই কেবলা। কেননা তিনি
কাবারও কাবা (সূত্রঃ নূরনবী)। তাই কবি বলেন,
ﺮﻮﮱ ﻫﻣﺎ ﺭﺍﺴﻮﮱ ﻛﻌﺒﻪ ﺮﻮﮱ ﻛﻌﺒﻪ ﺴﻮﮱ ﻤﺤﻣﺪ
ﺮﻮﮱ ﻤﺤﻣﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻮﺴﻠﻢ ﻛﻌﺒﻪ ﻛﻌﺒﻪ ﻜﺎ
অর্থাৎ “মোদের কপাল কাবার দিকে, কাবা
ঝুকে নবীর পানে,
কাবার কাবা প্রিয় মোহাম্মদ, শত
দরুদ তারই শানে।”
এছাড়াও নবীজি (সাঃ) হাশরের
মাঠে সর্বপ্রথম উঠবেন। হাশরের মাঠে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে
কাপড় পরিধান করাবেন। এখন প্রশ্ন হতে পারে, আমাদের নবীকে
কেন সর্বপ্রথম কাপড় দিবেন না? উত্তর হলো আমাদের নবীর এতই
মর্যাদা যে, তিনি হাশরের মাঠে কাপড় পরিধানসহ উঠবেন
(সুবহানালাহ)।
হযরত কা’ব আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “কেয়ামতের দিন
যখন মাটি ফেটে যাবে, তখন দলীলে কা’বায়ে মাকসুদ, হাবীরবুর রহমান হুযুর পাক (সাঃ) সর্বপ্রথম রওজা মুবারক থেকে বের হয়ে
আসবেন। এ সময় উনার রওজা মুবারক তওয়াফকারী ৭০ হাজার ফেরেশতা তাঁকে ঘিরে চরম পরম
তাজিম তাকরীমের সাথে মহান রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে নিয়ে যাবেন। (মেশকাত শরীফ)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা
করেন যে,
সাইয়্যেদুল আম্বিয়া, তাফসীরে কালামে ইলাহী
হুযুর পাক (সাঃ) এরশাদ করেন যে, আমি সর্বপথম সুপারিশকারী হব।
আর সর্বপ্রথম আমর সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।” (মেশকাত শরীফ)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে
বর্ণিত হুযুর পাক (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন
আমার নিকট আল্লাহ পাক প্রদত্ত প্রশংসা পতাকা থাকবে। আর এজন্য আমি গর্ব করি না যে,
হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সমস্ত আম্বিযা (আঃ) গণ আমার পতাকা তলে
থাকবেন।” (তিরমিযী শরীফ)
নবীজিকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েই
আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি হলে সর্বশ্রেষ্ট নবী এবং নবীকূলের সরদার। তাই
তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ করার জন্য দোয়ার প্রয়োজন নাই। দোয়ার প্রয়োজন হলো আমাদের মত
গুনাহগার বান্দাদের জন্য। যে দোয়া আমরা নিজেদের জন্য করবো, সে
দোয়া এখন নবীর উপর চাঁপিয়ে দিয়েছি। দোয়া শুনে মনে হয় আমরা মাকামে মাহমুদ পেয়ে
গেছি, কিন্তু নবী এখনও পাননি (নাউযুবিলাহ)। হায়রে মুসলমান দোয়া
করতেও জানে না। আফসোসা !!
উলেখিত আলোচনা হতে এটাই প্রতীয়মান
হয় যে,
মহানবী (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী, সমস্ত
নবীদের উপরে তাঁর স্থান এবং তিনি আমাদের জন্য ওয়াসীলা। তাই তাঁর জন্য সর্বচ্চো
সম্মানের দোয়া করা সম্পূর্ণ বেয়াদবী। আর নবীর সাথে বেয়াদবী করা আল্লাহর সাথে
বেয়াদবী করার শামিল।
চতুর্থ বিষয়: হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ) কে বেহেশতের শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদা) অধিষ্ঠিত করার জন্য
দোয়া
এখানে নবী পাকের শান মর্যাদাকে
কি ছোট করে দেখা হয় নাই? মুছলমানেরা প্রতিদিন দোয়া করছে আল্লাহর কাছে রাসূল (সাঃ) কে মাকামে মাহমুদায় পৌঁছাও। মোনাজাতের অর্থ
হতে এ কথা স্পষ্ট করে বোঝা যায় যে, নবীজি এখনও মাকামে
মাহমুদাতে পৌঁছতে পারেন নি। তাই আমরা তাঁর জন্য দোয়া করছি। কিন্তু একটা কথা যিনি
এখনও মাকামে মাহমুদ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে পৌঁছতে পারেন নি, তিনি কিভাবে অন্যকে শাফায়াত করবেন? উলেখিত দোয়া দ্বারা বুঝা যায় যে, নবীজি
এখনও শাফায়াতের যোগ্যতা অর্জন করেননি (নাউযুবিলাহ)। নিঃসন্দেহে এই দোয়া
এজিদের দোসর কর্তৃক রচিত হয়েছে। এ রকম বহু ইচ্ছাকৃত ভুল নবী ও নবী বংশের বিরুদ্ধে
চক্রান্তকারীরা করে রেখেছে। আল্লাহর রাসূল নবী বংশকে মুসলমানের কাছে আমানত রেখেছেন, শুধু
আমানত নয় তাঁদের ভালবাসতেও স্বনির্ভর অনুরোধ ও হুকুম জারী করেছেন (সূরা শুরা-২৩)।
নবীর আদেশ ‘আহলে বায়াত ও আল কুরআন কখনও একে অপরকে ছাড়বেনা (তিরমিযী)। কিন্তু
অত্যন্ত অবাক লাগে ইমাম বুখারীর মত একজন হাদিস বিশারদ বুখারী শরীফে নবীর শানে এরকম
বেয়াদবীপূর্ণ দোয়া উলেখ
করেছেন (বুখারী ২য় খন্ড (ই.ফা) কিতাবুল আযান অধ্যায়)। জানি না বুখারীতে এ দোয়া
তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন, না অন্য কেউ? আবার
এটাও হতে পারে যে, ইমাম বুখারীর ইন্তেকালের পর এজিদের দোসররা
বুখারী শরীফে এই বেয়াদবীপূর্ণ আযানের দোয়া ঢুকিয়ে দিয়েছে।
আযানের দোয়া প্রচলন করে
নবীজিকে একজন সাধারণ পাপী মানুষের কাতারে দাঁড় করানো হয়েছে। কোন জাতিই তাদের নবীকে
তাদের মত সাধারণ মানুষ মনে করে না। কেবল মাত্র কাফের যারা, তারাই
নবীকে তাদের মত সাধারণ মানুষ মনে করে। মুছলমানদের মহান
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ
(ক্বদ জাআকুম
মিনালাহি
নুরুউ ওয়া কিতাবুম মুবিন)
অর্থাৎ “তোমাদের নিকট আল্লাহর
পক্ষ হতে স্পষ্ট নূর ও কিতাব এসেছে।” এখানে নূর বলতে নবীজিকে বুঝানো হয়েছে
(সূত্রঃ তাফসীরে রুহুল বয়ান, শানে হাবিবুর রহমান)। মহান
আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন,
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ
অর্থাৎ “আমি দেখতে তোমাদের মত
বাশার (চামড়া), কিন্তু আমার প্রতি ওহি নাজিল হয়।”
(সূরা কাহাফ-১১০)
এখানে নবীজিকে আরবী শব্দ
‘ইনসান’ অর্থাৎ মানুষ বলা হয়নি, বলা হয়েছে ‘বাশার’। কিন্তু
বেশীরভাগ আলেম অনুবাদ করে ইনসান বা মানুষ। তারা কোথা হতে ইনসান বা মানুষ শব্দটি
আমদানী করলো, তা আমার জানা নাই। আবার আরবীতে ‘মা’ (مَا) শব্দের
তিনটি অর্থ হয়। যথাঃ না, কি, যা। ‘মা’ (مَا) শব্দটির
অর্থ যদি ‘না’ গ্রহণ করি, তবে উক্ত আয়াতের অর্থ হবে “আমি তোমাদের
মত মানুষ না।” যদি ‘মা’ (مَا) শব্দটির অর্থ ‘কি’ গ্রহণ কবি, তবে
উক্ত আয়াতের অর্থ হবে ‘আমি কি তোমাদের মত মানুষ?’ আর যদি
‘মা’ (مَا) শব্দটির অর্থ ‘যা’ গ্রহণ করি, তাবে উক্ত আয়াতের
অর্থ হবে ‘আমি যা, তাহলো তোমাদের মত মানুষ।’ উক্ত আয়াতে আরও
বলা হয়েছে, আমার প্রতি ওহি নাজিল হয়। এখন প্রশ্ন, সাধারণ মানুষের প্রতি কি ওহি নাজিল হয়? সকলেই উত্তর
দিবে না। তাহলে যেহেতু সাধারণ মানুষের প্রতি ওহি নাজিল হয় না, সেহেতু নবীও সাধারণ মানুষ নয়। ‘ইউহা ইলায়্যা’ (يُوحَى إِلَيَّ) শব্দদ্বয় দ্বারা নবী যে সাধারণ মানুষ নয়, তা
স্পষ্ট করে বুঝানো হয়েছে।
হাদিস শরীফে নবী করিম (সাঃ)
এরশাদ করেন, ‘লাসতুকা আহাদিম মিনকুম’ অর্থাৎ “আমি
তোমাদের কারো মতই না।’ অপর এক হাদিস নবী করিম (সাঃ) বলেন, “আইয়্যূকুম
মিসলী” অর্থাৎ ‘কে আছো আমার মত?”
কুরআনের ব্যাখ্যায় এবং যে সকল
হাদিসে রাসূলুলাহ
(সাঃ) কে আমাদের মত মানুষরূপে অংকিত করা হয়েছে, সেগুলো
প্রত্যেকটি মিথ্যা হাদিস এবং কুরআনের সেসব অংশের ব্যাখ্যাগুলো মিথ্যা রচনা। এই সকল
মিথ্যা ব্যাখ্যা উমাইয়া রাজ শক্তি কর্তৃক রচিত।
যেখানে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘লাওলাকা লামা খালাকতুল আফলাক ওয়ালাম্মা আজহারতুর রবুবিয়াত’ অর্থাৎ ‘(হে
নবী!) আমি আপনাকে প্রকাশ না করলে আমার বরুবিয়াত প্রভুত্ব প্রকাশ করতাম না। আপনাকে
সৃষ্টি না করলে আমি আসমানসমূহ সৃষ্টি করতাম না।” যিনি রাহমাতুলিল আলামিন, সমগ্র
আলমের জন্য রহমতস্বরূপ। যার শাফায়াত ব্যতিত কারও মুক্তি নাই। আমার নবীর নাম
‘মাহমুদ’। আর এই নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে মাকামে মাহমুদা অর্থাৎ প্রশংসিত
মাকাম। অথচ তিনি নাকি এখনও মাকামে মাহমুদায় অধিষ্ঠিত হতে পারেন নি? (নাউযুবিলাহ)
যিনি খুদ মালিক ঐ প্রশংসিত মাকামের।
যিনি আল্লাহর সঙ্গে একই গুণে গুনান্বিত, যেখানে আল্লাহ
সকল জ্ঞানের উৎস আর রাসূল (সাঃ) হলেন সকল জ্ঞানের অধিকারী। যেখানে আল্লাহ রাসূলের
দূরত্ব দুই ধনুকের ব্যবধান (অর্থাৎ বৃত্ত) নিকটে বা আরও নিকটে বলা হয়েছে এবং যে
রাসূলের কথা আল্লাহ হতে যে আলাদা মনে করে সে কাফের। যেমন মহান আল্লাহ পাক এরশাদ
করেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا * أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا
অর্থাৎ “যারা আল্লাহ ও তার
রসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য
করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি কিন্তু কতককে
প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই
কাফের। (সূরা নিসা-১৫০-১৫১)
মাকামে মাহমুদা অর্জনের জন্য
আমরা নবীজির উসিলা করে দোয়া করবো, হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে মাকামে মাহমুদায় অধিষ্ঠিত কর। যার উসিলায় মাকামে মাহমুদা তাঁর জন্য
কি দোয়ার দরকার আছে? যিনি সুপারিশকারী, তাঁর জন্য কি সুপারিশের দরকার আছে? বড়পীর আব্দুল
কাদের জিলানী (রহঃ) ঘোষনা করলেন যে, পৃথিবীর সমস্ত ওলিদের
কাঁধে আমার পা। এ ঘোষনা শোনার পর পৃথিবীর সমস্ত ওলিগণ তা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন
(সূত্রঃ বাহজাতুল আসরার)। বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) হলেন গাউসুল আ’যম এবং
ওলিগণের সরদার। এখন আমি যদি দোয়া করি হে আল্লাহ! বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী
(রহঃ)-কে ওলিগণের সর্দার এবং গাউসুল আ’যম পদে অধিষ্ঠিত করুন। তাহলে এটা মূর্খতা
নয় কি? কারণ বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) তো ঐ আসনে
অধিষ্ঠিত আছেনই, তাহলে এর জন্য দোয়া করা বোকামী ছাড়া কিছুই
নয় এবং বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) কে অপমান করা। আমাদের নবী (সাঃ) হলে
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং নবীগণের সরদার। আল্লাহ তাঁকে মাকামে মাহমুদা দান করেছেন।
তাহলে কেন আমরা তাঁর জন্য দোয়া করবো হে আল্লাহ! তাঁকে মাকামে মাহমুদা দান করুন।
যিনি নিজেই সুপারিশকারী, তাঁর জন্য আবার সুপারিশ কিসের?
এতে বোঝা যায় যে, নবীর কোন যোগ্যতা নাই
(নাউযুবিলাহ)।
গুনাহগার উম্মত তাঁর জন্য সুপারিশ করবে (নাউযুবিলাহ)।
কেয়ামতে তিন শ্রেণীর লোক
শাফায়াত করবে। নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন,
ﻳﺸﻔﻊ ﻴﻮﻡ ﺍﻟﻗﻴﻤﺔ ﺜﻠﺜﺔ: ﺍﻻﻨًﺑﻳﺂﺀ ﻮﺍﻠﻌﻟﻤﺎﺀ ﻮﺍﻟﺸﻬﺪﺂﺀ
(ইয়াশফাউ
ইয়াউমাল কিয়ামতে সালাসা আল আম্বিয়াউ, ওয়াল উলামাউ
ওয়াশশুহাদা- ইবনে মাজাহ)
অর্থাৎ কেয়ামতের দিন তিন
শ্রেনীর লোক শাফায়ত করবেন- নবী, হক্কানী আলেম বা নায়েবে রাসূল
এবং শহীদগণ।
এখানে স্মরণ রাখতে হবে যে, শাফায়াত
দুই প্রকার। যথাঃ শাফায়াতে কুবরা এবং শাফায়াতে ছোগরা। শাফায়াতে কুবরার অধিকারী
হলেন নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুলাহ (সাঃ)। আর শাফায়াতে ছোগরার অধিকারীহক্কানী উলামা এবং
শহীদগণ। নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন-
ﺍﻨﺎ ﺍﻮﻞ ﺷﺎﻓﻊ ﻭﺍﻭﻞ ﻤﺷﻓﻊ
অর্থাৎ “আমি সর্বপ্রথম সুপারিশ
করবো এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশই কবুল হবে।” (তাফসীরে খাজেন)। হযরত জাবের (রাঃ)
হতে বর্ণিত হুযুর পাক (সাঃ) এরশাদ করেন, “আমাকে
শাফায়াতে কুবরা দান করা হবে যা সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য হিসাব গ্রহণের কারণ হবে
(বুখারী ও মুসলিম)।” ‘মাকামে মাহমুদা’র ব্যাখ্যায় নবী করিম (সাঃ) বলেন, “মাকামে মাহমুদা হচ্ছে ঐ স্থান যেখানে আমি উম্মতের জন্য শাফায়াত
(শাফায়াতে কুবরা) করবো।” (মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, মাদারেজুন
নবুয়াত)
নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন-
ﺷﻓﺎﻋﺗﻰ ﻻﻫﻞ ﻛﺒﺎﺋ ﺭﻤﻥ ﺍﻤﺗﻰ
অর্থাৎ “আমার শাফায়াত
(সুপারিশ) আমার উম্মতের কবীরা গুনাহ ওয়ালাদের জন্য।” (বুখারী ও মুসলিম)। তিনি আরও
বলেন,
“আমাকে তখন এই অধিকার দেয়া হবে যে, আমি আমার
অর্ধেক উম্মতকে বিনা হিসেবে এবং শাফায়াতের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করাব। তখন আমি
শাফায়াত করতেই পছন্দ করবো।” এই শাফায়াত হবে মুত্তাকিদের অধিক মর্যাদা লাভের কারণ
এবং পাপী উম্মতকে আযাব মুক্ত করার জন্য। (মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, মাদারেজুন নবুয়াত)
যারা শাফায়াতের অধিকার রাখেন
তারা সকলেই মাকামে মাহমুদাপ্রাপ্ত, সে নবী হোক বা
উলামা বা শহীদ হোক। অনেকের ধারণা যে, মাকামে মাহমুদা শুধু
নবীর জন্য। এ ধরণে চিন্তা ভ্রান্ত। কেননা নবীজি (সাঃ) এরশাদ করেন,
ﻤﻥ ﺍﺣﺐ ﺳﻧﺗﻰ ﻓﻗﺪ ﺍﺣﺒﻧﻰ ﻭﻤﻥ ﺍﺤﺒﻨﻰ ﻜﺎﻦ ﻤﻌﻰ ﻓﻰ ﺍﻠﺟﻧﺔ
(মান আহাব্বা
সুন্নাতি ফাকাদ আহাব্বানি, ওয়ামান আহাব্বানি কানা মায়ি ফিল
জান্নাত)
অর্থাৎ “যে আমার আদর্শকে
ভালবাসে,
সে আমাকে ভালবাসে এবং সে আমাকে ভালবাসে, সে
আমার সাথে জান্নাতে পাশাপাশি থাকেব।” নবীজি (সাঃ) যদি ‘মাকামে মাহমুদা’ (বেহেশতের
শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থান)-তে থাকেন, তাহলে যারা নবীজির
সুন্নত ভালবাসবে তারাও নবীর সাথে মাকামে মাহমুদা-তে অবস্থান করবে। যেমন কুরআন
শরীফে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا
“আপনি রাত্রের
কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবেন। এটি আপনার জন্য অতিরিক্ত। অতিশিঘ্রই আপনার
প্রতিপালক আপনাকে অধিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদা অর্থাৎ প্রশংসতি স্থানে)।” (সূরা
বনী ইসরাইল-৭৯)
উলেখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা
বললেন,
অতিশিঘ্রই মাকামে মাহমুদা পাওয়ার কথা। অথচ আজ ১৪৫০ বছর ধরে আমরা
শুধু দোয়াই করে যাচ্ছি, ফল হবে কবে? আরও
একটি বিষয় সূরা বনী ইসরাইলের ৭০নং আয়াতে আদম সন্তানের কথা আলোচনা করা হয়েছে। এই
সূরার ৭০-৭৮ নং আয়াত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই আয়াতে
মাকামে মাহমুদায় পৌঁছানোর জন্য সাধারণ মানুষকে তাগিদ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ
বারবার এই আধ্যাত্মিক স্তরের নফল কর্মটি করার জন্য সাধারণ মানুষকে তাগাদা
দিয়েছেন-নবীকে নয়। নফল বা অতিরিক্ত কাজের ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষকে পুরস্কৃত করার
কথা বলা হয়েছে-নবীকে নয়। আধ্যাত্মিক স্তরের নফল কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে এই
স্থানে কি নবী অধিষ্ঠিত হবেন, নাকি সুকর্মের প্রভাবে সাধারণ
মানুষ এই স্তরে অধিষ্ঠিত হবেন? নবী তিনিতো মাকামে মাহমুদায়
অধিষ্ঠিত হয়েই নবী হিসেবে এসেছেন। মাকামে মাহমুদার স্তরে যাবার যোগ্যতা আছে
বিধায় তিনি নবী। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে যিনি শিক্ষক হয়ে গেছে তাঁকে টেনে হিচড়ে
আবার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বানাবার এই প্রাণপণ অপচেষ্টা আর কতকাল?
আল্লাহ পাক নবীর সাথে কি ওয়াদা
করেছেন,
তা আল্লাহ এবং তাঁর নবীর ব্যাপার। তাঁদের ব্যাপার তাঁরা বুঝবেন্
আমাদের মত ত্যানা-ন্যকড়াদের ওখানে নাক গলাতে যাওয়া কি বেয়াদবী নয়? পরিপূর্ণ একটি কাফির স¤প্রদায়ের মধ্যে যে নবী হেরা গুহায় আধ্যাত্মিক শিক্ষা
পেলেন। যার জীবদ্দশায় মেরাজ হলো। যিনি পেলেন আল্লাহর দীদার এবং নৈকট্য। সেই তিনি
মাকামে মাহমুদায় যেতে না পেরে আটকে গিয়ে তাঁরই উম্মতের দোয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে
রইলেন?
বিষয়টি খুবই হাস্যকর। নবীর জন্য মাকামে মাহমুদা বড় না আল্লাহর
নৈকট্য বড়? যদি আল্লাহর নৈকট্য বড় হয়, তাহলে তিনি তো পূর্বেই তা পেয়ে গেছেন। অযথা ‘মাকামে মাহমুদা দান কর’ এ
ধরণের ঘ্যান ঘ্যান করার দরকার আছে কি?
পঞ্চম বিষয়: আল্লাহ যেন
অঙ্গিকার ভঙ্গ না করে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া
আবার আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে
দিচ্ছি যে,
হে আল্লাহ! তুমি অঙ্গিকার ভঙ্গ কর না। এতে মনে হয় আল্লাজ মাঝে মাঝে
মুনাফেকী করে (নাউযুবিলাহ)।
অর্থাৎ কথা দিয়ে কথা রাখে না (নাউযুবিলাহ) অথবা আল্লাহর স্মরণশক্তি কম (নাউযুবিলাহ)। তাই আল্লাহকে আমরা সবাই
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচবার স্মরণ করে দেই যে, তুমি ওয়াদা
ভঙ্গ কর না (নাউযুবিলাহ)।
মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
سُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلا
(সুন্নাতালাহি লা তাবাদিলা)
অর্থাৎ “আল্লাহর কথার পরিবর্তন
বা হেরফের হয় না।” (সূরা আহযাব-৬২)
إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।”
(সূরা হ্জ্ব-৭৪)
إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ
সর্বশ্রোতা, সর্ব দ্রষ্টা।” (সূরা হজ্ব-৭৫)
وَعْدَ اللَّهِ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ
অর্থাৎ “আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ
করেন না।” (সূরা জুমার-২০)
কুরআনে এ সমস্ত আয়াত প্রমান
থাকা সত্বেও আমরা কেমন করে আমরা ভাবি যে, আল্লাহ ওয়াদা
ভঙ্গ করেন? (নাউযুবিলাহ)। আল্লাহকে কি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দরকার আছে? তাই
যারা আযানে এভাবে দোয়া করবে, “নিশ্চয়ই তুমি ভঙ্গ কর না
অঙ্গিকার” তারা নিশ্চিত ঈমান হারারে। কেননা আল্লাহকে তাগিদ দেয়ার ক্ষমতা আমাদের
মত গুনাহগারদের নেই। আবার উক্ত কথাটি শিরক পর্যায়ে নিয়ে যায়। কেননা আল্লাহ মহান
শক্তিধর, সকল ক্ষমতার উৎস। তাকে কোনকিছু মনে করে দেওয়ার
অর্থ হচ্ছে তার সমপর্যায় দাবী করা, যা নিঃসন্দেহে শিরক। ফলে
এ ধরণের দোয়া করলে মুশরিক হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই সাবধান! সওয়াব আদায়
করতে গিয়ে যেন ঈমান হারা না হই এবং মুশরিক না হই।
পরিশেষে বলতে চাই, আজ
প্রায় ১৪৫০ বছর হয়ে গেল নবীজির আবির্ভাব। কিন্তু আজও কি নবীজির সর্বশ্রেষ্ঠ
মর্যাদা হাসিল হয়নি এং মাকামে মাহমুদা অর্জিত হয়নি? এখনও
যদি না হয় তবে কবে হবে? যিনি সারা বিশ্বের রহমত, যিনি নিষ্পাপ, যিনি নিজেই মাকামে মাহমুদা তাঁর জন্য
আবার কিসের দোয়া? এ কথা কোন জ্ঞানী বা নবীপ্রেমিক কি মেনে
নেবে? এ ধরণের দোয়া করা নবীজিকে অপমান করা নয় কি? যারা প্রকৃত নবীপ্রেমিক তারা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। আর যারা
এজিদ-মাবিয়ার দল তারা নবীকে ছোট করার জন্য এ দোয়া করে। যেমন নবী পরিবারকে
উমাইয়া শাসনামলে খুতবাতে গালি দিত। তেমনিভাবে নবীকে দৈনিক পাঁচবার অপমান করার
চক্রান্ত এটি। তাই এ বিষয়ে সাবধান!!!। এখানে হয়তো আপনি দোয়া করতে পারেন,
হে আল্লাহ! নবীজির উসিলায় আমাকে মাকামে মাহমুদা দান করুন এবং আমাকে
ক্ষমা করে দিন। আপনি ক্ষমাশীল।
মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
অর্থাৎ “হে আমানুগণ! তোমরা নবীর
কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে
কথা বল,
তাঁর (নবী) সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের আমল নি®ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও
পাবে না।” উক্ত আয়াতে নবীর সাথে আদব পালন করার ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
উক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে বলতে
চাই,
যারা নবীর সাথে বেয়াদবী করবে তাদের সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যাবে।
আযান দিয়ে আযানের দোয়া পাঠ করে নবীজিকে হীন প্রমাণ করে নামাজে দাঁড়াই। এ নামাজ
কোনদিনও কবুল হবে না।
যে জাতি তার নবীকে উচ্ছাসনে
বসাতে জানে না, নবীর মর্যাদা দিতে জানেনা, নবীর মাহাত্ব্য ভেদ উপলব্ধি করতে জানেনা, নবীকে
সাধারণ মানুষ হিসেবে মনে করে, সে জাতির কপালে ইহুদী
নাসারাদের লাথি-ঝাটা ছাড়া আর কি প্রাপ্য হতে পারে? আমাদের
জ্ঞান এতই নগণ্য যে, আমার আমাদের জ্ঞান দিয়ে নবীজিকে
মূল্যায়ণ করতে জানি না। আমাদের অবস্থা ঐ সার্কাসের হাতির ন্যায়। সার্কাসে যেই
হাতি পোষা হয় সেই হাতিগুলোকে ছোটবেলা থেকেই লালন পালন করা হয়। বাচ্চা হাতি খুব
চঞ্জল হয়, তাই তাকে খুব মোটা ৬ফুট শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা
হয় যেন ছুটে না যায়। এই বাচ্চা হাতি খুব টানাটানি করে ছুটতে চাইলেও পারে না। যখন
সে বড় হয় তখন ঐ হাতিকে খুব পাতলা এক দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলেও ঐ হাতি আর ছুটে
যায় না। অথচ ঐ দড়ি ছিড়তে তার কোন কষ্টই করতে হয় না। কিন্তু তার মাথায় রয়ে
গেছে ঐ বাচ্চা কালের কথা। তারপর যদি ঐখানে আগুনও ধরে তবুও হাতি ঐ ৬ফুটের বাইরে
যাবে না, বরং বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে চলে আসবে। আমাদের
মুসলমান সমাজের অবস্থা ঐরকম। যুক্তি, বাস্তব কথা বললেও ঐ
গোদবাধা কথা মালা থেকে সরে এসে মুক্ত চিন্তা করার ক্ষমতা নাই।.....চলবে
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ