ধর্মীয় অনুভূতি কোনও সস্তা বিষয় নয় যে কারও কথাতে সেখানে আঘাত লাগবে। আর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত কনসেপ্টটাই ‘ব্যাকওয়ার্ড কনসেপশন’। উ কিছু বললেই ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছে বলাটা চরম বোকামি, কারণ সেখানে প্রমাণ করে দেখাতে হবে কী করে অনুভূতিতে সে আঘাত করেছে, নয়তো এগুলো হবে ভেক (ভুয়া) অভিযোগ। ধর্মীয় অনুভূতি বিষয়টির ব্যাপকতা অত্যন্ত গভীর। কেউ হঠাৎ করে বললেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় না, প্রমাণসাপেক্ষ বিষয় এটি। আদালতে "ধর্ম্ম" বলতে কি, শাস্ত্র কি আগে প্রমাণ করুন, পরে অনুভূতি দেখাবেন।
ধর্ম অবমাননা বা ধর্মনিন্দা। গ্রিক শব্দ ব্লাসফেমেন থেকে ব্লাসফেমি শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ ধর্ম নিন্দা বা ঈশ্বর নিন্দা। এক কথায় কারো ওপর অপবাদ বা কলঙ্ক আরোপ করা বা সম্মানে আঘাত করাই ব্লাসফেমি। তবে ব্লাসফেমি বলতে প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অসম্মান বোঝায়। ইউরোপে সর্বপ্রথম এই আইনের প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া, মালয়েশিয়াতে ব্লাসফেমি আইন চালু রয়েছে।
বিশ্বাস শব্দটি আমরা প্রতিদিনই নানাভাবে ব্যবহার করি। ইংরেজিতে Believe, Trust, Faith এই তিনটি শব্দের অর্থ আগে জেনে নেয়া যাক।
Believe (অনুমান, বিশ্বাস, বিশেষভাবে প্রমাণ ছাড়াই মেনে নেয়া)
1. accept that (something) is true, especially without proof.
2. hold (something) as an opinion; think.
যেমন, ভুতে বিশ্বাস করা। এলিয়েনে বিশ্বাস করা।
Trust (আস্থা)
1. firm belief in the reliability, truth, or ability of someone or something.
কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা ধারণার আলোকে কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা। যেমন আমি আমার অমুক বন্ধু সম্পর্কে আস্থাশীল যে, সে টাকা ধার নিলে আমাকে ফেরত দেবে।
Faith (বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই পরিপূর্ণ বিশ্বাস)
1. complete trust or confidence in someone or something.
2. strong belief in the doctrines of a religion, based on spiritual conviction rather than proof.
যেমন, ইসলাম বিশ্বাস করা। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা। আল্লাহ ভগবান ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা।
প্রথমে বাঙলায় বিশ্বাস কাকে বলে সেটা জানতে হবে। বিশ্বাস হচ্ছে যুক্তিহীন কোন ধারণা, অনুমান, প্রমাণ ছাড়াই কোন প্রস্তাব মেনে নেয়া। তথ্য প্রমাণ পর্যবেক্ষন এবং অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় মানুষের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত নয়।
যেমন
ধরুন, আগামীকাল সূর্য উঠবে। এটা আমার বিশ্বাস নয়, এটা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া আমার সিদ্ধান্ত। যেহেতু আমরা জন্ম থেকেই দেখে এসেছি সূর্য উঠতে, তাই এটা আমার বিশ্বাস নয়। আমি নিশ্চিতভাবেই জানি যে, কাল নিশ্চয়ই সূর্য উঠবে।
একটি আপেল গাছ থেকে নিচের দিকে পড়ে। এটা আমার বিশ্বাস বা আস্থা নয়, এটি আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখি। এর কারণ জানতে আমাদের বিজ্ঞান শিখতে হয়। সেটা শিখলে আমরা নিশ্চিতভাবেই মেনে নিই, পৃথিবীর সকল গাছের আপেলই নিচের দিকেই পড়বে। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত। মোটেও এটি আমাদের বিশ্বাস নয়।
কিন্তু ধরুন আগামীকাল আমার বন্ধুটি আমার বাসায় আসবে। এটি হচ্ছে আমার বন্ধুর প্রতি আস্থা। বা আমার বাবা আমাকে দুই’শ টাকা দেবে। এটি আমার বাবার প্রতি আস্থা।
ধরুন আগামীকাল আমি আকাশে উড়তে পারবো। এর পেছনে আমার কোন যুক্তি বা প্রমাণ নেই। আমার পূর্বের অভিজ্ঞতাতেও এরকম কখনো কিছু ঘটে নি। এই কারণে এটি হচ্ছে আমার বিশ্বাস। বা অমুক পীর সাহেব পানি পড়া দিলে রোগ ভাল হয়। এটির পেছনে আমরা শুধু বিশ্বাস করতে পারি, কোন প্রমাণ বা এর পেছনে যুক্তি চাইতে পারি না।
যখনই কোন কিছু যুক্তিতর্ক পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা লব্ধজ্ঞান হয়ে উঠবে, তা আর বিশ্বাস থাকবে না। যেমন ধরুন পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রণে তৈরি। এটা মানুষের বিশ্বাস নয়, এটা পরীক্ষালব্ধ ফলাফল; এবং কে এতে বিশ্বাস করলো কে করলো না, তাতে এই তথ্যের কিছুই যায় আসে না। এটা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্য। আমরা কেউ বলি না “পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রন, এই কথা আমি বিশ্বাস করি”; এটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নই নয়। বা ধরুন, পৃথিবী গোল, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মেনে নিই উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের আলোকে। এটা এখন আর অনুমান বা বিশ্বাস নেই, এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য। বা ধরুন বিবর্তনবাদ। এটা কোন অনুমান নয়। বর্তমানে এটি পরীক্ষানিরীক্ষা দ্বারা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্য।
বিশ্বাস সেটাই করতে হয়, যাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বা যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ধরুন কেউ ভুতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে এলিয়েন পৃথিবীতেই আছে, কেউ জ্বীন পরী, কেউ আল্লা ভগবান, কেউ জিউস কালী ইত্যাদি। এগুলো বিশ্বাসের ব্যাপার, কিন্তু আমরা আলোতে বিশ্বাসী নয়, আমরা সুর্যে বিশ্বাসী নই, আমরা চেয়ার টেবিলে বিশ্বাসী নই। কারন এগুলো বিশ্বাস অবিশ্বাসের উর্ধ্বে। আমরা বলি না অমুক লোক সুর্যে বিশ্বাসী, তমুক লোক চেয়ার টেবিলে বিশ্বাস করে। আমরা বলি মুসলিমরা আল্লায় বিশ্বাসী, হিন্দুরা শিব বা দুর্গায়, কেউ শাকচুন্নীতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে আমাদের চারপাশে জ্বীন পরী খুরে বেড়ায়।
এখন ধরুন,
কোন পুরুষ বিশ্বাস করে নারীকে সে ইচ্ছা করলেই পেটাতে পারে, তার স্ত্রী হচ্ছে তা অধিনস্ত জীব। বা কোন মানুষ বিশ্বাস করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পৃথিবীর জন্য ভাল।
বা কেউ বিশ্বাস করতে পারে মুসলিমরাই আসলে মানুষ, অন্য ধর্মের অনুসারীরা কাফের-ঈশ্বরের শত্রু, তাই তাদের কল্লা কাটাই ঈশ্বরের রাজত্ব কায়েম করা।
একজন মৌলবাদী ধার্মিক বিশ্বাস করতে পারে দেশে ইসলামী শাসন বা শরীয়া আইন আসলেই দেশ ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।
কেউ বিশ্বাস করতে পারে, সমকামীদের হত্যা করা ঈশ্বরের নির্ধারিত পবিত্র দায়িত্ব।
কেউ বিশ্বাস করতে পারে, গণতন্ত্র কুফরি মতবাদ, জিহাদ করে এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কেউ বিশ্বাস করতেই পারে, মেয়েদের এত পড়ালেখার প্রয়োজন নেই।
কেউ বিশ্বাস করতেই পারে, জন্মনিয়ন্ত্রণ অন্যায়।
— এবং এইসকল বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তার কাছে যুক্তি চাওয়া যাবে না, এই নিয়ে আলোচনাও করা যাবে না। আলোচনা বা যুক্তিতর্ক তার বিশ্বাসকে খারিজ করে দিতে পারে, তার বিশ্বাসে আঘাত করতে পারে।
আমরা যারা নিজেদের যুক্তিবাদী বলে দাবী করি, তারা সকল ধারণা, সকল বিশ্বাসকেই যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করি, যাচাই বাছাই করে দেখতে চাই। এই সময়ে “বিশ্বাসে আঘাতের” অজুহাত এনে আলাপ আলোচনা এবং যুক্তিতর্ককে খারিজ করে দেয়া শুধু প্রতিক্রিয়াশীলতাই নয়, মানব সমাজের জন্য হুমকিও বটে।
সকল বিশ্বাসকেই যদি সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়, তাহলে গোলাম আজম বা বাঙলা ভাইয়ের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবে, আবার হিটলারের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবে। সকল বিশ্বাসকে সম্মান করা শুধু বোকামি নয়, বিপদজনকও বটে। আমি কেন তা করবো? তাদের বিশ্বাসকে আমি কেন যাচাই করে দেখবো না? তাদের বিশ্বাসকে আঘাত কেন করবো না? তা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কেন তা যে মিথ্যা তা বলবো না? কেন আমার যুক্তি তুলে ধরবো না? আমি শুধু সেই বিশ্বাসকেই সম্মান জানাবো, যা যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনায় যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হবে। যুক্তিহীন বিশ্বাস মাত্রই ক্ষতিকর এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য ভয়ংকর। বিশ্বাস ভিত্তিক সমাজ কুসংস্কারের আখড়ায় পরিণত হয়, মানুষকে ক্রমশ মধ্যযুগে টেনে নিয়ে যায়, যার প্রমাণ বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
সমস্যা হচ্ছে, বিশ্বাস যদি যুক্তিতর্ক, তথ্য প্রমাণ এবং পর্যবেক্ষণ দ্বারা সত্য প্রমাণিত হয়, তখন তা আর বিশ্বাস থাকে না। সেটা সত্য হয়ে ওঠে। তাই প্রতিটি বিশ্বাসকে আঘাত করা জরুরী, যাচাই বাছাই আলাপ আলোচনা সমালচনা জরুরী। মিথ্যা হলে তা খারিজ করা এবং সত্য হলে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী।
বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্পকলা- সাহিত্য বা সঙ্গীত কখনই বলবে না, বিজ্ঞানে অবিশ্বাসীরা নোংরা-ইতর-নরকের জ্বালানী, যারা বিবর্তনবাদ মানে না তাদের স্থান নরকের নিম্নতম প্রকোষ্ঠে, যারা আপেক্ষিক তত্ত্ব বোঝে না তারা শয়তানের চ্যালা। অথবা দর্শন না মানলে তাদের কল্লা কেটে নাও, দ্বান্দিক বস্তুবাদের সাথে একমত না হলে তাকে যেখানেই পাও পাকড়াও করে হত্যা কর, অস্তিত্ত্ববাদই আদর্শ জীবন বিধান অথবা শিল্পকলা- সাহিত্য বা সঙ্গীত চর্চা না করলে জিজিয়া কর দাও। তাদের পুত্র কন্যা স্ত্রীদের দাস বানাও, তাদের স্ত্রী কন্যাদের গনিমতের মাল বলে ভোগ কর।
এমনকি এও বলে না, যারা বিজ্ঞান-দর্শন-সাহিত্য মানে না, তাদের সাথে বন্ধুত্ত্বও করো না।
এমনকি কোন কবি যদি কবিতা ছেড়ে দিয়ে দর্শন চর্চাও শুরু করে, কবিতা বর্জনের জন্য তাকে মুরতাদও ঘোষণা করা হয় না।
কোন বিজ্ঞানী যদি বিজ্ঞান ছেড়ে দিয়ে সঙ্গীত সাধনাও শুরু করে, তাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। তার জন্য কোন শাস্তিও নেই।
এমনকি কোন প্রচন্ড যুক্তিবাদী যদি হঠাৎ ভোল পাল্টে টুপি পরে মক্কায় গিয়ে মাথা ঠোকা শুরু করে, তাকেও কেউ কিছু বলে না।
সাহিত্যের জন্য কোন হুরপরী নেই, কোন মদের সমুদ্র নেই। অপসাহিত্য লিখলে কোন মারপিটেরও ব্যবস্থা নেই।
চিকিৎসক যদি চিকিৎসা ছেড়ে ঝাড় ফুঁক, তাবিজ কবচের ব্যাবসা শুরু করে, তার জন্যেও কোন শাস্তির ব্যাবস্থা নেই।
কিন্তু এসবই ধর্মবিশ্বাসীরা করে এবং করে আসছে। এবং সাধারণ শিক্ষাবঞ্চিত নিম্নবিত্ত মানুষও বিজ্ঞান-দর্শন-সাহিত্য-শিল্পকলা-সঙ্গীত ছুড়ে ফেলে ক্রমশ আরো বেশি ধর্মে আসক্ত হয়ে উঠছে। আমাদের দেশ ক্রমশই ভরে উঠছে টুপি আর হিজাবে।
আর সবচাইতে আতংকের বিষয় হচ্ছে, এখন প্রগতিশীলতার দাবীদাররাও ধর্মান্ধদের ভাষাতেই কথা বলছে! বিশ্বাসে আঘাত করা যাবে না, বিশ্বাসকে যুক্তিতর্কের আলোচনায় আনা যাবে না, বিশ্বাসকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে বলে যারা দাবী করে, তারা তাদের বিশ্বাসের ভ্রান্ততা ফাঁস হবার ভয়েই করে, তারা নিজেরাও বোঝে তাদের বিশ্বাস যুক্তিতর্কের ধোপে টিকবে না।
সকল ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনৈতিক বিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, আইনকানুন, প্রথা, নিয়ম, নৈতিকতা, সবকিছুই যুক্তিতর্ক, তথ্য প্রমাণ এবং অর্জিত জ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা এবং যাচাইযোগ্য। এতে বিশ্বাস আহত হলে হবে। বিশ্বাস যদি এতই ঠুনকো হয়ে থাকে, অল্প আঘাতেই যদি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়, তবে তা মমি করে জাদুঘরে পাঠালেই হয়। সভ্য সমাজে যুক্তিহীন মিথ্যা বিশ্বাসের কোন স্থান থাকতে পারে না।
ধর্মীয় অবমাননার উদ্দেশ্যে কিছু লেখা :
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ২৯৫ক ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অসদুদ্দেশ্যে লিখিত বা মৌখিক বক্তব্য দ্বারা কিংবা দৃশ্যমান অঙ্গভঙ্গি দ্বারা সংশ্লিষ্ট ধর্মটিকে বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা করে বা অবমাননার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৮৬০ সালের মূল আইনে এ ধারাটি ছিল না। পরবর্তীতে ১৯২৭ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে এ ধারাটি যুক্ত করা হয়।
প্রমাণের বিষয়
এই ধারার অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে:
ক. অভিযুক্ত ব্যক্তি কিছু বলেছিলেন বা কোনো শব্দ লিখেছিলেন বা কোন ভাবভঙ্গি করেছিলেন।
খ. অভিযুক্ত ব্যক্তি ওইরকম কাজ করে কোনো ধর্মকে বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করেছিলেন।
গ. অভিযুক্ত ব্যক্তি উক্ত শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত আনার অভিপ্রায়ে ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষাত্মকভাবে করেছিলেন।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। ধর্মানুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত মনে হলে, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হলে যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনের সহায়তা নিতে পারেন। তিনি থানায় মামলা করতে পারেন অথবা সরাসরি আদালতেও মামলা করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বিচার ও শাস্তি হতে পারে। বাংলাদেশে ফৌজদারি দণ্ডবিধি আইনের আওতায় ধর্মীয় অবমাননার বিষয়টি রয়েছে। এই আইনের ২৯৫ থেকে ২৯৮ ধারায় ধর্মীয় অবমাননার ব্যাখ্যা ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। যে কোনো ধর্মের মানুষের জন্য তাদের বিশ্বাস আহত হলে ফৌজদারি দণ্ডবিধির আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। দণ্ডবিধির ২৯৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের কোন নাগরিককে মৌখিক, লিখিতভাবে বা অন্য কোন উপায়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হলে, কোন ধর্মীয় স্থান বা সেখানকার কোন বস্তু ধ্বংস করা, ক্ষতি করা বা অসম্মান করা হলে তাকে ধর্মীয় অবমাননা হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আইনের ২৯৬ নম্বর ধারায় বলা আছে, আইনসঙ্গতভাবে আয়োজিত ধর্মীয় কোন সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে কেউ বাধা বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। এক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। ২৯৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোন ব্যক্তির ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় কোন স্থানে অনধিকার প্রবেশ করা, মৃতদেহের অসম্মান অথবা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সমস্যা তৈরি করা হলে সেটিও ধর্মীয় অবমাননা বলে গণ্য হবে। এই অপরাধের ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আর ২৯৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কোন বাক্য বা শব্দ বিকৃত করা, এমন অঙ্গভঙ্গি করা যাতে তার ধর্মবিশ্বাস আহত হতে পারে, এমন আচরণ করা হলে এক বছরের কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে জরিমানারও বিধান রয়েছে।
তবে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করার শাস্তি আরো বাড়ানো হয়েছে। এই আইনের ২৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোন কিছু প্রকাশ, সম্প্রচার, ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারো ধর্মীয় বিশ্বাস বা মূল্যবোধে আঘাত করেন, তাহলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অপরাধ করলে অনূর্ধ্ব ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। কেউ যদি দ্বিতীয়বার একই ধরণের অপরাধ করেন, তাহলে তার অনূর্ধ্ব ১০ বছরের কারাদণ্ড, ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ