এটা সর্ববিদিত যে, বেদ হল বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন পুস্তক। এতক্ষণ পর্যন্ত বিষয় পড়ে আপনি এটাও জেনে থাকবেন যে, বেদের মধ্যে জ্ঞান - বিজ্ঞানের সেই সব রহস্যের কথা লেখা রয়েছে যাকে আজ বৈজ্ঞানিক খুঁজে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন এটা উঠছে যে, যেসব দেশে বেদ নেই সেখানে এত উন্নতি কিভাবে হয়েছে? সুতরাং আজ বিশ্বে বেদের মতো মানব ধর্মশাস্ত্রের কি এমন আবশ্যকতা রয়েছে?
যদি জ্ঞানকে দুই প্রকারে বিভাজন করা হয় তবে আধ্যাত্মিক আর ভৌতিক জ্ঞান বলা যেতে পারে। আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অন্তর্গত সৃষ্টির রচয়িতা আর শরীরে উপস্থিত জীবাত্মা হতে সম্বন্ধিত জ্ঞান আসবে, অন্যদিকে সাংসারিক পদার্থের বিষয়গুলোকে জানা ভৌতিক জ্ঞানের অন্তর্গত হবে। মানব সমাজকে শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য উভয় প্রকারের জ্ঞানের আবশ্যকতা রয়েছে। আধ্যাত্মিক উন্নতি সমাজে মানবীয় গুণগুলোকে বাড়ায়। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে ভৌতিক উন্নতি করাটা প্রাণীমাত্রের জন্য হিতকর হয়ে থাকে। যদি সমাজে আধ্যাত্মিকতার অবনতি (পতন) হয়ে যায় আর ভৌতিক উন্নতি চরমে পৌঁছে যায় তবে বিনাশকারী বিচারের আর অমানবীয় গুণের সমাজ হয়ে যাবে। এরকম সমাজ বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়াবে যেটি যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে। আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অভাবে ভৌতিক জ্ঞানের দুরুপয়োগ হয়ে থাকে। আজ মানুষ ভৌতিক জ্ঞানে অনেক উন্নতি করেছে কিন্তু ভাবুন এই ২০০-৩০০ বছরের মধ্যে এই বিশ্বকে বিজ্ঞান কত বিনাশ করেছে।
এখন পর্যন্ত অধ্যায় পড়ে আপনি এটা তো বুঝেই গেছেন যে, মানুষের শিশুকে না শেখালে স্বয়ং নিজে থেকে কিছু শেখে না। যদি তাকে কেউ কিছু না শেখায় তবে সে তার আস-পাশে উপস্থিত পশু-পাখি আদিকে দেখে তাদের মতোই শিখে নেয়। তাদের না শেখালে তারা সেই বাঁদর আদির মতো হবে যারা মানুষ আদিকে দেখে তাদের মতো (নকলই) করার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু মানুষ আর বাঁদরের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে যে, মানুষের কাছে অনেক অধিক জ্ঞান প্রাপ্ত করার জন্য বুদ্ধি রয়েছে আর বাঁদর আদি পশুদের কাছে জীবিত থাকার যত জ্ঞানের আবশ্যকতা ততখানি স্বাভাবিক জ্ঞান রয়েছে। যদি কেউ বাঁদরকে কাপড় সেলাই কারী সুই বানানো অথবা অন্য কিছু জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা দেয় তবে সে কখনই মানুষের মতো শিখতে পারবে না। এর অর্থ হল যে, মানুষ সৃষ্টির আদি হতেই বুদ্ধিমান আর প্রারম্ভে যখন সর্বপ্রথম ঈশ্বর মানুষদের উৎপন্ন করে তো তখন তাকে জ্ঞানও দিয়েছিল। সেই প্রারম্ভিক জ্ঞানকে মানব ধর্মশাস্ত্র অর্থাৎ বেদ বলা হয়, যার মানে হল জ্ঞান। তারপর এক প্রজন্ম থেকে দ্বিতীয় প্রজন্ম, একস্থান থেকে অন্যস্থান পর্যন্ত সেই জ্ঞান মানুষ ছড়াতে থাকে। তারপর সেই বিদ্যা বেদ ছাড়াই সংসারে ছড়িয়ে যায়।
আজকে যে ব্যক্তি এটা বলছে যে, বিজ্ঞান অনেক উন্নতি করে ফেলেছে সেসব ব্যাক্তি নিতান্ত অহংকারী আর নিজের হতে পূর্বের লোকেদের পুরুষার্থকে নীচ বলে মনে করে। আজ যেসব বিজ্ঞানকে আপনি সংসারের মাঝে দেখছেন তা এখানে পর্যন্ত কোনো ১০০-৫০০ বছরে মধ্যে আসেনি। এই ছোট-ছোট বিদ্যাগুলোকে শিখতে থাকার দরুন সম্পূর্ণ মানবজাতিকে সহস্র লক্ষ-লক্ষ বছরের কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে এটা তারই ফল। আজ বিজ্ঞানের উন্নতিকে দেখে লোকে ভুলে যায় যে, সৃষ্টির আদিতে মানব ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ বেদ থেকেই মানুষ জ্ঞান প্রাপ্ত করেছিল। আজ পৃথ্বীর প্রত্যেক পদার্থ , প্রত্যেক স্থান এমনকি মানুষও বিষাক্ত হয়ে গেছে। ভৌতিক জ্ঞানে এই বিশ্ব এতই উন্নতি করে ফেলেছে যে, বিশ্বে অর্ধেকের বেশি জনগণ পান করার জল পাচ্ছে না আর প্রতিদিন লক্ষ-লক্ষ লোক ক্ষুধার্তে যন্ত্রণায় মারা যায়।
প্রথমে ভৌতিক বিজ্ঞানেরই বিচার ধরা যাক, সাংসারিক পদার্থের জ্ঞান অর্থাৎ বিজ্ঞানের দুইভাবে উন্নতি করা যেতে পারে।
• প্রথমত, মানব ধর্মগ্রন্থ বেদকে পড়ে আর বুঝে নিয়ে বিজ্ঞানে উন্নতি করা যেতে পারে। বেদের মধ্যে ব্রহ্মাণ্ড বিজ্ঞান যথা সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ, চাঁদে জীবন, আকাশগঙ্গার, বর্ষা বিজ্ঞান আদি বিভিন্ন বিষয়গুলোকে সংক্ষেপে বলা হয়েছে। তীব্র গতিতে এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলার সাধন বানানোর অনেক মন্ত্র রয়েছে। এই সাধনগুলোর মধ্যে বায়ুতে চলনকারী বিমানগুলো বানানোর বিদ্যাও রয়েছে। বিদ্যুৎ বানানোর বিদ্যা থেকে অণু-পরমাণু পর্যন্ত সকল প্রকারের বিদ্যা বেদের মধ্যে দেওয়া আছে। কিন্তু এইসব সংক্ষেপে সিদ্ধান্ত রূপে দেওয়া হয়েছে। যদি বিস্তারে বেদের এক-একটি বিদ্যাকে উন্নত করার জ্ঞান দেওয়া হত তাহলে বেদের আকার এত বড় হত যে মানুষ তাকে সামলাতেই পারতো না। দ্বিতীয় কথা, যদি প্রত্যেক বিষয়ের উপর এক-একটি কথা গভীর ভাবে শেখানো হত তবে মানুষের বুদ্ধির প্রয়োগ কি করতে?
বিদ্যালয় আদিতে গণিতের পুস্তকে সিদ্ধান্ত (ফর্মুলা) দেওয়া হয়। সেই ফর্মুলা প্রয়োগ করে লক্ষ-লক্ষ প্রশ্নের উত্তর সরলতার সঙ্গে বের করা যেতে পারে। এমনটা নয় যে, লক্ষ প্রশ্ন আর উত্তর দ্বারা গণিত পুস্তককে লক্ষ পৃষ্ঠার বানানো হবে। এইভাবে বেদের মধ্যেও সিদ্ধান্ত রূপে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।
• দ্বিতীয়ত, সংসারের পদার্থগুলোকে দেখে বুঝে নিয়েও ভৌতিক উন্নতি প্রাপ্ত করা যেতে পারে। এতে সময় অনেক লাগবে যেমন বেদকে পড়ে অগ্নির গুণগুলোকে সরলতার সঙ্গে জানা যেতে পারে যে অগ্নি তীক্ষ্ণ হয় আর অগ্নি দ্বারা বিভিন্ন কার্য সিদ্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু বেদ ছাড়াও মানুষ এই জ্ঞান ঈশ্বরের বানানো সৃষ্টির অধ্যয়ন করে প্রাপ্ত করতে পারে। অগ্নির নিকট গিয়ে কেউ অগ্নির গুণগুলোকে জানতে পারবে কিন্তু তার প্রয়োগগুলোকে জানার জন্য অনেক সময় লেগে যাবে। সুতরাং ভৌতিক জ্ঞান বেদ হতে কিংবা সৃষ্টির অধ্যয়ন হতে প্রাপ্ত করা যেতে পারে। এমনটা নয় যে, যিনি বেদ পড়েননি তার জ্ঞানই হবে না বরং বেদের জ্ঞান দাতা ঈশ্বরের বানানো সৃষ্টিকে দেখে ঈশ্বরের দেওয়া বুদ্ধির বলের উপরেও জ্ঞান প্রাপ্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সে জ্ঞান ভ্রান্তিকারক হবে কারণ সৃষ্টি আদিকে দেখে কেবল ভৌতিক জ্ঞানে উন্নতি করা যেতে পারে, আধ্যাত্মিকে নয়। যেখানে ভৌতিক জ্ঞান সমাপ্ত হয়ে যায় সেখান থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রারম্ভ হয়। যেরকম শরীর তথা প্রাণ উভয়ই জীবনের জন্য আবশ্যক ঠিক সেইরকম ভৌতিক তথা আধ্যাত্ম জ্ঞান উভয় জ্ঞানই সংসারের জন্য আবশ্যক। আধ্যাত্ম জ্ঞান ছাড়া ভৌতিক জ্ঞান বিনাশকারী হয়ে থাকে তথা দীর্ঘকাল পর্যন্তও চলতে পারে না।
সজ্জনগণ! উন্নতির সঙ্গে অবনতি অর্থাৎ উত্থানের সঙ্গে পতন অবশ্যই হয়ে থাকে। যেদিন থেকে আপনি ঘর বানানো শুরু করেছেন সেদিন থেকেই সেই ঘর ভাঙ্গাও শুরু হয়ে যায়। অণু পরমাণুর মিশ্রণে বানানো যেকোনো পদার্থ সর্বদা থাকে না। ঠিক এইভাবে সভ্যতা তৈরি হয় এবং ধ্বংস হয়ে থাকে। আগে যেতে থাকে আর উন্নতি করতে থাকে। তারপর কোনো না কোনো কারণে সমাপ্ত হয়ে যায় আর আবারও নতুন সভ্যতা আর আবারও তার পতন এই প্রবাহ নিরন্তর চলতে থাকে। সুতরাং এটা প্রথমবার নয় যে, মানুষ এত ভৌতিক উন্নতি প্রাপ্ত করে ফেলেছে। এমনটা বলা আজকের মানুষদের মিথ্যা অহংকার দর্শাচ্ছে।
এখন আধ্যাত্মিক জ্ঞানে আসি, এই জ্ঞান ভৌতিক জ্ঞানের অপেক্ষায় অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। জীবাত্মা আর ঈশ্বর হল ভৌতিক পদার্থের থেকেও সূক্ষ্ম সুতরাং তাদের জ্ঞান কোনো মেশিন অথবা কোনো ফর্মুলা দ্বারা হওয়া সম্ভব নয়। এই সাধারণ কথাটাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ যারা নিজেকে বৈজ্ঞানিক বলে, তারা জানেই না। এইজন্য সৃষ্টির রচয়িতা আর তার শক্তিকে খোঁজার জন্য কয়েক আরব ডলার ব্যয় করে বৈজ্ঞানিকরা এক খুবই বিশালকায় এল০ এচ০ সী০ মেশিনের নির্মাণ করে। সন ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ করতে থাকে কিন্তু কোনো পরিণাম বের হয় না। এখন বিশ্বের অপার ধন লেগেছে তাই সংসারের সামনে কিছু না কিছু কথা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ৩০ কিলোমিটার লম্বা মেশিন দ্বারা বিশ্বের সবথেকে সূক্ষ্ম তত্বকে সন্ধানকারী ভুলে গেছে যে, সেই তত্বটা সর্বব্যাপক আর সেটা মেশিনেরও অণু-পরমাণুতে রয়েছে। যদি সেই তত্ব কোনো পদার্থ দ্বারা তৈরী হত তবে নিশ্চিত রূপে তাকে বিজ্ঞানের সহায়তায় তৈরি কোনো সাধন দ্বারা খোঁজা যেত, যেমন প্রোটন ইলেকট্রন আদিকে জানতে পারা গেছে। কিন্তু যেটি কোনো কিছু দ্বারা তৈরি নয় আর সংসারের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম পদার্থ থেকেও অসংখ্য গুন সূক্ষ্ম, তাই তাকে ভৌতিক বিজ্ঞান দ্বারা জানা অসম্ভব। তবে হ্যাঁ, ঈশ্বর স্বয়ংই তার কাছে পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত সূক্ষ্ম তত্ব (বুদ্ধি) বানিয়ে জীবাত্মার উপর কৃপা করেছে। অষ্টাঙ্গয়োগের দ্বারা বুদ্ধি আদির সহায়তায় আমরা স্বয়ংকে (আত্মাকে) জেনে যাই আর তার দ্বারা জীবাত্মাই পরমাত্মার অনুভব করতে পারে। এর অতিরিক্ত সৃষ্টির রচয়িতা পর্যন্ত পৌঁছানোর আর অন্য কোনো মার্গ নেই। সুতরাং বর্তমান ভৌতিক জ্ঞান মানুষকে বিনাশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কারণ এখানে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জন্য কোনো স্থান নেই। আধ্যাত্মিক জ্ঞানই (ঈশ্বর আর আত্মাই) মানুষকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারবে। মানুষের জ্ঞান পিপাসা আধ্যাত্মিক জ্ঞান দ্বারাই পূর্ণ হওয়া সম্ভব।
ভাবুন, যদি সংসারের পদার্থে এত সুন্দরতা ও সুখ আজ মানুষ দেখছে তবে তার রচয়িতার মধ্যে কতই না সুখ হবে? ভাবুন, যে জীবাত্মা মানুষ শরীর পেয়ে ভিন্ন-ভিন্ন প্রকারের আশ্চর্যজনক পদার্থকে বানিয়ে ফেলে, সেই জীবাত্মাকে জানাটা সংসারের কত বড় আশ্চর্য হবে? যেসব লোকে এটা বলছে যে, বেদ ছাড়াই মানুষ আজ এত উন্নতি করে ফেলেছে, তাহলে নিশ্চতরূপে তাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঠিক পরিভাষাকে জানার আবশ্যকতা রয়েছে। এটা সম্ভব যে যেমন-তেমন করে হাজার-হাজার বছর পর্যন্ত পুরুষার্থ করে আর সৃষ্টির অধ্যয়ন করে মানব সমাজ ভৌতিক জ্ঞানে উন্নতি করতে পারে কিন্তু আধ্যাত্মিক জ্ঞান আর ভৌতিক জ্ঞান একসঙ্গে প্রাপ্ত করতে হলে মানুষকে মানব ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ বেদের দিকে ফিরে আসতেই হবে।
পরমাণু বিদ্যার জনক মহর্ষি কণাদ লিখেছেন যে, "য়তো অভ্যুদয় নিঃশ্রেয়স সিদ্ধি সহ ধর্মঃ" অর্থাৎ যে বিদ্যার দ্বারা সংসারের সকল পদার্থের সঙ্গে-সঙ্গে ঈশ্বর-আত্মা আদিরও জ্ঞান হবে, তাকে ধর্ম বলে।
সুতরাং এমনটা নয় যে, মানুষ বেদের জ্ঞান ছাড়া উন্নতি করতে পারবে না। ঈশ্বর মানুষকে বুদ্ধি তত্ব দিয়েছে যারদ্বারা মানুষ প্রত্যেক পদার্থের অধ্যয়ন, পরিমাপ আর বিশ্লেষণ করতে পারে। কিন্তু যেখানে ভৌতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমাপ্ত হয়ে যায় তার পরের বিদ্যা কেবল বেদ দ্বারাই মানুষ জানতে পারবে। যেরকম বেঁচে থাকার জন্য ভোজন তথা জলের সঙ্গে-সঙ্গে বায়ু আদিরও আবশ্যকতা রয়েছে, এরকমই ভৌতিক জ্ঞানের সঙ্গে-সঙ্গে আধ্যাত্মিক জ্ঞানেরও আবশ্যকতা সর্বদা রয়েছে। যেদিন সংসারে এই উভয় জ্ঞান সর্বসাধারণের মাঝে পৌঁছে যাবে সেদিন লোকের মন ভোলানোর জন্য কোনো জন্নত আদির লোভ, পাপমুক্তি আর যিশুর প্রাপ্তি আদি লোভের আবশ্যকতা হবে না। সমাজ কর্মফল ব্যবস্থার অনুসারে শান্তি আর সমৃদ্ধি প্রাপ্ত করবে।
চতুর্দিক থেকে যুদ্ধে ঘেরা জার্মানী কারখানাগুলোকে বদলাতে ব্যস্ত থাকে আর মিত্র দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জিতে যায়। যদি নাজীর লোকেরা ১-২ বছর সময় আরও পেয়ে যেত তবে যুদ্ধের পরিণামটা অন্য কিছুই হত। যুদ্ধের পশ্চাৎ আমেরিকা, সোভিয়েত সংঘ, ব্রিটেন তথা ফ্রান্সের মতো বিজেতা দেশগুলো A4/V2 টেকনিক অর্জন করার জন্য জার্মান বৈজ্ঞানিক আর ইঞ্জিনিয়ারদের খোঁজা শুরু করে দেয়। বান ব্রানের নেতৃত্বে সকল ইঞ্জিনিয়ার ভিন্ন-ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়, যাতে কোনো এক গ্রুপকে হত্যা করলে তবে রকেটের টেকনিক যেন সমাপ্ত না হয়ে যায়। রকেটের সম্বন্ধিত সকল ডকুমেন্টস আর সম্পূর্ণ প্রযুক্তিকে ইনি জার্মানী, অস্ট্রিয়া আদির বর্ডারের পাহাড়ে তথা গুফাতে লুকিয়ে রাখেন। এখন এই ইঞ্জিনিয়ার কিছু সুরক্ষিত ছিলেন কারণ যতক্ষণ টেকনিক পাওয়া যাবে না ততক্ষন কোনো দেশই এরকম জ্ঞানী ব্যক্তিদের হত্যা করবে না। পরবর্তীতে প্রযুক্তির কিছু কিছু ব্লু-প্রিন্ট সোভিয়েত সংঘ, ব্রিটেন ও ফ্রান্স পেয়ে যায়। এইজন্য এই দেশগুলো ফাইটার জাহাজের ও স্পেস এজেন্সির দিক দিয়ে উন্নত আজ। সবথেকে বড় লাভ আমেরিকার হয়। মুখ্য বৈজ্ঞানিক বর্নহর বান ব্রান এদের হাতে চলে আসে যাকে আমেরিকা নিজের নাগরিকতা দিয়ে দেয়। ব্রান প্রায় ১৫০ রকেট ইঞ্জিনিয়ারের ঠিকানা জানিয়ে তাদেরও আমেরিকাতে নিয়ে আসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। দ্বিতীয় প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক আর ব্রানের মুখ্য সাথী বাল্টর ডার্নবর্গরও আমেরিকার মহাকাশ মিশনের দায়িত্ব সামলে ছিলেন। ১৯৫৮তে নাসার (NASA) স্থাপনের পরে এরকম বৈজ্ঞানিকরাই নাসার প্রসিদ্ধ মিশন "অ্যাপোলো" -র জন্য কাজ করে ও আমেরিকান মহাকাশ যাত্রীরা চাঁদ পর্যন্ত যাত্রা করে। এই রিসার্চের আধারের উপর এন্টারকন্টিনেন্টাল মিসাইল বিকশিত করা হয়।
নাসার (NASA) সফলতার পিছনে জার্মান বৈজ্ঞানিকদের সবথেকে বড় হাত ছিল। সোভিয়েত সংঘ (Soviet Space Program) যখন সকল রকেট বৈজ্ঞানিকদের আমেরিকাতে থাকার কথা শোনে তখন রকেট টেকনিক প্রাপ্ত করার জন্য তারা দিন-রাত, আকাশ-পাতাল এক করে দেয়। সোভিয়েত সংঘের বৈজ্ঞানিক পেনমুন্ডে গ্রামে আসে আর ভাগ্যক্রমে Alexei Isaev নামক বৈজ্ঞানিক Supersonic Bomber Rocket - এর সম্বন্ধিত এক দলিল পেয়ে যান তথা V2 রকেটের বিক্ষিপ্ত কিছু ভাগও পেয়ে যান।
শুধু এটাই নয়, এক V2 রকেট যা নাজীরা পোল্যান্ডে অবতরণ করেছিল তাকেও খুঁজে পায়। এখান থেকেই সোভিয়েত সংঘ আর আমেরিকার মহাকাশ উড়ান শুরু হয়। এতেই শেষ নয়, Nuclear Weapons এর খোঁজও হিটলারেরই ছিল আর তারই বৈজ্ঞানিক সর্বপ্রথম এই দিশায় কাজ করছিল।
১৯৪৪শে জার্মানীর পরাজয়ের পর রকেট টেকনিকের মতো পরমাণু টেকনিক এবং বৈজ্ঞানিকও আমেরিকার হাতে এসে যায়। "A discovery by nuclear physicists in a laboratory in Berlin, Germany, in 1938 made the first atomic bomb possible, after Otto Hahn, Lise Meitner and Fritz Strassman discovered nuclear fission. When an atom of radioactive material splits into lighter atoms, there's a sudden, powerful release of energy."
যেই গুপ্ত মিশনের উপর হিটলার কাজ করছিল সেখানে অধিকাংশ কারিগর ও মজদুর ইহূদী যুদ্ধবন্ধীরা ছিল। এইজন্য ইহূদী লোকেদের মধ্যেও সেই বিদ্যা ছড়িয়ে যায় আর আজ ইজরায়েল এরজন্যই অনেক বৈজ্ঞানিক উন্নতি করেছে। আমেরিকা এই ইহূদী কারিগরদেরও নিজের কাছে শরণ দেয়। আজও ইজরায়েলের পর সবথেকে অধিক ইহূদী আমেরিকাতেই রয়েছে তথা প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ রূপে আমেরিকার রাজনীতির মধ্যে অধিক ক্ষমতা রাখে। যেই ইহূদীদের কাছে ভূমির কোনো এক টুকরোও ছিল না আজ আমেরিকার উপর মজবুত হয়ে নিজের জন্য এক নতুন দেশ ইজরায়েল বানিয়ে ফেলেছে আর টেকনিক্যাল উন্নতিও করেছে।
এটা ছিল জার্মানির শক্তি আর টেকনিক যার পিছনে হিটলারের সমর্থন আর প্রোৎসাহন কাজ করছিল। যেই হিটলারকে সারাবিশ্ব মিত্র দেশদের দুষ্প্রচারের কারণে সংসারের সবথেকে খারাপ ব্যক্তি বলে থাকে, সেই হিটলার আর জার্মানির শক্তির উপর আজকের এই বৈজ্ঞানিক দুনিয়া লাফালাফি করছে। অর্ধেক বিশ্বের উপর অত্যাচারকারী যদি ব্রিটেন ভালো হয় তবে হিটলার কিভাবে খারাপ হয়ে গেল? জাপানের উপর পরমাণু বোমা বর্ষণকারী আমেরিকা ভালো তাহলে হিটলার খারাপ হল কিভাবে? যে ভারতীয় হিটলারের বিরোধ করে তাদের জানা উচিত যে, এই হিটলার আর জার্মানী সুভাষচন্দ্র বোসের সঙ্গ দিয়ে ছিল। আমাদের সেনা ব্রিটেনের গুলামীর কারণে হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। ব্রিটেন আমাদেরও শত্রু ছিল আর শত্রুর শত্রু মিত্র হয়ে থাকে। আমরা মিত্রকে সেই সময়ের কিছু মূর্খ নেতাদের প্রতারণায় এসে তাকে শত্রু মেনে নেই।
ফেব্রুয়ারি ২০২০তে আমি (রাহুল আর্য) ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। নেদারল্যান্ডের "দ্য হেগ" নগরের বসবাসকারী লিও নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে এই বিষয়ে চর্চা করার উপলক্ষ্য প্রাপ্ত হয়। মূল রূপে সে ব্যক্তি ডাচ ছিল। কিছু সময় পর্যন্ত বর্তালাবে জানা যায় যে, ঐতিহাসিক ঘটনার ভালো জানকারী তার কাছে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানী নেদারল্যান্ডের রাজধানী এমস্টার্ডমকে নিজের কব্জায় নিয়ে নিয়েছিল তা সত্ত্বেও হিটলারের থেকে অধিক খারাপ মিত্র দেশগুলোকে বলছিল।
সবাই জানে যে, হিটলারের রকেটের জন্য ব্রিটেনে ৩,০০০ জন লোক মারা যায় কিন্তু এটা কেউ বলে না যে, ব্রিটেনের হাওয়াই হামলায় প্রাচীন নগর কোলোনকে পুরো ধ্বংস করে ৫০,০০০ এর অধিক লোকেদের মারা হয়েছিল। সে বলছিল যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের প্রচণ্ড অপমান করা হয়েছিল। তাদের হাঁটু গেড়ে বসে নাক ঘষতে হতো। তারপর জ্ঞাত ইতিহাসের সবথেকে অপমানজনক "বর্সায়ের সন্ধি" হয়েছিল। এতে না কেবল জার্মানির উপর অপার আর্থিক ঋণের বোঝা ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বরং জার্মানী জনগনকে তাদেরই দেশের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘ দেশগুলোর শর্তে গুলাম বানিয়ে রাখা হয়েছিল। কেউ ভাবতেও পারবে না যে, সেই ঋণ শোধ করতে জার্মানীকে ৯২ বছর লেগেছিল। (A. Hall, "Germany ends World War One reparations after 92 years with £59m final payment", Mail Online updated 29 September 2010, dailymail.co.uk)
জার্মানীর জনগন ক্ষুধার্তে মারা যাচ্ছিল। অর্থ ব্যবস্থা সমাপ্ত হয়ে গেছিল। এমতাবস্থায় দেশে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা ছিল যেখানে যেকোনো বিশ্বযুদ্ধের মতো লোক মারা যেতে পারতো। এইরূপ পরিস্থিতিতে হিটলার সামনে আসে আর দুঃখী দেশকে নতুন দিশা দেখায়। সন ১৯২৯-১৯৩০ এর আর্থিক সংকটের প্রকোপ কম হওয়ার পরেও জার্মানীর কয়েকটি বড় ব্যাংক হঠাৎই কাঙ্গাল হয়ে যায়, যার মালিক ইহূদী লোকেরা ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আর সন্ধির সময় জার্মানীর উপর ইহূদী নেতাদের আর কমিউনিস্টদের হাতে ক্ষমতা ছিল। লোকেদের মনে তাদের প্রতি ক্রোধ উৎপন্ন হয়ে গেছিল। যেসব লোকেরা বলে যে, হিটলার জার্মানী লোকেদের প্ররোচিত করছিল সেসব ব্যক্তি মানুষদের মানসিকতা, সংবেদনা আর পরিস্থিতিকে বোঝার চেষ্টাই করেনি। এটা জার্মান জনগণই ছিল যারা হিটলারকে জন্ম দিয়েছিল। যখন আমি জার্মানিতে পৌঁছাই আর কয়েকটি মিউজিয়ামে যাই তো দেখি যে, জার্মানী জনগন নিজের মাতৃভূমিকে প্রাণের চেয়েও অধিক ভালোবাসে। ১৮৭১-রে ফ্রান্সের কাছে যুদ্ধ জেতার পরেও জার্মানী বিজিত ক্ষেত্র এক সন্ধি দ্বারা ফিরিয়ে দিয়েছিল। এরকম আত্মসম্মানী রাষ্ট্রের সঙ্গে জবরদস্তি "বর্সায়ের সন্ধি" করে নেওয়া কোটি-কোটি জনগনকে ক্ষুধার্ত আর অসহায়ের দিকে ফেলে দেওয়ার মতো ছিল। বাস্তবে এই যুদ্ধ জার্মানী প্রারম্ভ করেনি, মনে হচ্ছে সংসার ভুলে গেছে যে, কিভাবে ফ্রান্স, ব্রিটেন, ডাচ তথা পর্তুগালরা অর্ধেক বিশ্বকে গুলাম বানিয়ে আর তাদের সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছিল।
সব মানুষের মধ্যে গুণ দোষ হয়ে থাকে। আমি এটা বলছি না যে, হিটলার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিল। নিশ্চিত রূপে হিটলারের কিছু কাজ তাকে অনেক খারাপ বলতে বিবশ করবে কিন্তু হিটলারের বিরোধী বিশ্বের সবথেকে খারাপ লোক ছিল। ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া সংসারে অবশ্যই ঘটে থাকে। সংসারের বড় শক্তির সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য হিটলারকে ঘরে আওয়াজ কারীদের পিষে ফেলতে হয়েছে। যুদ্ধ কখনোই পূর্ণতঃ ব্যবস্থিত হয়ে চলে না যে, কোনো এক স্থানে দুজনকে মারতে হলে দুজনই মরবে। রাজ আদেশ তো দুইজনকে মারার হয় কিন্তু ১০০ -ও অধিক মরতে পারে। রাজা একা নির্ণয় করে না। কিছু নির্ণয় দেশ, কাল, পরিস্থিতির উপরেও হয়ে থাকে। সৈনিক অথবা জনগণের আক্রোশও কয়েকবার রাজাকে সামলাতে হয়। যেরকম ব্রিটেনরা ভারতীয়দের উপর অপমান করেছিল তারথেকেও জঘন্য ব্যবহার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানী জনগণের সঙ্গে করা হয়। সুতরাং কয়েকবার লোককে স্বয়ংই নির্ণয় করার উপর দাঁড়িয়ে পড়তে হয়।
১৮৫৭ এর ক্রান্তিতে অনেক অপ্রিয় আর ভুল ঘটনাও ঘটিত হয়েছিল তবে কি এটা বলা হবে যে ইংরেজরা সজ্জন লোক ছিল আর ভারতীয়রা অত্যাচারী ছিল? হিটলার অনেক ধরনের পাপ করেছিল কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মারা যাওয়া লোকেদের প্রাণ ব্যর্থ যায়নি। ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এতই দুর্বল হয়ে গেছিল যে, তাদের সব গুলাম দেশগুলোকে স্বতন্ত্র করতে বাধ্য হয়েছিল। ইউরোপে গিয়ে আমি হিটলার, জার্মানী লোক তথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্বন্ধিত অনেক ধরনের আশ্চর্যজনক জানকারী জানতে পারি যা সম্ভবতঃ গুগল অথবা সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা কখনোই পেতাম না।
বাস্তবে বিজেতাই ইতিহাসের নির্মাণ করে থাকে। ভারতীয় ইতিহাসের নির্মাণ ঈসাই ইংরেজ জাতি করেছিল। ইতিহাসের নামে মিথ্যা প্রচার করে সদা সর্বদার জন্য গুলাম মানসিকতা ভারতীয়দের মধ্যে ভরে দেওয়ার কাজ করে দিয়েছিল। সেই প্রকারে আপনি যেখানেই খোঁজ নিতে বেরোবেন আপনি কেবল হিটলারের বিরুদ্ধেই সব তথ্য আর জানকারী পাবেন। সব সাহিত্য আর পুস্তকগুলো হিটলারের বিরুদ্ধে পাবেন। লেখনী রাজ্যের পক্ষে সদা চলে আসছে। স্টালিন আর মাও এর মতো কোটি-কোটির গনহত্যাকারী কিছু পৃষ্ঠায় সঙ্কুচিত করে রাখা হয় আর হিটলারের উপর বিশ্বের প্রত্যেক পুস্তকালয়গুলোতে নাকারাত্মক সাহিত্যে ভরে দেওয়া হয়। সজ্জনগণ! যুদ্ধ কারোর জন্যই ভালো হয় না। রাজা যতই ভালো হোক না কেন যুদ্ধের সময় নির্দোষের হত্যা আর অপ্রিয় ঘটনাকে থামাতে পারে না।
এটা সত্য যে হিটলার ইহূদীদের জন্য কঠোর দৃষ্টিকোণ ধারণ করেছিল আর কয়েক লক্ষ ইহূদী এতে মারা যায়, এটাও সত্য যে, ইহূদীদের উপর অত্যাচার হয়েছিল। কিন্তু কেউ কি এই কথার উপর চর্চা করে যে, ইহূদী শেষ ২৫০ বছর ধরে বিশ্বের অর্থব্যবস্থাকে প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ রূপে নিয়ন্ত্রণ করে চলছে। ব্যাংক আদির সঞ্চালিত কর্তার মধ্যে সবার অধিক ইহূদীদের রয়েছে। সংসার কি জানে না যে, এই ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে কিরকম ভয়ংকর লুট চলে। কোটি-কোটি জনগণের পরিশ্রমের টাকা প্রত্যেক ১০ বছরে নষ্ট হয়ে যায় যার দরুন লক্ষ-লক্ষ অপরাধ বিশ্বে হচ্ছে। পর্দার পিছনে লুকিয়ে থাকা এই লোকগুলোকে কখনও মানবতার শত্রু কেন বলা হয়নি? বাস্তবে সংসার যা প্রত্যক্ষ দেখে তাকেই সত্য বলে মেনে নেয়। আজ সংসারে কোনোকিছুই পড়ে শুনে অথবা দেখে নিয়েই সত্য-অসত্যের নির্ণয় করা যেতে পারে না। যদি এরকমটা হতো তবে ভগৎ সিংহ, রামপ্রসাদ বিস্মিল, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো সকল বিপ্লবীদের ইতিহাসে আতঙ্কবাদীর স্থান হয়েছে। আপনাদের মধ্যে কিছু লোকেই হয়তো জেনে থাকবেন যে, সুভাষচন্দ্র বসু ভারত দেশের যুদ্ধ বন্ধি ছিলেন। যদি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতে ফিরে এসেও যেতেন তবে তাকে ব্রিটেনের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার সন্ধির উপর নেহেরু হস্তাক্ষর করেছিল। এই কারণে ইতিহাসে সুভাষচন্দ্র বসু জীকে ভারতের শত্রু সিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১০০ বছর পর এসবই পুস্তকের প্রমাণ হয়ে যাবে আর নতুন প্রজন্ম সত্যকে ভুলে যাবে।
বাস্তবে বলার তাৎপর্য হল এই যে, আধ্যাত্মিক উন্নতিকে ছাড়া ভৌতিক উন্নতি এইভাবে বিনাশকারী সিদ্ধ হবে। এটা সংক্ষেপে ইতিহাস বলার এটাই অর্থ হল যে, যেই বিজ্ঞানের পিছনে আজ সংসার দৌড়াচ্ছে, যেই ধন সম্পদকে হাতিয়ে নিতে পুরুষার্থ করছে তার সমাপ্ত এক ভয়ানক যুদ্ধ দ্বারাই হয়ে থাকে। আজও বিশ্ব সেই একই রীতিতে আগে বেড়ে চলেছে যার পরিণাম মহাবিনাশকারী যুদ্ধই হবে যাকে কেউই আটকাতে পারবে না। এই বর্তমান বিজ্ঞানের পূর্ণ লাভ তারাই তুলতে পারবে যার মধ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান রয়েছে। এই বিশ্ব সংসারকে বাঁচানো আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অতিরিক্ত অন্য কোনো মার্গ নেই।
ইতিহাসের এই মজাদার ও জ্ঞানবর্ধক সত্য ঘটনা হতে একটা কথা স্পষ্ট হল যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে টেকনিক স্থানান্তরণ জার্মানী থেকে মিত্র দেশগুলোতে হয়েছিল। পেনমুন্ডে গ্রামে কারখানার খণ্ড-ভাঙ্গা অবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। কল্পনা করুন যে, যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর মতো সব সম্মিলিত দেশেগুলোর বিনাশ হয়ে যেত অথবা অনেক বড় পরমাণু যুদ্ধ হয়ে যেত তাহলে সকল দেশের বৈজ্ঞানিক ও রিসার্চকারী স্থান, কারখানাগুলো সর্বপ্রথম নষ্ট হয়ে যেত আর সংসার পুনঃ অন্ধকারে চলে যেত। এরকমই ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ৫১৫৬ বর্ষ পূর্বে, যখন মহাভারতের যুদ্ধ হয় যেখানে চীনের ভগদত্ত, পাতাল দেশের (আমেরিকার) বব্রুবাহন, ইউরোপ দেশের (হরিবর্ষ বলা হত - হরি সংস্কৃতে বাঁদরকেও বলে বাঁদরের মতো নেত্র যাদের) বিডালাক্ষ, য়ূনান ও ইরানের শল্য, কান্ধার আদি অনেক বড়-বড় শক্তিশালীরা ভাগ নিয়েছিল। মহাভারতে অর্জুনের বিবাহ আমেরিকার রাজার কন্যা "উলোপী"র সঙ্গে হয়েছিল।
দুর্ভাগ্যবশত সেই যুদ্ধে মহাবিনাশ ঘটেছিল। যা বা কিছু বিদ্বান শিল্পী বেঁচে ছিল তাদের আয়ু টেকনিককে পুনরায় দাঁড় করার জন্য সাধন-সংসধন জুটাতেই পেরিয়ে যায়। পরিণামস্বরূপ পরবর্তী প্রজন্ম অন্ধকারে চলে যায়। সাহিত্য, গ্রন্থ আদি সব নষ্ট হয়ে গেছিল। যা কিছু অবশিষ্ঠ ছিল তাকে বুঝাতে ও বোঝার কেউই জীবিত ছিল না। পরবর্তীতে বিদেশি আক্রমণকারীরাও আমাদের অমূল্য পুস্তক ও পুস্তকালয়গুলোকে নষ্ট করে দেয়। নালন্দার পুস্তকালয়ে যখন মুসলিমরা আগুন জ্বালিয়ে দেয় তখন ৬ মাস পর্যন্ত ধুঁয়ো উঠতে থাকে এত সাহিত্য নষ্ট হয়ে গেছিল। এত কিছু হওয়ার পরেও জ্ঞান-বিজ্ঞান ভারত থেকে য়ূনান, সেখান থেকে আরব আর ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছায়। এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে এখন তুলে ধরা হবে। ফ্রান্সুয়া বর্নিয়ার বলে যে, "আমরা অনেক চেষ্টা করেও বেদ প্রাপ্ত করতে পারিনি কারণ ভারতবাসীরা বেদকে লুকিয়ে রাখতো কারণ মুসলিমের হাতে পড়লে তারা যেন জ্বালিয়ে না দেয়।" (বর্নিয়ারের ভারত যাত্রা, পৃষ্ঠ ২৩৪)
যেভাবে বিজ্ঞানকে নিজের বানানোর প্রতিযোগিতা চলে আসছে ঠিক সেভাবেই আর্য শব্দকেও নিজের বানানোর প্রতিযোগিতা চলে আসছে। ইতিহাসের সবথেকে প্রাচীন গ্রন্থে আর তালপাতাগুলোর মধ্যে আর্য শব্দ ভালো, সভ্য, সজ্জন, পরোপকারী, বৈজ্ঞানিক আর মানবীয় গুণে সম্পন্ন লোকেদের জন্য এসেছে। নিজের স্বর্ণিম ইতিহাসকে গুরুত্ব না দেওয়া জবাহরলাল নেহেরুও নিজের "হিন্দুস্থান কী কাহানী" তে লিখেছে যে, "আশ্চর্য্য ব্যাপার যে এখন পর্যন্ত ষাট (৬০) হাজারের অধিক সংস্কৃতে হাতে লেখা পুস্তকের আর তাদের রুপান্তরণের ঠিকানা পাওয়া গেছে আর নতুন নতুন গ্রন্থ বরাবর পাওয়া যাচ্ছে। হিন্দুস্থানের এমন অনেকগুলো পুস্তক এখন পর্যন্ত এখানে পাওয়াই যায়নি অন্যদিকে তাদেরই অনুবাদ চীনী আর তিব্বতী ভাষায় পাওয়া গেছে।" (জবাহরলাল নেহেরু, "হিন্দুস্থান কী কাহানী", পৃষ্ঠ ১১০)
ভেবে দেখুন যে, সেসব গ্রন্থ আজ কোথায় গেছে? যারা আমাদের গুলাম্ বানিয়ে ছিল তারা সেসব অমূল্য গ্রন্থগুলোকে নিজের দেশে নিয়ে গেছে। নেহেরু কখনও এই বৌদ্ধিক সম্পদাকে পুনঃ ফিরে নিয়ে আসার জন্য ব্রিটেনের সঙ্গে চর্চাও করেনি। যেসব লোকেরা তামিল আদি অন্য ভাষাকে সংস্কৃতের থেকেও প্রাচীন বলে মনে করে তারা ৬০,০০০ হস্তলিখিত সংস্কৃত গ্রন্থের নাম শুনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে হয়তো। একবার ভাবুন হাজার-হাজার বর্ষ পূর্বের প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে আর্যদের আর তাদের বিজ্ঞানের বিষয়ের না জানি কত গুরুত্বপূর্ণ কথা ভরা রয়েছে। এটাই হল কারণ যারজন্য ইউরোপ দেশ আর তাদের ইতিহাসকার নিজেকে আর্যদের সন্তান বলছে আর এরজন্য একটা শব্দ ইতিহাসকারেরা বের করেছে - আর্য পরিবার অথবা বলতে পারেন ইন্ডো-ইউরোপিয়ান। এই ইতিহাসকারেরা স্বয়ংকে তো আর্য বলা শুরু করেছে কিন্তু আর্য শব্দের ব্যাখ্যা ভুল করে বসেছে। আর্য জন্মে নয় বরং কর্মে হয়ে থাকে কিন্তু এনারা আর্য শব্দের মহানতাকে দেখতে পেয়ে আর্য শব্দের সঙ্গে রং, রূপ, জাতি আদি জুড়ে দেয়। এইপ্রকারে সকল ইতিহাসকারেরা নিজের-নিজের দেশের লোকেদের আকৃতির অনুসারে আর্য শব্দের অর্থ লাগিয়ে দেয়। বিজ্ঞানের প্রতিযোগিতার মতো আর্য শব্দের প্রতিযোগিতাও বিনাশকারী সিদ্ধ হয়ে যায়। হওয়া এটা উচিত ছিল যে, যেখান থেকে এই আর্য শব্দটি বেরিয়েছে অর্থাৎ বেদ থেকে, তাই বেদ জ্ঞানী লোকের কাছে আর্য শব্দের ব্যাখ্যা করানো উচিত ছিল কিন্তু স্বার্থে অন্ধ লোকে বিনাশ করতে উদ্যত হতে থাকে।
হয়েছিল এই যে, হিটলারের মতো সাধারণ সৈনিক জেলে থেকে আর বাইরেও প্রাচীন উপলব্ধ ইতিহাসের সহস্র পুস্তক পড়ে ফেলেছিল। সেখান থেকেই তার বিচার দৃঢ় হতে থাকে যে কেবল শ্রেষ্ঠ আর মানবতাবাদী লোকেদেরই সংসারে বাঁচার অধিকার আছে, অপরকে অপমানিত করে লুটকারীদের নয়। এছাড়া হিটলারের মান্যতা ভুল কিছু ছিল না শ্রেষ্ঠ লোকেদেরই বাঁচার অধিকার থাকা উচিত কিন্তু তার শ্রেষ্ঠতার পরিমাণ সেই ভুল ইউরোপের ইতিহাসের উপর আধারিত ছিল।
হিটলার জানতো না যে, জন্ম হতে সকল মানুষ সাধারণ হয়ে থাকে, তারপর ভালো কর্ম যারা করে তারা আর্য আর খারাপ কর্ম যারা করে তারা দস্যু হয়ে যায়। আর্যের সম্বন্ধ কোনো এক দেশ, সভ্যতা অথবা জাতি থেকে হয় না। হিটলার শ্রেষ্ঠ মানব জাতি বানানোর জন্য অনেক প্রয়োগ করে যা নিশ্চিত রূপে অব্যবস্থিত, বিনা কোনো পরিকল্পনার ছিল আর জার্মানীর সব সাধন সংসাধন সেনা আর যুদ্ধের কারণে সেসব প্রয়োগ অসফল হয়ে যায় কারণ অধিকাংশ স্থানগুলোতে থাকা লোকদের বিনা ধ্যান দেওয়ায় মরে যাচ্ছিল। যে কোনো বুদ্ধিমান সহজেই বুঝতে পারবে যে, এক লেখকের লেখায় কত বড় ক্ষমতা হয়ে থাকে যে সে লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণও হয়ে যেতে পারে আবার লক্ষ লক্ষকে জীবনদান দেওয়াও সিদ্ধ করতে পারে। হিটলারকে পাপী বলা ব্যক্তিরা কখনও সেই ইতিহাসকারদের বিশ্লেষণ কেন করেনি যারা আর্য শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করেছিল আর যাদের সাহিত্য পড়ে হিটলারের মিথ্যা জ্ঞান হয়েছিল? সংসারের প্রাচীন সাহিত্যের মধ্যে আর্য শব্দের মহানতা দেখে ইউরোপবাসীরা ভারতীয়দের কাছ থেকে এই আর্য শব্দ ছিনে নেওয়ার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত ভাবে লেখে কিন্তু হিটলার কিছু বছরের মধ্যেই সকলের বুদ্ধি ঠিকানায় লাগিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পরে মিত্র দেশেরা পরাজিত দেশগুলোর উপর আর কোনো দুর্ব্যবহার করেনি। এইবার সকলের জানা হয়ে গেছিল যে লোকেদের অত্যাচার করা ভালো নয় অন্যথা পুনঃ পুনঃ হিটলার আসতে থাকবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে যে, জার্মানী তথা জাপানের মতো দেশগুলো বিজ্ঞানে এত উন্নতি প্রাপ্ত কিভাবে করলো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানীর বায়ু সেনার কাছে প্রায় ২৫০০ বিমান ছিল। ব্রিটেন আর ফ্রান্স মিলেও জার্মানীর মুকাবলা করতে পারতো না। জার্মানিতে এত উন্নত পদার্থ বিদ্যার পিছনে কে ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং হিটলার লিখে দিয়েছে যে -
"Every manifestation of human culture, every product of art, science and technical skill, which we see before our eyes two-day, is almost exclusively the product of the Aryan creative power. Aryan alone who founded a superior type of humanity. If we divide mankind into three categories - founders of culture, bearers of culture, and destroyers of culture - the Aryan alone can be considered as representing the first category." On the next page he said that "the present Japanese development has been due to Aryan influence." (Mein Kampf, হিটলার কী আত্মকথা "মেরা সংঘর্ষ", পৃষ্ঠা ২৩২ থেকে উদ্ধৃত)
হিটলার স্পষ্ট বলছে যে জার্মানী, জাপান ও বিশ্বের সব কিছুতে যত জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা ধার্মিকতা রয়েছে সেসব হল আর্যদের দান। হিটলারের থেকে প্রায় ৪৭ বছর পূর্বে মহর্ষি দয়ানন্দ জী "সত্যার্থ প্রকাশ" এর মধ্যে যা লিখেছিলেন অক্ষরশঃ সেটাই হিটলার ৪৭ বছর পরে লিখে দিয়েছে।
"অহম্ ভূমিমদ্দাম আর্য়ায়" (ঋগ্বেদ ৪|২৬|২)
ঈশ্বর বেদের এই মন্ত্রে বলেছে যে, আমি এই ভূমি আর্যদের দিচ্ছি। আর্য কখনোই দস্যুদের কাছে হেরে ভীতুর মতো লুকিয়ে যেন না থাকে এটাই হল ঈশ্বরের আদেশ। হিটলার এটাই বলেছে যে, বিশ্বের উপর কেবল আর্যদের কব্জা হওয়া উচিত আর সকল জার্মানীরা হল আর্য। সকল নাজী লোকেরা হল আর্য। সে হিন্দুদের চিহ্ন "স্বস্তিক" (卐) -কে নিজের পতাকাও বানিয়ে ফেলেছিল। সে কোনো ইতিহাসকার নয় কিন্তু একজন নেতা ছিল আর নেতা শোধের কাজ করতে পারে না। এইজন্য হিটলার যত শোধ করতে পেরেছিল সেটাও এক রাজার জন্য বড় ব্যাপার ছিল। কিন্তু আর্য কারা? এই প্রশ্নের খোঁজ সে করতে পারেনি আর অর্ধেক জ্ঞানের পরিণাম ভয়ংকরই হয়েছিল। হিটলারের একটাই ভুল হয়ে যায় সেটা হল আর্যকে জন্মগত মানার। তবুও এটা স্পষ্ট আর সমস্ত বিশ্ব জানে যে Vedas are the foundation head of all art, science and technology.
অস্তু, জার্মানীতে আজও সংস্কৃতে কথা বলার রীতি রয়েছে। সেখানে ১৪ টি ইউনিভার্সিটিতে সংস্কৃত ও বেদের অধ্যয়নও হয়। আজও লক্ষ লক্ষ লোকে সেখানে নিজেকে আর্যদের সন্তান বলে মনে করে। আমি মনে করি যে, যদি ইউরোপ লোকেদের কাছে আর্য আর বেদের সঠিক সঠিক অর্থ পৌঁছানো যায় তবে সম্ভবতঃ সংসারে সংশোধন শীঘ্র হতে পারে অন্যথা বিনাশের পর সংশোধন আপনা-আপনি হয়েই যাবে।
আমার মনে হয় যে, আজকের পরে কেউ এটা বলতে পারবে না যে বর্তমান সময়ে আর্যরা কিরকম বৈজ্ঞানিক টেকনোলজি দিয়েছে। ২১ শতাব্দীর এই বিজ্ঞানের আঁধার হল আজও আর্যরাই, আগেও আর্যরাই ছিল, আর পরবর্তীতে আর্যরাই থাকবে।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ