সাধারণ আমের প্রতি ১০০গ্রাম(৩.৫ওজ) এ শক্তি মান ২৫০ কিলোজুল (৬০ কিলোক্যালরি)। টাটকা আমে দৈনিক ভ্যালু হিসেবে শুধুমাত্র ভিটামিন সি এবং ফলিক এসিড উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে যার পরিমাণ যথাক্রমে ৪৪% এবং ১১% (টেবিল)।
আমের স্বাদ প্রধানত টারপিন, ফিউরানোন, ল্যাকটোন এবং অ্যাস্টার শ্রেণির বিভিন্ন উদ্বায়ী জৈব রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে সৃষ্ট। বিভিন্ন জাতের আমে বিভিন্ন ধরনের উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ বা একই ধরনের তবে বিভিন্ন পরিমাণের উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ থেকে স্বাদ সৃষ্টি হয়।
আম সাধারণত মিষ্টি, যদিও স্বাদ এবং গড়ন বিভিন্ন জাতের বিভিন্নরকম; যেমন আলফানসো আম নরম, কোমল, সরস, অনেকটা অতিপক্ব বরইয়ের মত, অন্যদিকে টমি অ্যাটকিনস (আমের একটি জাত) শক্ত, কতকটা ফুটি বা অ্যাভোকাডোর মত ও আঁশযুক্ত।[২৩]
ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি আম থেকে চাটনি, আচার, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, জ্যাম, জেলি ও জুস তৈরি হয়। তবে কাঁচা অবস্থায়, আচার বানিয়ে বা রান্না করে খেলে সংবেদনশীল মানুষদের ঠোঁট, মাড়ি বা জিহ্বায় ডার্মাটাইটিস (চর্মরোগ) হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম এমনকি কাঁচা আম মহৌষধ। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো অমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রণা উপশম করে। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।
১০০ গ্রাম আমে কোন উপাদান কী পরিমাণে আছে –
উপাদান | পুষ্টির পরিমাণ |
কার্বোহাইড্রেট | ১৫ গ্রাম |
ফাইবার | ১.৬ গ্রাম |
গ্লুকোজ | ১৪ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.৮ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
সম্পৃক্ত চর্বি | ০.১ গ্রাম |
কোলেস্টেরল | ০ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১৬৮ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৩ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৫ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ১ মিলিগ্রাম |
ক্যারোটিন | ২৭৪০ মাইক্রোগ্রাম |
আয়রন | ১.৩ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম(পাকা আম) | ১৪ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম (কাঁচা আম) | ১০ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ২৫ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | ১০৩ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.৯ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.৮ মিলিগ্রাম |
আয়রন (কাঁচা আম) | ৫.৪ মিলিগ্রাম |
আয়রন(পাকা আম) | ১.৩ মিলিগ্রাম |
পানি | ৭৮.৪ গ্রাম |
বিটা ক্যারোটিনয়েড | ৩০০ মাইক্রোগ্রাম |
ফোলেট | ৭১ মাইক্রোগ্রাম |
আরডিআই (RDI- Reference Daily Intake) বলতে বোঝায় আপনার শরীরে প্রতিদিন কী পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে। অর্থাৎ আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কোন পুষ্টি উপাদানটি কী পরিমাণে থাকবে সেই হিসেব।
একটি ১০০ গ্রাম আমের মাধ্যমে আপনার আরডিআই এর কত শতাংশ পূরণ হচ্ছে তা নিচের ছকে উল্লেখিত আছে-
উপাদান | যে পরিমাণ শতকরা আরডিআই(RDI) আছে |
কপার | ২০% |
ফোলেট | ১৮% |
ভিটামিন এ | ১০% |
ভিটামিন ই | ৯.৭% |
রিবোফ্লাভিন | ৫% |
ভিটামিন বি-৫ | ৬.৫% |
ভিটামিন বি-৬ | ১১.৬% |
ভিটামিন কে | ৬% |
ভিটামিন সি | ৬৭% |
নায়াসিন | ৭% |
পটাশিয়াম | ৬% |
ম্যাঙ্গানিজ | ৪.৫% |
থায়ামিন | ৪% |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪% |
নিম্নে কিছু দেশি জাতের নাম উল্লেখ করা হলোঃ
ফজলি
সুরমা ফজলী
আশ্বিনা
ক্ষীরমন
খিরসাপাত
হাড়িভাঙ্গা
আলফানসো
ল্যাংড়া
গৌড়মতি
গোপালভোগ
মধু চুষকী
বৃন্দাবনি
লখনা
তোতাপুরী (ম্যাট্রাস)
রাণী পছন্দ
ক্ষিরসাপাত
আম্রপালি
হিমসাগর
বাতাসা
ক্ষুদি ক্ষিরসা
বোম্বাই
সুরমা ফজলি
সুন্দরী
বৈশাখী
ইয়ার চারা
রসকি জাহান
হীরালাল বোম্বাই
ওকরাং
মালদা
শেরীধণ
শামসুল সামার
বাদশা
রস কি গুলিস্তান
কন্দমুকাররার
নাম ডক মাই
বোম্বাই (চাঁপাই)
ক্যালেন্ডা
রুবী
বোগলা
মালগোভা
হিমসাগর রাজশাহী
কালুয়া (নাটোর)
চৌষা লখনৌ
সিডলেস
কালিভোগ
বাদশাভোগ
কুষ্ণকলি
পাটনাই
গুটি লক্ষনভোগ
বাগান বিলাস
গুটি ল্যাংড়া
পাটুরিয়া
পালসার
আমিনা
কাকাতুয়া
চালিতা গুটি
রং ভীলা
বুদ্ধ কালুয়া
রাজলক্ষী
মাধুরী
ব্যাঙ্গলোরা
বন খাসা
পারিজা
চন্দনখোস
দুধ কুমারী
ছাতাপোরা
চোষা
জিলাপি কাড়া
শীতল পাটি
পূজারী ভোগ
জগৎ মোহিনী
দিলসাদ
বিশ্বনাথ চ্যাটার্জি
বেগম বাহার
রাজা ভুলানী
নাবি বোম্বাই
সিন্দি
ভূতো বোম্বাই
গোলেক
বারি আম ৭
কালী বোম্বাই
চকচকা
পেয়ারা ফুলী
ভ্যালেনাটো
সিন্দুরী ফজলী
আমব্রা
গুলাবজামুন
আলম শাহী
অস্ট্রেলিয়ান আম
মায়া
দাদাভোগ
শরবতি ব্রাউন
আলফান
রত্না
লাড্ডু সান্দিলা
ছোটীবোম্বাই
কালিজংগী
দ্বারিকা ফজলি
মিঠুয়া
বোম্বে সায়া
বোম্বে গ্রিন
তোহফা
কাচ্চা মিঠা মালিহাবাদ
তৈমুরিয়া
জাহাঙ্গীর
কাওয়াশজি প্যাটেল
নোশা
জালিবাম
বাগান পল্লি
ভারতভোগ
ফজরী কলন
সাবিনা
সেন সেশন
লতা বোম্বাই
আল্লামপুর বানেশান
আর-২ এফ-২
শ্রাবণী
ইমামপছন্দ
জনার্দনপছন্দ
কৃষ্ণভোগ
সারুলী
ইলশে পেটী
কলম বাজি
ইয়াকুতিয়া
গুটী
ভুজাহাজরী
ম্যাটরাজ
সামার বাহিতশত আলীবাগ
গোলাপবাস
জুলী
ভেজপুরী
কালুয়া গোপালভোগ
কলম সুন্দরী
বনারাজ
ম্যাডাম ফ্রান্সিস
মিক্সড স্পেশাল
মোহাম্মদ ওয়ালা
সফেদা মালিহাবাদ
খান বিলাস
জাফরান
মধু মালতী
জিতুভোগ
পলকপুরী
কাকরহিয়া সিকরি
পাথুরিয়া
বোম্বে কলন
কেনসিংটন
কাকরহান
মিছরি দমদম
সামার বাহিশ্ত
মানজানিল্লো নুনেজ
নাজুকবদন
ফারুকভোগ
রুমানি
টারপেন টাইন
কেনসিংটন
কাকরহান
মিছরি দমদম
সামার বাহিশ্ত
মানজানিল্লো নুনেজ
নাজুকবদন
ফারুকভোগ
রুমানি
টারপেন টাইন
কুমড়া জালি
দুধিয়া
মহারাজ পছন্দ
ম্যানিলা
পিয়ারী
জান মাহমুদ
সামার বাহিশত রামপুর
মাডু
লা জবাব মালিহাবাদ
লাইলী আলুপুর
নীলম
মিশ্রীভোগ
পদ্মমধু
বাঙামুড়ী
পুনিত (হাইব্রিড-১৩)
বেলখাস
শ্রীধন
আমান খুর্দ বুলন্দাবাগ
পালমার
কারাবাউ
অ্যামিলী
কোরাকাও ডি বই
নিসার পছন্দ
পাহুতান
বোররন
হিন্দি
সফেদা বাদশাবাগ
র্যাড
আরুমানিস
বাংলা ওয়ালা
মোম্বাসা
রোসা
ক্যাম্বোডিয়ানা
ফজরী জাফরানী
বোম্বাইখুর্দ
এক্সট্রিমা
বদরুল আসমার
শাদওয়ালা
সামার বাহিশত কারানা
এসপাডা
বাশীঁ বোম্বাই
কর্পূরা
হুসনে আরা
সফেদা লখনৌ
শাদউল্লা
আজিজপছন্দ
কর্পূরী ভোগ
জিল
সারোহী
গ্লেন
টমি অ্যাটকিনসন
স্যাম-রু-ডু
মাবরোকা
হিমাউদ্দিন
ফ্লোরিডা
কেইট
ইরউইন
নাওমী
কেন্ট
টাম অ্যাটকিন্স
আলফন্সো
নারিকেল ফাঁকি
জামাই পছন্দ
লক্ষণভোগ
ভাদুরিয়া কালুয়া
চিনি ফজলী
মল্লিকা
সূর্যপুরী
হায়াতী
পাউথান
দুধস্বর
গোলাপ খাস
বেনারসী ল্যাংড়া
পাটনামজাথী
জালিবান্দা
মিছরিদানা
নাক ফজলী
সুবর্ণরেখা
কালা পাহাড়
বারি আম-২
বউ ভুলানী
জমরুদ
অরুনা (হাইব্রিড-১০)
নীলাম্বরী
ফোনিয়া
চৌষা
ডায়াবেটিক আম
সিন্ধু
বোগলা গুটি
রাজভোগ
দুধস্বর ( ছোট )
মোহন ভোগ
হাঁড়িভাঙ্গা
টিক্কা ফরাশ
আম্রপলি (বড়)
হিমসাগর (নাটোর)
মৌচাক
মহানন্দা
তোতাপুরী
বাউ আম-৩
বারি-৩
পুকুর পাড়
কোহিতুর
বিলু পছন্দ
কাগরী
চিনিবাসা
দুধ কুমার
মন্ডা
লাড্ডু
সীতাভোগ
শোভা পছন্দ
গৃঠাদাগী
ছোট আশ্বিনা
ঝুমকা
দুসেহরী
কালী ভোগ
ভবানী চরুষ
আলফাজ বোম্বাই
মধুমনি
মিশ্রীকান্ত
গিড়াদাগী
কুয়া পাহাড়ী
বিড়া
দ্বারভাঙ্গা
বারি আম-৪
আরাজাম
গোবিন্দ ভোগ
কাঁচামিঠা
মতিমন্ডা
পোল্লাদাগী
দাদভোগ
শ্যামলতা
মিশ্রীদাগী
কিষান ভোগ
ভারতী
বারোমাসি
দেওভোগ
বারি-৮
আম্রপলি (ছোট)
সিদ্দিক পছন্দ
লতা
বাদামী
আনারস
জহুরী
রাখাল ভোগ
গুটি মালদা
বারি আম-৬
রগনী
বাউনিলতা
গৌরজিত
বেগম ফুলি
আপুস
ফজরীগোলা
সফেদা
আনোয়ার রাতাউল
বাবুই ঝাঁকি
মনোহারা
রাংগোয়াই
গোল্লা
কাজি পছন্দ
রাঙামুড়ী
বড়বাবু
করল্লা
জালিখাস
কালিয়া
সাটিয়ারকরা
সফদর পছন্দ
ছুঁচামুখী
বারি আম-৫
কাদের পছন্দ
এফটি আইপি বাউ আম-৪
দিল্লির লাড়ুয়া
টিয়াকাটি
এফটি আইপি বাউ আম-৯(শৌখিন চৌফলা)
এফটি আইপি বাউ আম-১(শ্রাবণী-১)
এফটি আইপি বাউ আম-৭(পলি এ্যাম্বব্রায়নী-২)
এফটি আইপি বাউ আম-২ (সিঁন্দুরী)
এফটি আইপি বাউ আম-১০(শৌখিন-২)
এফটি আইপি বাউ আম-৩(ডায়াবেটিক)
এফটিআইপি বাউ আম-৮ (পলিএ্যাম্বব্রায়নী-রাংগুয়াই-৩
এফটি আইপি বাউ আম-১১(কাঁচা মিঠা-১)
এফটি আইপি বাউ আম-৬(পলিএ্যাম্বব্রায়নী-১)
এফটিআইপি বাউ আম-১২(কাঁচা মিঠা-২)
এফটি আইপি বাউ আম-১৩(কাঁচামিঠা-৩)
এফটি আইপি বাউ আম-৫(শ্রাবণী-২)
মালদই আম (সুহিন-20)
সেন্দুরা গুটি
কোয়েরসেটিন, ফাইসেটিন, আইসোকোয়েরসেটিন, অ্যাস্ট্রাগ্যালিন, গ্যালিক অ্যাসিড ও মিথাইল গ্যালেট নামের কঠিন নামওয়ালা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো আছে আমে। স্তন ক্যান্সার থেকে শুরু করে কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে এগুলো বেশ কাজের।
উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, ফাইবার ও প্যাকটিন থাকায় রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে রসালো আম। ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে আম। বিশেষ করে ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এটি। আমে আছে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড। আছে সাইট্রিক অ্যাসিডও। শরীরের অ্যালকালি নামের রাসায়নিকের ভারসাম্য ঠিক রাখে এটি। কোনও কিছুর প্রতি মনযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হলে উপকার করবে আম। মেমোরি বুস্টার হিসেবেও কাজ করে ফলটি।
আমে এতো এতো ভিটামিন আছে যে একটা আম খেলেই কিন্ত শরীরে রোজকার ভিটামিনের চাহিদা মিটে যাওয়ার কথা। আবার এতে ফাইবারও যোগাবে পুষ্টি ও শক্তি। তাই এই মৌসুমে যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তারা বার্গার, কোল্ড ড্রিংকস বা সাব-স্যান্ডউইচের বিকল্প খাবার হিসেবে বেছে নিন আম। এটা তো ছোটবেলা থেকেই পড়ে এসেছেন। আমের ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা থেকে বাঁচাবে। যদিও এ রোগ এখন নেই বললেই চলে তবে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি বেশি আম খেলে ক্ষতি নেই। বিশেষ করে ড্রাই আই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা আম খেয়ে উপকার পেতে পারেন।
স্বাস্থ্য যদি সুখের মূলে থাকে, তবে স্বাস্থ্যের মূলে আছে হজম। আমে থাকা এনজাইমগুলো প্রোটিন উপাদানগুলোকে সহজে ভেঙে ফেলতে পারে। এতে খাবার হজম হয় দ্রুত, বাঁচা যায় পাকস্থলী সংক্রান্ত অনেক রোগ থেকেও। এই গরমের হিট স্ট্রোক সাধারণ ঘটনা। আম আমাদের ভেতরটা শীতল রাখে ও শরীরকে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া থেকে শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোকে বাঁচায়। এই করোনাকালে আমে থাকা ক্যারোটেনয়েড বাড়িয়ে দেবে আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। সহযোদ্ধা হিসেবে ভিটামিন সি তো আছেই। ত্বককেও খাওয়াতে পারেন আমের নির্যাস। বডি স্ক্রাব হিসেবে পাকা আম বেশ ভালো কাজ করে। পেস্ট তৈরি করে তাকে একটুখানি মধু আর দুধ মিশিয়ে নিন। আলতো করে মাসাজ করে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
এতো এতো উপকারের কথা শুনে গপাগপ গিলতে যাবেন না। এক কাপ আমে আছে ১০০ ক্যালোরি। আর এর ৯০ ভাগই আসে আমে থাকা চিনি থেকে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীরা আম খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের দেওয়া চার্টটা দেখে নিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিনে একটি পাকা আমের অর্ধেকটা খাওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়।
আম দৃষ্টিশক্তির বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। ভিটামিন এ চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন রাতকানা, অন্ধত্ব, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে।
⇒ চোখের রেটিনার উন্নতি সাধনে ভূমিকা পালন করে। লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন নামে দুটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এই কাজটি করে থাকে।
⇒ রেটিনা আলোকে মস্তিষ্কের সিগন্যালে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করে। এই দুটি এনজাইম রেটিনায় আসা অতিরিক্ত ক্ষতিকর আলোকরশ্মিকে শোষণ করে এবং রেটিনার ক্ষতি করতে দেয় না।
⇒ এভাবে এরা চোখকে অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে৷
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আম দারুণ উপকারী একটি ফল।
পুষ্টিমাত্রার ছক থেকে আপনি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে এতে অতি মাত্রায় ফাইবার থাকে। এই ফাইবার রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়াও আম শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
তবে ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলতে হবে।
⇒ আমের গ্লাইসেমিক মাত্রা ৫৬-৬০ এর ভেতরে এবং গ্লাইসেমিক লোড ১৮-১৯। গ্লাইসেমিক মাত্রা বলতে এমন একটি সংখ্যাকে বোঝায় যা শর্করা কত দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হতে পারে সে ধারণা দেয়।
⇒ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়া মানে রক্তের গ্লুকোজের উপর খাবারের প্রভাব কম। এই সংখ্যা ৫৫ বা তার কম হলে সেই খাবারটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপযোগী।
⇒ তাছাড়াও আমে শর্করার পরিমাণ বেশি। তাই সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকলে আম খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কিন্তু সেই সময়ে একটি আম খাওয়ার জন্য তাকে সমপরিমাণ কার্বোহাইড্রেট খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
⇒ দুপুরে এবং রাতে আম পরিহার করাই শ্রেয়। কেননা সকালে আম খেলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় আমের ক্যালরিটুকু খরচ হয়ে যায় ফলে শরীরে প্রভাব পড়তে পারে না।
⇒ শর্করার পরিমাণ বেশি এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি পর্যায়ে হওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণে আম খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণে আম খেতে হবে।
আম কীভাবে খাবেন?
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমের বিভিন্ন রেসিপি প্রচলিত। এক এক রকম স্বাদ এবং এক এক রকম রন্ধন প্রক্রিয়ায় গ্রীষ্মকালটা যেনো বেশ সরগরম হয়েই থাকে।
⇒ খোসা ছাড়ানো আম
আম সবচেয়ে বেশি পুষ্টিদায়ক হয় কোনো কিছুর সাথে না মিশিয়ে সরাসরি খোসা ছাড়িয়ে খেলে।
গ্রীষ্মকালে আম সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় পাকা আম এভাবে খেতেই সকলে বেশি পছন্দ করেন। এভাবে আম খেলে আমের সর্বোচ্চ পুষ্টিটাই পাবেন আপনি।
⇒ আমের টক
এটা সাধারণত কাঁচা আমের একটি রেসিপি। কাঁচা আম খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে গরম পানিতে সিদ্ধ করা হয়।
এরপর এতে সরিষা, লবণ এবং চিনি দিয়ে চুলার আঁচে বেশ কিছুক্ষণ তাপ দিয়ে নিলেই তৈরি হবে সুস্বাদু আমের টক।
⇒ আমের জুস
আমের জুস কাঁচা এবং পাকা উভয় আমের ক্ষেত্রেই অনেক জনপ্রিয়। কাঁচা আমের জুস শরীর ঠান্ডা রাখতে অত্যন্ত উপকারী।
আম কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে ব্লেন্ডারে নিতে হবে। এবার এতে আপনি যেমন ঝাল খেতে চান সে অনুযায়ী কাঁচামরিচ, লবণ, সরিষা এবং গোলমরিচ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিলে জুস রেডি।
তেমনিভাবে চিনি, বরফ এবং আমের স্লাইস মিশিয়ে পাকা আমের জুসও তৈরি করে ফেলতে পারেন।
⇒ তরকারীতে আম
কাঁচা আম অনেকেই তরকারী রান্নার সময় ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষত ডাল রান্নার সময় কাঁচা আমটা যেনো স্বাদের পরিমাণ আরও একটু বাড়িয়ে দেয়।
⇒ আম মাখানো
আম টুকরো টুকরো করে কেটে তাতে আপনি যেমন ঝাল খেতে চান সে অনুযায়ী কাঁচামরিচ, লবণ বা বিটলবণ এবং কাসুন্দি মিশিয়ে জিভে জল আনা রেসিপি তৈরি করতে পারেন আপনি।
আম প্রক্রিয়াজাতকরণের উপায়
গ্রীষ্মকালে আমাদের কাছে আম সহজলভ্য। কিন্তু বছরের বাকি সময়গুলোতে আমের জন্য মনটা হাহাকার করলেও তা পাওয়ার উপায় থাকে না। তাই সেই সময়টার জন্যই গ্রীষ্মকালেই আম প্রক্রিয়াজাতকরণ করে রেখে দিন।
কিন্তু কীভাবে করবেন? সে উপায় জেনে নিন তাহলে-
⇒ আমের আচার
আচার একটি মুখরোচক খাদ্য। আচার ছাড়া অনেকের প্রতিদিনের খাবারই যেনো অসম্পূর্ণ। কাঁচা আম সংরক্ষণের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে আচারকে স্বীকার করে নেয়া চলে।
👉 কাঁচা আম আঁটি সহ টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। এরপর তা লবণ এবং লাল গুঁড়ো মরিচ মিশিয়ে বেশ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন।
👉 রোদে শুকোনোর পর সরিষার তেল, রসুন, প্রয়োজনীয় মশলা(জিরা গুঁড়া,সরিষা,কালিজিরা,মেথি,পাঁচফোড়ন ইত্যাদি) দিয়ে আচার বানিয়ে ফেলুন।
👉 আচার আরও সুস্বাদু করার জন্য তেলে দেওয়ার পর আরও ২/৩ দিন রোদে শুকোতে দিতে পারেন।
⇒ রেফ্রিজারেটর
পাকা আম সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রেফ্রিজারেটর। পাকা আম টুকরো করে কেটে বাটিতে রেখে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন বছর ব্যাপী।
⇒ আমের মোরব্বা
কাঁচা আম প্রথমে টুকরো টুকরো করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে আমের কষ বেরিয়ে যাবে।
এরপর পানি থেকে তুলে আচারি মশলা,সরিষার তেল, গোটা রসুন ইত্যাদি দিয়ে চুলায় আঁচে দিন। আমের টুকরোগুলো নরম হয়ে আসলে চুলা থেকে নামিয়ে বেশ কিছুদিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন।
⇒ ক্যানিং
ক্যানিং একটি আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে আম কেটে একটি জীবাণুমুক্ত বায়ুরোধী পাত্রে রাখা হয়।
ক্যানিং এর মাধ্যমে বছরব্যাপী সংরক্ষণ সম্ভব নয়, তবে বেশ কিছুদিন রাখা যাবে।
শেষ কথা
মধুমাসের সব ফলের মধ্যে আমের কদর যেনো সবার কাছে একটু বেশিই রয়েছে। হরেক রকমের জাত আজকাল বাজারে প্রচলিত। গ্রীষ্মকালটা আমের স্বাদে সত্যিই দারুণ যায়। আর একইসাথে পুষ্টির বিচারে আম যথেষ্টই এগিয়ে। তাই গ্রীষ্মের নিদারুণ দাবদাহে আমের মধুর রসে নিজেকে শীতল করতে ভুলবেন না যেনো।
আমের বিখ্যাত কয়েকটি প্রকারভেদ নিচে দেওয়া হলো-
১. হিমসাগর বা খিরসাপাতি আম

৩.হাড়িভাঙ্গা আম

৫. আম্রপালি আম

৭. ফজলি আম

২. মল্লিকা আম

৪. ব্যানানা ম্যাংগো বা মাহালিশা আম

৬. ল্যাংড়া আম

৮. গোপালভোগ আম

No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ