[ মন্ত্রকৃত ঋষিঃ]
ঋষির হ স্নমন্ত্রকৃত।জৈ০ উ০ ব্রা০ ২/২৬৬। মন্ত্র হলো ঋষিকৃত। ঋষির দ্বারা মন্ত্র উৎপন্ন হতে থাকে। প্রাণরশ্মিই ঋষি। প্রাণঃ ঋষয়ঃ। শ০ ব্রা০ ৭/২/৩/৫।
ঋষি জৈমিনি বলেছেন মস্ত্র সকল ঋষিকৃত। ঋষি য়জ্ঞবল্ক বলেছেন প্রাণরশ্মির নাম ঋষি।ঋষি মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বলেছেন ঋষি শব্দের অর্থ প্রাণরশ্মি,শব্দ প্রাপক এবং রূপ প্রাপক। এই হতে এটি স্পষ্ট যে-এই ঋষি কোনো মানব ঋষি নয়।
প্রাণরশ্মির দ্বারা মন্ত্র ছন্দের বৃদ্ধি হইয়া থাকে তাই "ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী" ঋষি শব্দের অর্থ প্রাপক বলেছেন। প্রাণরশ্মি সকল সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে খুব সূক্ষ্ম অবস্থায় সৃষ্টি হয়ে থাকে। কেদের সকল ছোট-ছোট মন্ত্র সমূহ সূক্ষ্ম প্রাণরশ্মি এবং ছন্দরশ্মি হতে সৃষ্ট হতর থাকে। ঋষির প্রভাবে মন্ত্রের অক্ষর রশ্মির সংখ্যা এবং ছন্দ আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এইজন্য ঋষি জৈমিনি মন্ত্রকে ঋষিকৃত বলেছেন। বেদের প্রতিটি মন্ত্রের উপরে যে-ঋষি দেওয়া থাকে তা প্রাণ রশ্মির নাম। তা মনুষ্য ঋষি নয়। বেদ জ্ঞান অনাদি এবং নিত্য। বেদ জ্ঞান নিত্য সত্তা হওয়ার কারণে তাতে কোনো রূঢ়ি শব্দ নাই।
বেদ যৌগিক শব্দ দ্বারা রচিত বলে বেদ জ্ঞান নিত্য। পতঞ্জল ঋষি যোগ সূত্রে অ০ ১ পা০ ১ সূ০ ২৬ এই বেদকে নিত্য বলে প্রতিপন্ন করেছেন এবং কণাদ ঋষি বেদকে নিত্য বলেছেন-ন্যায় দর্শন অ০ ২ আ০ ১ সূ০ ৬৭। নিত্য শাস্ত্রে কোনো অনিত্য শব্দ থাকতে পারে না।
মন্ত্রের ঋষি,ছন্দ,দেবতা,স্বরঃ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্র হয়। মন্ত্রের ঋষি+ছন্দ+স্বর=দেবতা সিদ্ধ হয়। মন্ত্রে তিন পদার্থ মিলিয়ে দেবতার নির্মাণ করেন। দেবতা হল মন্ত্রের মূল বিষয়। দেবতা কি-কি বস্তু দ্বারা সৃষ্টি হয় তা ঋষি,ছন্দ,স্বর এই তিন বস্তুর প্রভাব হতে তা জানা যায়। অতএব এই সব মন্ত্র হতে আলাদা নয়। যা মন্ত্র হতে আলাদা নয় তা অনাদি এবং নিত্য সত্তা। সুতরাং অধুনা পণ্ডিতেরা মন্ত্রে ঋষি বিষয়ে যেসব গল্প-গুজব রচনা করেন তা মিথ্যা এবং অনিত্য বলে পরিত্যাজ্য।
এইবার আসি,বেদ ও বেদান্ত দর্শনে ঈশ্বরের স্বরূপ কেমন এই নিয়ে সাধারণ সনাতনীদের মধ্যে যে ভ্রান্তি ধারণা পোষণ করে আছেন তা পরিস্কার করা উচিত। যজুর্বেদ-৪০/৮ মন্ত্র কি বলা হয়েছে তা জানি
যজু-৪০/৮ -সাঃ। পরিঃ। অগৎ। শুক্রুম্। অকায়ম্। অব্রণম্। অপাপবিদ্ধম্। কবিঃ। মনীষি। পরিভূঃ। স্বয়ম্ভূ। যথাতথ্যতঃ। অর্থান্। বি। অদধাৎ। শাশ্বতীভ্যঃ। প্রজাভ্যঃ। অথার্ৎ- পরমাত্মা সর্বব্যাপক, সর্বশক্তিমান,শরীর রহিত,রোগ রহিত,জন্ম রহিত, শুদ্ধ,নিস্পাপ,সর্বজ্ঞ,অন্তর্যামী,দুষ্টের দমনকারী ও অনাদি। তিনি তাঁহার শাশ্বত জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন।
বিপ্রতিষেধাচ্চ।।ব্রহ্মসূত্র-২/২/৪৫
( বিপ্রতিষেধাত্-চ) বিরোধের নিষেধ বিপ্রতিষেধ বলা হয়। বৈদিক ঈশ্বর থেকে ধর্ম বিরোধী ঈশ্বর অর্থাৎ সাকার ঈশ্বরের নিষেধ করা যায়-যেমন "অজ একপাত্" ( যজু০ ৩৪/৫৩)=ঈশ্বর অজন্মা "অকায়মব্রণমস্নাবিরম্" ( যজু০ ৪০/৮)=ঈশ্বর অকায়=শরীররহিত "অপাণিপাদো০" ( শ্বেতা ৩/১৯) পরমাত্মার হস্ত-পদ হয় না, অতঃ জগতের কর্তা ঈশ্বর উৎপত্তি হতে রহিত তথা শরীর ইন্দ্রিয়ো এবং আকার হতে রহিত,এই সূত্রে সিদ্ধ হয়। যে দুটি মন্ত্র দ্বারা পৌরাণিক কথিত ব্রাহ্মণ নৃসিংহ অবতার সিদ্ধ করতে চাইছে দেখা যাক মন্ত্র দুটিতে কি বলা হয়েছে।তাই মন্ত্র দুটি পদার্থ সহ অনুবাদ করে দেওয়া হলো নিম্নে সেই সাথে কথিত ব্রাহ্মণের বিকৃত ভাষ্যের স্কীন শট পড়ে নিবেন।
ঋষিঃ-দীর্ঘতমা ঔচথ্যঃ। দেবতা-বিষ্ণঃ। ছন্দঃ-বিরাটত্রিষ্টুপ্। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
প্র তদ্রিষ্ণুঃ স্তবতে বীর্যেণ মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ।
য়স্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষ্বধিক্ষিয়ন্তি ভুবনানি বিশ্বা।। ঋগ্বেদ-১/৫৪/২
পদ০ প্র। তত্। বিষ্ণুঃ। স্তবতে। বীর্যেণ। মৃগঃ। ন। ভীমঃ। কুচরঃ। গিরিऽস্থাঃ। য়স্য। উরুষু। ত্রিষু। বিऽক্রমণেষু। অধিऽক্ষিয়ন্তি। ভুবনানি। বিশ্বা।
পদার্থ-হে মনুষ্য ( য়স্য) যে জগদীস্বরের নির্মাণ করেছেন ( উরুষু) বিস্তীর্ণ ( ত্রিষু) জন্ম,নাম এবং স্থান এই তিন ( বিক্রণেষু) বিবিধ প্রকারের সৃষ্টি-ক্রমে ( বিশ্বা) সমস্ত ( ভুবনানি);লোক-লোকান্তর (অধিক্ষিয়ন্তি) আধারস্বরূপ দ্বারা নিবাস করেন (তত্) সেই ( বিষ্ণুঃ) সর্বব্যাপী পরমাত্মা নিজ ( বীর্যেণ) পরাক্রমদ্বারা ( কুচরঃ) কুটিলগামী অর্থাৎ উপরে-নিচে নানা প্রকার বিষম স্থানে চলা এবং ( গিরিষ্ঠাঃ) পর্বত গুহায় স্থির হয়ে ( মৃগঃ) হরিণের ( ন) ন্যায় ( ভীমঃ) ভীত হয়ে এবং সমস্ত লোক-লোকান্তরে ( প্রস্তবতে) প্রসংসিত করেন।
ভাবার্থঃ-কোনও পদার্থ ঈশ্বর এবং সৃষ্টির নিয়মের লঙ্ঘন করতে পারে না, যিনি ধার্মিক জনের মিত্রের ন্যায় আনন্দ দেন, দুষ্টকে সিংহের ন্যায় ভয় প্রদান করেন এবং ন্যায়ের গুণের অধীকারী হন তিনিই সকলের প্রভু এই জানতে হবে।।
- তারপর একই বিষয় পরবর্তী মন্ত্রে বলা হয়েছে।
ঋষিঃ-দীর্ঘতমা ঔচথ্যঃ। দেবতা-বিষ্ণুঃ। ছন্দঃ-নিচৃত্তত্রিষ্টুপ্। স্বরঃ-ধৈবতঃ।।
প্র বিষ্ণবে শুষমেতু মন্ম গিরিক্ষিত উরুগায়ায় বৃষ্ণো।
য় ইদম্ দর্ঘম্ প্রয়তম্ সধস্থমেকো বিমমে ত্রিভিরিত্পদেভিঃ।। ঋগ্বেদ-১/৫৪/৩
পদ০ প্র। বিষ্ণবে। শুষম্। এতু। মন্ম। গিরিऽক্ষিতে। উরুऽগায়ায়। বৃষ্ণো।য়ঃ। দীর্ঘম্। প্রऽয়তম্। সধऽস্থম্। একঃ। বিऽমমে। ত্রিऽভিঃ।ইত। পদেऽভিঃ।।
পদার্থ-হে মনুষ্য! ( য়ঃ) যিনি ( একঃ) এক ( ইত্)ই পরমাত্মা ( ত্রিভিঃ) তিন অর্থাৎ স্থূল,সুক্ষ্ম,অতি সুক্ষ্ম ( পদেভিঃ) জানার যোগ্য অংশ থেকে ( ইদম্) এই ( দীর্ঘম্) বৃহৎ হয়ে ( প্রয়তম্) উত্তম যত্নসাধ্য ( সধস্থম্) নীতি থেকে একত্রে স্থানের ( প্রবিমমে) বিশেষতা দ্বারা রচনা হয় সেই ( বৃষ্ণো) অনন্ত পরাক্রমশালী ( গিরিক্ষিতে)মেঘ বা পর্বতের নিজ-নিজ মধ্যে স্থির রাখেন ( উরুগায়ায়) বহু প্রাণী দ্বারা বা বহু প্রকাশ দ্বারা প্রশংসিত ( বিষ্ণবে) ব্যাপক পরমাত্মার জন্য ( মন্ম) বিজ্ঞান ( শুষম্) এবং বল ( এতু) প্রাপ্ত হবে।।
ভাবার্থ-কেউ অনন্ত পরাক্রমশালী জগদীশ্বর ব্যতীত এই বিচিত্র জগতের রচনা,ধারণ করা এবং প্রলয় করার সক্ষম হতে পারে না,তিনি ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা উচিত নয়।-( ভাষ্যঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ