ব্যাসদেব কি বেদ বিভাগ করেছেন ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

20 May, 2022

ব্যাসদেব কি বেদ বিভাগ করেছেন ?


💦বেদব্যাসের বেদ বিভাগ সমীক্ষা💧

বেদ বিরোধী নাস্তিক, বেদ-নিন্দুক,ছদ্মবেশী বৌদ্ধ হল বৈষ্ণব সম্প্রদায়!!
এরা নানাবিধ অশ্লীল পুরাণ রচনা করে সেগুলো ব্যাসদেবের রচনা বলে চালিয়ে দিল।
এরা এদের রচিত বিষ্ণু ও ভাগবতাদি পুরাণে ঘোষণা করলো যে ব্যাসদেব বেদের বিভাগ করেছেন।
এই ঘোষণা করার মূল উদ্দেশ্য হল,সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে পুরাণের মান্যতা সৃষ্টি করা।
সাধারণ মানুষকে বোঝানো হল যিনি বেদের বিভাগ করেছেন সেই ব্যাসদেবের রচিত পুরাণে কোন ভুল থাকতে পারে না।
কিছু নব্য বৈষ্ণব আবার বলে,ব্যাসদেব নাকি বেদ রচনা করেছেন!!
বৈষ্ণবীয় দর্শন হল, লোককে বোকা বানিয়ে বিনা পরিশ্রমে লোকের ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার দর্শন।
মানুষকে ভিখারী, নপুংশক ও পরকীয়াতে উৎসাহিত করে এই বৈষ্ণবীয় দর্শন।
♦ব্যাসদেব বেদ বিভাগ করেছেন না করেননি আসুন এই নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করা যাক----
♦বেদ বিরোধী নাস্তিক বৈষ্ণবদের প্রমাণের নামে মিথ্যাচার----
আদ্যো বেদশ্চতুষ্পাদঃ শতসাহস্ৰসন্মিতঃ।
ততো দশগুণঃ কৃৎস্নো যজ্ঞোহয়ং সর্বকামধুক্ ।।
ততোঽত্র মৎসুতো ব্যাসো হ্যষ্টাবিংশতিতমেহন্তরে।
বেদমেকং চতুষ্পাদং চতুর্ধা ব্যভজৎ প্ৰভুঃ ।।
(বিষ্ণুপুরাণ 3.4.1.2)
বেদকে ব্যাস বা বিভক্ত করার জন্যই তিনি বেদব্যাস নামে খ্যাত হন।
চাতুহোত্রং কর্ম শুদ্ধং প্রজানাং বীক্ষ্য বৈদিকম্।
ব্যদধাদযজ্ঞসন্তত্যৈ বেদমেকং চতুর্বিধম্
ভাগবত পুরাণ_স্কন্ধ_1_অধ্যায়_4_শ্লোক_19
অনুবাদ---
ব্যাসদেব দেখলেন যে, বেদে নির্দেশিত যজ্ঞ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের বৃত্তি অনুসারে তার কার্যকলাপকে পবিত্র করা। এই প্রক্রিয়াকে সরলীকৃত করার উদ্দেশ্যে তিনি এক বেদকে চার ভাগে ভাগ করেছিলেন, মানুষের মধ্যে তা বিস্তার করার জন্য।
♦বেদ যে প্রথম থেকেই চার ভাগেই বিভক্ত এই বিষয়ে স্বয়ং বেদ,ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, মনু স্মৃতি ও সংস্কৃত রামায়ণের প্রমাণ দেখুন---------
♦বেদের প্রমাণ------
তস্মাদ্যজ্ঞাৎ সর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজুস্তস্মাদজায়ত।।
ঋগ্বেদ_মন্ডল_10_সূক্ত_90_মন্ত্র_9
যজুর্বেদ_অধ্যায়_31_মন্ত্র_7
অর্থ_সদা জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মা হতে,(ঋচঃ)ঋগ্বেদ, (য়জু)যজুর্বেদ,(সামানি)সামবেদ ও (ছন্দাংসি)অথর্ব বেদ প্রকাশিত হয়েছে।
বেদ মন্ত্রগুলো গায়ত্র্যাদি ছন্দযুক্ত তাই,"ছন্দাংসি",এই পদ দ্বারা অথর্ববেদের উৎপত্তি প্রকাশ করছে।
{শতপথ ব্রাহ্মণ_1.1.2.13 প্রমাণ অনুযায়ী,'য়জ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ'
এবং বিষ্ণু শব্দে সর্বব্যাপক পরমাত্মারই অর্থ গ্ৰহণ করা হয়ে থাকে কারণ---
(বিষলৃ ব্যাপ্তৌ)এই ধাতুর সহিত 'নু' প্রত্যয় যোগে বিষ্ণু শব্দ সিদ্ধ হয়,'বেবেষ্টি ব্যাপ্নোতি চরাহচরং জগৎ স বিষ্ণুঃ' পরমাত্মা চর এবং অচর রূপ জগতে ব্যাপক বলে পরমাত্মার নাম "বিষ্ণু"।}
যস্মাদৃচো অপাতক্ষন্ যজুর্যস্মাদপাকষন্।
সামানি যস্য লোমান্যথর্বাংঙ্গিরসো মুখং
স্কম্ভং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।-
অথর্ববেদ_দশম কান্ড_চতুর্থ অনুবাক_প্রথম সূক্ত_মন্ত্র_19
অর্থ- সর্ব জগতের ধারণ কর্তা ও সর্বশক্তিমান পরমাত্মা হতে,ঋগ, যজুঃ,সাম ও অথর্ব বেদ উৎপন্ন হয়েছে।
অথর্ব বেদ ঈশ্বরের মুখ স্বরূপ, সামবেদ তাঁর লোমবৎ, যজুর্বেদ হৃদয় স্বরূপ ও ঋগ্বেদ ঈশ্বরের প্রাণ স্বরূপ।
যস্মিন্নৃচঃ সাম যজুংষি যস্মিন্ প্রতিষ্ঠাতা রথনাভাবিবারাঃ।
যস্মিংশ্চিত্তং সর্বমোতং প্রজানাং তন্মে মনঃপুত শিবসংকল্পমস্তু।।
যজুর্বেদ_অধ্যায়_34_মন্ত্র_5
অর্থ-হে পরমেশ্বর,ঋগ্বেদ, সামবেদ ও যজুর্বেদ আপনাতেই স্থিত আছে। আমার মন,আপনার কৃপায় অসত্যের পরিত্যাগ করবার সংকল্পযুক্ত হোক।
যদিও বেদের প্রমাণের উপর অন্য কোন প্রমাণ অর্থহীন তাও আপনাদের সুবিধার জন্য,আরো প্রমাণ দিলাম দেখুন------
♦ব্রাহ্মণের প্রমাণ♦
অগ্নেঋগবেদো বাযোর্যজুর্বেদঃ সূর্যাৎ সামবেদঃ।।
শতপথ ব্রাহ্মণ-11.5.8.3
গোপথ ব্রাহ্মণ-1.6
অর্থ-পরমাত্না সৃষ্টির আদিতে অগ্নি(ঋগ) বায়ু (যজুর্বেদ) সূর্য বা আদিত্য (সাম) ঋষিদের অন্তরে বেদজ্ঞান প্রকাশিত করেছেন।
বেদা অজায়ন্ত ঋগ্বেদ এবাগ্রেরজায়ত যজুর্বেদো বায়োঃ সামবেদ,আদিত্যা"
ঐতরেয় ব্রাহ্মণ_
5.25.32
বেদের উৎপত্তি, ঋগ্বেদ অগ্নি হইতে , যজুর্বেদ বায়ু হইতে,সামবেদ আদিত্য হইতে।
অথর্ব বেদ ও তার জ্ঞাতা অঙ্গিরা ঋষির প্রমাণ দেখুন,শতপথ ব্রাহ্মণ হতে-----
"যদথর্বাঙ্গিরসঃ স য় এবম্ বিদ্বানোথর্বাঙ্গিরসো অহরহঃ স্বাধ্যায়মধীতে।"
শতপথ ব্রাহ্মণ_ 11.5.6.7
"এবং বা অরেস্য মহতো ভূতস্য নিঃশ্বাসতমতদ্ যদৃগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদোহর্থবাঙ্গিরসঃ।।
শতপথ ব্রাহ্মণ_ 14.5.4.10
♦প্রাচীন উপনিষদ বৃহদারণ্যকের প্রমাণ-----
স যথাদ্রৈধাগ্নেরভ্যাহিতাৎ পৃথগধূমা বিনিশ্চরন্ত্যেবং বা অরেঽস্য মহতো ভূতস্য নিঃশ্বসিতমেতদ্ যদৃগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদোহর্বাঙ্গিরস
বৃহদারণ্যক উপনিষদ_দ্বিতীয় অধ্যায়_চতুর্থ ব্রাহ্মণ_শ্লোক_10
অর্থ_যেমন ভিজে কাঠে আগুন জ্বালালে,আগুন হতে,নানা প্রকারের ধোঁয়া নির্গত হয়,তেমনই, ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ হল পরমাত্মার নিঃশ্বাস সদৃশ।
অরেহস্য মহতো ভূতস্য নিঃশ্বসিতমেতদ্ যদৃগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদোহথর্বাঙ্গিরস
বৃহদারণ্যক উপনিষদ_চতুর্থ অধ্যায়_ পঞ্চম ব্রাহ্মণ_শ্লোক_11
অর্থ-ঋগ্বেদ,সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ পরমাত্মার নিঃশ্বাস সদৃশ। অর্থাৎ,এই চার বেদ নিঃশ্বাসের ন্যায় সহজভাবে নিঃসৃত হয়েছে।
অর্থাৎ,বেদ জ্ঞান ঈশ্বরের সহজাত জ্ঞান।
♦প্রাচীন উপনিষদ ছান্দোগ্যোপনিষদের প্রমাণ----
বিজ্ঞানেন বা ঋগ্বেদং বিজানাতি যর্জুবেদং সামবেদমার্থবর্ণং চতুর্থ।
ছান্দোগ্য উপনিষদ_
সপ্তম অধ্যায়_সপ্তম খন্ড_প্রথম শ্লোক
অর্থ_ বিজ্ঞানের দ্বারা ঋগ্বেদ,যর্জুবেদ,সামবেদ ও চতুর্থ বেদ অথর্ববেদ জানা যায়।
♦সবচেয়ে প্রাচীন ও মান্যতা প্রাপ্ত মনু স্মৃতির প্রমাণ
অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্ত এয়ং ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ যজ্ঞ সিদ্ধ্যর্থমৃগয়জুঃসামলক্ষণম্।।
মনুস্মৃতি_প্রথম অধ্যায়_শ্লোক_23
অন্বয়__ পরমাত্মা,(য়জ্ঞসিদ্ধার্থম্) জগতে সমস্ত ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষাদি ব্যবহার সিদ্ধির জন্য অথবা জগতের সিদ্ধি অর্থাৎ জগতে সমস্ত প্রকার জ্ঞানের জন্য (য়জ্ঞে জগতি প্রাপ্তব্যা সিদ্ধিঃ য়জ্ঞসিদ্ধিঃ, অথবা য়জ্ঞস্য সিদ্ধিঃ য়জ্ঞসিদ্ধিঃ) (অগ্নিঃ-বায়ু-রবিভ্যঃ তু) অগ্নি, বায়ু এবং সূর্য নামক ঋষিদের দ্বারা অর্থাৎ তাঁদের মাধ্যমে (ঋগ্যজুঃ
সামলক্ষণং ত্রয়ং সনাতনং ব্রহ্ম)
ঋক্‌=জ্ঞান, যজু= কর্ম, অথর্ব=বিজ্ঞান,
সাম=উপাসনারূপ (মোক্ষবিদ্যা) ত্রিবিধ জ্ঞানযুক্ত ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ নামক নিত্য বেদকে,প্রকাশ করেছেন এবং ব্রহ্মা ঋষি,চার ঋষির কাছ থেকে চারবেদ (দুদোহ) দোহন করেছিলেন বা লাভ করেছিলেন।
{শুধু 'যজুঃ শব্দ দ্বারা যজুঃ আর অথর্ববেদ গ্রহণ হয় মীমাংসা দর্শন_ 2.1.37}
সরলার্থঃ সেই পরমাত্মাই জগতে সমস্ত ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষাদি ব্যবহার সিদ্ধির জন্য অথবা জগতের সিদ্ধি অর্থাৎ জগতে সমস্ত প্রকারের জ্ঞানের জন্য অগ্নি, বায়ু এবং সূর্য নামের ঋষিদের দ্বারা অর্থাৎ তাঁদের মাধ্যমেই,
[ঋক্‌=জ্ঞান, যজু কর্ম, অথর্ব=বিজ্ঞান, সাম=উপাসনা বা মোক্ষবিদ্যা]
ত্রিবিধ জ্ঞানযুক্ত ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অর্থববেদ নামক নিত্য বেদকে প্রকাশ করেছেন এবং ব্রহ্মা ঋষি,চার ঋষির কাছ থেকে চার বেদের বিদ্যা লাভ করেছিলেন।
♦এবার ত্রেতাযুগের রামায়ণের প্রমাণ
মূল সংস্কৃত রামায়ণ,যা বাল্মীকি মুনি কৃত তার প্রমাণ দেখুন-----
নানৃগ্বেদবিনীতস্য নায়জুর্বেদধারিণঃ।
নাসামবেদবিদুষঃ শক্যমেবং বিভাষিতুম।।
কিষ্কিন্ধাকান্ড_তৃতীয় সর্গ_শ্লোক_28
অর্থ_রাম হনুমানের সম্বন্ধে, বললেন--
ঋগ্বেদ,যজুর্বেদ ও সামবেদের বিদ্বান না হলে এরকম ভাষণ করতে পারেন না।
♦বিবেচনা করুন,পুরাণ রচয়িতারা ও তাদের দালাল বৈষ্ণবদের মতো বেদ বিরোধী নাস্তিক সম্প্রদায়রা আপনাদের কিভাবে প্রতারণা করছেন।
♦আমার কথা বিশ্বাস না হলে, স্বয়ং পুরাণের এই বচন দেখুন............
প্রাপ্তে কলাবহহ দুষ্টতরে চ কালে
ন ত্বাং ভজন্তি মনুজা ননু বঞ্চিতাস্তে।ধূর্ত্তৈঃ পুরাণচতুরৈহরিশঙ্করাণাং সেবাপরাশ্চ বিহিতাস্তব নিৰ্ম্মিতানাম্ ॥
দেবী ভাগবত_স্কন্দ_5_ অধ্যায়_19_শ্লোক_12
অর্থ-- দেবী!!এই ঘোর কলিযুগে যে সমস্ত মানুষেরা আপনাকে আরাধনা না করে অন্যান্য দেবগণদের আরাধনা করে,পুরাণ রচয়িতা ধূর্তেরা নিশ্চয়ই তাদেরকে বঞ্চিত করে( অর্থাৎ পুরাণ রচনা করে),বিষ্ণু ও শংকরের পূজার ব্যবস্থা করেছেন।
পুরাণ রচয়িতাদের এইরকম ধূর্ততার ফলে সাধারণ জনগণের কি দুর্ভাগ্যই না সংঘটিত হয়েছে!!!
অর্থাৎ, পুরাণ রচয়িতারা, অত্যন্ত চতুর বা ধূর্ত।শিব ও বিষ্ণু পূজার শ্রেষ্ঠতা নিজেদের উদরপূর্তি করার জন্য লিখেছেন।
♦তাছাড়াও বিচার করার বিষয় হল এই যে,বেদব্যাস দ্বাপর যুগের শেষের লোক।সুতরাং সত্য,ত্রেতা ও দ্বাপর যুগে বেদব্যাসের,আগেও বেদজ্ঞান ছিল।
ব্যাসদেব এমনকি কোন বেদ মন্ত্রের দ্রষ্টাও নন।
আসলে,অশ্লীল ও মিথ্যা গল্পে পরিপূর্ণ পুরাণগুলো বেদব্যাসের নামে,চালানোর জন্য,পরিকল্পিত ভাবে এইরকম মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে।
এই সমস্ত অশ্লীল ও মিথ্যা কথায় পরিপূর্ণ পুরাণগুলিকে বিষের ন্যায় পরিত্যাগ করুন।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ঋগ্বেদ ৭/৪/৭

  পরিষদ্যম্ হ্যরণস্য রেক্ণো নিত্যস্য রায়ঃ পতয়ঃ স্যাম। ন শেষো অগ্নে অন‍্যজাতম্ অস্ত্যচেতনস্য মা পথম্ বিদুক্ষঃ॥ ঋগ্বেদ ভাষ্য (স্বামী দयानন্দ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ