নিষ্কলঙ্ক ঋষি দয়ানন্দ ও মাদাম ব্লাভাটস্কি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

12 May, 2022

নিষ্কলঙ্ক ঋষি দয়ানন্দ ও মাদাম ব্লাভাটস্কি

নিষ্কলঙ্ক ঋষি দয়ানন্দ ও মাদাম ব্লাভাটস্কি

আর্য সমাজের জনপ্রিয়তা দেখে পৌরাণিক বন্ধুদের শরীরে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে, কাজেই সব সময় পোড়া পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। পৌরাণিক বন্ধুরা কোমড়ে গামছা বেঁধে ঋষি দয়ানন্দের নামে মিথ্যাচার

করার সঙ্কল্প নিয়েছে। পৌরাণিক বন্ধুদের নতুন এক অপপ্রচার হলো মাদাম ব্লাভাটস্কি নামের এক বিদেশী তার এক গ্রন্থে লিখেছে যে ঋষি দয়ানন্দ নাকি হিন্দুদের ১০০ টি মূর্তি ভেঙেছিল আদি আদি।😅
পৌরাণিকরা ঋষি দয়ানন্দের নামে যে সকল অপপ্রচার করে তার জবাব দেওয়া উচিতই নয়, কারণ মূর্খদের তৈরি মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে নিজেকেও মূর্খ মনে হয়, তবুও মাঝে মাঝে সময় পেলে জবাব হিসেবে কিছু লিখি। পৌরাণিক বন্ধুদের মানসিকতা দেখে কষ্ট হয়, কারণ ঋষি দয়ানন্দ এর বিরোধিতা করতে করতে তাদের বুদ্ধি দিনের পর দিন দ্বিগুণ পরিমানে হ্রাস পাচ্ছে। তারা আর্য সমাজের বই থেকে অপপ্রচার করতে অক্ষম হওয়ার দুঃখে পৌরাণিক বন্ধুরা ঋষি দয়ানন্দ বিরোধিতা করার জন্য মুসলিম বা খ্রিষ্টান বা পৌরাণিকদের বইয়ের প্রমাণ ব্যবহার করছে। পৌরণিকদের সামান্য এই বুদ্ধি নেই যে মুসলিম, নাস্তিক বা খ্রিস্টানরা নিজেদের স্বার্থে সনাতন ধর্ম বিষয়ে যে সকল গ্রন্থ লিখেছে সে সকল গ্রন্থ কে কি পৌরাণিক বন্ধুরা প্রামাণ্য মানে ? কখনোই মানেনা! কিন্তু ঋষি দয়ানন্দ এর বিরোধিতা করার জন্য অন্য মতবাদীদের গ্রন্থ কে প্রামাণ্য মানছে। ব্যাপারটা কতটা হাস্যকর দেখুন।
ঋষি দয়ানন্দ আজীবন মূর্তি পূজার বিরোধিতা করেছে, সেটা আমি নিজেও করি। ঋষি দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশে মূর্তি পূজার খণ্ডন করেছেন বহু জায়গায় বৈদিক শাস্ত্র প্রমাণ ও তর্ক দ্বারা। কিন্তু তিনি কোথাও মূর্তি ভাঙার কথা বলেনি। ঋষি দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশের ১৪ সমুল্লাসে কুরআনের আয়াত তুলে ধরে কুরআন কে তর্ক দ্বারা খণ্ডন করেছেন। মুসলিমরা মূর্তি পূজার বিরোধিতা করে কিন্তু বাস্তবে মুসলিমরা নিজেই মূর্তি পূজারী পৌরাণিকদের মতোই। আসুন দেখি 'সত্যার্থ প্রকাশ' এর মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতীর তর্ক রূপী তির!_____
কুরআনে বলা আছে,
'নিশ্চয়, আমি তোমাকে আকাশের দিকে মুখ ফেরাতে দেখেছি। নিশ্চয় আমি তোমাকে সেই কাবা অভিমুখী করব; তা তোমার পক্ষে প্রীতিকর হইবে। অতএব তোমার মুখ মসজিদুল হরামের দিকে ফিরাও। যেখানেই থাক না কেন তোমার মুখ সেই দিকেই ফিরিয়ে নেও।” কুরআন ২/১৪৪
ঋষি দয়ানন্দ-> ইহা কি ছোটো খাটো পৌত্তলিকতা? ইহা যে মস্ত বড় পৌত্তলিকতা।
মুসলিম-> আমরা মুসলমানেরা মূর্তিপূজক নহি, কিন্তু মূর্তিভঞ্জক। আমরা মক্কার মসজিদকে খুদা মানি না।
ঋষি দয়ানন্দ-> তোমরা যাদেরকে পৌত্তলিক মনে কর তারাও নানা প্রকার মূর্ত্তিকে ঈশ্বর মানে না, কিন্তু তাদের সম্মুখে পরমেশ্বরেরই পূজা করে। তোমরা মূর্তিভঞ্জক হলে সেই বড় মূর্তি মক্কার মসজিদ্ ভগ্ন কর না কেন?
মুসলিম-> বেশ তো মহাশয়। আমাদের প্রতি কুরাণের আদেশ আছে যে, মক্কার দিকে মুখ ফেরাতে হবে। কিন্তু তাদের প্রতি বেদের আদেশ নাই; সুতরাং তারা পৌত্তলিক নহে কেন? আমরা কেন পৌত্তলিক হইতে যাইব? আমাদের পক্ষে খুদার আদেশ পালনীয়।
ঋষি দয়ানন্দ -> তোমাদের পক্ষে যেমন কুরাণকে খুদার বাণী, পৌরণিকেরাও সেইরূপ পুরাণকে ঈশ্বরের অবতার ব্যাসদেবের বাণী মনে করেন। পৌত্তলিকতা বিষয়ে তোমাদের ও এদের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই, বরং তোমরা বৃহৎ এবং এরা ক্ষুদ্র মূর্তির পূজক। যেমন কেউ নিজের গৃহ হতে বিড়াল তাড়াতে না তাড়াতে তন্মধ্যে উষ্ট্র প্রবেশ করে, সেইরূপ মহম্মদও মুসলমান মত হইতে ক্ষুদ্র মূর্তিটি অপসারিত করলেন সত্য কিন্তু মক্কার মসজিদরূপী পর্বতাকার বৃহৎ মূর্ত্তি মুসলমানদের মতে প্রবিষ্ট করালেন। এটা কি ছোটোখাটো পৌত্তলিকতা? অবশ্য তোমরাও যদি আমাদের ন্যায় বৈদিক ধর্ম অবলম্বন কর তা হলে মূর্ত্তিপূজাদি কুকর্ম হতে অব্যাহতি পেতে পার; নতুবা নয়। যতদিন তোমরা নিজেদের বৃহৎ মূর্তিকে অপসারিত না কর, ততদিন পর্যন্ত ক্ষুদ্র মূর্তিপূজা খণ্ডন করতে লজ্জাবোধ করা উচিত এবং মূর্তিপূজা হতে বিরত থাকা নিজেদের পবিত্র করা কর্তব্য ॥৩১ ৷৷
■গ্রন্থঃ সত্যার্থ প্ৰকাশ, চতুর্দশ সমুল্লাস যবনমত সমীক্ষা।■
ঋষি দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশে সুন্দর ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে মুসলিমরা হিন্দুদের থেকেও বৃহৎ মূর্তি পূজারী এবং যে সকল মোল্লারা মূর্তি ভাঙতে প্রস্তুত থাকে তাদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন মুসলিমরা যদি সত্যি ই মূর্তি ভঞ্জক হয়ে থাকে তাহলে সবার আগে কাবা মসজিদ ভেঙে ফেলা উচিত! ঋষি দয়ানন্দের বদনাম করার জন্য পৌরাণিক বন্ধুরা খ্রিস্টান বা মুসলিমদের লেখা গ্রন্থের সাহায্য নেয় কিন্তু দুঃখের বিষয় পৌরাণিকরা নিজেদেরই ধর্মীয় গ্রন্থের বাণীকে সত্য হিসেবে মানেনা, আসুন দেখি এই বিষয়ে_____
ভাগবত পুরাণ ১০/৮৪/১৩ এই শ্লোকে কাঠ মাটি পাথর আদি বিকার সমূহ পদার্থে যারা ইষ্ট ভক্তি রাখে তারা নিম্নমানের পশু তুল্য। গীতাপ্রেস 👇👇
পৌরাণিক বন্ধুরা এবার বলুন ভাগবত পুরাণ আর্য সমাজী, খ্রিস্টান বা মোল্লাদ বা নাস্তিকদের প্রামাণ্য গ্রন্থ নাকি আপনাদেরই ? আপনাদেরই ধর্মীয় গ্রন্থে আপনাদেরই নিম্নমানের পশু (শুয়োর, কুকুর, গাধা,ভেড়া আদি) বলা হচ্ছে।
ঋষি দয়ানন্দ মূর্তি পূজার বিরোধিতা করেছে তাই পৌরাণিক বন্ধুদের প্রচুর রাগ, কিন্তু হিন্দু সমাজের মহান সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ নিজে একজন মূর্তি পূজারী ছিল আজীবন মূর্তি পূজা করেছে, সে আবার নিজেও সকল মূর্তি ভেঙে ফেলার আদেশও দিয়েছে। পড়ুন স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা খণ্ড-৭> মিস মেরী হেল কে লিখিত ১৮৯৭ সাল ৯ জুলাই। বই সহ তুলে ধরা হলো👇👇
পৌরাণিক বন্ধুদের মহান সন্ন্যাসী, ঋষি তুল্য স্বামী বিবেকানন্দ বলেছে বেদে গরু খাওয়া রয়েছে, তিনি এটাও বলেছে যে বৌদ্ধরা মূর্তি পূজা শুরু করেছে, তিনি এটাও বলেছে যে মূর্তি পূজা সকল শাস্ত্রে অধম বা নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। গ্রন্থঃ স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা খণ্ড -৫। বইয়ের ছবি ও তথ্য সহকারে তুলে ধরা হলো দেখুন 👇👇
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা ১-১০ খণ্ডের প্রকাশক আর্য সমাজ বা কোনো হিন্দু বিরোধী সম্প্রদায় নয় বরং উদ্বোধন কার্যালয় যা রামকৃষ্ণ মিশন বা বেলুর মঠের নিজস্ব প্রকাশনা। শুধু উদ্বোধন কার্যালয়ই নয় সারা ভারতে স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী ও রচনা ১-১০ খণ্ড হিন্দি বাংলা ইংরেজীতে পাওয়া যায়, এই বিষয়ে কারোর সংশয় থাকলে স্বয়ং রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে বা যেকোনো জায়গা থেকে এই গ্রন্থ ক্রয় করে রেফারেন্স অনুযায়ী মিলিয়ে নিন। যে সকল পৌরাণিক বন্ধুরা ঋষি দয়ানন্দের নামে বদনাম করার জন্য খ্রিস্টান, মুসলিম বা পৌরাণিকদের লেখা গ্রন্থের সাহায্য নেয় তাদের কাছে প্রশ্ন আমার, যে বিবেকানন্দ কে আপনারা মহান সন্ন্যাসী, যোগী মনে করেন সেই বিবেকানন্দ এর কথাকে প্রামাণ্য মনে করে নিশ্চয় মূর্তি ভাঙা শুরু করবেন ? বিবেকানন্দ এর কথা অনুসারে গরু খাওয়া শুরু করবেন ? বিবেকানন্দ এর কথা অনুসারে মূর্তি পূজারীরা নিকৃষ্ট তাই আপনারা নিজেদের নিকৃষ্ট হিসেবে স্বীকার করবেন ? #আমি ১০০% বিশ্বাস করি যাঁরা ঋষি দয়ানন্দের মত উজ্জ্বল নক্ষত্র কে বদনাম করার জন্য মুসলিম বা খ্রিস্টানের লেখা কাল্পনিক গ্রন্থ কে প্রামাণ্য মানেন, তারা নিশ্চয় পৌরাণিক সমাজের বিখ্যাত সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের উক্ত বাণী গুলো অবশ্যই গ্রহণ করে যথাযথ রূপে পালন করবে!
পৌরাণিক বন্ধুরা একবারও ভেবে দেখেনা যে তাদেরই ধর্ম গ্রন্থ ১৮+ পুরাণের মধ্যে কিপ্রকারে অশ্লীলতা, অবৈজ্ঞানিক কথন রয়েছে। যখন কোনো মুসলিম ব্রহ্মবৈবর্ত, ভাগবত আদি পুরাণ হাতে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ কে গালি দেয় তখন উত্তর দিতে না পেরে সকল পৌরাণিকরা গর্তে ঢুকে যায়। কিন্তু যে ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী ভারতে প্রথম কুরআন, বাইবেল আদি অধার্মিক গ্রন্থ কে খণ্ডন করে বেদানুকূল সনাতন ধর্ম কে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছিলেন, সেই ঋষি দয়ানন্দ এর মত ব্যক্তিকে কিছু পৌরাণিক বন্ধুরা গালি দেওয়ার জন্য তৈরি থাকে।
আমি মনে করি যে সকল পৌরাণিক বন্ধুদের মধ্যে সামান্য বিচার বিবেক রয়েছে তারা কখনোই ঋষি দয়ানন্দের নামে মিথ্যাচার করবে না। আমিও একজন পৌরাণিক ঘরের সন্তান। আমি এখন মনে করি আজ যদি ঋষি দয়ানন্দের মান্যতার সন্ধান না পেতাম তাহলে এতদিনে নাস্তিক হয়ে যেতাম, কারণ যে ব্যক্তি যুক্তিবাদী হয় সেই ব্যক্তি যদি আমাদের পৌরাণিক নানান দেবদেবীর আকৃতি আদি, পৌরাণিক কাহিনী আদি এবং বেদ আদি শাস্ত্রের বিকৃত ব্যাখ্যা নিয়ে বিচার করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে নাস্তিক হয়ে যাবে। আমি পৌরাণিক বন্ধুদের মিত্রের চোখে দেখি, তারা আমাদের শত্রু নয়, তারা বিবেকহীন হয়ে ঋষি দয়ানন্দ কে গালি দেয় মাত্র। আমি আশা রাখি তারা যদি ঋষি দয়ানন্দের বেদানুকূল মান্যতা নিয়ে যুক্তিবিচার সহকারে চর্চা করে তাহলে তারা অবশ্যই প্রকৃত সত্যটা জানতে পারবে।
সকলকে নমস্তে [বিক্রম আর্য]
কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্
🚩🚩

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ ৩১/১১

  ব্রা॒হ্ম॒ণো᳖ऽস্য॒ মুখ॑মাসীদ্ বা॒হূ রা॑জ॒ন্যঃ᳖ কৃ॒তঃ । ঊ॒রূ তদ॑স্য॒ য়দ্বৈশ্যঃ॑ প॒দ্ভ্যাᳬশূ॒দ্রোऽঅ॑জায়ত ॥ #যজুর্বেদ ৩১।১১ ॥___  অথর্ববেদ ১৯....

Post Top Ad

ধন্যবাদ