কোরআন নাজিল - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 June, 2021

কোরআন নাজিল

আমরা যে-কোরআন পড়ি, তার সংকলন করেছেন খলিফা উসমান; যে কারণে কোরআনকে উসমানী কোরআন বলা হয়!
মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিরিশ বছরের একটানা চেষ্টায় তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজটি শেষ করেন – “তাফহীমুল কোরআন” নামে তিনি প্রায় ৫ হাজার পৃষ্ঠার কোরআনের ব্যাখ্যা (তাফসীর) গ্রন্থ রচনা করেন। ১২ টির বেশি ভাষায় তাঁর এই তাফসীর গ্রন্থটি অনূদিত হয়েছে এবং কোরআন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী রচনা হিসাবে বিবেচিত হয় মুসলিম সমাজে! গ্রন্থের ‘প্রসঙ্গ কথায়’ মারাত্মক কিছু কথা বলেছেন তিনি: “কুরআন মজিদের সূরাগুলো আসলে ছিল এক একটি ভাষণ। ইসলামী দাওয়াতের বিশেষ একটি পর্যায়ে একটি বিশেষ সময়ে প্রতিটি সূরা নাযিল হয়েছিলো। কোরআন একটি রচনার আকারে নয়, বরং ভাষণ আকারে বর্ণিত হয়েছে।”
সত্যিই তাই, কোরআন মুহাম্মদের নবী-জীবনের ২৩ বছর সময়ে আল্লার (!) নামে দেওয়া ভাষণের সংকলন ভিন্ন কিছু নয়! এ বিষয়ে মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেবের কথার সাথে একমত হলেও কোরআনের সংকলন সম্পর্কে ভূমিকায় লেখা তাঁর বর্ণনার সাথে একমত হবার উপায় নেই আমাদের; তিনি বলেছেন: “আজ যে কুরআন মজিদ আমাদের হাতে আছে, সেটি হজরত আবু বকর সিদ্দীকের (রা.) নোসখার অনুলিপি। এই অনুলিপিটি হযরত উসমান (রা.) সরকারী ব্যবস্থাপনায় সারা দুনিয়ার দেশে দেশে পাঠিয়েছিলেন। বর্তমানেও দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে কুরআনের সেই প্রামাণ্য নোসখাগুলো পাওয়া যায়। কুরআন মজীদ সঠিকভাবে সংরক্ষিত হবার ব্যাপারে যদি কারোর মনে সামান্যতমও সংশয় থাকে, তাহলে মানসিক সংশয় দূর করার জন্য তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় গিয়ে সেখানকার কোনো বই বিক্রেতার দোকান থেকে এক খণ্ড কুরআন মজিদ কিনে নিতে পারেন। তারপর সেখান থেকে চলে আসতে পারেন ইন্দোনেশিয়ার জাভায়। জাভার কোনো হাফেযের মুখে কুরআনের পাঠ শুনে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে কেনা তাঁর হাতের নোসখাটির সাথে তা মিলিয়ে দেখতে পারেন। অতপর দুনিয়ার বড় বড় গ্রন্থাগারগুলোয় হজরত উসমানের (রা.) আমল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্তকার যতগুলো কুরআনের নোসখা রক্ষিত আছে, সবগুলোর সাথে সেটি মেলাতে পারেন। তিনি যদি তার মধ্যে কোন একটি হরফ নোকতার পার্থক্য দেখতে পান, তাহলে সারা দুনিয়াকে এই অভিনব আবিষ্কারের খবরটি জানানো তার অবশ্যকর্তব্য।”
আজকের এই পোস্টের বিষয় মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেবের ভূমিকায় লেখা অংশটুকুর প্রতিটি বিষয়কে মিথ্যা প্রমাণিত করা, যা আদতে প্রতিটি মুসলিমের চরম বিশ্বাসেরই অন্ধ প্রকাশ মাত্র! আমরা প্রমাণ করবো:
বিষয়বস্তু – ১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়!
বিষয়বস্তু – ২. কোরআন মোটেই সঠিকভাবে সংরক্ষিত নয়!
বিষয়বস্তু – ৩. কোরআনগুলোর ভেতরে একাধিক পার্থক্য আছে!
বিষয়বস্তু – ১:
১৯৯৩ সালে কোরআন নিয়ে আমি প্রথম ধাক্কা খাই। আমার এক বন্ধুর চাচা সৌদি আরবের মদিনা থেকে উপহার দেবার জন্য ১০ টি কোরআন কিনে আনেন, ঘটনাক্রমে আমি সেসময় বন্ধুর বাসাতেই ছিলাম। একটি বাদে ৯ টি কোরআনের প্রচ্ছদ ছিলো হুবুহু এক রকম! আমার আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই ভিন্ন প্রচ্ছদের কোরআনটি! ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে আরবি কোরআন পড়ি, তবে এই কোরআনটির সূরা ফাতিহা পড়তে গিয়ে আমার চোখে কিছু ভিন্নতা চোখে পড়ে! কোরআনটির ফাতিহার প্রথম আয়াতটি অনেক লম্বা অন্য ৯ টি কোরআনের সেই আয়াত থেকে! আমি বিস্ময়-চোখে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, এমনটা কেন?! সেই দিন থেকে মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই কোরআন আমার কাছে মনুষ্যরচিত ভুলভাল গ্রন্থের পরিচয় নিয়ে প্রকাশিত হয় এবং আস্তিকতার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেয়! যিনি এই পর্বটি এখন পড়ছেন, আপনাকে অনুরোধ করবো আপনার পিসিতে বা মোবাইলে থাকা কোরআনের সূরা ফাতিহা বের করুন! দেখুন ফাতিহার প্রথম আয়াত শেষ হয়েছে এইটুকুতে:


(১) বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
কিন্তু আমার হাতে যে-কোরআন ছিলো, তাতে প্রথম আয়াত ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ নয়, বরং তা শেষ হচ্ছে এমনভাবে:
(১) বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আলহামদু লিল্লা-হি রাববিল আলামীন।
একটিতে ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পুরো একটি আয়াত আর অন্যটিতে ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ হচ্ছে একটি আয়াতের অংশ! আপনার হাতে যে-কোরআনটি আছে, তা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুন্নী গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিশরের আল আজাহার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সম্পাদনা করা ১৯২৩/২৪ সালের হাফস্ (Hafs) সংস্করণ। আর আমি যেটি পেয়েছিলাম, সেটি হচ্ছে মদিনার কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স (King Fahd Complex for Printing the Holy Quran www.qurancomplex.org) থেকে ছাপা ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ! ১৯২৩/২৪ সালের আগের হাফস্ (Hafs) সংস্করণে সূরা ফাতিহার ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-কে কোনো আয়াত হিসাবে গণ্য করা হত না! কেবলমাত্র ‘আলহামদু লিল্লা-হি রাববিল আলামীন’ ছিল ১৯২৩ সালের আগের হাফস্ (Hafs) সংস্করণের প্রথম আয়াত!
কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স মদিনা থেকে একই সাথে একই মর্যাদায় হাফস্ (Hafs) এবং ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ ছাপা হয়, এবং দুটোই সমান ভাবে বৈধ কোরআন! একথা সত্য হাফস্ (Hafs) সংস্করণ সমগ্র পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, কিন্তু তারপরেও ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ সমানভাবে বৈধ এবং এখনও সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ সংস্করণ পাওয়া যায়, এবং এই পোস্টটি শেষ হবার আগেই আপনি এ দু’টির একটি করে কপির মালিক হয়ে যাবেন! তাহলে আপাতত আমরা ভাবতেই পারি: বিষয়বস্তু – ১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়! প্রমাণিত। বিশ্বাস করার দরকার নেই, কেবল মাথায় রাখুন বিষয়টি!

ছবি – ০১: যাচাই করে নিন, আপনি কোন কোরআন পড়ছেন!
বিষয়বস্তু – ২:
কোরআনে আছে 
 “নিশ্চয় আমিই কুরআন অবতীর্ণ/নাযিল/অবতারণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক/হেফাযতকারী/সংরক্ষণকারী।” সূরা হিজর (১৫:৯)
“ইহা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই; ধর্ম-ভীরুদের জন্য এ গ্রন্থ পথনির্দেশ।” সূরা বাকারা (২:২)
ঠিক আছে, মেনে নিলাম আপনি মহান ক্ষমতাধর চুল ফেলানো নাপিত। স্যরি, মহান ক্ষমতাধর আল্লাহতালা আপনি! আপনার হেফাযত/সংরক্ষণের নমুনা এখন আমরা দেখবো!
সহিহ বুখারী: খণ্ড ৮: অধ্যায় ৮২: হাদিস ৮১৬
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রা) বলেছেন, আমার আশঙ্কা হচ্ছে যে, দীর্ঘ যুগ অতিক্রান্ত হবার পর কোন ব্যক্তি এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে রজমের বিধান পাচ্ছি না। ফলে এমন একটি ফরয পরিত্যাগ করার দরুন তারা পথভ্রষ্ট হবে যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। সাবধান! যখন প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি বিদ্যমান থাকবে তখন ব্যভিচারীর জন্য রজমের বিধান নিঃসন্দেহ অবধারিত। সুফিয়ান (র) বলেন, অনুরূপই আমি স্মরণ রেখেছি: সাবধান! রাসূলুল্লাহ (সা) রজম করেছেন, আর আমরাও তারপরে রজম করেছি।
মুয়াত্তা মালিক: দুধপান সম্পর্কীত, অধ্যায় ৩০ হাদিস ১২৯২
আয়েশা (রা) বলিয়াছেন: কুরআনে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছিল তা-হতে দশবার দুধ চোষার কথা নির্ধারিত ছিল – যাহা হারাম করিবে, তারপর উহা রহিত হইয়া যায়। নির্ধারিত পাঁচ বার দুগ্ধ চোষার (অবতীর্ণ হুকুমের) দ্বারা। অতপর রসুলুল্লাহ (সা)-এর ওফাত হয় তখনও সেই পাঁচবার দুধ চোষার (হুকুমের অংশ) সম্বলিত আয়াত তিলাওয়াত করা হইত। 
সহিহ মুসলিম: খণ্ড ৮: হাদিস ৩৪২২
আমরাহ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যার দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয় । আমরাহ বললেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন, আল কুরআনে নাযিল হয় নির্ধারিত দশবার দুধপানে, তারপর নাযিল হয় – নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।”
সুনানু ইবনে মাজাহ্: হাদিস ১৯৪৪ নিকাহ বা বিবাহ অধ্যায়
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ (সা) ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।
মানে দাঁড়াচ্ছে, কোরআনে রজম বিধান ছিলো, দুধপানের বিধান ছিলো এবং মুহাম্মদের মৃত্যুর পরও তা পালন করা হয়েছে, মুহাম্মদ নিজেও তা পালন করেছেন, করতে বলেছেন; কিন্তু এখন তা কোরআনে নেই! কই গেলো! আল্লাহতালা মুহাম্মদের জন্য যা আবশ্যক করলেন, এখন তা কোরআনে মুসলিমদের জন্য নেই কেন? তার মানে কি এই দাঁড়ায়, আল্লাহতালা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছিলেন? মুহাম্মদের হাতে রজমের পাপ আর দুধপান করিয়েছেন আর আমাদের হাত ও মুখকে পাপমুক্ত রাখতে আয়াত গায়েব করে দিয়েছেন! চমৎকার!
কোরআনে আছে 
“আমি তোমাকে পড়িয়ে দেব, যার ফলে তুমি ভুলে যাবে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।” সূরা আল আলা (৮৭:৬-৭)
“আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে
তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি।
তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?” সূরা বাকারা (২:১০৬)
এ দুই আয়াতের মানে কী দাঁড়াচ্ছে: আল্লাহতালা মনে করিয়ে দেন, আবার ভুলিয়েও দেন! কেন বাবা, আগের প্রকাশিত আয়াতে স্থির থাকতে সমস্যা কোথায়, নাকি আপনিও মানুষের মত আগে কী প্রসব করেছিলেন, ভুলে যান! সূরা বাকারা আয়াত ১০৬ বাহানা মাত্র!
সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬০: হাদিস ১১৬
যায়দ ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে (৪:৯৫) “বসে-থাকা মুমিনরা আর জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীগণ সমান নয়”; আয়াতটি লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় উম্মে মাকতুম (রা) তাঁর কাছে আগমন করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর শপথ, যদি আমি জিহাদে সক্ষম হতাম তা হলে অবশ্যই জিহাদ করতাম। তিনি অন্ধ ছিলেন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল (সা)-এর উপর ওহী অবতীর্ণ করলেন, এমতাবস্থায় যে তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল, তা আমার কাছে এতই ভারী অনুভুত হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু থেতলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। তারপর তাঁর এই অবস্থা কেটে গেল, আর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন: “অক্ষমদের ব্যতীত বসে-থাকা মুমিনরা আর জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীগণ সমান নয়।”
সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫৫৮
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) এক ব্যক্তিকে রাতে কুরআন পাঠ করতে শুনে বললেন, আল্লাহ তাকে রহমত করুন। কেননা, সে আমাকে অমুক অমুক সূরার অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলতে বসেছিলাম।
সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫৫০
আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, কেননা তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুতবেগে চলে যায়।
সহিহ মুসলিম: খণ্ড ৪: হাদিস ১৭৮৭
উবাই ইবনে কাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে ছিলাম। এক ব্যক্তি প্রবশে করে সালাত আদায় করতে লাগল। সে এমন এক ধরলের কিরা-আত করতে লাগল আমার কাছে অভিনব মনে হল। পরে আর একজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী ব্যক্তি হতে ভিন্ন ধরনের কিরা-আত করতে লাগল। সালাত শেষে আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, এ ব্যক্তি এমন কিরা-আত করেছে যা আমার কাছে অভিনব ঠেকেছে এবং অন্যজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী জন হতে ভিন্ন কিরা-আত পাঠ করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা) তাদের উভয়কে (কিরা-আত পাঠ করতে) নির্দেশ দিলেন। তারা উভয়েই কিরা-আত পাঠ করল। নবী (সা) তাদের দু’জনের (কিরা-আতের) ধরনকে সুন্দর বললেন। ফলে আমার মনে নবী (সা) এর কুরআনের প্রতি মিথ্যা অবিশ্বাস ও সন্দেহের উন্মেষ দেখা দিল। এমন কি জাহিলী যুগেও আমার এমন খটকা জাগেনি। আমার ভেতরে সৃষ্ট খটকা অবলোকন করে রাসুলুল্লাহ (সা) আমার বুকে সজোরে আঘাত করলেন। ফলে আমি ঘর্মাক্ত হয়ে গেলাম এবং যেন আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মহা মহীয়ান আল্লাহর দিকে দেখছিলাম। নবী (সা) আমাকে বললেন: ওহে উবাই! আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছে যে, আমি যেন কুরআন এক হরফে তিলাওয়াত করি। আমি তখন তাঁর কাছে পুনরায় অনুরোধ করলাম আমার উম্মাতের জন্য সহজ করুন। দ্বিতীয়বার আমাকে বলা হল যে, দুই হরফে তা তিলাওয়াত করবে। তখন তাঁর কাছে আবার অনুরোধ করলাম, আমার উম্মাতের জন্য সহজ করে দিতে। তৃতীয়বার আমাকে বলা হল যে সাত হরফে তা তিলাওয়াত করবে এবং যতবার আপনাকে জবাব দিয়েছি তার প্রতিটির বদলে আপনার জন্য একটি সাওয়াল! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। আর তৃতীয় প্রার্থনাটি বিলম্বিত করে রেখেছি সে দিনের জন্য যে দিন সারা সৃষ্টি এমন কি ইবরাহীম (আঃ) ও আমার প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫১৪
উমর ইবনে খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনে হাকীম (রা)-কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর জীবদ্দশায় সূরা ফুরকান তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং গভীর মনোযোগ সহকারে আমি তার কিরাআত শুনেছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরাআত পাঠ করেছেন; অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে সালাতের মাঝে আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সূরা যেভাবে পাঠ করতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলল, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সূরা ফুরকান যে পদ্ধতিতে পাঠ করতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তা পাঠ করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। তারপর সে সেভাবেই পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাকে পাঠ করতে শুনেছি। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, এভাবেই নাযিল করা হয়েছে। এরপর বললেন, হে উমর! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।
সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬১: হাদিস ৫১৩
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, জিবরাঈল (আ) আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলাম এবং পুনঃ পুনঃ অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অব্যাহতভাবে অনুরোধ করতে থাকলে তিনি আমার জন্য পাঠ পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন। অবশেষে তিনি সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় তিলাওয়াত করে সমাপ্ত করলেন।
কী, বোঝা যাচ্ছে কিছু? স্বাভাবিক মস্তিস্কগত দুর্বলতার কারণে মানুষ ভুলে যেতেই পারে! এমনকি নবী মুহাম্মদও ভুলে যেতেন! সাথে ভুলে যেতেন আল্লাও! আর সাত সাতটা উপ (আঞ্চলিক) ভাষার কোরআনের খিচুড়ি কত মনে রাখা যায়, বলতে পারেন? ভুল তো হতেই পারে; আল্লাহ বলে কি তিনি মানুষ নন!
হাদীস থেকে কোরআনে যাই এবার: কোরআন থেকেই উদাহরণ টানি তার সঠিকভাবে সংকলিত না হওয়া নিয়ে। নিচের সূরার আয়াতগুলো পড়ুন, ২২০ নং আয়াতের কারণে ২১৬-২১৮ এবং ২১৯, ২২১ নং আয়াতে ব্যাখ্যাসহ উত্তর এসেছে! কিন্তু ভেবে দেখুন সংকলনের সময় কারণ আয়াত রাখা হয়েছে মধ্যে! তেমনি ‍দ্বিতীয় উদাহরনে নিষেধাজ্ঞা ৩৩:৫২ আয়াত অনুমতি ৩৩:৫০-৫১ আয়াতের আগে থাকতে হবে, তা না হলে ইসলামের ইতিহাস অনুসারে মুহাম্মদ হয়ে যাবেন কোরআন আর আল্লার আইন-ভাঙা প্রথম ব্যক্তি!
কোরআন থেকে উদাহরণ:
কারণ ২:২২০ ইয়াহূদী ও নাসারারা তোমার প্রতি রাজী হবে না যে পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের আদর্শ গ্রহণ কর। বল, ‘আল্লাহর দেখানো পথই প্রকৃত সুপথ এবং তুমি যদি জ্ঞান আসার পরেও এদের ইচ্ছে অনুযায়ী চল, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর ক্রোধ হতে রক্ষা করার মত কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।’
ব্যাখ্যা ২:২১৬ তারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, তিনি অতি পবিত্র, বরং যা কিছু আকাশসমূহে এবং ভূ-মন্ডলে আছে সমস্তই তাঁর, সকলই তাঁর অনুগত।
ব্যাখ্যা ২:২১৭ আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকারী, যখন কোন কাজ করতে মনস্থ করেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন, হয়ে যাও, তক্ষুনি তা হয়ে যায়।
ব্যাখ্যা ২:২১৮ যারা কিছু জানে না তারা বলে, কেন আল্লাহ আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না? কিংবা আমাদের নিকট কোন নির্দেশ কেন আসে না? এভাবে আগের লোকেরাও তাদের মতই বলত, এদের অন্তরগুলো একই রকম, আমি দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী পরিষ্কারভাবে বিবৃত করেছি।
ব্যাখ্যা ২:২১৯ আমি তোমাকে সত্যদ্বীনসহ সুসংবাদদাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি, জাহান্নামীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
ব্যাখ্যা ২:২২১ আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা যথাযথভাবে কিতাব তিলাওয়াত করে, তারাই এতে বিশ্বাস পোষণ করে আর যারা এর প্রতি অবিশ্বাস করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
কোরআন থেকে উদাহরণ:
অনুমতি ৩৩:৫০ হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের মোহরানা তুমি প্রদান করেছ; আর বৈধ করেছি আল্লাহ ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ) হিসেবে তোমাকে যা দান করেছেন তার মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে, আর তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, তোমার মামার কন্যা ও তোমার খালার কন্যাকে যারা তোমার সঙ্গে হিজরাত করেছে। আর কোন মুমিন নারী যদি নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করে আর নবী যদি তাকে বিয়ে করতে চায় সেও বৈধ, এটা মুমিনদের বাদ দিয়ে বিশেষভাবে তোমার জন্য যাতে তোমার কোন অসুবিধে না হয়। মুমিনগণের জন্য তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার তা জানা আছে। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
অনুমতি ৩৩:৫১ তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে সরিয়ে রাখতে পার, আর যাকে ইচ্ছে তোমার কাছে আশ্রয় দিতে পার। আর তুমি যাকে আলাদা করে রেখেছ তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে, তারা দুঃখ পাবে না, আর তুমি তাদের সকলকে যা দাও তাতে তারা সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
নিষেধাজ্ঞা ৩৩:৫২ অতঃপর আর কোন নারী তোমার জন্য বৈধ নয়। আর তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে চমৎকৃত করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সব বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখেন।
তাহলে পাঠক, আমরা এখনকার কোরআন হাতে নিয়ে ভাবতেই পারি: বিষয়বস্তু – ২. কোরআন মোটেই সঠিকভাবে সংরক্ষিত নয়! প্রমাণিত। এটিও বিশ্বাস করার দরকার নেই, আপাতত কেবল মাথায় রাখুন বিষয়টি!
বিষয়বস্তু – ৩:
চলুন, আপনাকে (King Fahd Complex for Printing the Holy Quran) মদিনা, সৌদী আরব থেকে প্রকাশিত দুটো কোরআনের মালিক করে দিই। প্রথমেই বলে রাখছি, প্রায় ১৮০ মোগাবাইট ইন্টারনেট খরচ হবে। জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশি তো হবেই!
হাফস্ (Hafs) সংস্করণ (৭১ মেগাবাইট)
ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ (১০৮ মেগাবাইট)
মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেব বলেছেন: যদি আমরা কোরআনের মধ্যে কোনো একটি হরফ নোকতার পার্থক্য দেখতে পাই তাহলে সারা দুনিয়াকে এই অভিনব আবিষ্কারের খবরটি জানানো আমাদের অবশ্যকর্তব্য। মওদুদী সাহেব, আজ বেঁচে থাকলে আপনার খবর ছিলো! পাঠক, ডাউনলোড যখন করেই ফেলেছেন, নিজেই যাচাই করে নিন; ১৮০ মোগাবাইটের একটি পরখ তো করা দরকার! এবার কিন্তু আর কোনো কথা হবে না, বিষয়বস্তু – ১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়! প্রমাণিত হয়ে গেলো!
 

ছবি – ০২: যাচাই করে নিন, দুই কোরআনে উচ্চারণে ভিন্নতা আছে কি না?
ছবি – ০৩: যাচাই করে নিন, দুই কোরআনে শব্দের ভিন্নতা আছে কি না?
হাফস্ (Hafs) এবং ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ দু’টি থেকে উচ্চারণের ভিন্নতা এবং শব্দের ভিন্নতা নিয়ে শ-খানেক করে উদাহরণ টানা যায়! তবে তা বিরক্তিকর হবে ভেবে সংক্ষিপ্ত করছি! আমরা যে হাফস্ (Hafs) সংস্করণ পড়ি, তার মোট আয়াতের সংখ্যা ৬২৩৬ টি! কিন্তু ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণে আয়াতের সংখ্যা ৬২১৪ টি! কী, কিছু বোঝা যাচ্ছে? আমরা কি ভাবতে পারি না: বিষয়বস্তু – ৩. কোরআনগুলোর ভেতরে একাধিক পার্থক্য আছে? প্রমাণিত!
জানি, জানি, একটা লম্বা গল্প না বললে সবকিছুকে প্রমাণিত-প্রমাণিত বলে প্রমাণ করাটা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না আপনাদের! তবে চলুন, শুরু করি। প্রথমেই বলে রাখি, গল্পে কিন্তু জটিলতার মাখামাখি থাকবে! আর এটি হবে অনেক অনেক লম্বা!
মুহাম্মদ কখনও মিথ্যা বলতেন না! তিনি যা বিশ্বাস করতেন, সত্য বলে মানতেন, তা-ই তিনি বলতেন! নবী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করার পর থেকে তিনি নিয়মিত আল্লাহ প্রেরিত বাণী প্রচার করতে শুরু করলেন। কেউ যদি কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব বেশি মগ্ন থাকে, তাহলে মাঝে মাঝে বা নিয়মিত তার মনে হতেই পারে – সেই বিষয়টি তার জীবনে সত্যিই ঘটেছে বা ঘটে চলেছে; ক্ষেত্রবিশেষে কারও কারও কাছে তা দিনের আলোর মত সত্য বলেই প্রতিভাত হয় এবং তা স্থায়ী সত্য স্মৃতি হয়ে থেকে যায় মস্তিস্কে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় False Memories, ঘুম জড়তা বা Sleep Paralysis ও কখনও কখনও সাধারণ মানুষকে এমন স্থায়ীভাবে সত্য নামের মিথ্যা স্মৃতির জোগান দিতে পারে! এক্ষেত্রে এই মানুষটি যা বলে, তা সত্য, এবং তা তার জীবনে ঘটছে বলেই বিশ্বাসসহ মস্তিস্কে স্মৃতি হিসাবে জমা থাকে! অতএব, মুহাম্মদ কখনও মিথ্যা বলতেন না!
মুহাম্মদ তৎকালীন আরবের প্রতিটি জাতিগোষ্ঠির সাথে কথা বলতেন ও মিশতেন, প্রতি বছর নিয়মিতভাবে তিনি ওকাজ/উকাজের মেলায় যেতেন, সবার সাথে কথা বলে ধর্ম প্রচার করতেন; একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় তার কথা বলার দক্ষতা ছিলো প্রসংশনীয়, তিনি ভালোভাবেই জানতেন সিলেট-এর মানুষ সিলেটি ভাষা এবং চট্রগ্রাম-এর মানুষ চাটগাইয়া ভাষা ভালোভাবে বোঝে! কোরআনের ৭টি আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশ এটাই প্রমাণ করে বারবার! তবে যত বড় কিডনিওয়ালা মস্তিস্কের মানুষই হন না কেন, কারও পক্ষে হাজার হাজার False Memories মনে রাখা সম্ভব হয় নয়। হাদীস তাই এটাই প্রমাণ করে, মুহাম্মদ ভুলে যেতেন এবং তার সাথে মুহাম্মদের False Memories-এর আল্লাহও তা ভুলে যেতে বাধ্য হতেন!
মুহাম্মদের সময়ে সম্পূর্ণ কোরানের সংকলনের উদ্যোগ নেয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না, তবে বিভিন্নজনের কাছে ছাল, পার্চমেন্ট, পাতা, হাড় ইত্যাদিতে আয়াত লেখা ছিলো। কথিত আছে, এর সংরক্ষক ছিলেন প্রায় ৪২ জন সাহাবি, যাদের কাতেবে ওহী বলা হত। যদিও খলিফা আলী দাবি করেছিলেন যে, তাঁর কাছে সম্পূর্ণ কোরান আছে, যা কালক্রমিকভাবে সংকলিত ছিল (সেটা থাকলে আমার সিরিজটির কী হতো!), কিন্তু তা প্রমাণিত নয়। মুহাম্মদ নিজে বলতেন যে, তোমরা চার ব্যক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর – আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ, সালিম, মুআয এবং উবায় ইবনে কাব। (সহিহ বুখারী: খণ্ড: ৬ অধ্যায়: ৬১ হাদিস: ৫২১)
মুহাম্মদের জীবিত থাকাকালীন পুরো কোরআনের হাফেজ বলে কেউ ছিলো না, প্রায় সব সাহাবীই কিছু কিছু অংশ একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় জানতেন! একজনের জানার সাথে অন্যজনের মিল ছিলো না খুব একটা; ওপরের হাদীসগুলো প্রমাণ করে, এ নিয়ে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যেত! মুহাম্মদের মৃত্যুতে খলিফা উমরের পাগলামী থামাতে খলিফা আবু বকর যে-আয়াত পাঠ করে শোনান, উমরের মনে হয়েছিলো তিনি তা সেদিনই প্রথম শুনছেন! চলুন, একটি হাদিস দেখি, যা প্রমাণ করে, সেই সময় কতজন পুরো কোরআনের হাফেজ ছিলো এবং সেই সাথে এও প্রমাণ করে – খলিফা আবু বকরের তত্ত্বাবধানে করা সংকলনটিও (সহীফা) ত্রুটিহীন ছিলো না!
সহিহ বুখারী: খণ্ড ৬: অধ্যায় ৬০: হাদিস ৩০৭
জায়িদ ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন সহীফা থেকে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত খুঁজে পেলাম না, যা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে তিলওয়াত করতে শুনেছি। অবশেষে (অনেক খোঁজার পর) সেটি খুযায়মা আল-আনসারী ব্যতীত অন্য কারও কাছে পেলাম না; যার সাক্ষী রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দু’জন পুরুষ সাক্ষীর সমান গণ্য করেছেন।
কোরআনের ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে একটি বর্ণনা রয়েছে, জিবরাঈল মুহাম্মদকে বলেছেন, অমুক আয়াতটি সূরা বাকারার ২৮০ নং আয়াতের পর লিপিবদ্ধ করুন। অন্য এক রেওয়াতে তিনি মুহাম্মদকে সূরা কাহফের প্রথম দশটি আয়াত তেলাওয়াত করার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। এ ধরনের আরো কিছু কিছু রেওয়াত পাওয়া যায়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে মুহাম্মদ-এর যুগে কোরআনের সূরা ও আয়াতের সংখ্যা সম্পর্কিত আর তেমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। খলিফা আবু বকর-এর যুগেও কোরআনের আয়াতের গণনা হয়েছে এমন কোনো রেওয়াত পাওয়া যায় না। সম্ভবত, সর্বপ্রথম খলিফা উমর-এর যুগেই আয়াত গণনার কাজটি শুরু হয়েছে। খলিফা উমর তারাবীর নামাযের প্রতি রাকাতে ত্রিশ আয়াত করে তেলাওয়াত করার একটা নিয়ম জারি করেছিলেন। অন্যান্য সাহাবীদের মধ্যে খলিফা উসমান, খলিফা আলী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আনাস, আবুদ্ দারদা, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও উম্মুল মোমেনিন আয়েশা কোরআনের আয়াত সংখ্যা নির্ণয় করেছেন। আয়াতের সংখ্যার মতামতেও অনেক তারতম্য রয়েছে। তবে সাধারণত আয়েশার গণনাকে এ ব্যাপারে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়। আয়েশা বলেছেন কোরআনে ৬৬৬৬ টি আয়াত আছে, কিন্তু এখনকার যে হাফস্ (Hafs) সংস্করণ আমরা পড়ি, তার মোট আয়াতের সংখ্যা ৬২৩৬ টি! আবার ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণে আয়াতের সংখ্যা ৬২১৪ টি!

মুহাম্মদের মৃত্যুর পরই আরবের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নবীর আবির্ভাব ঘটে। এদের দমন করতে গিয়ে বহু সাহাবী মারা যান। তখন খলিফা উমরের পরামর্শ ও অনুরোধে প্রথম খলিফা আবু বকর কোরআনকে একত্রে গ্রন্থাকারে সংকলনের উদ্যোগ নেন এবং মুহাম্মদের ঘনিষ্ঠ কোরআন লেখক জায়েদ ইবনে সাবিতকে এ কাজের দায়িত্ব দেন। জায়েদ তখন বলেছিলেন: “এর চাইতে পাহাড় ঠেলে সরানো সহজ কাজ!” (উলুমুল কোরআন-তকিব উসমানি, উলুমুল কোরআন-ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক) পাঠক, ভেবে দেখুন পুরো কোরআনের যদি শত-শত হাফেজ থাকতো, তবে একথা তিনি বলতেন কি? বলা হয়, মুহাম্মদের মৃত্যুর এক-দেড় বছরের মধ্যেই পুরো কোরআন একত্রে গ্রন্থাকারে সংকলনের কাজ সম্পন্ন হয়। খলিফা আবু বকরের পর খলিফা উমর এই কোরআন সংরক্ষণ করেন। তাঁর সময় খেলাফতের সীমানা পারস্য থেকে লিবিয়া এবং আরব সাগর থেকে আজারবাইজান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। খলিফা উমরের মৃত্যুর পর এই কোরআন তাঁর কন্যা ও উম্মুল মোমেনিন হাফসা-র হেফাজতে সংরক্ষিত হয়। মুহাম্মদের মৃত্যুর ২০ থেকে ২২ বছর সময় পর্যন্ত এটাই ছিলো মূল কোরআন!
সাত আরব্য আঞ্চলিক ভাষায় কোরআন শেখা লোকদের প্রথম লক্ষণীয় দ্বন্দ্ব ঘটে আরমেনিয়া-আজারবাইন যুদ্ধে। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন ইরাকবাসী ও সিরিয়াবাসী মুসলিম। ইরাকবাসীরা কোরআন শিখতেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ-র উচ্চারণরীতি অনুযায়ী আর সিরিয়াবাসীরা কোরআন শিখতেন উবাই ইবনে কাব-এর উচ্চারণরীতি অনুযায়ী। তারা একে অপরের কোরআন শুনে একে অপরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করলেন। (ইবনে হাজার আল আসকালানী, ফাতহুল বারী, খণ্ড: ৯, পৃ: ১৮)
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের সময় খেলাফতের আরো বিস্তৃতি ঘটে। তিনি সব অঞ্চলে অভিন্ন পঠনপাঠনরীতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কোরআনের সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হাফসা-র কাছে সংরক্ষিত কোরআন চেয়ে পাঠান। কোরাইশদের পঠন ও লিখনরীতি অনুসারে কোরআন কপি করার জন্যে প্রধান কাতিব জায়েদ ইবনে সাবিত, আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর, সাঈদ ইবনুল আস, আবদুর রহমান ইবনে হারিস, উবাই ইবনে কাব সহ ১২ জন সাহাবীর একটি দল গঠন করেন। তারা এই কোরআনের কপি সংস্করণ করে নতুন কুরাইশী কোরআন তৈরি করেন। খলিফা উসমান একটি কপি নিজের কাছে এবং একটি মদিনার মহাফেজখানায় রেখে অবশিষ্ট কপিগুলো বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তাদের কাছে প্রেরণ করেন। আর মূল কপি ফেরত পাঠান হাফসা-র কাছে। এরপর মারওয়ান বিন হাকাম তাঁর রাজত্বকালে এ কপিটি চাইলে হাফসা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। হাফসা-এর ইন্তেকালের পর মারওয়ান এ কপি ইবনে উমর (হাফসার ভাই, খলিফা উমরের ছেলে)-এর কাছ থেকে নিয়ে যান। এবং তিনি সেটি জ্বালিয়ে দেন, কারণ তা না হলে হয়ত উসমান-এর খেলাফত আমলে প্রস্তুতকৃত কপির সঙ্গে হাফসা-র কোরআনের পার্থক্যের কারণে অদূর ভবিষ্যতে ফেতনা/দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে; কেননা খলিফা উসমান সাত কেরাতের পরিবর্তে এক কেরাত, আঞ্চলিক একাধিক ভাষার পরিবর্তে কুরাইশী ভাষায় সে কোরআনটি সংকলন করেছেন। (উলুমুল কোরআন-তকিব উসমানি)
অবশেষে আমার উসমানী কোরআন পেলাম! কিন্তু তা তো তবে একটি হবার কথা! তাহলে আজ আপনার সংগ্রহ করা দু’টি সংকলন আসলো কোথা থেকে? আর উসমানী কোরআনের কোনো কপি কি এখনও আছে পৃথিবীতে?
মূল সত্য এই যে, উসমানী সংকলনের কোনো কপি এখন আর পৃথিবীর কোথাও নেই! এখন যা পাওয়া যায়, তাকে কোনোভাবেই উসমানী কোরআন প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি! এমনকি তাসখন্দ কোরআনসহ তুরস্কের তোপকাপি মিউজিয়ামে-এ থাকা রক্তমাখা কোরআনটিও উসমানের নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে অনেক আগেই এবং এটি ২০০ হিজরীর দিকে হাতে লিখিত! গোল্ড কোরআনও প্রায় একই সময়কালীন! মোটামুটি সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের যেসব কপি পাওয়া যায়, সেসবকে কোনোভাবেই উসমানী কোরআন হিসাবে দাবি করা যায় না! এমনকি কিছুদিন আগে মদিনায় যে কোরআন প্রদর্শনী করা হয়, সেখানেও উসমানী প্রমাণ সংকলন হিসাবে কোনো কোরআন-কে দাবি করা হয়নি!
 
ছবি – ০৪: মদিনার প্রদর্শনীতে সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের কপি!
২০১৬ সালে মদিনায় চলমান কোরআন প্রদর্শনীতে কোরআনের সর্বপ্রাচীন পাণ্ডুলিপি হিসাবে এটিকে দেখানো হয় (ছবি – ০৪), পাঠককের কাছে প্রশ্ন, আপনাকে বলতে হবে এটি কোন কোরআন? চোখ খোলা রাখলে উত্তর খুঁজে পাবেন এই পর্বেই!
 

ছবি – ০৫: সবচেয়ে প্রাচীন যা পাওয়া সম্ভব!
ছবি – ০৬: তাসখন্দ এবং গোল্ড কোরআনের সাথেও বর্তমানের কোরআনের পার্থক্য রয়েছে!
সাত স্তরে পরিশোধিত জমজমের পানির মত সহজভাবে শেষ করি: আমরা এখন যে দুটো কোরআন পাচ্ছি, তার মূল উৎসের শুরু হয়ত খলিফা উসমান করেছিলেন, কিন্তু তা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে অনেকটাই! কোরআনের বর্তমানের রূপ নেওয়া হয়েছে ৯ জনের ৯ টি ভার্শনের সম্মিলিত রেয়াত/ধারা-কে বিবেচনায় রেখে! আর শতভাগ নিশ্চিত হয়ে খলিফা উসমানের সংস্করণ পর্যন্ত পৌছানো যায়নি বলেই কোরআন দু’টি! পৃথিবীতে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পূর্বে কোরআন হাতে লিখেই প্রতিলিপি তৈরি করা হতো। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, বহুভাষী লেখকদের হাতে লেখার ধরন ও উচ্চারণ দেখে-শুনে প্রতিলিপি করার কারণেই মুহাম্মদের মৃত্যুর ২০০ বছরের মধ্যেই কোরআনের ৯ টি রেয়াত/ধারা তৈরি হয়ে যায়। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর সর্বপ্রথম জার্মানিতে ১৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কোরআন মুদ্রিত হয়। মুদ্রিত সেই কোরআনের একটি কপি মিশরের দারুল কুতুবে এখনো সংরক্ষিত আছে। কিন্তু মুসলিম সমাজে সেই মুদ্রিত কপি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। কেন হয়নি, পাঠক তা হয়ত বুঝতেই পারছেন। মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম মাওলায়ে উসমান কতৃক রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে ১৭৮৭ খৃষ্টাব্দে কোরআন মুদ্রিত হয়।
৯টি রেয়াত/ধারার জনকের নাম, জন্মস্থান এবং মৃত্যুসাল দিয়ে দিচ্ছি:
১. আবদুল্লা ইবনে আমের (দামাস্কাস), মৃত্যু ১১৮ হিজরী
২. আবদুল্লা ইবনে কাসির (মক্কা), মৃত্যু ১২০ হিজরী
৩. আসিম ইবনে আল নুজ্জুদ (কুফা), মৃত্যু ১২৭ হিজরী
৪. আবু আমর আল-বাসরি (বাসরা), মৃত্যু ১৫৪ হিজরী
৫. হামজা আল-যায়াত (কুফা), মৃত্যু ১৫৬ হিজরী
৬. নাফি ইবনে আব্দুল রহমান (মদিনা), মৃত্যু ১৬৯ হিজরী
৭. আল কিছাই (কুফা), মৃত্যু ১৮৯ হিজরী
৮. আলী ইবনে হামজা (কুফা), মৃত্যু ১৮৯ হিজরী
৯. ইয়াকুব আল-হাদরামী, মৃত্যু ২০৫ হিজরী
হাফস্ (Hafs) সংস্করণ এসেছে হাফস্ আল আসাদ-এর রেয়াত থেকে, তিনি তার রেয়াতের জন্য নির্ভর করেছেন ৩. আসিম ইবনে আল নুজ্জুদ (মৃত্যু ১২৭ হিজরী)-এর রেয়াতের ওপর! আর তিনি কুফার বাসিন্দা ছিলেন! এটিই বহুল প্রচলিত, হায় মুহাম্মদ! কোথায় মক্কা-মদিনা, কোথায় কুফা!
ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ এসেছে উসমান আল-কুতবি আল-মাসরি-এর রেয়াত থেকে, তিনি তার রোয়াতের জন্য নির্ভর করেছেন ৬. নাফি ইবনে আব্দুল রহমান  (মৃত্যু ১৬৯ হিজরী)-এর রেয়াতের ওপর! আর তিনি ছিলেন মদিনার বাসিন্দা! পাঠক, বুঝতে পারছেন কিছু?
 

ছবি – ০৭: কোরআন বিবর্তনের রূপরেখা!
(পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে)
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে কোরআন মুদ্রিত হয় ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে নতুনরূপে কোরআনের হাফস্ (Hafs) সংস্করণ সংস্কার করে মুদ্রণ করা হয় ১৯২৩/২৪ সনে। বর্তমানে কোরআন শরিফের সবচেয়ে বড় ছাপাখানা হল (King Fahd Complex for Printing the Holy Quran) মদিনা। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দৈনিক ৫০ হাজার কপি কোরআন ছাপার ক্ষমতা রাখে। আর এখান থেকেই একসাথে ছাপা হয় হাফস্ (Hafs) ও ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ!
কোরআন সংকলনের ইতিহাস বলে, সাহাবী ইবনে মাসুদ, উবায় ইবনে কাব, উম্মুল মোমেনিন হাফসা, খলিফা আলী ইবনে আবু তালিব সহ অনেকেই খলিফা উসমানের কোরআন মানতেন না! সাহাবী ইবনে মাসুদ-এর কোরআনের সাথে উসমানী কোরআনের অনেক বিষয়ের মতপার্থক্য ছিলো! অনেক সাহাবী সূরা ফাতিহাকে কোরআনের সূরা মনে করতেন না! কোরআনের শেষ দুটো সূরাকেও মানতেন না কেউ কেউ! কোরআন সংকলন এবং এর ভিন্নতা এবং ভিন্নমত নিয়ে শুধুমাত্র কোরআন-হাদীস-তাফসীর থেকে সূত্র নিয়ে পুরোদমে একটি গবেষণামূলক বই হতে পারে! আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়টি সেদিক নিতে চাইলে মক্কার ট্রেন সাইবেরিয়া চলে যাবে অনায়াসে, আর শীতে গোসল করা খুব কষ্টের! তাই সাইবেরিয়া যাচ্ছি না; তবে কোনো একদিন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা রেখে আজকের গল্প শেষ করা যেতেই পারে।
প্রিয় মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেব, আজকে আমরা সত্যি সত্যি আবিষ্কার করতে পেরেছি:

১. কোরআন মোটেই একটিমাত্র নয়! 
২. কোরআন মোটেই সঠিকভাবে সংরক্ষিত নয়! 
৩. কোরআনগুলোর ভেতরে একাধিক পার্থক্য আছে!
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আমার এই মতের সাথে একমত প্রকাশ করেন, তবে এই খবরটি সবাইকে জানানো অবশ্যকর্তব্য বলে মতামত দিয়েছেন মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী! আমার জন্য না হোক, এই বেচারার ইচ্ছা পূরণের জন্য আপনার কিছু একটা পদক্ষেপ আশা করে শেষ করছি! আর এ পর্বের টাইটেলে থাকা প্রশ্নটি করে থামিয়ে দিচ্ছি ব্যথা হয়ে যাওয়া চোখ আর আঙুল: “এখন থেকে আপনি পড়বেন কোন কেরআন?” 
তথ্যসূত্র প্রাপ্তি:
১. কোরআন হাফস্ (Hafs) সংস্করণ
২. কোরআন ওয়ারস্ (Warsh) সংস্করণ
৩. হাদীস সংকলন সহীহ বুখারী
৪. হাদীস সংকলন সহীহ মুসলিম
৫. হাদীস সংকলন মুয়াত্তা মালিক
৬. হাদীস সংকলন সুনানু ইবনে মাজাহ্
৭. তাফসীর ইবনে কাসির
৮. তাফসীর তাফহীমুল কোরআন
৯. উলুমুল কোরআন, তকিব উসমানি
১০.উলুমুল কোরআন, ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক
১১. ইবনে হাজার আল আসকালানী, ফাতহুল বারী
১২. কোরআন হাদীস সংকলনের ইতিহাস-এ কে এম ইনামুল হক
১৯. The History of the Quranic Text-M.M Al-Azami
২০. Daleel Al-Hayran Fil Kash a’n Ayaay Al-Quran
২১. Al-Talkhees Fil Qiraat Al-Thaman – Abu Ma’shar Al-Tabari (Died 478 A.H.)
২২. M. Fethullah Gülen, Questions This Modern Age Puts to Islam (Izmir: Kaynak, 1993)
২৩. Alphonse Mingana, “Three Ancient Korans,” in Ibn Warraq, The Origins of the Koran
২৪. As-Suyuti, Al-Itqan fi Ulum al-Qur’an, 525, in Gilchrist, Jam’ Al-Qur’an.
২৫. Ibn Warraq, ed., What the Koran Really Says (Amherst, NY: Prometheus, 2002),
২৬. The Cambridge Companion to the Qur’an (Cambridge: Cambridge University Press, 2006)
২৭. AL-Qiraat Al-Ashr Al-Mutawatira, by Sheikh Mohammed Rajih (Published by Dar Al-Mahajir)

ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের সময়কালে করা কোরআনের সংকলন থেকে এই ১৪০০ বছরের লম্বা সময়েও অলৌকিক (!) গ্রন্থখানি নির্দিষ্ট একটি চরিত্রে স্থিরতা পায়নি! আজও নিয়মিত পরিবর্তনের মধ্যে ‍দিয়ে যাচ্ছে কোরআন! এখনও বাংলাদেশ এবং ভারতীয় কোনো কোনো কোরআনে সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত নিয়ে ভিন্নতা রয়ে গেছে! ১৯২৩/২৪ সালের সংস্কারের পরেও আজ পর্যন্ত তা পুরো পৃথিবীতে সমানভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি! তারপরেও নতুন করে আরও একটি পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে বছর ছয়েক আগে থেকেই। এবার যা করার চেষ্টা চলছে, তাতে আর কতটা খিচুড়ি রান্না হবে, কে জানে! যতদুর জানতে পেরেছি, এবারের সংস্কারে কোরআনের ১২ টি সূরার নাম পরিবর্তন করা হবে! এই চেষ্টার কারণেই এখন কিছু কিছু প্রকাশনীর প্রকাশিত কোরআনে সূরার নামের ভিন্নতা চোখে পড়তে শুরু করেছে! আমি ১১ টি সূরার ভিন্ন নামের সন্ধান পেয়েছি! যদিও অনেক আগে থেকেই এসব নামের খোঁজ তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায়, কিন্তু নতুন করে এসব নাম চালু করবার পেছনে কী এমন যুক্তি আছে, তা আমার বোধগম্য নয়! কোরআন যে মানুষ্য নির্মিত গ্রন্থ, তা প্রকট করা ছাড়া এ বিষয়ে আর কোনো লাভ কারও হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়! তবে সৌদি সুন্নী ওহাবী সরকার যে ক্রমশ ইসলামের সংস্কার করতে শুরু করেছে, এটি তার একটি নতুন পদক্ষেপ হতে পারে! ইসলাম তার বেশির ভাগ মিথের বিলুপ্তির সময় থেকে খুব বেশি হলে ১০০ বছর দূরে অবস্থান করছে! বিপুল পরিমাণে সংস্কার না করলে আগামী এক/দুই শতক পর ইসলামকে যাদুঘরে যেতে হবে – নিশ্চিত থাকতে পারেন! আপনাদের জন্য তুলে দিচ্ছি ১১ টি সুরার নতুন নামের তালিকা! যার সবটাই বদলে যাবে দ্রুতই!
৯ নং সূরা:  আত-তাওবা (বারা-আত)
১৭ নং সূরা:  বনী ইসরাঈল (আল-ইসরা)
৩৫ নং সূরা: ফাতের (আল মালাইকা)
৪০ নং সূরা:  আল মুমিন (গাফির)
৪১ নং সূরা: হা- মীমআস-সাজদাহ (ফুসসিলাত)
৪৭ নং সূরা:  মুহাম্মদ (আল-কিতাল) 
৭৬ নং সূরা:  আদ দাহর (আল ইনসান)
৮৩ নং সূরা: আল-মুতাফফিফীন (আত-তাতফীক)
৮৪ নং সূরা:  আল-ইনশিকাক (ইনশাককাত)
৯৬ নং সূরা:  আল-আলাক (ইকরা)
১১১ নং সূরা: লাহাব (আল-মাসাদ বা তাব্বাত)
যে সকল মুসলিম কোরআনকে সকল জ্ঞানের উৎস মনে করেন, তাদের জন্য চপেটাঘাত হতে পারে এরপর দেওয়া তথ্যটুকু! কোরআনের শব্দসংখ্যা নিয়ে ভিন্ন মতামত থাকা সত্ত্বেও বলা হয়, কোরআনের শব্দসংখ্যা ৭৭ হাজার ৬০০ থেকে ৭৭ হাজার ৯০০ এর মধ্যে! কোরআন যে কতটা একই বিষয়ে ঘুরপাক খাওয়া চর্বিত-চর্বণ বিরক্তিকর গ্রন্থ, তা প্রমাণিত হয় তখন, যখন আপনাকে আমি বলবো – এই প্রায় ৭৮ হাজার শব্দের মধ্যে ১২৫ টি শব্দ পুনরাবৃত্তি হয়েছে ৪০ হাজার বার! হ্যাঁ, আপনি মোটেই ভুল পড়ছেন না! সত্যিই ৭৮ হাজার শব্দের মধ্যে মাত্র ১২৫ টি শব্দ পুনরাবৃত্তি হয়েছে ৪০ হাজার বার, মানে কোরআনের ৫০ ভাগেরও বেশি মাত্র এই ১২৫ টি শব্দে সীমাবদ্ধ! আল্লাহ আর মুহাম্মদের শব্দভাণ্ডার নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, কী বলেন?
অতি আগ্রহীদের জন্য মাত্র ৪০০ কিলোবাইটেরে একটি ইবুক সংযুক্ত করে দিচ্ছি, যাচাই করে নিতে পারেন কোরআনের ১২৫ শব্দের তালিকা এবং পুনরাবৃত্তির রকমফের! এরপরেও মুমিনেরা কোরআনকে কোন অর্থে সকল জ্ঞানের উৎস বলে, তা আমার মত ক্ষুদ্র মস্তিস্কের মানুষের বোধগম্য নয়!
মুহাম্মদের বয়কট শুরুর সময়কালীন চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হবার মুজেজা প্রকাশের পর, পুরো বয়কটকালীন সময়ে আর কোনো মুজেজা প্রকাশের কথা ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায় না! চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হবার বিষয়টি আদতে কেমন ছিলো, তা নিয়ে “চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার রহস্য উন্মোচন!” নামে এই সিরিজের একটি বিশেষ পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে! আর বয়কট কালে মুহাম্মদের প্রকাশিত আয়াতে তার অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশের অক্ষমতা এবং নিজেকে কেবল একজন বার্তাবাহক মানুষ দাবি করার প্রমাণ বিদ্যমান আছে একাধিকবার!

এখন আমরা বয়কটের প্রায় শেষদিকে অবস্থান করছি, এ পর্বের প্রকাশিত আয়াতে মুহাম্মদের মনোজগতের স্থিরতা চোখে পড়বে; তিনি বুঝেতে পারছেন, তার ওপর চেপে থাকা সামাজিক বয়কট তুলে নেবার জন্য কুরাইশের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হতে শুরু করেছে! মুসলিম না হয়েও সামাজিক-ব্যাবসায়িক কারণে মুহাম্মদকে সহায়তা করতে শুরু করেছেন অনেকেই! ইসলামের ইতিহাসে বয়কট শেষ হওয়া নিয়ে ফালতু একটি গল্প আছে! বলা হয়, কুরাইশরা যখন বয়কটচুক্তি খুলে দেখেন, তখন আল্লার নাম ছাড়া বয়কট চুক্তির সব অংশ পোকায় কাটা দেখতে পান এবং মুহাম্মদ এটি অলৌকিকভাবে আগেই জেনে তার চাচা আবু তালিবকে বলেছিলেন! এটি যে কত হাস্যকর অসত্য একটি বর্ণনা, সে বিষয়ে কথা বলবো আগামী পর্বে! 
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৩০ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ৮ম তিন অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
মুহাম্মদ দ্বারা ১১৮ তম প্রকাশ: সূরা ইউসুফ (১২) (নবী ইউসুফ), ৭ বাদে ৪ থেকে ১১১ আয়াত:
৪. যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল: হে পিতা! আমি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য এবং চাঁদকে দেখেছি – দেখেছি ওদেরকে আমার প্রতি সাজদাহবনত অবস্থায়।
৫. সে বলল: হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্নের বৃত্তান্ত তোমার ভাইদের নিকট বর্ণনা করনা; করলে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে; শাইতান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।
৬. এভাবে তোমার প্রতিপালক তোমাকে মনোনীত করবেন, তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবেন এবং তিনি তাঁর অনুগ্রহ তোমার প্রতি আর ইয়াকূব পরিবারের প্রতি পূর্ণ করবেন, যেভাবে তিনি তা পূর্বে তোমার পিতৃ-পুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছিলেন, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সর্বজ্ঞ, বড়ই প্রজ্ঞাবান।
৮. যখন তারা (ভাইয়েরা) বলেছিল: আমাদের পিতার নিকট ইউসুফ এবং তার ভাইই (বিন ইয়ামীন) অধিক প্রিয়, অথচ আমরা একটি সংহত দল, আমাদের পিতাতো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন।
৯. ইউসুফকে হত্যা কর অথবা তাকে কোন স্থানে ফেলে এসো। ফলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের প্রতি নিবিষ্ট হবে এবং তারপর তোমরা ভাল লোক হয়ে যাবে।
১০. তাদের মধ্যে একজন বলল: ইউসুফকে হত্যা কর না, বরং যদি তোমরা কিছু করতেই চাও, তাহলে তাকে কোনো গভীর কূপে নিক্ষেপ কর, যাত্রী দলের কেহ তাকে তুলে নিয়ে যাবে।
১১. তারা বলল: হে আমাদের পিতা! ইউসুফের ব্যাপারে আপনি আমাদেরকে অবিশ্বাস করছেন কেন, যদিও আমরা তার হিতাকাংখী?
১২. আপনি আগামীকাল তাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুন, সে ফলমূল খাবে ও খেলাধুলা করবে, আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব।
১৩. সে বলল: এটা আমাকে কষ্ট দেবে যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি ভয় করি, তোমরা তার প্রতি অমনোযোগী হলে তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলবে।
১৪. তারা বলল: আমরা একটি সংহত দল হওয়া সত্ত্বেও যদি তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলে তাহলে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তই হব।
১৫. অতঃপর যখন তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে গভীর কূপে নিক্ষেপ করতে একমত হল, এমতাবস্থায় আমি তাকে জানিয়ে দিলাম: তুমি তাদেরকে তাদের এই কর্মের কথা অবশ্যই বলে দেবে যখন তারা তোমাকে চিনবে না।
১৬. তারা রাতে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার নিকট এলো।
১৭. তারা বলল: হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতা করেছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের নিকট রেখে গিয়েছিলাম, অতঃপর তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনি তো আমাদের বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।
১৮. আর তারা তার জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। সে বলল: না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল।
১৯. এক যাত্রী দল এলো, তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল, সে বলে উঠল: কী সুখবর! এ যে এক কিশোর! অতঃপর তারা তাকে পণ্য রূপে লুকিয়ে রাখল, তারা যা করছিল, সেই বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবগত ছিলেন।
২০. তারা তাকে স্বল্প মূল্যে – মাত্র কয়টি দিরহামের বিনিময়ে – বিক্রি করে দিল, তারা ছিল তাকে তুচ্ছ জ্ঞানকারী!
২১. মিসরের যে লোক তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, ‘তার থাকার সুব্যবস্থা কর, সম্ভবতঃ সে আমাদের উপকারে আসবে কিংবা তাকে আমরা পুত্র হিসেবেও গ্রহণ করে নিতে পারি।’ এভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম তাকে স্বপ্ন ব্যাখ্যার কিছু জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য। আল্লাহ তাঁর কাজের ব্যাপারে পূর্ণ কর্তৃত্বশীল। কিন্তু অধিকাংশ লোকই (তা) জানে না।
২২. যখন সে তার পরিপূর্ণ যৌবনে পৌঁছল, তখন তাকে বিচার-বুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম, আমি সৎকর্মশীলদেরকে এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি।
২৩. যে মহিলার ঘরে সে ছিল, সে (মহিলাটি) তার থেকে অসৎ কর্ম কামনা করল। সে দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো’। সে (ইউসুফ) বলল, ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি। তিনি আমার রবব, তিনি আমার থাকার ব্যবস্থা কত উত্তম করেছেন, যালিমরা কক্ষনো সাফল্য লাভ করতে পারে না।
২৪. সেই মহিলা তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল আর সে (ইউসুফ) ও তার প্রতি আসক্ত হয়েই যেত যদি সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন না দেখত। আমি তা দেখিয়েছিলাম তাকে অসৎ কর্ম ও নির্লজ্জতা থেকে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, সে ছিল বিশুদ্ধ-হৃদয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।
২৫. তারা উভয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল আর স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। এ সময় স্ত্রীলোকটির স্বামীকে তারা দু’জনে দরজার কাছে পেল। মহিলাটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে অপকর্ম করতে চায় তাকে জেলে পাঠানো অথবা ভয়াবহ শাস্তি ছাড়া উপযুক্ত দণ্ড কী আর দেয়া যেতে পারে?’
২৬. সে (ইউসুফ) বলল: সেই আমা হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিল। স্ত্রী লোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল: যদি তার জামার সম্মুখ দিক ছিন্ন করা হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী লোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী।
২৭. আর যদি তার জামা পেছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী লোকটি মিথ্যা কথা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী।
২৮. সুতরাং গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক হতে ছিন্ন করা হয়েছে তখন সে বলল: ভীষণ তোমাদের ছলনা।
২৯. হে ইউসুফ! তুমি এটা উপেক্ষা কর এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তুমিই অপরাধী।
৩০. নগরে কতিপয় নারী বলল: আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎ কাজ কামনা করেছে; প্রেম তাকে উম্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে দেখছি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।
৩১. স্ত্রী লোকটি যখন তাদের ষড়যন্ত্রের কথা শুনল, তখন সে তাদেরকে ডেকে পাঠাল, তাদের প্রত্যেককে একটি করে চাকু দিল এবং যুবককে বলল: তাদের সামনে বের হও। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তারা তার সৌন্দর্যে অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। তারা বলল: অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা!
৩২. সে বলল: এই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ, আমি তার হতে অসৎ কাজ কামনা করেছি; কিন্তু সে নিজকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি, সে যদি তা না করে তাহলে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
৩৩. ইউসুফ বলল: হে আমার পালনকর্তা! এই নারীরা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার কাছে অধিক প্রিয়। আপনি যদি আমাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা না করেন, তাহলে ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।
৩৪. তখন তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন আর তার থেকে তাদের কূট কৌশল অপসারিত করলেন, তিনি সব কিছু শোনেন, সব কিছু জানেন।
৩৫. নিদর্শনাবলী দেখার পর তাদের মনে হল যে, কিছু দিনের জন্য তাকে অবশ্য অবশ্যই কারারুদ্ধ করতে হবে।
৩৬. তার সঙ্গে দুই যুবকও কারাগারে প্রবেশ করেছিল। তাদের একজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি মদ তৈরি করছি।’ অন্যজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি মাথায় রুটি বহন করছি আর পাখী তাত্থেকে খাচ্ছে। আমাদেরকে এর ব্যাখ্যা বলে দাও, আমরা দেখছি তুমি একজন সৎকর্মশীল লোক।’
৩৭. ইউসুফ বলল: তোমাদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয়, তা আসার পূর্বে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে দেব, আমি যা তোমাদেরকে বলব, তা আমার রাব্ব আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হতে বলব, যে সম্প্রদায় আল্লাহকে বিশ্বাস করে না ও পরলোকে অবিশ্বাসী হয় আমি তাদের মতবাদ বর্জন করেছি।
৩৮. আমি আমার পিতৃ পুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকূবের মতবাদ অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়, এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
৩৯. হে আমার জেলের সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপালক ভালো, না মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ?
৪০. তাঁকে ছেড়ে তোমরা শুধু কতকগুলি নামের ইবাদাত করছ, যে নাম তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ, এইগুলির কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। হুকুম (বিধান) দেয়ার অধিকার শুধু আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে, আর কারও ইবাদাত করবে না; এটাই সরল সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
৪১. হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়! তোমাদের একজনের ব্যাপার এই যে, সে তার প্রভুকে মদ পান করাবে এবং অপর সম্বন্ধে কথা এই যে, সে শূলবিদ্ধ হবে; অতঃপর তার মস্তক হতে পাখী আহার করবে, যে বিষয়ে তোমরা জানতে চেয়েছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
৪২. ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করল, তাকে বলল: তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বল; কিন্তু শাইতান তাকে তার প্রভুর কাছে তার বিষয়ে বলার কথা ভুলিয়ে দিল। সুতরাং ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে রইল।
৪৩. বাদশাহ বলল: আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি স্থূলকায় গাভী, ওগুলিকে সাতটি শীর্ণকায় গাভী ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ এবং অপর সাতটি শুষ্ক। হে প্রধানগণ! যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার তাহলে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে অভিমত দাও।
৪৪. তারা বলল: এটা অর্থহীন স্বপ্ন এবং আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ নই।
৪৫. দুজন কারারুদ্ধের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে তার স্মরণ হলে সে বলল: আমি এর তাৎপর্য তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, সুতরাং তোমরা আমাকে পাঠিয়ে দাও।
৪৬. সে বলল: হে ইউসুফ! হে সত্যবাদী! সাতটি স্থূলকায় গাভী, ওগুলিকে সাতটি শীর্ণকায় গাভী ভক্ষণ করছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্বন্ধে আপনি আমাদেরকে ব্যাখ্যা দিন, যাতে আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি এবং যাতে তারা অবগত হতে পারে।
৪৭. ইউসুফ বলল: তোমরা সাত বছর একাদিক্রমে চাষ করবে, অতঃপর তোমরা শস্য সংগ্রহ করবে; তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা আহার করবে, তা ব্যতীত সমস্ত শস্য শীষ সমেত রেখে দিবে।
৪৮. এরপর আসবে সাতটি কঠিন বছর; এই সাত বছর যা পূর্বে সঞ্চয় করে রাখবে – লোকে তা খাবে; শুধু সামান্য কিছু, যা তোমরা সংরক্ষণ করবে তা ব্যতীত।
৪৯. এবং এরপর আসবে এক বছর, সেই বছর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সেই বছর মানুষ প্রচুর ফলের রস নিংড়াবে।
৫০. বাদশাহ বলল: তোমরা ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো। যখন দূত তার কাছে উপস্থিত হল তখন সে বলল: তুমি তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করঃ যে নারীরা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল তাদের অবস্থা কী? আমার রাব্ব তাদের ছলনা সম্যক অবগত।
৫১. বাদশাহ নারীদেরকে বলল: যখন তোমরা ইউসুফ হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিলে তখন তোমাদের কি হয়েছিল? তারা বলল: অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! আমরা তার মধ্যে কোোন দোষ দেখিনি। আযীযের স্ত্রী বলল: এক্ষণে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল, আমিই তার হতে অসৎ কাজ কামনা করেছিলাম, সে তো সত্যবাদী।
৫২. সে বলল: আমি এটা বলেছিলাম যাতে সে জানতে পারে যে, তার অনুপস্থিতিতে আমি তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং আল্লাহ বিশ্বাস ঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল করেন না।
৫৩. আমি নিজকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কর্ম-প্রবণ। কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার রাব্ব অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার রাব্ব অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৫৪. বাদশাহ বলল: ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে একান্ত সহচর নিযুক্ত করব। অতঃপর বাদশাহ যখন তার সাথে কথা বলল, তখন রাজা বলল: আজ তুমি আমাদের কাছে মর্যাদাবান ও বিশ্বাসভাজন হলে।
৫৫. সে বলল: আমাকে কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। নিশ্চয়ই আমি উত্তম সংরক্ষণকারী, অতিশয় জ্ঞানবান।
৫৬. এভাবে আমি ইউসুফকে সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম। সে সেই দেশে যথা ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত। আমি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি দয়া করি, আর আমি সৎ কর্মপরায়ণদের শ্রমফল বিনষ্ট করি না।
৫৭. যারা মুমিন ও মুত্তাকী তাদের পরকালের পুরস্কারই উত্তম।
৫৮. ইউসুফের ভাইয়েরা এলো এবং তার নিকট উপস্থিত হল। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না।
৫৯. সে যখন তাদের দ্রব্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন সে বলল, ‘তোমরা তোমাদের সৎ ভাইকে আমার কাছে নিয়ে আসবে, তোমরা কি দেখছ না, আমি কীভাবে পাত্র ভরে দিই, আর আমি উত্তম অতিথি সেবক।
৬০. কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার নিকট নিয়ে না আস, তাহলে আমার নিকট তোমাদের জন্য কোন বরাদ্দ থাকবে না এবং তোমরা আমার নিকটবর্তী হবে না।
৬১. তারা বলল: ওর বিষয়ে আমরা ওর পিতাকে সম্মত করার চেষ্টা করব এবং আমরা নিশ্চয়ই এটা করব।
৬২. ইউসুফ তার ভৃত্যদেরকে বলল: তারা যে পণ্য মূল্য দিয়েছে, তা তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে স্বজনদের কাছে প্রত্যাবর্তনের পর তারা বুঝতে পারে যে, ওটা প্রত্যর্পন করা হয়েছে, তা হলে তারা পুনরায় আসতে পারে।
৬৩. অতঃপর যখন তারা তাদের পিতার নিকট ফিরে এলো, তখন তারা বলল: হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সুতরাং আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন যাতে আমরা রসদ পেতে পারি, আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব।
৬৪. সে বলল: আমি কি তোমাদেরকে ওর সম্বন্ধে সেইরূপ বিশ্বাস করব, যেরূপ বিশ্বাস পূর্বে তোমাদেরকে করেছিলাম ওর ভাইয়ের ব্যাপারে? আল্লাহই রক্ষণাবেক্ষণে শ্রেষ্ঠ এবং তিনি শ্রেষ্ঠতম দয়ালু।
৬৫. যখন তারা তাদের মালপত্র খুলল, তখন তারা দেখতে পেল, তাদের পণ্যমূল্য তাদেরকে প্রত্যর্পন করা হয়েছে। তারা বলল: হে আমাদের পিতা! আমরা আর কি প্রত্যাশা করতে পারি? এটা আমাদের প্রদত্ত পণ্যমূল্য, আমাদেরকে প্রত্যর্পন করা হয়েছে; পুনরায় আমরা আমাদের পরিবারবর্গকে খাদ্যসামগ্রী এনে দেব এবং আমরা আমাদের ভাইয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করব এবং আমরা অতিরিক্ত আর এক উট বোঝাই পণ্য আনব, যা এনেছি তা পরিমাণে অল্প।
৬৬. পিতা বলল: আমি ওকে কখনও তোমাদের সাথে পাঠাব না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে অঙ্গীকার কর যে, তোমরা তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবেই, অবশ্য যদি তোমরা একান্ত অসহায় হয়ে না পড়। অতঃপর যখন তারা তার নিকট প্রতিজ্ঞা করল, তখন সে বলল: আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি, আল্লাহ তার বিধায়ক।
৬৭. সে বলল: হে আমার পুত্রগণ! তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করনা, ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারি না। বিধান আল্লাহরই; আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং যারা নির্ভর করতে চায় তারা তাঁরই (আল্লাহরই) উপর নির্ভর করুক।
৬৮. যখন তারা, তাদের পিতা তাদেরকে যেভাবে আদেশ করেছিল, সেভাবেই প্রবেশ করল, তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে ওটা তাদের কোনো কাজে এলো না; ইয়াকূব শুধু তার মনের একটি অভিপ্রায় পূর্ণ করেছিল এবং সে অবশ্যই জ্ঞানী ছিল। কারণ আমি তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
৬৯. তারা যখন ইউসুফের সামনে হাযির হল, তখন ইউসুফ তার (সহোদর) ভাইকে নিজের কাছে রাখল এবং বলল: আমিই তোমার (সহোদর) ভাই। সুতরাং তারা যা করত সেজন্য দুঃখ কর না।
৭০. অতঃপর সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল, তখন সে তার (সহোদর) ভাইয়ের মালপত্রের মধ্যে পানপাত্র রেখে দিল, অতঃপর এক ঘোষক উচ্চৈঃস্বরে বলল: হে যাত্রীদল! তোমরা নিশ্চয়ই চোর।
৭১. তারা তাদের দিকে ফিরে তাকাল এবং বলল: তোমরা কী হারিয়েছ?
৭২. তারা বলল: আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়েছি; যে ওটা এনে দেবে, সে এক উট বোঝাই মাল পাবে এবং আমি ওর যামীন।
৭৩. তারা বলল: আল্লাহর শপথ! তোমরা তো জান যে, আমরা এই দেশে দুষ্কৃতি করতে আসিনি এবং আমরা চোরও নই।
৭৪. তারা বলল: যদি তোমরা মিথ্যাবাদী হও, তাহলে তার শাস্তি কী?
৭৫. তারা বলল: এর শাস্তি এই যে, যার মালপত্রের মধ্যে পাত্রটি পাওয়া যাবে, সেই তার বিনিময়, এভাবে আমরা সীমালংঘনকারীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।
৭৬. অতঃপর সে তার (সহোদর) ভাইয়ের মালপত্র তল্লাশির পূর্বে তাদের মাল-পত্র তল্লাশি করতে লাগল, পরে তার সহোদরের মাল-পত্রের মধ্য হতে পাত্রটি বের করল। এভাবে আমি ইউসুফের জন্য কৌশল করেছিলাম, রাজার আইনে তার সহোদরকে সে আটক করতে পারত না, আল্লাহ ইচ্ছা না করলে। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি, প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর আছেন সর্বজ্ঞানী।
৭৭. তারা বলল: সে যদি চুরি করে থাকে তার (সহোদর) ভাইও তো ইতোপূর্বে চুরি করেছিল, এতে ইউসুফ প্রকৃত ব্যাপার নিজের মনে গোপন রাখল এবং তাদের কাছে প্রকাশ করল না। সে মনে মনে বলল: তোমাদের অবস্থা তো হীনতর এবং তোমরা যা বলছ, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।
৭৮. তারা বলল: হে আযীয! এর পিতা আছেন অতিশয় বৃদ্ধ, সুতরাং এর স্থলে আপনি আমাদের একজনকে রাখুন! আমরা তো আপনাকে দেখছি মহানুভব ব্যক্তিদের একজন।
৭৯. সে বলল: যার নিকট আমরা আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া অন্যকে রাখার অপরাধ হতে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরূপ করলে আমরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী হব।
৮০. যখন তারা তার নিকট হতে সম্পূর্ণ নিরাশ হল তখন তারা নির্জনে গিয়ে পরামর্শ করতে লাগল, ওদের মধ্যে যে ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ সে বলল: তোমরা কি জান না যে, তোমাদের পিতা তোমাদের নিকট হতে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং পূর্বেও তোমরা ইউসুফের ব্যাপারে ক্রটি করেছিলে; সুতরাং আমি কিছুতেই এই দেশ ত্যাগ করব না যতক্ষণ না আমার পিতা আমাকে অনুমতি দেন অথবা আল্লাহ আমার জন্য কোন ব্যবস্থা করেন এবং তিনিই বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
৮১. তোমরা তোমাদের পিতার নিকট ফিরে যাও এবং বল: হে আমাদের পিতা! আপনার পুত্র চুরি করেছে এবং আমরা যা জানি তারই প্রত্যক্ষ বিবরণ দিলাম, অদৃশ্যের ব্যাপারে আমরা অবহিত ছিলাম না।
৮২. যে জনপদে আমরা ছিলাম ওর অধিবাসীদেরকে জিজ্ঞেস করুন এবং যে যাত্রীদলের সাথে আমরা এসেছি তাদেরকেও, আমরা অবশ্যই সত্যবাদী।
৮৩. ইয়াকূব বলল: না, তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে দিয়েছে; সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়; হয়তো আল্লাহ ওদেরকে এক সাথে আমার কাছে এনে দেবেন, তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৮৪. সে ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল: আফসোস ইউসুফের জন্য। শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট।
৮৫. তারা বলল: আল্লাহর শপথ! আপনি তো ইউসুফের কথা ভুলবেন না, যতক্ষণ না আপনি শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হবেন, অথবা মৃত্যুবরণ করবেন।
৮৬. সে বলল: আমি আমার অসহনীয় বেদনা, আমার দুঃখ আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি এবং আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি, তোমরা তা জান না।
৮৭. হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহর করুণা হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না, কারণ কাফির ব্যতীত কেহই আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয় না।
৮৮. যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হল, তখন বলল: হে আযীয! আমরা ও আমাদের পরিবার পরিজন বিপন্ন হয়ে পড়েছি এবং আমরা তুচ্ছ পণ্য নিয়ে এসেছি; আপনি আমাদের রসদ পূর্ণ মাত্রায় দিন এবং আমাদেরকে দান করুন; আল্লাহ দাতাদেরকে পুরস্কৃত করেন।
৮৯. সে বলল: তোমরা কি জান, তোমরা ইউসুফ ও তার সহোদরের প্রতি কীরূপ আচরণ করেছিলে, যখন তোমরা ছিলে অজ্ঞ?
৯০. তারা বলল: তাহলে কি তুমিই ইউসুফ? সে বলল: আমিই ইউসুফ এবং এই আমার সহোদর; আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যে ব্যক্তি মুত্তাকী ও ধৈর্যশীল, আল্লাহ সেইরূপ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।
৯১. তারা বলল: আল্লাহর শপথ! আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আমরা নিশ্চয়ই অপরাধী ছিলাম।
৯২. সে বলল: আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন, এবং তিনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
৯৩. তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটা আমার পিতার মুখমণ্ডলের উপর রেখ, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন, আর তোমরা তোমাদের পরিবারের সকলকেই আমার নিকট নিয়ে এসো।
৯৪. অতঃপর যাত্রীদল যখন বের হয়ে পড়ল, তখন তাদের পিতা বলল: তোমরা যদি আমাকে অপ্রকৃতিস্থ মনে না কর তাহলে বলি: আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি।
৯৫. তারা বলল: আল্লাহর শপথ! আপনি তো আপনার পূর্ব বিভ্রান্তিতেই রয়েছেন।
৯৬. অতঃপর যখন সুসংবাদ বাহক উপস্থিত হল এবং তার মুখমণ্ডলের উপর জামাটি রাখল তখন, সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। সে বলল: আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি, তোমরা তা জান না।
৯৭. তারা বলল: হে আমাদের পিতা! আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন; আমরা তো অপরাধী।
৯৮. সে বলল: আমি আমার পালনকর্তার নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, তিনি তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৯৯. অতঃপর তারা যখন ইউসুফের নিকট উপস্থিত হল, তখন সে তার মাতা-পিতাকে আলিঙ্গন করল এবং বলল: আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন!
১০০. আর ইউসুফ তার মাতা-পিতাকে উচ্চাসনে বসাল এবং তারা সবাই তার সামনে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ল। সে বলল: হে আমার পিতা! এটাই আমার পূর্বেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা; আমার রাব্ব ওটা সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমাকে কারাগার হতে মুক্ত করেছেন এবং শাইতান আমার ও আমার ভাইদের সম্পর্ক নষ্ট করার পরও আপনাদেরকে মরু অঞ্চল হতে এখানে এনে দিয়ে আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমার রাব্ব যা ইচ্ছা তা নিপুণতার সাথে করে থাকেন, তিনি তো সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১০১. হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! আপনিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক, আপনি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন!
১০২. এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ, যা তোমাকে আমি অহী দ্বারা অবহিত করছি, ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌঁছেছিল তখন তুমি তাদের সাথে ছিলে না।
১০৩. তুমি যতই চাও না কেন, অধিকাংশ লোকই ঈমান আনার নয়।
১০৪. আর তুমি তো তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক দাবি করছো না, এটাতো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ ছাড়া কিছু নয়।
১০৫. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে, তারা এ সমস্ত প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু তারা এ সবের প্রতি উদাসীন।
১০৬. অধিকাংশ মানুষ আল্লাহতে বিশ্বাস করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।
১০৭. তাহলে কি তারা আল্লাহর সর্বগ্রাসী শাস্তি হতে অথবা তাদের অজ্ঞাতসারে কিয়ামাতের আকস্মিক উপস্থিতি হতে নিরাপদ?
১০৮. তুমি বল: এটাই আমার (আল্লাহর) পথ; প্রতিটি মানুষকে আমি আহবান করি সজ্ঞানে, আমি এবং আমার অনুসারীগণও; আল্লাহ মহিমান্বিত এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে আমি তাদের অন্তভুর্ক্ত নই।
১০৯. তোমার পূর্বে জনপদবাসীদের মধ্যে যাদের কাছে ওয়াহী করতাম তারা পুরুষ মানুষ ব্যতীত ছিল না। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করতঃ দেখে না যে, তাদের পূর্ববর্তী লোকেদের পরিণাম কী হয়েছিল? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, নিশ্চিতই পরলোকের ঘর তাদের আরো উত্তম, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
১১০. অবশেষে যখন রাসূলগণ নিরাশ হল এবং লোকে ভাবল যে, রাসূলদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য এলো। এভাবে আমি যাকে ইচ্ছা করি সে উদ্ধার পায়, আর অপরাধী সম্প্রদায় হতে আমার শাস্তি রদ করা হয় না।
১১১. তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা, ইহা এমন বাণী যা মিথ্যা প্রবন্ধ নয়, কিন্তু মুমিনদের জন্য এটা পূর্ব গ্রন্থে যা আছে উহার সমর্থন এবং সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত ও রাহমাত।
মুহাম্মদ দ্বারা ১১৯ তম প্রকাশ: সূরা আল কাসাস (২৮) (কাহিনী), ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৮৫ বাদে ১ থেকে ৮৮ আয়াত:
১. তা-সীন-মীম,
২. এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
৩. আমি মূসা ও ফিরআউনের কাহিনী হতে কিছু তোমার কাছে সত্যিকারভাবে বিবৃত করছি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে।
৪. বস্তুতঃ ফেরাউন দেশে উদ্ধত হয়ে গিয়েছিল আর সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে দুর্বল করে রেখেছিল, তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করত আর তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; সে ছিল ফাসাদ সৃষ্টিকারী।
৫. দেশে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার ইচ্ছে করলাম, আর তাদেরকে নেতা ও উত্তরাধিকারী করার (ইচ্ছে করলাম)।
৬. আর (ইচ্ছে করলাম) তাদেরকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে, আর ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য বাহিনীকে দেখিয়ে দিতে যা তারা তাদের (অর্থাৎ মূসার সম্প্রদায়ের) থেকে আশঙ্কা করত।
৭. আমি মূসার মায়ের প্রতি ওয়াহী করলাম যে, তাকে স্তন্য পান করাতে থাক। যখন তুমি তার সম্পর্কে আশঙ্কা করবে, তখন তুমি তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে, আর তুমি ভয় করবে না, দুঃখও করবে না, আমি তাকে অবশ্যই তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব আর তাকে রসূলদের একজন করব।
৮. অতঃপর ফেরাউনের লোকজন তাকে উঠিয়ে নিল যাতে সে তাদের জন্য শত্রু হতে ও দুঃখের কারণ হতে পারে। ফেরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীর লোকেরা তো ছিল অপরাধী।
৯. ফেরাঊনের স্ত্রী বলল- ‘এ শিশু আমার ও তোমার চক্ষু শীতলকারী, তাকে হত্যা কর না, সে আমাদের উপকারে লাগতে পারে অথবা তাকে আমরা পুত্র হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি আর তারা কিছুই বুঝতে পারল না (তাদের এ কাজের পরিণাম কী)।
১০. মূসার মায়ের অন্তর বিচলিত হয়ে উঠল। সে তো তার পরিচয় প্রকাশ করেই ফেলত যদি না আমি তার চিত্তকে দৃঢ় করতাম যাতে সে আস্থাশীল হয়।
১১. মূসার মা মূসার বোনকে বলল- ‘তার পিছনে পিছনে যাও।’ সে দূর থেকে তাকে দেখছিল কিন্তু তারা টের পায়নি।
১২. আগে থেকে আমি তাকে ধাত্রী-স্তন্য পান থেকে বিরত রেখেছিলাম। মূসার বোন বলল- ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একটা পরিবারের খোঁজ দেব যারা তাকে তোমাদের পক্ষে লালন পালন করবে আর তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী।’
১৩. অতঃপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিলাম তার জননীর নিকট যাতে তার চক্ষু জুড়ায়, সে দুঃখ না করে এবং বুঝতে পারে যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এটা জানেনা।
১৪. যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে উপনীত ও পরিণত বয়স্ক হল তখন আমি তাকে হিকমাত ও জ্ঞান দান করলাম। এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কার প্রদান করে থাকি।
১৫. সে নগরীতে প্রবেশ করল, যখন এর অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক। সেখানে সে দুটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখল – একজন তার নিজ দলের এবং অপর জন তার শত্রু দলের। মূসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তার সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন মূসা তাকে ঘুষি মারল, এতেই তার মৃত্যু হল। মূসা বললঃ এটা শাইতানের কান্ড, সেতো প্রকাশ্য শত্রু ও পথভ্রষ্টকারী।
১৬. সে বলল- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি নিজের আত্মার উপর যুলম করেছি, অতএব আমাকে ক্ষমা কর।’ অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন, অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
১৭. মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আমার উপর অনুগ্রহ করেছ, কাজেই আমি কক্ষনো পাপীদের সাহায্যকারী হব না।’
১৮. শহরে তার সকাল হল ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। হঠাৎ সে শুনল যে লোকটি গতকাল তার কাছে সাহায্য চেয়েছিল (আবার) সে সাহায্যের জন্য চীৎকার করছে। মূসা তাকে বলল- ‘তুমি প্রকাশ্যই একজন বেওকুফ লোক।
১৯. অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে ধরতে উদ্যত হল, তখন সে বলল- ‘ওহে মূসা! তুমি কি আমাকে হত্যা করতে চাও যেভাবে গতকাল একটা লোককে হত্যা করেছ, তুমি তো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাচ্ছ, সংশোধনকারীদের মধ্যে গণ্য হতে চাচ্ছ না।’
২০. নগরের প্রান্ত হতে এক লোক ছুটে আসল। সে বলল- ‘হে মূসা! পারিষদগণ তোমাকে হত্যার পরামর্শ করছে, কাজেই তুমি বাইরে চলে যাও, আমি তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী।
২১. তখন মূসা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ল সতর্কতার সঙ্গে। সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে যালিম গোষ্ঠী হতে রক্ষা কর।’
২২. যখন সে মাদইয়ান অভিমুখী হল, সে বলল- ‘আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে সরল সোজা পথ দেখাবেন।’
২৩. যখন সে মাদইয়ানের কূপের কাছে পৌঁছল, সে একদল লোককে দেখল (তাদের জন্তুগুলোকে) পানি পান করাতে, তাদের ছাড়া আরো দুজন স্ত্রীলোককে দেখল (নিজেদের পশুগুলোকে) আগলে রাখতে। মূসা জিজ্ঞেস করল- ‘তোমাদের দুজনের ব্যাপার কী?’ তারা বলল- ‘আমরা আমাদের জন্তুগুলোকে পান করাতে পারি না যতক্ষণ না রাখালেরা (তাদের পশুগুলোকে) সরিয়ে না নেয় (পানি পান করানোর পর), আর আমাদের পিতা খুবই বয়োবৃদ্ধ।
২৪. তখন মূসা তাদের জন্য পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিল, অতঃপর পেছন ফিরে ছায়ায় গিয়ে বসল, অতঃপর বলল- ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই করবে আমি তো তারই ভিখারী।’
২৫. তখন নারীদ্বয়ের একজন তার কাছে সলজ্জ পদে আসল। সে বলল- ‘আমার পিতা তোমাকে ডাকছে তুমি আমাদের জন্য (জন্তুগুলোকে) পানি পান করিয়েছ তোমাকে তার প্রতিদান দেয়ার জন্য। যখন মূসা তার কাছে গেল আর তার কাছে সকল ঘটনা বিবৃত করল, সে বলল- তুমি ভয় করো না, ‘তুমি যালিম গোষ্ঠীর থেকে রেহাই পেয়ে গেছ।’
২৬. স্ত্রীলোক দুটির একজন বলল- ‘হে পিতা! পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাকে নিযুক্ত করুন, আপনি যাদেরকে মজুর নিযুক্ত করবেন তাদের মধ্যে উত্তম যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’
২৭. সে বলল- ‘আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনের সঙ্গে তোমার বিয়ে দেয়ার আমি ইচ্ছে করেছি এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার কাজ করে দেবে, আর যদি দশ বছর পূর্ণ কর সেটা তোমার ইচ্ছেধীন, আমি তোমাকে কষ্টে ফেলতে চাই না, আল্লাহ ইচ্ছে করলে তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে।’
২৮. মূসা বলল- আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি রইল, আমি দু’টি মেয়াদের যেটিই পূর্ণ করি না কেন, আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করা হবে না, আমরা যে কথা বলছি, আল্লাহ তার সাক্ষী।
২৯. অতঃপর মূসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করে তার পরিবার নিয়ে যাত্রা করল, তখন সে তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিবারবর্গকে বলল- ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি, আমি তোমাদের জন্য সেখান থেকে খবর আনতে পারি কিংবা জ্বলন্ত কাষ্ঠখন্ড আনতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।’
৩০. মূসা যখন আগুনের কাছে পৌঁছল তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান দিকে বৃক্ষ থেকে তাকে আহবান দিয়ে বলা হল- ‘হে মূসা! আমিই আল্লাহ, জগতসমূহের পালনকর্তা।’
৩১. আর (বলা হল) ‘তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর যখন সে সেটাকে দেখল ছুটাছুটি করতে যেন ওটা একটা সাপ, তখন পেছনের দিকে দৌড় দিল, ফিরেও তাকাল না। (তখন তাকে বলা হল) ‘ওহে মূসা! সামনে এসো, ভয় করো না, তুমি নিরাপদ।’
৩২. তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, তা দোষমুক্ত জ্যোতির্ময় হয়ে বেরিয়ে আসবে, ভয় থেকে রক্ষার্থে তোমার হাত তোমার উপর চেপে ধর। এ দুটি হল ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের জন্য তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রমাণ, নিশ্চয় তারা পাপাচারী সম্প্রদায়।’
৩৩. মূসা বলল- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তাদের একজনকে হত্যা করেছি, কাজেই আমি আশঙ্কা করছি তারা আমাকে হত্যা করবে।’
৩৪. আর আমার ভাই হারূন আমার চেয়ে প্রাঞ্জলভাষী, কাজেই তাকে তুমি সাহায্যকারীরূপে আমার সঙ্গে প্রেরণ কর, সে আমাকে সমর্থন জানাবে। আমি আশঙ্কা করছি তারা আমাকে মিথ্যে বলে প্রত্যাখ্যান করবে।’
৩৫. আল্লাহ বললেন- ‘আমি তোমার ভ্রাতার মাধ্যমে তোমার হাতকে শক্তিশালী করব এবং তোমাদেরকে প্রমাণপঞ্জি দান করব, যার ফলে তারা তোমাদের কাছে পৌঁছতেই পারবে না। আমার নিদর্শন বলে তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরাই বিজয়ী থাকবে।
৩৬. মূসা যখন তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসল, তারা বলল- এতো অলীক যাদু মাত্র, আমাদের পূর্বপুরুষদের যামানায় এ সবের কথা তো শুনিনি।
৩৭. মূসা বলল- ‘আমার প্রতিপালক বেশ ভাল করেই জানেন কে তাঁর নিকট থেকে পথ নির্দেশ নিয়ে এসেছে এবং কার পরিণাম আখিরাতে শুভ হবে। যালিমরা কক্ষনো সাফল্য লাভ করবে না।’
৩৮. ফিরআউন বলল- ‘হে পারিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ আছে বলে আমি জানি না। কাজেই ওহে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর যাতে আমি মূসার ইলাহকে দেখতে পারি, আমার নিশ্চিত ধারণা যে, সে একজন মিথ্যেবাদী।’
৩৯. ফেরাউন ও তার বাহিনী অকারণে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল আর তারা ভেবেছিল যে, তাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না।
৪০. কাজেই আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, অতঃপর তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। এখন দেখ, যালিমদের পরিণতি কী হয়েছিল।
৪১. আমি তাদেরকে নেতা করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করত, কিয়ামতের দিন তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।
৪২. এ পৃথিবীতে তাদের পেছনে আমি লাগিয়ে দিয়েছি অভিসম্পাত আর কিয়ামতের দিন তারা হবে দুর্দশাগ্রস্ত
৪৩. আমি পূর্ববর্তী অনেক মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার পর মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম- মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা, সত্যপথের নির্দেশ ও রহমতস্বরূপ যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
৪৪. মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম তখন তুমি (তূওয়া উপত্যকার) পশ্চিম প্রান্তে ছিলে না, আর ছিলে না তুমি প্রত্যক্ষদর্শী।
৪৫. কিন্তু আমি অনেক মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ গত হয়ে গেছে। তুমি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না তাদের কাছে আমার আয়াত আবৃত্তি করার জন্য, কিন্তু (তাদের মাঝে) রসূল প্রেরণকারী আমিই ছিলাম।
৪৬. আমি যখন (মূসাকে) ডাক দিয়েছিলাম তখন তুমি তূর পর্বতের পাশে ছিলে না। কিন্তু (তোমাকে পাঠানো হয়েছে) তোমার প্রতিপালকের রহমতস্বরূপ যাতে তুমি এমন একটি সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার যাদের কাছে তোমার পূর্বে সতর্ককারী পাঠানো হয়নি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
৪৭. রসূল না পাঠালে তাদের কৃতকর্মের কারণে কোন বিপদ হলে তারা বলত- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কাছে রসূল পাঠালে না কেন, পাঠালে তোমার আয়াতসমূহের অনুসরণ করতাম আর আমরা মুমিন হয়ে যেতাম।’
৪৮. অতঃপর আমার নিকট থেকে তাদের কাছে যখন সত্য আসল তখন তারা বলল- ‘মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তাকে কেন সেরূপ দেয়া হল না? ইতোপূর্বে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তারা কি তা অস্বীকার করেনি?’ তারা বলেছিল- ‘দুটোই যাদু, একটা আরেকটার সহায়তাকারী। আর তারা বলেছিল আমরা (তাওরাত ও কুরআন) সবই প্রত্যাখ্যান করি।’
৪৯. বল, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে আল্লাহর নিকট হতে এমন কিতাব নিয়ে এসো যা সত্যপথ নির্দেশ করার ব্যাপারে এ দু (কিতাব) হতে অধিক উৎকৃষ্ট, আমি সে কিতাবের অনুসরণ করব।
৫০. অতঃপর তারা যদি তোমার কথায় সাড়া না দেয় তাহলে জেনে রেখ, তারা শুধু তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর পথ নির্দেশ ছাড়াই যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে আছে? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।
৫১. আমি তাদের কাছে ক্রমাগত বাণী পৌঁছে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
৫৬. তুমি যাকে ভালবাস তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না, বরং আল্লাহই যাকে চান সৎ পথে পরিচালিত করেন, সৎপথপ্রাপ্তদের তিনি ভাল করেই জানেন।
৫৭. তারা বলে- ‘আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথের অনুসরণ করি তাহলে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হব।’ আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ ‘হারাম’ প্রতিষ্ঠিত করিনি যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূলের নজরানা আসে আমার পক্ষ থেকে রিযক স্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।
৫৮. আমি কত জনপদকে ধ্বংস করেছি যারা তাদের (ভোগবিলাসপূর্ণ) জীবনে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছিল। এই তো তাদের বাসস্থান, তাদের পর এগুলোতে খুব অল্প লোকই বসবাস করেছে, অবশেষে আমিই মালিক রয়েছি।
৫৯. তোমার প্রতিপালক কোন জনপদ ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না তিনি তার কেন্দ্রে রসূল প্রেরণ না করেন যে তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে; আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করি না যতক্ষণ না তার বাসিন্দারা অত্যাচারী হয়।
৬০. তোমাদেরকে যে সব বস্তু দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু ও তার শোভা মাত্র। আর আল্লাহর নিকট যা কিছু আছে তা সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
৬১. যাকে আমি উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সে যা পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ সম্ভার দিয়েছি, অতঃপর যাকে কিয়ামাত দিবসে অপরাধী রূপে হাযির করা হবে?
৬২. সেদিন তাদেরকে ডাক দিয়ে তিনি বলবেন- ‘যাদেরকে তোমরা আমার শরীক গণ্য করতে তারা কোথায়?’
৬৩. যাদের জন্য শাস্তি অবধারিত হয়েছে তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! এদেরকেও আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম, যেমন আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম; আপনার সমীপে আমরা দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চাচ্ছি। এরা আমাদের ইবাদাত করতনা।
৬৪. তাদেরকে বলা হবেঃ তোমাদের দেবতাগুলিকে আহবান কর। তখন তারা তাদেরকে ডাকবে। কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবেনা। তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে; হায়! তারা যদি সৎ পথ অনুসরণ করত!
৬৫. আর সেদিন (আল্লাহ) তাদেরকে ডেকে বলবেনঃ তোমরা রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছিলে?
৬৬. সেদিন সকল তথ্য তাদের নিকট হতে বিলুপ্ত হবে এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেনা।
৬৭. তবে যে ব্যক্তি তাওবাহ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল ও সৎ কাজ করেছিল সেতো সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
৬৮. তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন আর যাকে ইচ্ছে মনোনীত করেন। এতে তাদের কোন এখতিয়ার নেই, আল্লাহ পবিত্র, মহান। তারা যাকে শরীক করে তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।
৬৯. তোমার প্রতিপালক জানেন তাদের অন্তর যা গোপন করে আর যা প্রকাশ করে।
৭০. আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ্ নেই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই- প্রথমেও আর শেষেও, বিধান তাঁরই, আর তোমাদেরকে তাঁর দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হবে।
৭১. তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ যদি তোমাদের উপর রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করতেন তাহলে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ আছে কি যে তোমাদেরকে আলো এনে দিত? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না?
৭২. বলঃ ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন তাহলে আল্লাহ ব্যতীত এমন ইলাহ কে আছে যে তোমাদেরকে রাত দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবেনা?
৭৩. তিনিই তাঁর রাহমাতের দ্বারা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন দিন ও রাত, যাতে তোমরা বিশ্রাম গ্রহণ কর এবং তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর, এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
৭৪. সেদিন তিনি তাদেরকে আহবান করে বলবেনঃ তোমরা যাদেরকে শরীক গণ্য করতে তারা কোথায়?
৭৫. প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে আমি একজন সাক্ষী আলাদা করব এবং বলবঃ তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। তখন তারা জানতে পারবে, মাবূদ হবার অধিকার আল্লাহরই এবং তারা যা উদ্ভাবন করত তা তাদের নিকট হতে অন্তর্হিত হবে।
৭৬. কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, বস্তুতঃ সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার যার চাবিগুলি বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিলঃ দম্ভ করনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেননা।
৭৭. আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তদ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর। আর দুনিয়া হতে তোমার অংশ ভুলে যেওনা; এবং পরোপকার কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেওনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না।
৭৮. সে বললঃ এই সম্পদ আমি আমার জ্ঞান বলে প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানতোনা যে, আল্লাহ তার পূর্বে ধ্বংস করেছেন বহু মানব গোষ্ঠিকে, যারা তার চেয়ে শক্তিতে ছিল প্রবল এবং ছিল অধিক প্রাচুর্যশালী? কিন্তু অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করা হয়না।
৭৯. কারূন তার সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থিত হয়েছিল জাকজমক সহকারে। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বললঃ আহা! কারূনকে যেরূপ দেয়া হয়েছে আমাদেরকে যদি তা দেয়া হত! প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান!
৮০. আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বললঃ ধিক্ তোমাদেরকে! যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার শ্রেষ্ঠ এবং ধৈর্যশীল ব্যতীত এটা কেহ পাবেনা।
৮১. অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিলনা যে আল্লাহর শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিলনা।
৮২. পূর্বদিন যারা তার অবস্থা কামনা করেছিল তারা বলতে লাগলঃ দেখলেতো আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার রিয্ক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন তাহলে আমাদেরকেও তিনি ভূগর্ভে প্রোথিত করতেন। দেখলে তো! কাফিরেরা সফলকাম হয়না।
৮৩. এটা আখিরাতের সেই আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা এই পৃথিবীতে ঔদ্ধতা প্রকাশ করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায়না। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।
৮৪. কেহ যদি সৎ কাজ করে তাহলে সে তার কাজ অপেক্ষা উত্তম ফল পাবে, আর যে মন্দ কাজ করে সেতো শাস্তি পাবে শুধু তার কাজ অনুপাতে।
৮৬. তুমি আশা করনি যে, তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হবে। এটাতো শুধু তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। সুতরাং তুমি কখনও কাফিরদের সাহায্যকারী হয়োনা।
৮৭. তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর কেহ যেন তোমাকে কিছুতেই সেগুলি হতে বিরত না রাখে। তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান করতে থাক এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।
৮৮. আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন উপাস্যকে ডেকো না, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই, তাঁর (সত্তা) ছাড়া সকল কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
মুহাম্মদ দ্বারা ১২০ তম প্রকাশ: সূরা আল মু’মিন (৪০) (বিশ্বাসী), ৬১ থেকে ৮৫ আয়াত:
৬১. আল্লাহই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত এবং আলোকজ্জ্বল করেছেন দিনকে। আল্লাহতো মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা।
৬২. এ হলেন আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক, সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই; এমতাবস্থায় তোমাদেরকে সত্য থেকে কীভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে?
৬৩. বিভ্রান্ত এভাবেই করা হয় তাদেরকে যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে।
৬৪. আল্লাহ, পৃথিবীকে করেছেন তোমাদের জন্যে বাসস্থান, আকাশকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর তোমাদের আকৃতি সুন্দর করেছেন এবং তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন পরিচ্ছন্ন রিযিক। তিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা। বিশ্বজগতের পালনকর্তা, আল্লাহ বরকতময়।
৬৫. তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তাঁকে ডাক তাঁর খাঁটি এবাদতের মাধ্যমে। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর।
৬৬. বলঃ যখন আমার কাছে আমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাদি এসে গেছে, তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যার পূজা কর, তার এবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আমাকে আদেশ করা হয়েছে বিশ্ব পালনকর্তার অনুগত থাকতে।
৬৭. তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে, পরে শুক্র বিন্দু হতে, তারপর তাদেরকে বের করেন শিশু রূপে, অতঃপর তোমরা উপনীত হও যৌবনে, তারপর হও বৃদ্ধ। তোমাদের মধ্যে কারও এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং এটা এ জন্য যে, তোমরা নির্ধারিত কাল প্রাপ্ত হও এবং যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার
৬৮. তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কিছু করা স্থির করেন তখন তিনি বলেনঃ হও, এবং তা হয়ে যায়।
৬৯. তুমি কি লক্ষ্য করনা তাদের প্রতি যারা আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্ক করে? কিভাবে তাদেরকে বিপথগামী করা হচ্ছে?
৭০. যারা অস্বীকার করে কিতাব ও যা সহ আমি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলাম তা, শীঘ্রই তারা জানতে পারবে
৭১. যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃংখল পড়িয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে
৭২. ফুটন্ত পানিতে। অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে আগুনে।
৭৩. এরপর তাদেরকে বলা হবেঃ কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা তাঁর শরীক করতে
৭৪. আল্লাহ ব্যতীত? তারা বলবেঃ তারাতো আমাদের নিকট হতে অদৃশ্য হয়েছে, বস্তুতঃ পূর্বে আমরা এমন কিছুকেই আহবান করিনি। এভাবে আল্লাহ কাফিরদের বিভ্রান্ত করেন।
৭৫. এটা এ কারণে যে, তোমরা পৃথিবীতে অযথা উল্লাস করতে এবং এ কারণে যে, তোমরা দম্ভ করতে।
৭৬. তোমরা জাহান্নামের বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর তাতে স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য, আর কতই না নিকৃষ্ট উদ্ধতদের আবাসস্থল!
৭৭. সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আমি তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করি তার কিছু যদি দেখিয়েই দিই অথবা তোমার মৃত্যু ঘটাই – তাদের প্রত্যাবর্তনতো আমারই নিকট।
৭৮. আমিতো তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম; তাদের কারও কারও কথা তোমার নিকট বিবৃত করেছি এবং কারও কারও কথা তোমার নিকট বিবৃত করিনি। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়। আল্লাহর আদেশ এলে, ন্যায় সংগতভাবে ফাইসালা হয়ে যাবে। তখন মিথ্যাশ্রয়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৭৯. আল্লাহই তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, কতক আরোহণ করার জন্য এবং কতক তোমরা আহার করে থাক।
৮০. এতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকার; তোমরা যা প্রয়োজন বোধ কর এটা দ্বারা তা পূর্ণ করে থাক এবং এদের উপর ও নৌযানের উপর তোমাদেরকে বহন করা হয়।
৮১. তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন দেখান। কাজেই আল্লাহর কোন্ নিদর্শনকে তোমরা অস্বীকার কর।
৮২. তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে তারা দেখত, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণতি কী হয়েছিল। দুনিয়ায় এদের চেয়ে তারা সংখ্যায় অধিক ছিল, আর শক্তি সামর্থ্য ও কীর্তি চিহ্নে বেশি প্রবল ছিল। কিন্তু তারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের কোন উপকারে আসেনি।
৮৩. তাদের কাছে যখন তাদের রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসল, তখন তারা তাদের নিজেদের কাছে যে জ্ঞান ও বিদ্যা ছিল তাতেই উৎফুল্ল হয়ে উঠল। অতঃপর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করত তা-ই তাদেরকে ঘিরে ফেলল।
৮৪. আমার শাস্তি তারা যখন দেখল তখন তারা বলল- আমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম আর যাদেরকে আমরা (আল্লাহর) শরীক গণ্য করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম।
৮৫. তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে এলোনা। আল্লাহর এই বিধান পূর্ব হতেই তার বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে এবং সেই ক্ষেত্রে কাফিরেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত:- অবশেষে না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা শেষ হতে চলেছে, ভেতরে ভেতরে চাপা আনন্দ কাজ করছে মুহাম্মদের! সামনে সুদিন আসবে তার; তবে তা এমনটাই অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করাবে মুহাম্মদকে, তিনি বলতে বাধ্য হবেন – ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি! আগামী তিন বছরের মানসিক চাপে কোণঠাসা আর নিজ পরিজনের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করা মানুষ থেকে তিনি হয়ে উঠবেন পুরোপুরি মরুদস্যু! তিনি যখন মক্কা ছাড়বেন, ঠিক তার আগেই আয়াত আসতে বাধ্য, “তোদের আমি দেখে নেবো!” মিলিয়ে নেবেন, জিহাদ-এর আয়াত শুরু হবে মদিনা যাবার আগেই!


{উত্তরণের উপায় খুঁজছেন মুহাম্মদ! যদি মক্কায় টিকে থাকতে হয়, তবে চাচা ‘আবু তালিব'-এর মত একাধিক সমর্থক দরকার। 

‘আবু বকর’ শরীরে পাটকাঠি আর চুপচাপ ধরনের মানুষ, ‘উসমান’ দেখতে মুহাম্মদের মত হলেও ধার করা বুদ্ধিতে চলে সবসময়! ‘সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস’ সাহসী হলেও গোত্রীয় শক্তিতে দুর্বল। মনে বড় আশা, নির্ভীক ‘উমার ইবনে হিশাম’ (আবু জেহেল) অথবা রগচটা ‘উমর ইবনে খাত্তাব’-এর মধ্যে কেউ যদি নবী হিসাবে তাকে স্বীকার করেন; তবে এ যাত্রায় তার নবীত্ব বেঁচে যায়! আজকের পর্বে মুহাম্মদের এই উত্তরণের সন্ধান পাওয়া যাবে; আর তিনি যে ‘চিনি চেয়ে সন্দেশ’ পাবেন, তাও দেখবো আমরা।

মক্কার ১৩ বছরে মুহাম্মদের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় “তিন’শ”, গড়ে প্রতি বছর ২৩ জন। যদিও এ হিসাব স্বীকার করেন না নাস্তিক/আস্তিক কোনো গবেষকই! সবার হিসাবে এই সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৫০ জনের ভেতর!

সম্ভবত, ভুলটা এমন, সবাই ‘আবু বকর’-কে গণনা করেন; কিন্তু তার তিন সন্তান আর স্ত্রী’র হিসাব করতে ভুলে যান! বদরের যুদ্ধে ৮০ জন মক্কাবাসী অংশগ্রহন করেছিলেন, তাদের প্রতি জনের যদি ২ জন পরিবারিক মুসলিম সদস্য (স্ত্রী+সন্তান) থাকে; তবে হিসাব দাঁড়ায় ১৬০+৮০= ২৪০ জন! এর সাথে হাবাশায় (ইথিওপিয়া) থাকা মুসলিমদের যোগ দিন! কী, হিসাব মিললো?

এ পর্যন্ত আমরা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কোরআনের প্রকাশ পেয়েছি; যারা কোরআনকে বিজ্ঞানময় গ্রন্থ মনে করেন, তাঁদের অনুরোধ করবো, ১ম পর্ব থেকে পুনরায় পড়ে আসুন; আর কী কী বিজ্ঞান খুঁজে পেলেন; তার তালিকা করে ঝুলিয়ে রাখুন। মক্কার ১৩ বছরের শেষ পর্যন্ত কোরআনের আয়াত এতটাই একই বিষয়ে ঘুরপাক খাবে; ভয় হয়, বিরক্ত হয়ে আপনি হয়ত এই সিরিজটি পড়া বন্ধই করে দেবেন! তবে যদি মক্কা পর্ব অতিক্রম করতে পারেন, মদিনা অংশে কোরআন পাঠের মজা খুঁজে পাবেন; যুদ্ধ, যৌনতা আর গনিমতে মাখামাখি সেসব আয়াতেও বিজ্ঞান থাকবে হোমিওপ্যাথির ৩০সি শক্তির ওষুধে মূল উপাদান থাকার সমপরিমাণ!

৮৫-৮৬ নং প্রকাশে নতুন কিছু নেই বলে দুঃখিত! তবে এতদিনে হয়ত আপনার চোখে পড়েছে, কোনো কোনো প্রকাশের মাঝে ১/২ টি করে আয়াত বাদ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই মদিনা পর্বে খুঁজে পাওয়া যাবে; যেভাবে ৩য় প্রকাশের সূরার শেষ আয়াত ৮৭ নং প্রকাশে প্রকাশ করেছেন মুহাম্মদ! 

৮৮ নং প্রকাশের কিছুদিন আগে, মাত্র ৭ দিন সময়ের মধ্যেই মুহাম্মদের চাচা; সাহসী শিকারী যোদ্ধা ‘হামজা’ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন; আর তার ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ‘উমর ইবনে খাত্তাব’ মুসলমান হয়ে যান! কীভাবে তা ঘটে, তার বিস্তারিত বর্ণনা প্রায় সকলেই জানেন; তবে এই ‘চিনি চেয়ে সন্দেশ প্রাপ্তি’ মুহাম্মদকে এতটা সুখী আর অহংকারী করে, যার ছাপ ৮৮ নং প্রকাশের প্রতিটি আয়াতে খুঁজে পাবেন; তার সাথে এই প্রকাশের ১৪ নং আয়াতে মুহাম্মদের (আল্লার) ভ্রূণবিদ্যার জ্ঞানের দৌড় নিশ্চয়ই আপনার চোখ এড়াবে না! 
পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২০ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১৩ তম চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}


নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৫ তম প্রকাশ: সূরা ক্বাফ (৫০) (ক্বাফ), ৩৮ আয়াত বাদে ১ থেকে ৪৫ আয়াত:

১. কাফ; মর্যাদাপূর্ণ কুরআনের কসম।
২. কিন্তু কাফিরেরা তাদের মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হতে দেখে বিস্ময় বোধ করে এবং বলে: এটা তো এক আশ্চর্য ব্যাপার।
৩. আমরা মরে গেলে এবং মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে গেলেও কি পুনরুত্থিত হব? এ প্রত্যাবর্তন সুদূরপরাহত।
৪. মৃত্তিকা তাদের কতটুকু গ্রাস করবে, তা আমার জানা আছে এবং আমার কাছে আছে সংরক্ষিত কিতাব।
৫. বস্তুতঃ তাদের নিকট সত্য আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে তারা সংশয়ে দোদুল্যমান।
৬. তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না আমি কীভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোনো ছিদ্রও নেই।
৭. আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং ওতে উদ্গত করেছি নয়ন-প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ
৮. এটা জ্ঞান আহরণ ও স্মরণ করার মত ব্যাপার প্রত্যেক অনুরাগী বান্দার জন্যে।
৯. আকাশ হতে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং তদ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান ও উদগত করি শস্য।
১০. ও সমুন্নত খেজুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ খেজুর
১১. বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পুনরুত্থান ঘটবে।
১২. তাদের পূর্বে মিথ্যাবাদী বলেছে নূহের সম্প্রদায়, কুপবাসীরা এবং সামুদ সম্প্রদায়।
১৩. আদ, ফেরাউন, ও লূতের সম্প্রদায়,
১৪. বনবাসীরা (আইকার অধিবাসী) এবং তোব্বা সম্প্রদায়। প্রত্যেকেই রসূলগণকে মিথ্যা বলেছে, অতঃপর আমার শাস্তির যোগ্য হয়েছে।
১৫. আমি কি প্রথমবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে, পুনঃসৃষ্টি বিষয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করছে?
১৬. আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
১৭. যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে।
১৮. মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।
১৯. মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। এটা হতেই তোমরা অব্যাহতি চেয়ে আসছ।
২০. এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন।
২১. প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে। তার সাথে থাকবে চালক ও তার কর্মের সাক্ষী।
২২. তুমি এই দিন সম্বন্ধে উদাসীন ছিলে, এখন তোমার সম্মুখ হতে পর্দা উম্মোচন করেছি। অদ্য তোমার দৃষ্টি প্রখর।
২৩. তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবে: আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই।
২৪. তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে,
২৫. কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে
২৬. যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।
২৭. তার সহচর শাইতান বলবে: হে আমাদের রাব্ব! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত।
২৮. আল্লাহ বলবেন: আমার সামনে বাক-বিতণ্ডা কর না; তোমাদেরকে আমি তো পূবেই সতর্ক করেছি।
২৯. আমার কথার রদ বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করি না।
৩০. সেই দিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব: তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবে: আরও আছে কি?
৩১. জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে খোদাভীরুদের অদূরে।
৩২. তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
৩৩. যে না দেখেই দয়াময়কে ভয় করত এবং বিনীত হৃদয়ে উপস্থিত হত।
৩৪. তোমরা এতে শান্তিতে প্রবেশ কর। এটাই অনন্তকাল বসবাসের জন্য প্রবেশ করার দিন।
৩৫. সেখানে তারা যা কামনা করবে তা-ই পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে তারও অধিক।
৩৬. আমি তাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, তারা এদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ছিল এবং দেশে-বিদেশে বিচরণ করে ফিরত। তাদের কোনো পলায়ন স্থান ছিল না।
৩৭. এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।
৩৯. অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
৪০. রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও।
৪১. শোন, যেদিন এক ঘোষণাকারী নিকটবর্তী স্থান হতে আহবান করবে
৪২. যেদিন মানুষ অবশ্যই শ্রবণ করবে মহানাদ, সেই দিনই পুনরুত্থান দিন।
৪৩. আমিই জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং সকলের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে।
৪৪. যেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে এবং মানুষ ছুটাছুটি করে বের হয়ে আসবে, এই সমবেত সমাবেশ করণ আমার জন্য সহজ।
৪৫. তারা যা বলে, তা আমি সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের ওপর জোরজবরকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৬ তম প্রকাশ: সূরা ইয়াসীন (৩৬) (ইয়াসীন), ৪৫ আয়াত বাদে ১ থেকে ৮৩ আয়াত:

১. ইয়া সীন।
২. শপথ জ্ঞানগর্ভ কুরআনের।
৩. তুমি অবশ্যই রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত।
৪. সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।
৫. কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ,
৬. যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক জাতিকে, যাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, যার ফলে তারা উদাসীন।
৭. তাদের অধিকাংশের জন্য সেই বাণী অবধারিত হয়েছে; সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
৮. আমি তাদের গলদেশে চিবুক পর্যন্ত বেড়ি পরিয়েছি, ফলে তারা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গেছে। 
৯. আমি তাদের সম্মুখে প্রাচীর ও পশ্চাতে প্রাচীর স্থাপন করেছি এবং তাদেরকে আবৃত করেছি, ফলে তারা দেখতে পায় না।
১০. তুমি তাদেরকে সতর্ক কর কিংবা না কর, তাদের জন্য উভয়ই সমান; তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
১১. তুমি শুধু তাদেরকেই সতর্ক করতে পার, যারা উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় রাহমানকে ভয় করে। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের সংবাদ দাও।
১২. আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।
১৩. তাদের নিকট উপস্থিত কর এক জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত; তাদের নিকট এসেছিল রাসূলগণ।
১৪. যখন আমি তাদের নিকট পাঠিয়েছিলাম দু'জন রাসূল, কিন্তু তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলল; তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা এবং তারা বলেছিল: আমরা তো তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি।
১৫. তারা বলল: তোমরা তো আমাদের মত মানুষ, দয়াময় কিছুই অবতীর্ণ করেন নি, তোমরা শুধু মিথ্যাই বলছ।
১৬. তারা বলল: আমাদের পালনকর্তা জানেন যে, আমরা অবশ্যই তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি।
১৭. স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।
১৮. তারা বলল: আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি। যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে তোমাদেরকে অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ হতে তোমাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবশ্যই আপতিত হবে।
১৯. তারা বলল: তোমাদের অমঙ্গল তোমাদেরই সাথে, এটা কি এ জন্য যে, আমরা তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি? বস্তুতঃ তোমরা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
২০. নগরীর প্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে এলো, সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! রাসূলদের অনুসরণ কর।
২১. অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চায় না এবং তারা সৎ পথপ্রাপ্ত। 
২২. আমার কী যুক্তি আছে যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যাঁর নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না?
২৩. আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনোই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না।
২৪. এরূপ করলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত হব।
২৫. আমি তো তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম, অতএব তোমরা আমার কথা শোন।
২৬. তাকে বলা হল: জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলে উঠল: হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত
২৭. কী কারণে আমার পালনকর্তা আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং সম্মানিত করেছেন।
২৮. আমি তার মৃত্যুর পর তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ হতে কোনো বাহিনী প্রেরণ করিনি এবং প্রেরণের প্রয়োজনও ছিল না।
২৯. ওটা ছিল শুধুমাত্র এক মহানাদ। ফলে তারা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
৩০. পরিতাপ বান্দাদের জন্য! তাদের নিকট যখনই কোনো রাসূল এসেছে, তখনই তারা তাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে।
৩১. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, তাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যারা তাদের মধ্যে ফিরে আসবে না?
৩২. এবং অবশ্যই তাদের সকলকে একত্রে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে।
৩৩. তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।
৩৪. তাতে আমি সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং উৎসারিত করি প্রস্রবণ
৩৫. যাতে তারা আহার করতে পারে এর ফলমূল হতে, অথচ তাদের হাত ওটা সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?
৩৬. পবিত্র মহান তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না, তাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।
৩৭. তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।
৩৮. এবং সূর্য ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
৩৯. এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মানযিল, অবশেষে ওটা শুষ্ক বক্র পুরাতন খেজুর শাখার আকার ধারণ করে।
৪০. সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এরং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাতার কাটে।
৪১. তাদের এক নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদের বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম।
৪২. এবং তাদের জন্যে নৌকার অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আরোহণ করে।
৪৩. আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জিত করতে পারি; সেই অবস্থায় তারা কোনো সাহায্যকারী পাবে না এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না
৪৪. কিন্তু আমারই পক্ষ থেকে কৃপা এবং তাদেরকে কিছু কাল জীবনোপভোগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে তা করি না।
৪৬. যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোনো নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়।
৪৭. যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছেন তা হতে ব্যয় কর তখন কাফিরেরা মুমিনদেরকে বলে: যাকে ইচ্ছা করলে আল্লাহ খাওয়াতে পারতেন আমরা কেন তাকে খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ।
৪৮. তারা বলে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে বল: এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে?
৪৯. তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতণ্ডাকালে।
৫০. তখন তারা অসীয়াত করতে সমর্থ হবে না এবং নিজেদের পরিবার পরিজনের নিকট ফিরেও আসতে পারবে না।
৫১. যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।
৫২. তারা বলবে: হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল হতে ওঠালো? দয়াময় (আল্লাহ) তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।
৫৩. এটা হবে শুধুমাত্র এক মহানাদ; তখনই তাদের সকলকে উপস্থিত করা হবে আমার সম্মুখে।
৫৪. আজ কারও প্রতি কোনো যুলম করা হবে না এবং তোমরা যা করতে শুধু তারই প্রতিফল দেয়া হবে।
৫৫. এ দিন জান্নাতবাসীরা আনন্দে মগ্ন থাকবে।
৫৬. তারা এবং তাদের সঙ্গিনীরা সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে।
৫৭. সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা চাইবে।
৫৮. করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।
৫৯. আর হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।
৬০. হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের উপাসনা করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
৬১. আর আমার উপাসনা কর, এটাই সরল পথ? 
৬২. শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বোঝনি?
৬৩. এটা সেই জাহান্নাম যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।
৬৪. আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর; কারণ তোমরা একে অবিশ্বাস করেছিলে।
৬৫. আমি আজ এদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেব। এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের।
৬৬. আমি ইচ্ছা করলে এদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিতে পারতাম, তখন এরা পথ চলতে চাইলে কী করে দেখতে পেত?
৬৭. এবং আমি ইচ্ছা করলে এদেরকে স্ব স্ব স্থানে বিকৃত করে দিতে পারতাম, ফলে এরা চলতে পারতো না এবং ফিরেও আসতে পারতো না।
৬৮. আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিই। তবুও কি তারা বোঝে না?
৬৯. আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দিইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।
৭০. যাতে সে সতর্ক করতে পারে জীবিতদেরকে এবং যাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা সত্য হতে পারে।
৭১. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, নিজ হতে সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে তাদের জন্য আমি সৃষ্টি করেছি গৃহপালিত পশু এবং তারাই ওগুলির অধিকারী।
৭২. এবং আমি ওগুলিকে তাদের বশীভূত করেছি। ওগুলির কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা আহার করে।
৭৩. তাদের জন্য ওগুলিতে রয়েছে বহু উপকারিতা, আর আছে পানীয় বস্তু। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না?
৭৪. তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।
৭৫. অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।
৭৬. সুতরাং তাদের কথা তোমাকে যেন চিন্তিত না করে, নিশ্চয় আমি জানি, তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে।
৭৭. মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডাকারী।
৭৮. আর সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। বলে: অস্থিতে কে প্রাণ সঞ্চার করবে, যখন ওটা পচে গলে যাবে?
৭৯. বল: ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই, যিনি ওটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক অবগত।
৮০. তিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ হতে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা ওটা দ্বারা প্রজ্জ্বলিত কর।
৮১. যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।
৮২. তিনি যখন কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’, তখনই তা হয়ে যায়।
৮৩. অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৭ তম প্রকাশ: সূরা আল আছর (১০৩) (সময়), ৩ নং আয়াত:

৩. কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে পরস্পরকে উদ্ধুদ্ধ করে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৮ তম প্রকাশ: সূরা আল মু'মিনূন (২৩) (মুমিনগণ), ১২ থেকে ১১৮ আয়াত:

১২. আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে।
১৩. অতঃপর আমি ওকে শুক্রবিন্দু রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে।
১৪. পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি মাংসপিণ্ডে এবং মাংসপিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়!
১৫. এরপর অবশ্যই তোমরা মৃত্যু বরণ করবে।
১৬. অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে।
১৭. আমিতো তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সপ্ত স্তর এবং আমি সৃষ্টি বিষয়ে অসতর্ক নই।
১৮. এবং আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে, অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষিত করি; আমি ওকে অপসারিত করতেও সক্ষম।
১৯. অতঃপর আমি ওটা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল; আর তা হতে তোমরা আহার কর।
২০. এবং সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ, যা জন্মে সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় ভোজনকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন।
২১. এবং তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর।
২২. তাদের পিঠে ও জলযানে তোমরা আরোহণ করে চলাফেরা করে থাক।
২৩. আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট। সে বলেছিল: হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?
২৪. তার সম্প্রদায়ের কাফির প্রধানরা বলেছিল: এ লোক তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, সে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতা পাঠাতেন; আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের যামানায় এরূপ ঘটেছে বলে শুনিনি।
২৫. সে তো এক উম্মাদ ব্যক্তি বৈ নয়; সুতরাং এর সম্পর্কে তোমরা কিছুকাল অপেক্ষা কর।
২৬. নূহ বলেছিল: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর; কেননা, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
২৭. অতঃপর আমি তার কাছে আদেশ প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরি কর। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও, প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জত হবে।
২৮. যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় আরোহণ করবে, তখন বল: আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদেরকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন।
২৯. আরও বল: পালনকর্তা, আমাকে কল্যাণকর ভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।
৩০. এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে; আমি তো তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম।
৩১. অতঃপর তাদের পর আমি অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম।
৩২. এবং তাদেরই একজনকে তাদের মধ্যে রসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই। তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
৩৩. তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা যারা কাফের ছিল, পরকালের সাক্ষাৎকে মিথ্যা বলত এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছিলাম, তারা বলল: এতো আমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে।
৩৪. যদি তোমরা তোমাদেরই মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৩৫. সে কি তোমাদেরকে এই ওয়াদা দেয় যে, তোমরা মারা গেলে এবং মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলে তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?
৩৬. অনেক দূর, তোমাদের যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা অনেক দূর।
৩৭. আমাদের পার্থিবজীবনই একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই এবং আমরা পুনরুত্থিত হবো না।
৩৮. সে তো এমন ব্যক্তি বৈ নয়, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করি না।
৩৯. সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
৪০. আল্লাহ বললেন: কিছু দিনের মধ্যে তারা সকাল বেলা অনুতপ্ত হবে।
৪১. অতঃপর সত্য সত্যই এক বিকট শব্দ তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি তাদেরকে তরঙ্গ তাড়িত আবর্জনা সদৃশ করে দিলাম; সুতরাং ধ্বংস হয়ে গেল পাপী সম্প্রদায়।
৪২. এরপর তাদের পরে আমি বহু সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।
৪৩. কোনো জাতিই তার নির্ধারিত কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, আর না পারে বিলম্বিত করতে।
৪৪. অতঃপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোনো জাতির নিকট তাদের রাসূল এসেছে, তখনই তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এককে ধ্বংস করলাম; আমি তাদেরকে কাহিনীর বিষয় করেছি; সুতরাং ধ্বংস হোক অবিশ্বাসীরা!
৪৫. অতঃপর আমি আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ মূসা ও তার ভাই হারূনকে পাঠালাম
৪৬. ফেরআউন ও তার অমাত্যদের কাছে। অতঃপর তারা অহংকার করল এবং তারা উদ্ধত সম্প্রদায় ছিল।
৪৭. তারা বলল: আমরা কি আমাদের মতই এ দুই ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব; অথচ তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস?
৪৮. অতঃপর তারা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হল।
৪৯. আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ প্রাপ্ত হয়।
৫০. এবং আমি মরিয়ম তনয় ও তাঁর মাতাকে এক নিদর্শন দান করেছিলাম। এবং তাদেরকে এক অবস্থানযোগ্য স্বচ্ছ পানি বিশিষ্ট টিলায় আশ্রয় দিয়েছিলাম।
৫১. হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎ কাজ কর; তোমরা যা কর, সেই সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত।
৫২. এবং তোমাদের এই যে জাতি এটা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় কর।
৫৩. কিন্তু মানুষ নিজেদের মধ্যে তাদের কর্তব্য কর্মকে বহুধা বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট।
৫৪. সুতরাং কিছুকালের জন্য তাদেরকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও।
৫৫. তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্য স্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি তদ্দারা
৫৬. তাদের জন্য সর্ব প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বোঝে না
৫৭. নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত,
৫৮. যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে,
৫৯. যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না
৬০. এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে,
৬১. তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।
৬২. আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন করি না। আমার এক কিতাব আছে, যা সত্য ব্যক্ত করে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
৬৩. না, তাদের অন্তর এ বিষয়ে অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন, এ ছাড়া তাদের আরও কাজ রয়েছে, যা তারা করছে।
৬৪. এমনকি, যখন আমি তাদের ঐশ্বর্যশালী লোকদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করব, তখনই তারা চিৎকার জুড়ে দেবে।
৬৫. অদ্য চীৎকার করো না। তোমরা আমার কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাবে না।
৬৬. আমার আয়াত তোমাদের কাছে পাঠ করা হত, কিন্তু তোমরা পিছন ফিরে সরে পড়তে
৬৭. অহংকার করে এ বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করে যেতে।
৬৮. তাহলে কি তারা এই বাণী অনুধাবন করে না? অথচ তাদের নিকট কি এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট আসেনি?
৬৯. অথচ তারা কি তাদের রাসূলকে চেনে না বলে তাকে অস্বীকার করে?
৭০. অথবা তারা কি বলে যে, সে উন্মাদ? বস্তুতঃ সে তাদের নিকট সত্য এনেছে এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।
৭১. সত্য যদি তাদের কামনার অনুগামী হত তাহলে বিশৃংখল হয়ে পড়ত আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং ওদের মধ্যবর্তী সব কিছুই। পক্ষান্তরে আমি তাদেরকে দিয়েছি উপদেশ, কিন্তু তারা উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৭২. অথবা তুমি কি তাদের কাছে কোন প্রতিদান চাও? তোমার পালনকর্তার প্রতিদানই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিয্কদাতা।
৭৩. তুমি তো তাদেরকে সরল পথে আহবান করছ।
৭৪. যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তারা তো সরল পথ হতে বিচ্যুত।
৭৫. আমি তাদের ওপর দয়া করলেও এবং তাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করলেও তারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরতে থাকবে।
৭৬. আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের রবের প্রতি নত হল না এবং কাতর প্রার্থনাও করল না।
৭৭. অবশেষে যখন আমি তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দ্বার খুলে দিই, তখনই তারা হতাশ হয়ে পড়ে।
৭৮. তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।
৭৯. তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট একত্রিত করা হবে।
৮০. তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, আর তাঁরই অধিকারে রাত ও দিনের পরিবর্তন, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
৮১. এতদসত্ত্বেও তারা তাই বলে, যেমন বলেছিল পূর্ববর্তীরা।
৮২. তারা বলে: আমাদের মৃত্যু ঘটলে এবং আমরা মাটি ও অস্থিতে পরিণত হলেও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?
৮৩. অতীতে আমাদেরকে এবং আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এই ওয়াদাই দেয়া হয়েছে। এটা তো পূর্ববতীদের কল্পকথা বৈ কিছুই নয়।
৮৪. জিজ্ঞেস কর: এই পৃথিবী এবং এতে যা আছে তা কার, যদি তোমরা জান তো বল?
৮৫. এখন তারা বলবে: সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
৮৬. বলুন: সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?
৮৭. এখন তারা বলবে: আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
৮৮. জিজ্ঞেস কর: যদি তোমরা জান, তাহলে বল, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, কে আশ্রয় দান করেন, যাঁর ওপর আশ্রয়দাতা নেই?
৮৯. এখন তারা বলবে: আল্লাহর। বলুন: তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে? 
৯০. বরং আমি তো তাদের নিকট সত্য পৌঁছিয়েছি; কিন্তু তারা মিথ্যাবাদী।
৯১. আল্লাহ কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।
৯২. তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী। তারা শরীক করে, তিনি তা থেকে ঊর্ধ্বে।
৯৩. বল: হে আমার পালনকর্তা! যে বিষয়ে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে, তা যদি আপনি আমাকে দেখাতেন
৯৪. হে আমার পালনকর্তা! তবে আপনি আমাকে গোনাহগার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত করবেন না।
৯৫. আমি তাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছি, তা আমি তোমাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম।
৯৬. মন্দের জওয়াবে তাই বল, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।
৯৭. আর বল: হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি,
৯৮. এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।
৯৯. যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলে: হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ
১০০. যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আমি পূর্বে করিনি। না এটা হবার নয়; এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত।
১০১. অতঃপর যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, এবং একে অপরের খোঁজখবর নেবে না।
১০২. সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম।
১০৩. আর যাদের পাল্লা হালকা হবে ,তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে।
১০৪. আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।
১০৫. তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি হত না? অথচ তোমরা ওগুলি অস্বীকার করতে!
১০৬. তারা বলবে: হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দুর্ভাগ্যের হাতে পরাভূত ছিলাম এবং আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি।
১০৭. হে আমাদের পালনকর্তা! এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা গোনাহগার হব।
১০৮. আল্লাহ বলবেন: তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বল না।
১০৯. আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত: হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের উপর দয়া করুন, আপনি তো দয়ালুগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
১১০. কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে।
১১১. আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।
১১২. আল্লাহ বলবেন: তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?
১১৩. তারা বলবে: আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ, আপনি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন।
১১৪. আল্লাহ বলবেন: তোমরা তাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরা জানতে?
১১৫. তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?
১১৬. মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ব্যতীত কোনো মাবূদ নেই; সম্মানিত আরশের তিনিই মালিক।
১১৭. যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার সনদ নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।
১১৮. বল: হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: মুহাম্মদের হাতে আর এক বছর সময় আছে! ‘আবু জেহেল’ মুহাম্মদকে এতটাই বিপদে ফেলে দেবেন, আয়াত প্রকাশের স্বাভাবিক সকল গতি হারিয়ে যাবে! নবুয়্যতের ৭ থেকে ১৩ বছরে (৬ বছর সময়ে) মুহাম্মদ যত প্রকাশ নিয়ে আসবেন, তার ভাষা হবে এখনকার থেকে ভিন্নতর; তাতে চ্যালেঞ্জের জবাব থাকবে, চাঁদ দু'ভাগ করার ভণ্ডামি থাকবে; আর একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে না পারার আকুতি নিয়ে মিরাজ/মেরাজ গমন থাকবে; সবশেষে আমাদের জন্য থাকবে একরাশ পাঠ-বিরক্তি!
{কোরআন যদি সকল জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়, এবং নবী মুহাম্মদ কোরানের রচয়িতা হয়ে থাকেন; তবে এইসব তথ্যের উৎস কী? আর মক্কার মত মরুভূমি-ঘেরা গোত্র-সভ্যতার কেন্দ্রে থেকে কীভাবে সংগ্রহ করলেন এতসব তথ্য? প্রশ্ন জাগা কি স্বাভাবিক নয়!

চলুন উত্তর খুঁজি ভিন্নভাবে! একজন কাব্য-সাহিত্য-সঙ্গীতস্রষ্টার মনোজগত যদি বোঝার চেষ্টা করি, যখন কবি-লেখক-গায়কদের কোনো বিষয়ের বোধ-ঘোর-মোহভাষা জাগ্রত হয়, তা তার কবিতায়-লেখায়-গানে প্রকাশ হয়; লক্ষ্য করলে দেখবেন, এই বোধ-ঘোর-মোহভাষা কিছুদিন থেকে কিছুমাস পর্যন্ত একই ধারায় একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশ হতে থাকে। বলা যেতে পারে, কবি-লেখক-গায়কদের বৃত্তবন্দী থাকতে হয় তখন।

প্রিয় পাঠক, গত পর্বের সাথে এই পর্বের সকল প্রকাশ মুহাম্মদের এই একই ‍বিষয়ে ঘুরপাক খাওয়া নির্দেশ করে। কেবলমাত্র আয়াত প্রকাশের কারণের ভিন্নতা ছাড়া কিছুই নতুন নেই, ভাষা-গল্প-লোভ-ক্ষোভ-হিংসা সব একই একই! আর ১ থেকে ৯২ নং প্রকাশ পর্যন্ত নবী মুহাম্মদ যতটুকু তথ্য-গল্প-জ্ঞান প্রসব করেছেন, তার উৎস মক্কা, সিরিয়া ও উকাজের বাৎসরিক মেলার সংমিশ্রণে! এ পর্বের ৯২ নং প্রকাশ সম্পর্কে যতটুকু তথ্য ইসলামী সূত্রে জানতে পারি, তা নির্দেশ করে - মুহাম্মদ প্রতিবছর উকাজের মেলা চষে বেড়াতেন। সেইসাথে হাত ধরে ধরে উল্লেখপূর্বক প্রমাণ করা সম্ভব, মক্কায় শতাধিক খ্রিষ্টান, ইহুদি ও এক-ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষের বসবাস ছিলো; তাই ইসলাম এবং কোরআনের মক্কা অধ্যায়ের বেশিরভাগ গল্পের মূল উৎস মক্কা নিজেই, একজন গাঁজা সেবনকারী যেমন জানেন তার শহরে কোথায় গাঁজা পাওয়া যায়, মধুর খোঁজ তিনি রাখেন না, তেমনই কবি চেনে কবি, ব্যবসায়ী চেনে ব্যবসায়ীকে!

গ্রামীণ প্রবাদ বলে:
রতনে রতন চেনে
ভোমরা চেনে মধু;
লঞ্চের খালাসী চেনে
চিংড়ী মাছ আর কদু;
আর শুয়োরে কচু!

মুহাম্মদ তেমনটাই তার প্রয়োজনীয় তথ্যের ৮০ শতাংশ মক্কা থেকেই সংগ্রহ করেছেন; তার সফলতা এটাই, তিনি সকল তথ্যকে মিশ্রিত করে নতুন বোতলে ছন্দময় সুপেয় (আরবীতে অবশ্যই) সরবত তৈরি করতে পেরেছিলেন! তবে তাকে আর যা-ই বলেন না কেনো, সকল জ্ঞানের ভাণ্ডার বলে 'জ্ঞান' শব্দটির অপমান করবেন না।

মুহাম্মদ ব্যবসায়ী ছিলেন; এমনকি মক্কা থেকে পালিয়ে মদিনায় চলে আসার বছর পর্যন্ত মুহাম্মদ সরাসরি নিজের এবং তার অনুসারীদের অর্থ বাণিজ্য কাফেলায় বিনিয়োগ করতেন। নিজেকে নবী দাবী করার আগ পর্যন্ত, বিশেষত ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বাণিজ্য কাফেলায় গমনও তার কাজের অংশ ছিলো। পঁয়ত্রিশ বছর বয়স থেকে মুহাম্মদ পাল্টে যান; পাগলামী, ধ্যান আর অন্তর্মুখী স্বভাব তাকে ৫ বছর সময়ে তথ্য-উপাত্তের বন্টন করতে শেখায়; এবং ৪০ বছর বয়সে এসে তারই যে প্রকাশ শুরু হয়; তাই আজ আমরা কোরআন নামে জানি!

ওপরের দুটো অধ্যায়ের প্রতিটি শব্দের তথ্য প্রমাণসহ ব্যাখ্যা করা সম্ভব, কিন্তু তার জন্য এ সিরিজটিকে ভিন্ন রাস্তায় নেবার প্রয়োজন আপাতত নেই বলে মনে হচ্ছে। শুধু একটা মজার তথ্য দিই: ৩৫ বছর বয়সে মুহাম্মদের পাল্টে যাবার পেছনে ছিলো একটি মৃত্যু, একটি বন্যা, একটি নতুন শিশুসন্তান, মুহাম্মদের নগ্নতা, একটি অগ্নিকাণ্ড ও একটি পুনর্নির্মাণ! 

মানুষ মুহাম্মদের ‘নবী মুহাম্মদ’ হওয়ার আগের জীবন এতটাই বিচিত্র আর বহুমাত্রিক ছিলো, তার সকল প্রমাণ কোরআন, হাদিস আর প্রাচীন নবী-জীবনীগ্রন্থের পাতায় পাতায় লুকিয়ে রাখা থাকলেও, কেন তা আজ পর্যন্ত তুলে আনা হয়নি; ভাবতে খুব অবাক লাগে! 

চল্লিশ বছরের ভিন্নমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী, এক-ঈশ্বরবাদকে জানার চেষ্টা, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে না পাওয়ার যন্ত্রণা, শরীর-মস্তিস্কের অসুখ আর পারিবারিক সূত্রে পাওয়া সুপ্ত কাব্যপ্রতিভার সংমিশ্রণে মুহাম্মদ জন্ম দিয়েছেন কোরআন! যা তার মৃত্যু পরবর্তী ৩০০ বছরে ব্যাখ্যা-ব্যাখ্যায়-শ্রদ্ধা-শ্রদ্ধায় অলৌকিক মহাগ্রন্থের রূপ নিয়েছে। এর বাইরে কোরআনকে একটি চর্বিতচর্বন জীবনকাব্য হিসেবে মর্যাদা দেওয়া চলে বড়জোর! 

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২১ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১৪ তম চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৯ তম প্রকাশ: সূরা হা-মীম সেজদাহ্ (৪১) (সুস্পষ্ট বিবরণ), ১ থেকে ৮ আয়াত:

১. হা মীম।
২. ইহা দয়াময়, পরম দয়ালুর নিকট হতে অবতীর্ণ।
৩. এটা এক কিতাব, বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে এর আয়াতসমূহ আরবি ভাষায়, কুরআনরূপে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য
৪. সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা শোনে না।
৫. তারা বলে: তুমি যার প্রতি আমাদেরকে আহবান করছ সেই বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আচ্ছাদিত, কর্ণে আছে বধিরতা এবং তোমার ও আমাদের মধ্যে আছে অন্তরাল; সুতরাং তুমি তোমার কাজ কর এবং আমরা আমাদের কাজ করি।
৬. বল, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, অতএব তাঁর দিকেই সোজা হয়ে থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ,
৭. যারা যাকাত প্রদান করেনা এবং তারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী।
৮. যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯০ তম প্রকাশ: সূরা আয্-যুখরুফ (৪৩) (সোনাদানা), ১ থেকে ৫৩, ৫৫ থেকে ৬৫, ৮১ থেকে ৮৯ আয়াত:

১. হা, মীম।
২. শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের!
৩. আমি এটা অবতীর্ণ করেছি আরাবী ভাষায় কুরআন রূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
৪. নিশ্চয় এ কোরআন আমার কাছে সমুন্নত অটল রয়েছে লওহে মাহফুযে।
৫. আমি কি তোমাদের হতে এই উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নিব এই কারণে যে, তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়?
৬. পূর্ববর্তী লোকদের কাছে আমি অনেক রসূলই প্রেরণ করেছি।
৭. এবং যখনই তাদের নিকট কোনো নবী এসেছে, তারা তাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে।
৮. তাদের মধ্যে যারা এদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল, তাদেরকে আমি ধ্বংস করেছিলাম; আর এভাবে চলে আসছে পূর্ববর্তীদের অনুরূপ দৃষ্টান্ত।
৯. তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে: এগুলি তো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহ
১০. যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন শয্যা এবং ওতে করেছেন তোমাদের চলার পথ, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার;
১১. এবং যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন পরিমিত। অতঃপর তদ্দ্বারা আমি মৃত ভূ-ভাগকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। তোমরা এমনিভাবে উত্থিত হবে।
১২. এবং যিনি যুগলসমূহের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যাতে তোমরা আরোহণ কর
১৩. যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল: পবিত্র ও মহান তিনি যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে।
১৪. আমরা অবশ্যই আমাদের পালনকর্তার দিকে ফিরে যাব।
১৫. তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে তাঁর অংশ সাব্যস্ত করেছে। মানুষ তো স্পষ্টই অকৃতজ্ঞ।
১৬. তিনি কি তাঁর সৃষ্টি থেকে কন্যাসন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন পুত্রসন্তান?
১৭. দয়াময় আল্লাহর প্রতি তারা যা আরোপ করে, তাদের কেহকে সেই সন্তানের সংবাদ দেয়া হলে তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে দুঃসহ মর্ম যাতনায় ক্লিষ্ট হয়।
১৮. তারা কি আল্লাহর প্রতি আরোপ করে এমন সন্তান, যে অলংকারে আবৃত হয়ে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ?
১৯. তারা নারী স্থির করে ফেরেশতাগণকে, যারা আল্লাহর বান্দা। তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে? এখন তাদের দাবি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।
২০. তারা বলে: দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই; তারা তো শুধু মিথ্যাই বলছে।
২১. আমি কি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোনো কিতাব দিয়েছি, অতঃপর তারা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে?
২২. বরং তারা বলে: আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।
২৩. এভাবে তোমার পূর্বে যখনই আমি কোনো জনপদে সতর্ককারী (নবী-রসূল) পাঠিয়েছি, তখনই তাদের সম্পদশালী লোকেরা বলেছে - আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এক ধর্মমত পালনরত পেয়েছি আর আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।
২৪. সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের ওপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে? তারা বলত, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না।
২৫. অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দিলাম; দেখ, মিথ্যাচারীদের পরিণাম কী হয়েছে!
২৬. স্মরণ কর, ইবরাহীম তার পিতা এবং সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমরা যাদের পূজা কর, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
২৭. সম্পর্ক আছে শুধু তাঁরই সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন।
২৮. এ কথাটিকে সে অক্ষয় বাণীরূপে তার সন্তানদের মধ্যে রেখে গেছে, যাতে তারা আল্লাহর দিকেই আকৃষ্ট থাকে।
২৯. বরং আমিই তাদেরকে এবং তাদের পূর্বপুরুষদেরকে সুযোগ দিয়েছিলাম ভোগের; অবশেষে তাদের নিকট এলো সত্য ও স্পষ্ট প্রচারক রাসূল।
৩০. যখন সত্য তাদের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, এটা যাদু, আমরা একে মানি না।
৩১. এবং তারা বলে: এই কুরআন কেন অবতীর্ণ করা হল না দুই জনপদের কোনো প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির ওপর?
৩২. তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম।
৩৩. সত্য প্রত্যাখ্যানে মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে, এই আশংকা না থাকলে দয়াময় আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে, তাদেরকে আমি দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি, যাতে তারা আরোহণ করে।
৩৪. এবং তাদের গৃহের জন্য দিতাম রৌপ্য নির্মিত দরজা, বিশ্রামের জন্য পালঙ্ক, যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত।
৩৫. এবং স্বর্ণের নির্মিতও। আর এই সবই তো শুধু পার্থিব জীবনের ভোগ সম্ভার। মুত্তাকীদের জন্য তোমার রবের নিকট রয়েছে আখিরাতের কল্যাণ।
৩৬. যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শাইতান, অতঃপর সে হয় তার সহচর।
৩৭. শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।
৩৮. অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে শাইতানকে বলবে: হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত! কত নিকৃষ্ট সহচর সে!
৩৯. যেহেতু তোমরা সীমালংঘন করেছিলে, তাই আজ তোমাদের এই অনুতাপ তোমাদের কোনো কাজে আসবে না, তোমরা তো সবাই শাস্তিতে শরীক।
৪০. তুমি কি শোনাতে পারবে বধিরকে? অথবা যে অন্ধ এবং যে ব্যক্তি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে, তাকে কি পারবে সৎ পথে পরিচালিত করতে?
৪১. আমি যদি তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদেরকে শাস্তি দিব।
৪২. অথবা আমি তাদেরকে যে শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করেছি, যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তাহলে তাদের ওপর আমার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।
৪৩. অতএব তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে, তাকে তুমি সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর। নিশ্চয় তুমি সরল পথের ওপর রয়েছ।
৪৪. নিশ্চয়ই ইহা (কুরআন) তোমার এবং তোমার সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ, তোমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।
৪৫. তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর, আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য স্থির করেছিলাম, যার ইবাদাত করা যায়?
৪৬. মূসাকে আমি আমার নিদর্শনসহ ফিরআউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠিয়েছিলাম; সে বলেছিল: আমি জগতসমূহের রবের পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল।
৪৭. সে তাদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসা মাত্র তারা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগল।
৪৮. আমি তাদেরকে এমন কোনো নিদর্শন দেখাইনি, যা ওর অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
৪৯. তারা বলেছিল: হে যাদুকর! তোমার প্রতিপালকের নিকট তুমি আমাদের জন্য তা প্রার্থনা কর, যা তিনি তোমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন; তাহলে আমরা অবশ্যই সৎ পথ অবলম্বন করব।
৫০. অতঃপর যখন আমি তাদের উপর হতে শাস্তি বিদূরিত করলাম, তখনই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে লাগল।
৫১. ফিরআউন তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বলে ঘোষণা করল: হে আমার সম্প্রদায়! মিসর রাজ্য কি আমার নয়? এই নদীগুলি আমার পাদদেশে প্রবাহিত, তোমরা কি দেখ না?
৫২. আমি কি শ্রেষ্ঠ নই এই ব্যক্তি হতে, যে হীন এবং স্পষ্ট কথা বলতে অক্ষম?
৫৩. মূসাকে কেন দেয়া হল না স্বর্ণবলয়, অথবা তার সাথে কেন এলো না মালাইকা/ফেরেশতা দলবদ্ধভাবে?
৫৫. যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, তখন আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম এবং নিমজ্জিত করলাম তাদের সবাইকে।
৫৬. অতঃপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত।
৫৭. যখন মারইয়াম তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমার সম্প্রদায় শোরগোল শুরু করে দেয়।
৫৮. এবং বলে: আমাদের দেবতাগুলি শ্রেষ্ঠ, না ঈসা? তারা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে এ কথা বলে। বস্তুত তারা তো শুধু বাক-বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়।
৫৯. সে তো ছিল আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বাণী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।
৬০. আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে মালাইকা/ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হত।
৬১. ঈসা তো কিয়ামাতের নিদর্শন; সুতরাং তোমরা কিয়ামাতে সন্দেহ পোষণ কর না এবং আমাকে অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।
৬২. শাইতান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই নিবৃত্ত না করে, সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
৬৩. ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ এলো, তখন সে বলল: আমি তো তোমাদের নিকট এসেছি প্রজ্ঞাসহ এবং তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।
৬৪. আল্লাহই আমার প্রতিপালক এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তাঁর ইবাদাত কর; এটাই সরল পথ।
৬৫. অতঃপর তাদের কতিপয় দল মতানৈক্য সৃষ্টি করল; সুতরাং যালিমদের জন্য দুর্ভোগ, যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির।
৮১. বল, দয়াময় আল্লাহর কোন সন্তান থাকলে আমি সর্বপ্রথম তার এবাদত করব।
৮২. তারা যা বর্ণনা করে, তা থেকে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের পালনকর্তা, আরশের পালনকর্তা পবিত্র।
৮৩. অতএব, তাদেরকে বাকচাতুরী ও ক্রীড়া-কৌতুক করতে দিন সেই দিবসের সাক্ষাত পর্যন্ত, যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়।
৮৪. তিনিই উপাস্য নভোমণ্ডলে এবং তিনিই উপাস্য ভুমণ্ডলে। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ,
৮৫. বরকতময় তিনিই, নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু যার। তাঁরই কাছে আছে কেয়ামতের জ্ঞান এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
৮৬. তিনি ব্যতীত তারা যাদের পুজা করে, তারা সুপারিশের অধিকারী হবে না, তবে যারা সত্য স্বীকার করত ও বিশ্বাস করত।
৮৭. তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে তাহলে তারা অবশ্যই বলবে: আল্লাহ! তবুও তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?
৮৮. রসূলের এই উক্তির কসম, হে আমার পালনকর্তা, এ সম্প্রদায় তো বিশ্বাস স্থাপন করে না।
৮৯. অতএব, আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং বলুন, ‘সালাম’। তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯১ তম প্রকাশ: সূরা আল আম্বিয়া (২১) (নবীগণ), ১ থেকে ১১২, আয়াত:

১. মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
২. যখনই তাদের নিকট তাদের রবের কোনো নতুন উপদেশ আসে, তখন তারা তা শ্রবণ করে কৌতুকচ্ছলে।
৩. তাদের অন্তর থাকে অমনোযোগী, সীমা লংঘনকারীরা গোপনে পরামর্শ করে: এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, তবুও কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে?
৪. বল: আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কথাই আমার পালনকর্তা অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৫. তারা এটাও বলে: এ সব অলীক কল্পনা হয় সে উদ্ভাবন করেছে, না হয় সে একজন কবি; অতএব সে আনয়ন করুক আমাদের নিকট এক নিদর্শন, যেরূপ নিদর্শনসহ প্রেরিত হয়েছিল পূর্ববর্তীগণ।
৬. তাদের পূর্বে যে সব জনপদ আমি ধ্বংস করেছি, ওর অধিবাসীরা ঈমান আনেনি; তাহলে কি তারা ঈমান আনবে?
৭. তোমার পূর্বে আমি অহীসহ মানুষই পাঠিয়েছিলাম; তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর।
৮. আর আমি তাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা আহার্য গ্রহণ করত না। তারা চিরস্থায়ীও ছিল না।
৯. অতঃপর আমি তাদের প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলাম, আমি তাদেরকে ও যাদেরকে ইচ্ছা রক্ষা করেছিলাম এবং যালিমদেরকে করেছিলাম ধ্বংস।
১০. আমি তো তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
১১. আমি কত জনপদের ধ্বংস সাধন করেছি যার অধিবাসীরা ছিল পাপী এবং তাদের পর সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি।
১২. অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখনই তারা জনপদ হতে পালাতে লাগল।
১৩. তাদেরকে বলা হল: পলায়ন কর না এবং ফিরে এসো তোমাদের ভোগ সম্ভারের নিকট এবং তোমাদের আবাসগৃহে, হয়তো এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হতে পারে।
১৪. তারা বলল: হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম।
১৫. তাদের এই আর্তনাদ চলতে থাকে, যতক্ষণ না আমি তাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত আগুন সদৃশ করি।
১৬. আকাশ ও পৃথিবী এবং যা এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।
১৭. আমি যদি ক্রীড়ার উপকরণ চাইতাম, তাহলে আমি আমার নিকট যা আছে, তা দিয়েই ওটা করতাম, আমি তা করিনি।
১৮. কিন্তু আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার ওপর; ফলে ওটা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা যা বলছ তার জন্য।
১৯. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তা তাঁরই, তাঁর সান্নিধ্যে যারা আছে তারা অহংকার করে তাঁর ইবাদাত করা হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।
২০. তারা দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, শৈথিল্য করে না।
২১. তারা মাটি হতে তৈরি যে সব দেবতা গ্রহণ করেছে, সেগুলি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম?
২২. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ছাড়া বহু উপাস্য থাকত, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।
২৩. তিনি যা করেন, সেই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।
২৪. তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? বল, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার সঙ্গীদের কথা এবং এটাই আমার পুর্ববর্তীদের কথা। বরং তাদের অধিকাংশই সত্য জানে না; অতএব তারা টালবাহানা করে।
২৫. তোমার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর।
২৬. তারা বলে: দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা।
২৭. তারা তাঁর আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে।
২৮. তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত। তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত।
২৯. তাদের মধ্যে যে বলবে: তিনি ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি প্রতিফল দিব জাহান্নাম, এভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
৩০. যারা কুফরী করে, তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?
৩১. এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক টলে না যায় এবং আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ, যাতে তারা গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারে।
৩২. এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ। কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৩৩. তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, সূর্য আর চন্দ্র, প্রত্যেকেই তার চক্রাকার পথে সাঁতার কাটছে।
৩৪. তোমার পূর্বেও আমি কোনো মানুষকে চিরস্থায়ী করিনি। তুমি যদি মারা যাও, তাহলে তারা কি চিরস্থায়ী হবে?
৩৫. জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করি এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
৩৬. কাফিরেরা যখন তোমাকে দেখে, তখন তারা তোমাকে শুধু বিদ্রূপের পাত্র রূপেই গ্রহণ করে। তারা বলে: এই কি সে যে তোমাদের দেবতাগুলির সমালোচনা করে? অথচ তারাই তো ‘রাহমান’ এর উল্লেখের বিরোধিতা করে।
৩৭. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাড়াহুড়ার প্রবণতা দিয়ে। অচিরেই আমি তোমাদেরকে দেখাব আমার নিদর্শনাবলী। সুতরাং তোমরা তাড়াহুড়া করো না।
৩৮. আর তারা বলে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে বল, এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে?
৩৯. হায়! যদি কাফিরেরা সেই সময়ের কথা জানতো, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাত হতে আগুন প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না।
৪০. বস্তুত ওটা তাদের উপর আসবে অতর্কিতে এবং তাদেরকে হতভম্ব করে দেবে; ফলে তারা ওটা রোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবে না।
৪১. তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল; পরিণামে তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তা বিদ্রূপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল।
৪২. বল: ‘রাহমান’ এর পরিবর্তে কে তোমাদেরকে রক্ষা করছে রাতে ও দিনে? তবুও তারা তাদের রবের স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৪৩. তাহলে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন আরাধ্য আছে, যারা তাদেরকে রক্ষা করতে পারে? তারা তো নিজেদেরকেই সাহায্য করতে পারে না এবং আমার বিরুদ্ধে তাদের সাহায্যকারীও থাকবে না।
৪৪. বস্তুতঃ আমিই তাদেরকে এবং তাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগ সম্ভার দিয়েছিলাম; অধিকন্ত তাদের আয়ুষ্কালও হয়েছিল দীর্ঘ; তারা কি দেখছে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক হতে সংকুচিত করে আনছি; তবুও কি তারা বিজয়ী হবে?
৪৫. বল: আমি তো শুধু অহী দ্বারাই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু যারা বধির, তাদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা সতর্কবাণী শোনে না।
৪৬. তোমার প্রতিপালকের গযবের একটা নিঃশ্বাস যদি তাদের ওপর পতিত হয়, তবে তারা অবশ্য অবশ্যই বলে উঠবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! আমরাই তো ছিলাম অপরাধী।’
৪৭. এবং কিয়ামাত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কাজ যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনেরও হয়, তাও আমি উপস্থিত করব। হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।
৪৮. আমি তো মূসা ও হারূনকে দিয়েছিলাম মীমাংসাকারী গ্রন্থ, জ্যোতি এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ
৪৯. যারা না দেখেই তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কেয়ামতের ভয়ে শঙ্কিত।
৫০. এটি কল্যাণময় উপদেশ; আমিই এটি অবতীর্ণ করেছি; তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে?
৫১. আমি এর পূর্বে ইবরাহীমকে সৎ পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে ছিলাম সম্যক অবগত।
৫২. যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল: এই মূর্তিগুলি কী, যাদের পূজায় তোমরা রত রয়েছ?
৫৩. তারা বলল: আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি।
৫৪. সে বলল: তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরাও রয়েছ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।
৫৫. তারা বলল: তুমি কি আমাদের নিকট সত্য এনেছ, নাকি তুমি কৌতুক করছ?
৫৬. সে বলল: না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা।
৫৭. কসম আল্লাহর! তোমরা পেছন ফিরে চলে গেলেই আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্য অবশ্যই একটা কৌশল গ্রহণ করব।
৫৮. অতঃপর সে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল মূর্তিগুলিকে, তাদের বড় (প্রধান) মূর্তিটি ব্যতীত, যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে।
৫৯. তারা বলল: আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এরূপ করল কে? সে নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারী।
৬০. কেহ কেহ বলল: আমরা এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে শুনেছি, তাকে বলা হয় ইবরাহীম।
৬১. তারা বলল: তাকে উপস্থিত কর লোক সম্মুখে, যাতে তারা সাক্ষ্য দিতে পারে।
৬২. তারা বলল: ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলির উপর এরূপ করেছ?
৬৩. সে বলল: সেই তো এটা করেছে, এই তো এদের প্রধান। এদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি এরা কথা বলতে পারে।
৬৪. তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল: তোমরাই তো সীমালংঘনকারী।
৬৫. অতঃপর তাদের মাথা নত হয়ে গেল এবং তারা বলল: তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলে না।
৬৬. সে বলল: তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর যারা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না?
৬৭. ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! তোমরা কি বুঝবে না?
৬৮. তারা বলল: তাকে পুড়িয়ে দাও এবং সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।
৬৯. আমি বললাম: হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।
৭০. তারা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
৭১. আর আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই দেশে যেথায় আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।
৭২. এবং আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পুরস্কার স্বরূপ ইয়াকূব; এবং প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ।
৭৩. আর আমি তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত। তাদের কাছে আমি অহী প্রেরণ করেছিলাম সৎ কাজ করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে; তারা আমারই ইবাদাত করত।
৭৪. এবং লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান, আর তাকে উদ্ধার করেছিলাম এমন এক জনপদ হতে যার অধিবাসীরা লিপ্ত ছিল অশ্লীল কাজে। তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়; সত্যত্যাগী।
৭৫. এবং তাকে আমি আমার অনুগ্রহভাজন করেছিলাম; সে ছিল সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত।
৭৬. স্মরণ কর নূহকে; পূর্বে সে যখন আহবান করেছিল, তখন আমি সাড়া দিয়েছিলাম তার আহবানে এবং তাকে ও তার পরিজনবর্গকে মহাসংকট হতে উদ্ধার করেছিলাম।
৭৭. এবং আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম সেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করেছিল, তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়; এ জন্য তাদের সবাইকে আমি নিমজ্জিত করেছিলাম।
৭৮. এবং স্মরণ কর দাউদ ও সুলাইমানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে; তাতে রাতে প্রবেশ করেছিল কোনো সম্প্রদায়ের মেষ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার।
৭৯. অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পর্বত ও পক্ষীসমূহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম; তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। এই সমস্ত আমিই করেছিলাম।
৮০. আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম যাতে ওটা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে; সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না?
৮১. এবং সুলাইমানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; ওটা তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি। প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।
৮২. এবং শাইতানদের মধ্যে কতক তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত, এটা ছাড়া অন্য কাজও করত; আমি তাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতাম।
৮৩. আর স্মরণ কর আইয়ুবের কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিল: আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।
৮৪. তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তাদের সাথে তাদের মত আরও দিয়েছিলাম আমার বিশেষ রাহমাত রূপে এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ।
৮৫. আর স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস এবং যুলকিফল- এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল।
৮৬. আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ।
৮৭. এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ কর তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেন: তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার।
৮৮. তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম দুশ্চিন্তা হতে এবং এভাবেই আমি মু'মিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।
৮৯. এবং স্মরণ কর যাকারিয়ার কথা, যখন সে তার রাব্বকে আহবান করে বলেছিল: হে আমার রাব্ব! আমাকে একা ছেড়ে দিবেন না, আপনি চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী
৯০. অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়াকে, আর তার জন্য তার স্ত্রীকে যোগ্যতাসম্পন্ন করেছিলাম; তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত।
৯১. আর স্মরণ কর সেই নারীকে, যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল এবং আমি তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দিয়েছি, এবং তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্য এক নিদর্শন।
৯২. এই যে তোমাদের জাতি, এটা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের রাব্ব, অতএব আমার ইবাদাত কর।
৯৩. কিন্তু মানুষ নিজেদের কার্যকলাপে পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে; প্রত্যেকেই প্রত্যাবর্তিত হবে আমার নিকট।
৯৪. অতঃপর যে বিশ্বাসী অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না এবং আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখি।
৯৫. যে সব জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত
৯৬. যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।
৯৭. অমোঘ প্রতিশ্রুত কাল আসন্ন হলে অকস্মাৎ কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে: হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে উদাসীন; না, বরং আমরা ছিলাম সীমালংঘনকারী।
৯৮. তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর, সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে।
৯৯. যদি তারা উপাস্য হত, তাহলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না; তাদের সবাই তাতে স্থায়ী হবে।
১০০. সেখানে থাকবে তাদের আর্তনাদ এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না।
১০১. যাদের জন্য আমার নিকট থেকে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা হতে দূরে রাখা হবে।
১০২. তারা ওর ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না এবং সেখানে তারা তাদের মন যা চায় চিরকাল তা ভোগ করবে।
১০৩. মহাত্রাস তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে: আজ তোমাদের দিন, যে দিনের ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।
১০৪. সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে ফেলবো, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য, আমি এটা পালন করবই।
১০৫. আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার যোগ্যতাসম্পন্ন বান্দারা পৃথিবীর অধিকারী হবে।
১০৬. এতে রয়েছে বাণী, সেই সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ইবাদাত করে।
১০৭. আমি তো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি শুধু রাহমাত রূপেই প্রেরণ করেছি।
১০৮. বল: আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাং তোমরা কি আজ্ঞাবহ হবে?
১০৯. যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি বল: আমি তোমাদেরকে যথাযথভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, আমি জানি না, তা আসন্ন, না দূরস্থিত।
১১০. তিনি জানেন যা কথায় ব্যক্ত কর এবং যা তোমরা গোপন কর।
১১১. আমি জানি না, হয়তো এটা তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা এবং জীবন উপভোগ কিছু কালের জন্য।
১১২. রাসূল বলেছিল: হে আমার পালনকর্তা! আপনি ন্যায়ের সাথে ফাইসালা করে দিন, আমাদের রাব্ব তো দয়াময়, তোমরা যা বলেছ, সে বিষয়ে একমাত্র সহায়স্থল তিনিই।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯২ তম প্রকাশ: সূরা আল জিন (৭২) (জিন সম্প্রদায়), ১ থেকে ২৮, আয়াত:

১. বল: আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি
২. যা সঠিক পথ নির্দেশ করে; ফলে আমরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কোনো শরীক স্থির করব না।
৩. আর আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা অতি উচ্চ, তিনি গ্রহণ করেননি কোনো স্ত্রী আর কোনো সন্তান।
৪. এবং আমাদের মধ্যকার নির্বোধরা আল্লাহ সম্বন্ধে অতি অবাস্তব উক্তি করত।
৫. অথচ আমরা মনে করতাম মানুষ এবং জিন, আল্লাহ সম্বন্ধে কখনও মিথ্যা আরোপ করবে না।
৬. আর যে কতিপয় মানুষ কতক জিনের শরণ নিত, ফলে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।
৭. আর জিনরা বলেছিল: তোমাদের মত মানুষও মনে করে যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ কেহকেও পুনরুত্থিত করবেন না।
৮. এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ।
৯. আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শোনার জন্য বসতাম। কিন্তু এখন কেহ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার ওপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখীন হয়।
১০. আমরা জানি না, জগতবাসীর অমঙ্গলই অভিপ্রেত, নাকি তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল করার ইচ্ছা রাখেন।
১১. এবং আমাদের কতক সৎ কর্মপরায়ণ এবং কতক এর ব্যতিক্রম, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের অনুসারী;
১২. এখন আমরা বুঝেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাভূত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাঁকে ব্যর্থ করতে পারব না।
১৩. আমরা যখন পথ-নির্দেশক বাণী শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। যে ব্যক্তি তার রবের প্রতি ঈমান আনে, তার কোনো ক্ষতি কিংবা জোর জবরদস্তির আশংকা থাকবে না।
১৪. আমাদের কতক আত্মসমপর্ণকারী এবং কতক সীমা লংঘনকারী; যারা আত্মসমর্পণ করে তারা সুচিন্তিতভাবে সত্য পথ বেছে নেয়।
১৫. অপর পক্ষে সীমা লংঘনকারী তো জাহান্নামেরই ইন্ধন।
১৬. তারা যদি সত্য পথে প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাদেরকে আমি প্রচুর বারি বর্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম
১৭. যাতে আমি তা দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর যে তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে তিনি কঠিন আযাবে প্রবেশ করাবেন।
১৮. এবং এই যে মাসজিদসমূহ, আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কেহকেও ডেক না।
১৯. আর এই যে, যখন আল্লাহর বান্দা তাঁকে ডাকার জন্য দণ্ডায়মান হল, তখন তারা তার নিকট ভিড় জমালো।
২০. বল: আমি আমার প্রতিপালককে ডাকি এবং তাঁর সাথে কেহকে শরীক করি না।
২১. বল: আমি তোমাদের মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক নই।
২২. বল: আল্লাহর শাস্তি হতে কেহ আমাকে রক্ষা করতে পারবেনা এবং আল্লাহ ব্যতীত আমি কোনো আশ্রয় পাব না।
২৩. কেবল আল্লাহর বাণী পৌঁছানো এবং তা প্রচার করাই আমার কাজ। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
২৪. যখন তারা প্রতিশ্রুতি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা বুঝতে পারবে, কে সাহায্যকারীর দিক দিয়ে দুর্বল এবং কে সংখ্যায় স্বল্প।
২৫. বল: আমি জানি না তোমাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা কি আসন্ন, নাকি আমার রাব্ব এর জন্য কোনো দীর্ঘ মেয়াদ স্থির করবেন?
২৬. তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেন না
২৭. তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সেক্ষেত্রে আল্লাহ রাসূলের অগ্রে এবং পশ্চাতে প্রহরী নিয়োজিত করেন,
২৮. রাসূলগণ তাদের পালনকর্তার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন কি না জানার জন্য। রাসূলগণের নিকট যা আছে, তা তাঁর জ্ঞানগোচর এবং তিনি সমস্ত কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: আলোচনা চলেছে মক্কার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে, মুহাম্মদ যদি সত্যিই আল্লার নবী-রসূল হয়ে থাকেন, তবে তাকে পরীক্ষা করা হোক! যদি মুহাম্মদ পাশ করেন, তবে যা ভাবার ভাবা যাবে; আর যদি না করেন, তবে মুহাম্মদ এবং তার গোত্রসহ অনুসারীদের একঘরে করা ছাড়া উপায় থাকবে না তাদের।

ইতিহাস বলে, মুহাম্মদ সে পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি; আর মুহাম্মদের অলৌকিক গালগল্পের শুরুই হয় এই অকৃতকার্য হবার মনোকষ্ট থেকে। আশা করছি, অচিরেই এ বিষয়ে আয়াত চলে আসবে, ততক্ষন আমিও অপেক্ষায় রইলাম!
{৬১৬ সালের দিকে রোম সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করে নেয় পারসিয়ান (ইরান) সাম্রাজ্য; মূলত ইরাক ও সিরিয়া নিয়ে রোম ও পারসিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যে প্রায় সাড়ে-তিনশ বছরের উত্তেজনা ছিলো; এ অংশগুলোর মালিকানা দাবি করতো দু'পক্ষই, যুদ্ধে হাতবদল হতো মাঝে মধ্যেই, কিন্তু তাতে বিরোধ কমতো না মোটেই! মুহাম্মদের কাছে যখন রোমের পরাজয়ের সংবাদ পৌঁছায়, মুহাম্মদ তার স্বভাবসুলভ প্রতিভায় ৯৪ নং প্রকাশ সামনে নিয়ে আসেন; এবং বলেন, খুব দ্রুতই রোমানরা আবারও জয় করে নেবে সেসব অংশ! রোমানদের এই পরাজয়ে মুহাম্মদ এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন; অনুসারীদের বলেই ফেলেন, একদিন পুরো রোম সাম্রাজ্য মুসলিমদের দখলে চলে আসবে! এসব অবশ্য ভিন্ন ইতিহাস।

আবু-জেহেলের সফল দিক-নির্দেশনায়, মক্কাবাসীদের বুঝতে বাকি রইল না, মুহাম্মদ একজন সুপ্ত কাব্য প্রতিভার মানুষ; প্রাচীন রূপকথার সাথে ইহুদি-খ্রিষ্টান মিথগুলোকে মিশিয়ে প্রকাশ করাই তার কাজ; আর এ কাজে মক্কার বসবাসকারী ইহুদি-খ্রিষ্টান মানুষগুলো তাকে সহযোগিতা করছে। সে যদি সত্যি সত্যি আল্লাহর নবী/রসূল হয়ে থাকে, তবে কেন কোরআন বই হিসেবে একত্রে আসে না? কেন কোরআন আরবি ভাষায়? কেন কোনো ফেরেশতা তার সাথে সাথে থাকে না? কেন তাকে সাধারণ মানুষের মতই চলাফেরা করতে হয়? কেনো সে সম্পদশালী হয় না?

মুহাম্মদ অবশ্যই কবি, উন্মাদ, মিথ্যাবাদী ও যাদুগ্রস্থ!

মুহাম্মদ বরাবরের মতই ভয়-ভীতি-লোভ মিশিয়ে ৯৫-৯৬ নং প্রকাশে অনুসারীদের কাছে এসব বিষয়ের উত্তর দেবার চেষ্টা করেন। তবে কোরআন এতটাই একপেশে অবস্থানে ছিলো মক্কার ১৩ বছর সময়কালীন; মুহাম্মদের অনুসারী ছাড়া কোনো অভিযোগের উত্তর কখনোই অভিযোগকারীদের কাছে পৌঁছায়নি!

মুহাম্মদের নবী-দাবির বুজরুকি ধরতে কুরাইশা’রা একেবারে একটি ভিন্ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করেন; এবং এ যাত্রায় ফাঁদে ধরা পড়েন মুহাম্মদ; অবস্থা এমন দাঁড়ায়, মক্কার হাওয়া-বাতাস-খাদ্য-পানি নিষিদ্ধ হয়ে যায় তার জন্য! 

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২২ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১৫ তম চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৩ তম প্রকাশ: সূরা আন্ নাবা (৭৮) (মহাসংবাদ), ৩৭ থেকে ৪০ আয়াত:

৩৭. যিনি আকাশ, পৃথিবী আর এগুলোর মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুর প্রতিপালক, তিনি অতি দয়াময়, তাঁর সম্মুখে কথা বলার সাহস কারো হবে না।

৩৮. সেদিন রূহ আর ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে, কেউ কোন কথা বলতে পারবে না, সে ব্যতীত যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দেবেন, আর সে যথার্থ কথাই বলবে।

৩৯. এ দিনটি সত্য, সুনিশ্চিত, অতএব যার ইচ্ছে সে তার প্রতিপালকের দিকে আশ্রয় গ্রহণ করুক।

৪০. আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে এবং কাফির বলতে থাকবে: হায়রে হতভাগা আমি! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম!

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৪ তম প্রকাশ: সূরা আর রুম (৩০) (রোমান জাতি), ১৭ বাদে ১ থেকে ২৭ আয়াত:

১. আলিফ লাম মীম।

২. রোমানরা পরাজিত হয়েছে।

৩. নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে,

৪. কয়েক বছরের মধ্যেই, পূর্বের ও পরের সিদ্ধান্ত আল্লাহরই; আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে,

৫. আল্লাহর সাহায্যে, তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

৬. এটা আল্লাহরই প্রতিশ্রুতি; আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।

৭. তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক সম্বন্ধে অবগত, আর আখিরাত সম্বন্ধে তারা গাফিল।

৮. তারা কি নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবেই এক নির্দিষ্ট কালের জন্য? কিন্তু মানুষের মধ্যে অনেকেই তাদের রবের সাক্ষাতে অবিশ্বাসী।

৯. তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং দেখে না যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছে? শক্তিতে তারা ছিল তাদের অপেক্ষা প্রবল; তারা জমি চাষ করত, তারা (পূর্ববর্তীরা) ওটা আবাদ করত তাদের অপেক্ষা অধিক। তাদের নিকট এসেছিল তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ; বস্তুতঃ তাদের প্রতি যুলম করা আল্লাহর কাজ ছিল না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল।

১০. অতঃপর যারা মন্দ কাজ করত, তাদের পরিণাম হয়েছিল মন্দ; কারণ তারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছিল আর সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।

১১. আল্লাহ প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেন। এরপর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।

১২. আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে পড়বে।

১৩. তাদের দেব-দেবীগুলো তাদের জন্য সুপারিশ করবে না এবং তারাই তাদের দেব-দেবীগুলোকে অস্বীকার করবে।

১৪. যেদিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে, সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে।

১৫. অতএব যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে, তারা জান্নাতে আনন্দে থাকবে।

১৬. আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও পরকালের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করেছে তারাই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।

১৮. আর অপরাহ্নে ও মধ্যাহে; এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল প্রশংসা তাঁরই।

১৯. তিনিই জীবন্তকে বের করেন মৃত থেকে আর মৃতকে বের করেন জীবন্ত থেকে। যমীনকে তিনিই পুনরায় জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর, এভাবেই তোমাদেরকে বের করা হবে।

২০. তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছ।

২১. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের সাথে শান্তিতে বাস করতে পার এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।

২২. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।

২৩. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে শ্রবণকারী সম্প্রদায়ের জন্য।

২৪. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে প্রদর্শন করেন বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসা সঞ্চারক রূপে এবং তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তদ্বারা ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য।

২৫. তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, আকাশ ও পৃথিবী তাঁর হুকুমেই দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে মাটি থেকে উঠার জন্য ডাক দেবেন একটি ডাক, তখন তোমরা উঠে আসবে।

২৬. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সব তাঁরই, সকলই তাঁর প্রতি অনুগত।

২৭. তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন আর তা তার জন্য খুবই সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত তাঁর জন্যই, তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৫ তম প্রকাশ: সূরা আল ফুরকান (২৫) (সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণকারী গ্রন্থ), ৬৮, ৬৯, ৭০ বাদে ১ থেকে ৭৭ আয়াত:

১. মহা কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাহর উপর সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (কোরআন) নাযিল করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে।

২. যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।

৩. আর তারা তাঁর পরিবর্তে উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছে অপরকে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।

৪. কাফিরেরা বলে: এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছু নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে; অবশ্যই তারা যুল্‌ম ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে।

৫. এবং তারা বলে: এগুলি তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।

৬. বল: এটা তিনিই অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমুদয় রহস্য অবগত আছেন; তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৭. তারা বলে: এ কেমন রাসূল, যে আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে? তার কাছে কোনো ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হল না, যে তার সাথে থাকত সতর্ককারী রূপে?

৮. তাকে ধন-ভাণ্ডার দেয়া হয়নি কেন, অথবা কেন একটি বাগান দেয়া হল না, যা হতে সে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে? সীমালংঘনকারীরা আরও বলে: তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ।

৯. দেখ, তারা তোমার কী উপমা দেয়। তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তারা পথ পাবে না।

১০. কত মহান তিনি যিনি ইচ্ছা করলে তোমাকে দিতে পারেন এটা অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর বস্তু - উদ্যানসমূহ, যার নিম্নদেশে নদ-নদী প্রবাহিত এবং দিতে পারেন প্রাসাদসমূহ।

১১. বরং তারা কিয়ামাতকে অস্বীকার করেছে এবং যারা কিয়ামাতকে অস্বীকার করে তাদের জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন।

১২. আগুন যখন তাদেরকে বহু দূরবর্তী স্থান থেকে দেখবে, তখন তারা শুনতে পারে তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও হুঙ্কার।

১৩. যখন তাদেরকে এক সঙ্গে বেঁধে জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন সেখানে তারা মৃত্যুকে ডাকবে।

১৪. তাদেরকে বলা হবে: আজ তোমরা একবারের জন্য ধ্বংস কামনা কর না, বরং বহুবার ধ্বংস হওয়ার কামনা করতে থাক।

১৫. তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: এটাই শ্রেয়, নাকি স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকে! এটাই তাদের পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তন স্থল।

১৬. সেখানে তারা যা কামনা করবে, তা’ই পাবে এবং তারা স্থায়ী হবে। এই প্রতিশ্রুতি পূরণ তোমার রবেরই দায়িত্ব।

১৭. এবং যেদিন তিনি একত্রিত করবেন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে, তিনি সেদিন জিজ্ঞেস করবেন: তোমরাই কি আমার এই বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলে, নাকি তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল?

১৮. তারা বলবে: আপনি পবিত্র ও মহান! আপনার পরিবর্তে আমরা অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করতে পারি না। আপনিই তো এদেরকে ও এদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলেন। পরিণামে তারা উপদেশ বিস্মৃত হয়েছিল এবং পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে।

১৯. (আল্লাহ মুশরিকদেরকে বলবেন) ‘তোমরা যা বলতে সে ব্যাপারে তারা তোমাদেরকে মিথ্যে প্রমাণিত করেছে। কাজেই তোমরা না পারবে (তোমাদের শাস্তি) প্রতিরোধ করতে আর না পাবে সাহায্য। তোমাদের মধ্যে যে অন্যায়কারী আমি তাকে গুরুতর শাস্তি আস্বাদন করাব।

২০. তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল প্রেরণ করেছি, তারা সবাই আহার করত ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত। হে লোক সকল! আমি তোমাদের মধ্যে এককে অপরের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি। তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে কি? তোমার রাব্ব সব কিছু দেখেন।

২১. যারা আমার সাক্ষাৎ আশা করে না তারা বলে, আমাদের কাছে ফেরেশতা নাযিল করা হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাই না কেন? তারা নিজেদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে আর তারা মেতে উঠেছে গুরুতর অবাধ্যতায়।

২২. যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে, অপরাধীদের জন্য সেদিন কোনো সুখবর থাকবে না, আর (ফেরেশতাগণ বলবে তোমাদের সুখ-শান্তির পথে আছে) দুর্লঙ্ঘ বাধা।

২৩. আমি তাদের কৃতকর্মগুলি বিবেচনা করব, অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।

২৪. সেদিন জান্নাতবাসীদের বাসস্থান হবে উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল হবে মনোরম।

২৫. সেদিন মেঘমালা সহ আকাশ বিদীর্ণ হবে আর ফেরেশতাদেরকে ধীরে ধীরে নীচে নামিয়ে দেয়া হবে।

২৬. সেদিন প্রকৃত রাজত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর এবং কাফিরদের জন্য সেদিন হবে কঠিন।

২৭. অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম।

২৮. হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম!

২৯. আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর; শাইতান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।

৩০. রসূল বলবে - ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জাতির লোকেরা এ কুরআনকে পরিত্যক্ত গণ্য করেছিল।’

৩১. এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য হতে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, পথ প্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।

৩২. কাফিরেরা বলে: সমগ্র কুরআন তার নিকট একবারেই অবতীর্ণ হল না কেন? এভাবেই অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমার হৃদয় ওর দ্বারা মজবুত হয় এবং তা সম্পূর্ণ রুপে আস্তে আস্তে আত্মস্থ করতে পার।

৩৩. তারা তোমার নিকট এমন কোনো সমস্যা উপস্থিত করেনি, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি।

৩৪. যাদেরকে মুখে ভর দিয়ে দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে, তাদেরই স্থান হবে অতি নিকৃষ্ট এবং তারাই পথভ্রষ্ট।

৩৫. আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তার ভাই হারূনকে তার সাহায্যকারী করেছিলাম।

৩৬. এবং বলেছিলাম: তোমরা সেই সম্প্রদায়ের নিকট যাও যারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছে; অতঃপর আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম।

৩৭. আর নূহের সম্প্রদায় যখন রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করল, তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপ করে রাখলাম; যালিমদের জন্য আমি মর্মন্তদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।

৩৮. সে রকমই আমি ধ্বংস করেছি ‘আদ, সামূদ, কূপবাসী আর তাদের মধ্যবর্তী বহু বহু বংশধরকে।

৩৯. আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছিলাম, আর তাদের সকলকেই আমি সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছিলাম।

৪০. তারাতো সেই জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি; তাহলে কি তারা এটা প্রত্যক্ষ করে না? বস্তুতঃ তারা পুনরুত্থানের আশংকা করে না।

৪১. তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে শুধু ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র রূপে গণ্য করে এবং বলে: এ-ই কি সে, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন!

৪২. সে তো আমাদেরকে আমাদের দেবতাদের হতে দূরে সরিয়ে দিত, যদি না আমরা তাদের আনুগত্যে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকতাম। যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা জানবে, কে সর্বাধিক পথভ্রষ্ট।

৪৩. তুমি কি দেখ না তাকে, যে তার কামনা বাসনাকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার হবে?

৪৪. তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বোঝে? তারা তো পশুরই মত; বরং তারা আরও অধম।

৪৫. তুমি কি তোমার পালনকর্তাকে দেখ না, তিনি কিভাবে ছায়াকে বিলম্বিত করেন? তিনি ইচ্ছা করলে একে স্থির রাখতে পারতেন। এরপর আমি সূর্যকে করেছি এর নির্দেশক।

৪৬. অতঃপর আমি একে আমার দিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনি।

৪৭. তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে।

৪৮. আর তিনিই তাঁর রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু পাঠিয়েছেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি, 

৪৯. তদ্দ্বারা মৃত ভূভাগকে সঞ্জীবিত করার জন্যে এবং আমার সৃষ্ট জীবজন্তু ও অনেক মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে।

৫০. আর আমি এটা তাদের মধ্যে বিতরণ করি যাতে তারা স্মরণ করে; কিন্তু অধিকাংশ লোক শুধু অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে।

৫১. আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদের জন্য একজন সতর্ককারী প্রেরণ করতে পারতাম।

৫২. কাজেই তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না: আর কুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কর- কঠোর সংগ্রাম।

৫৩. তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন; একটি মিষ্টি, সুপেয় এবং অপরটি লবণাক্ত, খর; উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।

৫৪. এবং তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার রাব্ব সর্বশক্তিমান।

৫৫. তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত করে যা তাদের উপকার করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না; কাফিরতো স্বীয় রবের বিরোধী।

৫৬. আমি তো তোমাকে শুধু সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপেই প্রেরণ করেছি।

৫৭. বল: আমি তোমাদের নিকট এ জন্য কোন প্রতিদান চাই না, তবে যে ইচ্ছা করে সে তার রবের পথ অবলম্বন করুক।

৫৮. তুমি নির্ভর কর তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত।

৫৯. তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং ওগুলির মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন; তিনিই রাহমান। তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।

৬০. তাদেরকে যখন বলা হয়, দয়াময়কে সেজদা কর, তখন তারা বলে, দয়াময় আবার কে? তুমি কাউকে সেজদা করার আদেশ করলেই কি আমরা সেজদা করব? এতে তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি পায়।

৬১. কত মহান তিনি, যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করেছেন তারকারাজি এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতির্ময় চাঁদ!

৬২. এবং যারা উপদেশ গ্রহণ করতে ও কৃতজ্ঞ হতে চায়, তাদের জন্য তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত এবং দিনকে পরস্পরের অনুগামী রূপে।

৬৩. আর রহমানের বান্দা তারাই যারা যমীনে নম্রভাবে চলাফেরা করে আর অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে সম্বোধন করলে তারা বলে- ‘শান্তি’, (আমরা বিতর্কে লিপ্ত হতে চাই না)।

৬৪. আর তারা রাত কাটায় তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সেজদায় অবনত ও দণ্ডায়মান অবস্থায়।

৬৫. আর তারা বলে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি দূর কর, তার শাস্তি তো ভয়াবহ বিপদ।’

৬৬. নিশ্চয়ই আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে ওটা কত নিকৃষ্ট!

৬৭. আর যখন তারা ব্যয় করে, তখন তারা অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।

৭১. আর যে ব্যক্তি তাওবাহ করে আর সৎকাজ করে, সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে- পূর্ণ প্রত্যাবর্তন।

৭২. আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন তারা অসার ক্রিয়া-কলাপের সম্মুখীন হয় তখন স্বীয় মর্যাদার সাথে তা পরিহার করে চলে

৭৩. আর তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে যারা তার প্রতি বধির ও অন্ধের ন্যায় আচরণ করে না (শুনেও শোনে না, দেখেও দেখে না- এমন করে না)।

৭৪. আর যারা প্রার্থনা করে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান কর যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দাও।

৭৫. তাদেরকে প্রতিদান স্বরূপ দেয়া হবে জান্নাত, যেহেতু তারা ধৈর্যশীল। তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে।

৭৬. সেখানে তারা চিরকাল বসবাস করবে, কত উত্তম সেখানে অবস্থান ও আবাসস্থল!

৭৭. বলুন, আমার পালনকর্তা পরওয়া করেন না যদি তোমরা তাঁকে না ডাক। তোমরা মিথ্যা বলেছ। অতএব সত্বর নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৬ তম প্রকাশ: সূরা ত্বোয়া-হা (২০) (ত্বোয়া-হা), ১৩০, ১৩১ বাদে ৫৩ থেকে ১৩৫ আয়াত:

৫৩. যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলার পথ, তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন। আমি উহা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।

৫৪. তোমরা আহার কর ও তোমাদের গবাদিপশু চরাও; অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিবেক সম্পন্নদের জন্য।

৫৫. আমি মাটি হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি; তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং তা হতে পুনর্বার বের করব।

৫৬. আমি তো তাকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখিয়েছিলাম; কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করেছে ও অমান্য করেছে।

৫৭. সে বলল: হে মূসা! তুমি কি আমাদের নিকট এসেছ তোমার যাদু দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করে দেয়ার জন্য?

৫৮. আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট উপস্থিত করব এর অনুরূপ যাদু। সুতরাং আমাদের ও তোমার মাঝে নির্ধারণ কর এক নির্দিষ্ট সময় এবং এক মধ্যবর্তী স্থান, যার ব্যতিক্রম আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না।

৫৯. মূসা বলল: তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং সেদিন পূর্বাহ্নে জনগণকে সমবেত করা হোক।

৬০. তখন ফেরাউন উঠে গেল, অতঃপর তার কলা-কৌশল একত্র করল, তারপর ফিরে এল।

৬১. মূসা তাদেরকে বলল, ‘হায় তোমাদের দুর্ভাগ্য! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যে আরোপ করো না, করলে তিনি তোমাদেরকে ভয়ানক শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দেবেন। যে মিথ্যে আরোপ করে, সে-ই ব্যর্থ হয়।’

৬২. তারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কাজ সম্বন্ধে বিতর্ক করল এবং তারা গোপনে পরামর্শ করল।

৬৩. তারা বলল: এই দু’জন অবশ্যই জাদুকর, তারা চায় তাদের জাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থার অস্তিত্ব বিনাশ করতে।

৬৪. অতএব তোমরা তোমাদের জাদু ক্রিয়া সংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হয়ে উপস্থিত হও এবং যে আজ জয়ী হবে সেই সফল হবে।

৬৫. তারা বলল: হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা প্রথমে আমরাই নিক্ষেপ করি।

৬৬. মূসা বলল: বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে অকস্মাৎ মূসার মনে হল যে, তাদের দড়ি ও লাঠিগুলি ছুটাছুটি করছে।

৬৭. মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করল।

৬৮. আমি বললাম, ‘ভয় করো না, তুমিই বিজয়ী হবে।’

৬৯. তোমার ডান হাতে যা আছে, তা নিক্ষেপ কর, তারা যা করেছে এটা তা সব গিলে ফেলবে, তারা যা করেছে তাতো কেবল জাদুকরের কলা-কৌশল। জাদুকর যে রূপ ধরেই আসুক না কেন, সফল হবে না।’

৭০. (মূসার স্পষ্ট নিদর্শন যখন দেখল) তখন জাদুকরেরা (আল্লাহর প্রতি) সাজদায় লুটিয়ে পড়ল। তারা বলল, ‘আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম।’

৭১. ফেরাউন বলল, ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রধান যে তোমাদেরকে জাদু শিখিয়েছে। কাজেই আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাদের হাত আর পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব আর খেজুর গাছের শাখায় তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই শূলে চড়াব আর তখন তোমরা অবশ্য অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার ‘আযাব বেশি শক্ত আর বেশি স্থায়ী।

৭২. তারা বললঃ আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ওপর তোমাকে কিছুতেই আমরা প্রাধান্য দেব না, সুতরাং তুমি কর যা তুমি করতে চাও, তুমি তো শুধু এই পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার।

৭৩. আমরা আমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি যাতে তিনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করেন, আর যে জাদু করতে তুমি আমাদেরকে বাধ্য করেছ তাও (ক্ষমা করেন), আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী।

৭৪. যে কেউ তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী অবস্থায় উপস্থিত হবে তার জন্যে আছে জাহান্নাম, সেখানে সে না মরবে, আর না বাঁচবে।

৭৫. আর যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে ঈমানদার অবস্থায়, সৎ কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা

৭৬. বসবাসের এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা পবিত্র হয়।

৭৭. আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম এই মর্মে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রজনীযোগে বহির্গত হও এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুস্ক পথ নির্মাণ কর; পিছন হতে এসে তোমাকে ধরে ফেলা হবে এই আশংকা কর না এবং ভয়ও কর না।

৭৮. অতঃপর ফেরাউন তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছু নিল, অতঃপর সমুদ্র তাদের উপর চড়াও হল আর তাদেরকে ডুবিয়ে দিল।

৭৯. ফেরাউন তার জাতিকে বিপথগামী করেছিল এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখায়নি।

৮০. হে বনী-ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে তোমাদের শক্রুর কবল থেকে উদ্ধার করেছি, তুর পাহাড়ের দক্ষিণ পার্শ্বে তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দান করেছি এবং তোমাদের কাছে ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ প্রেরণ করেছি।

৮১. তোমাদেরকে আমি যা দান করেছিলাম তা হতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এই বিষয়ে সীমা লংঘন কর না, করলে তোমাদের উপর আবার ক্রোধ অবধারিত এবং যার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়।

৮২. আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।

৮৩. হে মূসা! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলে তোমাকে জলদি করতে বাধ্য করল কিসে?

৮৪. মূসা বলল, ‘এই তো তারা আমার পদচিহ্ন ধরে আসছে, আমি আপনার কাছে জলদি এলাম, হে আমার প্রতিপালক! যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন।’

৮৫. তিনি বললেন: আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে।

৮৬. তখন মূসা রাগে-দুঃখে তার জাতির কাছে ফিরে গেল। সে বলল, ‘হে আমার জাতি! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদের সঙ্গে ওয়াদা করেননি, এক উত্তম ওয়াদা। ওয়াদা (পূরণের সময় আসতে) কি তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ মনে হয়েছে, নাকি তোমরা চেয়েছ যে, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের শাস্তি নেমে আসুক, যে কারণে তোমরা আমার কাছে দেয়া তোমাদের ওয়াদা ভঙ্গ করলে?’

৮৭. তারা বলল: আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি; তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করে।

৮৮. তখন সে (আগুন থেকে) গো-বৎসের প্রতিকৃতি বের করল, মনে হত সেটা যেন হাম্বা রব করছে। অতঃপর তারা বলল, ‘এটাই তোমাদের উপাস্য আর মূসারও উপাস্য, কিন্তু মূসা ভুলে গেছে।’

৮৯. তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের কোন কথার উত্তর দেয় না এবং তারে কোনো ক্ষতি ও উপকার করার ক্ষমতাও রাখে না?

৯০. হারূন তাদেরকে আগেই বলেছিল, ‘হে আমার জাতির লোকেরা! এর (অর্থাৎ গো-বৎসের) দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে, তোমাদের প্রতিপালক হলেন দয়াময় (আল্লাহ), কাজেই তোমরা আমার অনুসরণ কর আর আমার কথা মান্য কর।

৯১. তারা বলল, ‘আমাদের কাছে মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা সদাসর্বদা এর সাথেই সংযুক্ত হয়ে থাকব।

৯২. মূসা বললঃ হে হারূণ! তুমি যখন দেখলে যে, তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল?

৯৩. যে তুমি আমার অনুসরণ করলে না? তাহলে তুমিও কি আমার আদেশ অমান্য করেছ?

৯৪. হারূন বলল, ‘হে আমার মায়ের পুত্র! আমার দাড়ি ধরে টেন না, আর আমার (মাথার) চুল ধরেও টেন না, আমি ভয় করেছিলাম তুমি বলবে যে, বানী ইসরাঈলের মাঝে তুমি বিভেদ সৃষ্টি করেছ আর তুমি আমার কথা পালন করনি।’

৯৫. মূসা বলল, ‘এখন তোমার ব্যাপারটা কী, হে সামিরী?’

৯৬. সে বলল, ‘আমি দেখেছি যা ওরা দেখেনি, অতঃপর আমি প্রেরিত ব্যক্তির (অর্থাৎ জিবরীলের) পদচিহ্ন থেকে এক মুঠো মাটি নিলাম, অতঃপর আমি তা নিক্ষেপ করলাম (বাছুরের প্রতিকৃতিতে); আমার মন আমাকে এ মন্ত্রণাই দিল।’

৯৭. মূসা বলল, ‘তুই দূর হ! এ জীবনে তোর জন্য এ শাস্তিই থাকল যে, তুই বলবি- আমাকে স্পর্শ করো না, আর তোর জন্য একটা নির্দিষ্ট ওয়াদা আছে যার খেলাফ হবে না। আর তোর ইলাহর পানে চেয়ে দেখ যাকে তুই ঘিরে থাকতি, আমি তাকে অবশ্য অবশ্যই জ্বলন্ত আগুনে জ্বালিয়ে দেব, আর তাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবশ্য অবশ্যই সাগরে নিক্ষেপ করব।’

৯৮. তোমাদের উপাস্য তো কেবল আল্লাহ্‌, তিনিই তো, তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তিনি সবকিছু বেষ্টন করে আছেন জ্ঞানের দ্বারা।

৯৯. পূর্বে যা ঘটেছে উহার সংবাদ আমি এভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি এবং আমি আমার নিকট হতে তোমাকে দান করেছি উপদেশ।

১০০. যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কেয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে।

১০১. তারা এ অবস্থাতেই স্থায়ীভাবে থাকবে, কিয়ামাতের দিন এ বোঝা তাদের জন্য কতই না মন্দ হবে!

১০২. যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেই দিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব।

১০৩. তারা চুপিসারে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করবে যে, (দুনিয়াতে) দশ দিনের বেশি তোমরা অবস্থান করনি।

১০৪. তারা কি বলবে তা আমি ভাল জানি। তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎ পথে ছিল সে বলবে: তোমরা এক দিনের বেশি অবস্থান করনি।

১০৫. তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে, তুমি বল: আমার প্রতিপালক ওগুলিকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন।

১০৬. অতঃপর তিনি তাকে (অর্থাৎ ভূমিকে) মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন।

১০৭. তাতে তুমি দেখবে না কোনো বক্রতা ও উচ্চতা।

১০৮. সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, এ ব্যাপারে এদিক ওদিক করতে পারবে না; দয়াময়ের সামনে সব শব্দ স্তদ্ধ হয়ে যাবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না।

১০৯. দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন, সে ব্যতীত কারও সুপারিশ সেদিন কোনো কাজে আসবে না।

১১০. তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু রয়েছে তা তিনি অবগত, কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না।

১১১. সেই চিরঞ্জীব চিরস্থায়ীর সামনে সব মুখমণ্ডল অবনমিত হবে এবং সে ব্যর্থ হবে যে জুলুমের বোঝা বহন করবে।

১১২. এবং যে সৎ কাজ করে ঈমানদার হয়, তার আশংকা নেই অবিচারের এবং ক্ষতিরও।

১১৩. এ রূপেই আমি কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী, যাতে তারা ভয় করে অথবা এটা হয় তাদের জন্য উপদেশ।

১১৪. আল্লাহ সর্বোচ্চ, প্রকৃত অধিপতি, তোমার প্রতি (আল্লাহর) আয়াত সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করো না। আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! জ্ঞানে আমায় সমৃদ্ধি দান করুন।’

১১৫. আমি তো ইতোপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল; আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি।

১১৬. স্মরণ কর, যখন ফেরেশতাগণকে বলেছিলাম, ‘তোমরা আদমকে সেজদা কর,’ তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল, সে অমান্য করল।

১১৭. অতঃপর আমি বললাম: হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু; সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা দুর্দশায় পতিত হবে।

১১৮. তোমার জন্য এটাই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না।

১১৯. ‘আর সেখানে তুমি পিপাসার্তও হবে না এবং রৌদ্রদগ্ধও হবে না’।

১২০. অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বলল: হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?

১২১. অতঃপর তারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান খুলে গেল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল। আদম তার পালনকর্তার অবাধ্যতা করল, ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।

১২২. এরপর তার পালনকর্তা তাকে মনোনীত করলেন, তার প্রতি ক্ষমা পরায়ণ হলেন এবং তাকে পথ নির্দেশ করলেন।

১২৩. তিনি বললেন: তোমরা উভয়েই এখান থেকে এক সঙ্গে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।

১২৪. আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ আর তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।’

১২৫. সে বলবে: হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম।

১২৬. আল্লাহ বলবেন: এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।

১২৭. এমনিভাবে আমি তাকে প্রতিফল দেব, যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না করে। তার পরকালের শাস্তি কঠোরতর এবং অনেক স্থায়ী।

১২৮. আমি এদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধবংস করেছি। যাদের বাসভুমিতে এরা বিচরণ করে, এটা কি এদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করল না? নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

১২৯. তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত এবং একটি কাল নির্দিষ্ট না থাকলে শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে যেত।

১৩২. তোমার পবিরার-পরিজনকে নামাযের নির্দেশ দাও আর তাতে অবিচল থাক। তোমার কাছে আমি রিযক চাই না, আমিই তোমাকে রিযক দিয়ে থাকি, উত্তম পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য নির্দিষ্ট।

১৩৩. আর তারা বলে, সে আমাদের কাছে তার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন? তাদের কাছে কি প্রমাণ আসেনি, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে আছে?

১৩৪. যদি আমি এদেরকে ইতিপূর্বে কোন শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে এরা বলত: হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি আমাদের কাছে একজন রসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলে তো আমরা অপমানিত ও হেয় হওয়ার পূর্বেই আপনার নিদর্শনসমূহ মেনে চলতাম।

১৩৫. বলঃ প্রত্যেকেই প্রতীক্ষা করছে, সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা কর, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কারা রয়েছে সরল পথে এবং কারা সৎ পথ প্রাপ্ত হয়েছে।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: কতদুর সহ্য করা যায় বলেন, আবু-জেহেলের সহ্যক্ষমতাও চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যেতে শুরু করে; তিনি মুহাম্মদের নবুয়্যতের পরীক্ষা নেবার পরিকল্পনা করেন, যদি মুহাম্মদ পাশ না করতে পারে; তবে তার সকল অনুসারী সহ পুরো হাশিম গোত্রকে তিনি এমন এক অবস্থায় নিয়ে যাবেন; তাদের অবস্থা “না ঘরকা না ঘাটকা” করে ফেলবেন!

আবু জেহেল সফল হয়েছিলেন; পুরো ৬ টি বছর মুহাম্মদের চোখের ঘুম হারাম করে ফেলেছিলেন তিনি; আর এই একটি কারণেই মুহাম্মদ আবু-জেহেল’কে মুসলিমদের ফেরাউন বলে মনে করতেন!
{মক্কায় মুহাম্মদ তার ধর্মমতের প্রচার করেছেন কয়েকটি ধাপে; গোপন প্রচারের সময়কাল ছিলো ৩ বছর। চতুর্থ বছরে ৩৯ নং প্রকাশের সূরা আল লাহাব/মাসাদ থেকে শতভাগ প্রকাশ্য প্রচার শুরু হয়। 

মুহাম্মদের চাচা ‘হামজা’, দ্বিতীয় খলিফা ‘উমর’, বড় চাচার ছেলে আবু সুফিয়ানের ভাই ‘উবায়দা’ সহ প্রায় সকল কুরাইশ নেতাদের পরিবারেই ইসলাম প্রবেশ করে চতুর্থ বছর থেকে সপ্তম বছরের বৃত্তের ভেতরেই! 

ইসলাম প্রচারের ৭ম বর্ষে এসে মুহাম্মদ নতুন করে প্রবল ধাক্কা পান, যা শুরু হবে আজকের পর্ব থেকেই; মদিনায় পলায়নের আগ পর্যন্ত এ ভূমিকম্পের ‍স্থিরতা আসবে না আর! ইসলাম গবেষকগণ মক্কা অধ্যায়কে ৪ ভাগে ভাগ করেন; আর তাই আমরাও এই সিরিজকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলাম; এবং এর নাম রাখা হলো: 

(মক্কা - তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকা)

এ অধ্যায়ে আমরা মুহাম্মদের না ঘরের না ঘাটের সময়কালীন প্রকাশ করা কোরআনের খতিয়ান তুলে ধরবো; যার সময়কাল মাত্র তিন বছর। যে সকল পাঠক সিরিজটি নিয়মিত পড়ছেন, ৭ম থেকে ২২ তম পর্ব পর্যন্ত অধ্যায়টিকে ‘মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর’ এর বদলে ‘মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে চার বছর’ করে নিলেই সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টি। 


কোরআনের আয়াত বাতিল করার মতই এটি আমার সিদ্ধান্ত বদল বলতে পারেন। এমনিতেই কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেবার জন্য আমি মাঝে মধ্যেই ফাঁপরে* থাকি; বর্তমানেও ফাঁপর-কাল চলছে; তাই ঠিক করলাম নবী মুহাম্মদকে একটু ফাঁপরে না ফেললে মনের ঝাল মিটছে না; আর এই কাজে সাহায্য করার জন্য আমাদের সাথেই আছেন মুহাম্মদের দূর সম্পর্কের চাচা ‘আবু জেহেল’!

আবু জেহেল এখন কুরাইশদের প্রধান মুখপাত্র, বাদবাকি সকলকে সহযোগী বলা যেতে পারে। সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত নিলেন, মুহাম্মদ সত্যিই নবী-রসূল কি না; পরীক্ষা করা দরকার! মক্কায় যারা ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মমত পালন করে অথবা এ বিষয়ে জানে, তাদের জ্ঞানের পরিধি মাধ্যমিক পর্যায়ের; মুহাম্মদের তথ্যের মূল উৎস যেহেতু এরাই, তাই প্রশ্নপত্র করতে হবে উচ্চ মাধ্যমিকের!

ইয়াথরিবের (মদিনা) ইহুদী যাজকদের সাথে পরামর্শ করার জন্য লোক পাঠানো হলো; এক মাস সময়ের মধ্যে প্রশ্নপত্র চলে এলো মক্কায়! মুহাম্মদকে বলা হলো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে; অতি আত্মবিশ্বাসী মুহাম্মদ বললেন, কালই এসব প্রশ্নের উত্তর পাবেন! আমার মত তারও শুরু হলো ফাঁপর-কাল!

প্রশ্ন ১: আসহাবে কাহফ (গুহাবাসী) কারা ছিলেন?
প্রশ্ন ২: খিযিরের ঘটনাটি কী?
প্রশ্ন ৩: যুলকারনাইনের ঘটনাটি কী?

মুহাম্মদ বাসায় এসে উপলব্ধি করলেন, তিনটি প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই; যেহেতু তিনি জানেন না, তাই তার কল্পনার আল্লাহ/জিব্রাইল উত্তরও নিয়ে আসে না! সত্যিই চরম ফাঁপরে পড়লেন মুহাম্মদ; একে নবী হিসাবে তার সম্মান যায়-যায়, আর সাহাবীদের চোখও কাতর হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকেই!

৭ দিন পার হয়ে যায়; মুহাম্মদের বুজরুকি বুঝতে কুরাইশদের বাকি থাকে না। মুহাম্মদ সাধারণত কাউকে প্রশ্ন করে কিছু জানতে চাইতেন না; তিনি তার সমানে হওয়া আলোচনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন; মানুষ পড়তে পারার ক্ষমতা ছিলো তার সবচেয়ে বড় গুণ! মক্কায় তার তথ্য সংগ্রহের জায়গা ঘুরেও তিনি কোনো উত্তরের সন্ধান পেলেন না! 

১০ দিন পার হয়ে গেল; কুরাইশরা ভণ্ড নবী মুহাম্মদকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন; এবং দুটো ধাপে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পদক্ষেপ চূড়ান্ত করলেন! এই সিরিজের আগামী পর্বে এই ‍সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আমরা অবশ্যই দেখবো!

১৫ দিন পর মুহাম্মদ ৯৭ তম প্রকাশ: সূরা আল কাহফ (১৮) (গুহা) পুরোটা প্রকাশ করলেন; এবং প্রশ্ন তিনটির উত্তর দিলেন। সাথে বললেন, কুরাইশদের কাছে কথা দেবার সময় আমি আল্লার ওপর ভরসা করে কথা বলিনি, তাই আল্লাহ আমাকে ফাঁপরে রেখে এতদিন পর উত্তর পাঠালেন; এজন্য সকলকেই যে কোনো বিষয়ে কথা দেবার আগে ‘ইনশাল্লাহ’ বলা উচিত! 

যদি প্রশ্ন করেন: ১৫ দিন পরে মুহাম্মদ প্রশ্নের উত্তর কোথায় পেলেন? 

প্রিয় পাঠক, মাথা খাটান। সহজ প্রশ্ন! যদি বুঝতে পারেন, তবে সমস্যা মিটলো; তা না হলে আপনিও ফাঁপরে থাকুন আগামী পর্ব পর্যন্ত! 

৯৭ তম প্রকাশের ৯ থেকে ২৬ নং আয়াতে মুহাম্মদ প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, ৬০ থেকে ৮২ নং আয়াতে মূসা নবীর উদাহরণ টেনে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন; ৮৩ থেকে ৯২ নং আয়াতে তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বিলম্ব পরীক্ষা ফি হিসাবে আরও দুটো গল্প শুনিয়েছেন ২৭ থেকে ৪৪ ও ৯৩ থেকে ১০২ নং আয়াতে।

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৩ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ১ম এক অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৭ তম প্রকাশ: সূরা আল কাহফ (১৮) (গুহা), ২৮নং আয়াত বাদে ১ থেকে ১১০ আয়াত:

১. সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি।

২. একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং বিশ্বাসীগণ, যারা সৎকাজ করে তাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার

৩. তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।

৪. এবং সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।

৫. এ সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, আর তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। তাদের মুখ থেকে বের হয় বড়ই সাংঘাতিক কথা। তারা যা বলে তা মিথ্যে ছাড়া কিছুই নয়।

৬. তারা এ বাণীতে (কুরআনে) বিশ্বাস না করার কারণে মনে হচ্ছে (মুহাম্মদ) তুমি তার দুঃখে তোমার নিজের জান বিনাশ করে দেবে।

৭. পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে, আমি সেগুলিকে ওর শোভনীয় করেছি মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ?

৮. আমি অবশ্যই তার ওপর যা আছে, তা বৃক্ষলতাহীন শুকনো ধূলা মাটিতে পরিণত করব।

(প্রথম প্রশ্নের উত্তর)

৯. তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল?

১০. যুবকরা যখন গুহায় আশ্রয় নিল, তখন তারা বলেছিল: হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন।

১১. অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় কয়েক বছর ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে দিলাম।

১২. পরে তাদেরকে জাগ্রত করলাম এটা জানার জন্য যে, (গুহাবাসীরা আর যাদের যুগে তারা জাগ্রত হয়েছিল সে যুগের লোকেরা এ) দু'টি দলের মধ্যে কোনটি তাদের অবস্থানকালের সঠিক হিসাব করতে পারে।

১৩. আমি তাদের সঠিক বৃত্তান্ত তোমার কাছে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ঈমান এনেছিল আর আমি তাদের হিদায়াত (ঈমানী চেতনাকে) বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম।

১৪. আর আমি তাদের চিত্ত দৃঢ় করেছিলাম; তারা যখন উঠে দাঁড়াল, তখন বলল: আমাদের পালনকর্তা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পালনকর্তা; আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না; যদি করি তাহলে তা অতিশয় গর্হিত হবে।

১৫. এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক অন্যায়কারী আর কে?

১৬. তোমরা যখন তাদের হতে বিচ্ছিন্ন হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করে তাদের হতে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর; তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের কর্মসমূহকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করবেন।

১৭. তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে শায়িত। এসবই আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন, সে সৎ পথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না।

১৮. তুমি মনে করতে, তারা জাগ্রত, কিন্তু তারা ছিল নিদ্রিত; আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডানে ও বামে এবং তাদের কুকুর ছিল সম্মুখের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে; তাকিয়ে তাদেরকে দেখলে তুমি পিছন ফিরে পালিয়ে যেতে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়তে।

১৯. এবং এভাবেই আমি তাদের জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে; তাদের একজন বলল: তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? কেহ কেহ বলল: এক দিন অথবা এক দিনের কিছু অংশ; কেহ কেহ বলল: তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের রাব্বই ভাল জানেন; এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ নগরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন্ খাদ্য উত্তম এবং তা হতে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে এবং কিছুতেই যেন তোমাদের সম্বন্ধে কেহকেও কিছু জানতে না দেয়।

২০. তারা যদি তোমাদের বিষয় জানতে পারে, তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।

২১. এবং এভাবে আমি মানুষকে তাদের বিষয় জানিয়ে দিলাম যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামাতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন তারা তাদের কর্তব্য বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল তখন অনেকে বলল: তাদের ওপর সৌধ নির্মাণ কর; তাদের রাব্ব তাদের বিষয় ভাল জানেন; তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল তারা বলল: আমরা তো নিশ্চয়ই তাদের উপর মাসজিদ নির্মাণ করব।

২২. অজানা বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে কেহ কেহ বলে: তারা ছিল তিন জন, তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর; এবং কেহ কেহ বলে: তারা ছিল পাঁচ জন, ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর; আবার কেহ কেহ বলে: তারা ছিল সাত জন, অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর; বল: আমার রাব্বই তাদের সংখ্যা ভাল জানেন; তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে; সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক কর না এবং তাদের কেহকেও তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ কর না।

২৩. কোন বিষয় সম্পর্কে কক্ষনো বল না যে, ‘ওটা আমি আগামীকাল করব।’

২৪. ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ -এই কথা না বলে যদি ভুলে যাও, তাহলে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর ও বল: সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে গুহাবাসীর বিবরণ অপেক্ষা সত্যের নিকটতর পথ নির্দেশ করবেন।

২৫. আর তারা তাদের গুহায় অবস্থান করেছে তিনশ বছর এবং এর সাথে অতিরিক্ত হয়েছিল নয় বছর।

২৬. তুমি বলঃ তারা কত কাল ছিল, তা আল্লাহই ভাল জানেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই; তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই; তিনি কেহকেও নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।

(বোনাস গল্প - এক)

২৭. তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব আবৃত্তি কর; তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেহ নেই; তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় পাবে না।

২৯. আর বলে দাও, ‘সত্য এসেছে তোমাদের রব্বের নিকট হতে, কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করুক।’ আমি (অস্বীকারকারী) যালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি যার লেলিহান শিখা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে গলিত শিশার ন্যায় পানি দেয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, কতই না নিকৃষ্ট পানীয়! আর কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!

৩০. যারা বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি, যে সৎ কাজ করে আমি তার কর্মফল নষ্ট করি না।

৩১. তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থূল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম আশ্রয়স্থল!

৩২. তুমি তাদের কাছে দু'ব্যক্তির দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর, যাদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দুটি আঙুরের বাগান, আর ওগুলোকে খেজুর গাছ দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলাম আর ও দুটির মাঝে দিয়েছিলাম শষ্যক্ষেত।

৩৩. উভয় উদ্যানই ফল দান করত এবং এতে কোন ক্রটি করত না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম ঝর্ণাধারা।

৩৪. লোকটির উৎপাদন ছিল প্রচুর। একদিন কথাবার্তা বলার সময় সে তার প্রতিবেশীকে বলল, ‘আমি সম্পদে তোমা হতে শ্রেষ্ঠ, আর জনবলে তোমা হতে শক্তিশালী।’

৩৫. নিজের প্রতি যুলম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল, ‘আমি ধারণা করি না যে, এটা কোনোদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।

৩৬. আমি মনে করি না যে, কিয়ামাত হবে। আর যদি আমাকে আমার প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয়ই, তাহলে অবশ্য অবশ্যই আমি পরিবর্তে আরো উৎকৃষ্ট স্থান পাব।

৩৭. কথার প্রসঙ্গ টেনে তার সাথী বলল, ‘তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর বীর্য হতে, অতঃপর তোমাকে পূর্ণাঙ্গ দেহসম্পন্ন মানুষ বানিয়ে দিয়েছেন?

৩৮. কিন্তু আমি তো এ কথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরীক মানি না।

৩৯. তুমি যখন তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন বললে না, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছে করেছেন (তা-ই হয়েছে), আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো শক্তি নেই। যদিও তুমি আমাকে ধনে-জনে তোমার চেয়ে কম দেখ,

৪০. সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষাও উত্তম কিছু দান করবেন আর তোমার বাগানের ওপর আসমান হতে কোনো বিপদ পাঠিয়ে দেবেন, ফলে তা শূন্য ময়দানে পরিণত হবে।

৪১. কিংবা তার পানি ভূ-গর্ভে চলে যাবে, ফলে তুমি কক্ষনো তার খোঁজ পাবে না।’

৪২. ধ্বংস তার ফল-ফসলকে ঘিরে ফেলল, আর তাতে সে যা খরচ করেছিল, তার জন্য হাত মলতে লাগল। তা ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ভূমিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। সে বলল, ‘হায়, আমি যদি আমার পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক না করতাম!’

৪৩. এবং আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোনো লোকজন ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকার করতে পারল না।

৪৪. এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার অধিকার আল্লাহরই যিনি সত্য; পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ।

৪৫. তাদের কাছে পেশ কর পার্থিব জীবনের উপমা - এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যদ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়, অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়; আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।

৪৬. ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি পার্থিব জীবনের শোভা-সৌন্দর্য, আর তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার লাভের জন্য স্থায়ী সৎকাজ হল উৎকৃষ্ট আর আকাঙ্ক্ষা পোষণের ভিত্তি হিসেবেও উত্তম। 

৪৭. আর যেদিন আমি পাহাড়কে চলমান করব এবং তুমি যমীনকে দেখতে পাবে দৃশ্যমান, আর আমি তাদেরকে একত্র করব। অতঃপর তাদের কাউকেই ছাড়ব না।

৪৮. তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের সামনে সারিবদ্ধভাবে হাজির করা হবে (আর তাদেরকে বলা হবে), ‘তোমরা আমার কাছে এসেছ তেমনিভাবে যেভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু তোমরা তো ধারণা করেছিলে যে, আমার কাছে তোমাদের সাক্ষাতের নির্দিষ্টকাল আমি কক্ষনো উপস্থিত করব না।’

৪৯. এবং সেদিন উপস্থিত করা হবে ‘আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! ওটা তো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়নি, বরং ওটা সমস্ত হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; তোমার রাব্ব কারও প্রতি যুলম করেন না। 

৫০. স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদামকে সাজদাহ কর।’তখন ইবলিশ ছাড়া তারা সবাই সাজদাহ করল। সে ছিল জ্বীনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রতিপালকের নির্দেশ লঙ্ঘন করল। এতদসত্ত্বেও তোমরা কি আমাকে বাদ দিয়ে তাকে আর তার বংশধরকে অভিভাবক বানিয়ে নিচ্ছ? অথচ তারা তোমাদের দুশমন। যালিমদের এই বিনিময় বড়ই নিকৃষ্ট!

৫১. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকালে আমি তাদেরকে ডাকিনি এবং তাদের সৃজনকালেও নয়, এবং বিভ্রান্তকারীদের সাহায্য গ্রহণ করা আমার কাজ নয়।

৫২. সেদিন তিনি বলবেন, ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে ডাক।’তখন তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর আমি উভয় দলের মাঝে রেখে দেব এক ধ্বংস-গহ্বর।

৫৩. অপরাধীরা আগুন অবলোকন করে আশংকা করবে, যেন ওরা ওতেই পতিত হবে, বস্তুতঃ ওটা হতে ওরা পরিত্রাণ পাবে না।

৫৪. আমি মানুষের জন্য এই কুরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি; মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়।

৫৫. তাদের কাছে যখন পথের নির্দেশ আসে তখন ঈমান আনতে আর তাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাইতে মানুষকে এ ছাড়া আর অন্য কিছুই বাধা দেয় না যে, (তারা অপেক্ষায় থাকে যে) অতীতের জাতিগুলোর সঙ্গে যা করা হয়েছে, কখন তাদের সঙ্গেও তাই করা হবে অথবা কখন ‘আযাবকে তারা সরাসরি সামনে দেখতে পাবে।

৫৬. আমি রসূলদেরকে পাঠিয়ে থাকি একমাত্র সুসংবাদদাতা আর সতর্ককারী হিসেবে। কিন্তু কাফিরগণ মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্ক করছে তা দিয়ে সত্যকে দুর্বল করে দেয়ার উদ্দেশে, আর তারা আমার নিদর্শন ও ভয় দেখানোকে হাসি-তামাশার বিষয় বানিয়ে নিয়েছে।

৫৭. কোনো ব্যক্তিকে তার রবের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তাহলে তার অপেক্ষা অধিক সীমা লংঘনকারী আর কে? আমি তাদের অন্তরের ওপর আবরণ দিয়েছি, যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি; তুমি তাদেরকে সৎ পথে আহবান করলেও তারা কখনও সৎ পথে আসবে না।

৫৮. এবং তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি তাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহুর্ত, যা হতে তাদের পরিত্রাণ নেই।

৫৯. ঐ সব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম যখন তারা বাড়াবাড়ি করেছিল, আর তাদের ধ্বংস সাধনের জন্য একটা প্রতিশ্রুত সময় স্থির করেছিলাম।

(দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর)

৬০. স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিল: দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না, আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।

৬১. তারা যখন উভয়ের সঙ্গমস্থলে পৌঁছল, তারা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল; ওটা সুরঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।

৬২. যখন তারা আরও অগ্রসর হল, মূসা তার সঙ্গীকে বলল: আমাদের প্রাতঃরাশ নিয়ে এসো, আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

৬৩. সে বলল: আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শাইতানই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নেমে গেল সমুদ্রে।

৬৪. মূসা বলল: আমরা তো ঐ স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম; অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল।

৬৫. অতঃপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমার দাসদের মধ্যে একজনের, যাকে আমি আমার নিকট হতে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।

৬৬. মূসা তাকে বলল: সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দিবেন - এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?

৬৭. সে বলল: তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবে না।

৬৮. যে বিষয় তোমার জ্ঞানায়ত্ত নয়, সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করবে কেমন করে?

৬৯. মূসা বলল: আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।

৭০. সে বলল: আচ্ছা, তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তাহলে কোনো বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন কর না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলি।

৭১. অতঃপর তারা যাত্রা শুরু করল। পরে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল, তখন সে তাতে ছিদ্র করে দিল; মূসা বলল: আপনি কি আরোহীদেরকে নিমজ্জিত করে দেয়ার জন্য তাতে ছিদ্র করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।

৭২. সে বলল: আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না?

৭৩. মূসা বলল: আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।

৭৪. অতঃপর তারা চলতে লাগল, চলতে চলতে তাদের সাথে এক বালকের সাক্ষাৎ হলে সে তাকে হত্যা করল; তখন মূসা বলল: আপনি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন হত্যার অপরাধ ছাড়াই! আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।

৭৫. সে বলল: আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না?

৭৬. (মূসা) বলল: এরপর যদি আমি আপনাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তাহলে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; তখন আমার ওযর আপত্তি চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যাবে।

৭৭. অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল; চলতে চলতে তারা এক জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছল এবং তাদের নিকট খাদ্য চাইল। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল; অতঃপর সেখানে তারা এক পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেল এবং সে ওটাকে সুদৃঢ় করে দিল; (মূসা) বলল: আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।

৭৮. সে বলল: এখানেই তোমার ও আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল; যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করতে পারনি, আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।

৭৯. নৌকাটির ব্যাপারে - (কথা এই যে), ওটা ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির, তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত; আমি ইচ্ছা করলাম নৌকাটিকে ক্রটিযুক্ত করতে; কারণ তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগে প্রত্যেক (নিখুত) নৌকা ছিনিয়ে নিত।

৮০. আর কিশোরটি, তার মাতাপিতা ছিল ঈমানদার - আমি আশংকা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দ্বারা তাদের বিব্রত করবে।

৮১. অতঃপর আমি চাইলাম যে, তাদের রাব্ব যেন তাদেরকে তার পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভালবাসায় ঘনিষ্টতর।

৮২. আর ঐ প্রাচীরটি - ওটা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, এর নিম্নদেশে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং তোমার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তোমার রবের দেয়া তাদের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করুক; আমি নিজ হতে কিছু করিনি; তুমি যে বিষয়ে ধৈর্য ধারণে অপারগ হয়েছিলে এটাই তার ব্যাখ্যা।

(তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর)

৮৩. তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলে দাও: আমি তোমাদের নিকট তার বিষয় বর্ণনা করব।

৮৪. আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায় ও পন্থা নির্দেশ করেছিলাম।

৮৫. অতঃপর সে একটি পথ অবলম্বন করল।

৮৬. চলতে চলতে যখন সে সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছল তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল পানিতে অস্ত যেতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল; আমি বললাম: হে যুলকারনাইন! তুমি তাদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে

৮৭. সে বলল: যে কেহ সীমা লংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিব। অতঃপর সে তার রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।

৮৮. তবে যে বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে তার জন্য প্রতিদান স্বরূপ আছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দিব।

৮৯. আবার সে এক পথ ধরল।

৯০. চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয় স্থলে পৌঁছল, তখন সে দেখলো - ওটা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদিত হচ্ছে যাদের জন্য সূর্য তাপ হতে আত্মরক্ষার কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করিনি।

৯১. প্রকৃত ঘটনা এটাই যে, তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি।

৯২. আবার সে এক পথ ধরল।

(বোনাস গল্প - দুই)

৯৩. চলতে চলতে সে যখন পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল, যারা তার কথা মোটেই বুঝতে পারছিল না।

৯৪. তারা বলল: হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে; আমরা কি তোমাকে রাজস্ব দিব এই শর্তে যে, তুমি আমাদের ও তাদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবে?

৯৫. সে বলল: আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উৎকৃষ্ট; সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে এক মাযবূত প্রাচীর গড়ে দিব।

৯৬. তোমরা আমার নিকট লৌহপিণ্ডসমূহ আনয়ন কর; অতঃপর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্তূপ দুই পর্বতের সমান হল তখন সে বলল: তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। যখন ওটা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত হল তখন সে বলল: তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো, আমি ওটা ঢেলে দিই ওর উপর।

৯৭. এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তা অতিক্রম করতে পারল না বা ভেদ করতে পারল না।

৯৮. যুলকারনাইন বলল: এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ; যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য।

৯৯. সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দেব একের পর এক তরঙ্গের আকারে এবং শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে; অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব।

১০০. আর সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট

১০১. যাদের চক্ষু ছিল অন্ধ, আমার নিদর্শনের প্রতি এবং যারা শুনতেও ছিল অপারগ।

১০২. যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের অভ্যর্থনার জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম।

১০৩. বল: আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব কর্মে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে?

১০৪. ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎ কাজ করছে।

১০৫. ওরাই তারা, যারা অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কাজ নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামাত দিবসে তাদের জন্য কোনো ওজনের ব্যবস্থা রাখব না।

১০৬. জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্রহণ করেছে বিদ্রূপের বিষয়স্বরূপ।

১০৭. যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস।

১০৮. সেখানে তারা স্থায়ী হবে; তা হতে স্থানান্তর কামনা করবেনা।

১০৯. বল: আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয় তাহলেও আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে - সাহায্যার্থে এর অনুরূপ আরও সমুদ্র নিয়ে এলেও। 

১১০. বল: আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: মুহাম্মদ ধরা পড়েই গেলেন; এবার কুরাইশরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন; তাকে কি হত্যা করা হবে? অথবা তাকে বহিষ্কার করা হবে মক্কা থেকে? নাকি অন্য কোনো পদক্ষেপ নেবে কুরাইশরা! মুহাম্মদের আয়াত প্রকাশের ভাষা কি পাল্টে যাবে? বিগত সাত বছরে আমরা ৯৬ টি প্রকাশ পেয়েছি মুহাম্মদ থেকে, এ সংখ্যার অনুপাত কি বাড়বে আগামীতে? 

সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ফিরছি দ্রুত, শুধু ফাঁপর সময়টুকু কাটুক!

ধন্যবাদ।

‘ফাঁপর’ একটি আঞ্চলিক শব্দ, এটি ঝামেলা-যন্ত্রণা-চাপ-ফাঁদ-দমবন্ধ শব্দগুলোর মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করে।
{আবু জেহেলের নেতৃত্বে আবু তালেব-কে জানানো হলো মুহাম্মদকে কুরাইশদের দায়িত্বে দিয়ে দেওয়া হোক, তারা মুহাম্মদের ভণ্ডামির যথাযথ বিচার করবেন! চাচা আবু তালেব মুহাম্মদের জটিলতা বুঝতে পারলেন, তিনি তার অধীনস্থ হাশিম গোত্র এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন ১০টি উপগোত্রের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন; আর যাই হোক, মুহাম্মদকে নিরাপত্তা প্রদানে তারা পিছপা হবে না; এটি এখন ব্যক্তি মুহাম্মদের বদলে গোত্রের সম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগে প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো: মুহাম্মদ কীভাবে উত্তরের সন্ধান পেলেন! 

ঘটনাটি এমন: 
৭ থেকে ১০ দিন অতিবাহিত হবার পর কুরাইশরা যখন মুহাম্মদের ভণ্ডামি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলেন, প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সেসময় থেকেই আলোচনা শুরু হয় কুরাইশ মহলে; আর মদিনা থেকে জেনে আসা আরও একাধিক গল্প নিয়ে বিশ্লেষণ হতে থাকে দারুন নদওয়া-তে; মক্কাবাসীদের আগ্রহের কারনে এ বিষয়ের চর্চা চলে যায় মাঠ পর্যন্ত! মুহাম্মদ এসব সূত্র থেকে পেয়ে যান উত্তর! বলে রাখা ভালো, মুহাম্মদের জীবন ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে কুরাইশদের মধ্যে থেকে কখনও মুসলিম না হওয়া ঘরের শত্রু বিভীষণ ধাঁচের একাধিক চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়; সেসব নিয়ে ভবিষ্যতে বলার ইচ্ছা রইল! তবে একথাও নিশ্চিত বলা যায়, ৯৭ নং প্রকাশের বোনাস গল্পদুটো মুহাম্মদের ভণ্ডামি ধরতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলো! কীভাবে? ভাবতে থাকুন আবারও!
আবু জেহেলে ও দারুন নদওয়ার কমিটি আবু তালিবের সিদ্ধান্ত জানার পর চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলেন, এবং তারা পৃথিবীর সবচেয়ে ভদ্র শাস্তি-প্রক্রিয়া অবলম্বন করলেন; আর তা হলো - মুহাম্মদ সহ হাশিম গোত্র ও তার সহযোগী ১০ টি উপগোত্রের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা। চূড়ান্তভাবে বয়কট করা হলো তাদের! কেউ তাদের সাথে ওঠা-বসা, পানহার-খাবার বন্টন, ব্যবসা, বিবাহ-বন্ধুত্ব, ক্রয়-বিক্রয় সহ কোনো প্রকার সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না; এবং তাদের বসত এলাকা ছাড়া কাবা এবং মক্কার দেড় কিলোমিটারের অন্যান্য অঞ্চলে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবে না!

বেশির ভাগ গবেষক বলে থাকেন, মুহাম্মদ এবং হাশিম গোত্রকে মক্কা থেকে বের করে দিয়ে শিয়াবে আবু তালেব (আবু তালিবের পাহাড়/উপত্যকা)-এ নির্বাসিত করা হয়! এটি একটি চূড়ান্ত মিথ্যাচার অথবা বোঝার অজ্ঞতা! মুহাম্মদ এবং হাশিম গোত্র মক্কাতেই ছিলেন; কেবল তাদের বাসস্থানের পাশেই সমাবেত হবার একটি নতুন স্থান যুক্ত হয়েছিলো; যার নাম শিয়াবে আবু তালেব
                                পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে
সংযুক্ত ছবিটির স্থানকে শিয়াবে আবু তালেব বলা হয়; ছবিটির বাম পাশের ওপরের দিকে মক্কা টাওয়ার/ক্লক টাওয়ার দেখা যাচ্ছে; এই ছবি প্রমাণ করে শিয়াবে আবু তালেব ছিলো মক্কার দেড় কিলোমিটার সীমারেখার সাথে গায়ে-গায়ে লাগানো! আরও সহজ করে বললে, এই অংশ ছিলো আবু তালেবের নিয়ন্ত্রণাধীন মক্কার এলাকা সংলগ্ন (পর্ব ০৬ দেখুন)! হাশিম গোত্র এটিকে বয়কট চলাকালীন নিজস্ব সমাবেশ স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন!
এই পর্বের ৯৯ তম প্রকাশের সময়কাল থেকে বয়কট শুরু হবার লক্ষণ পাওয়া যায়; এবং পরবর্তী প্রায় তিন বছর চলে মুহাম্মদের না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা! এ সময়কালে মুহাম্মদ ও তার সাহাবীরা একটি অলৌকিক ঘটনা/মুজেজা দেখার জন্য কাতর হয়ে ওঠেন; এবং সত্যি সত্যি মুহাম্মদের সামনে চলে আসে ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে আলোচিত অলৌকিক ঘটনা/মুজেজা দেখানোর সুযোগ! তার জন্য অবশ্য আগামী পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের! তবে চলচ্চিত্র মুক্তির আগে তার কিছু অংশ এই পর্বের শেষে দেখে নিতে পারেন অবশ্যই!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৪ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ২য় চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

মুহাম্মদ দ্বারা ৯৮ তম প্রকাশ: সূরা আত মুত্বাফ্ফিফীন (৮৩) (প্রতারণা করা), ১ থেকে ৩৬ আয়াত:

১. মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়,

২. যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে।

৩. এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়।

৪. তারা কি চিন্তা করে না যে (তাদের মৃত্যুর পর) তাদেরকে আবার ওঠানো হবে,

৫. সেই মহাদিবসে,

৬. যেদিন মানুষ বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।

৭. না, না, কখনই না; পাপাচারীদের ‘আমলনামা নিশ্চয়ই সিজ্জীনে থাকে;

৮. সিজ্জীন কী, তা কি তুমি জান?

৯. ওটা হচ্ছে লিখিত পুস্তক।

১০. সেদিন মন্দ পরিণাম হবে মিথ্যাচারীদের

১১. যারা কর্মফল দিনকে অস্বীকার করে,

১২. আর সীমা লংঘনকারী মহাপাপী ব্যতীত কেহই ওকে মিথ্যা বলতে পারে না।

১৩. তার নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হলে সে বলেঃ এটাতো পুরাকালীন কাহিনী।

১৪. না, এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মের ফলেই তাদের মনের ওপর মরিচা জমে গেছে।

১৫. না, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের রবের সাক্ষাত হতে অন্তরীণ থাকবে;

১৬. অনন্তর নিশ্চয়ই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে;

১৭. অতঃপর বলা হবে: এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে।

১৮. অবশ্যই পুণ্যবানদের ‘আমলনামা ইল্লিয়্যীনে থাকবে,

১৯. ইল্লিয়্যীন কী, তা কি তুমি জান?

২০. (তা হচ্ছে) লিখিত পুস্তক।

২১. আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্তরা ওটা প্রত্যক্ষ করবে।

২২. সৎ আমলকারীতো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে।

২৩. তারা সুসজ্জিত আসনে বসে অবলোকন করবে।

২৪. তুমি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবে,

২৫. তাদেরকে মোহরযুক্ত বিশুদ্ধ মদিরা হতে পান করানো হবে,

২৬. ওর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। আর থাকে যদি কারও কোনো আকাংখা বা কামনা, তাহলে তারা এরই কামনা করুক।

২৭. ওর মিশ্রণ হবে তাসনীমের।

২৮. এটি একটি প্রস্রবণ, যা হতে নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করে।

২৯. অপরাধীরা মুমিনদেরকে উপহাস করত,

৩০. এবং তারা যখন মুমিনদের নিকট দিয়ে যেত তখন,

৩১. এবং যখন তাদের আপনজনের নিকট ফিরে আসতো তখন তারা ফিরতো উৎফুল্ল হয়ে।

৩২. এবং যখন তাদেরকে দেখত তখন বলত: এরাই তো পথভ্রষ্ট।

৩৩. তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি!

৩৪. আজ তাই মুমিনগণ উপহাস করছে কাফিরদেরকে

৩৫. উচ্চ আসনে বসে তাদের অবস্থা দেখছে।

৩৬. কাফেররা যা করত, তার প্রতিফল পেয়েছে তো?

মুহাম্মদ দ্বারা ৯৯ তম প্রকাশ: সূরা আল মুল্ক (৬৭) (সার্বভৌম কতৃত্ব), ১ থেকে ৩০ আয়াত:

১. অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব ও রাজত্ব যাঁর হাতে; তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

২. যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

৩. তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; আবার দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?

৪. অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফেরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।

৫. আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দিয়ে সুসজ্জিত করেছি আর শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য, এবং প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।

৬. যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি; কতই না নিকৃষ্ট সে প্রত্যাবর্তনস্থল!

৭. যখন তন্মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তারা উহার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে, আর ওটা হবে উদ্বেলিত।

৮. ক্রোধে আক্রোশে জাহান্নাম ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। যখনই কোনো দলকে তাতে ফেলা হবে, তখন তার রক্ষীরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে, ‘তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আসেনি?’

৯. তারা বলবে: অবশ্যই আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, আমরা তাকে মিথ্যাবাদী গণ্য করেছিলাম এবং বলেছিলাম: আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি, তোমরা তো মহা বিভ্রান্তিতে রয়েছ।

১০. এবং তারা আরও বলবে: যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতামনা।

১১. তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অভিশাপ জাহান্নামীদের জন্য!

১২. যারা তাদের প্রতিপালকে না দেখেই ভয় করে, তাদের জন্য আছে ক্ষমা আর মহা পুরস্কার।

১৩. তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তর্যামী।

১৪. যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত।

১৫. তিনিই তো তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার্য গ্রহণ কর; পুনরুত্থান তো তাঁরই নিকট।

১৬. তোমরা কি নিশ্চিত আছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেবেন না, আর ওটা আকস্মিকভাবে থর থর করে কাঁপতে থাকবে?

১৭. কিংবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের ওপর পাথর বর্ষণকারী ঝড়ো হাওয়া পাঠাবেন না? যাতে তোমরা জানতে পারবে যে, কেমন (ভয়ানক) ছিল আমার সতর্কবাণী।

১৮. এবং এদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল; ফলে কি রূপ হয়েছিল আমার শাস্তি!

১৯. তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের উর্ধ্বদেশে বিহঙ্গকূলের প্রতি, যারা পক্ষ বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।

২০. দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের এমন কোনো সৈন্যবাহিনী আছে কি, যারা তোমাদের সাহায্য করবে? কাফিরেরা তো বিভ্রান্তিতে রয়েছে।

২১. এমন কে আছে, যে তোমাদের জীবনোপকরণ দান করবে, তিনি যদি জীবনোপকরণ বন্ধ করে দেন? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্যবিমুখতায় অবিচল রয়েছে।

২২. যে ব্যক্তি মুখে ভর দিয়ে ঝুকে চলে, সে কি ঠিক পথে চলে, না কি সেই ব্যক্তি যে সরল পথে চলে?

২৩. বলে দাও, 'তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন আর তোমাদেরকে দিয়েছেন শোনার ও দেখার শক্তি আর অন্তঃকরণ; তোমরা শোকর আদায় খুব অল্পই করে থাক।'

২৪. বল: তিনিই পৃথিবীতে তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।

২৫. তারা বলে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে বল, এই প্রতিশ্রুতি কখন বাস্তবায়িত হবে?

২৬. বল: এর জ্ঞান শুধু আল্লাহরই নিকট আছে, আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।

২৭. যখন ওটা আসন্ন দেখবে, তখন কাফিরদের মুখমণ্ডল ম্লান হয়ে যাবে এবং তাদেরকে বলা হবে" এটাই তো তোমরা চাচ্ছিলে।

২৮. বল: তোমরা ভেবে দেখেছ কি - যদি আল্লাহ আমাকে ও আমার সঙ্গীদেরকে ধ্বংস করেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন, তাতে কাফিরদের কী? তাদেরকে কে রক্ষা করবে বেদনাদায়ক শাস্তি হতে?

২৯. বল: তিনি দয়াময়, আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি ও তাঁরই উপর নির্ভর করি, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে, কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।

৩০. বল: তোমরা ভেবে দেখেছ কি, কোনো এক ভোরে যদি পানি ভূ-গর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবাহমান পানি?

মুহাম্মদ দ্বারা ১০০ তম প্রকাশ: সূরা ইব্রাহীম (১৪) (নবী ইব্রাহিম), ৪২ থেকে ৫২ আয়াত:

৪২. তুমি কখনও মনে কর না যে, যালিমরা যা করে, সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। তবে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির।

৪৩. আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে।

৪৪. যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর। তখন যালিমরা বলবে: হে আমাদের রাব্ব! আমাদের কিছুকালের জন্য অবকাশ দিন, আমরা আপনার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসূলদের অনুসরণ করবই। তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই?

৪৫. অথচ তোমরা বাস করতে তাদের বাসভূমিতে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল এবং তাদের প্রতি আমি কি করেছিলাম, তাও তোমাদের নিকট সুবিদিত ছিল এবং তোমাদের নিকট আমি তাদের দৃষ্টান্তও উপস্থিত করেছিলাম।

৪৬. তারা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আল্লাহর নিকট তাদের চক্রান্ত রক্ষিত রয়েছে। তাদের চক্রান্ত এমন ছিল না, যাতে পর্বত টলে যেত।

৪৭. তুমি কখনও মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন; আল্লাহ পরাক্রমশালী, দণ্ড বিধায়ক।

৪৮. যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলীও এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে, যিনি এক, পরাক্রমশালী।

৪৯. সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলে তাদের হাত পা শক্ত করে বাঁধা।

৫০. তাদের পোশাক হবে আলকাতরার আর আগুন তাদের মুখমণ্ডল আচ্ছন্ন করবে।

৫১. যাতে আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দিতে পারেন। আল্লাহ তো হিসাব গ্রহণে খুবই দ্রুতগতি।

৫২. এটা মানুষদের জন্য একটা বার্তা, যার দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে আর যাতে তারা জানতে পারে যে, তিনি এক ইলাহ আর যাতে বুদ্ধিমান মানুষেরা উপদেশ লাভ করে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০১ তম প্রকাশ: সূরা আন নাহল (১৬) (মৌমাছি), ১ থেকে ১২৫ আয়াত:

১. আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে, অতএব এর জন্য তাড়াহুড়ো করো না। তিনি মহান পবিত্র, তারা যাকে শরীক সাব্যস্ত করে তার থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।

২. তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা নির্দেশ সম্বলিত ওহীসহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন, এই মর্মে সতর্ক করার জন্য, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; সুতরাং আমাকে ভয় কর।

৩. তিনি যথাযথভাবে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে।

৪. তিনি মানবকে এক ফোটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। এতদসত্ত্বেও সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী হয়ে গেছে।

৫. তিনি চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য ওতে শীত নিবারক উপকরণ এবং আরও বহু উপকার রয়েছে; এবং ওটা হতে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক।

৬. আর যখন তোমরা গোধূলি লগ্নে ওদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আসো এবং প্রভাতে যখন ওদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা ওর সৌন্দর্য উপভোগ কর এবং গৌরব অনুভব কর।

৭. আর ওরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূরদেশে যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না; তোমাদের রাব্ব অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।

৮. তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গর্দভ সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা ওগুলোতে আরোহণ করতে পার আর শোভা-সৌন্দর্যের জন্যও; তিনি সৃষ্টি করেন অনেক কিছু, যা তোমাদের জানা নেই।

৯. সরল পথ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলির মধ্যে বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎ পথে পরিচালিত করতেন।

১০. তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে আছে তোমাদের জন্য পানীয় আর তাতে জন্মে বৃক্ষ লতা যা তোমাদের পশুগুলোকে খাওয়াও।

১১. তিনি তা দিয়ে তোমাদের জন্য জন্মান শস্য, যায়তূন, খেজুর, আঙুর এবং সর্বপ্রকার ফল। এতে চিন্তাশীল মানুষদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।

১২. তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চাঁদকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই আদেশে; অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।

১৩. আর বিবিধ প্রকাশ্য বস্তুও, যা তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিদর্শন সেই সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে।

১৪. তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত আহার করতে পার এবং যাতে তা হতে আহরণ করতে পার রত্নাবলী যা তোমরা ভূষণ রূপে পরিধান কর; এবং তোমরা দেখতে পাও, ওর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে এবং তা এ জন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

১৫. আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।

১৬. আর পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও; এবং নক্ষত্রের সাহায্যেও মানুষ পথের নির্দেশ পায়।

১৭. যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তার মত যে সৃষ্টি করে না? তবে কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?

১৮. তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না; আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।

১৯. তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন।

২০. তারা আল্লাহ ছাড়া অপর যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়।

২১. তারা নিষ্প্রাণ নির্জীব এবং পুনরুত্থান কবে হবে, সে বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই।

২২. তোমাদের ইলাহ হলেন এক ইলাহ। কাজেই যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্য-অস্বীকারকারী আর তারা অহংকারী।

২৩. এটা নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ জানেন যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে; তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

২৪. তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী নাযিল করেছেন’, তখন তারা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের কল্পকাহিনী’।

২৫. যার ফলে ক্বিয়ামাত দিবসে তারা বহন করবে নিজেদের পাপের বোঝা পূর্ণ মাত্রায়, আর (আংশিক) তাদেরও পাপের বোঝা যাদেরকে তারা গুমরাহ করেছে নিজেদের অজ্ঞতার কারণে। হায়, তারা যা বহন করবে, তা কতই না নিকৃষ্ট!

২৬. তাদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্ত করেছিল। আল্লাহ তাদের ইমারাতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারাতের ছাদ তাদের উপর ধ্বসে পড়ল এবং তাদের প্রতি শাস্তি নেমে এলো এমন দিক হতে যা ছিল তাদের ধারণার বাহির।

২৭. পরে কিয়ামাত দিবসে তিনি তাদের লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন: কোথায় আমার সেই সব শরীক, যাদের সম্বন্ধে তোমরা বিতণ্ডা করতে? যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবে: নিশ্চয়ই আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের জন্য।

২৮. ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় নিজেদের প্রতি যুলম করা অবস্থায়। 'অতঃপর তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, ‘আমরা তো কোন খারাপ কাজ করতাম না।' (ফেরেশতারা জবাব দিবে) 'বরং, তোমরা যা করছিলে আল্লাহ সে বিষয়ে খুব ভালভাবেই অবগত।

২৯. সুতরাং তোমরা দ্বারগুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে স্থায়ী হওয়ার জন্য। দেখ, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট!

৩০. পরহেযগারদেরকে বলা হয়: তোমাদের পালনকর্তা কী নাযিল করেছেন? তারা বলে: মহাকল্যাণ। যারা এ জগতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে এবং পরকালের গৃহ আরও উত্তম। পরহেযগারদের গৃহ কি চমৎকার?

৩১. ওটা স্থায়ী জান্নাত, যাতে তারা প্রবেশ করবে; ওর পাদদেশে স্রোতস্বিনী নদী প্রবাহিত; তারা যা কিছু কামনা করবে তাতে তাদের জন্য তাই থাকবে; এভাবেই আল্লাহ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে।

৩২. ফেরেশতা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র অবস্থায় এই বলে যে, ‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা যে 'আমাল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কর।'

৩৩. তারা কি এই অপেক্ষায় আছে যে, ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে কিংবা তোমার প্রতিপালকের ফায়সালা এসে পড়বে? তাদের পূর্ববর্তীরাও এ রকমই করত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো যুলম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলম করত।

৩৪. সুতরাং তাদের প্রতি আপতিত হয়েছিল তাদেরই মন্দ কর্মের শাস্তি এবং তাদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল, ওটাই যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।

৩৫. মুশরিকরা বলে: আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমাদের পিতৃ-পুরুষরা ও আমরা তিনি ব্যতীত অপর কোনো কিছুর ইবাদাত করতাম না এবং তাঁর অনুমতি ব্যতীত আমরা কোনো কিছু নিষিদ্ধ করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরাও এই রূপই করত; রাসূলদের কর্তব্য তো শুধু সুস্পষ্ট বাণী প্রচার করা।

৩৬. আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি; অতঃপর তাদের কতককে আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করেন এবং তাদের কতকের ওপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল। সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে!

৩৭. তুমি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন তাকে তিনি সৎ পথে পরিচালিত করবেন না এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই।

৩৮. তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর শপথ করে বলে: যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। কেন নয়? তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।

৩৯. তিনি পুনরুত্থিত করবেন, যে বিষয়ে তাদের মতানৈক্য ছিল তা তাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখানোর জন্য এবং যাতে কাফিরেরা জানতে পারে যে, তারাই ছিল মিথ্যাবাদী।

৪০. আমি কোনো কিছু ইচ্ছা করলে সেই বিষয়ে আমার কথা শুধু এই যে, আমি বলি ‘হও,’ ফলে তা হয়ে যায়।

৪১. যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরাত করেছে আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস প্রদান করব এবং আখিরাতের পুরষ্কারই তো শ্রেষ্ঠ। হায়! তারা যদি ওটা জানত!

৪২. তারা ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদের রবের ওপর নির্ভর করে।

৪৩. তোমার পূর্বে আমি অহীসহ (পুরুষ) মানুষই প্রেরণ করেছিলাম, তোমরা যদি না জান তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর।

৪৪. তাদের প্রেরণ করেছিলাম স্পষ্ট নিদর্শন ও গ্রন্থসহ এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।

৪৫. যারা দুষ্কর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূ-গর্ভে বিলীন করবেন না, অথবা এমন দিক হতে শাস্তি আসবে না, যা তাদের ধারণাতীত?

৪৬. অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি তাদেরকে ধৃত করবেন না? তারা তো এটা ব্যর্থ করতে পারবে না।

৪৭. কিংবা ভীতি প্রদর্শনের পর তাদেরকে পাকড়াও করবেন? তোমাদের পালনকর্তা তো অত্যন্ত নম্র, দয়ালু।

৪৮. তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সাজদা হয় নত হয়?

৪৯. আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু ফেরেশতারা, সমস্তই আল্লাহকে সাজদাহ করে; তারা অহঙ্কার করে না।

৫০. তারা তাদের ওপরে আল্লাহকে ভয় করে আর তারা তা-ই করে, যা তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়।

৫১. আল্লাহ বলেন: তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ কর না; তিনিই একমাত্র ইলাহ, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।

৫২. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই; এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য; তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ভয় করবে?

৫৩. তোমরা যে সব অনুগ্রহ ভোগ কর, তা তো আল্লাহরই নিকট হতে। অধিকন্তু যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর।

৫৪. অতঃপর যখন তিনি তোমাদের থেকে দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেন, তখন তোমাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে অন্যকে শরীক করে বসে

৫৫. আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তাদের না-শোকরি করা জন্য। অতএব তোমরা ভোগ করে নাও, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।

৫৬. আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তার একাংশ তারা ঐ সবের জন্য নির্ধারিত করে যাদের সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। আল্লাহর শপথ! তোমাদের এই মিথ্যে উদ্ভাবন সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে

৫৭. তারা নির্ধারণ করে আল্লাহর জন্য কন্যাসন্তান। তিনি পবিত্র মহিমান্বিত, এবং তাদের জন্য ওটাই যা তারা কামনা করে।

৫৮. তাদের কেহকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।

৫৯. তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত নেয়, তা কতই না নিকৃষ্ট!

৬০. যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তারা নিকৃষ্ট প্রকৃতির সদৃশ। আর আল্লাহ তো মহত্তম প্রকৃতির অধিকারী; এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

৬১. আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের সীমা লংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন, তাহলে ভূপৃষ্ঠে কোনো জীবজন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসে, তখন তারা মুহুর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারবে না।

৬২. যা তারা অপছন্দ করে, তাই তারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করে। তাদের জিহবা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, মঙ্গল তাদেরই জন্য। নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদেরকেই সর্বাগ্রে তাতে নিক্ষেপ করা হবে।

৬৩. শপথ আল্লাহর! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শাইতান ঐ সব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; সুতরাং সে'ই আজ তাদের অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

৬৪. আমি তো তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এবং মুমিনদের জন্য পথ-নির্দেশ ও দয়া স্বরূপ।

৬৫. আর আল্লাহ আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর তা দিয়ে যমীনকে তার মৃত্যুর পর সজীব করেছেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সেই কওমের জন্য, যারা শোনে।

৬৬. অবশ্যই (গৃহপালিত) চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে; ওগুলির উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে আমি পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।

৬৭. আর খেজুর ও আঙুর ফল থেকে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য প্রস্তুত কর, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।

৬৮. তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে ইঙ্গিতে জানিয়েছে যে, পাহাড়ে, বৃক্ষে আর উঁচু চালে বাসা তৈরি কর।

৬৯. অতঃপর প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের (শেখানো) সহজ পদ্ধতি অনুসরণ কর। এর পেট থেকে রং-বেরং এর পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য আছে আরোগ্য। চিন্তাশীল মানুষের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে।

৭০. আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে উপনীত করা হয় জরাজীর্ণ বয়সে। ফলে তারা যা কিছু জানত, সে সম্বন্ধে তারা সজ্ঞান থাকে না; আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।

৭১. আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে সমান হয়ে যায়; তাহলে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?

৭২. আর আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?

৭৩. এবং তারা কি ইবাদাত করবে আল্লাহ ছাড়া অপরের যাদের আকাশমণ্ডলী অথবা পৃথিবী হতে কোন জীবনোপকরণ সরবরাহ করার শক্তি নেই? এবং তারা কিছুই করতে সক্ষম নয় ।

৭৪. সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোনো সদৃশ স্থির কর না; নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।

৭৫. আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না। এবং অপর এক ব্যক্তি যাকে তিনি নিজ হতে উত্তম রিয্ক দান করেছেন এবং সে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা কি উভয়ে একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য; অথচ তাদের অধিকাংশ এটা জানে না।

৭৬. আল্লাহ আরও উপমা দিচ্ছেন দু'ব্যক্তির। ওদের একজন মূক, কোন কিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তার মালিকের জন্য বোঝা স্বরূপ। তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন সে ভাল কিছুই করে আসতে পারে না; সে কি ঐ ব্যক্তির মত সমান হবে, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে?

৭৭. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং কিয়ামাতের ব্যাপারতো চোখের পলকের ন্যায়, বরং ওর চেয়েও সত্বর; আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

৭৮. আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না, এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

৭৯. তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহঙ্গের প্রতি? আল্লাহই ওদেরকে স্থির রাখেন; অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য।

৮০. এবং আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাসস্থল, আর তিনি তোমাদের জন্য পশুচর্মের তাবুর ব্যবস্থা করেন; ওটা বহনকালে (তোমাদের ভ্রমণকালে) এবং ওতে অবস্থানকালে তোমরা তা সহজে বহন করতে পার। তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন ওদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের জন্য গৃহ সামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ।

৮১. আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাতে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; ওটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে; এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।

৮২. অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমার কর্তব্য তো শুধু স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেয়া।

৮৩. তারা আল্লাহর অনুগ্রহ জ্ঞাত আছে; কিন্তু সেগুলি তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির।

৮৪. যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করব, সেদিন কাফিরদেরকে অনুমতি দেয়া হবে না এবং তাদেরকে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবে না।

৮৫. যখন যালিমরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে কোন বিরাম দেয়া হবে না।

৮৬. মুশরিকরা যাদেরকে (আল্লাহর) শরীক করেছিল তাদেরকে দেখে বলবে: হে আমাদের রাব্ব! এরাই তারা যাদেরকে আমরা আপনার শরীক করেছিলাম, যাদেরকে আমরা আহবান করতাম আপনার পরিবর্তে; অতঃপর তদুত্তরে তারা বলবে: তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।

৮৭. সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত তা তাদের জন্য নিষ্ফল হবে।

৮৮. যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথ হতে বাধা দিয়েছে, আমি তাদের শাস্তির ওপর শাস্তি বৃদ্ধি করব।

৮৯. সেদিন আমি উত্থিত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকে আমি আনব সাক্ষী রূপে এদের বিষয়ে; আমি আত্মসমর্পণকারীদের (মুসলিম) জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথ নির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদ স্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি।

৯০. নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমা লংঘন করতে। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।

৯১. তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর এবং তোমরা শপথ দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ কর না; তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।

৯২. তোমরা এমন নারীর মত হয়ো না, যে তার সূতাগুলোকে শক্ত করে পাকানোর পর নিজেই তার পাক খুলে টুকরো টুকরো করে দেয়। তোমরা তোমাদের শপথগুলোকে পারস্পরিক ব্যাপারে ধোঁকা-প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার কর, যেন একদল আরেক দল অপেক্ষা বেশি ফায়দা লাভ করতে পারে। আল্লাহ কেবল এর দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন অবশ্য অবশ্যই স্পষ্ট করে দেবেন যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে।

৯৩. আল্লাহ ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অবশ্যই এক উম্মাত করে দিতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছে গুমরাহ্ করেন, আর যাকে ইচ্ছে সঠিক পথপ্রদর্শন করেন। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে অবশ্য অবশ্যই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

৯৪. তোমরা তোমাদের নিজেদের শপথগুলোকে পরস্পর ধোঁকা-প্রবঞ্চনার উপায় হিসেবে গ্রহণ করো না, তা করলে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পা আবার পিছলে যাবে, আর আল্লাহর পথে বাধা দেয়ার কারণে তোমরা মন্দ পরিণতি ভোগ করবে, আর তোমাদের জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি।

৯৫. তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি কর না; আল্লাহর কাছে যা আছে, শুধু তাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।

৯৬. তোমাদের কাছে যা আছে, তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, তা স্থায়ী; যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে তারা যে উত্তম কাজ করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।

৯৭. মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেহ সৎকাজ করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব।

৯৮. যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে, তখন অভিশপ্ত শাইতান হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে।

৯৯. তার কোনো আধিপত্য নেই তাদের ওপর যারা ঈমান আনে ও তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে।

১০০. তার আধিপত্য শুধু তাদেরই ওপর, যারা তাকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে এবং যারা (আল্লাহর) সাথে শরীক করে।

১০১. আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি, আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন, তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলে: তুমি তো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

১০২. তুমি বল: তোমার রবের নিকট হতে রূহুল কুদুস (জিবরাঈল) সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন যারা মু’মিন তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং হিদায়াত ও সুসংবাদ স্বরূপ আত্মসমর্পনকারীদের জন্য।

১০৩. আমিতো জানিই তারা বলেঃ তাকে শিক্ষা দেয় জনৈক ব্যক্তি। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে, তার ভাষা তো আরবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবী ভাষা।

১০৪. যারা আল্লাহর আয়াত বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

১০৫. যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না, তারা তো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবক এবং তারাই মিথ্যাবাদী।

১০৬. কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য আছে মহা শাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল।

১০৭. এটা এ জন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের ওপর প্রাধান্য দেয় এবং এ জন্য যে, আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।

১০৮. ওরাই তারা, আল্লাহ যাদের অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুর উপর মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই গাফিল।

১০৯. নিশ্চয়ই তারা আখিরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

১১০. অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তাদের জন্য যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরাত করে, অতঃপর জিহাদ করে, অতঃপর ধৈর্যধারণ করে, এ সবের পর তোমার প্রতিপালক অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।

১১১. স্মরণ কর সেই দিনকে, যেদিন আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি উপস্থিত করতে আসবে প্রত্যেক ব্যক্তি এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ ফল দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি যুলম করা হবে না।

১১২. আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সব দিক হতে প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর ওরা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল। ফলে তাদের কৃতকর্মের কারণে আল্লাহ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির।

১১৩. তাদের নিকট এসেছিল এক রাসূল তাদেরই মধ্য হতে, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল; ফলে সীমা লংঘন করা অবস্থায় শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।

১১৪. আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তন্মধ্যে যা বৈধ ও পবিত্র তা তোমরা আহার কর এবং তোমরা যদি শুধু আল্লাহরই ইবাদাত কর তাহলে তাঁর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

১১৫. আল্লাহ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস আর যা যবেহ করার সময় আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে অবাধ্য না হয়ে ও সীমালঙ্ঘন না করে নিতান্ত নিরুপায় (হয়ে এসব খেতে বাধ্য) হলে আল্লাহ তো বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।

১১৬. তোমাদের জিহবা থেকে সাধারণত যে সব মিথ্যা কথা বের হয়ে আসে, সেরূপ তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না - এটা হালাল এবং ওটা হারাম। যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না।

১১৭. তাদের সুখসম্ভোগ সামান্য এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

১১৮. ইয়াহুদীদের জন্য আমি শুধু তাই নির্ধারণ করেছিলাম, যা তোমার নিকট আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি এবং আমি তাদের উপর কোন যুলম করিনি, কিন্তু তারাই যুলম করত তাদের নিজেদের প্রতি।

১১৯. যারা অজ্ঞতাবশতঃ খারাপ কাজ করে তারা পরে তাওবাহ করলে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করলে তাদের জন্য তোমার রাব্ব অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

১২০. নিশ্চয়ই ইব্রাহীম ছিল এক উম্মাত আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং সে ছিল না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।

১২১. সে ছিল আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।

১২২. আমি তাকে দুনিয়ায় দিয়েছিলাম মঙ্গল এবং আখিরাতেও নিশ্চয়ই সে সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।

১২৩. এখন আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর; এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

১২৪. শনিবার পালন তো শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ সম্বন্ধে মতভেদ করত। যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত তোমার রাব্ব অবশ্যই কিয়ামাত দিবসে সেই বিষয়ে তাদের মীমাংসা করে দেবেন।

১২৫. জ্ঞান-বুদ্ধি আর উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তুমি (মানুষকে) তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান জানাও আর লোকেদের সাথে বিতর্ক কর এমন পন্থায়, যা অতি উত্তম। তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন, কে তাঁর পথ ছেড়ে গুমরাহ হয়ে গেছে। আর কে সঠিক পথে আছে তাও তিনি বেশি জানেন।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: বয়কটের সময়কালীন মুহাম্মদের নতুন প্রকাশ নিয়ে আসার অনুপাত সবচেয়ে কম; চাইলে তার এই তিন বছরের খতিয়ান তিন/চারটি পর্বে শেষ করে দেওয়া সম্ভব; কিন্তু তাতে মজা নষ্ট হয়ে যাবে অনেক কিছুর! শুধু্ আজ এটুকু বলে রাখি, মুহাম্মদ সত্যিই কি চাঁদ দিখণ্ডিত করে দেখিয়েছিলেন কি না, সেটা জানতে পারবেন! কথা দিচ্ছি; মুহাম্মদের সবচেয়ে বড় মুজেজার বিষয়টি মুহাম্মদের পক্ষে থেকেই প্রমাণ করে দেবার চেষ্টা করবো আগামী পর্বে! কারণ এই ধারাবাহিকের ৪র্থ পর্বে দেওয়া কথা রাখার সময় যে হয়ে গেছে!
পূর্বে  বলা হয়েছিলো মক্কার ১৩ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে কুরাইশদের ভেতর থেকে কখনও মুসলিম না হওয়া 'ঘরের শত্রু বিভীষণ' ধাঁচের একাধিক চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা মুহাম্মদ এবং হাশিম গোত্রের বয়কটকালীন সময়সহ আজীবন মুহাম্মদকে সমর্থন-সাহায্য-সহযোগিতা করে গেছেন। মুহাম্মদের টিকে থাকার পেছনে এদের মানবিক ভূমিকা মক্কার কুরাইশদের মহত্ব প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট! তাদের সংখ্যা আপনার হাতের আঙ্গুলের জোড়া থেকে বেশি অবশ্যই, তবে আজ কয়েকজনের কথা বলাই যথেষ্ট মনে করছি।
১. মুতাইম ইবনে আদী
২. হিশাম ইবনে আমর
৩. যুহাইর ইবনে আবি উমাইয়া
৪. উৎবা ইবনে রাবীয়া
৫.আবদুল্লা ইবনে উরাইক্বিত্ব

এদের কারণে হাশিম গোত্র এবং মুহাম্মদের বয়কটকালীন টিকে থাকা সহজ হয়েছে; মুহাম্মদকে জীবিত রাখতে মুতাইম ইবনে আদী নিজ গোত্রের সকল শক্তি ব্যয় করেছেন, খাদ্য সরবরাহ করেছেন, বয়কট চুক্তি বাতিল করেছেন, নিজ সন্তান দিয়ে নিরাপত্তা দিয়েছেন; এমনকি মক্কা থেকে মদিনায় পলায়নে সাহায্য করেছেন মুহাম্মদকে। সবার আলাদা আলাদা ভূমিকা থাকলেও অবিশ্বাস্য সত্য হচ্ছে, যাকে মুহাম্মদের সবচেয়ে বড় শত্রুদের মধ্যে একজন হিসাবে গণ্য করা হয়, সেই মুহাম্মদের চাচা আব্দুল উজ্জা / আবু লাহাব-ও মুহাম্মদের টিকে থাকার পেছনে সবচেয়ে বড় বিভীষণ ছিলেন কুরাইশদের! যদিও সে ঘটনা আজ না বলে কিছুটা ধাঁধাঁ রেখে দেওয়া যেতেই পারে!


মুহাম্মদ বয়কটের সময়ে নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধি করেন, এবং তিনি যে একজন মানুষ, সেটা মেনে নেন; মুজেজা বা অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশ করার অক্ষমতাও মেনে নেন, সেই সাথে কোরআনের আয়াত পরিবর্তন ও মুজেজা প্রকাশের বিষয়টি যে কেবল আল্লাহর জন্য, তা প্রকাশিত আয়াতে ঘুরেফিরে আসতে থাকে; তবে তা ১০২ তম প্রকাশের চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি কুরাইশদের কাছে প্রমাণ করতে না পরার পর থেকে। ১০৩ তম প্রকাশ থেকে আগামী কয়েক পর্ব পর্যন্ত মুহাম্মদের এই দ্বিধার কাল চলতে থাকবে। কখনও তিনি ক্ষমতাবান আল্লার নবী, কখনও তিনি কেবল নগন্য বার্তাবাহী মানুষ!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৫ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ৩য় চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজী অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

মুহাম্মদ দ্বারা ১০২ তম প্রকাশ: সূরা আল কামার (৫৪) (চন্দ্র); ১ থেকে ৫৫ আয়াত:

১. সময় নিকটবর্তী এবং চন্দ্র অর্ধেক/আংশিক হয়েছে,

২. আর তারা কোনো নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে: এটা তো প্রচলিত যাদু।

৩. তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজ খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে, আর প্রত্যেক ব্যাপারই যথাসময়ে লক্ষ্যে পৌঁছবে।

৪. তাদের কাছে এমন সংবাদ এসে গেছে, যাতে সাবধানবাণী রয়েছে।

৫. তা (হল) সুদূর প্রসারী জ্ঞান, কিন্তু সেই সতর্কবাণী কোনো কাজে আসেনি।

৬. অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর। যেদিন আহবানকারী আহবান করবে এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে।

৭. ভীত-শংকিত চোখে তারা তাদের কবর থেকে বের হয়ে আসবে - যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল।

৮. তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে ভীত-বিহবল হয়ে। কাফিরেরা বলবে: কঠিন এই দিন।

৯. এদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও মিথ্যা আরোপ করেছিল আমার বান্দার প্রতি এবং বলেছিল: এ তো এক পাগল। আর তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল।

১০. তখন সে তার প্রতিপালককে ডেকেছিল- ‘‘আমি পরাস্ত হয়েছি, কাজেই তুমি এর প্রতিবিধান কর।”

১১. ফলে আমি উন্মুক্ত করে দিলাম আকাশের দ্বার, প্রবল বারি বর্ষণে।

১২. এবং মাটি হতে উৎসারিত করলাম প্রস্রবণ। অতঃপর সকল পানি মিলিত হল এক পরিকল্পনা অনুসারে।

১৩. তখন নূহকে আরোহণ করালাম কাষ্ঠ ও কীলক নির্মিত এক নৌযানে,

১৪. যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। এটা পুরস্কার তার জন্য যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

১৫. আমি এটাকে রেখে দিয়েছি এক নিদর্শনরূপে; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি?

১৬. কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী!

১৭. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?

১৮. ‘আদ জাতি সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল, ফলে কত ভয়ংকর ছিল আমার ‘আযাব ও ভীতি প্রদর্শন।

১৯. আমি তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু এক অবিরাম অশুভ দিনে,

২০. মানুষকে তা উৎপাটিত করেছিল যেন তারা উৎপাটিত খেজুর গাছের কাণ্ড।

২১. ঈ কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণী!

২২. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?

২৩. সামূদ জাতিও ভয়প্রদর্শনকারীদেরকে অস্বীকার করেছিল,

২৪. তারা বলেছিল: আমরা কি আমাদেরই সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির অনুসরণ করব? তাহলে তো আমরা বিপথগামী এবং উন্মাদরূপে গন্য হব।

২৫. আমাদের মধ্যে কি তারই প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে? না, সেতো একজন মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।

২৬. আগামীকাল তারা জানবে, কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।

২৭. আমি তাদের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি এক উষ্ট্রী; অতএব তুমি তাদের আচরণ লক্ষ্য কর এবং ধৈর্যশীল হও,

২৮. আর তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে পানি বন্টন নির্ধারিত এবং পানির অংশের জন্য প্রত্যেকে হাযির হবে পালাক্রমে।

২৯. শেষে তারা তাদের এক সঙ্গীকে ডাকল আর সে তাকে (অর্থাৎ উষ্ট্রীটিকে) ধরে হত্যা করল।

৩০. কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণী!

৩১. আমি তাদের ওপর পাঠিয়েছিলাম একটি মাত্র প্রচণ্ড ধ্বনি। ফলে তারা খোঁয়াড়ওয়ালাদের (নির্মিত) ভেঙ্গে চুরে যাওয়া শুকনা ডালপালার মত গুঁড়িয়ে গেল।

৩২. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?

৩৩. লূতের জাতি সতর্কবাণী প্রত্যাখ্যান করেছিল,

৩৪. আমি তাদের ওপর প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বহনকারী প্রচণ্ড ঝটিকা, কিন্তু লূত পরিবারের ওপর নয়; তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম রাতের শেষাংশে,

৩৫. আমার বিশেষ অনুগ্রহ স্বরূপ; যারা কৃতজ্ঞ আমি এভাবেই তাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।

৩৬. লূত তাদেরকে সতর্ক করেছিল আমার কঠিন শাস্তি সম্পর্কে। কিন্তু তারা সতর্ক বাণী সম্বন্ধে বিতণ্ডা শুরু করল।

৩৭. তারা লূতের নিকট হতে তার মেহমানদেরকে দাবী করল, তখন আমি তাদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং বললাম: আস্বাদন কর আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম।

৩৮. অতি সকালে নির্ধারিত শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।

৩৯. তখন আমি বললাম, ‘আমার শাস্তি ও সতর্কবাণীর স্বাদ গ্রহণ কর।

৪০. আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?

৪১. ফেরাউন গোষ্ঠীর কাছেও (আমার) সতর্কবাণী এসেছিল।

৪২. তারা আমার সকল নিদর্শনকে অস্বীকার করেছিল, তখন আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমতাবানের পাকড়াওয়ে।

৪৩. তোমাদের (মক্কাবাসী) কাফিররা কি এ লোকেদের চেয়ে ভাল? নাকি (আসমানী) গ্রন্থাদিতে তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা লেখা আছে?

৪৪. নাকি তারা বলে- ‘আমরা সংঘবদ্ধ দল, নিজেদের প্রতিরক্ষায় সক্ষম।

৪৫. এ সংঘবদ্ধ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে আর পেছন ফিরে পালাবে।

৪৬. অধিকন্তু কিয়ামাত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামাত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর।

৪৭. নিশ্চয়ই অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত।

৪৮. যেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে সেই দিন বলা হবে: জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন কর।

৪৯. আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। 

৫০. আমার আদেশ তো একটি কথায় নিস্পন্ন, চোখের পলকের মত।

৫১. আমি ধ্বংস করেছি তোমাদের মত দলগুলিকে; অতএব উহা হতে উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি?

৫২. তারা যা কিছু করেছে তা আছে ‘আমালনামায়,

৫৩. ছোট আর বড় সবই আছে লিপিবদ্ধ।

৫৪. খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে,

৫৫. প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদার স্থানে, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী (আল্লাহ)’র নিকটে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৩ তম প্রকাশ: সূরা আল যিলযাল (৯৯) (ভূমিকম্প); ১ থেকে ৮ আয়াত:

১. যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে,

২. যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।

৩. এবং মানুষ বলবে: এর কী হল?

৪. সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।

৫. কারণ তোমার প্রতিপালক তাকে আদেশ করবেন,

৬. সেদিন মানুষ বের হবে ভিন্ন ভিন্ন দলে যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো যায়,

৭. অতএব কেউ অণু পরিমাণও সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে,

৮. আর কেউ অণু পরিমাণও অসৎ কাজ করলে সেও তা দেখবে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৪ তম প্রকাশ: সূরা আস সেজদাহ্ (৩২) (সিজদা), ১-১৫ এবং ২১ থেকে ৩০ আয়াত:

১. আলিফ লাম মীম।

২. এ কিতাব বিশ্বজগতের পালনকর্তার নিকট হতে অবতীর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

৩. তবে তারা কি বলে যে, সে নিজেই তা রচনা করেছে (এবং আল্লাহর নিকট থেকে আগত কিতাব বলে মিথ্যে দাবি করছে, না তা নয়), বরং তা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে (আগত) সত্য যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সকর্তকারী আসেনি, সম্ভবত, তারা সঠিকপথ প্রাপ্ত হবে।

৪. আল্লাহ, তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সাহায্যকারীও নেই, তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?

৫. তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর একদিন সব কিছুই তাঁর সমীপে সমুত্থিত হবে, যে দিনের পরিমাপ হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছরের সমান।

৬. এমনই তিনি, অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সম্পর্কে জ্ঞাত, মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

৭. যিনি তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম রূপে এবং কাদা মাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

৮. অতঃপর তার বংশ উৎপন্ন করেছেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে।

৯. পরে তিনি ওকে করেছেন সুষম এবং ওতে ফুঁকে দিয়েছেন রুহ্ তাঁর নিকট হতে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ; তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।

১০. তারা বলে: আমরা মাটিতে পর্যবসিত হলেও কি আমাদেরকে আবার নতুন করে সৃষ্টি করা হবে? বস্তুতঃ তারা তাদের রবের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করে।

১১. বল, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে, অতঃপর তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।

১২. তুমি যদি দেখতে যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে (আর বলবে), হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম; কাজেই আমাদেরকে আবার পাঠিয়ে দিন, আমরা ভাল কাজ করব, আমরা (এখন) দৃঢ় বিশ্বাসী।

১৩. আমি যদি ইচ্ছে করতাম তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎ পথে পরিচালিত করতাম। কিন্তু আমার (এ) কথা অবশ্যই সত্য প্রতিপন্ন হবে: আমি নিশ্চয়ই জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ মিলিয়ে পূর্ণ করব।

১৪. কাজেই (শাস্তির) স্বাদ গ্রহণ কর, কেননা এ দিনের সাক্ষাৎকে তোমরা ভুলে গিয়েছিলে, আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেছি। তোমরা চিরস্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করতে থাক, তোমরা যা করছিলে তার কারণে।

১৫. আমার নিদর্শনাবলীতে কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যাদেরকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আর তারা অহংকার করে না।

২১. গুরুতর শাস্তির আগে আমি তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা (অনুশোচনা নিয়ে) ফিরে আসে।

২২. তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দান করা হলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।

২৩. আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, কাজেই তুমি তার (অর্থাৎ আল কুরআনের) প্রাপ্তিতে সন্দেহে পতিত হয়ো না। আমি ওটাকে বানী ইসরাঈলের জন্য পথপ্রদর্শক করেছিলাম।

২৪. আর আমি তাদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম যারা আমার নির্দেশ মুতাবেক সৎপথ প্রদর্শন করত যতদিন তারা ধৈর্য অবলম্বন করেছিল আর আমার আয়াতসমূহের উপর দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল।

২৫. তোমার প্রতিপালক, তিনি কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত।

২৬. এটাও কি তাদেরকে সত্য পথ দেখায় না যে, আমি তাদের পূর্বে কত মানব বংশ ধ্বংস করেছি যাদের বাসভূমির ওপর দিয়ে তারা (এখন) চলাফেরা করে? এতে অবশ্যই (আল্লাহর) নিদর্শন আছে, তবুও কি তারা শুনবে না?

২৭. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমির পানি প্রবাহিত করে ওর সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা হতে আহার্য গ্রহণ করে তাদের গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তুগুলি এবং তারা নিজেরাও? তাদের কি দৃষ্টিশক্তি নেই?

২৮. তারা জিজ্ঞেস করে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে বল, কখন হবে এই ফাইসালা?

২৯. বল: ফাইসালার দিন কাফিরদের ঈমান আনা তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবেনা।

৩০. অতএব তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর এবং অপেক্ষা কর; তারাও অপেক্ষা করছে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৫ তম প্রকাশ: সূরা বনী-ইসরাঈল (১৭) (ইহুদী জাতি), (২৬, ৩২, ৩৩, ৫৭, ৭৩ থেকে ৮০বাদে) ৯ থেকে ১১১ আয়াত:

৯. এই কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ পথ নির্দেশ করে এবং সৎ কর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।

১০. আর যারা পরকাল বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি মর্মন্তুদ শাস্তি।

১১. মানুষ যেভাবে কল্যাণ কামনা করে, সেভাবেই অকল্যাণ কামনা করে। মানুষ তো অতি ত্বরাপ্রবণ।

১২. আমি রাত আর দিনকে দুটো নিদর্শন বানিয়েছি। আমি রাতের নিদর্শনটিকে জ্যোতিহীন করেছি, আর দিনের নিদর্শনটিকে করেছি আলোয় উজ্জ্বল যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার আর যাতে বছরের সংখ্যা আর হিসাব জানতে পার; আমি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছি।

১৩. প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামাত দিবসে আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত।

১৪. (আমি বলব) তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর; আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিকাশের জন্য যথেষ্ট।

১৫. যারা সৎ পথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য তা অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারাতো পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং কেহ অন্য কারও ভার বহন করবে না; আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কেহকেও শাস্তি দিই না

১৬. যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন ওর সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে সৎ কাজ করতে আদেশ করি, কিন্তু তারা সেখানে অসৎ কাজ করে। অতঃপর ওর প্রতি দণ্ডাজ্ঞা ন্যায় সঙ্গত হয়ে যায় এবং আমি ওটাকে সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত করি।

১৭. নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করেছি। তোমার প্রতিপালকই তাঁর দাসদের পাপাচারণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।

১৮. কেহ পার্থিব সুখ সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি, যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত অবস্থায়।

১৯. যারা বিশ্বাসী হয়ে পরকাল কামনা করে এবং ওর জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টাসমূহ আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে।

২০. তোমার প্রতিপালকের দান থেকে আমি এদেরকে আর ওদেরকে সকলকেই সাহায্য করে থাকি, তোমার প্রতিপালকের দান তো বন্ধ হওয়ার নয়।

২১. লক্ষ্য কর, আমি কীভাবে তাদের এক দলকে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ ও শ্রেয়ত্বে শ্রেষ্ঠতর।

২২. আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য সাব্যস্ত করো না, করলে তিরস্কৃত হতভাগ্য হয়ে পড়ে থাকবে।

২৩. তোমার প্রতিপালক হুকুম জারি করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত করো না, আর পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন বা তাদের উভয়ে যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে বিরক্তি বা অবজ্ঞাসূচক কথা বলো না, আর তাদেরকে ভৎর্সনা করো না। তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল।

২৪. তাদের জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেমনভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন।’

২৫. তোমাদের প্রতিপালক খুব ভাল করেই জানেন তোমাদের অন্তরে কী আছে। তোমরা যদি সৎকর্মশীল হও, তবে যারা বার বার তাঁর দিকে ফিরে আসে, তিনি তো তাদের প্রতি পরম ক্ষমাশীল।

২৭. অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তো তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।

২৮. এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল।

২৯. তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।

৩০. নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত, সব কিছু দেখছেন।

৩১. দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ।

৩৪. পিতৃহীন বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ছাড়া তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না এবং প্রতিশ্রুতি পালন কর; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।

৩৫. মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম ও পরিণামে উৎকৃষ্ট।

৩৬. যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় - ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।

৩৭. ভূপৃষ্ঠে দম্ভ ভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনই পদভরে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না।

৩৮. এগুলোর মধ্যে যে সমস্ত বিষয় মন্দ, তোমার প্রতিপালকের নিকট তা ঘৃণিত।

৩৯. এসব সেই হিকমাতের অন্তর্ভুক্ত যা তোমার প্রতিপালক তোমার প্রতি ওয়াহী করেছেন। আল্লাহর সঙ্গে অপর কোনো উপাস্য স্থির করো না, করলে তুমি নিন্দিত ও যাবতীয় কল্যাণ বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

৪০. তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদের জন্য পুত্রসন্তান নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি নিজে (ফেরেশতাদের) কন্যা রূপে গ্রহণ করেছেন? তোমরা তো নিশ্চয়ই ভয়ানক কথা বলে থাক।

৪১. এই কুরআনে বহু নীতিবাক্য আমি বারবার বিবৃত করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে; কিন্তু তাতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।

৪২. বল - তাঁর সঙ্গে যদি আরো ইলাহ থাকত যেমন তারা বলে, তাহলে তারা অবশ্যই আরশের মালিকের নিকট পৌঁছার জন্য পথের সন্ধান করত।

৪৩. তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত এবং তারা যা বলে তা হতে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।

৪৪. সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অর্ন্তবর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পারনা; তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

৪৫. তুমি যখন কুরআন পাঠ কর তখন তোমার ও যারা পরলোকে বিশ্বাস করে না, তাদের মধ্যে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা টেনে দিই।

৪৬. আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা উপলদ্ধি করতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি। তোমার রাব্ব এক, এটা যখন তুমি কুরআন হতে আবৃত্তি কর তখন তারা সরে পড়ে।

৪৭. যখন তারা কান পেতে তোমার কথা শোনে, তখন তারা কেন তা শোনে আমি তা ভাল জানি, এবং এটাও জানি যে, গোপনে আলোচনা কালে সীমা লংঘনকারীরা বলে: তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করছ।

৪৮. দেখ, তারা তোমার কী উপমা দেয়! তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তারা সৎ পথ খুঁজে পাবে না।

৪৯. তারা বলে: আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টি রূপে পুনরুত্থিত হব?

৫০. বল, ‘তোমরা যদি পাথর কিংবা লোহাও হয়ে যাও,

৫১. অথবা এমন কিছু যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন। তারা বলবে: কে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবে? বল: তিনিই যিনি তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তারা তোমার সামনে মাথা নাড়াবে এবং বলবে: ওটা কবে হবে? বল: হবে, সম্ভবত, শীঘ্রই

৫২. যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন এবং তোমরা প্রশংসার সাথে তাঁর আহবানে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে।

৫৩. আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বল; শাইতান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়; শাইতান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।

৫৪. তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে খুব ভাল করেই জানেন। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন, আর ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন; আমি তোমাকে (হে নাবী!) তাদের কাজকর্মের জন্য দায়িত্বশীল করে পাঠাইনি।

৫৫. যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আছে তাদেরকে তোমার প্রতিপালক ভালভাবে জানেন; আমি তো নাবীদের কতককে কতকের উপর মর্যাদা দিয়েছি; দাউদকে আমি যাবুর দিয়েছি।

৫৬. বল: তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে উপাস্য মনে কর তাদেরকে আহবান কর; করলে দেখবে তোমাদের দুঃখ দৈন্য দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই।

৫৮. এমন কোনো জনপদ নেই যা আমি কিয়ামাত দিনের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা কঠোর শাস্তি দিব না; এটা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।

৫৯. পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করার কারণেই আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা হতে বিরত রাখে; আমি স্পষ্ট নিদর্শন স্বরূপ সামূদের নিকট উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর তারা ওর প্রতি যুলম করেছিল; আমি ভয় প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শন প্রেরণ করি।

৬০. স্মরণ কর, আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমার পালনকর্তা মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন; আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি কিংবা কুরআনে উল্লিখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ শুধু মানুষের পরীক্ষার জন্য আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করি। কিন্তু এটা তাদের তীব্র অবাধ্যতাই বৃদ্ধি করে।

৬১. স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম: আদমের প্রতি সাজদাহবনত হও; তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সাজদাহবনত হল; সে বলল: আমি কি তাকে সাজদাহ করব যাকে আপনি মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন?

৬২. সে আরও বলল: লক্ষ্য করুন, তাকে যে আপনি আমার ওপর মর্যাদা দান করলেন, কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে বিনষ্ট করব।

৬৩. (আল্লাহ) বললেন: যা, জাহান্নামই তোর এবং তাদের সম্যক শাস্তি যারা তোর অনুসরণ করবে।

৬৪. তোর আহবানে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস সত্যচূত কর, তোর অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যা, এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। শাইতান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র।

৬৫. নিশ্চয়ই আমার দাসদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই; কর্ম বিধায়ক হিসাবে তোর প্রতিপালকই যথেষ্ট।

৬৬. তোমাদের (প্রকৃত) প্রতিপালক তো তিনিই, যিনি সমুদ্রে তোমাদের জন্য সুস্থিরভাবে নৌযান পরিচালনা করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার, তিনি তোমাদের প্রতি বড়ই দয়ালু।

৬৭. সমুদ্রে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন শুধু তিনি ছাড়া অপর যাদেরকে তোমরা আহবান কর তারা তোমাদের মন হতে উধাও হয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তোমাদেরকে উদ্ধার করেন তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও; বস্তুতঃ মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।

৬৮. তোমরা কি নিশ্চিত আছ যে, তিনি তোমাদেরকে স্থলে কোথাও ভূ-গর্ভস্থ করবেন না অথবা তোমাদের উপর কংকর বর্ষণ করবেন না? তখন তোমরা তোমাদের কোন কর্ম বিধায়ক পাবে না।

৬৯. অথবা তোমরা কি নিশ্চিন্ত আছ যে, তোমাদেরকে আর একবার সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঝটিকা পাঠাবেন না এবং তোমাদের সত্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না।

৭০. আমি তো আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; আর তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।

৭১. স্মরণ কর সেই দিনকে যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ আহবান করব; যাদেরকে ডান হাতে ‘আমলনামা দেয়া হবে তারা তাদের ‘আমলনামা পাঠ করবে (আনন্দের সাথে) এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলম করা হবে না।

৭২. যে ইহলোকে অন্ধ পরলোকেও সে অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।

৮১. বল, ‘সত্য এসে গেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই।’

৮২. আমি অবতীর্ণ করেছি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য সুচিকিৎসা ও দয়া, কিন্তু তা সীমা লংঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।

৮৩. যখন আমি মানুষের উপর অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও অহংকারে দূরে সরে যায় এবং তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।

৮৪. বল: প্রত্যেকে তার নিজ নিজ রীতি অনুসারে কাজ করে। কিন্তু তোমার পালনকর্তা ভাল করে জানেন, কে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল পথে আছে।

৮৫. তোমাকে তারা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বল: রূহ্ আমার রবের আদেশ ঘটিত; এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।

৮৬. ইচ্ছা করলে আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম; তাহলে তুমি এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন কর্মবিধায়ক পেতে না।

৮৭. এটা প্রত্যাহার না করা তোমার রবের দয়া; তোমার প্রতি আছে তাঁর মহা অনুগ্রহ।

৮৮. বল: যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন রচনা করার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন রচনা করতে পারবে না।

৮৯. আমি এই কুরআনে মানুষের জন্য বিভিন্ন উপমা দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরী করা ছাড়া ক্ষান্ত হয় না।

৯০. আর তারা বলেঃ কখনই আমরা তোমাতে বিশ্বাস স্থাপন করব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য ভূমি হতে এক প্রস্রবণ উৎসারিত করবে।

৯১. অথবা তোমার খর্জুরের অথবা আঙ্গুরের এক বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি অজস্র ধারায় প্রবাহিত করে দেবে নদীনালা।

৯২. অথবা তুমি যেমন বলে থাক, তদনুযায়ী আকাশকে খণ্ড বিখণ্ড করে আমাদের ওপর ফেলবে, অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবে।

৯৩. অথবা তোমার একটি স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আকাশে আরোহণ আমরা তখনও বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ করবে যা আমরা পাঠ করব। বল: পবিত্র আমার মহান রাব্ব! আমি তো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল।

৯৪. ‘আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?’ - তাদের এই উক্তিই বিশ্বাস স্থাপন হতে লোকদেরকে বিরত রাখে, যখন তাদের নিকট আসে পথ নির্দেশ।

৯৫. বল, ‘দুনিয়াতে যদি ফেরেশতাগণের বসবাস হত যারা নিশ্চিন্তে নিরাপদে চলাফেরা করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের কাছে ফেরেশতা রসূল পাঠাতাম।’

৯৬. বল: আমার ও তোমাদের মধ্যে স্বাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি তাঁর দাসদেরকে সবিশেষ জানেন ও দেখেন।

৯৭. আল্লাহ যাদের পথ প্রদর্শন করেন তারাই তো সঠিক পথপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন তাদের জন্য তুমি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবে না। কিয়ামাতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, বোবা অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম! যখনই তা স্তিমিত হবে আমি তখন তাদের জন্য আগুন বৃদ্ধি করে দিব।

৯৮. এটাই তাদের প্রতিফল, কারণ তারা আমার নিদর্শন অস্বীকার করেছিল ও বলেছিল: আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ বিচূর্ণ হলেও কি নতুন সৃষ্টি রূপে পুনরুত্থিত হব?

৯৯. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ! যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি ওগুলির অনুরূপ সৃষ্টি করতে ক্ষমতাবান? তিনি তাদের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই; তথাপি সীমা লংঘনকারীরা প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া আর সবই অস্বীকার করে।

১০০. বল: যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভাণ্ডারের অধিকারী হতে তবুও ‘ব্যয় হয়ে যাবে’ এই আশংকায় তোমরা ওটা ধরে রাখতে, মানুষতো অতিশয় কৃপণ।

১০১. তুমি বানী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখ, আমি মূসাকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম; যখন সে তাদের নিকট এসেছিল তখন ফিরআউন তাকে বলেছিল: হে মূসা! আমি তো মনে করি তুমি যাদুগ্রস্ত।

১০২. মূসা বলেছিল: তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এই সমস্ত স্পষ্ট নিদর্শন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ। হে ফিরআউন! আমি তো দেখছি, তুমি ধ্বংস হয়ে গেছ।

১০৩. অতঃপর ফিরআউন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করার সংকল্প করল; তখন ফিরআউন ও তার সঙ্গীদের সকলকে আমি নিমজ্জিত করলাম।

১০৪. এরপর আমি বানী ইসরাঈলকে বললাম: তোমরা এই দেশে বসবাস কর এবং যখন কিয়ামাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্রিত করে উপস্থিত করব।

১০৫. আমি সত্য সত্যই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং তা সত্যসহই অবতীর্ণ হয়েছে; আমি তো তোমাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি।

১০৬. আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে; এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি।

১০৭. বল: তোমরা বিশ্বাস কর অথবা না কর, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের সামনে যখন আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বিনয়ের সাথে কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে ।

১০৮. এবং বলে: আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান! আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে।

১০৯. এবং কাঁদতে কাঁদতে তাদের মুখমণ্ডল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এতে তাদের বিনয়ই বৃদ্ধি পায়।

১১০. বল: তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রাহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নামই তো তাঁর! তোমরা নামাজে তোমাদের স্বর উচু কর না এবং অতিশয় ক্ষীণও কর না; এই দুই এর মধ্য পন্থা অবলম্বন কর।

১১১. বল: প্রশংসা আল্লাহরই যিনি সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশী নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে; সুতরাং স্বসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: ‘চন্দ্র ‍দ্বিখণ্ডিত হওয়ার রহস্য উন্মোচন’ নামে বিশেষ পর্বে ১০২ তম প্রকাশের প্রথম দুই আয়াতের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে; প্রকাশের ধারাবাহিকতা হিসেব করলে এরপরের সবচেয়ে বড় মুজেজা/অলৌকিক বিষয় আসবে মুহাম্মদের মিরাজ/মেরাজ গমনের বিষয়ে। মজার বিষয় হচ্ছে মিরাজ/মেরাজ বিষয়টিকে ‘চন্দ্র ‍দ্বিখণ্ডিত হওয়ার রহস্য উন্মোচন’–এর চাইতেও সহজে যুক্তিযুক্তভাবে খণ্ডন করা যায়; সময় আসলে এবং পাঠকের আগ্রহ থাকলে সে চেষ্টায় আবারও মুহাম্মদের মনোজগতের হদিস নেয়া যেতে পারে।
পরপর দু'টি ছেলে-সন্তান হারানোর শোক এখনও কমেনি খাদিজার, আব্দুল্লাহ মারা যাবার বছরই বন্যা হলো মক্কায়; শরীরটা তখন থেকেই ভালো যাচ্ছে না। মুহাম্মদ-পক্ষের বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন নিজের বোনের ছেলের সাথে, সে ছেলে কোনোভাবেই মুসলমান হচ্ছে না! তার পরের পিঠোপিঠি দুই মেয়ের বিয়ে নিয়ে আবু লাহাবের ছেলেদের সাথে যা হলো, তা আর বলার মত নয়!

মন-শরীর নিয়মিত খারাপই থাকে এখন, মক্কায় বের হলেই যেভাবে প্রশ্নচোখে তাকায় সবাই! তাই প্রাকৃতিক কাজ ছাড়া খুব একটা বের হন না খাদিজা। মুহাম্মদকে বলেন প্রতিনিয়ত, "তুমি যে এমন পাগলামী করো মাঝে মাঝে, আমি যদি না থাকি, বাচ্চাদের কী হবে, ভেবে দেখেছো?" মুহাম্মদ প্রশ্নের উত্তর দেন না; খাদিজাকে কীভাবে বোঝাবেন কতটা চাপে আছেন তিনি; না পারেন বলতে, না পারেন সইতে! যাদের হাতে এক-ঈশ্বর বিশ্বাসের হাতেখড়ি মুহাম্মদের, কেউ নেই তাদের; যার সবচেয়ে বেশি অনুরক্ত ছিলেন মুহাম্মদ, যে তাকে হারাম-হালাল শিখিয়েছে, নামাজ পড়া শিখিয়েছে, হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন হতে শিখিয়েছে, তার ছেলে অনুগামী সাহাবা হলেও, তিনি তো বেঁচে নেই; মুহাম্মদ জন্মদাতা পিতাকে জাহান্নামী মনে করলেও তাকে (পাঠকের কাছে নাম জানতে চেয়ে প্রশ্ন থাকলো) দিয়েছেন নবীর মর্যাদা, সে হিসাবে মক্কায় তিনি প্রথম নবী নন! আরেকজন তো মুসলিম হয়ে হাবাশায় গিয়ে খ্রিষ্টান হয়ে গেছেন! যে কোনো বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আলোচনার মানুষ এখন হাতের কাছে পাওয়া যায় না সহজে; তারপর কুরাইশরা যা শুরু করেছে! যদি কখনও সুযোগ আসে, সবগুলোকে বারো-ঘাটের মরুভূমির বালি খাওয়াবেন তিনি!


মক্কার বয়কটকালীন মুহাম্মদ ক্রমশ নিজেকে নীরব সন্ত্রাসীতে রূপান্তরিত করতে থাকেন; মনের ভেতর প্রতিশোধ স্পৃহা জমাট বাঁধতে শুরু করে তার; যদিও কোণঠাসা মানুষের মতই  কখনও মনের ক্ষোভ প্রকাশ পায় প্রকাশিত আয়াতে, আবার কখনও নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মানুষের বাইরে কিছুই মনে হয় না তার! মক্কার ১৩ বছরে মুহাম্মদের আব্রাহামিক ধর্মজ্ঞান ছিলো খুব প্রাথমিক পর্যায়ের, অনেক কিছু্ই জানতেন না। জানতেন না ইব্রাহিমের তৃতীয় স্ত্রী ছিলো (কটুরা) এবং সে পক্ষে তার ৬ সন্তান ছিলো! তিনি জানতেন না, ঈসার মা কার বোন! জানতেন না, তার বর্ণনা করা ধর্মের আদি রূপরেখা মধ্য ইরাক থেকে এসেছে; ভালো-মন্দের রূপরেখা এসেছে ইরান থেকে, তিনি জানতেন না, আদম-এর হাওয়া/ঈভের পূর্বেও স্ত্রী-সন্তান ছিলো!

সব মিলিয়ে মুহাম্মদের ৪১ হাজার অ-মৌলিক হাদিসের যে সন্ধান আজও পাওয়া যায়, তার ৯০ শতাংশ প্রকাশের সময়কাল মদিনার দশ বছর! মক্কায় মুহাম্মদ একজন স্বল্পজ্ঞানী সংখ্যালঘু ধর্মসংস্কারকের বেশি কিছু ছিলেন না কখনই! ১৩ বছর পার করেছেন মাত্র ৮/১০টি গল্প দিয়ে বহুপদের খিচুড়ি রান্না করে!

এ পর্বের প্রকাশিত আয়াতে মুহাম্মদের এই অস্থির দ্বৈত রূপের পরিচয় পাওয়া যায়; মুহাম্মদ এখন কুরাইশদের চাইতে তার অনুসারীদের পুনরায় ধর্মপাঠ দিচ্ছেন বেশি, কারণ অনেকেই মুহাম্মদের ধর্মমত থেকে পূর্বমতে চলে যেতে শুরু করেছে!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৬ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ৪র্থ তিন অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজী অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}



মুহাম্মদ দ্বারা ১০৬ তম প্রকাশ: সূরা আল মুমিন (৪০) (বিশ্বাসী), ৫৬-৫৭ বাদে ১ থেকে ৬০ আয়াত:

১. হা-মীম।
২. এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে
৩. যিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং তাওবাহ কবূল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর, শক্তিশালী। তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।
৪. শুধু কাফিরেরাই আল্লাহর নিদর্শন সম্বন্ধে বিতর্ক করে; সুতরাং দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে।
৫. তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যা আরোপ করেছিল। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে আবদ্ধ করার জন্য অভিসন্ধি করেছিল এবং তারা অসার তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম এবং কত কঠোর ছিল আমার শাস্তি!
৬. এভাবে কাফিরদের ক্ষেত্রে সত্য হল তোমার পালনকর্তার বাণী - এরা জাহান্নামী।
৭. যারা আরশ বহন করে আছে এবং যারা এর চতুর্পার্শ্ব ঘিরে আছে তারা তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে: হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী, অতএব যারা তাওবাহ করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।
৮. আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাদেরকে আর তাদের পিতৃপুরুষ, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানাদির মধ্যে যারা সৎ কাজ করেছে তাদেরকেও চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন; আপনি মহা পরাক্রমশালী, মহা বিজ্ঞ।
৯. এবং আপনি তাদেরকে পাপ হতে রক্ষা করুন, সেই দিন আপনি যাকে শাস্তি হতে রক্ষা করবেন, তাকে তো অনুগ্রহই করবেন, এটাই তো মহাসাফল্য।
১০. কাফিরদেরকে উচ্চ কন্ঠে বলা হবে: তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের ক্ষোভ অপেক্ষা আল্লাহর অপ্রসন্নতা ছিল অধিক, যখন তোমাদের ঈমানের প্রতি আহবান করা হয়েছিল, আর তোমরা তা অস্বীকার করেছিলে।
১১. তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দু'বার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দু'বার জীবন দিয়েছেন। এখন আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। অতঃপর এখন ও নিস্কৃতির কোন উপায় আছে কি?
১২. তোমাদের এই পার্থিব শাস্তি এ জন্য যে, যখন এক আল্লাহকে ডাকা হত তখন তোমরা তাঁকে অস্বীকার করতে এবং আল্লাহর শরীক স্থির করা হলে তোমরা তা বিশ্বাস করতে। বস্তুতঃ মহান আল্লাহরই সমস্ত কর্তৃত্ব।
১৩. তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান এবং আকাশ হতে প্রেরণ করেন তোমাদের জন্য রিযক। আল্লাহর অভিমুখী ব্যক্তিই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।
১৪. সুতরাং আল্লাহকে ডাক তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে, যদিও কাফিরেরা এটা অপছন্দ করে।
১৫. তিনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের অধিপতি, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা অহী প্রেরণ করেন স্বীয় আদেশসহ যাতে সে সতর্ক করতে পারে কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে;
১৬. যেদিন মানুষ বের হয়ে পড়বে। সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। ঐ দিন কর্তৃত্ব কার? এক, পরাক্রমশালী আল্লাহরই।
১৭. এদিন প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফল দেয়া হবে; কারও প্রতি অবিচার করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।
১৮. তাদেরকে সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন সম্পর্কে, যখন দুঃখ কষ্টে তাদের প্রাণ কন্ঠাগত হবে। যালিমদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে এমন কোনো সুপারিশকারীও নেই।
১৯. চক্ষুর অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সেই সম্বন্ধে তিনি অবহিত।
২০. আল্লাহ বিচার করেন সঠিকভাবে; আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা বিচার করতে অক্ষম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
২১. তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে দেখতে পেত তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে এবং কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি হতে তাদেরকে রক্ষা করার কেহ ছিলনা।
২২. এটা এজন্য যে, রসূলগণ তাদের কাছে স্পষ্ট (নিদর্শন) নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তখন আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছিলেন। তিনি প্রবল শক্তিধর, শাস্তিদানে কঠোর।
২৩. আমি আমার নিদর্শন ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করেছিলাম
২৪. ফেরাউন, হামান ও কারূনের কাছে। কিন্তু তারা বলল, (এ লোকটা) এক জাদুকর, ঘোর মিথ্যুক।
২৫. অতঃপর যখন মূসা আমার নিকট হতে সত্য নিয়ে তাদের নিকট উপস্থিত হল তখন তারা বলল: মূসার ওপর যারা ঈমান এনেছে, তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা কর এবং নারীদেরকে জীবিত রাখ। কিন্তু কাফিরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই।
২৬. ফেরাউন বলল, ছেড়ে দাও আমাকে, আমি মূসাকে হত্যা করব, ডাকুক সে তার উপাস্যকে। আমি আশঙ্কা করছি, সে তোমাদের জীবন পদ্ধতিকে বদলে দেবে কিংবা দেশে বিপর্যয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
২৭. মূসা বলল, আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের আশ্রয় গ্রহণ করছি সকল দাম্ভিক অহংকারীদের হতে, যারা বিচার দিবসে বিশ্বাস করে না।
২৮. ফেরাউনের দলের এক মুমিন ব্যক্তি - যে তার ঈমানকে গোপন রেখেছিল - বলল, তোমরা একজন লোককে শুধু কি এজন্য মেরে ফেলবে যে, সে বলে, আল্লাহ আমার প্রতিপালক। অথচ সে তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছে। সে যদি মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে তার মিথ্যা বলার পরিণাম সে নিজেই ভুগবে। আর সে যদি সত্যবাদী হয়, তাহলে সে তোমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছে তার কিছু না কিছু তোমাদের ওপর পড়বেই। যে সীমালঙ্ঘন করে আর মিথ্যে বলে, আল্লাহ তাকে সঠিক পথ দেখান না।
২৯. হে আমার সম্প্রদায়! আজ কর্তৃত্ব তোমাদের, দেশে তোমরাই প্রবল; কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে? ফেরাউন বলল: আমি যা বুঝি, আমি তোমাদের তা-ই বলছি। আমি তোমাদেরকে শুধু সৎ পথই দেখিয়ে থাকি।
৩০. মুমিন ব্যক্তিটি বলল: হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের শাস্তির দিনের অনুরূপ দুর্দিনের আশংকা করি
৩১. যেমন ঘটেছিল নূহের কাওম, আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তীদের ক্ষেত্রে। আল্লাহ তো বান্দাদের প্রতি কোনো যুলম করতে চান না।
৩২. হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য আশংকা করি কিয়ামাত দিবসের
৩৩. যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করার কেহ থাকবে না। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন পথ প্রদর্শক নেই।
৩৪. ইতোপূর্বে ইউসুফ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সে তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছিল, সে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করেই চললে। শেষ পর্যন্ত যখন তার মৃত্যু হল, তখন তোমরা বললে- ওর পরে আল্লাহ আর কক্ষনো কোনো রসূল পাঠাবেন না। সীমালঙ্ঘনকারী ও সন্দেহবাদীদেরকে আল্লাহ এভাবেই পথভ্রষ্ট করেন।
৩৫. যারা নিজেদের নিকট কোনো দলিল-প্রমাণ না থাকলেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়, তাদের এ কাজ আল্লাহ এবং মুমিনদের দৃষ্টিতে অতিশয় ঘৃণার্হ। এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক উদ্ধত ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়কে মোহর করে দেন।
৩৬. ফেরাউন বলল, হে হামান! তুমি আমার জন্য এক সুউচ্চ ইমারত তৈরি কর, যাতে আমি উপায় পেয়ে যাই
৩৭. আকাশে ওঠার উপায়, যাতে আমি মূসার ইলাহকে দেখতে পাই; আমি মূসাকে অবশ্যই মিথ্যাবাদী মনে করি। এভাবে ফেরাউনের জন্য তার মন্দ কাজকে সুশোভিত করা হয়েছিল, আর সঠিক পথ থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছিল। ফেরাউনের অপকৌশল কেবল তার ধ্বংসই ডেকে এনেছিল।
৩৮. যে লোকটি ঈমান এনেছিল, সে আরো বলল, হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাচ্ছি।
৩৯. হে আমার সম্প্রদায়! এ পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস।
৪০. যে খারাপ কাজ করবে, তাকে কাজের অনুপাতেই প্রতিফল দেয়া হবে। পুরুষ হোক আর নারী হোক যে ব্যক্তিই সৎ কাজ করবে (উপরন্তু) সে মুমিনও, তাহলে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার মধ্যে তারা বে-হিসাব রিযক প্রাপ্ত হবে।
৪১. হে আমার সম্প্রদায়! কী আশ্চর্য, আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে আহবান করছ জাহান্নামের দিকে।
৪২. তোমরা আমাকে বলছ আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে, যার সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞান নেই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে।
৪৩. নিশ্চয়ই তোমরা আমাকে আহবান করছো এমন এক জনের দিকে যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহবানযোগ্য নয়। বস্তুতঃ আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহর নিকট এবং সীমালংঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী।
৪৪. আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা অচিরেই স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপার আল্লাহয় অপর্ণ করছি; আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন।
৪৫. অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্টতা হতে রক্ষা করলেন এবং কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল ফেরাউন সম্প্রদায়কে।
৪৬. সকাল-সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সম্মুখে এবং যেদিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে, সেদিন বলা হবে: ফেরাউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিনতম শাস্তিতে।
৪৭. যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন দুর্বলেরা দাম্ভিকদেরকে বলবে: আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম, এখন কি তোমরা আমাদের থেকে জাহান্নামের আগুনের কিয়দংশ নিবারণ করবে?
৪৮. দাম্ভিকেরা বলবে: আমরা সবাই তো জাহান্নামে আছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দাদের বিচার করে ফেলেছেন।
৪৯. আগুনের বাসিন্দারা জাহান্নামের রক্ষীদের বলবে, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দুআ কর, তিনি যেন আমাদের থেকে একদিনের শাস্তি কমিয়ে দেন।
৫০. তারা বলবে: তোমাদের নিকট কি স্পষ্ট নিদর্শনসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেননি? জাহান্নামীরা বলবে: অবশ্যই এসেছিল। প্রহরীরা বলবে: তাহলে তোমরাই প্রার্থনা কর, আর কাফিরদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয়।
৫১. নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে ও মুমিনদেরকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে এবং যেদিন সাক্ষীগণ দণ্ডায়মান হবে,
৫২. যেদিন যালিমদের কোনো ওযর আপত্তি কোন কাজে আসবে না, তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং নিকৃষ্ট আবাস।
৫৩. আমি অবশ্যই মূসাকে দান করেছিলাম পথনির্দেশ এবং বানী ইসরাঈলকে উত্তরাধিকারী করেছিলাম সেই কিতাবের
৫৪. পথনির্দেশ ও উপদেশ স্বরূপ; বোধশক্তিসম্পন্ন লোকদের জন্য।
৫৫. অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি তোমার ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।
৫৮. সমান নয় অন্ধ ও চক্ষুম্মান এবং যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, আর যারা দুষ্কৃতিপরায়ণ। তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।
৫৯. কিয়ামাত অবশ্যম্ভাবী, এতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করে না।
৬০. তোমার প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। যারা অহংকারবশতঃ আমার ‘ইবাদাত করে না, নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৭ তম প্রকাশ: সূরা আন নমল (২৭) (পিপীলিকা), ১ থেকে ৯৩ আয়াত:

১. তা সীন; এগুলি আয়াত আল-কুরআনের এবং সুস্পষ্ট কিতাবের।
২. পথ নির্দেশ ও সুসংবাদ মুমিনদের জন্য।
৩. যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে এবং যারা আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী।
৪. যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের দৃষ্টিতে তাদের কাজকে আমি শোভন করেছি, ফলে তারা বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ায়।
৫. এদেরই জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং এরাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
৬. নিশ্চয় তোমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে মহাবিজ্ঞ সর্বজ্ঞের নিকট হতে।
৭. স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল: আমি আগুন দেখেছি, সত্বর আমি সেখান হতে তোমাদের জন্য কোনো খবর আনব অথবা তোমাদের জন্য আনব জ্বলন্ত অঙ্গার, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।
৮. অতঃপর সে যখন ওর নিকট এলো, তখন ঘোষিত হল: ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আছে এই আগুনের মধ্যে এবং যারা আছে ওর চতুর্পার্শ্বে। জগতসমূহের রাব্ব আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত।
৯. হে মূসা! আমি তো আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১০. তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর, অতঃপর যখন সে ওটাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করতে দেখল, তখন সে পেছনের দিকে ছুটতে লাগল এবং ফিরেও তাকাল না। বলা হল: হে মূসা! ভীত হয়ো না, নিশ্চয়ই আমি এমন, আমার সান্নিধ্যে রাসূলগণ ভয় পায় না।
১১. তবে যে অত্যাচার করে অতঃপর মন্দ কাজের পরিবর্তে সৎ কাজ করে, তাহলে নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।
১২. আর তুমি তোমার হাত বগলে ঢোকাও, তা শুভ্র হয়ে বের হয়ে আসবে দোষমুক্ত অবস্থায়, তা হল ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নিকট নিয়ে আসা নয়টি নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।
১৩. অতঃপর যখন তাদের কাছে আমার দৃশ্যমান নিদর্শন আসল, তারা বলল, ‘এটা স্পষ্ট জাদু।
১৪. তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলি প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর ঐগুলিকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল। দেখ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কী হয়েছিল!
১৫. আমি অবশ্যই দাউদকে ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম এবং তারা বলেছিল: প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে তাঁর বহু মুমিন বান্দাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
১৬. সুলাইমান দাঊদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল। সে বলেছিল, ‘হে মানুষেরা! আমাকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে আর আমাদেরকে সব কিছু দেয়া হয়েছে, এটা (আল্লাহর পক্ষ হতে) অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।’
১৭. সুলাইমানের সামনে সমবেত করা হল তার বাহিনীকে, জিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে এবং তাদেরকে বিন্যস্ত করা হল বিভিন্ন বুহ্যে।
১৮. যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল, তখন এক পিপীলিকা বলল: হে পিপীলিকা বাহিনী! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর, যেন সুলাইমান এবং তার বাহিনী তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পদতলে পিষে না ফেলে।
১৯. সুলাইমান ওর উক্তিতে মৃদু হাস্য করল এবং বলল: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তজ্জন্য এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শ্রেণীভুক্ত করুন।
২০. সুলাইমান পক্ষীকুলের সন্ধান নিল এবং বলল: ব্যাপার কী, হুদহুদকে দেখছি না যে! সে অনুপস্থিত নাকি?
২১. সে উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দিব অথবা যবাহ করব।
২২. অতঃপর হুদহুদ অবিলম্বে এসে বলল, ‘আমি যা অবগত হয়েছি আপনি তা অবগত নন, আমি সাবা থেকে নিশ্চিত খবর নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
২৩. আমি দেখলাম এক নারী তাদের উপর রাজত্ব করছে, আর তাকে সব কিছুই দেয়া হয়েছে আর তার আছে এক বিরাট সিংহাসন।
২৪. এবং আমি তাকে আর তার সম্প্রদায়কে দেখলাম আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করতে। শয়ত্বান তাদের কাজকে তাদের জন্য শোভন করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎ পথ থেকে বাধা দিয়ে রেখেছে কাজেই তারা সৎ পথ পায় না।
২৫. তারা নিবৃত্ত রয়েছে আল্লাহকে সাজদাহ করা হতে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর লুকায়িত বস্তুকে প্রকাশ করেন, এবং যিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর।
২৬. আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি মহা আরশের মালিক।
২৭. সুলাইমান বলল: আমি দেখব, তুমি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যাবাদী?
২৮. তুমি যাও আমার এই পত্র নিয়ে এবং এটা তাদের নিকট অর্পণ কর; অতঃপর তাদের নিকট হতে দূরে সরে থেক এবং লক্ষ্য কর তাদের প্রতিক্রিয়া কী?
২৯. সেই নারী বলল, ‘ওহে সভাসদগণ! এই যে আমাকে এক সম্মানযোগ্য পত্র দেয়া হয়েছে।
৩০. এটা সুলাইমানের পক্ষ হতে আর তা এই: অসীম দাতা, অতীব দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু,
৩১. অহমিকা বশে আমাকে অমান্য করনা, এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও।
৩২. সে বলল, ওহে সভাসদরা! তোমরা আমার কর্তব্য সম্পর্কে আমাকে সিদ্ধান্ত দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতীত আমি কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।’
৩৩. তারা বলল: আমরাতো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই। কী আদেশ করবেন, তা আপনি ভেবে দেখুন।
৩৪. সে বলল: রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন ওকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে; এরাও এ রূপই করবে।
৩৫. আমি তাঁর কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, তারপর দেখি, দূতেরা কী (জবাব) নিয়ে আসে।’
৩৬. অতঃপর দূতরা যখন সুলাইমানের কাছে আসল, সুলাইমান বলল, ‘তোমরা কি আমাকে সম্পদ দিয়ে সাহায্য করছ, কিন্তু আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম, বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে আনন্দ কর।
৩৭. তাদের কাছে ফিরে যাও, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব যার মুকাবালা করার শক্তি তাদের নেই, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদেরকে অপমানিত করে সেখানে থেকে বের করে দেব আর তারা হবে অপদস্থ।’
৩৮. সুলাইমান বলল, ‘হে সভাসদবর্গ! তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবে?’
৩৯. এক শক্তিধর জ্বিন বলল, ‘আপনি আপনার জায়গা থেকে উঠবার আগে আমি তা আপনার কাছে এনে দেব, এ কাজে আমি অবশ্যই ক্ষমতার অধিকারী ও আস্থাভাজন।
৪০. যার কাছে কিতাবের (তাওরাতের) জ্ঞান ছিল সে বলল, ‘আপনার দৃষ্টি আপনার দিকে ফিরে আসার পূর্বেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব।’সুলাইমান যখন তা তার সামনে রক্ষিত দেখতে পেল তখন সে বলল- ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য- আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞ হই। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের কল্যাণেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে জেনে রাখুক), নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ।’
৪১. সুলাইমান বলল, ‘তার সিংহাসনের আকৃতি বদলে দাও, অতঃপর আমরা দেখি, সে (তার নিজের পৌঁছার পূর্বেই আলৌকিকভাবে তার সিংহাসন সুলায়মানের দরবারে রক্ষিত দেখে সত্য) পথের দিশা পায়, না যারা পথের দিশা পায় না সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।
৪২. ঐ নারী যখন এলো, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সিংহাসন কি এইরূপই? সে বলল, এটা তো যেন ওটাই; আমাদেরকে ইতোপূর্বেই প্রকৃত জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পনও করেছি।
৪৩. আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত তাই তাকে সত্য পথে চলা থেকে বাধা দিয়ে রেখেছিল, সে নারী ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
৪৪. তাকে বলা হল, ‘প্রাসাদে প্রবেশ কর।’যখন সে তা দেখল, সে ওটাকে পানির হ্রদ মনে করল এবং সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলাইমান বলল- ‘এটা তো স্বচ্ছ কাঁচমণ্ডিত প্রাসাদ। সে নারী বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি অবশ্যই নিজের প্রতি যুলম করেছি আর আমি সুলাইমানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করছি।’
৪৫. আমি ছামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। কিন্তু তারা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হল।
৪৬. সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছ? কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহ ভাজন হতে পার?
৪৭. তারা বলল, তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালিহ বলল, তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে, বস্তুতঃ তোমরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
৪৮. আর সেই শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং সৎ কাজ করত না।
৪৯. তারা বলল, তোমরা আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ কর; আমরা রাতে তাকে ও তার পরিবার পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করব, অতঃপর তার অভিভাবককে নিশ্চিত বলব: তার পরিবার পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করিনি; আমরা অবশ্যই সত্যবাদী।
৫০. তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক চক্রান্ত করেছিলাম। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি।
৫১. অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছে। আমি অবশ্যই তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি।
৫২. এইতো তাদের ঘরবাড়ি সীমা লংঘন হেতু যা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে; এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।
৫৩. আর যারা ঈমান এনেছিল ও (আল্লাহকে) ভয় করত তাদেরকে রক্ষা করেছিলাম।
৫৪. স্মরণ কর লূতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা দেখে-শুনে কেন অশ্লীল কাজ করছ,
৫৫. তোমরা কি কাম আসক্তি মেটানোর জন্য নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের নিকট গমন কর? তোমরা এমন এক জাতি যারা মূর্খের আচরণ করছ।
৫৬. তখন তার সম্প্রদায়ের এ কথা বলা ছাড়া আর কোনো জওয়াব ছিল না যে, তোমাদের জনপদ থেকে লূতের পরিবারবর্গকে বের করে দাও, এরা এমন লোক যারা পবিত্র সাজতে চায়।
৫৭. অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম, তার স্ত্রী ব্যতীত। আমি তার ভাগ্য ধ্বংসপ্রাপ্তদের মধ্যে নির্ধারণ করেছিলাম।
৫৮. তাদের উপর ভয়ঙ্কর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম; যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল, তাদের জন্য এই বর্ষণ ছিল কত মারাত্মক।
৫৯. বল: প্রশংসা আল্লাহরই এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি। শ্রেষ্ঠ কি আল্লাহ, নাকি তারা যাদেরকে শরীক করা হয়?
৬০. নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ) যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও পৃথিবী এবং তোমাদের জন্য আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম উদ্যানরাজি উদগত করি, তার বৃক্ষাদি উদগত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তারা হচ্ছে এক ন্যায়-বিচ্যুত সম্প্রদায়।
৬১. নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ) যিনি এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছেন আর তার ফাঁকে ফাঁকে নদীনালা প্রবাহিত করেছেন, তাতে সুদৃঢ় পর্বত সংস্থাপিত করেছেন এবং দু'দরিয়ার মাঝে পার্থক্যকারী আড়াল সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
৬২. নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ) যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর তোমাদেরকে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করেন? আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? অতি সামান্য উপদেশই তোমরা গ্রহণ কর।
৬৩. নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ) যিনি জল-স্থলের গভীর অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর (বৃষ্টিরূপী) অনুগ্রহের পূর্বক্ষণে শুভবার্তাবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? তারা যাকে (আল্লাহর) শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
৬৪. নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ) যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি করেন এবং যিনি তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযক দান করেন? আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বল, তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের প্রমাণপঞ্জি পেশ কর।
৬৫. বল, আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না আল্লাহ ছাড়া, আর তারা জানে না কখন তাদেরকে জীবিত করে উঠানো হবে।
৬৬. বরং আখিরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিঃশেষ হয়েছে; তারা তো এ বিষয়ে সন্দেহের মধ্যে রয়েছে, বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ।
৬৭. কাফিরেরা বলে: আমরা ও আমাদের পিতৃ-পুরুষরা মাটিতে পরিণত হয়ে গেলেও কি আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে?
৬৮. এ বিষয়ে তো আমাদেরকে এবং পূর্ব-পুরুষদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল। এটা তো পূর্ববর্তী উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।
৬৯. বল: পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ অপরাধীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে।
৭০. তাদের জন্য দুঃখ কর না, আর তাদের চক্রান্তের কারণে মনে কষ্ট নিয়ো না।
৭১. তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, এই ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে?
৭২. বল, তোমরা যে বিষয়ে ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছ সম্ভবতঃ তার কিছু তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছে।
৭৩. তোমার প্রতিপালক নিশ্চয়ই মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
৭৪. তোমার প্রতিপালক অবশ্যই জানেন তাদের অন্তর যা গোপন করে আর যা প্রকাশ করে।
৭৫. আকাশে আর যমীনে এমন কোনো অদৃশ্য বিষয় নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।
৭৬. নিশ্চয় এ কুরআন সেগুলোর অধিকাংশ বিবৃত করে যে বিষয়ে বানী ইসরাঈল মতভেদ করেছিল।
৭৭. আর তা নিশ্চিতই মুমিনদের জন্য সঠিক পথের দিশারী ও রহমত।
৭৮. তোমার প্রতিপালক তাঁর বিধান অনুযায়ী তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন আর তিনি প্রবল পরাক্রান্ত, সর্বজ্ঞানের অধিকারী।
৭৯. কাজেই তুমি আল্লাহর উপর নির্ভর কর, তুমি তো সুস্পষ্ট সত্যের উপর আছ।
৮০. মৃতকে তুমি কথা শোনাতে পারবে না, বধিরকেও পারবে না আহবান শোনাতে, যখন তারা পেছন ফিরে চলে যায়।
৮১. তুমি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা হতে পথে আনতে পারবে না। তুমি শোনাতে পারবে শুধু তাদেরকে যারা বিশ্বাস করে। আর তারাই আত্মসমর্পনকারী (মুসলিম)।
৮২. যখন ঘোষিত শাস্তি তাদের উপর এসে যাবে, তখন আমি মাটির গহবর হতে বের করব এক জীব, যা তাদের সাথে কথা বলবে; এ জন্য যে, মানুষ আমার নিদর্শনে অবিশ্বাসী।
৮৩. স্মরণ কর সেই দিনের কথা, যেদিন আমি সমবেত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একটি দলকে, যারা আমার নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করত এবং তাদেরকে সারিবদ্ধ করা হবে।
৮৪. যখন তারা সমবেত হবে তখন (আল্লাহ তাদেরকে) বলবেন, তোমরা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিলে, অথচ ওটা তোমরা জ্ঞানায়ত্ত করতে পারনি? না তোমরা অন্য কিছু করছিলে?
৮৫. সীমা লংঘন হেতু তাদের উপর ঘোষিত শাস্তি এসে পড়বে; ফলে তারা কিছুই বলতে পারবে না।
৮৬. তারা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাত সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিনকে করেছি আলোকপ্রদ? এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।
৮৭. আর যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন আল্লাহ যাদেরকে চান তারা ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সবাই ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে এবং সবাই তাঁর নিকট আসবে বিনীত অবস্থায়।
৮৮. তুমি পর্বতমালা দেখে অচল মনে করছ, অথচ সেদিন ওগুলি হবে মেঘপুঞ্জের ন্যায় চলমান, এটা আল্লাহরই সৃষ্টি-নৈপুণ্য, যিনি সব কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা কর, সেই সম্বন্ধে তিনি সম্যক অবগত।
৮৯. যে কেহ সৎ কাজ নিয়ে আসবে, সে উৎকৃষ্টতর প্রতিফল পাবে এবং সেদিন তারা শংকা হতে নিরাপদ থাকবে।
৯০. আর যে কেহ অসৎ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে অধোমুখে নিক্ষেপ করা হবে আগুনে (এবং তাদেরকে বলা হবে) তোমরা যা করতে, তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে।
৯১. আমি নির্দেশিত হয়েছি এই (মক্কা) নগরীর প্রতিপালকের ‘ইবাদাত করার জন্য যিনি তাকে (অর্থাৎ এই নগরীকে) সম্মানিত করেছেন। সকল বস্তু তাঁরই, আর আমি আদিষ্ট হয়েছি আমি যেন (আল্লাহর নিকট) আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই।
৯২. আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি কুরআন আবৃত্তি করতে। অতঃপর যে ব্যক্তি সৎ পথ অনুসরণ করে, সে তা অনুসরণ করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং কেহ ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করলে তুমি বল, আমি তো শুধু সর্তককারীদের মধ্যে একজন।
৯৩. আর বল, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই। তিনি শীঘ্রই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনগুলো দেখাবেন, আর তা তোমরা চিনতে পারবে। তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে তোমার পালনকর্তা অমনোযোগী নন।

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৮ তম প্রকাশ: সূরা আয্-যুমার (৩৯) (দলবদ্ধ জনতা), ২৯ থেকে ৬৬ আয়াত:

২৯. আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত পেশ করছেন, এক ব্যক্তির মালিক অনেক যারা পরস্পর বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন এবং এক ব্যক্তির মালিক শুধু একজন; এই দুইয়ের অবস্থা কি সমান? প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য; কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা জানে না।
৩০. তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।
৩১. অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে বাদানুবাদ করবে।
৩২. যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা বলে এবং সত্য আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করে সে অপেক্ষা যালিম আর কে? কাফিরদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?
৩৩. যারা সত্য নিয়ে আগমন করছে এবং সত্যকে সত্য মেনে নিয়েছে; তারাই তো খোদাভীরু।
৩৪. তাদের বাঞ্ছিত সব কিছুই আছে তাদের রবের নিকট। এটাই সৎকর্মশীলদের পুরস্কার।
৩৫. কারণ তারা যে সব মন্দ কাজ করেছিল আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদেরকে তাদের সৎ কাজের জন্য পুরস্কৃত করবেন।
৩৬. আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার জন্য কোনো পথ প্রদর্শক নেই।
৩৭. আর আল্লাহ যাকে পথ দেখান, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আল্লাহ কি মহাশক্তিধর প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?
৩৮. তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ! বল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সেই অনিষ্টতা দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? বল, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে।
৩৯. বল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা স্ব স্ব অবস্থায় কাজ করতে থাক, আমিও আমার কাজ করছি। শীঘ্রই জানতে পারবে
৪০. কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং কার উপর আপতিত হবে স্থায়ী শাস্তি।
৪১. আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি মানুষের কল্যাণের জন্য। অতঃপর যে সৎ পথ অবলম্বন করে সে তা করে নিজেরই কল্যাণের জন্য এবং যে বিপথগামী হয় সেতো বিপথগামী হয় নিজেরই ধ্বংসের জন্য এবং তুমি তাদের তত্ত্বাবধায়ক নও।
৪২. আল্লাহই প্রাণ হরণ করেন জীবসমূহের, তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতঃপর যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অপরগুলি ফিরিয়ে দেন, এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
৪৩. তাহলে কি তারা আল্লাহ ছাড়া অপরকে সুপারিশ সাব্যস্ত করেছে? বল, তাদের কোনো ক্ষমতা না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও?
৪৪. বল, সুপারিশ ইখতিয়ারে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। অতঃপর তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
৪৫. একক আল্লাহর কথা বলা হলে, যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর বিতৃষ্ণায় সংকুচিত হয় এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাদের দেবতাগুলির উল্লেখ করা হলে তারা আনন্দে উল্লসিত হয়।
৪৬. বল, হে আল্লাহ! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা! আপনার বান্দারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করে, আপনি তাদের মধ্যে ওর ফাইসালা করে দেবেন।
৪৭. যারা অন্যায়কারী দুনিয়াতে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু যদি তাদেরই হয়, আর তার সাথে আরো অত পরিমাণ হয়, তারা ক্বিয়ামতের কঠিন ‘আযাব থেকে বাঁচার জন্য মুক্তিপণ স্বরূপ দিতে চাইবে। সেখানে আল্লাহর নিকট থেকে তারা এমন কিছুর সম্মুখীন হবে, যা তারা কক্ষনো অনুমানও করেনি।
৪৮. তাদের কৃতকর্মের মন্দ রূপ সেদিন প্রকাশ হয়ে পড়বে, আর তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত তাই তাদেরকে ঘিরে ফেলবে।
৪৯. মানুষকে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করলে সে আমাকে আহবান করে। অতঃপর যখন আমি তার প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে বলে, আমি তো এটা লাভ করেছি আমার জ্ঞানের মাধ্যমে। বস্তুতঃ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না।
৫০. তাদের পূর্ববর্তীরাও এটাই বলত, কিন্তু তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন কাজে আসেনি।
৫১. তাদের কর্মের মন্দ ফল তাদের উপর আপতিত হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা যুল্‌ম করে তাদের উপরও তাদের কর্মের মন্দ ফল আপতিত হবে এবং তারা ব্যর্থও করতে পারবে না।
৫২. তারা কি জানে না, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার রিযিক বৃদ্ধি করেন অথবা হ্রাস করেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য।
৫৩. বল, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
৫৪. তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও আর তাঁর অনুগত হও তোমাদের কাছে ‘আযাব আসার পূর্বে। (‘আযাব এসে গেলে) তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।
৫৫. তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে যাকে উত্তম আখ্যায়িত করা হয়েছে, তোমরা সেগুলোর অনুসরণ কর তোমাদের কাছে অকস্মাৎ ‘আযাব এসে যাওয়ার পূর্বে যে বিষয়ে তোমরা টেরও পাবে না।
৫৬. যাতে কাউকে বলতে না হয়, হায় আফসোস! আমি আল্লাহর প্রতি (আমার কর্তব্যে) অবহেলা করেছিলাম, আর আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।
৫৭. অথবা এ কথা যেন বলতে না হয় যে, আল্লাহ যদি আমাকে সঠিক পথ দেখাতেন, তাহলে আমি অবশ্যই মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
৫৮. অথবা শাস্তি দেখার পর কাউকে যেন বলতে না হয়, আমাকে যদি একবার (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত, তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
৫৯. (তাকে উত্তর দেয়া হবে) না, বরং তোমার কাছে আমার নিদর্শন এসেছিল, তখন তুমি সেগুলোকে মিথ্যে বলে অস্বীকার করেছিলে, অহংকার করেছিলে আর কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
৬০. যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে ক্বিয়ামতের দিনে তুমি তাদের মুখগুলো কালো দেখতে পাবে. অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নামে নয়?
৬১. আর যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে তাদের আল্লাহ্ উদ্ধার করবেন তাদের সাফল্যময় স্থানসমূহে, মন্দ তাদের স্পর্শ করবে না, আর তারা দুঃখও করবে না।
৬২. আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর কর্মবিধায়ক।
৬৩. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর চাবি তাঁরই নিকট। যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
৬৪. বল, হে অজ্ঞ ব্যক্তিরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত করতে বলছ?
৬৫. তোমার প্রতি, তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই অহী হয়েছে; তুমি আল্লাহর শরীক স্থির করলে তোমার কাজ নিস্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
৬৬. অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদাত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত থাকুন।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: যদি বয়কটকালীন প্রকাশের সাথে পূর্বের প্রকাশিত আয়াতের ভাষার ব্যবহার দেখেন, তবে মুহাম্মদের মনোজগতের অস্থিরতা ও নতজানু হবার নমনীয়তা চোখে পড়বে সহজেই; আর এই নমনীয়তাই মুহাম্মদের সন্ত্রাসী মানসিকতা তৈরির প্রথম পদক্ষেপ; মুহাম্মদ আল্লার নামে এতটাই বর্বর মরুদস্যুতে রূপান্তরিত হবেন একসময় যে, একদিনে ৭০০ থেকে ৯০০ মানুষকে মাথা কেটে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে আরামে নামাজ শেষ করবেন, এবং নামাজ থেকে ফিরে এসে পরবর্তী আক্রমণের অস্ত্র সংগ্রহ করার জন্য হাজারখানেক নারী-শিশুকে দাস হিসেবে বিক্রি করতে পাঠিয়ে দেবেন। ইতিহাসে খুনী থেকে সাধু হওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়, কিন্তু এরকম আত্মপ্রেমী, গোবেচারা, ভিড় এড়িয়ে চলা মানুষ থেকে দ্বৈতসত্তার ঠাণ্ডা মাথার খুনী হয়ে ওঠা মানুষ একজনই!

সত্য উন্মোচিত হবে অবশ্যই, ১৪০০ বছরের বালিচাপায় তা ঢাকা থাকবে না মোটেই! তবে আপাতত আপনাকে করা প্রশ্নের উত্তরটা খুঁজে বের করলেই অনেককিছু উন্মোচিত হয়ে যাবে ধাঁধাঁর। প্রশ্ন হচ্ছে: মুহাম্মদ মক্কার প্রথম নবীর মর্যাদা কাকে দিয়েছিলেন এবং কীভাবে?
যতদুর জানা যায়, ইয়াথরিব/ইয়াসরিব(মদিনা)-তে স্থায়ী হবার আগ পর্যন্ত মুহাম্মদ ও তার সাহাবীগন সিরিয়া'র বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখে নামাজে দাঁড়াতেন, যদিও এসময়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে কোনো স্থাপনা ছিলো কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে! এছাড়া খলিফা উমর-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়; মুহাম্মদের ব্যাখ্যার আগে কাবা ইব্রাহীম নির্মিত এবং মাকামে ইব্রাহীম (ইব্রাহীমের পায়ের ছাপ!) সম্পর্কে মক্কাবাসীদের খুব একটা ধারণা ছিলো না! মুহাম্মদ নিজেও এ বিষয়ে ছিলেন সন্দিহান! বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখে নামাজে দাঁড়ানো সেটাই প্রমাণ করে। এছাড়া সাহাবীদের সাফা-মারওয়া দৌড়াতে রাজি করানোর জন্য মুহাম্মদকে কোরআনের আয়াত সহ হাজেরা-ইসমাঈল-এর গল্প পর্যন্ত আমদানি করতে হয়েছে!


কোনো মুমিন মুসলিম গবেষকই ইসমাঈলের সাথে মুহাম্মদের পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়টি সঠিক ইসলামী তথ্যসুত্র দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন না; কোটি টাকার বাজি রেখে বলতে পারেন! মাত্র একটি প্রশ্নই তাদের কাবু করার জন্য যথেষ্ট: বলুন, ‘ইসমাঈল’ মুহাম্মদের কততম পুরুষ এবং তাদের নাম কী? আমরা বাজারে আদম থেকে মুহাম্মদ পর্যন্ত যে সব বংশতালিকা পাই, তাকে সহজ কথায় বলা চলে 'গাঁজার নৌকা পাহাড় দিয়ে যায়' টাইপ! যেমন: সঠিক ইসলামী তথ্যসূত্রে আজরাইল/আজ্রাইল ফেরেশতার নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় না (ইসলামে তাকে মৃত্যুর ফেরেশতা বলা হয় মাত্র!); আদম থেকে মুহাম্মদ তো অনেক দূর গ্যালাক্সির বিষয়! একটা অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে রাখি; মুহাম্মদের পূর্ব-পুরুষ আদনান পর্যন্ত একটি ধারাবাহিক সিরিয়াল সঠিক ইসলামী তথ্যসূত্রে পাওয়া যায়; কিন্তু আদনান থেকে ইসমাঈল কততম পুরুষ এবং তারা কে-কে, তার কোনো সঠিক দলিল কোনো বাপের-বেটা দিতে পারবে না! ইমাম মালিক-সহ অধিকাংশ ওলামাদের মতে এই বংশক্রম অজানা এবং এর সঠিক কোনো দলিল কখনই পাওয়া যায়নি!

ইব্রাহীমের নিজ সন্তান কুরবানি দেওয়া এবং শয়তানকে পাথর মারার মিথটাও চূড়ান্তভাবে হাস্যকর! মক্কায় হজ্জের সময় আমার সৌদি লাইব্রেরিয়ান গাইডকে বলেছিলাম ইসমাঈলকে কুরবানি করার স্থান দেখানোর জন্য; এখনও খুব সচেতনভাবে না চাইলে এটি দেখার সুযোগ খুব কম লোকের হয়! শয়তানকে পাথর মারার স্থান থেকে কাবাকে সামনে রেখে দাড়ালে বাঁ-পাশের পাহাড়ের ওপরে এটি অবস্থিত, এটি এতই উঁচুতে, খালি চোখে প্রায় দেখাই যায় না! যে-ছবিটি সংযুক্ত করে দিচ্ছি নিচে, সেটি মিনায় অবস্থিত ব্রিজের উপর থেকে দাঁড়িয়ে ৩০০ এম.এম ডিএসএলআর লেন্স দিয়ে শতভাগ জুম করে তোলা! আমি নিশ্চিত, মুহাম্মদ মিনায় অবস্থানকালের কোনো এক সময়ে এই স্থানটি দেখিয়ে তার সাহাবীদের কাছে ইসমাইল-কে কুরবানি করার গল্পটি বলেছিলেন। স্থানটি এখনও মানুষ যাতায়াতের উপযুক্ত নয়, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এখানে পৌঁছে কুরবানি করার গল্পের বিশ্বাস কেবল গাধাদের জন্য সংরক্ষিত!


(ছবিতে গম্বুজ আকৃতির স্থানটি ইব্রাহীমের সন্তান কুরবানী দেবার স্থান)
পূর্ণাকারের ছবি এখানে

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৭ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ৫ম তিন অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

এ পর্বেও নতুন কিছু নেই; তবে ১০৯, ১১০, ১১১ তম প্রকাশ এটা প্রমান করবে, মুহাম্মদ তার সাহাবীদের আবারও নতুন করে ধর্মপাঠ দিচ্ছেন! তাদের আল্লাহকে ভয় এবং ভরসা করার কথা বলছেন। সেইসাথে একথাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, তিনি কেবল একজন বার্তাবাহক-সতর্ককারী এবং কোরআন তার বানানো কথা নয়! এসব সত্যিই আল্লাহর বাণী!

মুহাম্মদ দ্বারা ১০৯ তম প্রকাশ: সূরা আল জাসিয়াহ (৪৫) (নতজানু), ১৪ নং আয়াত বাদে ০১ থেকে ৩৭ আয়াত:

১. হা-মীম।
২. এ কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে।
৩. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য।
৪. তোমাদের সৃষ্টিতে এবং জীবজন্তুর বিস্তারে নিদর্শন রয়েছে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য।
৫. রাত ও দিনের আবর্তনে, আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে যমীনকে তার মৃত্যুর পর আবার জীবিত করেন আর বায়ুর পরিবর্তনে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
৬. এগুলি আল্লাহর আয়াত, যা আমি তোমার নিকট আবৃত্তি করছি যথাযথভাবে; সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন্ বাণীতে বিশ্বাস করবে?
৭. দুর্ভোগ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপীর।
৮. যে আল্লাহর আয়াত শোনে যা তার সামনে পাঠ করা হয়, অতঃপর অহমিকার সাথে (কুফুরীর উপর) থাকে, যেন সে তা শোনেইনি; কাজেই তাকে ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ দাও।
৯. যখন আমার কোনো আয়াত সে অবগত হয়, তখন সে তা নিয়ে পরিহাস করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
১০. তাদের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম; তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে অভিভাবক স্থির করেছে তারাও নয়। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
১১. এ (কুরআন) সঠিক পথের দিশারী। যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য আছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১২. আল্লাহই সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
১৩. তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সব কিছু নিজ অনুগ্রহে। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন।
১৫. যে সৎ কাজ করে, সে তার কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেহ মন্দ কাজ করলে ওর প্রতিফল সেই ভোগ করবে, অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।
১৬. আমি তো বানী ইসরাঈলকে কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছিলাম এবং দিয়েছিলাম শ্রেষ্ঠত্ব বিশ্বজগতের উপর।
১৭. তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দান করেছিলাম দ্বীন সম্পর্কে। তাদের নিকট জ্ঞান আসার পর তারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ বিরোধিতা করেছিল, তারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করত, তোমার প্রতিপালক কিয়ামাত দিবসে তাদের মধ্যে সেই বিষয়ের ফায়সালা করে দিবেন।
১৮. এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দীনের বিশেষ বিধানের উপর। সুতরাং তুমি ওর অনুসরণ কর, অজ্ঞদের খেয়াল-খুুশির অনুসরণ কর না।
১৯. আল্লাহর মুকাবিলায় তারা তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না; যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ ধর্মভীরুদের বন্ধু।
২০. এ (কুরআন) মানুষের জন্য জ্ঞানের আলো, আর নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য পথের দিশারী এবং রহমত স্বরূপ।
২১. দুষ্কৃতিকারীরা কি মনে করে যে, আমি জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে তাদের সমান গণ্য করব, যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে? তাদের সিদ্ধান্ত কতই মন্দ!
২২. আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজ অনুযায়ী ফল পেতে পারে, আর তাদের প্রতি যুলম করা হবে না।
২৩. তুমি কি লক্ষ্য করছ তাকে, যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহ জেনেশুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয় মোহর করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর ওপর রেখেছেন আবরণ। অতএব, কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
২৪. তারা বলে: একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি ও বাঁচি, আর সময়ই (কাল) আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্তুতঃ এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, তারা তো শুধু মনগড়া কথা বলে।
২৫. তাদের নিকট যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত আবৃত্তি করা হয়, তখন তাদের কোনো যুক্তি থাকে না, শুধু এই উক্তি ছাড়া যে, তোমরা সত্যবাদী হলে আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে উপস্থিত কর।
২৬. বল: আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন ও তোমাদের মৃত্যু ঘটান। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাত দিবসে একত্রিত করবেন যাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
২৭. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই; যেদিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে, সেদিন মিথ্যাশ্রয়ীরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
২৮. এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়কে দেখবে ভয়ে নতজানু; প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তার আমলনামার প্রতি আহবান করা হবে, আজ তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে, যা তোমরা করতে।
২৯. আমার এ কিতাব তোমাদের ব্যাপারে সত্য কথাই বলবে, তোমরা যা করতে আমি তাই-ই লিখে রাখতাম।
৩০. যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, তাদের প্রতিপালক তাদেরকে দাখিল করবেন স্বীয় রাহমাতে। এটাই মহা সাফল্য।
৩১. পক্ষান্তরে যারা কুফরী করে তাদেরকে বলা হবে: তোমাদের নিকট কি আমার আয়াত পাঠ করা হয়নি? কিন্তু তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিলে এবং তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।
৩২. যখন বলা হয়: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামাত - এতে কোনো সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলে থাক: আমরা জানি না, কিয়ামাত কী; আমরা মনে করি, এটা একটি ধারণা মাত্র এবং আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই।
৩৩. তাদের মন্দ কাজগুলি তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে।
৩৪. আর বলা হবে: আজ আমি তোমাদেরকে বিস্মৃ ত হব, যেমন তোমরা এই দিনের সাক্ষাৎকারকে বিস্মৃত হয়েছিলে। তোমাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
৩৫. এটা এ জন্য যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতগুলোকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিষয় বানিয়ে নিয়েছিলে, আর দুনিয়ার জীবন তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল। কাজেই আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না, আর তাওবাহ করার সুযোগ দেয়া হবে না।
৩৬. অতএব প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি আসমানের প্রতিপালনকারী, যমীনের প্রতিপালনকারী, বিশ্বজগতের প্রতিপালনকারী ।
৩৭. আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে গৌরব গরিমা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

মুহাম্মদ দ্বারা ১১০ তম প্রকাশ: সূরা আত তাগাবুন (৬৪) (মোহ অপসারণ), ০১ থেকে ১৩ আয়াত:

১. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, সার্বভৌমত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই; তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২. তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের কেউ-কেউ অবিশ্বাসী ও তোমাদের কেউ-কেউ বিশ্বাসী। তোমরা যা কর আল্লাহ সম্যক দ্রষ্টা।
৩. তিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী যথাযথভাবে এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন। তোমাদের আকৃতি করেছেন সুশোভন এবং প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই নিকট।
৪. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন, তোমরা যা গোপন কর ও তোমরা যা প্রকাশ কর এবং তিনি অন্তর্যামী।
৫. তোমাদের নিকট কি পৌঁছেনি পূর্ববর্তী কাফিরদের বৃত্তান্ত? তারা তাদের কর্মের মন্দফল আস্বাদন করেছিল এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
৬. তা এ জন্য যে, তাদের নিকট যখন তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনসহ আসতো, তখন তারা বলত: মানুষই কি আমাদের পথের সন্ধান দিবে? অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল; কিন্তু এতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসা।
৭. কাফিরেরা দাবি করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। বল: নিশ্চয়ই হবে, আমার রবের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তোমাদের সেই সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।
৮. অতএব তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও যে জ্যোতি (কুরআন) আমি অবতীর্ণ করেছি তাতে বিশ্বাস স্থাপন কর। তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
৯. স্মরণ কর, যেদিন তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন সমাবেশ দিনে, সেদিন হবে লাভ লোকসানের দিন। যে ব্যক্তি আল্লাহয় বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। এটাই মহা সাফল্য।
১০. কিন্তু যারা কুফরী করে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, কত মন্দ ঐ প্রত্যাবর্তনস্থল!
১১. আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত।
১২. আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা।
১৩. আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। সুতরাং আল্লাহ্‌র ওপরেই তবে মুমিনরা নির্ভর করুক।


মুহাম্মদ দ্বারা ১১১ তম প্রকাশ: সূরা হুদ (১১) (নবী হুদ), ১২, ১৭, ১১৪ বাদে ০১ থেকে ১২৩ আয়াত:

১. আলিফ লাম রা। এটি (কুরআন) এমন কিতাব, যার আয়াতগুলি (প্রমাণাদী দ্বারা) মাযবূত করা হয়েছে। অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; প্রজ্ঞাময়ের (আল্লাহর) পক্ষ হতে।
২. এ (উদ্দেশে) যে, আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদাত কর না; আমি (নাবী) তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ হতে তোমাদেরকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
৩. আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।
৪. আল্লাহরই নিকট তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।
৫. জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন আল্লাহর নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন, যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন, যা কিছু অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে।
৬. ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন কোনো জীব নেই, যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই, তিনি জানেন, তাদের থাকার জায়গা কোথায় আর কোথায় তাদেরকে (মৃত্যুর পর) রাখা হয়, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট লিপিকায়।
৭. আর তিনি এমন, যিনি সমস্ত আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং সেই সময় তাঁর আরশ পানির উপর ছিল, যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করে নেন যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম ‘আমলকারী কে? আর যদি তুমি বল: নিশ্চয়ই তোমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করা হবে, তখন যে সব লোক কাফির তারা বলে: এটা তো নিছক স্পষ্ট যাদু।
৮. আর যদি আমি কিছু দিনের জন্য তাদের থেকে শাস্তিকে মুলতবী করে রাখি তাহলে তারা বলতে থাকে: সেই শাস্তিকে কিসে আটকে রেখেছে? স্মরণ রেখ, যেদিন ওটা তাদের উপর এসে পড়বে, তখন তা কারও নিবারণে কিছুতেই নিবারিত হবে না, আর যা নিয়ে তারা উপহাস করছিল তা এসে তাদেরকে ঘিরে নিবে।
৯. আমি যদি মানুষকে আমার পক্ষ হতে করুণার স্বাদ গ্রহণ করাই, অতঃপর তার রাশ টেনে ধরি তাহলে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়।
১০. আর তাকে বিপদ-আপদ স্পর্শ করার পর আমি যদি তাকে নি‘আমাতের স্বাদ গ্রহণ করাই, তখন সে বলতে শুরু করে: আমার সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে গেল। (আর) সে গর্ব করতে থাকে, আত্মপ্রশংসা করতে থাকে।
১১. কিন্তু যারা ধৈর্য ধারণ করে ও ভাল কাজ করে এমন লোকদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং বিরাট প্রতিদান।
১৩. তাহলে কি তারা বলে যে, ওটা সে নিজেই রচনা করেছে? তুমি বলে দাও: তাহলে তোমরাও ওর অনুরূপ রচিত দশটি সূরা আনয়ন কর এবং (নিজ সাহায্যার্থে) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাকে ডাকতে পার ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়েই থাক।
১৪. তারা যদি তোমাদের ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে নাও যে, আল্লাহর জ্ঞান অনুসারেই তা অবতীর্ণ হয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই। তাহলে এখন কি তোমরা আত্মসমর্পণ করবে?
১৫. যারা শুধু পার্থিব জীবন এবং ওর জাঁকজমকতা কামনা করে, আমি তাদের কৃতকর্মগুলির ফল দুনিয়ায়ই দিয়ে দিই, তাদের জন্য কিছুই কম করা হয় না।
১৬. এরা এমন লোক যে, তাদের জন্য আখিরাতে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই; আর তারা যা কিছু করছে তাও বিফল হবে।
১৮. যারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে, তাদের থেকে বড় যালিম আর কে হতে পারে? তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত করা হবে আর সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেবে যে, এই লোকরাই তাদের রব্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছিল। শুনে রেখ! আল্লাহর অভিশাপ সেই যালিমদের ওপর
১৯. যারা অপরকে আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত রাখত এবং ওতে বক্রতা বের করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকত; আর তারা তো আখিরাতেও অমান্যকারী।
২০. দুনিয়াতে তারা আল্লাহকে অক্ষম করে দিতে পারত না, আর আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারীও ছিল না, তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে। তারা না শুনতে পারত, আর না দেখতে পারত।
২১. এরা সেই লোক যারা নিজেদেরকে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আর তারা যা কিছু রচনা করেছিল, তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেছে।
২২. এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আখেরাতে এরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
২৩. নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কার্যাবলী সম্পন্ন করেছে, আর নিজেদের পালনকর্তার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে, এরূপ লোকেরাই হচ্ছে জান্নাতবাসী, তাতে তারা অনন্তকাল থাকবে।
২৪. দু'শ্রেণীর লোকের দৃষ্টান্ত হল যেমন একজন হল অন্ধ ও বধির, অন্যজন চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশীল, এ দু'জন কি তুলনায় সমান হতে পারে? এরপরও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
২৫. আমি নূহকে তার কাওমের কাছে পাঠিয়েছিলাম। (সে বলেছিল) আমি তোমাদের জন্য একজন স্পষ্ট সতর্ককারী,
২৬. তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদাত কর না; আমি তোমাদের উপর এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির আশংকা করছি।
২৭. অতঃপর তার সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সব নেতৃস্থানীয় লোক কাফির ছিল তারা বলতে লাগল: আমরা তো তোমাকে আমাদেরই মত মানুষ দেখতে পাচ্ছি; আর আমরা দেখছি যে, শুধু ঐ লোকেরাই তোমার অনুসরণ করছে, যারা আমাদের মধ্যে নিতান্তই হীন ও ইতর, কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা না করেই; আর আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্বও আমরা দেখছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে মনে করছি।
২৮. সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! আচ্ছা বলত, আমি যদি স্বীয় রবের পক্ষ হতে প্রমাণের উপর (প্রতিষ্ঠিত হয়ে) থাকি এবং তিনি আমাকে নিজ সন্নিধান হতে রাহমাত (নবুওয়াত) দান করেন, অতঃপর ওটা তোমাদের বোধগম্য না হয়, তাহলে কি ঐ বিষয়ে তোমাদের বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা ওটা অবজ্ঞা করতে থাক?
২৯. হে আমার জাতির লোকেরা! আমি এ কাজে তোমাদের কাছে কোনো ধন-সম্পদ চাই না, আমার পারিশ্রমিক আছে কেবল আল্লাহর কাছে। আর মু'মিনদের তাড়িয়ে দেয়া আমার জন্য শোভনীয় নয়, তারা তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ অবশ্যই লাভ করবে, কিন্তু আমি দেখছি তোমরা এমন এক জাতি যারা মূর্খের আচরণ করছ।
৩০. হে আমার জাতির লোকেরা! আমি যদি এই লোকদেরকে তাড়িয়ে দিই, তাহলে আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে কে বাঁচাবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ নেবে না?
৩১. আর আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছি না যে, আমার নিকট আল্লাহর সকল ভাণ্ডার রয়েছে। এবং আমি অদৃশ্যের কথা জানি না, আর আমি এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আর যারা তোমাদের চোখে হীন, আমি তাদের সম্বন্ধে এটা বলতে পারি না যে, আল্লাহ কখনও তাদেরকে কোন নি'আমাত দান করবেন না; তাদের অন্তরে যা কিছু আছে তা আল্লাহ উত্তম রূপে জানেন, আমি এরূপ বললে অন্যায়ই করে ফেলব।
৩২. তারা বলল: হে নূহ! তুমি আমাদের সাথে বির্তক করেছ, অনন্তর সেই বির্তক অনেক বেশি করেছ। সুতরাং যে সম্বন্ধে তুমি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ, তা আমাদের সামনে আনয়ন কর, যদি তুমি সত্যবাদী হও।
৩৩. সে বলল: ওটাতো আল্লাহ তোমাদের সামনে আনয়ন করবেন, যদি তিনি ইচ্ছা করেন এবং তোমরা তাঁকে অক্ষম করতে পারবে না।
৩৪. আমি তোমাদের কোন কল্যাণ করতে চাইলেও আমার কল্যাণ কামনা তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে পথহারা করতে চান। তিনিই তোমাদের রবব, আর তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে যাবে।
৩৫. তাহলে কি তারা (মাক্কার কাফিরেরা) বলে, সে (মুহাম্মাদ) এটা (কুরআন) নিজেই রচনা করেছে? তুমি বলে দাও: যদি আমি তা নিজে রচনা করে থাকি, তাহলে আমার এই অপরাধ আমার ওপর বর্তাবে, আর তোমরা যে অপরাধ করছ, তা থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত।
৩৬. আর নূহের প্রতি অহী প্রেরিত হল: যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার কাওম হতে আর কেহই ঈমান আনবে না, অতএব যা তারা করছে, তাতে তুমি মোটেই দুঃখ কর না।
৩৭. আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার নির্দেশক্রমে নৌকা নির্মাণ কর, আর আমার কাছে যালিমদের (কাফিরদের) সম্পর্কে কোনো কথা বল না, তাদের সকলকে নিমজ্জিত করা হবে।
৩৮. সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল, আর যখনই তার কাওমের প্রধানদের কোনো দল উহার নিকট দিয়ে গমন করত, তখনই তার সাথে উপহাস করত। সে বলত: যদি তোমরা আমাদেরকে উপহাস কর, তাহলে আমরাও (একদিন) তোমাদেরকে উপহাস করব, যেমন তোমরা আমাদেরকে উপহাস করছ।
৩৯. সুতরাং সত্বরই তোমরা জানতে পারবে যে, কোন ব্যক্তির উপর এমন আযাব আসার উপক্রম হয়েছে যা তাকে লাঞ্ছিত করবে এবং তার উপর চিরস্থায়ী আযাব নাযিল হবে।
৪০. শেষে যখন আমার নির্দেশ এসে গেল, আর তন্দুর (পানিতে) উথলে উঠল, আমি বললাম, 'প্রত্যেক শ্রেণীর যুগলের দুটি তাতে তুলে নাও আর তোমার পরিবার পরিজনকে, তাদের ছাড়া যাদের ব্যাপারে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকেও (তুলে নাও)। তার সঙ্গে ঈমান এনেছিল খুব অল্প কয়েকজনই।
৪১. আর সে বলল: তোমরা এতে আরোহণ কর, এর গতি ও এর স্থিতি আল্লাহরই নামে; নিশ্চয়ই আমার রাব্ব ক্ষমাশীল, দয়াবান।
৪২. আর সেই নৌকাটি তাদেরকে নিয়ে পবর্ততুল্য তরঙ্গের মধ্যে চলতে লাগল, আর নূহ স্বীয় পুত্রকে ডাকতে লাগল এবং সে ছিল ভিন্ন স্থানে; হে আমার পুত্র! আমাদের সাথে সাওয়ার হয়ে যাও এবং কাফিরদের সাথে থেক না।
৪৩. সে বলল: আমি এখনই কোনো পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করব যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। সে (নূহ) বলল: আজ আল্লাহর শাস্তি হতে কেহই রক্ষাকারী নেই, কিন্তু যার ওপর তিনি দয়া করেন। ইতোমধ্যে তাদের উভয়ের মাঝে একটি তরঙ্গ অন্তরাল হয়ে পড়ল, অতঃপর সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হল।
৪৪. অতঃপর বলা হল, 'হে যমীন! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ, থাম।' অতঃপর পানি যমীনে বসে গেল, কার্য সমাপ্ত হল, নৌকা জুদী পর্বতে এসে ভিড়ল, আর বলা হল - 'যালিম লোকেরা ধ্বংস হোক!
৪৫. নূহ তার প্রতিপালককে আহবান জানাল। সে বলল, 'হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র তো আমার পরিবারভুক্ত, আর তোমার ও'য়াদা সত্য আর তুমি বিচারকদের সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক।'
৪৬. তিনি বললেন, 'ওহে নূহ! সে তো তোমার পরিবারের লোক নয়, তার আচার-আচরণ অসৎ, কাজেই যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আমার কাছে আবেদন করো না, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন মূর্খদের মধ্যে শামিল না হও।
৪৭. সে বলল: হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার নিকট এমন বিষয়ের আবেদন করা হতে আশ্রয় চাচ্ছি, যে সম্বন্ধে আমার জ্ঞান নেই, আর আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাব।
৪৮. বলা হল: হে নূহ! অবতরণ কর, আমার পক্ষ হতে সালাম ও বারকতসমূহ নিয়ে, যা তোমার উপর নাযিল করা হবে এবং সেই দলসমূহের উপর যারা তোমার সাথে রয়েছে; আর অনেক দল এরূপও হবে যাদেরকে আমি কিছুকাল (দুনিয়ার) সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দান করব, অতঃপর তাদের উপর পতিত হবে আমার পক্ষ হতে কঠিন শাস্তি।
৪৯. এ সব হল অদৃশ্যের খবর যা তোমাকে ওয়াহী দ্বারা জানিয়ে দিচ্ছি, যা এর পূর্বে না তুমি জানতে, না তোমার জাতির লোকেরা জানত। কাজেই ধৈর্য ধর, শুভ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্যই নির্দিষ্ট।
৫০. আর 'আদ (সম্প্রদায়) এর প্রতি তাদের ভাই হুদকে (রাসূল রূপে) প্রেরণ করলাম। সে বলল: হে আমার কাওম! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া কেহ তোমাদের মা'বূদ নেই; তোমরা শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী।
৫১. হে আমার সম্প্রদায়! এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো তাঁর জিম্মায় যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তবুও কি তোমরা জ্ঞান-বুদ্ধি খাটাবে না?
৫২. হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর অনুশোচনাভরে তাঁর দিকেই ফিরে যাও, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের শক্তিকে আরো শক্তি দিয়ে বাড়িয়ে দিবেন, আর অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।
৫৩. তারা বলল, 'হে হুদ! তুমি আমাদের কাছে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসনি, আর তোমার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যগুলোকে ত্যাগ করতে পারি না, আমরা তোমাতে বিশ্বাসী নই।
৫৪. আমাদের কথা এই যে, আমাদের উপাস্য দেবতাদের মধ্য হতে কেহ তোমাকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে। সে বলল: আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি এবং তোমরাও সাক্ষী থেক যে, আমি তা থেকে মুক্ত, তোমরা যে ইবাদাতে শরীক সাব্যস্ত করছ,
৫৫. তাঁর (আল্লাহর) সাথে। সুতরাং তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাক, অতঃপর আমাকে সামান্য অবকাশ দিয়ো না।
৫৬. আমি নির্ভর করি আল্লাহর ওপর যিনি আমার আর তোমাদের রব, এমন কোনো জীব নে,ই যার কর্তৃত্ব তাঁর হাতে নয়, নিশ্চয়ই আমার রব সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত।
৫৭. এরপরও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে লও (তবে জেনে রেখ), আমাকে যা দিয়ে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে আমি তো তোমাদের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছি, এখন আমার প্রতিপালক তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন আর তোমরা তাঁর কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আমার প্রতিপালক সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।
৫৮. আর যখন আমার (শাস্তির) হুকুম এসে পৌঁছল, তখন আমি হুদকে এবং যারা তার সাথে ঈমানদার ছিল তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে রক্ষা করলাম, আর তাদেরকে বাঁচালাম অতি কঠিন শাস্তি হতে।
৫৯. আর তারা ছিল 'আদ সম্প্রদায়, যারা নিজের প্রতিপালকের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করল এবং রাসূলদেরকে অমান্য করল, পক্ষান্তরে তারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশ অনুসরণ করত।
৬০. আর এই দুনিয়ায়ও অভিসম্পাত তাদের সঙ্গে রইল এবং কিয়ামাত দিবসেও; ভাল রূপে জেনে রেখ! 'আদ নিজ রবের সাথে কুফরী করল; আরও জেনে রেখ! দূরে পড়ে রইল 'আদ, রহমত হতে, যারা হুদের সম্প্রদায় ছিল।
৬১. আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, 'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর 'ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে পয়দা করেছেন, আর তাতেই তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কাজেই তাঁর কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তাঁর পানেই ফিরে এসো, আমার প্রতিপালক তো অতি নিকটে, আর তিনি আহবানে সাড়াদানকারী।'
৬২. তারা বলল, 'হে সালিহ! এর পূর্বে তুমি তো আমাদের মাঝে ছিলে আশা-আকাঙ্ক্ষার পাত্র, তুমি কি আমাদেরকে সেই মা'বূদদের 'ইবাদাত করতে নিষেধ করছ আমাদের পিতৃ পুরুষরা যার 'ইবাদাত করত? তুমি আমাদেরকে যে দিকে ডাকছ, সে সম্পর্কে আমরা বিভ্রান্তিকর সংশয়ে পড়ে আছি।
৬৩. সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! আচ্ছা বলত, আমি যদি নিজ রবের পক্ষ হতে প্রমাণের ওপর থাকি (এবং) তিনি আমার প্রতি নিজের রাহমাত (নবুওয়াত) দান করে থাকেন, আমি যদি আল্লাহর কথা না মানি, তাহলে আমাকে আল্লাহ (শাস্তি) হতে কে রক্ষা করবে? তাহলে তো তোমরা শুধু আমার ক্ষতিই করছ।
৬৪. হে আমার জাতির লোকেরা! এটা আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য একটা নিদর্শন। একে আল্লাহর যমীনে চলে ফিরে খেয়ে বেড়াতে দাও, একে কোনো প্রকার কষ্ট দিয়ো না, নচেৎ শীঘ্রই তোমাদেরকে 'শাস্তি পাকড়াও করবে।'
৬৫. অনন্তর তারা ওকে মেরে ফেলল। তখন সে বলল: তোমরা নিজেদের ঘরে আরও তিন দিন বাস করে নাও; এটা ওয়াদা, যাতে বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই।
৬৬. অতঃপর আমার হুকুম যখন আসল, তখন আমি সালেহ আর তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার দয়ায় বাঁচিয়ে নিলাম, আর সে দিনের লাঞ্ছনা হতে রক্ষা করলাম। তোমার প্রতিপালক তিনিই তো শক্তিশালী, প্রতাপশালী।
৬৭. যারা যুলম করেছিল এক প্রচণ্ড শব্দ তাদেরকে আঘাত হানল, আর তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু হয়ে পড়ে রইল-
৬৮. যেন তারা সেই গৃহগুলিতে কখনও বসবাস করেনি। ভাল রূপে জেনে রেখ! সামুদ সম্প্রদায় নিজ রবের সাথে কুফরী করল। জেনে রেখ, সামুদ সম্প্রদায় রাহমাত হতে দূরে ছিটকে পড়ল।
৬৯. আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। তারা এসে বলল ''তোমার প্রতি সালাম! সেও বলল, 'তোমাদের প্রতিও সালাম!' অনতিবিলম্বে সে ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসলো।
৭০. যখন সে দেখল তাদের হাত তার (অর্থাৎ খাবারের) দিকে পৌঁছচ্ছে না, সে তাদের সম্পর্কে সন্দিগ্ধ হল আর তাদের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, 'ভয় পেয়ো না, আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি।'
৭১. (ইবরাহীমের) স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। তখন আমি তাকে ইসহাকের আর ইসহাকের পর ইয়াকূবের সুসংবাদ দিলাম।
৭২. সে বলল: হায় কপাল! এখন আমি সন্তান প্রসব করব বৃদ্ধা হয়ে! আর আমার এই স্বামী অতি বৃদ্ধ। বাস্তবিক এটাতো একটা বিস্ময়কর ব্যাপার!
৭৩. তারা বলল, 'আল্লাহর কাজে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ, ওহে (ইবরাহীমের) পরিবারবর্গ! তোমাদের উপর রয়েছে আল্লাহর দয়া ও বরকতসমূহ, তিনি বড়ই প্রশংসিত, বড়ই মহান।'
৭৪. পরে যখন ইবরাহীমের আতঙ্ক দূর হল, আর তার কাছে সুসংবাদ আসল, তখন সে লূত জাতির ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করল।
৭৫. অবশ্যই ইবরাহীম ছিল বড়ই সহিষ্ণু, কোমল হৃদয় আর আল্লাহমুখী।
৭৬. হে ইবরাহীম! এ কথা ছেড়ে দাও, তোমার প্রতিপালকের আদেশ এসে গেছে এবং তাদের ওপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই প্রতিহত করার নয়।
৭৭. আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ যখন লূতের কাছে আসলো, তাদের আগমনে সে ঘাবড়ে গেল। (তাদেরকে রক্ষায়) নিজেকে অসমর্থ মনে করল, আর বলল, 'আজ বড়ই বিপদের দিন।
৭৮. আর তার কাওম তার কাছে ছুটে এলো, এবং তারা পূর্ব হতে কু-কার্যসমূহ করেই আসছিল। লূত বলল: হে আমার কাওম! (তোমাদের ঘরে) আমার এই কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য অতি উত্তম, অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে আমার মেহমানদের সামনে অপমানিত কর না; তোমাদের মধ্যে কি সুবোধ লোক কেহ নেই?
৭৯. তারা বলল: তুমি তো অবগত আছ যে, তোমার এই কন্যাগুলির আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই, আর আমাদের অভিপ্রায় কি তাও তোমার জানা আছে।
৮০. সে বলল: কি উত্তম হত যদি তোমাদের উপর আমার কিছু ক্ষমতা চলত, অথবা আমি কোন দৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় নিতাম!
৮১. আগুন্তুকরা বলল, ‘হে লূত! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত বার্তাবাহক, তারা তোমার কাছে কক্ষনো পৌঁছতে পারবে না, কাজেই কিছুটা রাত বাকি থাকতে তুমি তোমার পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে পড়, তোমাদের কেউ যেন পিছনের দিকে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রী (তোমাদের সঙ্গী হতে পারবে না) তারও তাই ঘটবে, অন্যদের যা ঘটবে। সকাল হল তাদের (শাস্তি আসার) নির্ধারিত সময়, সকাল কি নিকটবর্তী নয়?’
৮২. তারপর আমার নির্দেশ যখন এসে গেল, তখন আমি সেই জনপদকে উপর নিচ করে উল্টে দিলাম, আর তাদের উপর স্তরে স্তরে পাকানো মাটির প্রস্তর বর্ষণ করলাম।
৮৩. যে প্রস্তর খণ্ডের প্রতিটিই তোমার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নিত ছিল। পাপিষ্ঠদের জন্য এ শাস্তি বেশি দূরের ব্যাপার নয়।
৮৪. আর মাদইয়ানবাসীদের কাছে আমি তাদের ভাই শুআয়বকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর 'ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সত্য উপাস্য নেই, আর মাপে ও ওজনে কম দিয়ো না, আমি তোমাদেরকে ভাল অবস্থাতেই দেখছি। কিন্তু আমি তোমাদের জন্য শাস্তির আশঙ্কা করছি, সে দিনের যেদিন তোমাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরবে।
৮৫. আর হে আমার জাতি, ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না, আর পৃথিবীতে গোলযোগ করে বেড়াবে না।
৮৬. আল্লাহ প্রদত্ত উদ্ধৃত্ত তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা ঈমানদার হও, আর আমি তো তোমাদের উপর সদা পর্যবেক্ষণকারী নই।
৮৭. তারা বলল, 'হে শুআয়ব! তোমার ইবাদত কি তোমাকে এই হুকুম দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষ যার 'ইবাদাত করত আমরা তা পরিত্যাগ করি বা আমাদের ধন-সম্পদের ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছে (মাফিক ব্যয় করা) বর্জন করি, তুমি তো দেখছি বড়ই ধৈর্যশীল, ভাল মানুষ।'
৮৮. সে বলল, 'হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা কি ভেবে দেখেছ যদি আমি আমার প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি, আর তিনি আমাকে তাঁর পক্ষ থেকে উত্তম রিযক দিয়ে থাকেন (তাহলে আমি কীভাবে তোমাদের অন্যায় কাজের সঙ্গী হতে পারি?), আমি তোমাদেরকে যে কাজ করতে নিষেধ করি, সেটা তোমাদের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছায় নয়, আমি তো সাধ্যমত সংশোধন করতে চাই, আমার কাজের সাফল্য তো আল্লাহরই পক্ষ হতে, আমি তাঁর ওপরই নির্ভর করি, আর তাঁর দিকেই মুখ করি।
৮৯. হে আমার সম্প্রদায়! আমার সঙ্গে বিরোধ তোমাদেরকে যেন কিছুতেই এমন কাজে উদ্বুদ্ধ না করে যাতে তোমাদের ওপর এমন বিপদ আসে, যেমন বিপদ এসেছিল নূহের জাতির কিংবা হূদের জাতির কিংবা সালিহর জাতির উপর। আর লূতের জাতির অবস্থান তো তোমাদের থেকে মোটেই দূরে নয়।
৯০. তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই নিকট তাওবাহ কর। আমার প্রতিপালক তো পরম দয়ালু, বড়ই ভালবাসা পোষণকারী।'
৯১. তারা বলল, 'হে শুআয়ব! তুমি যা বল তার অনেক কথাই আমরা বুঝি না, আমরা আমাদের মধ্যে তোমাকে অবশ্যই দুর্বল দেখছি, তোমার গোত্র না থাকলে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর নিক্ষেপ ক'রে মেরে ফেলতাম, আমাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতাই নেই।
৯২. সে বলল, 'হে আমার সম্প্রদায়! আমার স্বজনরা কি তোমাদের কাছে আল্লাহর চেয়েও প্রবল! তোমরা তো তাঁকে সম্পূর্ণতঃ পেছনে ফেলে রেখেছ, তোমরা যা করছ আমার প্রতিপালক তা সব কিছুই অবগত।'
৯৩. আর হে আমার জাতি, তোমরা নিজ স্থানে কাজ করে যাও, আমিও কাজ করছি, অচিরেই জানতে পারবে কার ওপর অপমানকর আযাব আসে আর কে মিথ্যাবাদী? আর তোমরাও অপেক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।
৯৪. আমার হুকুম যখন আসলো, তখন আমি আমার দয়ায় শুআয়ব আর তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে বাঁচিয়ে দিলাম। আর যারা যুলম করেছিল তাদেরকে এক প্রচণ্ড শব্দ আঘাত হানল, যার ফলে তারা নিজেদের গৃহে নতজানু হয়ে পড়ে রইল।
৯৫. (এমনভাবে) যেন তারা সেখানে কোনোদিনই বসবাস করেনি। জেনে রেখ, মাদইয়ানবাসীদেরকে দূরে নিক্ষেপ করা হল, যেমনভাবে দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল সামূদজাতিকে।
৯৬. আমি মূসাকে পাঠিয়েছিলাম আমার নিদর্শন আর স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে
৯৭. ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে, তবুও তারা ফেরাউনের হুকুমে চলতে থাকে, অথচ ফেরাউনের কোনো কথা ন্যায় সঙ্গত ছিল না।
৯৮. কেয়ামতের দিন সে তার জাতির লোকদের আগে আগে থাকবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দিবে। আর সেটা অতীব নিকৃষ্ট স্থান, সেখানে তারা পৌঁছেছে।।
৯৯. আর এ জগতেও তাদের পেছনে অভিশাপ রয়েছে এবং কিয়ামতের দিনেও; অত্যন্ত জঘন্য প্রতিফল, যা তারা পেয়েছে।
১০০. এ হল জনপদসমূহের কিছু খবরাদি যা আমি তোমার নিকট বর্ণনা করলাম, তাদের কতক এখনও দাঁড়িয়ে আছে আর কতক কর্তিত ফসলের দশা প্রাপ্ত হয়েছে।
১০১. আমি তাদের প্রতি অত্যাচার করিনি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছে। বস্তুতঃ তাদের কোনোই উপকার করেনি তাদের সেই উপাস্যগুলি যাদের তারা ইবাদাত করত আল্লাহকে ছেড়ে, যখন এসে পৌঁছল তোমার পালনকর্তার হুকুম; তাদের ক্ষতি সাধন ছাড়া তারা আর কোনো কিছুই বৃদ্ধি করল না।
১০২. তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি পাকড়াও করেন কোনো জনপদকে যখন তারা যুল্মে লিপ্ত থাকে। অবশ্যই তাঁর পাকড়াও ভয়াবহ, বড়ই কঠিন।
১০৩. এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে তার জন্য যে আখেরাতের শাস্তিকে ভয় করে। এটা এমন দিন, যে দিনের জন্য সব মানুষকে একত্রিত করা হবে, এটা হাযির হওয়ার দিন।
১০৪. আমি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে বিলম্বিত করি মাত্র।
১০৫. সে দিন যখন আসবে তখন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ মুখ খুলতে পারবে না, তাদের কেউ হবে হতভাগা, আর কেউ হবে সৌভাগ্যবান।
১০৬. যারা হতভাগা হবে তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তাদের জন্য আছে হা-হুতাশ আর আর্ত চিৎকার।
১০৭. সেখানে তারা স্থায়ী হবে চিরকালের জন্য, যে পর্যন্ত আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে যদি না তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছে করেন। তোমার প্রতিপালক অবশ্যই করতে সক্ষম যা তিনি করতে চান।
১০৮. আর যারা সৌভাগ্যবান হবে, তারা জান্নাতে স্থায়ী হবে যে পর্যন্ত আকাশসমূহ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্য রকম ইচ্ছে করেন। এ হল এক অব্যাহত পুরস্কার।
১০৯. কাজেই তারা যেগুলোর 'ইবাদাত করে সেগুলোর ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হয়ো না। তারা যেগুলোর 'ইবাদাত করে সেগুলো তা ছাড়া আর কিছুই নয় যেগুলোর 'ইবাদাত পূর্বে তাদের পিতৃপুরুষরা করত, আমি অবশ্যই তাদের প্রাপ্য অংশ তাদেরকে পূর্ণ মাত্রাতেই দেব, কোনই কমতি করা হবে না।
১১০. ইতোপূর্বে আমি মূসাকেও কিতাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তাতেও মতবিরোধ করা হয়েছিল। তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি কথা যদি আগেই বলে দেয়া না হত, তাহলে তাদের মাঝে অবশ্যই মীমাংসা করে দেয়া হত, এ ব্যাপারে তারা অবশ্য সন্দেহপূর্ণ সংশয়ে পড়ে আছে।
১১১. আর যত লোকই হোক না কেন, যখন সময় হবে, তোমার প্রভু তাদের সকলেরই আমলের প্রতিদান পুরোপুরি দান করবেন। নিশ্চয় তিনি তাদের যাবতীয় কার্যকলাপের খবর রাখেন।
১১২. কাজেই তুমি ও তোমার সাথে যারা (আল্লাহর দিকে) তাওবা করেছে, সুদৃঢ় হয়ে থাক, আল্লাহ যেভাবে তোমাকে আদেশ দিয়েছেন, আর সীমালঙ্ঘন করো না। তোমরা যা কিছু কর, তিনি তা ভালভাবেই দেখেন।
১১৩. তোমরা পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে, আর তখন আল্লাহ ছাড়া কেউ তোমাদের অভিভাবক থাকবে না, অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।
১১৫. তুমি ধৈর্য ধর, কারণ আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের কর্মফল কখনও বিনষ্ট করেন না।
১১৬. কাজেই, তোমাদের পূর্ববতী জাতি গুলির মধ্যে এমন সৎকর্মশীল কেন রইল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে বাধা দিত; তবে মুষ্টিমেয় লোক ছিল যাদেরকে আমি তাদের মধ্য হতে রক্ষা করেছি। আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল, যার সামগ্রী তাদেরকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী।
১১৭. তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে কোনো জনপদ ধ্বংস করবেন এমতাবস্থায় যে, তার অধিবাসীরা সৎকর্মশীল।
১১৮. তোমার প্রতিপালক চাইলে মানুষকে অবশ্যই এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে।
১১৯. তোমার পালনকর্তা যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, তারা ব্যতীত সবাই চিরদিন মতভেদ করতেই থাকবে এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার আল্লাহর কথাই পূর্ণ হল যে, অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে ভর্তি করব।
১২০. রসূলদের যে সব সংবাদসমূহ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করলাম, এর দ্বারা আমি তোমার দিলকে মযবুত করছি, এতে তুমি প্রকৃত সত্যের জ্ঞান লাভ করবে আর ঈমানদারদের জন্য এটা উপদেশ ও স্মারক।
১২১. যারা ঈমান আনে না, তাদেরকে বল, 'তোমরা নিজেদের মত ও পথে থেকে কাজ করে যাও, আমরা (আমাদের) কাজ করছি।
১২২. আর তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম।'
১২৩. আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁরই কাছে সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে। সুতরাং তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর নির্ভর কর, আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক বে-খবর নন।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত:- মুহাম্মদ বয়কট উত্তরণের রাস্তা খুঁজছেন! পাবেন কি সামনে? পেলে কীভাবে? তা কি তার স্থিরতা আনবে? নাকি তাকে মক্কা ছাড়া করবে চিরতরে? প্রশ্ন অনেক, তবে উত্তর খু্ব সহজ! অপেক্ষায় থাকুন!

গত পর্বে করা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেলে এই সিরিজের ১৪তম পর্ব দেখুন! আর আরও বেশি জানার ইচ্ছে থাকলে অপেক্ষায় থাকুন; জানেন নিশ্চয় - অ্যালকোহল পুরাতন হলে দামী হয়! আপনাকে পাঠক হিসাবে দামী তৈরি করছি! কারণ, ভবিষ্যতে এমন কিছু কিছু বিষয় তুলে আনার ইচ্ছা আছে, যা এর আগে আপনাকে কেউ কখনও বলেনি!
আমরা যে-কোরআন পড়ি, তার সংকলন করেছেন খলিফা উসমান; যে কারণে কোরআনকে উসমানী কোরআন বলা হয়! কিন্তু সুন্নী ইসলামী সমাজে আরও একটি কোরআন আছে, যা শতভাগ বৈধ এবং মদিনার কোরআন প্রিন্টিং প্রেস থেকে দু’ধরনের কোরআন-ই একইসাথে ও একই মর্যাদায় ছাপা হয়! প্রশ্ন হচ্ছে: কোরআন যদি ‍দুইটি থাকে, তবে কোনটি সংকলন করেছেন খলিফা উসমান? এবং তার প্রমাণ কী?

কোরআন সংকলনের একচ্ছত্র মিথ উসমানের নামে চালু হলেও তার পুরোটা আজ পর্যন্ত প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি! আর তাই সুন্নী সমাজ কোরআনের দু’ধরনের সংস্করণকে ডি.এন.এ টেষ্টের পর বৈধ সন্তান হিসেবে মেনে নিয়েছে! জেনে রাখুন, কোরআন অবিকৃত ও একটিমাত্র নয়! সিরিজের আগামী পর্বে থাকবে বিস্তারিত, ততক্ষণ ধাঁধাঁয় থাকুন! আর আগামী পর্বে মদিনার কোরআন প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপা দু’টি সংস্করণ আপলোড করে ডাউনলোড লিংক দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো! ততক্ষণ ভাবতে থাকুন, কীভাবে ইসলামের বৈধ কোরআন দু’টি হতে পারে? আর কোরআন যদি দু’টিই হয়, তবে কি ইসলামের কবর খোঁড়ার কিছু বাকি আছে?
আজ তবে অন্য একটি বিষয় নিয়ে বলি, এমন বিষয়, যা নিয়েও আস্তিক-নাস্তিকসহ সবার মাথাতেই সমান পরিমাণে ভুল তথ্য জমা রয়েছে! আসুন, প্রমাণ করি; কাবার সাথে এখন যতটুকু হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) আছে, তা আপনার হাতের মুঠোর মধ্যে অনায়াসে এঁটে যাবে! কী, অবাক হচ্ছেন শুনে? আমাকে পাগল মনে হচ্ছে?  যা ভাবার ভাবুন, সত্য এটাই! প্রমাণ করতে না পারলে শতকোটির বাজি হারবো আজ..! চলুন, শুরু করি!

হাজরে আসওয়াদ-এর আকার মুহাম্মদের জীবনকালে কতটুকু ছিলো, সঠিক জানা যায় না; তবে ধারণা করা হয়, দু’হাত একসাথে করে ইসলামী মোনাজাত করলে যতটুকু জায়গা পাওয়া যায় তাতে অনায়াসে হাজরে আসওয়াদ এঁটে যেত! মুহাম্মদের মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত সাত বার হাজরে আসওয়াদের ওপর আঘাত এসেছে, এবং এতে কালো পাথরটি ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি মাপে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে! বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে হাজরে আসওয়াদ-এর ১৬ টি টুকরোর হদিস পাওয়া যায়! এবং এই ১৬ টি টুকরোর মধ্যে মোট আয়তনের অনুপাতে ২০ ভাগের সমপরিমাণ ৮ টি টুকরো এখন আছে কাবার সাথে লাগানো রূপালি ফ্রেমের ধাঁধাঁর মধ্যে! এই ৮ টি টুকরো একসাথে আপনার হাতের মুঠোর মধ্যে অনায়াসে এঁটে যাবে!

ছবি-১

সংক্ষেপে বলি; ছবি-১ দেখুন, কালো যে ডিম্বাকার অংশটি দেখছেন তার আকার ৭.৯ বাই ৬.৩ ইঞ্চি; একজন মানুষের পাথরে চুমু খাবার জন্য যথেষ্ট জায়গা; তবে কালো অংশটি পুরোটাই কিন্তু হাজরে আসওয়াদ নয়! এটি একটি কৃত্রিম কংক্রিট মাত্র, যার গায়ে লাগানো আছে ১ মুঠোর সমপরিমান ৮ টি টুকরোয় বিভক্ত আদি-আসল হাজরে আসওয়াদ!
২য় ছবি


২য় ছবিটি দেখতে থাকুন, প্রথম অংশে মূল হাজরে আসওয়াদ ছাড়া বাকি কালো অংশটুকুর রং পরিবর্তন করা হয়েছে! গুনে দেখুন ৮ টুকরোই আছে! তৃতীয় অংশের ছবিটি স্বচ্ছ পেনসিল ট্রেসিং পেপার হাজরে আসওয়াদের ওপরে রেখে ছাপ নিয়েছিলেন ক্যালিগ্রাফার ‘আল শেখ মুহাম্মদ তাহির আল কুরদী (al-Sheikh Muhammad Tahir Al-kurdi)’, ১৩৭৬ হিজরী (এখন ১৪৩৮ হিজরী চলছে) সালে! বাঁ পাশের ছবিটি বর্তমানের, এতে ডান পাশের ছবির উপরের ‍দু’টুকরোর মাঝে থাকা সবচেয়ে ছোট টুকরোটিকে নতুন করে সংস্কারের সময় নিচে নিয়ে আসা হয়েছে!
হাজরে আসওয়াদের এসব তথ্য প্রায় ১ যুগ আগে থেকে আমি জানতাম! এবং এও জানতাম এই ৮ টি টুকরোর সবচেয়ে বড়টি একটি খেজুরের সমপরিমাণ আকারের! হজ্জের সময় আমার এটি মেপে দেখার সুযোগ হয়েছে (সে এক বিচিত্র ইতিহাস), বড় টুকরোটি (ছবিতে 1) একটি এস.ডি কার্ডের সমান আকারের, আর ছবিতে-2-এর আকৃতি মাইক্রো এস.ডি কার্ডের সমান! আর হ্যাঁ, মাঝখানের হাতটি আমার নিজের; ভয় হচ্ছে হস্তরেখায় আমাকে চিনে না ফেলেন! যাদের চোখে দেখার ক্ষমতা স্বাভাবিক তাদের জন্য আরও একটি ছবি সংযুক্ত করে দিচ্ছি, দৃষ্টি স্থির করে খুঁজলে জবাব পেয়ে যাবেন!

ছবিটি বড় করে দেখুন

কাবা আর হাজরে আসওয়াদ নিয়ে আমার বিচিত্র কিছু অভিজ্ঞতা আছে! সেসব বলবো ক্রমশ! তবে আর একটু মাথা ঘামানোর সুযোগ দিয়ে শেষ করি। আগেই বলেছি, পুরো পৃথিবীতে হাজরে আসওয়াদ-এর ১৬ টি টুকরোর হদিস পাওয়া যায়! ৮ টি তো আজ দেখিয়ে দিলাম, বাকি ৮ টি কোথায়? কার-কার কাছে এবং কোথায়-কোথায় আছে? সেগুলো কি দেখা-ছোঁয়া সম্ভব? সবচেয়ে বড় টুকরোটি (যার আয়তন কাবার সাথে থাকা ৮ টির প্রায় সমান) কোথায় আছে? ১৮৯০ সালে এডওয়ার্ড অল্লিয়ার (Edward Ollier)-এর আঁকা পেনসিল স্কেচে কাবার সাথে থাকা ১৫ টুকরোর হদিস পাওয়া যায়; সেগুলো এখন নেই কেন? হাজরে আসওয়াদ আসলে কী? এটি কি সাদা ছিলো কখনও? পানিতে কি সত্যি ভাসে? সাদা রূপালি ফ্রেমটি কি স্ত্রী-যোনী বোঝাতে ব্যবহার করা হয়? কীভাবে এত টুকরো হলো বেহেস্তী (!) পাথর? সব প্রশ্নের উত্তর-তথ্য-প্রমাণ-সূত্র নিয়ে ইবুক আসবে ধর্মকারীতে“হাজরে আসওয়াদ: মিথ-মিথ্যা-বাস্তবতা!” শিরোনামে! অপেক্ষায় থাকুন! 
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৯ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ৭ম তিন অংশ অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
একই বিষয়ে অনেকবার বলেছি আগে, যেসব গবেষক পাঠক নিয়মিত এই ‍সিরিজের প্রকাশিত আয়াত পড়ছেন তাদের জন্য কিছু আয়াত হাইলাইট করে দিয়েছি! বয়কটকালীন মুহাম্মদের মনোবৃত্তির চূড়ান্ত প্রকাশ পাওয়া যাবে এসবে! আর ক্লান্ত-বিধস্ত মুহাম্মদের মত আমিও অপেক্ষা করছি, কবে শেষ হবে এই বয়কট!
মুহাম্মদ দ্বারা ১১৫ তম প্রকাশ: সূরা আল আনআম (০৬) (গৃহপালিত পশু), ২০, ২৩, ৯১, ৯৩, ১১৪ বাদে ০১ থেকে ১১৭ আয়াত:
১. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো, এতদসত্ত্বেও যারা কুফরী করেছে তারা (অন্যকে) তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করিয়েছে।
২. অথচ তিনি তোমাদের মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের জীবনের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করেছেন, এছাড়া আরও একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ তাঁর নিকট নির্ধারিত রয়েছে, কিন্তু এরপরেও তোমরা সন্দেহ করে থাক।
৩. আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে ঐ এক আল্লাহই রয়েছেন, তোমাদের অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সব অবস্থাই তিনি জানেন, আর তোমরা যা কিছু কর, তাও তিনি পূর্ণরূপে অবগত আছেন।
৪. তাদের কাছে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী থেকে কোনো নিদর্শন আসেনি; যার প্রতি তারা বিমুখ হয় না।
৫. সুতরাং তাদের নিকট যখন সত্য বাণী এসেছে, ওটাও তারা মিথ্যা জেনেছে। অতএব অতি সত্বরই তাদের নিকট সেই বিষয়ের সংবাদ এসে পৌঁছবে, যে ব্যাপারে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।
৬. তারা কি ভেবে দেখেনি যে, আমি তাদের পূর্বে বহু দল ও সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদেরকে দুনিয়ায় এমন শক্তি সামর্থ্য ও প্রতিপত্তি দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দিইনি, আর আমি তাদের প্রতি আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি এবং তাদের নিম্নভূমি হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করেছি, কিন্তু আমার নিআমাতের শোকর না করার পাপের কারণে আমি তাদেরকে ধ্বংস করেছি, এবং তাদের পর অন্য নতুন নতুন জাতি ও সম্প্রদায়সমূহ সৃষ্টি করেছি।
৭. যদি আমি তোমার প্রতি কাগজে লিখিত কোনো কিতাব অবতীর্ণ করতাম, অতঃপর তারা তা নিজেদের হাত দ্বারা স্পর্শও করত; তবুও কাফির ও অবিশ্বাসী লোকেরা বলত: এটা প্রকাশ্য যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।
৮. আর তারা বলে থাকে, তাদের কাছে কোনো ফেরেশতা কেন পাঠানো হয় না? আমি যদি প্রকৃতই কোন ফেরেশতা অবতীর্ণ করতাম, তাহলে যাবতীয় বিষয়েরই চূড়ান্ত সমাধান হয়ে যেত, অতঃপর তাদেরকে কিছুমাত্রই অবকাশ দেয়া হত না।
৯. আর যদি কোনো ফেরেশতাকেও রাসূল করে পাঠাতাম, তাহলে তাকে মানুষরূপেই পাঠাতাম; এতেও তারা ঐ সন্দেহই করত, যে সন্দেহ ও প্রশ্ন এখন তারা করছে।
১০. তোমার পূর্বে যে সব নাবী-রাসূল এসেছিল, তাদের সাথেও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে, ফলতঃ এই সব ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের পরিণাম ফল বিদ্রূপকারীদেরকেই পরিবেষ্টন করে ফেলেছিল।
১১. তুমি বল: তোমরা ভূ-পৃষ্ঠ পরিভ্রমণ কর, অতঃপর সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণাম কী হয়েছে, তা গভীর অভিনিবেশ সহকারে লক্ষ্য কর।
১২. তুমি জিজ্ঞেস কর: আকাশমণ্ডলী ও ধরাধামে অবস্থিত যা কিছু রয়েছে, তার মালিক কে? তুমি বল: তা সবই আল্লাহর মালিকানায়, অনুগ্রহ করা তিনি তাঁর নীতি বলে গ্রহণ করেছেন, তিনি তোমাদের সকলকে কিয়ামাত দিবসে অবশ্যই সমবেত করবেন, যে দিন সম্পর্কে কোনো সন্দেহই নেই; যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ও ধবংসের মুখে ফেলেছে, তারাই বিশ্বাস করে না।
১৩. রাতের অন্ধকারে এবং দিনের আলোয় যা কিছু বসবাস করে ও বর্তমান রয়েছে, তা সব কিছুই আল্লাহর। তিনি সব কিছুই শোনেন ও জানেন।
১৪. বল: আমি কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকেও আমার অভিভাবক রূপে গ্রহণ করব, যিনি হলেন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা? তিনি রিযিক দান করেন, কিন্তু কারও রিযিক গ্রহণ করেন না। তুমি বল: আমাকে এই আদেশই করা হয়েছে যে, আমি সকলের আগেই ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর সামনে মাথা নত করে দেব। আর তুমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল হয়ো না।
১৫. তুমি বল: আপনি বলুন, আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্য হতে ভয় পাই, কেননা, আমি একটি মহাদিবসের শাস্তিকে ভয় করি।
১৬. সেদিন যার উপর হতে শাস্তি প্রত্যাহার করা হবে, তার প্রতি আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহ করবেন, আর এটাই হচ্ছে প্রকাশ্য মহাসাফল্য।
১৭. আল্লাহ যদি কারও ক্ষতিসাধন করেন, তাহলে তিনি ছাড়া সেই ক্ষতি দূর করার আর কেহ নেই, আর যদি তিনি কারও কল্যাণ করেন, (তাহলে আল্লাহ সেটাও করতে পারেন, কেননা) তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
১৮. তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, তিনিই মহাজ্ঞানী ও সর্ব বিষয়ে ওয়াকিফহাল।
১৯. তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: কার সাক্ষ্য সবচেয়ে বেশি গণ্য? তুমি বলে দাও: আমার ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই হচ্ছেন সাক্ষী, আর এই কুরআন আমার নিকট অহীর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, যেন আমি তোমাদেরকে এবং যাদের নিকট এটি পৌঁছবে, তাদের সকলকে এর দ্বারা সতর্ক করি। বাস্তবিকই তোমরা কি এই সাক্ষ্য দিতে পার যে, আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্যও রয়েছে? তুমি বল: আমি এই সাক্ষ্য দিতে পারি না। তুমি ঘোষণা কর: তিনিই একমাত্র উপাস্য, আর তোমরা যে শিরকে লিপ্ত রয়েছ, আমার সাথে ওর কোনোই সম্পর্ক নেই।
২১. যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে, কিংবা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? এরূপ যালিম লোক কক্ষনোই সাফল্য লাভ করতে পারবে না।
২২. স্মরণ করে সে দিনকে, যে দিন আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব আর যারা শিরক করেছিল, তাদেরকে বলব – যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়?
২৪. লক্ষ্য কর, তারা নিজেদের সম্পর্কে কেমন মিথ্যে কথা বলবে, আর তারা মিছেমিছি যা উদ্ভাবন করেছিল তা নিষ্ফল হয়ে যাবে। [
২৫. তাদের মধ্যে কতক লোক আছে যারা তোমার দিকে কান পাতে। তাদের অন্তরের ওপর আমি পর্দা ঢেলে দিয়েছি, যাতে তারা উপলব্ধি করতে না পারে, তাদের কানে আছে বধিরতা, সমস্ত নিদর্শন দেখলেও তারা তাতে ঈমান আনবে না, এমনকি যখন তারা তোমার কাছে আসে তোমার সাথে বিতর্ক করে। কাফিরগণ বলে, এটা তো পূর্বেকার লোকেদের গল্প-কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।
২৬. তারা তা (শোনা) থেকে অন্যদের বিরত করে, আর নিজেরাও তাত্থেকে দূরে সরে থাকে, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস সাধন করে, কিন্তু সে বোধ তাদের নেই।
২৭. যদি তুমি দেখতে যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে, তখন তারা বলবে, হায়! আমাদেরকে যদি আবার (পৃথিবীতে) পাঠানো হত, তাহলে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীকে মিথ্যে মনে করতাম না, আর আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
২৮. বরং (আসল ব্যাপার হল) আগে (দুনিয়াতে) তারা (মিথ্যের আবরণে) যা গোপন করে রাখত, এখন তা তাদের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে আর তাদেরকে (পৃথিবীতে) ফিরিয়ে দেয়া হলে তারা আবার তা-ই করবে, যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, নিশ্চয় তারা হল মিথ্যুক।
২৯. তারা বলে, আমাদের দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কোনো জীবন নেই, আমাদেরকে আবার (জীবিত করে) ওঠানো হবে না।
৩০. তুমি যদি দেখতে যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দাঁড় করানো হবে, তখন তিনি বলবেন, (তোমরা এখন যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ) তা কি সত্য নয়? তারা বলবে, আমাদের রবের কসম, তা সত্য। তিনি বলবেন, তোমরা কুফরী করেছিলে, তার জন্য এখন শাস্তি ভোগ কর।
৩১. যারা আল্লাহর সাক্ষাতকে মিথ্যে জেনেছিল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এমনকি যখন কিয়ামাত হঠাৎ তাদের কাছে হাজির হবে, তখন তারা বলবে, হায় আক্ষেপ! আমরা এ ব্যাপারে অবহেলা করেছিলাম। তারা তাদের পিঠে তাদের পাপের বোঝা বহন করবে। দেখ, তারা যা বহন করবে, তা কতই না নিকৃষ্ট!
৩২. এই পার্থিব জীবন খেল-তামাশা ও আমোদ প্রমোদের ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, পরকালের জীবনই হবে তাদের জন্য উৎকৃষ্টতর। তোমরা কি চিন্তা ভাবনা করবে না?
৩৩. তাদের কথাবার্তায় তোমার যে দুঃখ ও মনঃকষ্ট হয় তা আমি খুব ভালভাবেই জানি, তারা শুধুমাত্র তোমাকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে না, বরং এই পাপিষ্ঠ যালিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকেও অস্বীকার ও অমান্য করছে।
৩৪. তোমার পূর্বে বহু নাবী ও রাসূলকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, অতঃপর তারা এই মিথ্যা প্রতিপন্নকে এবং তাদের প্রতি কৃত নির্যাতন ও উৎপীড়নকে অম্লান বদনে সহ্য করেছে, যে পর্যন্ত না তাদের কাছে আমার সাহায্য এসে পৌঁছেছে। আল্লাহর আদেশকে পরিবর্তন করার কেউ নেই। তোমার কাছে পূর্ববর্তী কোনো কোনো নাবীর কিছু কিছু সংবাদ ও কাহিনী তো পৌঁছে গেছে।
৩৫. আর যদি তাদের অনাগ্রহ ও উপেক্ষা সহ্য করা তোমার কাছে কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে ক্ষমতা থাকলে মাটির কোনো সুড়ঙ্গ পথ অনুসন্ধান কর অথবা আকাশে সিঁড়ি লাগিয়ে দাও; অতঃপর তাদের কাছে কোনো নিদর্শন নিয়ে এসো, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সকলকে হিদায়াতের ওপর সমবেত করতেন। সুতরাং তুমি অবুঝদের মত হয়ো না।
৩৬. যারা শোনে, তারাই সত্যের ডাকে সাড়া দেয়। আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করে ওঠাবেন, অতঃপর তারা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
৩৭. তারা বলেঃ তার প্রতি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন? তুমি বলে দাও: আল্লাহ নিদর্শন অবতরণ করতে পূর্ণ সক্ষম; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
৩৮. ভূ-পৃষ্ঠে চলাচলকারী প্রতিটি জীব এবং বায়ুমণ্ডলে ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রতিটি পাখীই তোমাদের ন্যায় এক একটি জাতি, আমি কিতাবে কোনো বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে বাদ রাখিনি। অতঃপর তাদের সকলকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে।
৩৯. আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করে, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত মূক ও বধির, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা হিদায়াতের সরল সহজ পথের সন্ধান দেন।
৪০. তুমি তাদেরকে বল: তোমরা যদি নিজেদের আদর্শে সত্যবাদী হও, তাহলে চিন্তা করে দেখ, যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি এসে পড়ে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামাত দিবস এসে উপস্থিত হয়, তখনও কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে?
৪১. বরং তাঁকেই তোমরা ডাকতে থাকবে। অতএব যে বিপদের জন্য তোমরা তাঁকে ডাকছো, ইচ্ছা করলে তিনি তা তোমাদের থেকে দূর করে দেবেন, আর যাদেরকে তোমরা অংশী করেছিলে, তাদের কথা ভুলে যাবে।
৪২. আর অবশ্যই আমি তোমার পূর্বে বিভিন্ন জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর আমি তাদেরকে দারিদ্র্য ও দুঃখ দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা অনুনয় বিনয় করে।
৪৩. সুতরাং তাদের প্রতি যখন আমার শাস্তি এসে পৌঁছল, তখন তারা কেন নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করল না? বরং তাদের অন্তর আরও কঠিন হয়ে পড়ল, আর শাইতান তাদের কাজকে তাদের চোখের সামনে সুশোভিত করে দেখাল।
৪৪. অতঃপর তাদেরকে যা কিছু উপদেশ ও নাসীহাত করা হয়েছিল, তা যখন তারা ভুলে গেল, তখন আমি সুখ শান্তির জন্য প্রতিটি বস্তুর দরজা উন্মুক্ত করে দিলাম। যখন তারা তাদেরকে দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লসিত হল, তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, আর তারা সেই অবস্থায় নিরাশ হয়ে পড়ল।
৪৫. অতঃপর জালেমদের মূল শিকড় কর্তিত হল। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে, যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা।
৪৬. তুমি জিজ্ঞেস কর: আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের মনের কপাটে তালা লাগিয়ে মোহর এটে দেন, তাহলে এই শক্তি তোমাদেরকে আবার দান করতে পারে এমন কোন সত্তা আল্লাহ ব্যতীত আছে কি? লক্ষ্য কর তো! আমি আমার নিদর্শনসমূহ ও দলীল প্রমাণাদী কিভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বর্ণনা করছি। এর পরেও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়!
৪৭. তুমি আরও জিজ্ঞেস কর: আল্লাহর শাস্তি যদি হঠাৎ করে অথবা প্রকাশ্যে তোমাদের ওপর এসে পড়ে তাহলে কি অত্যাচারীরা ছাড়া আর কেহ ধ্বংস হবে?
৪৮. আমি তো রসূলদেরকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি, অতঃপর (রসূলের আনুগত্য করে) যারা ঈমান আনে ও নিজেকে সংশোধন করে, তাদের নেই কোনো ভয়, নেই তাদের কোনো দুঃখ।
৪৯. আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যে মনে করে, শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে, কেননা তারা নাফরমানীতে লিপ্ত ছিল।
৫০. তুমি বল: আমি তোমাদেরকে এ কথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার রয়েছে, আর আমি অদৃশ্য জগতেরও কোন জ্ঞান রাখি না, এবং আমি তোমাদেরকে এ কথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার কাছে যা কিছু অহী রূপে পাঠানো হয়, আমি শুধুমাত্র তারই অনুসরণ করে থাকি। তুমি (তাদেরকে) জিজ্ঞেস কর: অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি সমান হতে পারে? সুতরাং তোমরা কেন চিন্তা ভাবনা কর না?
৫১. তুমি এর (কুরআন) সাহায্যে ঐ সব লোককে ভীতি প্রদর্শন কর যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে এমন অবস্থায় সমবেত করা হবে যেখানে তিনি ছাড়া তাদের না কোনো সাহায্যকারী থাকবে, আর না থাকবে কোনো সুপারিশকারী, হয়ত তারা সাবধান হবে।
৫২. আর যে সব লোক সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালকর্তার ইবাদাত করে এবং এর মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টিই কামনা করে, তাদেরকে তুমি দূরে সরিয়ে দেবে না, তাদের হিসাব-নিকাশের কোনোকিছুর দায়িত্ব তোমার ওপর নয় এবং তোমার হিসাব-নিকাশের কোনোকিছুর দায়িত্বও তাদের ওপর নয়। এর পরও যদি তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দাও, তাহলে তুমি যালিমদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে।
৫৩. এভাবেই আমি কিছু লোককে কিছু লোক দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত করি। তারা বলতে থাকে: এরাই কি ঐ সব লোক, আমাদের মধ্য থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ ও মেহেরবাণী করেছেন? আল্লাহ কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে অবগত নন?
৫৪. আমার আয়াতসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারীরা যখন তোমার নিকট আসে, তখন তাদেরকে বল: তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের রাব্ব নিজের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করার নীতি বাধ্যতামূলক করে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশতঃ কোনো খারাপ কাজ করে, অতঃপর সে যদি তাওবাহ করে এবং নিজেকে সংশোধন করে, তাহলে জানবে যে, তিনি হচ্ছেন ক্ষমাপরায়ণ, করুণাময়।
৫৫. এমনিভাবে আমি আমার আয়াত ও নিদর্শনসমূহ সবিস্তার বর্ণনা করে থাকি যেন, অপরাধী লোকদের পথটি সুস্পষ্ট হয়ে পড়ে।
৫৬. তুমি কাফিরদেরকে বলে দাও: তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যার ইবাদাত কর, আমাকে তার ইবাদাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। বল: আমি তোমাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করব না, তাহলে আমি পথভ্রান্ত হয়ে যাব এবং আমি আর পথ প্রাপ্তদের মধ্যে শামিল থাকব না।
৫৭. বল, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট থেকে পাওয়া এক উজ্জ্বল প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা তা মিথ্যে মনে করেছ। যা তোমরা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও (অর্থাৎ আল্লাহর আযাব) তা আমার আয়ত্তে নেই। হুকুম বা কর্তৃত্বের মালিকানা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে নেই। তিনিই সত্যকথা বর্ণনা করেন, আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।
৫৮. তুমি বল: তোমরা যে বস্তুটি তাড়াতাড়ি পেতে চাও, তা যদি আমার এখতিয়ারভুক্ত থাকতো, তাহলে তো আমার ও তোমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফাইসালা অনেক আগেই হয়ে যেত, যালিমদেরকে আল্লাহ খুব ভাল করেই জানেন।
৫৯. অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেউই তা জ্ঞাত নয়। পৃথিবীতে ও সমুদ্রের সব কিছুই তিনি অবগত আছেন, তাঁর অবগতি ব্যতীত বৃক্ষ হতে একটি পাতাও ঝরে পড়েনা এবং ভূ-পৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পতিত হয় না, এমনিভাবে কোনো সরস ও নিরস বস্তুও পতিত হয় না; সমস্ত কিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
৬০. আর সেই মহান সত্তা রাতে নিদ্রারূপে তোমাদের এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যে পরিশ্রম কর, তিনি সেটাও সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।
৬১. আর আল্লাহই স্বীয় বান্দাদের উপর প্রতাপশালী, তিনি তোমাদের ওপর রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠিয়ে থাকেন, এমনকি যখন তোমাদের কারও মৃত্যু সময় সমুপস্থিত হয়, তখন আমার প্রেরিত দূতগণ তার প্রাণ হরণ করে নেয়, এ ব্যাপারে তারা বিন্দুমাত্র ক্রটি করে না।
৬২. তারপর সকলকে তাদের সত্যিকার অভিভাবক আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত করানো হয়। তোমরা জেনে রেখ যে, ঐ দিন একমাত্র আল্লাহই রায় প্রদানকারী হবেন, আর তিনি খুবই ত্বরিৎ হিসাব গ্রহণকারী।
৬৩. তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: স্থলভাগ ও পানিস্থিত অন্ধকার (বিপদ) থেকে তোমাদেরকে কে পরিত্রাণ দিয়ে থাকেন, যখন কাতর কন্ঠে বিনীতভাবে এবং চুপে চুপে তাঁর কাছে প্রার্থনা করে থাক, আর বলতে থাক: তিনি যদি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।
৬৪. তুমি বলে দাও: আল্লাহই তোমাদেরকে ঐ বিপদ এবং অন্যান্য প্রতিটি বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন, কিন্তু এরপরও তোমরা শিরক কর।
৬৫. তুমি বলে দাও: আল্লাহ তোমাদের ঊর্ধ্বলোক হতে এবং তোমাদের পায়ের তলদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে যথেষ্ট ক্ষমতাবান, অথবা তোমাদেরকে দলে দলে বিচ্ছিন্ন করে এক দলের দ্বারা অপর দলের শক্তির স্বাদ গ্রহণ করাবেন; লক্ষ্য কর! আমি বার বার বিভিন্ন উপায়ে আমার নিদর্শন ও যুক্তি প্রমাণ বর্ণনা করছি – উদ্দেশ্য হল, যেন বিষয়টিকে তারা পূর্ণ রূপে জ্ঞানায়ত্ব ও হৃদয়ঙ্গম করে নিতে পারে।
৬৬. তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা ওকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে, অথচ ওটা প্রমানিত সত্য। তুমি বলে দাও: আমি তোমাদের উকিল হয়ে আসিনি।
৬৭. প্রত্যেকটি সংবাদ প্রকাশের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে এবং অচিরেই তোমরা তা জানতে পারবে।
৬৮. যখন তুমি দেখবে যে, লোকেরা আমার আয়াতসমূহে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করছে, তখন তুমি তাদের নিকট হতে দূরে সরে যাবে, যতক্ষণ না তারা অন্য কোন প্রসঙ্গে নিমগ্ন হয়। শাইতান যদি তোমাকে এটা বিস্মৃত করে, তাহলে স্মরণ হওয়ার পর আর ঐ যালিম লোকদের সাথে তুমি বসবে না।
৬৯. এদের যখন বিচার করা হবে, তখন ধর্মপরায়ণদের উপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না; কিন্তু তাদের দায়িত্ব উপদেশ দান করা যাতে ওরা ভীত হয়।
৭০. যারা নিজেদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছে, তুমি তাদেরকে বর্জন করে চলবে, পার্থিব জীবন যাদেরকে সম্মোহিত করে ধোঁকায় নিপতিত করেছে, কুরআন দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দিতে থাক, যাতে কোনো ব্যক্তি স্বীয় কাজ দোষে ধ্বংস হয়ে না যায়। আল্লাহ ছাড়া তার কোন বন্ধু, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর যেন এই অবস্থার সম্মুখীন না হয় যে, দুনিয়ার সমস্ত কিছুর বিনিময় দিয়েও মুক্তি পেতে চাইলে সেই বিনিময় গ্রহণ করা হবে না। তারা এমনই লোক যারা নিজেদের কর্মদোষে আটকা পড়ে গেছে; তাদের কুফরী করার কারণে তাদের জন্য ফুটন্ত গরম পানীয় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
৭১. তুমি বলে দাও: আমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদাত করব, যারা আমাদের কোনো উপকার করতে পারবে না এবং আমাদের কোনো ক্ষতিও করতে পারবে না? অধিকন্তু আমাদেরকে সুপথ প্রদর্শনের পর আমরা কি উল্টা পথে ফিরে যাব? আমরা কি ঐ ব্যক্তির ন্যায় হব, যাকে শাইতান মরুভূমির মধ্যে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে এবং যে দিশেহারা-লক্ষ্যহারা হয়ে ঘুরে মরছে? তার সহচরেরা তাকে হিদায়াতের দিকে ডেকে বলছে – তুমি আমাদের সঙ্গে এসো। তুমি বল: আল্লাহর হিদায়াতই হচ্ছে সত্যিকারের সঠিক হিদায়াত, আর আমাকে সারা জাহানের রবের সামনে মাথা নত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৭২. এবং তা এই যে, নামায কায়েম কর এবং তাঁকে ভয় কর। তাঁর সামনেই তোমরা একত্রিত হবে।
৭৩. সেই সত্তা আকাশমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেন: ‘হাশর হও’, সেদিন হাশর হয়ে যাবে। তাঁর কথা খুবই যথার্থ বাস্তবানুগ। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন একমাত্র তাঁরই হবে বাদশাহী ও রাজত্ব। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। তিনি হচ্ছেন প্রজ্ঞাময়, সর্ববিদিত।
৭৪. স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম পিতা আযরকে বললেন: তুমি কি প্রতিমাসমূহকে উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায় প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট।
৭৫. আমি এরূপ ভাবেই ইব্রাহীমকে নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডলের অত্যাশ্চর্য বস্তুসমূহ দেখাতে লাগলাম, যাতে সে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে যায়।
৭৬. যখন রাতের অন্ধকার তাকে আবৃত করল, তখন সে আকাশের একটি নক্ষত্র দেখতে পেল, আর বলল: এটাই আমার প্রতিপালক! কিন্তু যখন ওটা অস্তমিত হল, তখন সে বলল: আমি অস্তমিত বস্তুকে ভালবাসি না।
৭৭. অতঃপর যখন চন্দ্রকে ঝলমল করতে দেখল, বলল: এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর যখন তা অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন বলল যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ প্রদর্শন না করেন, তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
৭৮. অতঃপর যখন সূর্যকে চকচক করতে দেখল, বলল: এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যেসব বিষয়কে শরীক কর, আমি ওসব থেকে মুক্ত।
৭৯. আমার মুখমণ্ডলকে আমি একনিষ্ঠভাবে সেই মহান সত্তার দিকে ফেরাচ্ছি, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।
৮০. আর তার জাতির লোকেরা তার সাথে ঝগড়া করতে থাকলে সে তাদেরকে বলল: তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করছো? অথচ তিনি আমাকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন! তোমরা আল্লাহর সাথে যা কিছু শরীক করছো, আমি ওদের ভয় করি না, তবে যদি আমার পালনকর্তা কিছু চান। প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে আমার পালনকর্তার জ্ঞান খুবই ব্যাপক, এর পরেও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
৮১. তোমাদের মনগড়া ও বানানো শরীকদেরকে আমি কীরূপে ভয় করতে পারি? অথচ তোমরা এই ভয় করছ না যে, আল্লাহর সাথে যাদেরকে তোমরা শরীক করছ, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের কাছে কোন দলীল প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, আমাদের দুই দলের মধ্যে কারা অধিকতর শান্তি ও নিরাপত্তা লাভের অধিকারী, যদি তোমাদের জানা থাকে তাহলে বলত?
৮২. প্রকৃত পক্ষে তারাই শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকারী এবং তারাই সঠিক পথে পরিচালিত, যারা নিজেদের ঈমানকে যুলমের সাথে (শির্‌কের সাথে) মিশ্রিত করেনি।
৮৩. এ হল আমার যুক্তি-প্রমাণ যা আমি ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার কাওমের বিপক্ষে, আমি যাকে ইচ্ছে মর্যাদায় উন্নীত করি। তোমাদের প্রতিপালক নিশ্চয়ই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
৮৪. আমি তাঁকে দান করেছি ইসহাক এবং এয়াকুব। প্রত্যেককেই আমি পথ প্রদর্শন করেছি এবং পূর্বে আমি নূহকে পথ প্রদর্শন করেছি – তাঁর সন্তানদের মধ্যে দাউদ, সোলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
৮৫. আর ও যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকে। তারা সবাই পুণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৮৬. এবং ইসরাঈল, ইয়াসা, ইউনূস, লূতকে প্রত্যেককেই আমি সারা বিশ্বের ওপর গৌরবান্বিত করেছি।
৮৭. আর এদের বাপ-দাদা, সন্তান, সন্ততি ও ভাইদের মধ্যে অনেককে আমি মনোনীত করে সঠিক ও সোজা পথে পরিচালিত করেছি।
৮৮. এটাই আল্লাহর হিদায়াত; তিনি তাঁর বান্দার মধ্যে যাকে চান, এই পথে পরিচালিত করেন। কিন্তু তারা যদি শির্‌ক করত, তাহলে তারা যা কিছুই করত, সবই ব্যর্থ হয়ে যেত।
৮৯. এরা ছিল সেই লোক, যাদেরকে আমি কিতাব, শাসনভার ও নবুওয়াত দান করেছি। সুতরাং যদি এরা তোমার নবুওয়াতকে অস্বীকার করে, তাহলে তাদের স্থলে আমি এমন এক জাতিকে নিয়োগ করব, যারা ওটা অস্বীকার করে না।
৯০. এরা এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেছিলেন। অতএব, আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিন: আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এটি সারা বিশ্বের জন্যে একটি উপদেশমাত্র।
৯২. এ কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার স্বীয় নামায সংরক্ষণ করে।
৯৪. (ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা আমার নিকট তেমনই নিঃসঙ্গ অবস্থায় হাজির হয়েছ, যেমনভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, তোমাদেরকে যা (নি’মাতরাজি) দান করেছিলাম, তা তোমরা তোমাদের পেছনে ফেলে রেখে এসেছ, আর তোমাদের সাথে সেই সুপারিশকারীগণকেও দেখছি না, যাদের সম্পর্কে তোমরা ধারণা করতে যে, তোমাদের কার্য উদ্ধারের ব্যাপারে তাদের অংশ আছে। তোমাদের মধ্যেকার সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেছে, আর তোমরা যে সব ধারণা করতে, সে সব অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
৯৫. আল্লাহই হচ্ছেন শস্য দানা ও বীজ বিদীর্ণকারী, তিনি মৃত থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে মৃতকে। এই হচ্ছেন আল্লাহ; সৎ পথ থেকে তোমরা কোথায় চলে যাচ্ছ?
৯৬. তিনিই রাতের আবরণ বিদীর্ণ করে রঙিন প্রভাতের উন্মেষকারী, তিনিই রাতকে বিশ্রামকাল এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ের নিরূপক করে দিয়েছেন; এটা হচ্ছে সেই পরম পরাক্রান্ত ও সর্ব পরিজ্ঞাতার (আল্লাহর) নির্ধারণ।
৯৭. আর তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ওগুলির সাহায্যে অন্ধকারে পথের সন্ধান পেতে পার স্থলভাগে এবং সমুদ্রে। নিশ্চয়ই আমি প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি ঐ সমস্ত লোকের জন্য যারা জ্ঞান রাখে।
৯৮. তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর (প্রত্যেকের জন্য) একটি স্থান অধিক দিন থাকার জন্য এবং একটি স্থান অল্প দিন থাকার জন্য রয়েছে, এই নিদর্শনসমূহ আমি তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করলাম, যাদের বুদ্ধি-বিবেচনা আছে।
৯৯. আর তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, ওর সাহায্যে সব রকমের উদ্ভিদ আমি (আল্লাহ) উৎপন্ন করি; অতঃপর তা থেকে সবুজ শাখা বের করি, ফলতঃ তা থেকে আমি উপর্যুপরি উত্থিত বীজ উৎপন্ন করি। এবং খেজুর বৃক্ষ থেকে অর্থাৎ ওর পুষ্পকণিকা থেকে ছড়া হয় যা নিম্ন দিকে ঝুঁকে পড়ে, আর আঙুরসমূহের উদ্যান এবং যাইতূন ও আনার যা পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত। প্রত্যেক ফলের প্রতি লক্ষ্য কর, যখন ওটা ফলে এবং ওর পরিপক্ক হওয়ার প্রতি লক্ষ্য কর। এই সমুদয়ের মধ্যে নিদর্শনসমূহ রয়েছে তাদেরই জন্য, যারা ঈমান রাখে।
১০০. আর এই (অজ্ঞ) লোকেরা জিনদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে নিয়েছে, অথচ আল্লাহই ঐগুলিকে সৃষ্টি করেছেন, আর না জেনে না বুঝে তারা তাঁর জন্য পুত্র কন্যা রচনা করে; তিনি মহিমান্বিত (পবিত্র), এদের আরোপিত বিশেষণগুলি হতে বহু উর্ধ্বে তিনি।
১০১. তিনি আকাশমণ্ডলী ও ভূমণ্ডলের আদি স্রষ্টা। কীরূপে আল্লাহর পুত্র হতে পারে, অথচ তাঁর কোনো সঙ্গী নেই? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ।
১০২. তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী।
১০৩. কোনো মানব-দৃষ্টি তাঁকে দেখতে পারে না, অথচ তিনি সকল কিছুই দেখতে পান এবং তিনি অতীব সূক্ষ্মদর্শী এবং সর্ব বিষয়ে ওয়াকিফহাল।
১০৪. তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই।
১০৫. এ রূপেই আমি নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করি, যেন লোকেরা না বলে – তুমি কারও নিকট থেকে পাঠ করে নিয়েছ, আর যেন আমি একে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য প্রকাশ করে দিই।
১০৬. তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যে ওয়াহী পাও, তার অনুসরণ কর, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই, তুমি মুশরিকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
১০৭. যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তারা শেরক করত না। আমি আপনাকে তাদের সংরক্ষক করিনি এবং আপনি তাদের কার্যনির্বাহী নন।
১০৮. এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদাত (পূজা-অর্চনা) করে, তোমরা তাদেরকে গালাগালি কর না, তাহলে তারা অজ্ঞতাবশতঃ বৈরীভাবে আল্লাহকেই গালাগালি দিতে শুরু করবে। আমি তো এ রূপেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের ‘আমলকে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ততাদেরকে তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তখন তারা কী কী কাজ করেছিল, তা তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন।
১০৯. তারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করে বলে – তাদের নিকট যদি কোনো নিদর্শন আসত, তবে তারা অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনত। বল, নিদর্শন (আনার ব্যাপারটি) হল আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না, এ কথা কীভাবে তোমাদেরকে বোঝানো যাবে?
১১০. আর যেহেতু তারা প্রথমবার ঈমান আনেনি, এর ফলে তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেব এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যেই বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেব।
১১১. আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ করতাম আর মৃতরা তাদের সাথে কথা বলত আর আমি তাদের সামনে যাবতীয় বস্তু হাজির করে দিতাম, তবুও আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত তারা ঈমান আনত না, মূলতঃ তাদের অধিকাংশই অজ্ঞতাপূর্ণ কাজ করে।
১১২. এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না।
১১৩. যারা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না, তাদের অন্তরকে ঐ দিকে অনুরক্ত হতে দাও; এবং তারা যেন তাতে সন্তুষ্ট থাকে, আর তারা যেসব কাজ করে, তা যেন তারা আরও করতে থাকে।
১১৫. তোমার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোনো পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
১১৬. তুমি যদি দুনিয়াবাসী অধিকাংশ লোকের কথামত চল তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যূত করে ফেলবে, তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে, আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।
১১৭. তোমার প্রতিপালক তাদের সম্পর্কে খুব জ্ঞাত রয়েছেন, যারা তাঁর পথ থেকে বিপথগামী হয় এবং তিনি তাদেরকেও খুব ভাল করে জানেন, যারা তাঁর পথে অনুগমন করে।
মুহাম্মদ দ্বারা ১১৬ তম প্রকাশ: সূরা আল আনকাবূত (২৯) (মাকড়শা), ১২ থেকে ৬৯ আয়াত:
১২. কাফেররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ কর। আমরা তোমাদের পাপভার বহন করব। অথচ তারা পাপভার কিছুতেই বহন করবে না। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
১৩. তারা নিজেদের পাপভার এবং তার সাথে আরও কিছু পাপভার বহন করবে। অবশ্য তারা যে সব মিথ্যা কথা উদ্ভাবন করে, সে সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে।
১৪. আমি নূহ (আঃ) কে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর তাদেরকে মহাপ্লাবণ গ্রাস করেছিল। তারা ছিল পাপী।
১৫. অতঃপর আমি তাঁকে ও নৌকারোহীগণকে রক্ষা করলাম এবং নৌকাকে নিদর্শন করলাম বিশ্ববাসীর জন্যে।
১৬. স্মরণ কর ইবরাহীমের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁকে ভয় কর, তোমাদের জন্য এটাই শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।
১৭. তোমরা তো আল্লাহ ব্যতীত শুধু মূর্তি পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা কর, তারা তোমাদের জীবনোপকরনের মালিক নয়। সুতরাং তোমরা জীবনোপকরণ কামনা কর আল্লাহর নিকট এবং তাঁরই ইবাদাত কর ও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।
১৮. তোমরা যদি আমাকে মিথ্যাবাদী বলে, তাহলে জেনে রেখ যে, তোমাদের পূর্ববর্তীরাও নবীদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা ছাড়া রাসূলের আর কোনো দায়িত্ব নেই।
১৯. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন? অতঃপর পুনরায় সৃষ্টি করবেন। এটাতো আল্লাহর জন্য সহজ।
২০. বল: পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং অনুধাবন কর কীভাবে তিনি সৃষ্টি শুরু করেছেন? অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২১. তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন, যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।
২২. তোমরা (আল্লাহকে) না পৃথিবীতে ব্যর্থ করতে পারবে আর না আকাশে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের জন্য নেই কোনো অভিভাবক, নেই কোন সাহায্যকারী।
২৩. যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে আর তাঁর সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে, তারা আমার রহমত থেকে নিরাশ হবে আর তাদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি।
২৪. সুতরাং ইবরাহীমের সম্প্রদায়ের লোকেরা এ ছাড়া কোন জবাব দিল না, তারা বলল: তাকে হত্যা কর অথবা অগ্নিদগ্ধ কর। অতঃপর আল্লাহ তাকে আগুন থেকে রক্ষা করলেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।
২৫. ইবরাহীম বলল: তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে মূর্তিগুলিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছ পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের খাতিরে; কিন্তু কিয়ামাত দিবসে তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পরকে অভিসম্পাত দিবে। তোমাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।
২৬. লূত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। (ইবরাহীম) বলল: আমি আমার রবের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করছি। তিনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
২৭. আমি ইবরাহীমকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকূব এবং তার বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নবুওয়াত ও কিতাব এবং আমি তাকে পুরস্কৃত করেছিলাম দুনিয়ায় এবং আখিরাতেও। নিশ্চয়ই সে হবে সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।
২৮. স্মরণ কর লূতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি।
২৯. তোমরা পুরুষের উপর উপগত হচ্ছ এবং তোমরা রাহাজানি করে থাক এবং তোমরা নিজেদের মজলিশে প্রকাশ্য ঘৃণ্য কাজ করে থাক। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এই বলল: আমাদের ওপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন কর, যদি তুমি সত্যবাদী হও।
৩০. সে বলল – হে আমার প্রতিপালক! ফাসাদ সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।
৩১. যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা সুসংবাদসহ ইবরাহীমের নিকট এলো, তারা বলেছিল: আমরা এই জনপদবাসীকে ধ্বংস করব, এর অধিবাসী তো সীমা লংঘনকারী।
৩২. ইবরাহীম বলল: এই জনপদে লূত রয়েছে। তারা বলল: সেখানে কারা আছে তা আমরা ভাল জানি; আমরা তো লূতকে ও তাঁর পরিজনবর্গকে রক্ষা করবই, তাঁর স্ত্রীকে ব্যতীত; সে পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
৩৩. এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা লূতের নিকট এলো তখন তাদের জন্য সে বিষণ্ণ হয়ে পড়ল এবং নিজেকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করল। তারা বলল: ভয় কর না, দুঃখও কর না; আমরা তোমাকে ও তোমার পরিবারবর্গকে রক্ষা করব, তোমার স্ত্রী ব্যতীত; সে পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
৩৪. আমরা এই জনপদবাসীর ওপর আকাশ হতে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা ছিল পাপাচারী।
৩৫. আমি বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখেছি।
৩৬. আমি মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শোআয়বকে প্রেরণ করেছি। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, শেষ দিবসের আশা রাখ এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না।
৩৭. কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল; অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল; ফলে তারা নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল।
৩৮. এবং আমি ‘আদ ও ছামূদকে ধ্বংস করেছিলাম; তাদের বাড়ীঘরই তোমাদের জন্য এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। শাইতান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল এবং তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল, যদিও তারা ছিল বিচক্ষণ।
৩৯. স্মরণ কর কারূন, ফিরআউন ও হামানকে; মূসা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল; তখন তারা দেশে দম্ভ করত; কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি।
৪০. ওদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো প্রতি আমি পাঠিয়েছিলাম পাথরসহ ঝটিকা, কারো প্রতি আঘাত হেনেছিল বজ্রের প্রচণ্ড আওয়াজ, কাউকে আমি প্রোথিত করেছি ভূগর্ভে আর কাউকে দিয়েছিলাম ডুবিয়ে। তাদের প্রতি আল্লাহ কোন যুলম করেননি, তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল।
৪১. আল্লাহর পরিবর্তে যারা অপরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সা, যে নিজের জন্য ঘর তৈরি করে; এবং ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো দুর্বলতম, যদি তারা জানত।
৪২. তারা আল্লাহর পরিবর্তে যা কিছুকে আহবান করে, আল্লাহ তা জানেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৪৩. মানুষের জন্য এ সব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকি, কিন্তু শুধু জ্ঞানী ব্যক্তিরাই এটা বোঝে।
৪৪. আল্লাহ যথাযথভাবে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।
৪৫. তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব আবৃত্তি কর এবং নামায প্রতিষ্ঠিত কর। নিশ্চয়ই নামায বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে। আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা জানেন।
৪৬. তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবে না, তবে তাদের সাথে করতে পার যারা তাদের মধ্যে সীমালংঘনকারী এবং বল: আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আমরা বিশ্বাস করি এবং আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য তো একই এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী।
৪৭. এভাবেই আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছিলাম, তারা এতে বিশ্বাস করে এবং এদেরও (মাক্কাবাসী) কেহ কেহ এতে বিশ্বাস করে। শুধু কাফিরেরাই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।
৪৮. তুমি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব পাঠ করনি এবং স্বহস্তে কোনোদিন কিতাব লেখনি যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে।
৪৯. বস্তুতঃ যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরে এটা স্পষ্ট নিদর্শন। শুধু যালিমরাই আমার নিদর্শন অস্বীকার করে।
৫০. তারা বলে – তার কাছে তার প্রতিপালকের নিকট হতে কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন? বল, নিদর্শন তো আছে আল্লাহর কাছে, আমি কেবল একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী।
৫১. এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার নিকট কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়? এতে অবশ্যই বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য অনুগ্রহ ও উপদেশ রয়েছে।
৫২. বল: আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে তা তিনি অবগত। যারা বাতিলকে বিশ্বাস করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।
৫৩. তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে; যদি নির্ধারিত সময় না থাকত তাহলে শাস্তি তাদের উপর এসে যেত। নিশ্চয়ই তাদের উপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, তাদের অজ্ঞাতসারে।
৫৪. তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।
৫৫. সেদিন শাস্তি তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে ঊর্ধ্ব ও অধঃদেশ হতে এবং তিনি বলবেন: তোমরা যা করতে তার স্বাদ আস্বাদন কর।
৫৬. হে আমার বান্দারা! যারা ঈমান এনেছ, আমার পৃথিবী প্রশস্ত, কাজেই তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদাত কর।
৫৭. জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।
৫৮. যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, আমি অবশ্যই তাদের বসবাসের জন্য সুউচ্চ প্রাসাদ দান করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, কত উত্তম প্রতিদান সৎ কর্মশীলদের
৫৯. যারা সবর করে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে।
৬০. এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৬১. যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং চাঁদ-সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করছেন? তারা অবশ্যই বলবে: আল্লাহ! তাহলে তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?
৬২. আল্লাহ্ই তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে রিযক প্রশস্ত করেন, আর যার জন্য ইচ্ছে সীমাবদ্ধ করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বাধিক অবগত।
৬৩. যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: ভূমি মৃত হওয়ার পর আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে কে ওকে সঞ্জীবিত করে? তারা অবশ্যই বলবে: আল্লাহ! বলঃ প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা অনুভব করে না।
৬৪. এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পারলৌকিক জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানতো।
৬৫. তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা বিশুদ্ধ চিত্তে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে; অতঃপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখন তারা শিরকে লিপ্ত হয়।
৬৬. তাদের প্রতি আমার দান তারা অস্বীকার করে এবং ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে; অচিরেই তারা জানতে পারবে।
৬৭. তারা কি দেখে না যে, আমি হারামকে নিরাপদ স্থান করেছি, অথচ এর চতুর্পাশে যে সব মানুষ আছে তাদের ওপর হামলা করা হয়; তাহলে কি তারা অসত্যেই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
৬৮. যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে, তার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? জাহান্নামই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়?
৬৯. যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।
মুহাম্মদ দ্বারা ১১৭ তম প্রকাশ: সূরা ইউনুস (১০) (নবী ইউনুস), ৯৪ থেকে ৯৬ বাদে ৭১ থেকে ১০৯ আয়াত:
৭১. তাদেরকে নূহের কাহিনী পড়ে শোনাও। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থিতি আর আল্লাহর আয়াতসমূহ দ্বারা তোমাদের প্রতি আমার উপদেশ দান যদি তোমাদের নিকট অসহ্য মনে হয় (তাতে আমার কোন পরোয়া নেই) কারণ আমি ভরসা করি আল্লাহর উপর। তোমরা তোমাদের শরীকদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর, পরে তোমাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তোমাদের মাঝে যেন অস্পষ্টতা না থাকে, অতঃপর আমার উপর তা কার্যকর কর আর আমাকে কোনো অবকাশই দিও না।
৭২. আর যদি তোমরা (আমার আহবান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও (তাতে আমার কোনো ক্ষতি হবে না), আমি তো তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাচ্ছি না, আমার পারিশ্রমিক আছে কেবল আল্লাহরই নিকট, আমাকে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে শামিল হওয়ারই আদেশ দেয়া হয়েছে।
৭৩. কিন্তু তারা তাকে মিথ্যে বলে অমান্য করল। তখন আমি তাকে আর তার সঙ্গে যারা নৌকায় ছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম আর তাদেরকে (পৃথিবীতে) উত্তরাধিকারী বানালাম, আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যে বলে অমান্য করেছিল তাদেরকে ডুবিয়ে মারলাম। এখন দেখ, যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল (তারা সতর্ক না হওয়ায়) তাদের কী পরিণাম ঘটেছিল।
৭৪. নূহের পর আমি রসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম, তারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল। কিন্তু পূর্বে তারা মিথ্যে জেনে প্রত্যাখ্যান করায় পরে আর ঈমান আনতে প্রস্তুত হয়নি। সীমালঙ্ঘনকারীদের হৃদয়ে এভাবেই আমি মোহর লাগিয়ে দিই।
৭৫. তাদের পর আমি মূসা ও হারূনকে আমার নিদর্শন সহকারে ফির’আওন ও তার প্রধানদের নিকট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা অহঙ্কার করে, তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়।
৭৬. অতঃপর যখন তাদের প্রতি আমার সন্নিধান হতে প্রমাণ পৌঁছল, তখন তারা বলতে লাগল, নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট যাদু।
৭৭. মূসা বলল: তোমরা কি এই যথার্থ প্রমাণ সম্পর্কে এমন কথা বলছ, যখন ওটা তোমাদের নিকট পৌঁছল? এটা কি যাদু? অথচ যাদুকররা তো সফলকাম হয় না!
৭৮. তারা বলতে লাগল: তুমি কি আমাদের নিকট এ জন্য এসেছ যে, আমাদেরকে সরিয়ে দাও সেই তরীকা হতে, যাতে আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে পেয়েছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দুজনের আধিপত্য স্থাপিত হয়ে যায়? আমরা তোমাদের দুজনকে কখনও মানব না।
৭৯. আর ফেরাউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ যাদুকরদিগকে।
৮০. তারপর যখন যাদুকররা এল, মূসা তাদেরকে বলল, নিক্ষেপ কর, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করে থাক।
৮১. অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বলল, যা কিছু তোমরা এনেছ, তা সবই যাদু – এবার আল্লাহ এসব ভণ্ডুল করে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুষ্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না।
৮২. আল্লাহ সত্যকে সত্যে পরিণত করেন স্বীয় নির্দেশে, যদিও পাপীদের তা মনঃপুত নয়।
৮৩. মূসার ওপর তার জাতির মধ্য হতে গুটিকয়েক লোক ব্যতীত কেউ ঈমান আনেনি ফির’আওন ও তার প্রধানদের নির্যাতনের ভয়ে। বাস্তবিকই ফির’আওন দুনিয়াতে খুবই উদ্ধত ছিল, আর সে ছিল অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
৮৪. মূসা বলেছিল, “হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক তাহলে তোমরা তাঁরই ওপর ভরসা কর, যদি তোমরা আত্মসমর্পণকারী হও।”
৮৫. তখন তারা বলল, “আমরা আল্লাহর উপরই ভরসা করি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিম জাতির অত্যাচারের পাত্র করো না,
৮৬. আর তোমার অনুগ্রহে আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায় থেকে রক্ষা কর।”
৮৭. আর আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি অহী পাঠালাম: তোমরা উভয়ে তোমাদের এই লোকদের জন্য মিসরে বাসস্থান বহাল রাখ, আর (সালাতের সময়) তোমরা সবাই নিজেদের সেই গৃহগুলিকে সালাত আদায় করার স্থান রূপে গণ্য কর এবং নামায কায়েম কর, আর মুমিনদেরকে শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও।
৮৮. মূসা বলল, “হে আমার প্রতিপালক! তুমি ফিরআওন আর তার প্রধানদেরকে এ পার্থিব জগতে চাকচিক্য আর ধন সম্পদ দান করেছ আর এর দ্বারা হে আমাদের রবব! তারা মানুষকে তোমার পথ থেকে বিচ্যুত করছে, হে আমার প্রতিপালক! তাদের সম্পদ ধ্বংস করে দাও, আর তাদের হৃদয়কে কঠিন করে দাও, যাতে তারা ভয়াবহ আযাব দেখার পূর্ব পর্যন্ত ঈমান আনতে সক্ষম না হয় (যেহেতু তারা বার বার আল্লাহর নিদর্শন দেখেও সত্য দ্বীনের শত্রুতায় অটল হয়ে আছে)।
৮৯. তিনি (আল্লাহ) বললেন: তোমাদের উভয়ের দুআ কবূল করা হল। অতএব তোমরা দৃঢ় থেক এবং তাদের পথ অনুসরণ করনা যাদের জ্ঞান নেই।
৯০. আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম আর ফির’আওন ও তার সৈন্য সামন্ত ঔদ্ধত্য ও সীমালঙ্ঘন করে তাদের পেছনে ছুটল, অতঃপর যখন সে ডুবতে শুরু করল তখন সে বলল, ‘আমি ঈমান আনছি যে, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, যাঁর প্রতি বানী ইসরাঈল ঈমান এনেছে, আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
৯১. “এখন (ঈমান আনছ), আগে তো অমান্য করেছ আর ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত থেকেছ।
৯২. আজ আমি তোমার দেহকে রক্ষা করব যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পার।” অধিকাংশ মানুষই আমার নিদর্শনাবলী সম্পর্কে নিশ্চিতই উদাসীন।”
৯৩. আর আমি বানী ইসরাঈলকে থাকার জন্য অতি উত্তম বাসস্থান প্রদান করলাম, আর আমি তাদেরকে আহার করার জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করলাম, তারা মতভেদ করেনি ঐ পর্যন্ত যতক্ষণ তাদের নিকট (আহকামের) জ্ঞান পৌঁছল। নিঃসন্দেহে তোমার রাব্ব কিয়ামাত দিবসে তাদের মধ্যে সেই সব বিষয়ের মীমাংসা করবেন, যাতে তারা মতভেদ করছিল।
৯৭. যদিও তাদের নিকট সমস্ত প্রমাণ পৌঁছে যায়, যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
৯৮. সুতরাং এমন কোনো জনপদই ঈমান আনেনি যে, তাদের ঈমান আনা উপকারী হয়েছে, ইউনুসের কাওম ছাড়া। যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমি তাদের থেকে পার্থিব জীবনের অপমানজনক শাস্তি বিদূরিত করলাম এবং তাদেরকে সুখ স্বাচ্ছন্দে থাকতে দিলাম এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত।
৯৯. তোমার প্রতিপালক ইচ্ছে করলে দুনিয়ার সমস্ত লোক অবশ্যই ঈমান আনত, তাহলে কি তুমি ঈমান আনার জন্য মানুষদের উপর জবরদস্তি করবে?
১০০. আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ ঈমান আনতে পারবে না, আর যারা বিবেক বুদ্ধি খাটায় না, আল্লাহ তাদের ওপর অপবিত্রতা চাপিয়ে দেন।
১০১. বলে দাও: তোমরা লক্ষ্য কর, যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে ও যমীনে; আর যারা ঈমান আনেনা, প্রমাণাদী ও ভয় প্রদর্শন তাদের কোনো উপকার সাধন করতে পারে না।
১০২. অতএব তারা শুধু ঐ লোকদের অনুরূপ ঘটনাবলীর প্রতীক্ষা করছে, যারা তাদের পূর্বে গত হয়েছে। তুমি বলে দাও: আচ্ছা তাহলে তোমরা ওর প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষারতদের মধ্যে রইলাম।
১০৩. শেষ পর্যন্ত আমি স্বীয় রাসূলদেরকে এবং মুমিনদেরকে নাজাত দিলাম, এ রূপেই আমি মুমিনদেরকে নাজাত দিয়ে থাকি।
১০৪. বলে দাও – হে মানবকুল, তোমরা যদি আমার দ্বীনের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে থাক, তবে (জেনো) আমি তাদের এবাদত করি না, যাদের এবাদত তোমরা কর আল্লাহ ব্যতীত। কিন্তু আমি এবাদত করি আল্লাহ তায়ালার, যিনি তুলে নেন তোমাদেরকে। আর আমার প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে আমি ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত থাকি।
১০৫. আর যেন সোজা দ্বীনের প্রতি মুখ করি সরল হয়ে এবং যেন মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত না হই।
১০৬. আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মন্দও করবে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
১০৭. আর আল্লাহ যদি তোমার উপর কোনো কষ্ট আরোপ করেন, তাহলে কেউ নেই তা খণ্ডাবার মত তাঁকে ছাড়া। পক্ষান্তরে যদি তিনি কিছু কল্যাণ দান করেন, তবে তার মেহেরবানীকে রহিত করার মতও কেউ নেই। তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ দান করতে চান, স্বীয় বান্দাদের মধ্যে তাকেই দান করেন; বস্তুত; তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু।
১০৮. বলে দাও, হে মানবকুল, সত্য তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে। এমন যে কেউ পথে আসে, সেপথ প্রাপ্ত হয় স্বীয় মঙ্গলের জন্য। আর যে বিভ্রান্ত ঘুরতে থাকে, সে স্বীয় অমঙ্গলের জন্য বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকবে। অনন্তর আমি তোমাদের উপর অধিকারী নই।
১০৯. আর তুমি চল সে অনুযায়ী, যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুতঃ তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত:- মুহাম্মদের পক্ষের কুরাইশগন দেন-দরবার শুরু করে দিয়েছেন বয়কট বাতিলের জন্য, ফলাফল আসতে কিছুটা সময় লাগবে; তবে মুহাম্মদ এখনও জানেন না তার সামনে আসবে বয়কটের চেয়ে শতগুণ জটিল পরিস্থিতি! মুহাম্মদ বলতে বাধ্য হবেন: আগেই তো এরচেয়ে ভাল ছিলাম!
গত পর্বে করা প্রশ্নটির উত্তর: উম্মু আয়মান বারাকাপিতার নাম: সালাবা ইবনে আমর। তিনি মুহাম্মদের লালন-পালন করতেন। মুহাম্মদকে কোলে-কাঁখে করে যাঁরা বড় করেন, তিনি তাঁদের একজন। পিতার সূত্রে মুহাম্মদ সাতটি ছাগল পেয়েছিলেন (৭ সংখ্যার প্রতি প্রেমের কারণ!), উম্মু আয়মান সেগুলো চরাতেন। মুহাম্মদের বয়স যখন ছয় বছর, তখন মা আমিনা এই দাসীকে সঙ্গে করে মদিনায় যান স্বামীর কবর যিয়ারতের জন্য।
মুহাম্মদের
জীবন ইতিহাস বড় বিচিত্র! যা আমরা সত্য বলে জানি তার বেশীরভাগই সত্য নয়, আর যা আমরা
মিথ্যা বলে জানি তার সবটাই মিথ্যা নয়! একথা আমার একার নয়, ইসলামের ইতিহাসবিদগন বহু
বিষয়ে এখনও দ্বিধায় ভোগেন এবং মুহাম্মদের নামে প্রচলিত বেশীরভাগ মিথকে সূত্রহীন গল্প
বলে খারিজ/বাতিল করেন। আজ মুহাম্মদকে আমরা যতটা জানি তার পেছনে ৫ জন মানুষের পরিশ্রমে
লেখা নবী জীবনী (সিরাত) মূল সূত্র হিসাবে
কাজ করে; এদের মধ্যে ৪ জনের নাম ‘মুহাম্মদ’ এবং
একজনের নাম ‘মামর’
এছাড়া কোরআন ও হাদীস সংকলনগুলো নবী মুহাম্মদ জীবনের জিগ-স পাজল মাত্র, যা এই ৫ জনের
লেখার সত্যায়ন করে।

            মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক:                   মৃত্যু
১৫১ হিজরীতে।

  মামর
ইবনে রাশিদ:                       মৃত্যু ১৫৩ হিজরীতে।

            মুহাম্মদ
ইবনে ওমর (ওয়াকেদী):        মৃত্যু ২০৭ হিজরীতে।

            মুহাম্মদ ইবনে সাদ:                      মৃত্যু
২৩০ হিজরীতে।

            মুহাম্মদ
ইবনে জারির আল তাবারি:     মৃত্যু ৩১০ হিজরীতে।

তালিকার
প্রথম মুহাম্মদ
ও মামর ছিলেন সমসাময়িক এবং একই সূত্র থেকে
তারা নবী মুহাম্মদ জীবনের বেশীরভাগ অংশ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তাদের
‍দুজনের বর্ণনায় প্রবল ভিন্নতা পাঠককে দ্বিধায় ফেলতে বাধ্য! ৩৫০ হিজরীর পর থেকে আধুনিক
কাল পর্যন্ত এই ৫ জনের রচনা নিয়ে যেসকল ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচিত হয়েছে তাতে নবী মুহাম্মদের
নামে বর্ণনা হওয়া প্রায় ৫০ ভাগ অলৌকিক/মুজেজা ঘটনাকে সেফ্র সূত্রহীন বলে বাতিলের খাতায়
ফেলে দেওয়া হয়! আজ তা থেকে মাত্র দুটি বিষয়কে তুলে আনবো।

নবী
মুহাম্মদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীর রচয়িতা মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক
তার নিজের লেখাতেও অনেক বিষয়ে দুধরনের তথ্য প্রদান করে সিদ্ধান্ত নিতে অসমর্থ
হয়েছেন! খলিফা উমরের ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে তিনি ২ টি গল্প বলেছেন, একটি হচ্ছে: উমর মুহাম্মদকে হত্যা করতে উন্মুক্ত
তরবারী হাতে বের হয়ে পথেই জানতে পারেন তার বোন ফাতেমা আর বোন জামাই দুজনেই ইসলাম ধর্ম
গ্রহন করেছেন, তিনি সেখানে যান এবং ঘটনাক্রমে মন পরিবর্তন করে নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন
করেন; এই গল্পটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত। অপরটি
হচ্ছে:
 উমর একদিন রাতের বেলা কাবার গিলাফের আঁড়াল থেকে মুহাম্মদের কন্ঠে কোরআনের
আয়াত শুনে মন পরিবর্তন করেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক গল্প দুটি উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বিষয়টি
আল্লার উপর ছেড়ে দিয়েছেন! পরবর্তীতে ইবনে হিশাম এর আস-সীরাতুন নববিইয়াহ এর তাহকীক: মুছতফা সাক্বা ও অন্যান্যগণ (বৈরূত: দারুল
মারিফাহ, তাবি) এবং তাখরীজ: মাজদী ফাৎহী সাইয়িদ (তান্তা, কায়রো: দারুছ
ছাহাবা লিত তুরাছ, ১ম সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৫ খৃ.) এ বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ উমর-এর ফাতেমার
গৃহে প্রবেশ ও তার নিকট থেকে কুরআন শ্রবণ ও ইসলাম গ্রহণের বিষয়টির সনদ ‘যঈফ’ বলে গল্পটিকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে!
পাঠক ভেবে দেখুন: উমরের ইসলাম গ্রহনের যে গল্পটি সত্য বলে প্রায় প্রতিটি মুসলিম জানে তার কোনো
সঠিক ভিত্তি নেই!

ঠিক
একই সূত্রে বয়কট বাতিলের চুক্তিপত্র পোকায় খেয়ে নোবার গল্পটিকেও এখন আর সত্য বলে মেনে
নেন না ইসলাম গবেষকগন; এবং এটিকেও ‘যঈফ’
বলে বাতিলের খাতায় ফেলা দেওয়া হয়! মূলত কুরায়েশদের মধ্যে বয়কট নিয়ে অসন্তোষ দ্বিধা-বিভক্তিতে
প্রকাশ্য রূপ নেয়। যারা এই চুক্তিনামার বিরোধী ছিল, তারা ক্রমেই সংগঠিত হতে শুরু করে।
বনু আমের বিন লুওয়াই গোত্রের হেশামে ইবনে আমরের উদ্যোগে যোহায়ের ইবনে আবু উমাইয়া ও
মুতাইম ইবনে আদী সহ পাঁচজন নেতৃস্থানীয়
ব্যক্তি কাবার নিকটবর্তী ‘হাজূন’ নামক
স্থানে বসে এ ব্যাপারে একমত হন এবং তাঁদের পক্ষে যোহায়ের কাবাগৃহ তাওয়াফ শেষে সরাসরি
আবু জাহলের মুখের উপরে উক্ত চুক্তিনামাটি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন। সাথে সাথে বাকী চারজন
পরপর তাকে সমর্থন করেন। আবু জেহেল বলেন, বুঝেছি তোমরা রাতের বেলা অন্যত্র পরামর্শ করেই
এসেছ। ঐ সময়ে আবু তালিব কাবা চত্বরে এসে হাজির হন অতঃপর অঙ্গীকারনামাটি মুতাইম ইবনে আদী সর্বসমক্ষে ছিঁড়ে ফেলেন এবং এভাবেই ১০ম নবুয়তী বর্ষের
মুহাররম মাসে দুই অথবা তিন বছরের মাথায় সবসম্মতিক্রমে বয়কট চুক্তি বাতল করা হয়! বয়কট বাতিলের চুক্তিপত্র
পোকায় খেয়ে ফেলার ঘটনাটি মিথ মাত্র, আর ঘটনাটি যদি ঘটেও থাকে তা কাক-তাল, যা পরবর্তীতে
রং-রূপ দিয়ে আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে!
 তবু্ও ঘটনাটি যদি সত্যিই ঘটে
তবে তা কীভাবে তার ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবো এখন।

মুহাম্মদের
৩৪ বছর বয়স পর্যন্ত কাবা ছিলো সংযুক্ত ছবির প্রথম অংশের মত, স্থায়ী ছাদ ছিলো না, ছিলো
একাধিক দরজা এবং জানালা, দরজার প্রবেশপথ ছিলো মাটির সমান্তরাল! নিয়মিত চুরি এবং বৃষ্টিতে
ভিজতে হত এই ঘরটিকে, সাপও বাস করত ভেতরে! তখনকার কাবা ১৬ মিটার লম্বা এবং ৪.৫ মিটার
উচ্চতার একটি ঘর ছিলো! অবাধ যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত ছিলো কাবা। মুহাম্মদের ৩৫ বছর
সময়কালে বন্যা ও আগুনে ঘরটি ক্ষতিগ্রস্থ হবার কারণে একে পূণঃনির্মান করা হয়; অর্থাভাবে
১৬ মিটারের জায়গায় ১৩ মিটার করা হয় ঘরটিকে, অতিরিক্ত ৩ মিটার অংশটিকে একটি উপবৃত্তাকার
দেওয়াল দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়। চুরি ঠেকাতে কাবাকে ৪.৫ মিটার উচ্চতার বদলে ৯ মিটার
উচ্চতা দেওয়া হয় এবং করা হয় স্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা; মাটি থেকে কিছুটা উচ্চতায় তৈরি
করা হয় একটিমাত্র দরজা।

বয়কটকালীন
সময়ে কাবায় প্রবেশাধিকার মুসলিম ও হাশিম গ্রোত্রের জন্য নিষিদ্ধ থাকলেও বাদবাকী সবার
জন্যই তা উন্মুক্ত ছিলো, তিন বছরে কাবায় নিয়মিত ওকাজ/উকাজ মেলার জমায়েত, উমরা, পূঁজা-পাঠ
সবই চালু ছিলো। যদি বয়কট বাতিলের চুক্তিপত্র পোকায় খেয়েও থাকে তা জানা খুব একটা কঠিন
ছিলো না; মুতাইম
ইবনে আদী
-র মুহাম্মদকে অন্ধ
সমর্থন এবং বয়কট বাতিল পরবর্তী ঘটনা প্রমান করে চুক্তিপত্রের পোকায় খাবার খবরটি তার
অথবা তার লোকজন দ্বারাই মুহাম্মদের কান পর্যন্ত পৌছায় এবং মুহাম্মদ তা তার চাচা আবু-তালিবকে
জানান! যেভাবেই ঘটনাটি ঘটুক অথবা না ঘটুক এর মধ্যে নূন্যতম অলৌকিক ঘটনা খোঁজার বিষয়টি
হাস্যকর!

নিশ্চিত
করে না বলতে পারলেও আমার ব্যক্তিগত অভিমত ১২১ নং প্রকাশকালীন সময়েই বয়কট শেষ হবার লক্ষন
পরিস্কার, এবং তার পরবর্তী দুইটি প্রকাশের প্রতিটি আয়াত তা অন্ধভাবে সমর্থন করে; এর
বেশী বিস্তারিত না বলি; গবেষক পাঠকদের জন্য তা খুঁজে দেখার সুযোগ রেখে দিলাম আজকে!

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে
প্রকাশের আজ ৩১ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার শেষ পর্ব। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজী অনুবাদ
অনুসারে নিজস্ব।
}

মুহাম্মদ দ্বারা ১২১ তম প্রকাশ: সূরা লোকমান (৩১) (একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি), ২৭ থেকে
২৯ বাদে ১২ থেকে ৩৪ আয়াত:

১২.
আমি লুকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম। (তাকে বলেছিলাম) যে, তুমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণেই করে। আর কেউ অকৃতজ্ঞ হলে (সে জেনে
রাখুক যে) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।

১৩.
স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশাচ্ছলে তার পুত্রকে বলেছিলঃ হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শরীক
করনা। নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে চরম যুলুম।

১৪.
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের
পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুবছরে, (নির্দেশ দিচ্ছি) যে,
আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (তোমাদের সকলের) প্রত্যাবর্তন তো আমারই
কাছে।

১৫.
তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার অংশীদার স্থির করার জন্য যার জ্ঞান তোমার
নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না। কিন্তু পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে।
যে আমার অভিমুখী হয় তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন
আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব তোমরা যা করছিলে।

১৬.
হে বৎস! কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় আর তা থাকে পাথরের ভিতরে অথবা আকাশে
অথবা যমীনের নীচে, আল্লাহ তাকে এনে হাজির করবেন। আল্লাহ সূক্ষ্ণদর্শী, সব কিছুর খবর
রাখেন।

১৭.
হে বৎস! তুমি নামায কায়িম কর, সৎ কাজের নির্দেশ দাও আর মন্দ কাজ হতে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে
ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ।

১৮.
অহংকারের বশবর্তী হয়ে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না, আর পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা কর না,
নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

১৯.
চলাফেরায় সংযত ভাব অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। স্বরের মধ্যে নিশ্চয়ই গাধার স্বর
সর্বাপেক্ষা শ্রুতিকটু।

২০. তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, যা কিছু আসমানসমূহে আর যমীনে আছে, আল্লাহ সমস্তই
তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামতসমূহ
পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? কতক মানুষ জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ সম্বন্ধে বাক-বিতন্ডা করে, তাদের
না আছে সঠিক পথের দিশা, আর না আছে কোন আলোপ্রদ কিতাব।

২১.
তাদেরকে যখন বলা হয়- আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা অনুসরণ কর, তখন তারা বলে- বরং আমরা
তারই অনুসরণ করব আমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে যে পথ অনুসরণ করতে দেখেছি। শয়তান যদি তাদেরকে
জ্বলন্ত আগুনের শাস্তির দিকে ডাকে, তবুও কি (তারা তারই অনুসরণ করবে)?

২২.
যে কেউ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে আর সে সৎকর্মশীল, সে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মজবুত
হাতল। যাবতীয় কর্ম পরিণাম ফলের জন্য আল্লাহর দিকে ফিরে যায়।

২৩.
কেউ কুফরী করলে তার কুফরী তোমাকে যেন মনোকষ্ট না দেয়, তাদের প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই;
অতঃপর আমি তাদেরকে জানিয়ে দেব তারা কী করত। (মানুষের) অন্তরসমূহে কী আছে সে সম্পর্কে
আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।

২৪.
অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে ভোগ করতে দেব, অবশেষে তাদেরকে গুরুতর শাস্তিতে (প্রবেশ করতে)
বাধ্য করব।

২৫.
যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশমন্ডলী ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্য
অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। বল, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

২৬. আকাশমন্ডলী আর যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই, নিশ্চয়ই আল্লাহ,
তিনি সকল অভাব-মুক্ত, সকল প্রশংসার অধিকারী।

৩০. এসব প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ই সত্য এবং তাঁর পরিবর্তে তারা
যাকে ডাকে তা মিথ্যে। আল্লাহ, তিনি তো হলেন সর্বোচ্চ, সুমহান।

৩১.
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে যাতে তিনি
তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনের কিছু দেখাতে পারেন। এতে অবশ্যই প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ
ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে।

৩২.
ঢেউ যখন তাদেরকে (মেঘের) ছায়ার মত ঢেকে নেয়, তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর প্রতি
একনিষ্ঠ আনুগত্যে। অতঃপর আমি যখন তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে এনে দেই, তখন তাদের কতক
ন্যায়পূর্ণ আচরণ করে। কেবল মিথ্যাচারী অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার
করে।

৩৩.
হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর আর ভয় কর সে দিনের, যেদিন পিতা তার সন্তানের কোন
উপকার করতে পারবে না। সন্তানও পিতার কোনই উপকার করতে পারবে না। আল্লাহর ওয়াদা সত্য,
কাজেই পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে আর প্রধান প্রতারক
(শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ্ সম্পর্কে প্রতারিত না করে।

৩৪.
কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, জরায়ুতে কী আছে তা
তিনিই জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে, কেউ জানে না কোন্ জায়গায় সে মরবে।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বাধিক অবহিত।

মুহাম্মদ দ্বারা ১২২ তম প্রকাশ: সূরা ইব্রাহীম (১৪) (নবী ইব্রাহিম), ০১ থেকে
৪১ আয়াত:

১.
আলিফ-লাম- রা, একটা কিতাব যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানুষকে তাদের প্রতিপালকের
নির্দেশে অন্ধকার থেকে নিয়ে আসতে পার আলোর দিকে মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিতের পথে।

২.
আল্লাহ- আসমানসমূহে যা কিছু আছে আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর মালিকানাধীন। কিন্তু
কাফিরদের জন্য আছে কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ।

৩.
যারা আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জিন্দিগীকে শ্রেয় জ্ঞান করে, যারা আল্লাহর পথ থেকে (লোকদেরকে)
বিরত রাখে আর তাতে বক্রতা আনার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। এরা গোমরাহীতে বহু দূরে চলে গেছে।

৪. আমি কোন রসূলকেই তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাইনি যাতে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে
(আমার নির্দেশগুলো) বর্ণনা করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথহারা করেছেন, আর যাকে
ইচ্ছে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, তিনি বড়ই পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়।

৫.
আর অবশ্যই আমি মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহ দিয়ে পাঠিয়েছিলাম আর বলেছিলাম, তোমার জাতিকে
অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আন, আর তাদেরকে আল্লাহর হুকুমে ঘটিত অতীতের ঘটনাবলী দিয়ে
উপদেশ দাও। এতে প্রত্যেক পরম সহিষ্ণু ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অবশ্যই নিদর্শনসমূহ
রয়েছে।

৬.
স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের
কথা স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফিরআওনী গোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছিলেন যারা তোমাদেরকে
জঘন্য রকমের শাস্তিতে পিষ্ট করছিল। তোমাদের পুত্রদেরকে তারা হত্যা করত আর তোমাদের নারীদেরকে
জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে এক কঠিন পরীক্ষা।

৭.
স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তাহলে আমি
অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নিয়ামাত) বৃদ্ধি করে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে
জেনে রেখ, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন।

৮.
মূসা বলেছিল, তোমরা আর দুনিয়ার সকল লোক যদি অকৃতজ্ঞ হও (তাতে কিছুই যায় আসে না) কারণ
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।

৯.
তোমাদের পূর্বেকার লোকেদের খবর কি তোমাদের কাছে পৌঁছেনি? নূহ, ‘আদ আর সামূদ সম্প্রদায়ের,
আর তাদের পরবর্তীদের; তাদের সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। রসূলগণ তাদের কাছে স্পষ্ট
নিদর্শনাসমূহ নিয়ে এসেছিল, তখন তারা নিজেদের মুখে হাত চেপে ধরল আর বলল, ‘যে জিনিস দিয়ে
তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে তা আমরা অস্বীকার করি আর যে বিষয়ের প্রতি তোমরা আমাদেরকে আহবান
জানাচ্ছ সে সম্পর্কে আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে রয়েছি।’

১০.
তাদের রসূলগণ বলেছিল, ‘আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ? যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা,
তিনি তোমাদেরকে ডাকছেন তোমাদের অপরাধ মার্জনা করার জন্য আর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত
তোমাদেরকে অবকাশ দেয়ার জন্য।’ তারা বলল, ‘তুমি আমাদেরই মত মানুষ বৈ তো নও, আমাদের পূর্বপুরুষরা
যার ‘ইবাদাত করত তাত্থেকে আমাদেরকে তুমি বাধা দিতে চাও, তাহলে তুমি (তোমার দাবীর স্বপক্ষে)
আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত কর।

১১.
তাদের রসূলগণ তাদেরকে বলেছিল, ‘যদিও আমরা তোমাদের মতই মানুষ ব্যতীত নই, কিন্তু আল্লাহ
তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যার উপর ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর হুকুম ছাড়া তোমাদের কাছে
কোন প্রমাণ উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। মুমিনদের উচিত আল্লাহরই উপর ভরসা করা।

১২.
আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করব না কেন, তিনিই তো আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন, তোমরা আমাদেরকে
যে ক্লেশই দাওনা কেন, আমরা তাতে অবশ্য অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করব, আর ভরসাকারীদের আল্লাহরই
উপর ভরসা করা উচিত।

১৩.
কাফিরগণ তাদের রসূলদের বলেছিল, ‘আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্য অবশ্যই বের করে
দেব, অন্যথায় তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই আমাদের ধর্মমতে ফিরে আসতে হবে।’এমতাবস্থায় রসূলদের
প্রতি তাদের প্রতিপালক এ মর্মে ওয়াহী করলেন যে, ‘আমি যালিমদেরকে অবশ্য অবশ্যই ধ্বংস
করব।

১৪.
আর তাদের পরে তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই যমীনে পুনর্বাসিত করব। এ (শুভ) সংবাদ তাদের জন্য
যারা আমার সামনে এসে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভয় রাখে আর আমার শাস্তির ভয় দেখানোতে শংকিত
হয়।’

১৫.
তারা (অর্থাৎ কাফিররা) চূড়ান্ত বিজয়ের ফয়সালা কামনা করেছিল, কিন্তু (আল্লাহ ও তাঁর
রসূলদের বিরোধিতা করার কারণে) প্রত্যেক উদ্ধত সীমালঙ্ঘনকারী ব্যর্থ হয়ে গেল।

১৬.
এদের জন্য পরবর্তীতে আছে জাহান্নাম, আর এদেরকে পান করানো হবে গলিত পুঁজ।

১৭.
সে তা খুব কষ্ট করে গিলতে চেষ্টা করবে, আর খুব কমই গিলতে পারবে। মৃত্যু যন্ত্রণা তার
কাছে চতুর্দিক থেকে আসবে কিন্তু সে মরবে না, এরপর তার জন্য থাকবে এক কঠিন ‘আযাব।

১৮.
 যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের
‘আমালের দৃষ্টান্ত হল সেই ছাইয়ের মত যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
নিজেদের উপার্জনের কিছুই তারা কাজে লাগাতে পারে না। এটাই ঘোর গুমরাহী।

১৯.
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ যথাযথ নিয়ম বিধানসহ আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তিনি
চাইলে তোমাদেরকে সরিয়ে দিবেন আর এক নতুন সৃষ্টি নিয়ে আসবেন।

২০.
এটা আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়।

২১.
তারা সকলে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে। তখন যারা অহঙ্কার করেছিল তাদেরকে দুর্বলরা বলবে,
আমরা তো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম, কাজেই এখন আল্লাহর শাস্তির কোন কিছু আমাদের থেকে তোমরা
দূর করতে পার কি?’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ আমাদেরকে সত্যপথে পরিচালিত করলে আমরাও অবশ্যই
তোমাদেরকে সত্য পথ দেখাতাম। এখন আমরা ধৈর্যহারা হই কিংবা ধৈর্যধারণ করি দুটোই আমাদের
জন্য সমান, আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।’

২২.
বিচার-ফায়সালা সম্পন্ন হলে শয়তান বলবে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ওয়াদা করেছিলেন তা
ছিল সত্য ওয়াদা। আর আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তার খেলাপ করেছি, তোমাদের
উপর আমার কোনই প্রভাব ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান জানিয়েছিলাম আর তোমরা আমার
আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, বরং নিজেদেরকেই তিরস্কার
কর, এখানে না আমি তোমাদের ফরিয়াদ শুনতে পারি, না তোমরা আমার ফরিয়াদ শুনতে পার। ইতোপূর্বে
তোমরা যে আমাকে (আল্লাহর) শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি। যালিমদের জন্য আছে ভয়াবহ
শাস্তি।’

২৩.
যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা
প্রবাহিত। সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরকাল থাকবে। সেখানে তাদেরকে
শান্তির বার্তা দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে।

২৪.
তুমি কি দেখ না কীভাবে আল্লাহ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন? উৎকৃষ্ট বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট
গাছের ন্যায় যার মূল সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত আর শাখা-প্রশাখা আকাশপানে বিস্তৃত।

২৫.
তার প্রতিপালকের হুকুমে তা সব সময় ফল দান করে। মানুষদের জন্য আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা
করেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।

২৬.
মন্দ বাক্য মন্দ বৃক্ষের সঙ্গে তুলনীয়, ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগেই যাকে মূল থেকে উপড়ে ফেলা
হয়েছে, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।

২৭.
যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণীর অবলম্বনে দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে
প্রতিষ্ঠিত রাখবেন আর যালিমদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন। তিনি যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।

২৮.
তুমি কি তাদের ব্যাপারে চিন্তা কর না যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বিনিময়ে অকৃতজ্ঞতার নীতি
অবলম্বন করে আর তাদের জাতিকে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে আনে।

২৯.
(তা হল) জাহান্নাম, তাতে তারা প্রবেশ করবে, বসবাসের এ জায়গা কতই না নিকৃষ্ট!

৩০.
আর তারা (অন্যকে) আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে তাঁর পথ থেকে বিপথগামী করার উদ্দেশে। বল,
‘ভোগ করে নাও, শেষ পর্যন্ত জাহান্নামেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।

৩১.
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে বল নামায প্রতিষ্ঠা করতে আর যে জীবিকা
আমি তাদেরকে দিয়েছি তাত্থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে- সেদিন আসার পূর্বে যেদিন
না চলবে কোন কেনা-বেচা আর না কোন বন্ধুত্ব।

৩২.
তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন
যা দিয়ে নানা প্রকার ফলফলাদি জন্মে তোমাদের জীবিকার জন্য। তিনি নৌযানগুলোকে তোমাদের
নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন, যাতে সেগুলো তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে চলাচল করে আর তিনি নদীগুলোকে
তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন।

৩৩.
তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন, তারা অনুগত হয়ে নিজ পথে চলছে।
আর তিনি রাত ও দিনকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন।

৩৪.
তিনি তোমাদেরকে সে সব কিছুই দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছ (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই
পেয়েছ) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কক্ষনো তার সংখ্যা নির্ধারণ করতে
পারবে না। মানুষ অবশ্যই বড়ই যালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ।

৩৫.
স্মরণ কর, ইবরাহীম যখন বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি এ নগরীকে নিরাপদ কর আর আমাকে
আর আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে রক্ষে কর।

৩৬.
হে আমার প্রতিপালক! এ (প্রতিমা)-গুলো বহু সংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। কাজেই (প্রতিমাগুলোকে
বাদ দিয়ে) যারা আমাকে অনুসরণ করবে তারা আমার দলভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেক্ষেত্রে
তুমি তো বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।

৩৭.
হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার সন্তানদের একাংশকে শস্যক্ষেতহীন উপত্যকায় তোমার সম্মানিত
ঘরের নিকট পুনর্বাসিত করলাম। হে আমার প্রতিপালক! তারা যাতে নামায কায়িম করে। কাজেই
তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার
ব্যবস্থা কর যাতে তারা শুকরিয়া আদায় করে।

৩৮.
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো জান যা আমরা গোপন করি আর যা প্রকাশ করি, আসমান ও যমীনের
কোন বস্তুই আল্লাহ হতে গোপন নেই।

৩৯.
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমার বার্ধক্য অবস্থায় আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন,
আমার প্রতিপালক অবশ্যই আহবান শ্রবণকারী।

৪০.
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও আর আমার সন্তানদেরকেও, হে আমাদের
প্রতিপালক! তুমি আমার প্রার্থনা কবূল কর।

৪১.
হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে আর মুমিনদেরকে ক্ষমা
করে দিও।

মুহাম্মদ দ্বারা ১২৩ তম প্রকাশ: সূরা আশ্-শূরা (৪২) (পরামর্শ), ২৩, ২৪, ২৫ ২৭ বাদে ০১
থেকে ৫৩ আয়াত

১.
হা, মীম।

২.
আইন, সীন, কাফ।

৩.
পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ এভাবেই তোমার পূর্ববর্তীদের মতই তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ
করেন।

৪.
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। তিনি সমুন্নত, মহান।

৫.
আকাশমন্ডলী উর্ধ্বদেশ হতে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় এবং ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস
পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং মর্তবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রেখ, আল্লাহতো
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৬.
যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি
রাখেন। তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও।

৭.
এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় যাতে তুমি সতর্ক করতে
পার মক্কা এবং ওর চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে, যাতে
কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

৮.
আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই উম্মাত করতে পারতেন। বস্তুতঃ তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে স্বীয়
অনুগ্রহের অধিকারী করেন। যালিমদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই।

৯.
তারা কি আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ! অভিভাবকতো
তিনিই এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

১০.
তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন, ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট। বলঃ তিনিই আল্লাহ! আমার
প্রতিপালক। আমি নির্ভর করি তাঁর উপর এবং আমি তাঁরই অভিমুখী!

১১.
তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি
করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের জোড়া; এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন; কোন কিছুই
তাঁর অনুরূপ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

১২.
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবি তাঁরই নিকট। তিনি যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন
অথবা সংকুচিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।

১৩.
তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে। আর যা আমি
অহী করেছিলাম তোমাদের এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে,
তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওতে মতভেদ করনা। তুমি মুশরিকদেরকে যার প্রতি আহবান করছ
তা তাদের নিকট দুর্বহ মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তার
অভিমুখী হয় তাকে দীনের দিকে পরিচালিত করেন।

১৪.
তাদের নিকট জ্ঞান আসার পর শুধুমাত্র পারস্পরিক বিদ্বেষ বশতঃ তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ
ঘটায়। এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত অবকাশ সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের পূর্ব সিদ্ধান্ত
না থাকলে তাদের বিষয়ে ফাইসালা হয়ে যেত। তাদের পর যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছে তারা
কুরআন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে।

১৫.
সুতরাং তুমি ওর দিকে আহবান কর এবং ওতেই দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাক যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছ
এবং তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করনা। বলঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে বিশ্বাস
করি এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে। আল্লাহই আমাদের প্রতিপালক
এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। আমাদের কাজ আমাদের এবং তোমাদের কাজ তোমাদের। আমাদের এবং তোমাদের
মধ্যে বিবাদ নেই। আল্লাহই আমাদেরকে একত্রিত করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।

১৬.
আল্লাহকে স্বীকার করার পর যারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে তাদের যুক্তি-তর্ক তাদের
রবের দৃষ্টিতে অসার এবং তারা তাঁর ক্রোধের পাত্র এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

১৭.
আল্লাহই অবতীর্ণ করেছেন সত্যসহ কিতাব এবং তুলাদন্ড। তুমি কি জান, সম্ভবতঃ কিয়ামাত আসন্ন?

১৮.
যারা এটা বিশ্বাস করেনা তারাই এটা ত্বরান্বিত করতে চায়। আর যারা বিশ্বাসী তারা ওকে
ভয় করে এবং জানে যে, ওটা সত্য; জেনে রেখ, কিয়ামাত সম্পর্কে যারা বাক-বিতন্ডা করে তারা
ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে।

১৯.
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিযিক দান করেন। তিনি প্রবল
পরাক্রমশালী।

২০.
যে কেহ আখিরাতের প্রতিদান কামনা করে তার জন্য আমি তার ফসল বর্ধিত করে দিই এবং
যে দুনিয়ার প্রতিদান কামনা করে আমি তাকে ওরই কিছু দিই। কিন্তু আখিরাতে তার জন্য কিছুই
থাকবেনা।

২১.
তাদের কি এমন কতকগুলি দেবতা আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দীনের যার অনুমতি
আল্লাহ দেননি? ফাইসালার ঘোষণা না থাকলে, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েই যেত। নিশ্চয়ই যালিমদের
জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

২২. তুমি
যালিমদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত দেখবে তাদের কৃতকর্মের জন্য; আর এটাই আপতিত হবে তাদের উপর।
যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তারা থাকবে জান্নাতের মনোরম স্থানে। তারা যা কিছু চাবে
তাদের রবের নিকট তাই পাবে। এটাইতো মহা অনুগ্রহ।

২৬. তিনি
মুমিন ও সৎকর্মশীলদের আহবানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তার অনুগ্রহ বর্ধিত করেন; কাফিরদের
জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

২৮. তারা যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন
এবং তাঁর করুণা বিস্তার করেন। তিনিই অভিভাবক, প্রশংসা।

২৯.
তাঁর অন্যতম নিদর্শন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীবজন্তু
ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলি। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই ওদেরকে সমবেত করতে সক্ষম।

৩০.
তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা
করে দেন।

৩১.
তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর অভিপ্রায়কে ব্যর্থ করতে পারবেনা এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের
কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই।

৩২.
তাঁর অন্যতম নিদর্শন পর্বত সদৃশ সমুদ্রে চলমান নৌযানসমূহ।

৩৩.
তিনি ইচ্ছা করলে বায়ুকে স্তদ্ধ করে দিতে পারেন; ফলে নৌযানসমূহ নিশ্চল হয়ে পড়বে সমুদ্র
পৃষ্ঠে। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।

৩৪.
অথবা তিনি তাদের কৃতকর্মের জন্য সেইগুলিকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারেন এবং অনেককে তিনি
ক্ষমাও করেন।

৩৫.
আর আমার নিদর্শন সম্পর্কে যারা বির্তক করে তারা যেন জানতে পারে যে, তাদের কোন নিস্কৃতি
নেই।

৩৬.
বস্তুতঃ তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ। কিন্তু আল্লাহর নিকট
যা আছে তা উত্তম ও স্থায়ী – তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর
করে।

৩৭.
যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ হতে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাবিষ্ট হয়েও ক্ষমা করে দেয়

৩৮.
যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের
মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে এবং তাদেরকে আমি যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে

৩৯.
এবং যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে

৪০.
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ দ্বারা এবং যে ক্ষমা করে ও আপোষ-নিস্পত্তি করে তার পুরস্কার
আল্লাহর নিকট রয়েছে। আল্লাহ যালিমদের পছন্দ করেন না।

৪১.
তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হবেনা।

৪২.
শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে
অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

৪৩.
অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয় তাতো হবে দৃঢ় সম্পর্কেরই কাজ।

৪৪.
আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন অভিভাবক নেই। যালিমরা যখন শাস্তি প্রত্যক্ষ
করবে তখন তুমি তাদেরকে বলতে শুনবেঃ প্রত্যাবর্তনের কোন উপায় আছে কি?

৪৫.
তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তাদেরকে (জাহান্নামের সামনে) উপস্থিত করা হচ্ছে, লাঞ্ছিত
ও অপমানিত অবস্থায়। মুমিনরা কিয়ামত দিবসে বলবেঃ ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা নিজেদের ও নিজেদের
পরিজনবর্গের ক্ষতি সাধন করেছে। জেনে রেখ, যালিমরা ভোগ করবে স্থায়ী শাস্তি।

৪৬.
আল্লাহ ব্যতীত তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তাদের কোন অভিভাবক থাকবেনা এবং আল্লাহ যাকে
পথভ্রষ্ট করেন তার কোন গতি নেই।

৪৭.
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দাও সেই দিন আসার পূর্বে যা আল্লাহর বিধানে
অপ্রতিরোদ্ধ, ‘যেদিন তোমাদের কোন আশ্রয়স্থল থাকবেনা, আর না (তোমাদের পাপ) অস্বীকার
করার সুযোগ থাকবে।’

৪৮.
তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমাকেতো আমি তাদের রক্ষক করে পাঠাইনি। তোমার
কাজতো শুধু প্রচার করে যাওয়া।
 আমি মানুষকে যখন অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন
সে উৎফুল্ল হয় এবং যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের বিপদ আপদ ঘটে তখন মানুষ হয়ে যায়
অকৃতজ্ঞ।

৪৯.
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে
ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।

৫০.
অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা। তিনি সর্বজ্ঞ,
সর্বশক্তিমান।

৫১.
মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার
অন্তরাল ব্যতিত, অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা
ব্যক্ত করে। তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।

৫২.
এভাবে আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি রূহ তথা আমার নির্দেশ; তুমিতো জানতেনা কিতাব
কি ও ঈমান কি! পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে
ইচ্ছা পথ-নির্দেশ করি; তুমিতো প্রদর্শন কর শুধু সরল পথ;

৫৩.
সেই আল্লাহর পথ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার মালিক। জেনে রেখ, সকল বিষয়ের
পরিণাম আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে।


আয়াত প্রকাশের মনোজগত:- বয়কট উত্তরণ মুহাম্মদকে স্থিরতা
দেয় ৬ মাসের জন্য! ৬ মাস পরের ২টি মৃত্যু ভীত নড়িয়ে দেয় মুহাম্মদের। দশ বছর সময়ে কখনই
কুরাইশদের বিরোধীতা মুহাম্মদের শরীর ছুতে পারেনি, কিন্তু বয়কট উত্তরণের মাত্র ৬ মাস
পর থেকে মুহাম্মদ মক্কায় প্রবেশাধিকার হারিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে মানুষে পরিনত
হতে বাধ্য হন। মুহাম্মদের মনোজগতের এতটাই পরিবর্তন ঘটে এ সময়ে, একজন আত্মমগ্ন মানুষ
থেকে তিনি হয়ে ওঠেন আবর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অনুসারী প্রেমী মানুষ আর বাদবাকী সবার জন্য
সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী!
 সবই আসবে সামনে
লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
(চলবে)





No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ঋগ্বেদ ৭/৪/৭

  পরিষদ্যম্ হ্যরণস্য রেক্ণো নিত্যস্য রায়ঃ পতয়ঃ স্যাম। ন শেষো অগ্নে অন‍্যজাতম্ অস্ত্যচেতনস্য মা পথম্ বিদুক্ষঃ॥ ঋগ্বেদ ভাষ্য (স্বামী দयानন্দ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ