বৈদিক ছন্দ প্রাণ তত্ত্বের রূপে অসংখ্য মাত্রায় উৎপন্ন হয়। পরমাত্মার সামর্থ্য ও জ্ঞান অনন্ত। চার বেদ সংহিতার জ্ঞান অনন্ত নয়। সেগুলোতে ততটুকুই জ্ঞান আছে, যা মানব জাতির জন্য অনিবার্য। মানবের জ্ঞান গ্রহণ সামর্থ্যের সীমা পর্যন্ত সমগ্র বিজ্ঞান বেদের মধ্যে সাংকেতিক বা মূল রূপে বিদ্যমান আছে। এর থেকে আমাদের এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয় যে পরমব্রহ্ম পরমাত্মার মধ্যে এরথেকে অধিক জ্ঞান হতে পারবে না।
একইভাবে এটাও সিদ্ধ হল যে চার সংহিতার মধ্যে যত ছন্দ বা মন্ত্র আছে, এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে প্রাণ-তত্ত্বের রূপে কেবল ততটুকুই বিদ্যমান নেই, বরং তার থেকেও অধিক আছে। এই অধিক ছন্দ আমাদের আবশ্যকতার থেকে অধিক হওয়ার কারণে তথা সেই মানব ঋষিদের সামর্থ্য-সীমার কারণেও সেগুলোকে ঋষি প্রশ্বাসবৎ বাইরে বের করে দেন। যেরূপ প্রাণীর প্রশ্বাস দ্বারা বের হওয়া বায়ু (কার্বন-ডাই-অক্সাইড আদি) সেই প্রাণীর জন্য অনাবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও সৃষ্টিতে বনস্পতি আদির জন্য আবশ্যক হয়, সেইরূপ মানব ঋষিদের দ্বারা অগৃহীত ছন্দ সর্গ প্রক্রিয়াতে আবশ্যক হয়, সেগুলো জ্ঞান রূপে পরমেশ্বরের মধ্যে সর্বদাই বিদ্যমান থাকে অর্থাৎ সেই ছন্দগুলিও নিরর্থক হয় না।শঙ্কাঃ চার বেদ সংহিতা ব্যতীত কিছু অন্য মন্ত্র, যেগুলো ব্রাহ্মণ গ্রন্থ, শ্রৌত সূত্র বা বেদের শাখার মধ্যে বিদ্যমান আছে, সেগুলোকেও বেদ অর্থাৎ অপৌরুষেয় মানছেন, তাহলে কি এটাও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় না যে ঈশ্বর প্রথমে চারজন ঋষিকে জ্ঞান দিতে ভুলে গেছেন আর তাঁকে কিছু জ্ঞান পরে দিতে হয়েছে। তাহলে তো কুরআন ও বাইবেলকেও আমরা কিভাবে অস্বীকার করতে পারি আর তাদেরকে কিভাবে বলতে পারি যে খুদা আগেই কেন জ্ঞান দেয়নি? এর থেকে এই অর্থ কেন বের হবে না যে ঈশ্বরের জ্ঞান পরিবর্তিত হয় আর ঈশ্বরের স্মৃতিবিভ্রম আছে?
সমাধানঃ এমন শঙ্কা করা উচিত নয়। এমন শঙ্কা করা এটাই দর্শায় যে বেদের স্বরূপ আর তার উৎপত্তি প্রক্রিয়ার বোধ আপনার নেই। সৃষ্টির আদি প্রজন্মকে পরমেশ্বর কিভাবে জ্ঞান দিয়েছেন, এটা জানার জন্য এই সম্পূর্ণ অধ্যায়কে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এর পাশাপাশি এটাও ভাবতে হবে যে ঈশ্বর সেই চারজন ঋষিকে পদ্যাত্মক ভাষা অর্থাৎ ছন্দ রূপে কেন জ্ঞান দিয়েছেন?® এই পদ্যাত্মক ভাষা কি কখনও কথোপকথনের ভাষা ছিল? আমার মনে হয় না এমন ছিল। তাহলে ঈশ্বর কেন সেই পদ্যাত্মক ভাষায় জ্ঞান দিলেন, যেটা কখনও কথোপকথনের ভাষা ছিল না। এমন মনে হয় যে এই বিষয়টা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেই বিচার করেনি। বেদের উৎপত্তি প্রক্রিয়ার রহস্য এই প্রশ্ন থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে। আসুন! আমরা এর উপর বিচার করি...
সাম্যাবস্থা যুক্ত প্রকৃতি পদার্থ থেকে সৃষ্টি উৎপত্তি প্রক্রিয়া প্রারম্ভ হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম সূক্ষ্মতম কম্পন প্রারম্ভ হয়। এই কম্পনই ধ্বনি রূপ হয়। প্রথম কম্পন সম্পূর্ণ প্রকৃতি পদার্থের মধ্যে এক সাথে আর সমান তীব্রতার সঙ্গে উৎপন্ন হয়। ধীরে-ধীরে সেই কম্পন অগ্রিম চরণের লয়বদ্ধ কম্পনগুলোকে উৎপন্ন করতে থাকে। এই কম্পন লয়বদ্ধ হওয়াতে পদ্যাত্মক ধ্বনি রূপে হয় আর এই ধ্বনি পরা রূপে হয়। এই ধ্বনিগুলোই হল বেদমন্ত্র আর সবথেকে প্রথম কম্পন পরা "ওম্" ধ্বনিরূপই হয়। এটাই হল সৃষ্টি উৎপত্তির বৈদিক রশ্মি সিদ্ধান্তের আধার।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ