বৈদিক জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক রহস্য: সৃষ্টির অনন্ত জ্ঞানের খোঁজ
আমরা সকলেই বিশ্বাস করি যে এই বিশ্বে একটি সচেতন শক্তি অবশ্যই বিদ্যমান, যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম কণিকা থেকে বিশাল গ্যালাক্সি পর্যন্ত সবকিছুর সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ করে। পরমেশ্বরের নিজ নাম ‘ও৩ম’, এবং গুণকর্ম ও স্বভাবের জন্য পরমেশ্বর ব্রহ্মা, শিব, ইন্দ্র, গণেশ ইত্যাদি নামে পরিচিত।
“যারা এটি বিশ্বাস করেন না, তাদের আগে ডঃ ভূপ সিংহের বই ‘বৈদিক সংস্কৃতির বৈজ্ঞানিকতা’ পড়া উচিত।”
প্রাচীন ঋষিদের বৈদিক জ্ঞান
মানব সৃষ্টির প্রারম্ভে, মহাবিশ্বে বিদ্যমান বৈদিক মন্ত্রের সূক্ষ্ম কম্পন গ্রহণ করার ক্ষমতা চারজন মানুষের মধ্যে ছিল। সেই মহান ঋষিদেরকে পরমাত্মা স্বয়ং সেই মন্ত্রের অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। পরমাত্মার জ্ঞান অনন্ত, কিন্তু মানুষের জ্ঞান সীমিত।
সেই সময় পৃথিবীতে বৈদিক জ্ঞানের আলো প্রতিপন্ন ছিল। তবে মানুষের সীমিত জ্ঞানের কারণে প্রাথমিক মানবপ্রজন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত জ্ঞান হ্রাস পেয়েছে। ফলে ঋষিদের সময়ে সময়ে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করতে হয়েছে, যাতে বৈদিক জ্ঞান সংরক্ষিত থাকে।
নিঘণ্টু ও নিরুক্ত: বৈদিক ভাষার মূল ভিত্তি
বৈদিক মন্ত্রের অর্থ বোঝার জন্য মহর্ষি যাস্ক নির্দিষ্ট পদগুলো সংগ্রহ করেন, যা আজ নিঘণ্টু নামে পরিচিত। এরপর তিনি সেই পদগুলোর ব্যাখ্যা রূপে রচনা করেন ‘নিরুক্ত’ গ্রন্থ।
নিরুক্ত এবং ব্যাকরণের পার্থক্য:
-
ব্যাকরণ: শব্দ-নির্ভর; অর্থাৎ শব্দের উৎপত্তি, প্রকৃতি ও প্রত্যয় অনুযায়ী অর্থ ব্যাখ্যা করে।
-
নিরুক্ত: অর্থ-নির্ভর; পদটির গভীরে প্রবেশ করে এর প্রকৃতি ও অর্থের প্রকৃত অর্থ উদঘাটন করে।
শুধুমাত্র ব্যাকরণ জানলেই বৈদিক মন্ত্রের সত্য জ্ঞান পাওয়া যায় না; নিরুক্তের জ্ঞান অপরিহার্য।
আধুনিক যুগে বৈদিক ভাষ্যের পুনরুজ্জীবন
আজকের দিনে, রাজস্থানের ছোট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আচার্য অগ্নিব্রত বৈদিক মন্ত্রের প্রকৃত রূপ পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করছেন। তিনি প্রথমে ঋগ্বেদের ব্রাহ্মণ গ্রন্থ - ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (প্রায় ৭০০০ বছর পুরনো) এর বৈজ্ঞানিক ভাষ্য ‘বেদবিজ্ঞান-আলোক:’ রচনা করেছেন।
পরে মহর্ষি যাস্ক রচিত নিরুক্ত এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ‘বেদার্থ-বিদ্যনম্’ নামে উপস্থাপন করেছেন। এই গ্রন্থে শত শত মন্ত্রের ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কখনও একাধিকভাবে। উদাহরণস্বরূপ, “বিশ্বানি দেব…” মন্ত্রের ১৬টি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থের গুরুত্ব ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রভাব
এই গ্রন্থ বিশেষভাবে গুরুকুলের ছাত্র-ছাত্রী ও আচার্যের জন্য উপকারী। এটি বৈদিক ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থের গম্ভীর বৈজ্ঞানিক রহস্য উদঘাটনে সহায়ক। আধুনিক শিক্ষার্থীরাও এই গ্রন্থের মাধ্যমে বৈদিক জ্ঞানের বৈজ্ঞানিক মহিমা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।
“এই গ্রন্থ আমাদের প্রকৃত বৈদিক জ্ঞান ও সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক রহস্য পাঠকের সামনে উপস্থাপন করছে।”
সম্পাদনা ও পঠন-প্রসঙ্গে ডঃ মধুলিকা আর্য এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। গত দুই বছর ধরে তিনি নিঃস্বার্থভাবে কাজ সম্পন্ন করেছেন।
নিশ্চয়ই! আমি আপনার “भूमिका” অংশের বাংলা অনুবাদকে পূর্ণ ব্লগ পোস্ট ফরম্যাটে সাজিয়ে দিচ্ছি, যেখানে থাকবে শিরোনাম, সাবহেডিং, হাইলাইট করা উদ্ধৃতি এবং পাঠযোগ্য প্যারাগ্রাফ।
প্রাথমিক মানব প্রজন্ম ও বৈদিক জ্ঞান: মানুষের সর্বোচ্চ বৌদ্ধিক স্তরের খোঁজ
মানুষকে এই পৃথিবীর সর্বোচ্চ প্রাণী হিসেবে ধরা হয়। এর প্রধান কারণ হলো মানুষের বুদ্ধিমত্তা, যা তাকে সত্য ও অসত্য বোঝার ক্ষমতা দেয় এবং অবিরাম জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে। মহাবিশ্বের অন্যান্য স্থানে যদি এ ধরনের বিচক্ষণ প্রাণী থাকে, তারা ও মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে পারে, যদিও তাদের দেহ ভিন্ন।
“জন্মের সময় মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় কম থাকে। তাই তাকে বাহ্যিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়।”
প্রারম্ভিক মানব প্রজন্মের বৌদ্ধিক স্তর
সৃষ্টির প্রারম্ভে মানুষ যুবক বা যুবতী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল। তবে তাদের বৌদ্ধিক ক্ষমতা আজকের নবজাতকের তুলনায় কম নয়। যদি তা হত, প্রাথমিক প্রজন্মের মানুষ কখনও বৈদিক জ্ঞান অর্জন করতে পারত না। কারণ, শিক্ষাহীন ব্যক্তিকে যদি নিঃসঙ্গ পরিবেশে রাখা হয়, তাকে শেখানোর জন্য প্রাথমিক ধাপ থেকে শুরু করতে হবে। তখন তার জীবনধারণের জ্ঞান কিভাবে গঠিত হত?
সুতরাং প্রাথমিক প্রজন্মের অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা সর্বোচ্চ স্তরের মানুষ ছিলেন, এবং অন্যরা সাধারণ মানুষ ছিলেন না। এটি প্রমাণিত হয়েছে মহর্ষি দয়ানন্দের যজুর্বেদ ভাষ্য ৩১.৯ থেকে:
“তং য়॒জ্ঞং ব॒র্হিষি॒ প্রৌক্ষ॒ন্ পুরুষং জা॒তম॑গ্র॒তঃ ।
তেন॑ দে॒বাऽঅ॑য়জন্ত সা॒ধ্যাऽঋষ॑য়শ্চ॒ য়ে ॥”
পদার্থঃ- হে মনুষ্যগণ ! (য়ে) যে সব (দেবাঃ) বিদ্বান্ (চ) এবং (সাধ্যাঃ) যোগাভ্যাসাদি সাধন করিয়া (ঋষয়ঃ) মন্ত্রার্থবিদ্গণ যে (অগ্রতঃ) সৃষ্টি হইতে পূর্বে (জাতম্) প্রসিদ্ধ (য়জ্ঞম্) সম্যক্ পূজিবার যোগ্য (পুরুষম্) পূর্ণ পরমাত্মাকে (বর্হিষি) মানস যজ্ঞে (প্র, ঔক্ষন্) সিঞ্চন করে অর্থাৎ ধারণ করে তাহারাই (তেন) তাহার উপদেশ কৃত বেদ দ্বারা এবং (অয়জন্ত) তাহার পূজন করে (তম্) তাহাকে তোমরাও জান ॥
অর্থাৎ প্রাথমিক প্রজন্মের মানুষ ঋষি পর্যায়ের জ্ঞানী, পবিত্র ও প্রজ্ঞাবান ছিলেন। ভাবার্থঃ বিদ্বান্ মনুষ্যদিগের উচিত যে, সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের যোগাভ্যাসাদি দ্বারা সদা হৃদয়রূপ অবকাশে ধ্যান ও পূজন করিতে থাকুক ॥
বৈদিক জ্ঞান ও প্রাথমিক মানুষের ক্ষমতা
চার ঋষি অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অড্দিরা সমাধি অবস্থায় বৈদিক বাণী গ্রহণ করতেন। সেই জ্ঞান মহর্ষি ব্রহ্মা এর মাধ্যমে প্রাথমিক প্রজন্মের মানুষের কাছে পৌঁছত।
তারা ব্যাকরণ বা অন্যান্য বিষয় শেখা ছাড়াই সরাসরি বৈদিক মন্ত্রের গভীর জ্ঞান বুঝতে সক্ষম ছিলেন।
বিগত হাজার বছরের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি জন্মায়নি, যে পাঠ ছাড়াই বৈদিক মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়। সুতরাং প্রাথমিক প্রজন্মের মানুষের বৌদ্ধিক স্তর বর্তমানের তুলনায় কম নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চতর।
ঈশ্বরের নির্দেশ ও শিক্ষা
প্রথম প্রজন্মের মানুষদের জীবন ও আচরণ শেখানোর দায়িত্ব শুধুমাত্র ঈশ্বরের। পরবর্তী প্রজন্ম পিতামাতা ও শিক্ষকদের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে পারে, কিন্তু প্রথম প্রজন্ম ঈশ্বরের সরাসরি নির্দেশিত জ্ঞান ও শিক্ষার মাধ্যমে সঞ্চারিত হয়।
“প্রথম প্রজন্মের মানুষেরা ঋষি পর্যায়ের এবং তাদের জ্ঞান সৃষ্টির মতো বিস্তৃত ও গভীর ছিল।”
এটি প্রমাণ করে যে বৈদিক জ্ঞান সেই সময়ের মানুষের উচ্চমানের বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন।
প্রাথমিক প্রজন্মের মানুষদের বৌদ্ধিক স্তর এবং বৈদিক জ্ঞান ধারণক্ষমতা বোঝা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বৈদিক জ্ঞান শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, বরং মানুষের সর্বোচ্চ বৌদ্ধিক ক্ষমতার প্রতিফলন। বর্তমান শিক্ষার্থী ও গবেষকদের উচিত এই উচ্চমানের প্রাথমিক প্রজন্মের মানুষের বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক স্তরকে সমীচীনভাবে মূল্যায়ন করা।
“বৈদিক জ্ঞান প্রাথমিক প্রজন্মের ঋষি পর্যায়ের মানুষের জন্য প্রযোজ্য, সাধারণ মানুষের জন্য নয়। তাই বর্তমানের ভাষ্যকারদেরও এটি মনে রাখতে হবে।”
নিশ্চয়ই! এখানে আপনার পাঠানো হিন্দি অংশের সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ দিচ্ছি, ব্লগ বা প্রবন্ধের জন্য সহজ ও পাঠযোগ্য রূপে:
বৈদিক ভাষ্য ও ভুল ব্যাখ্যার ইতিহাস: অজ্ঞতা থেকে বিশ্বের দুর্ভোগ
আজকের যুগে বৈদিক ভাষ্যকার ও ব্যাখ্যাকাররা যে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছেন, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যের বিষয়। তারা বৈদিক জ্ঞানকে এমনভাবে বিকৃত করেছেন যে, আজকাল বৈদিক মন্ত্র এবং ঋষিদের গ্রন্থ মূর্খ ও চাতুর্যের গল্পের মতো বোধগম্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার্বাক মতের একটি উক্তি এই অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে:
“ত্রয়ো বেদস্য কর্ত্তারঃ ভণ্ডধূর্তনিশাচরাঃ …”
(স০প্র০: ১২তম সমূল্লাস)
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি সত্যিকারের জ্ঞান ছাড়া বা ভুল ব্যাখ্যা করে বেদের সঙ্গে ছল-প্রতারার কাজ করে, তার কথাই প্রায়শই প্রচলিত হয়।
বৈদিক বিরোধ ও ভাষ্যকারদের ভূমিকা
যখন বৈদিক বিরোধীরা ঋষি ও বৈদিক গ্রন্থের ওপর আক্রমণ করে, আমরা সকল বেদভক্ত বেদনায় ভোগি এবং বিরোধীদের প্রতি রাগ অনুভব করি। তবে কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি, তাদের কাছে বৈদিক বিরোধ করার উপাদান কে দিয়েছে?
মূলত দায়ী তারা ভাষ্যকার ও তীর্থকার যারা বৈদিক মন্ত্র ও আর্শ গ্রন্থের ভুল ব্যাখ্যা করে এবং তাদের মধ্যে নিজমতো পরিবর্তন করে।
ভাষ্যকারদের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:
-
প্রথম শ্রেণীর ভাষ্যকার
-
এরা শাস্ত্রে বিশ্বাসী ছিল, কিন্তু বৈদিক জ্ঞান বোঝার যথাযথ ক্ষমতা ছিল না।
-
তারা কেবল শ্রদ্ধা বা জনসমর্থনের কারণে ভাষ্য করতেন।
-
ফলস্বরূপ, তারা রীতিমতো বা প্রচলিত অর্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করতেন।
-
কিছু ভাষ্যকার শুধুমাত্র কর্মকাণ্ডের গ্রন্থ মনে করে তেমন ব্যাখ্যা করতেন।
-
এতে বৈদিক পদে পশুবলি, মানুষবলি, মাংসাহার, অশ্লীলতা, ছুয়া-ছুত, বিজ্ঞানবিরোধী ধারণা প্রবর্তিত হয়।
-
-
দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাষ্যকার
-
এরা প্রকৃতিতে মানবতার শত্রু।
-
তারা সচেতনভাবে শাস্ত্রের ভুল অর্থ প্রচার করেছে।
-
বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে যেমন মনুস্মৃতি, বাল্মীকি রামায়ণ, মহাভারত তারা তাদের ইচ্ছেমতো প্রক্ষেপ রেখেছে।
-
এই ব্যক্তিরা ঋষিদের নামে নতুন কল্পিত গ্রন্থ রচনা শুরু করেছেন।
-
এই দুঃখজনক প্রথা শতাব্দী ধরে চলেছে।
-
ভুল ব্যাখ্যার প্রভাব ও বিশ্বের দুর্ভোগ
প্রকৃতপক্ষে, এই প্রথা শুধুমাত্র বেদ নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমস্ত মানবতার বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অপরাধ।
-
ব্রাহ্মণ গ্রন্থ, শ্রৌত সূত্র ইত্যাদির নাম নিয়ে রীতি-বিহীন যজ্ঞ চালানো শুরু হয়েছিল।
-
এতে শুধু পশু নয়, মানুষকেও বলি দেওয়া হতো।
-
এই অমানবিক প্রথা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ:
-
বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট-এ পশুবলি ও যজ্ঞের উল্লেখ আছে।
-
কুরআনে কুরবানির নামে নৃশংসতা বর্ণিত।
-
অর্থাৎ, বিশ্বে যে সমস্ত কল্যাণ ছড়িয়েছে তার মূল কারণ হলো বেদাদির সঠিক জ্ঞান।
এবং যে সমস্ত কুশলতা, অশুভতা বা দুর্ভোগ ছড়িয়েছে, তার মূল কারণ হলো বেদাদির ভুল বা অজ্ঞ জ্ঞান।
বেদাদির শাস্ত্র প্রাণিসম্পদ ও মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য একটি অমোঘ ওষুধ।
-
ওষুধ ঠিকভাবে গ্রহণ করলে রোগ দূর হয়।
-
ভুলভাবে গ্রহণ করলে প্রাণও হারাতে পারে।
-
তদ্রূপ, বৈদিক জ্ঞান সঠিকভাবে বোঝা ও প্রচার করা না হলে, দুনিয়ার সমস্ত শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক কষ্টের মূল কারণ অজ্ঞতা।
আজকের দুনিয়ায় বেদ ও বৈদিক শাস্ত্রের সঠিক জ্ঞান ও প্রচার অপরিহার্য।
-
বৈদিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল দুঃখ দূর করা ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা।
-
ভুল ব্যাখ্যা বা অজ্ঞতার কারণে পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর কষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুতরাং, বৈদিক শাস্ত্রকে সঠিক জ্ঞান ও সতর্ক ব্যাখ্যা দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা পৃথিবীর শান্তি ও কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিশ্চয়ই! এখানে আপনার পাঠানো হিন্দি অংশের সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ দিচ্ছি, ব্লগ বা প্রবন্ধের জন্য সরাসরি ব্যবহারযোগ্য রূপে:
সহায়ক গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা ও বৈদিক পদসমূহের উৎপত্তি
প্রাথমিকভাবে, সমস্ত মানুষ সরাসরি বেদ থেকে বেদের অর্থ বুঝত। তাদের অন্য কোনো সহায়ক গ্রন্থের প্রয়োজন ছিল না। সেই সময়ে, বেদ ব্যতীত অন্য কোনো গ্রন্থ বেদার্থ বোঝার সহায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিল না।
কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে সত্সংগ এবং সদ্বুদ্ধি হ্রাস পেতে থাকায়, বেদের অর্থ বোঝা কঠিন হয়ে যায়। তখন সেই ঋষিরা, যারা বেদ থেকে বেদ বোঝার ক্ষমতা রাখতেন, তারা বেদের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ গ্রন্থের প্রচার শুরু করেন। এছাড়া, তারা এমন যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন যা পরিবেশ বিশুদ্ধকরণ এবং সৃষ্টিকে বোঝার মানচিত্রের কাজও করত।
যখন মানুষের মধ্যে সত্সংগের হ্রাস ঘটল, তখন ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বোঝাও কঠিন হয়ে গেল এবং মানুষ বেদ ও ব্রাহ্মণ উভয়ই ভুলভাবে বোঝা শুরু করল। ফলস্বরূপ রূঢ় অর্থের প্রচার বিস্তৃত হল। তখন কিছু মহান ঋষি বৈদিক পদসমূহের নির্বচন প্রক্রিয়া (পদের গভীর অর্থ খুঁজে বের করা) পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করতে বড় পরিশ্রম করেছিলেন।
মহর্ষি যাস্ক ও নিরুক্তঃ
বর্তমানে নিরুক্ত শাস্ত্রের মাধ্যমে আমরা নির্বচন প্রক্রিয়া বুঝতে পারি।
-
পণ্ডিত ভগবদত্ত রিসার্চ স্কলার অনুযায়ী, মহর্ষি যাস্কের সময় বিক্রম থেকে ৩১০০ বছর পূর্ব।
-
মহাভারতের সময় বিক্রম থেকে ৩০৮১ বছর পূর্ব।
-
অর্থাৎ, মহর্ষি যাস্ক মহাভারতের যুগে বিদ্যমান ছিলেন।
পণ্ডিত ভগবদত্ত আচার্য দুর্গকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন যে, আচার্য দুর্গের আগে ভারতবর্ষে অন্তত ১৪টি নিরুক্ত বিদ্যমান ছিল।
উদ্দেশ্য: বেদের যৌগিকতা স্থাপন করা এবং বেদের মধ্যে লুকানো জ্ঞান-বিজ্ঞান উদঘাটন করা।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নিরুক্ত শাস্ত্র যা বৈদিক পদসমূহকে রূঢ় অর্থ থেকে রক্ষা করার জন্য লেখা হয়েছিল, তা ভাষ্যকারদের দ্বারা নিজেরাই রূঢ় অর্থের আওতায় ফেলে দেয়া হয়েছে।
বৈদিক পদ ও শব্দের উৎপত্তি
বেদ মন্ত্র হলো পদসমূহের সমষ্টি।
-
এই পদগুলো শব্দরূপে থাকে।
-
পদগুলোর উচ্চারণ থেকে যে ধ্বনি তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, তা পরা ও পশ্যন্তী রূপে বিভিন্ন পদার্থের উৎপত্তির সময় উৎপন্ন হয়।
-
শব্দ তরঙ্গ কোনো জড় পদার্থে কম্পনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
-
এই কম্পনই হলো প্রকৃতির মূল উপাদান।
বৈদিক ভাষায় বচন চার স্তরে বিভক্ত:
-
পরা রূপ: প্রকৃতিতে উৎপন্ন কম্পন।
-
পশ্যন্তী রূপ: মনস্তত্ত্বে উৎপন্ন।
-
মধ্যমা রূপ: আকাশতত্ত্বে উৎপন্ন কম্পন।
-
বৈখরি রূপ: সর্বাধিক স্থূল, যা কানের মাধ্যমে শোনা যায়, এবং এর জন্য ঠোস, তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
সব শব্দই এই চার স্তরের মধ্য দিয়ে উৎপন্ন হয়।
যারা প্রশ্ন করেন যে, শব্দ কি শুধুমাত্র পদার্থের সংস্পর্শে উৎপন্ন হয়, তারা শুধুমাত্র বৈখরি বচনের (শুনতে পাওয়া যায় এমন শব্দ) ক্ষেত্রে প্রশ্ন করেন।
বাকি তিন স্তরের উৎপত্তি আমরা স্পষ্ট করেছি।
বিস্তারিতভাবে, প্রকৃতির কম্পনই পরা বচনের মাধ্যম।
যেমন-जেমন উচ্চতর পদার্থের সৃষ্টি হয়, তেমন তেমন কম্পনের ধরণ পরিবর্তিত হয়।
ফলে, পশ্যন্তী ও মধ্যমা স্তরের বচন এবং বৈখরি স্তরের বচন উৎপন্ন হয়।
বৈদিক পদসমূহের বিশেষত্ব হলো, তাদের অর্থের সঙ্গে নিত্য সম্পর্ক থাকে। অর্থাৎ, পদ সৃষ্টি হওয়ার সময় পদটির বাচ্যরূপ পদার্থও জন্মায়।
পণ্ডিত ভগবদত্তের উদ্ধৃতি
“পাণিনি অনুযায়ী, মনুষ্যতুল্য অর্থ হলো ‘মনুষ্যেষু ইভ’। অন্য কোনো অর্থ নেই। বেদের মন্ত্রসমূহও একইভাবে পদচতুষ্ট্ব অনুযায়ী বিন্যস্ত।
দেবতা, অগ্নি, বায়ু, সূর্য, চন্দ্র, বৃহস্পতি—এরা ভৌতিক ও ঐশ্বরিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত। যখন সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছিল, তখন এই দেবতা ঈশ্বরের নিয়মে বিভিন্ন ধ্বনি উৎপন্ন করছিলেন।
এই ধ্বনিই পরবর্তীতে মন্ত্রে রূপান্তরিত হয়। এই ধ্বনি এবং মন্ত্রই হলো দেবতা-অভিধান।”
বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় মতবাদ শব্দ উৎপত্তির ব্যাখ্যায় ভুল ও অযৌক্তিক।
বৈদিক মতের ব্যাখ্যা হলো ঈশ্বর-প্রেরিত ভৌতিক দেবতার ধ্বনি স্বাভাবিকভাবে মন্ত্রে প্রকাশিত।
মন্ত্রসমূহ সদা পুনরাবৃত্তি হয়, এবং ঋষি হৃদের গুহায় তা দেখেন ও শোনেন। এই শ্রবণেই মন্ত্রসমূহকে শ্রুতি বলা হয়।
মহর্ষি যাস্কের সত্য প্রকাশ
যাস্ক মুনি এক বাক্যে উল্লেখ করেছেন যে, মন্ত্রসমূহ স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হয়েছিল, এবং তা দেবতা-অভিধান।
পণ্ডিতদের মতে, দেবতা-অভিধান শব্দগুলোর মাধ্যমেই মানুষের ও দেবতার ক্রিয়াবলি বর্ণিত।
মহাদিদ্বান ভর্তৃহরি ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থও এই সত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সুতরাং, বৈদিক মন্ত্রের উৎপত্তি হলো প্রকৃতির কম্পন ও ঈশ্বর-প্রেরিত ধ্বনির সমন্বয়।
নিশ্চয়ই! আপনার পাঠানো হিন্দি অংশের সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ ব্লগ/প্রবন্ধ ফরম্যাটে নিচে দিচ্ছি:
নবীন পাঠকদের জন্য বৈদিক জ্ঞান ও বেদের প্রকৃতি
নবীন পাঠকদের জন্য এটি হয়তো অদ্ভুত ও কল্পনাপ্রসূত মনে হতে পারে। তবে যারা পূর্বে ‘বৈদিক রশ্মি বিজ্ঞান’ গ্রন্থটি ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন, তাদের জন্য বেদের প্রকৃতি বোঝা সহজ হয়ে যাবে।
বৈদিক জ্ঞান অনুসারে, বেদের অর্থ শুধুমাত্র জ্ঞান নয়। যে সমস্ত শাস্ত্রের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জিত হয়, সেই শাস্ত্রের শব্দ ও ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমের কম্পনও বেদ রূপে গণ্য হয়।
বেদরূপ কম্পনের গ্রহণ ঘটতো অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরার মতো চার ঋষির মাধ্যমে, এবং তারা এটি সমাধি অবস্থায় ঈশ্বরের সহায়তায় উপলব্ধি করতেন। যখন ঋষিরা বেদ গ্রহণ করতেন, তখন ঈশ্বরই তাদের অন্তঃসত্ত্বায় শব্দের প্রকৃত অর্থের প্রকাশ ঘটাতেন।
ঋষি দয়ানন্দ এই প্রক্রিয়ার বর্ণনা করেছেন। সাধারণ পাঠক প্রায়ই ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞানকেই বেদ মনে করেন, যা সত্য হলেও তারা এই বিষয়টি চিন্তা করেন না যে মানব সৃষ্টির পূর্বেই বেদ মন্ত্র ব্রহ্মাণ্ডে বিদ্যমান ছিল।
বৈদিক ভাষা ও ব্রহ্মাণ্ড
বৈদিক ভাষার বিশেষত্ব হলো:
-
এর পদসমূহ ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র বিদ্যমান।
-
সৃষ্টির প্রতিটি পদার্থের সঙ্গে তাদের অবিচ্ছেদ্য ও নিত্য সম্পর্ক।
-
বৈদিক ভাষা হলো ব্রহ্মাণ্ডের ভাষা।
-
বেদ মন্ত্র হলো ব্রহ্মাণ্ডের বৈজ্ঞানিক সঙ্গীত।
বেদেই বলা হয়েছে, ঋষিরা বেদ মন্ত্রগুলোকে পবিত্র অন্তঃসত্ত্বায় ছেঁকে গ্রহণ করেছিলেন, যেমন আমরা সত্তু বা আটা ছেঁকে নিই। এটি ‘বৈদিক রশ্মি বিজ্ঞান’ গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ভাবুন, যদি বেদ মন্ত্র পূর্বে বিদ্যমান না হতো, তবে কীভাবে তারা তা ছেঁকে গ্রহণ করতে পারত?
এখান থেকে বোঝা যায়, চার ঋষি যেসব মন্ত্র গ্রহণ করেছেন, তা নির্বাচিত ছিল, এবং ব্রহ্মাণ্ডে অনেক মন্ত্র ছিল যা তারা গ্রহণ করেননি। পরে এই মন্ত্রগুলো ব্রাহ্মণ গ্রন্থ এবং বেদের কিছু শাখায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
পদ্যরূপে জ্ঞান প্রদানের কারণ
এখন প্রশ্ন ওঠে, ঈশ্বর কেন পদ্যরূপে জ্ঞান প্রদান করেছেন, যদিও মানুষের সাধারণ ভাষা হয়তো গদ্যরূপে ছিল?
-
ঈশ্বর কি কেবল কাব্য প্রতিভা প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন?
-
না কি কাব্য কলা শেখাতে চেয়েছিলেন?
উত্তর: এটা অবশ্যক ছিল না।
অনেক বিদ্বান বেদকে ব্যবহার করে বিভিন্ন রস ও কাব্যশৈলীর উপস্থিতি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, যা প্রায়ই বেদের সার্বিক জ্ঞানময়তা নিয়ে হাস্যকর মন্তব্য সৃষ্টি করে।
মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, বেদে সৃষ্টির গভীর বৈজ্ঞানিক রহস্য উদ্ঘাটন।
কেউ যদি আধুনিক বিজ্ঞানের অপ্রমাণিত বা কল্পিত তথ্য বেদে প্রয়োগ করে, তখন সে নিজেরকে ধন্য মনে করতে থাকে। পরে, যখন সেই বিজ্ঞানের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়, তখন তারা বেদকে অবহেলিত মনে করেন।
আজকের দিনে বেদ বিজ্ঞানও প্রায় এভাবেই হাস্যকর প্রচেষ্টার শিকার হচ্ছে।
ঈশ্বর বেদ জ্ঞান প্রদান কেন করেন?
প্রশ্ন করা হয়: ঈশ্বর কেন মানুষকে বেদ জ্ঞান দেন?
উত্তর:
-
মানুষকে সৃষ্টিতে কিভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখাতে।
-
বেদ সৃষ্টির ব্যাখ্যা এবং ঈশ্বরের সাইদ্ধান্তিক জ্ঞান।
-
সৃষ্টিই হলো ঈশ্বরের প্রয়োগশালা।
যারা বলেন, “সৃষ্টি বোঝার চেষ্টা করতে না পারলে বেদ প্রয়োজন নেই,” তারা ভুল। বেদের প্রয়োজন শুধুমাত্র প্রাথমিক প্রজন্মের জন্য। বর্তমানে আমরা নানা বই থেকে দৈনন্দিন জীবন শিক্ষা নিতে পারি।
এমন অবিবেচক ব্যবহার বেদের বেদত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং শুধু আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত চর্চায় সীমাবদ্ধ রাখে।
বেদের প্রকৃত রূপ বোঝার জন্য আমাদের:
-
পুর্বাগ্রহ ত্যাগ করা দরকার।
-
বেদের বাস্তব রূপ ও সৃষ্টির ক্রমবিন্যাস বোঝা।
-
বেদের পদগুলো উপাদান থেকে উৎপন্ন অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এই সম্পর্কেই বেদের গভীরতা।
বেদ মন্ত্র শুধুমাত্র জ্ঞান নয়, ব্রহ্মাণ্ডের সাথে মানুষের সংযোগের মাধ্যম।
নিশ্চয়ই! নিচে আপনার পাঠানো হিন্দি অংশের সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ ব্লগ/প্রবন্ধ ফরম্যাটে প্রদান করছি:
ঈশ্বর তত্ত্ব: প্রয়োজনীয়তা ও স্বরূপ
সৃষ্টির প্রাথমিক হলচল শুরু হতে হলে মূল পদার্থে কোনো শক্তি বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। এটি যে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুযায়ী বুঝতে পারে। কারণ, আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারা জানা শক্তিগুলোর মধ্যে কোনোটি তখনকার সময়ে বিদ্যমান হতে পারত না।
একজন বৈজ্ঞানিক মানসিকতার ব্যক্তি এই প্রশ্ন করতে পারেন:
-
শক্তি কীভাবে উৎপন্ন হয়?
-
যদি কোনো শক্তি নিজে থেকে জন্ম নিতে না পারে, তবে পদার্থে হলচল কীভাবে শুরু হয়?
-
সেই হলচল কীভাবে সৃষ্টির মতো সর্বোচ্চ কাজ সম্পাদনের জন্য পূর্ণভাবে উপযুক্তভাবে পরিচালিত হয়?
এখান থেকে বোঝা যায়, সৃষ্টির প্রক্রিয়ার জন্য শক্তি ও বুদ্ধি—উভয়ই প্রয়োজন, যা কোনো জড় পদার্থে থাকতে পারে না। এজন্য এমন সর্বোচ্চ চেতনাতত্ত্ব প্রয়োজন, যার বুদ্ধি ও শক্তি অনন্ত এবং পূর্ণাঙ্গ। সেই চেতনাতত্ত্বকে আমরা ঈশ্বর বলি।
ঈশ্বরের অবয়ব
ঈশ্বরকে নিরাকার বলা হয়। কারণ:
-
কোনো সাকার বস্তু সর্বব্যাপক ও অনন্ত শক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন হতে পারে না।
-
বর্তমানে কিছু ব্যক্তি ‘নিরাকার’ শব্দের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, যার অর্থ তারা মনে করেন—যে বস্তু থেকে অনেক পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাকে নিরাকার বলা হয়।
এ ধরনের ব্যাখ্যা মূর্তিপূজা বা অবতারবাদকে যুক্তি প্রদর্শনের জন্য দেওয়া হয়।
তবে, মুণ্ডক উপনিষদে ব্যবহৃত ‘অমূর্ত’, যজুর্বেদের ‘অকায়ম’, ‘অব্রণ’, ‘অস্নাবীর’, এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩.১৯ এর ‘অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা…’—এই সব বচনগুলি এই ধরনের ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা বোঝানো যায় না। বাস্তবে, এই হঠী বিদ্বানরা শাস্ত্রের মর্যাদা ধ্বংস করেছেন।
শক্তি ও শক্তির উৎস
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে:
-
শক্তি বা শক্তির উৎস নিরাকার ও অ-বিভাজ্য পদার্থে বিদ্যমান থাকে।
-
কোনো সাকার পদার্থে শক্তি দেখা গেলে, তা নিরাকার ও অ-বিভাজ্য চেতনাতত্ত্বের কারণে।
-
জীবাত্মা বা সর্বত্র উপস্থিত পরমাত্মা সেই শক্তির প্রকৃত উৎস।
এখানে লক্ষ্য করুন, এই নিরাকার ঈশ্বর কোনো ধর্মীয় আধ্যাত্মিক কাল্পনিক ঈশ্বর (যেমন আল্লাহ বা খ্রিস্টীয় গড) নয়। কারণ তারা নির্দিষ্ট আকাশে বসবাস করে বা সিংহাসনে বসে।
ড. জাকির নায়েকের মতো কিছু ব্যক্তি হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করতে ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি’ বচনকে ভুলভাবে ব্যবহার করেন।
‘ওম্’ রশ্মি ও সৃষ্টির প্রক্রিয়া
পদার্থের হলচল শব্দের মাধ্যমে ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।
-
সবচেয়ে সূক্ষ্ম হলচল হলো ‘ওম্’ ধ্বনির পরা রূপ।
-
এই রশ্মি পরমেশ্বর থেকে উৎপন্ন এবং তার সাথে সর্বদা যুক্ত।
-
রশ্মি নিজস্বভাবে সমস্ত কার্য সম্পন্ন করে এবং অন্যান্য স্পন্দনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রাখে না।
-
সৃষ্টির সকল কার্যক্রমে ‘ওম্’ রশ্মির মাধ্যমে ঈশ্বরের অব্যাহত ভূমিকা বিদ্যমান থাকে।
-
এই রশ্মির মাধ্যমে সময় অনুযায়ী যে লয়বদ্ধ হলচল হয়, তা বেদ মন্ত্রের রূপে প্রकट হয়।
-
এই মন্ত্রগুলোই চার ঋষি গ্রহণ করেন।
ছন্দ ও গদ্য
-
বেদ গদ্য নয়, বরং ছন্দের রূপে।
-
ঋষিদের হৃদয়ে ঈশ্বর সেই ছন্দের অর্থ গদ্যরূপে প্রকাশিত করেন।
-
অর্থাৎ, সেই ভাষায় যা তারা মানব আচরণে প্রয়োগ করবেন, তা গদ্যরূপে উপলব্ধ হয়।
ঈশ্বরের চেতনাতত্ত্ব ও ‘ওম্’ রশ্মি সৃষ্টির প্রাথমিক শক্তি ও বুদ্ধি। এটি:
-
সকল হলচলের উৎস।
-
বেদের মন্ত্র গ্রহণের মাধ্যম।
-
ছন্দ ও গদ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
এই রশ্মি ছাড়া সৃষ্টির নিয়মিত প্রক্রিয়া বা বেদ জ্ঞান কল্পনাও করা যায় না।
>>চলবে
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ