কালগণনার অনুযায়ী তেতাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার বছরের সময়কালকে প্রতি মহাযুগ হিসেবে গণনা করা হয়। এক হাজার মহাযুগ মিলে এক কল্প হয়, যাকে সূর্যাদি গ্রহসমূহের সমগ্র আয়ুষ্কালের সমান ধরা হয়েছে। একইভাবে বাহাত্তর হাজার কল্পকে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের পূর্ণ সময়কাল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানও সৌরজগতের অস্তিত্বকে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছরের সমান মেনে নেয় এবং স্বীকার করে যে এক সময় অ্যাস্ট্রো-এক্সপ্যানশনের চরম অবস্থার পর মহাবিশ্বে সঙ্কোচন শুরু হবে, যা পরিশেষে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণায় রূপান্তরিত হয়ে প্রকৃতিতে লীন হয়ে যাবে।
উপরিউক্ত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে এটাই প্রমাণিত যে আমাদের সৌরজগত ও মহাবিশ্ব—উভয়েই তাদের নির্ধারিত আয়ুর প্রায় অর্ধেক পথ অতিক্রম করেছে এবং অবশিষ্ট সময়ের পর ধীরে ধীরে প্রকৃতিতে বিলীন হবে। যেহেতু এসব ঘটনার চূড়ান্ত পরিণতি দৃশ্যমান জগতের (গ্যালাকটিক ইউনিভার্স) প্রকৃতিতে লীন হওয়া, তাই ভারতীয় শাস্ত্রে এগুলোকে প্রাকৃতিক বিলয় বা প্রলয় বলা হয়েছে। এই দুই প্রক্রিয়ায় ব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃতিতে বিলীন হওয়াকে অনুপাতে এক বিশাল ঘটনা ধরা হয়, তাই এর গুরুত্ব অনুযায়ী একে ব্রাহ্ম প্রলয় (Universal Dissolution) বলা হয়েছে। একইভাবে, ব্রহ্মাণ্ড যতদিন টিকে থাকে, ততদিন বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জে ভ্রমণশীল অসংখ্য সূর্য ও তাদের গ্রহমণ্ডল এক হাজার মহাযুগ (৪.৩২ বিলিয়ন বছর) পরপর ধ্বংসের মধ্য দিয়ে যায়, যাকে নৈমিত্তিক প্রলয় (Solar Disannul) বলা হয়।
উপরিউক্ত গুরুতর ঘটনার পাশাপাশি প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে গ্রহমণ্ডলগুলিতে নির্দিষ্ট সময় পরপর কিছু প্রলয়করী ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে স্বভাব ও প্রকৃতি অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। এরকম এক ঘটনায়, যখন গ্যালাক্সির সাত সূর্য নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে প্রতি তেতাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার বছরে কিছু সময়ের জন্য কাছাকাছি আসে, তখন তাদের সম্মিলিত প্রভাবে সূর্যকিরণের তাপ সাতগুণ বৃদ্ধি পায়। (ते सप्त रश्मयो भूत्वा हौकैको जायते रविः - वायु पुराण-7.46)। এই প্রচণ্ড তাপে পৃথিবীর সব জলাশয় শুকিয়ে যায় এবং ভূমি জ্বলতে থাকে। ভারতীয় শাস্ত্রমতে, এই সংবর্তক অগ্নির বিস্তার সমগ্র জীবজগতকে ভস্ম করে দেয়। মহাভারতের বনপর্বে বলা হয়েছে—"যুগান্তকালে কালের অগ্নি পৃথিবীকে দগ্ধ করে ফেলে"। এরপর এই সাত সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে আকাশে ঘন মেঘ জমে যায় এবং প্রবল বৃষ্টির ধারা শুরু হয়। 'মৎস্য পুরাণ'-এ বর্ণনা করা হয়েছে—"আদ্যপ্রভৃতি অনাবৃষ্টি হবে পৃথিবীতে"। এই বৃষ্টিতে সংবর্তক অগ্নি নিভে যায় এবং পৃথিবী জলে ডুবে যায়। মেঘ কেটে গেলে সূর্যকিরণে জল শুকোতে শুরু করে, ধীরে ধীরে ভূমি বেরিয়ে আসে এবং নতুন সৃষ্টিচক্র শুরু হয়। ভারতীয় বিশ্বাসমতে মানবজাতির আবির্ভাবের পর এ ধরনের নয়টি মহাবিনাশ ঘটেছে, যেখানে জীবসৃষ্টিকে রক্ষা করেছেন ভগবান বিষ্ণু। অনুরূপভাবে মায়া সভ্যতাও মেনে নিয়েছিল যে পৃথিবী, বায়ু, অগ্নি ও জলতত্ত্বের প্রভাবে চারবার মহাবিনাশ ঘটেছে, এবং পরবর্তী মহাবিনাশ ভূমিকম্প-সম্পর্কিত হবে। অ্যারিস্টটল (অফলাতুন) প্রমুখ পণ্ডিতও এই ঘটনার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। প্লেটোর উক্তি—"Both Human race and the globe they inhabit shall successively perish by water and fire."—এটারই প্রমাণ।
সিয়াটল (ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়)-এর ভূবিজ্ঞানী পিটার ওয়ার্ড দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু শিলা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে প্রায় ২৫.১ কোটি বছর আগে হঠাৎ করে নদীগুলো অবসাদে ভরে গিয়েছিল। এটি ইঙ্গিত করে যে তখন পৃথিবীতে এক ভয়াবহ প্রলয় ঘটেছিল, যাতে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ওয়ার্ডের মতে এই প্রলয়, ৬.৫ কোটি বছর আগে ঘটে যাওয়া (ডাইনোসর বিলুপ্তির) প্রলয়ের থেকেও ভয়ংকর ছিল। তাই একে সমস্ত প্রাণহানিকর প্রলয়ের "জননী" বলা যায়। তাঁর অনুমান অনুযায়ী এই ঘটনা পের্মিয়ান যুগের শেষে এবং ট্রায়াসিক যুগের শুরুতে ঘটেছিল। (स्रोत : दैनिक जागरण, नई दिल्ली 14-2-2000)। ভারতীয় গণনায় প্রতি মন্বন্তরের সময়কাল প্রায় ৩০,৮৫,৭১,৪২৯.৯ বছর। সেই হিসাবে, ওয়ার্ডের নির্ধারিত সময় বর্তমান বৈবস্বত মন্বন্তরের শুরু সময়কেই নির্দেশ করে। অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টার্কটিকা এবং উত্তর ইউরোপের গবেষণাও দেখায় যে কয়েক মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে বারবার ভূগোলগত পরিবর্তন ঘটে চলেছে। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনা প্রতি মহাযুগের সংধিকালে (প্রতি ৪৩,২০,০০০ বছরে) নিয়মিত ঘটে থাকে। প্রতিটি যুগের শেষে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে, সেগুলোকে যুগান্তর প্রলয় (External/Internal Collision) বলা হয়েছে।
এই যুগান্তর প্রলয়ের পাশাপাশি পৃথিবীর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বরফযুগ ও অন্তর্বরফযুগ, আর উষ্ণমণ্ডলে বর্ষা ও অন্তর্বর্ষা যুগ, এছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে জলপ্লাবনের চক্রও নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ লিকি-র মতে, ইউরোপেই চারটি বরফযুগ ও তিনটি অন্তর্বরফযুগের প্রমাণ মিলেছে। ভূতত্ত্ববিদেরা বলেন, আফ্রিকার অঞ্চলেও চারটি বর্ষা ও তিনটি অন্তর্বর্ষার যুগ অতিবাহিত হয়েছে। এই বরফযুগ ও বর্ষাযুগের ধারণা ১৯শ শতকে এ. ভার্নহার্ডি ও লুইস আগাসিজ প্রবর্তন করেন।
📊 প্রলয়ের ধরন ও সময়কাল (ভারতীয় শাস্ত্র + আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী)
প্রলয়ের নাম | সময়কাল / চক্র | বৈশিষ্ট্য / কারণ | ফলাফল |
---|---|---|---|
ব্রাহ্ম প্রলয় (Universal Dissolution) | ৭২,০০০ কল্প ≈ ৪.৩২ × ১০¹⁷ বছর | সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড প্রকৃতিতে লীন | মহাবিশ্বের সম্পূর্ণ বিলয় |
নৈমিত্তিক প্রলয় (Solar Dissannul) | প্রতি ১,০০০ মহাযুগ (৪.৩২ বিলিয়ন বছর) | সূর্য-নক্ষত্র ও গ্রহমণ্ডলের ধ্বংস | স্থানীয় সৌরজগত/গ্রহমণ্ডল ধ্বংস |
যুগান্তর প্রলয় (Yuga-end Dissolution) | প্রতি মহাযুগের সংধিকালে (৪৩.২ লক্ষ বছর) | প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ভূমিকম্প, প্লাবন, সংঘর্ষ) | আংশিক জীববিনাশ, ভৌগোলিক পরিবর্তন |
সংবর্তক প্রলয় (Seven-Sun Catastrophe) | প্রতি ৪৩.২ লক্ষ বছরে সূর্যের বিশেষ অবস্থান | ৭ সূর্যের সম্মিলিত তাপ → অগ্নিকাণ্ড → বৃষ্টি | জলাশয় শুকিয়ে যাওয়া, আগুনে ভস্ম, পরে বন্যা |
পের্মিয়ান প্রলয় (Permian Extinction) | ~২৫.১ কোটি বছর আগে | পৃথিবীর নদী-অবসাদ ভরাট, জলবায়ু বিপর্যয় | ৯০% প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত |
ডাইনোসর প্রলয় (Cretaceous Extinction) | ~৬.৫ কোটি বছর আগে | গ্রহাণু পতন/ভূগোল পরিবর্তন | ডাইনোসর প্রজাতির বিলোপ |
হিমযুগ / অন্তর্বরফ যুগ | প্রতি ১৩,০০০ বছরে সূর্যের সাথে ধ্রুবীয় ঝোঁক পরিবর্তন | উত্তরে বরফের স্তর ১০-১৫ হাজার ফুট পর্যন্ত | অর্ধেক ইউরোপ বরফে আচ্ছাদিত |
বর্ষা / অন্তর্বর্ষা যুগ (আফ্রিকা) | কয়েক মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে | প্রবল বর্ষণ ও খরার চক্র | জলপ্লাবন, জীববৈচিত্র্যের প্রভাব |
মায়া সভ্যতার প্রলয় মতবাদ | ৪টি পূর্ববর্তী মহাপ্রলয় | ভূমি, বায়ু, অগ্নি ও জলতত্ত্ব দ্বারা ধ্বংস | ভবিষ্যৎ প্রলয় হবে ভূমিকম্পে |
👉 এই চার্টে ভারতীয় শাস্ত্র, মায়া বিশ্বাস ও আধুনিক বিজ্ঞান—সবকিছুর কালানুক্রমিক সমন্বয় দেখানো হলো।
তেরো হাজার বছরের এই অনুপাতিক উষ্ণতাকে অন্তর্বর্তী হিমযুগ (Inter-glacial Period) বলা হয়। তদনুযায়ী সূর্যের তাপ বৃদ্ধির প্রভাবে বরফ গলতে থাকে এবং তার পরবর্তী বাষ্পীভবনের ফলে অনাবৃষ্টির অবিরাম ধারা শুরু হয়, যার কারণে নিম্নভূমিগুলোতে ভয়াবহ জলপ্লাবন ঘটে। সৌর-পরিক্রমণের এই বর্ণিত প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ পৃথিবীতে বরফযুগ ও জলপ্লাবনের এই ক্রম প্রতি তেরো হাজার বছরের নিয়মিত ব্যবধানে অব্যাহতভাবে ঘটতে থাকে।
বিশ্ব আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা (ডব্লিউ.এম.ও.) ও জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউ.এন.ই.পি.)-এর যৌথ তত্ত্বাবধানে গঠিত বৈজ্ঞানিকদের ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিষদ আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (আই.পি.সি.সি.)-এর গবেষণাতেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রায় এ ধরনের সময়কালভিত্তিক ওঠানামা ঘটে।
আই.পি.সি.সি.-এর সাথে যুক্ত ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (নয়াদিল্লি)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুরারী লাল অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তরের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে যে গ্রাফ তৈরি করেছিলেন, সেখানে গত ১,৬০,০০০ বছরে তাপমাত্রার এই নিয়মিত অস্থিরতা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই সূচকে তেরো হাজার বছরের অন্তর অন্তর ব্যাপক ওঠানামা লক্ষ্য করা যায়।
তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বগতির সময়কাল ছাড়াও এক লক্ষ বছরের বেশি ব্যবধানে তাপমাত্রার সর্বাধিক সীমা নির্দিষ্ট হয়েছে—যেমন ১,১৯,০০০ বছর ও ১৫,০০০ বছর আগে। আর এর সর্বনিম্ন সীমা ২০,০০০ বছর ও ১,৩৬,০০০ বছর আগে চিহ্নিত হয়েছে।
বরফ-বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী ১,২৯,০০০ বছর আগে তাপমাত্রার এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর অধিকাংশ বরফখণ্ড সম্পূর্ণ গলে গিয়েছিল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ আজকের তুলনায় ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়েছিল।
ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে বিন্ধ্য পর্বতমালা থেকে দক্ষিণে সাগর থাকার যে উল্লেখ আছে, সম্ভবত সেটি সেই সময়ের অবস্থাকেই নির্দেশ করে এবং একই সাথে বৈদিক রচনার প্রকৃত সময়কাল সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেয়।
মেসোজোয়িক যুগেও প্রায় একই পরিস্থিতিতে লেমুরিয়ার বিস্তৃত ভূমি জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে লঙ্কা, সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও, নিউজিল্যান্ড, তাসমানিয়া, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দ্বীপ এবং আফ্রিকা মহাদেশ অস্তিত্বে আসে।
উপরিউক্ত গ্রাফে ১৫,০০০ বছর আগে থেকে যে অস্বাভাবিক তাপবৃদ্ধি শুরু হয়েছিল, তার নতুন ধাপগুলোতে বরফ গলে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া প্লাবনই আধুনিক বিশ্বের প্রায় সব প্রাচীন গ্রন্থে বর্ণিত বন্যা-বিপর্যয় (জল-প্রলয়)-এর প্রতীকী বর্ণনা বলে প্রতীয়মান হয়।
পরবর্তীতে কালাসাগর ও কশ্যপ সাগরের বিস্তার বৃদ্ধি এবং খম্ভাত, ইউকাতানসহ দ্বারকার ডুবে যাওয়ার ঘটনাগুলো দ্বারা জলপ্লাবনের এই ভয়ঙ্কর চক্রের সমাপ্তি ঘটে।
ভূতাপমাত্রার এই ভিন্নতার প্রেক্ষাপট থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, সৌরকারণে প্রতি তেরো হাজার বছরের যে অস্থিরতা ঘটে, তার বাইরে আরও দীর্ঘ সময়ব্যাপী অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তনও খগোলীয় প্রভাবের কারণে ঘটেছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, পৃথিবীর তাপমাত্রার এই ভিন্নতা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উত্তেজনার ফল হলেও, সূর্যের শক্তির মূল প্রভাবকে অগ্রগণ্য মেনে নিতে কোনো দ্বিধা নেই।
ড. মুরারী লাল স্পষ্ট করে বলেছেন—পৃথিবীর জলবায়ু হলো বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর, ভূমিখণ্ড ও জীবকূলের পারস্পরিক জটিল ক্রিয়ার ফল, যেগুলো সবই সূর্যের বিকিরণ দ্বারা উষ্ণ হয়।
তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বগতির ফলে বরফ গলে যাওয়ার শেষ বড় ঘটনা তথা জলপ্রলয় প্রায় ১১,৫০০ থেকে ১০,৫০০ বছর আগে ঘটেছিল বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন।
বিশ্বখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ত্রাদামুস (ফ্রান্স) ৩৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের মহাবিনাশের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এখন থেকে মোট ১,৭৯৬ বছর পর সম্ভাব্য মহাবিপর্যয় ঘটবে। যদি এই সময়সীমাকে ১১,৫০০ বছর আগে ঘটে যাওয়া শেষ প্রলয়ের সাথে যুক্ত করা হয়, তাহলে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের এই কালচক্র প্রায় ১৩,০০০ বছরের কাছাকাছি দাঁড়ায়, যা খগোলীয় বিশ্লেষণের সাথে মিলে যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন মানবপ্রজাতির উদ্ভবকালও এই ১৩,০০০ বছরের ব্যবধানেই প্রমাণিত হয়। নৃতত্ত্ববিদদের মতে, ৩৮,০০০ বছর আগে ইউরোপে ক্রোম্যাগনন মানবপ্রজাতি ছিল, যারা ২৫,০০০ বছর আগে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ১২,০০০ বছর আগে পর্যন্ত আধুনিক মানব (হোমো স্যাপিয়েন্স)-এর ম্যাগডেলিয়ান সভ্যতা টিকে ছিল। তাই স্পষ্ট দেখা যায়, ক্রোম্যাগনন থেকে ম্যাগডেলিয়ান, আর তারপর থেকে শেষ প্রলয় পর্যন্ত সময় ব্যবধানও প্রায় ১৩,০০০ বছর।
অতএব প্রজাতি ও সভ্যতার এই উত্থান-পতনের সম্পর্ক নিয়মিত প্রলয়করী ঘটনাগুলোর সাথেই ছিল। ফলে অনুমান করা যায়, পৃথিবীতে প্রতি ১৩,০০০ বছরে ঘটে যাওয়া হিমযুগ ও প্লাবন-সংক্রান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ জীবজগতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই কারণে অঞ্চলগুলো প্রাণশূন্য হয়ে যেত।
এমন চক্রাকার আংশিক বিপর্যয়কেই ভারতীয় শাস্ত্রে নিত্য-প্রলয় (Periodical Catastrophe) বলা হয়েছে।
এর বাইরে দুর্ভিক্ষ, মহামারি, চক্রবাত, ভূমিকম্প এবং ধ্রুবীয় অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার কারণেও পৃথিবীর জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। যেমন—
-
সুমেরু, মেসোপটেমিয়া, মরক্কো, গুয়াতেমালা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, তানজানিয়া ও ভারতের দুর্ভিক্ষ (১৭৯০, ১৮৭৭, ১৮৯৯, ১৯১৮),
-
১৯১৭-১৮ সালের বিশ্বব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্লেগ মহামারি,
-
খ্রিস্টপূর্ব ৪১৩, খ্রিস্টাব্দ ১০০০, ১৯০০ ও ১৯৯৩ সালে টাইবার, ডানিউব, হোয়াং-হো, মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীতে বন্যা,
-
১৬০৭ সালে ব্রিটেনে, ১৮৮৯ সালে পেনসিলভেনিয়ার জনসটাউন, ১৯০০ সালে টেক্সাসের গ্যালভেস্টন, ১৯৭৭ ও ১৯৯৯ সালে ভারতের আন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যার চক্রবাত,
-
১৯২০ সালে চীন, ১৯৩৯ ও ১৯৭৫ সালে তুরস্ক, ১৯৬৬ ও ১৯৯১ সালে ইরান, ১৯৭৩ সালে জাপান, ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে ভারতের আসাম-বিহার, ১৯৯১ সালে গড়হ্বাল, ১৯৯৩ সালে লাতুর, ২০০১ সালে গুজরাট, ফেব্রুয়ারি ২০০১ সালে এল সালভাদর ও সুমাত্রার ভূমিকম্প প্রভৃতি এর জীবন্ত প্রমাণ।
আবহাওয়াবিদদের মতে, পৃথিবীর অক্ষ পরিবর্তনের কারণেও উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের জলবায়ুতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে। আবহাওয়াবিদ হাগ ব্রাউনের মতে, পৃথিবী তার বর্তমান অক্ষে দিক পরিবর্তন করেছে প্রায় ৫,০০০ বছর আগে। লক্ষণীয়, ভারতীয় মতে কলিযুগও প্রায় এত বছর আগে শুরু হয়েছে।
ব্রাউনের মতে, এই অক্ষ পরিবর্তনের পর উত্তর গোলার্ধ ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়েছে এবং তার প্রভাব দক্ষিণ মেরু (অ্যান্টার্কটিকা)-তেও অনুভূত হচ্ছে।
নাসার জলবায়ুবিষয়ক গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্রীনহাউস গ্যাস যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄), ওজোন (O₃), নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), কার্বন টেট্রাফ্লোরাইড (CF₄), সালফার হেক্সাফ্লোরাইড (SF₆), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs), হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs) ইত্যাদির প্রভাবেও জলবায়ু ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
🌍 ১৩,০০০ বছরের চক্রভিত্তিক জলবায়ু ও প্রলয়-চক্র (Inter-glacial Period)
বিষয় | ব্যাখ্যা |
---|---|
চক্রকাল | প্রায় প্রতি ১৩,০০০ বছরে পৃথিবীতে অসামান্য উষ্ণতা ও হিমযুগের পরিবর্তন ঘটে। |
কারণ | সূর্য-তাপ বৃদ্ধি → বরফ গলন → বাষ্পীভবন → অনাবৃষ্টি → নীচু ভূভাগে ভয়াবহ বন্যা। |
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ | - IPCC (WMO + UNEP) গবেষণা অনুযায়ী নিয়মিত উষ্ণতা-অবনতি। - ড. মুরারী লাল (IIT, Delhi) কর্তৃক অ্যান্টার্কটিকার আইস-কোর বিশ্লেষণ থেকে গত ১,৬০,০০০ বছরে স্পষ্ট প্রমাণ। |
তাপমাত্রার ওঠানামা | প্রতি ১৩,০০০ বছরে তীব্র উষ্ণতা বৃদ্ধি। ১,২৯,০০০ বছর আগে সর্বাধিক উষ্ণতা → পৃথিবীর অধিকাংশ বরফ গলন → সমুদ্রস্তর ৩০০-৪০০ ফুট উঁচু। |
ঐতিহাসিক ও বৈদিক প্রমাণ | - ঋগ্বেদে "বিন্দ্য দক্ষিণে সাগর" এর উল্লেখ → সমুদ্রস্তর বৃদ্ধির ইঙ্গিত। - মেসোজোয়িক যুগে লেমুরিয়া মহাদেশের ডুবে যাওয়া → লঙ্কা, সুমাত্রা, জাভা ইত্যাদির উদ্ভব। |
শেষ বড় ঘটনা (Deluge) | প্রায় ১১,৫০০ - ১০,৫০০ বছর আগে বরফ গলনে মহাপ্লাবন। বিশ্বের বহু গ্রন্থে বর্ণিত "জল-প্রলয়" সম্ভবত এই ঘটনাই। |
সভ্যতা ও প্রজাতি চক্র | - ক্রো-ম্যাগনন মানব: ~৩৮,০০০ বছর আগে → ২৫,০০০ বছর আগে বিলীন। - ম্যাগডেলিয়ান সভ্যতা: ১২,০০০ বছর আগে পর্যন্ত টিকে ছিল। - প্রতিটি প্রজাতি/সভ্যতার পরিবর্তনও প্রায় ১৩,০০০ বছরের ব্যবধানে। |
আংশিক প্রলয় (Nitya-Pralaya) | দুর্ভিক্ষ, মহামারি, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি চক্রাকারে ঘটে। উদাহরণ: ১৭৯০, ১৮৭৭, ১৮৯৯, ১৯১৮ (দুর্ভিক্ষ/মহামারি), ২০০১ গুজরাট ভূমিকম্প, সুমাত্রা সুনামি। |
ধ্রুব পরিবর্তন (Pole Shift) | প্রায় ৫,০০০ বছর আগে পৃথিবীর অক্ষ পরিবর্তন → উত্তর গোলার্ধ গরম হতে শুরু। কালিয়ুগ শুরু প্রায় এই সময়েই। |
আধুনিক বৈজ্ঞানিক মত | - জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ: সূর্যের বিকিরণ (Solar Irradiance)। - দ্বিতীয় কারণ: গ্রিনহাউস গ্যাস (CO₂, CH₄, O₃, N₂O, CFCs ইত্যাদি)। |
ভবিষ্যৎ প্রলয় ভবিষ্যদ্বাণী | নস্ত্রাদামুস: ৩৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে মহাপ্রলয়। আগের প্রলয় (~১১,৫০০ বছর আগে) + ~১৩,০০০ বছরের চক্র → ভবিষ্যৎ বিপর্যয় ৩৭৯৭ সালের আশেপাশেই ঘটতে পারে। |
👉 এভাবে দেখা যাচ্ছে, শাস্ত্রীয় বিশ্বাস, বৈদিক উল্লেখ, প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংস, এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য—সবই প্রতি ১৩,০০০ বছরের প্রলয়-চক্রকে নির্দেশ করছে।
তুলনামূলকভাবে ছিঁচলে পৃষ্ঠ থেকে প্রাপ্ত তলস্তর-এর বিভিন্ন নমুনার ভিত্তিতে করা গবেষণার মাধ্যমে সমুদ্র-বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে আজ থেকে প্রায় কুড়ি হাজার বছর পূর্বে মহাসাগরের জলস্তর আধুনিক পরিমাপের তুলনায় অন্তত ৪০০ ফুট নিচে ছিল। আবহাওয়া-বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংগৃহীত ভূ-তাপমাত্রার তথ্যও উল্লিখিত সময়কালকে হিমযুগের চূড়ান্ত পর্ব হিসেবেই ঘোষণা করে। সেই সময়ে ৫০° উত্তর অক্ষাংশ থেকে ওপরে সমগ্র ভূমি-ভাগ ঘন হিম-আবরণে আচ্ছাদিত ছিল এবং বেরিং সাগর-এর স্থানে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম প্রান্ত (আলাস্কা) উত্তর এশিয়ার পূর্ব প্রান্ত (সাইবেরিয়ার উত্তর পর্বতাঞ্চল)-এর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। অধিকাংশ মানব-বিদদের-ও এই মত যে আমেরিকার আদিবাসীদের পূর্বপুরুষরা বেরিং জলডमरুমধ্যের সরু পথ দিয়ে সাইবেরিয়া থেকে আলাস্কা হয়ে দক্ষিণের টেইরা-দেল-ফুয়েগোর নিকটবর্তী অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।
মায়া অভিলেখে এই ঘটনাটির বর্ণনা এইভাবে করা হয়েছে— The early natives believe...
এইভাবে হিমযুগীয় প্রভাবে মহাসাগরের জলস্তর-এ আসা এই তুলনামূলক পতনের কারণে অধিকাংশ উপকূলভূমির বিস্তার যেখানে ৭৫ থেকে ১৫০ মাইল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল, সেখানে পশ্চিমের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ-সহ পূর্বের জাপান, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দ্বীপমালা ক্রমান্বয়ে ইউরোপীয় ও এশীয় ভূমি-ভাগের সঙ্গেই যুক্ত ছিল।
আমেরিকান ভূগর্ভ-বিজ্ঞানী উইলিয়াম রায়ান ও ওয়াল্টার পিটম্যানের মতে, জলস্তর-এ ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ ফুটের তুলনামূলক পতনের কারণে উল্লিখিত সময়ে কালো সাগর ও কশ্যপ সাগর একটি বড় হ্রদ-সদৃশই ছিল, আর আজভ সাগর, আরল সাগর ও ফারস উপসাগরসহ পূর্ব চীনের হলুদ সাগর শুষ্ক ভূমি আকারে প্রকাশিত হয়েছিল।
জলবায়ুবিদ্যা গবেষণা দ্বারা এই প্রমাণিত হয়েছে যে ১৮ হাজার বছর আগে দ্রুতগতিতে বাড়া ভূ-তাপমাত্রার কারণে উত্তর গোলার্ধের হিমখণ্ড হঠাৎ গলতে শুরু করেছিল। এক অনুমান অনুযায়ী, এই ঘটনার সময় দুই বছরের স্বল্পকালেই প্রায় ২২ কোয়াড্রিলিয়ন টন বরফ গলে গিয়েছিল। এর ফলে মহাসাগরের জলস্তর-এ ৩৩০ ফুটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে মাইলের পর মাইল গ্রাস করে নিয়েছিল।
তলস্তর-এর পরীক্ষণ (কার্বন ডেটিং)-এর ভিত্তিতে রায়ান ও পিটম্যান এই তথ্য প্রকাশ করেন যে উত্তরীয় বরফ গলার ফলে যেখানে কালো সাগর ও সাদা সাগরসহ বাল্টিক ও উত্তর সাগরের অস্তিত্ব গড়ে উঠেছিল, সেখানে মহাসাগরের জলস্তর বৃদ্ধির ফলে ভূমধ্যসাগরে আসা প্রবল স্রোত খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ সালের কাছাকাছি বাসফোরাস-এর অগভীর স্তরের মাধ্যমে কালো সাগর অঞ্চলে পানি প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিল। এইভাবে কালো সাগরের বর্তমান আকারের পাশাপাশি আজভ সাগরের অস্তিত্বও প্রকাশ পেয়েছিল।
একই সময়কালে উত্তরীয় বরফ গলার ফলে কশ্যপসহ আরল সাগরেরও বর্তমান রূপ প্রকাশ পেয়েছিল। ভূগর্ভ-বিজ্ঞানীদের মতে, পঞ্চাশ লক্ষ বছর পূর্বে এরকম কিছু অবস্থায়—
🌊 হিমযুগ, বরফ গলন ও সমুদ্র-স্তর পরিবর্তনের টাইমলাইন
সময়কাল | ঘটনা | ফলাফল |
---|---|---|
২০,০০০ বছর আগে | মহাসাগরের জলস্তর আধুনিক সময়ের তুলনায় ৪০০ ফুট নিচে। | উপকূলভূমি ৭৫-১৫০ মাইল পর্যন্ত প্রসারিত। |
Extreme Glacial Period (হিমযুগের চূড়ান্ত পর্ব) | ৫০° উত্তর অক্ষাংশ থেকে উপরের অঞ্চল ঘন বরফে ঢাকা। বেরিং প্রণালীর স্থানে আলাস্কা ও সাইবেরিয়া যুক্ত। | মানুষ বেরিং প্রণালী পেরিয়ে আমেরিকায় পৌঁছায়। |
১৮,০০০ বছর আগে | তীব্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি → উত্তর গোলার্ধের বরফ দ্রুত গলতে শুরু। | মাত্র ২ বছরে ২২ কোয়াড্রিলিয়ন টন বরফ গলন। |
সমুদ্রস্তরে ৩৩০ ফুট বৃদ্ধি → উপকূলীয় অঞ্চল নিমজ্জিত। | ||
খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ (৮,০০০ বছর আগে) | ভূমধ্যসাগরের পানি প্রবাহিত হয়ে বাসফোরাস প্রণালী দিয়ে কালো সাগরে ঢোকে। | কালো সাগর ও আজভ সাগরের বর্তমান রূপ গড়ে ওঠে। |
একই সময়কাল (৮,০০০ বছর আগে প্রায়) | উত্তরীয় বরফ গলনের কারণে কশ্যপ সাগর ও আরল সাগরের গঠন। | সাগরগুলির আধুনিক রূপ প্রকাশ পায়। |
পূর্ববর্তী প্রমাণ (৫০ লক্ষ বছর আগে) | অনুরূপ বরফ গলন ও জলস্তর পরিবর্তনের ঘটনা। | প্রাচীন জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা প্রমাণিত। |
👉 এভাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বড় হিমযুগ ও বরফ গলনের সময়ে সমুদ্র-স্তরে তীব্র ওঠানামা হয়েছে, যার কারণে দ্বীপ, উপকূল ও সাগরের আকার পরিবর্তিত হয়েছে।...............Cont.
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ