:🌿 স্বদেশী চিকিৎসা = সুস্থ জীবন 🌿
আয়ুর্বেদ বলে — শুধু দীর্ঘায়ু নয়, সুস্থ থেকে দীর্ঘ জীবনই আসল ধর্ম। অসুস্থ দেহ নিয়ে ধন, সুখ বা ধর্ম কিছুই অর্জন করা যায় না।
👉 আজকের বাস্তবতা:
-
ভারতের ৮৫% মানুষ কোনো না কোনো রোগে ভুগছে।
-
ডাক্তার কম, রোগী বেশি। সবার চিকিৎসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
-
খাবার ভেজাল, বাতাস দূষিত, জীবন ভরা দুশ্চিন্তা।
তাহলে প্রশ্ন — আমরা কি সুস্থ থাকতে পারি?
✅ উত্তর: হ্যাঁ।
দীর্ঘস্থায়ী ও কঠিন রোগও নিরাময় সম্ভব।
২০০৭ সালে রাজীব ভাই “স্বদেশী চিকিৎসা”র ধারণা দেন—
যেখানে ডাক্তার, দামী হাসপাতাল বা ওষুধ ছাড়াই মানুষ নিজে নিজে সুস্থ হতে পারে।
👉 এটি সস্তা, কার্যকর ও একেবারেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।
স্বদেশী চিকিৎসার পরিচয়
ভারতে যে শাস্ত্রের সাহায্যে রোগমুক্ত হয়ে জীবন যাপন করার জ্ঞান পাওয়া যায়, তাকে আয়ুর্বেদ বলা হয়। আয়ুর্বেদে রোগমুক্ত জীবন যাপন করাকেই ধর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অসুস্থ থেকে দীর্ঘায়ু লাভ করা বা সুস্থ থেকে স্বল্প আয়ু লাভ করা—দুটোই আয়ুর্বেদে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই যেসব মানুষ সুস্থ থেকে দীর্ঘ জীবন যাপন করতে চান, তাদের সকলেরই জীবনে আয়ুর্বেদের জ্ঞান গ্রহণ করা উচিত। সুস্থ জীবন ছাড়া ধন, সুখ বা ধর্মের প্রাপ্তি সম্ভব নয়। অসুস্থ ব্যক্তি কোনোভাবেই সুখ লাভ করতে পারে না। অসুস্থ ব্যক্তি কোনো কাজ করে সঠিকভাবে অর্থ উপার্জনও করতে পারে না। আমাদের সুস্থ দেহই সব ধরনের জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম করে। শরীর নষ্ট হয়ে গেলে সংসারের সব কিছুই মূল্যহীন হয়ে যায়। কিন্তু যদি সুস্থ দেহ থাকে, তবে সব ধরনের সুখ-আনন্দ উপভোগ করা যায়।
বিশ্বে আয়ুর্বেদই একমাত্র শাস্ত্র বা চিকিৎসা পদ্ধতি যা মানুষকে সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। অন্য সব চিকিৎসা পদ্ধতিতে আগে অসুস্থ হতে হয়, তারপর চিকিৎসা হয়, কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয় না। আয়ুর্বেদ একটি চিরন্তন ও ধারাবাহিক শাস্ত্র। এর উৎপত্তি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাজীর দ্বারা হয়েছে বলে বলা হয়। ব্রহ্মাজী এই জ্ঞান দক্ষ প্রজাপতিকে দিয়েছিলেন। দক্ষ প্রজাপতি এই জ্ঞান অশ্বিনী কুমারদের দিলেন। তারপর এই জ্ঞান দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে পৌঁছায়। দেবরাজ ইন্দ্র এই জ্ঞান ঋষি-মুনিদের যেমন আত্রেয়, পুনর্বসু প্রমুখকে দেন। এরপর এই জ্ঞান পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এই জ্ঞানকে পৃথিবীতে বিস্তার করার জন্য বহু মহান ঋষি ও বৈদ্য জন্মেছেন। যেমন—ঋষি চরক, ঋষি সুশ্রুত, আত্রেয় ঋষি, পুনর্বসু ঋষি, কাশ্যপ ঋষি প্রমুখ। এ ধারাবাহিকতায় আরেকজন মহান ঋষি হলেন ঋষি বাগভট্ট, যিনি আয়ুর্বেদের জ্ঞান মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে “অষ্টাঙ্গ হৃদয়ম্” নামক শাস্ত্র রচনা করেছিলেন।
এই অষ্টাঙ্গ হৃদয়ম্ শাস্ত্রে প্রায় ৭০০০ শ্লোক রয়েছে। এসব শ্লোক মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্ত করার জন্য রচিত। উপস্থাপিত গ্রন্থে কিছু শ্লোক হিন্দি অনুবাদসহ দেওয়া হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে এগুলোর সর্বাধিক ব্যবহার করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
ভারতের জনসংখ্যা ৭২৭ কোটি, এর মধ্যে প্রায় ৮৫% মানুষ শারীরিক/মানসিকভাবে অসুস্থ। অর্থাৎ প্রায় ৪০৫ কোটি মানুষ অসুস্থ। ২৯ নভেম্বর ২০১-এর ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে ডাক্তার ও সাধারণ মানুষের অনুপাত ১:২০০০ এবং ডাক্তার ও অসুস্থ মানুষের অনুপাত ১:৬০০। এক দিনে একজন ডাক্তার সর্বাধিক ৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারেন। তাই যতক্ষণ না ভারতের প্রতিটি ডাক্তার প্রতিদিন ৪৬০০ রোগীকে চিকিৎসা দেন, ততক্ষণ ভারতে প্রতিটি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। আর অর্জুন সেনগুপ্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৮০% মানুষের দৈনিক আয় মাত্র ২০ টাকা। এত অল্প আয় দিয়ে কোনো ভালো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো একেবারেই অসম্ভব।
‘রাজীব ভাই’ এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেছিলেন যে, যতক্ষণ না ভারতের প্রতিটি মানুষ নিজের রোগ নিজেই সারাতে পারবে, ততক্ষণ ভারতের রোগীর সংখ্যা কমবে না। এ প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে রাজীব ভাই চেন্নাইয়ে সাত দিনের চিকিৎসা বিষয়ক বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতার উদ্দেশ্য ছিল—প্রতিটি মানুষ যেন ডাক্তার ছাড়াই এবং অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদের ওষুধ ছাড়াই নিজের রোগ নিজে সারাতে পারে। এই পদ্ধতিকে তিনি স্বদেশী চিকিৎসা নাম দিয়েছিলেন, যার মধ্যে রাজীব ভাই এমন একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন যা সস্তা, কার্যকর এবং কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই স্থায়ীভাবে রোগ সারায়।
আজ আমরা যে সময়ে বেঁচে আছি, তা হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময়। আমরা যে খাদ্যশস্য, ডাল, সবজি, ফল ইত্যাদি খাচ্ছি সেগুলো বিষাক্ত; দুধ, ঘি, তেল, মসলা সবই ভেজাল; কিছু ওষুধ নকল; যে বাতাস আমরা শ্বাস নিচ্ছি তা দূষিত; জীবন ভরা দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য এত বেড়ে গেছে যে, যেখানে দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে অসুস্থ হলে ডাক্তার ফি, পরীক্ষা আর ওষুধের খরচ জোগাড় করাও প্রায় অসম্ভব।
তাহলে এমন পরিবেশে আমরা কি সুস্থ থাকতে পারি? উত্তর—হ্যাঁ। আর যদি আমাদের কোনো দীর্ঘস্থায়ী ও অসাধ্য রোগ হয়ে যায়, তাও কি সারানো সম্ভব? উত্তর—হ্যাঁ। তাই রোগমুক্তির জন্য একটি সস্তা, কার্যকর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন বিকল্প বের করা খুব জরুরি ছিল, যাতে অসাধ্য ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকেও স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়।
রোগ দু’ধরনের হয় –
১. যে রোগগুলোর উৎপত্তি জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, প্যাথোজেন, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস দ্বারা হয়।
উদাহরণ: যক্ষ্মা (TB), টাইফয়েড, টিটেনাস, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি।
👉 এসব রোগের কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই সহজে ধরা যায়।
২. যে রোগগুলোর উৎপত্তি কখনো কোনো জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদির কারণে হয় না।
উদাহরণ: অম্লপিত্ত, হাঁপানি, বাত, গেঁটে ব্যথা, ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মাইগ্রেন, মাথা ব্যথা, প্রোস্টেটের সমস্যা ইত্যাদি।
👉 এসব রোগের আসল কারণ ধরা যায় না।
বিমারির মূল কারণ কী?
যখন শরীরে বাত, পিত্ত আর কফের স্বাভাবিক ভারসাম্য থাকে, তখন আমরা অসুস্থ হই না। এই ভারসাম্য নষ্ট হলে অসুখ হয়, আর বেশি নষ্ট হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এর কারণগুলো হলো—
-
প্রকৃতির নিয়ম মেনে খাবার ও পানি না খাওয়া।
👉 এর ফলে ৮০ রকম বাতের রোগ, ৪০ রকম পিত্তের রোগ, ২০ রকম কফের রোগ হয়। -
খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা/ঋতুচক্র না মানা।
-
বিপরীত খাবার (বিরুদ্ধ আহার) খাওয়া।
-
রিফাইন্ড তেল, লবণ, চিনি, ময়দা খাওয়া।
-
ভেজাল দুধ, ঘি, মসলা, তেল ইত্যাদি খাওয়া।
-
বিষাক্ত সার, কীটনাশক, রাসায়নিকযুক্ত শস্য, ডাল, ফল, সবজি খাওয়া।
-
প্রাকৃতিক বেগ (ক্ষুধা, পিপাসা, মলমূত্র) দমন করা।
-
রাগ, অহংকার, হিংসা ইত্যাদি বিকারকে বাড়তে দেওয়া।
সঠিক খাওয়ার সময়
🔸 ২৪ ঘন্টায় প্রাকৃতিক ক্ষুধা লাগে মাত্র ২ বার:
-
সূর্যোদয়ের ২ ঘণ্টার মধ্যে
-
আরেকবার সূর্যাস্তের আগে।
👉 তাই খাবার সকাল ৭-৯টার মধ্যে এবং সূর্যাস্তের আগে খাওয়া উচিত।
উপবাসের গুরুত্ব
আমাদের পূর্বপুরুষরা জানতেন—উপবাস করলে শরীর নিজে থেকে পরিষ্কার হতে শুরু করে।
উপবাসে শরীরের তাপমাত্রা ২-৩° কমে যায়, ফলে জীবাণুর বৃদ্ধি বন্ধ হয়।
শরীরের তিন ধাপ
-
জন্ম থেকে ৪ বছর: কফ প্রধান → বেশি ক্ষুধা লাগে, বেশি ঘুম আসে।
-
৪৪-৫০ বছর: পিত্ত প্রধান → পেট ও বুকের মাঝামাঝি কাজ সক্রিয়।
-
৫০ বছরের পর: বাত প্রধান → পেটের নিচ থেকে পা পর্যন্ত।
খাবার চিবানো জরুরি
দাঁত হলো প্রথম চাকি → ৮০% খাবার গুঁড়ো করে।
পেটের ফান্ডাস অংশ → মাত্র ২০% গুঁড়ো করতে পারে।
👉 ভালো করে না চিবোলে খাবার অপচন হয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অনেক রোগ হয়।
রান্নার বৈজ্ঞানিক নিয়ম
-
সূর্যের আলো ও বাতাস না পেলে রান্না করা খাবার বিষের মতো।
-
প্রেসার কুকারে রান্না করলে প্রোটিনের ৮৭% নষ্ট হয়।
-
মাটির হাঁড়িতে রান্না করলে ১০০% প্রোটিন বেঁচে যায়।
-
কাঁসার হাঁড়িতে কিছু প্রোটিন নষ্ট হয়।
-
অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে রান্না সবচেয়ে ক্ষতিকর → পারকিনসন্স, আলঝেইমার ইত্যাদি রোগ বাড়ায়।
পানি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
-
ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করার পর মুখ না ধুয়ে পানি খাও।
-
খাবারের ১.৫–২ ঘণ্টা পরেই পানি খাও।
-
ঠান্ডা পানি নয়, সবসময় হালকা গরম পানি খাও।
-
দাঁড়িয়ে পানি খেও না, বসে খাও আর চুমুক দিয়ে খাও।
প্রাকৃতিক ১৪ বেগ দমন কোরো না
হাসি, কান্না, হাঁচি, ডেকুর, হাই, মল, প্রস্রাব, ক্ষুধা, পিপাসা ইত্যাদি।
👉 এগুলো দমন করলে নানা রোগ হয়।
কোন খাবার বাদ দিতে হবে?
-
❌ রিফাইন্ড লবণ (এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, নপুংসকতা, যৌনশক্তি হ্রাস হয়)।
✅ কাঁচা লবণ বা সেঁধে লবণ খাও। -
❌ চিনি (রক্ত ঘন করে, কোলেস্টেরল বাড়ায়, পাচন নষ্ট করে)।
-
❌ রিফাইন্ড তেল (সব প্রোটিন নষ্ট করে, শরীরে বিষ ঢোকে)।
✅ ঘানির তেল বা খাঁটি তেল খাও। -
❌ ময়দা (পিজ্জা, বার্গার, বিস্কুট, ডাবল রুটি ইত্যাদি)।
👉 এগুলো অন্ত্রে গিয়ে আটকে যায়, মারাত্মক ক্ষতি করে।
✍️ সংক্ষেপে: প্রকৃতির নিয়ম মেনে জীবনযাপন করলেই ৮০% রোগ এড়ানো যায়।
সুস্থ শরীরই আসল সম্পদ। 🌿
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ