অবিদ্বাংশ্চৈব বিদ্বাংশ্চ ব্রাহ্মণো দৈবতং মহৎ ।
প্রণীতশ্চাপ্রণীতশ্চ যথাগ্নির্দৈবতং মহৎ ॥
মনুস্মৃতি ৯/৩১৭
এই শ্লোকটি প্রক্ষিপ্ত, অতএব মূল মনুস্মৃতির অংশ নয়।
মন্তব্য-
এই সমস্ত (৯/৩১৩-৩২৩) শ্লোক নিম্নলিখিত কারণে প্রক্ষিপ্ত বলে বিবেচিত হয়—
১. বিষয়-বিরোধ: বিষয়-সংকেতক শ্লোক ৯/২৫২, ২৫৩ এবং ৩১২ থেকে স্পষ্ট যে এখানে ‘লোককন্টক চোরাদি নিবারণ’ প্রসঙ্গ রয়েছে। কিন্তু এই শ্লোকগুলি অর্থহীন ব্রাহ্মণবাদের প্রশংসা করে প্রসঙ্গটিকে ভঙ্গ করেছে। অতএব, এই শ্লোকগুলি প্রক্ষিপ্ত।
২. শৈলীবিরোধ: এই শ্লোকগুলির শৈলী পক্ষপাতপূর্ণ ও অতিশয়োক্তিপূর্ণ, যা মনুর শৈলীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মনুর শৈলীতে ন্যায়সঙ্গত সমতার কথা থাকে, পক্ষপাত বা দুরাগ্রহের নয়। অতএব, এই শ্লোকগুলি শৈলীবিরুদ্ধ।
৩. অন্তর্বিরোধ: এই শ্লোকগুলির সম্পূর্ণ প্রসঙ্গ মনুর মান্যতার সঙ্গে বিরোধী হওয়ায় প্রক্ষিপ্ত। (ক) যেমন, ৩১৩ নম্বর শ্লোকে ব্রাহ্মণকে অত্যন্ত ক্রোধী বলা হয়েছে, যদিও ১/১৯, ২৭ এবং ৬/১৬ শ্লোকে ব্রাহ্মণের জন্য ক্রোধ করা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য বলা হয়েছে।
(খ) ৩১৪-৩১৬ শ্লোকে ব্রাহ্মণকে সমুদ্র, চন্দ্রমা, লোকপালাদির স্রষ্টা বলা হয়েছে, যদিও ২/১৬০, ১৭৮, ৪/১৬৩ ইত্যাদি শ্লোকে পরমাত্মাকে এগুলির স্রষ্টা বলা হয়েছে। মানুষের শক্তি চন্দ্রাদি লোক সৃষ্টির নয়। অতএব, এটি কাল্পনিক ও হাস্যকর।
(গ) ৩১৭-৩১৯ শ্লোকে অবিদ্বান ও নিন্দিত আচরণকারীকেও ব্রাহ্মণ বলা হয়েছে, যা মনুর মান্যতার বিপরীত। মনু কর্মের দ্বারা বর্ণব্যবস্থা মানেন। এ বিষয়ে ২/১০৩, ৪/২৪৫, ১০/৬৫ শ্লোক দ্রষ্টব্য।
(ঘ) ৩২৩ শ্লোকে জরিমানার অর্থ ব্রাহ্মণদের দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যদিও ৭-৯ অধ্যায়ে এই অর্থ রাজাকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
(ঙ) ৩১৪ শ্লোকে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণরা অগ্নিকে সর্বভক্ষী, সমুদ্রকে পানের অযোগ্য এবং চন্দ্রমাকে ক্ষয়প্রাপ্ত করেছে। এগুলি অসম্ভব ও অযৌক্তিক, তাই মনুকথিত নয়। কারণ, পরমেশ্বর যে গুণ যাতে দিয়েছেন, তা কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। চন্দ্রমাকে ক্ষয়প্রাপ্ত বলা অজ্ঞতাপূর্ণ, কারণ এটি পৃথিবী প্রভৃতির ছায়ার কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত মনে হয়, বাস্তবে নয়।
(চ) ৩২০ শ্লোকে ক্ষত্রিয়দের ব্রাহ্মণ থেকে উৎপন্ন বলা, ৩১৬ শ্লোকে সমস্ত লোকের আশ্রয় ব্রাহ্মণদের বলা এবং ৩২১ শ্লোকে জল থেকে অগ্নির উৎপত্তি বলা (যদিও ‘বায়োর্গনিঃ অগ্নেরাপঃ অদ্ভ্যঃ পৃথিবী’ প্রমাণে অগ্নির উৎপত্তি বায়ু থেকে বলা হয়েছে) ইত্যাদি সৃষ্টিক্রমের বিপরীত হওয়ায় মনুসম্মত নয়।
এইসব অন্তর্বিরোধের কারণে এই শ্লোকগুলি প্রক্ষিপ্ত।
( ভাষ্য-পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী জী)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ