যদিও যাস্কমুনি কোনো বেদের ভাষ্য রচনা করেননি, তবুও তিনি বেদের অর্থ প্রকাশের শৈলী অত্যন্ত উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেছেন। এই কারণেই নিরুক্ত বেদের একটি অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। নিরুক্তকারের বেদ-সম্পর্কিত নিম্নলিখিত মূখ্য ধারণাগুলি-
(১) 'পুরুষবিদ্যানিত্যত্বাত্ কর্মসম্পত্তির্মন্ত্রো বেদে' (নিরুক্ত ১১২) অর্থাৎ, মানুষের বিদ্যা অনিত্য, তাই বেদে কর্মের সম্পূর্ণতার প্রতিপাদন রয়েছে। এই কথা বলে যাস্ক মুনি বেদকে মানুষের সৃষ্টি বলে মান্য করেন না।
(২) 'নিয়তবাচো যুক্তিয়ো নিয়তানুপূর্ব্যা ভবন্তি' (নিরুক্ত ১১৫) অর্থাৎ, বেদের আনুপূর্বী (ক্রম) নিত্য, যেমন মহামুনি পতঞ্জলিও মহাভাষ্যে বেদের আনুপূর্বীকে নিত্য বলে মান্য করেছেন। যেমন - 'স্বরো নিয়ত শ্রাম্নায়েঽস্য বামশব্দস্য। বর্ণানুপূর্বী খত্বধ্যাম্নায়ে নিয়তা' (মহাভাষ্য ৫।২।৫৯)।
(৩) 'ঋষিদর্শনাত্ স্তোমান্ দদর্শেত্যৌপমন্যবঃ' (নিরুক্ত ২০১১) এতে স্পষ্টভাবেই যাস্কমুনি ঋষিদের বেদমন্ত্রের দ্রষ্টা বলে মান্য করেছেন, মন্ত্রের কর্তা (রচয়িতা) বলে মান্য করতেন না।
(৪) যাস্ক মুনি বেদের সমস্ত মন্ত্রের অর্থ তিন প্রকারে বিবেচনা করেন: আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক এবং আধিযাজ্ঞিক। এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বেদভাষ্যকারদের মধ্যে সর্বপ্রথম বেদভাষ্যকার আচার্য স্কন্দ স্বামীর উদ্ধৃতি উপস্থাপন করাই যথেষ্ট হবে-
"সর্বদর্শনেষু চ সর্বে মন্ত্রা যোজনীয়াঃ। কুতঃ? স্বয়মেব ভাষ্যকারেণ (নিঘণ্টুভাষ্যকারেণ যাস্কমুনিনেতি লেখকঃ) বিপ্রকারস্য বিষয়স্য প্রদর্শনায় 'অথং বাচঃ পুষ্পফলমাহ' (নিরুক্ত ১।২০) ইতি যজ্ঞাদীনাং পুষ্পফলত্বেন প্রতিজ্ঞানাদ" (স্কন্দ নিরুক্ত টীকা ৭।৫। পৃষ্ঠা ৩৬)। এই বচন থেকে সিদ্ধ হয় যে, যে ভাষ্য বেদমন্ত্রের তিন প্রকার অর্থ ব্যাখ্যা করে না, তা বেদভাষ্য হতে পারে না।
(৫) 'অথাপীদমন্তরেণ মন্ত্রেষ্বর্থপ্রত্যয়ো ন বিদ্যতে' (নিরুক্ত ১।১৫) অর্থাৎ, নির্বচন বা নিরুক্তি ছাড়া বেদমন্ত্রের অর্থ কখনোই ঠিকঠাক বোঝা যায় না। নিরুক্ত ১।১২-এ সমস্ত নাম শব্দকে ধাতুজ মনে করে, নিরুক্ত ১০।১৬, ১০।১৬ এবং ১০।২৩-এ ধাতুপাঠে উল্লিখিত ধাত্বর্থ থেকে ভিন্ন ধাতুর অর্থ গ্রহণ করে, মহাভাষ্যকার মহামুনি পতঞ্জলির 'বহ্বর্থা অপি ধাতবো ভবন্তি' সিদ্ধান্তকে যাস্কমুনি গ্রহণ করেছেন।
(৬) 'ঋষে ষ্টার্থস্য প্রীতির্ভবত্যাখ্যানসংযুক্তা' (নিরুক্ত ১০।১০, ৪৬)-এ যাস্ক ব্যক্তিবিশেষের ইতিহাসবাদের খণ্ডন করে তার শুদ্ধ স্বরূপ বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ, মন্ত্রার্থদ্রষ্টা ঋষিদের আখ্যান (কাহিনী) রূপে বলার প্রীতি থাকে, কিন্তু বেদে ব্যক্তিবিশেষের কোনো ইতিহাস নেই। ঔপচারিক বা আলঙ্কারিক বর্ণনা বেদে রয়েছে, এমনটি যাস্ক মহর্ষি মান্য করেছেন।
( ব্রহ্মদত্ত জিজ্ঞাসুর রচনা থেকে সংগ্রহ)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ