মনুস্মৃতি ৫/৩২ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

29 March, 2024

মনুস্মৃতি ৫/৩২

 ক্রীতা স্বয়ং বাऽপ্যুৎপাদ্য পরোপকৃতমেব বা।

দেবান্ পিতৃংশ্চার্চয়িত্বা খাদন্মাংসং ন দুষ্যতি। মনুস্মৃতি-৫/৩২

এই শ্লোক প্রক্ষিপ্ত অতঃপর মূল মনুস্মৃতির অংশ নয়।

টিপ্পণীঃ-
এই (৫/২৬-৪২) সতের শ্লোক নিম্ন কারণে প্রক্ষিপ্ত -

( ক)=যে মাংসের বিষয়ে মনু খুবই স্পষ্ট লিখেছেন- ১/ যক্ষরক্ষঃ পিশাচান্নং মদ্যং মাংসং সুরাসবম্।। (১১/৯৬) ২/ নাকৃত্বা প্রাণিনাং হিংসাং মাংসমুৎপদ্যতে ক্বচিত্। ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মান্মাংসং বিবর্জয়েত্।। ( ৫/৪৮) অর্থাৎ মাংস রাক্ষদের ভোজন,এই প্রাণিদের হিংসা ব্যতীত প্রাপ্ত হয় না। এবং প্রাণিদের হিংসা দ্বারা সুখ মিলে না,এইজন্য মাংস-ভক্ষণ কখনও করবে না। এবং ৫/৫১ তে মাংস ভক্ষণকারীকে ঘাতক-আট পাপীদের মধ্যে গন্য হয়। কিভাবে একই বিদ্বান্-মনু মাংস ভক্ষণের বিধান করতে পারেন? এইজন্য ৫/২৬-৩৮ পর্যন্ত মাংস ভক্ষণের প্রতিপাদক শ্লোক মনুর মান্যতা থেকে সর্বথা বিরুদ্ধ। কারণ যে মনু অহিংসাকে পরম্ ধর্ম মানতেন,তাহলে তিনি হিংসার বিধান কিভাবে করতে পারেন।

( খ) =এবং যজ্ঞে পশু বলির বিধান ( ৫/৩৯-৪২) এ মনুর মান্যতার বিরুদ্ধ। যে যজ্ঞের এক "অধর-হিংসারহিত" সার্থক নাম শাস্ত্রে বলা হয়েছে এবং যাকে "যজ্ঞো বৈ শ্রেষ্ঠতম কর্ম" বলে সব থেকে উত্তম কর্ম গন্য করা হয়, তাতে কি প্রাণিদের বলি করা কদাপি সংগত হতে পারে? এবং যজ্ঞের উদ্দেশ্য হল-বায়ু,জলাদির শুদ্ধি করা। এই জন্য এতে রোগনাশক,জীবানুনাশক,পুষ্টিকর,সুগদ্ধিত দ্রব্যের আহুতি দেওয়া হয়। যদি মাংসের আহুতি দ্বারা যজ্ঞের উদ্দেশ্যের পূর্তি হতো তবে মনুষ্যকে অন্ত্যষ্টির সময় সুগদ্ধিত ঘৃত, সামগ্রী চন্দনাদির প্রক্ষেপের কোনো অবশ্যকতা নেই। কারণ যে তাদের মতে তো মাংস থেকেই উদ্দেশ্য পূর্তি হয়ে যায়। কিন্তু এই প্রত্যক্ষবিরুদ্ধ। অগ্নিতে মাংস রাখলে দুর্গন্ধই ছড়ায় সুগন্ধ নয়। এবং যে মনু গৃহস্থের জন্য পঞ্চমহাযজ্ঞের এইজন্য বিধান করেছেন যে ( ৩;৬৮-৬৯) গৃহে চুলা,কল,বাসাতের পাইপ,পাত্র এবং জল-কলশাদি দ্বারা অজান্তেও যে হিংসা হয়ে যায়,তার প্রায়শ্চিত্তের জন্য দৈনিক মহাযজ্ঞো দ্বারা পরিহার হয়। সেই মনু কি জেনে বুঝে যজ্ঞে পশুকে বধের বিধান করতে পারেন? এবং সেই পশু-বধের কোনো প্রায়শ্চিত্তও লেখা নেই। এবং মনুজী বেদকে পরম্ প্রমাণ মান্য করতেন"ধর্ম জিজ্ঞাসমাননাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ" এই মনুজীর নিশ্চিত সিদ্ধান্ত। যখন বেদে পশুদের হিংসার নিষেধের স্পষ্ট বিধান করা হয়েেছে,তবে মনু বেদ-বিরুদ্ধ পশুবধকে কিভাবে বলতে পারেন? বাস্তবে এমন মিথ্যা মান্যতা বাম মার্গী লোকদের,যারা তাদের মনুস্মৃতি যেমন প্রামাণিক স্মৃতিতেও নিজ মান্যতার পুষ্টিতে প্রক্ষেপ করেছে। কারণ যে তাদের মান্যতা যে মদ্য,মাংস,মীন,মুদ্রা তথা মৈথুন এই পঞ্চমকার মোক্ষ দানকারী।

( গ)=( ৫/৪১) এ "অব্রবীন্মনুঃ" বাক্য থেকেও এই শ্লোকের প্রক্ষিপ্তা স্পষ্ট হয় যে এই শ্লোকের রচয়িতা মনু থেকে ভিন্ন হয়। কারণ যে মনুর এই শৈলী নয় যে তিনি নিজ নাম নিয়ে স্বয়ং প্রবচন করা।

( ঘ)=( ৫/৪২) এ যজ্ঞ থেকে ভিন্ন মধুপর্ক তথা শ্রাদ্ধেও পশুদের হিংসা লেখা হয়েছে,এটিও মনুর মান্যতার বিরুদ্ধ। মধুপর্ক যার মধ্যে মধু-শহদ,ঘৃত অথবা দইয়েরই মিশ্রণ হয়,তাতে মাংসের কথা বললে মধুপর্কেই না বুঝা এবং যে শব্দের জন্য ( ৩/৮২) তে মনু অন্ন, দুধ, ফল, মূল জলাদি দ্বারা বিধান করেছেন,তিনি কি নিজ বচনেরই বিরুদ্ধ শব্দে মাংসের বিধান করতে পারেন ? বাস্তবে এই মৃতকশ্রাদ্ধের কল্পনাকারীদের অযুক্তিক প্রক্ষেপ।

( ঙ)=এই শ্লোকগুলিতে অবান্তর বিরোধও কম নয়,যা থেকে স্পষ্ট হয় যে তাদের তৈরীকারী ভিন্ন-ভিন্ন ব্যক্তি ছিল। কারণ যে এক ব্যক্তির লেখায় এমন সামান্য বিরোধ হতে পারে না।
যেমন- ১= ৫/৩১ শ্লোকে যজ্ঞের জন্য মাংস ভক্ষণ দেবতাদের বিধি বলা হয়েছে এবং যজ্ঞ থেকে উৎপন্ন শরীর-পুষ্টির জন্য মাংস ভক্ষণ রাক্ষসদের কার্য মান্য হয়েছে। যদি মাংস ভক্ষণে দোষ হয়,তবে কিনা যজ্ঞের নিমিত্তে ভক্ষণ অথবা অন্য নিমিত্তে,দোষ কিভাবে দূর হতে পারে ? এবং দেবতা বা রাক্ষসের এই থেকে কি ভেদ হয়? মাংস তো দুজনই ভক্ষণ করছে। ২= এবং ( ৫/১৪-১৫) তে মৎস ভক্ষণের সর্বথা নিষেধ করেছেন এবং ( ৫/১৬) তে হব্য-কব্য মৎস ভক্ষণের বিধান করেছে। ৩=( ৫/২২) এ বলা হয়েছে যে ভৃত্যদের জীবিকা নির্বাহের জন্য পশু-পাখীদের বধ করা উচিত এবং ( ৫/৩৮) এ বলা হয়েছে যে যজ্ঞ দ্বারা উৎপন্ন পশুদের বধকারী জীবনে পশুদেরকে বধ করে,অনেক জন্ম পর্যন্ত তার পরিবর্তে বধ হয়। ৪= এবং ( ৫/১১-১৯) তম শ্লোকে কিছু পশুকে ভক্ষণ এবং কিছুকে অভক্ষণ বলা হয়েছে এবং ( ৫/৩০) এ বলা হয়েছে যে ব্রহ্মা সমস্ত পশু বা পখীদেরকে ভক্ষণের জন্য সৃষ্টি করেছে। অতঃপর এই প্রকারের পরস্পর-বিরোধী বিদ্বান্ কোনো ব্যক্তির হতে পারে না,মনুর বলা তো অনর্গল প্রলাপই হয়।

(ভাষ্যকার-শ্রী পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ছান্দোগ্য উপনিষদ

  সামবেদ-তাণ্ড্য শাখার- ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের অন্তর্গত শঙ্কর ভাষ্য ও বৈদিক ভাষ্য সহঃ পরিচয় ছান্দোগ্য উপনিষৎ সামবেদোক্ত ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণের অ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ