বেদে যোগ বিষয় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

12 March, 2023

বেদে যোগ বিষয়

বেদা॒হমে॒তং পুরু॑ষং ম॒হান্ত॑মাদি॒ত্যব॑র্ণং॒ তম॑সঃ প॒রস্তা॑ৎ।
তমে॒ব বি॑দি॒ত্বাতি॑ মৃ॒ত্যুমে॑তি॒ নান্যঃ পন্থা॑ বিদ্য॒তেঽয়॑নায়॥ [য়জুঃ ৩১|১৮]
वेदा॒हमे॒तं पुरु॑षं म॒हान्त॑मादि॒त्यव॑र्णं॒ तम॑सः प॒रस्ता॑त्।
तमे॒व वि॑दि॒त्वाति॑ मृ॒त्युमे॑ति॒ नान्यः पन्था॑ विद्य॒तेऽय॑नाय॥ यजुर्वेद0 31/18
অর্থাৎ - ইহলোক ও পরলোক সুখের ইচ্ছা যু্ক্ত মনুষ্য সেই আদিত্যস্বরূপ, প্রকাশমান পরমাত্মাকে জেনে। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তবেই মনুষ্য মুক্তি প্রাপ্ত হয়, এছাড়া আর অন্য কোনো দ্বিতীয় উপায় নেই। এটাই আনন্দস্বরূপ অজ্ঞান থেকে পৃথক সুখদায়ী মার্গ, এর ভিন্ন অন্য কোন মার্গ মনুষ্য মুক্তির মার্গ নয়।
ই॒দং জ॒নাসো॑ বি॒দথ॑ ম॒হদ্ব্রহ্ম॑ বদিষ্যতি।
ন তৎপৃ॑থি॒ব্যাং নো॑ দি॒বি যেন॑ প্রা॒ণন্তি॑ বী॒রুধঃ॑॥ [অথর্বঃ ১|৩২|১]
অর্থাৎ - হে মানব! যা দিয়ে বনস্পতি আদি প্রাণী প্রাণধারণ করে, সেই পরমাত্মা না কেবল পৃথিবীতে রয়েছে আর না কেবল দ্যুলোকের মধ্যেই রয়েছে, বরং সে সর্বত্র পরিপূর্ণ রয়েছে।
বেদে যোগ বিষয়
বেদ উপদেশ করেছে যে -
পু॒ণ্ডরী॑কং॒ নব॑দ্বারং ত্রি॒ভির্গু॒ণেভি॒রাবৃ॑তম্।
তস্মি॒ন্যদ্য॒ক্ষমা॑ত্ম॒ন্বত্তদ্বৈ ব্র॑হ্ম॒বিদো॑ বিদুঃ॥৪৩॥

অ॑কা॒মো ধীরো॑ অ॒মৃতঃ॑ স্বয়ম্॒ভূ রসে॑ন তৃ॒প্তো ন কুত॑শ্চ॒নোনঃ॑।
তমে॒ব বি॒দ্বান্ন বি॑ভায় মৃ॒ত্যোরা॒ত্মানং॒ ধীর॑ম॒জরং॒ যুবা॑নম্॥৪৪॥
_______[অথর্বঃ ১০|৮|৪৩-৪৪]
অর্থাৎ - এই নব দ্বারওয়ালা ত্রিগুণাত্মক শরীরের মধ্যে যে আত্মার মতো য়ক্ষ বসে রয়েছে, তাকে ব্রহ্মবেত্তাই জানে। সেটি হল নিষ্কাম, ধীর, অমর, স্বয়ম্ভূ, রসে তৃপ্ত আর পূর্ণ, অতঃ সেই ধীর, অজর, যুব আত্মাকে জানার পর বিদ্বান্ নির্ভয় হয়ে যায়। এরপর বেদ আরও বলেছে যে -
যে পুরু॑ষে॒ ব্রহ্ম॑ বি॒দুস্তে বি॑দুঃ পরমে॒ষ্ঠিন॑ম্।
যো বেদ॑ পরমে॒ষ্ঠিনং॒ যশ্চ॒ বেদ॑ প্র॒জাপ॑তিম্।
জ্যে॒ষ্ঠং যে ব্রাহ্ম॑ণং বি॒দুস্তে॑ স্ক॒ম্ভম॑নু॒সম্বি॑দুঃ॥ [অথর্বঃ ১০|৭|১৭]
অর্থাৎ - যে এই পুরুষের ভিতর ব্রহ্মকে জানে, সে পরমেষ্ঠিকে জানে আর যে পরমেষ্ঠি, প্রজাপতি আর ব্রহ্মকে জানে সে সমস্ত স্কম্ভকে জানে।
এই মন্ত্রে জীব ও ব্রহ্মার ব্যাপ্য আর ব্যাপকতা সম্বন্ধে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে যে, যিনি ব্যাপক ব্রহ্মকে জানতে পারেন তিনি ব্যাপ্য জীবকেও জেনে যান আর একে - অপরের পরিচয় দ্বারা সবকিছুর জ্ঞাত হয়ে যায় আর মোক্ষ হয়ে যায়..
#ইশা বাস্যমিদꣳসর্বম্ য়ত্কিঞ্চ জগত্যাম্ জগত্।
ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্।।
#কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতꣳসমাঃ।
এবম্ ত্বয়ি নান্যথেতোऽস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে।। [য়জুঃ ৪০|১-২]
ব্রহ্মচর্য়েণ তপসা দেবামৃত্যুমপাঘ্নত।
ইন্দ্রো হ ব্রহ্মচর্য়েণ দেবেভ্যঃ স্বরাভরত্।। [অথর্বঃ ১১|৫|১৯]
অর্থাৎ - পরমেশ্বরকে সর্বত্র পরিপূর্ণ বুঝে নিয়ে তার দেওয়াতেই সন্তোষ থাকা উচিত আর অন্যের ধনের প্রতি কখনও ইচ্ছা করা উচিত নয়। এই রকমের জীবন বানিয়ে শেষ আয়ু পর্যন্ত কর্ম করলে মোক্ষ হয়ে যাবে, এছাড়া আর অন্য কোনো উপায় নেই। যেভাবে ব্রহ্মচর্য দ্বারাই ইন্দ্র দেবতাদের দিয়ে দ্যুলোককে পূর্ণ করে, সেইভাবে ব্রহ্মচর্য আর তপ দ্বারাই বিদ্বান্ মোক্ষ প্রাপ্ত করতে পারে।
এই মন্ত্রগুলোতে মুমুক্ষুর জন্য অর্থ (ধন) আর কাম (রতি) পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছে। যখন অর্থ আর কামের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে নিবৃত্ত হয়ে যাবে তখন কোনো এক ব্রহ্মবিদ্যা জ্ঞানীর নিকট গিয়ে সৎসঙ্গ করা উচিত। অথর্ববেদের মধ্যে লেখা রয়েছে যে -
যত্র॑ দে॒বা ব্র॑হ্ম॒বিদো॒ ব্রহ্ম॑ জ্যে॒ষ্ঠমু॒পাস॑তে।
যো বৈ তান্বি॒দ্যাৎপ্র॒ত্যক্ষং॒ স ব্র॒হ্মা বেদি॑তা স্যাত॥ [অথর্বঃ ১০|৭|২৪]
অর্থাৎ - যেখানে ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মের উপাসনা করে, সেখানে গিয়ে যে মুমুক্ষু তাকে জানে -- সাক্ষাৎ করে, সেই সৎসঙ্গীকে ব্রহ্মা, অর্থাৎ ব্রহ্মনিষ্ঠ বলে জানা উচিত।
এই মন্ত্রটির মধ্যে ব্রহ্মবিদের সৎসঙ্গ আবশ্যক বলে দেওয়া হয়েছে। যখন সৎসঙ্গতে মুমুক্ষু ব্রহ্মবিদ্যাতে নির্ভ্রান্ত হয়ে যাবে তখন তার উচিত যে সে যেন একান্ত কোনো স্থানে নিবাস করে। এরকম স্থানের নির্দেশ করার সঙ্গে বেদ উপদেশ করেছে যে -
উ॒প॒হ্ব॒রে গি॑রী॒ণাং সঙ্॑গ॒থে চ॑ ন॒দীনা॑ম্।
ধি॒য়া বিপ্রো॑ অজায়ত॥ [অথর্বঃ ৮|৬|২৮]
অর্থাৎ - পাহাড়ের গুহা আর নদীর সঙ্গমেই মুমুক্ষুর বুদ্ধির বিকাশ হয়। এরকম শান্ত আর উপদ্রবরহিত স্থানে নিবাস করে য়োগের অনুষ্ঠান করা উচিত। বেদ উপদেশ করেছে যে -
তদ্বা অথর্বণঃ শিরো দেবকোশঃ সমুব্জিতঃ।
তত্ প্রাণো অভি রক্ষতি শিরো অন্নমথো মনঃ।। [অথর্বঃ ১০|২|২৭]
অর্থাৎ - মানুষের যে মস্তিষ্ক, সেটি হল জ্ঞান - বিজ্ঞানের কোশ। সেই মস্তিষ্কের রক্ষা প্রাণ, মন আর অন্ন করে থাকে।
এই মন্ত্রটিতে বিচার করার অঙ্গ মস্তিষ্ককে বলা হয়েছে আর তার সঙ্গে অন্ন, মন আর প্রাণের সম্বন্ধও বলে দেওয়া হয়েছে। এরদ্বারা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, অন্ন, প্রাণ আর মন হল বিচারের শৃঙ্খলার ক্রম, কারণ বিচার প্রতিরোধকারীকে মন থামাতে হয়, মন প্রতিরোধকারীকে প্রাণ থামাতে হয় আর প্রাণ প্রতিরোধকারীকে অন্নের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তাৎপর্য হল এটা যে, মুমুক্ষুকে একান্তে য়ুক্তাহার হয়ে প্রাণের নিগ্রহে লেগে পড়া উচিত আর মন তথা বিচারের প্রবাহকে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এই য়োগক্রিয়ার জন্য বেদ উপদেশ করেছে যে -
যু॒ঞ্জতে॒ মন॑ উ॒ত যু॑ঞ্জতে॒ ধিয়ো॒ বিপ্রা॒ বিপ্র॑স্য বৃহ॒তো বি॑প॒শ্চিতঃ॑।
বি হোত্রা॑ দধে বয়ুনা॒বিদেক॒ ইন্ম॒হী দে॒বস্য॑ সবি॒তুঃ পরি॑ষ্টুতিঃ॥
[ঋঃ ৫|৮১|৮]
য়ুক্তেন মনসা বয়ম্ দেবস্য সবিতুঃ সবে।
স্বর্গ্যায় শক্ত্যা।। [য়জুঃ ১১|২]
য়ুজে বাম্ ব্রহ্ম পূর্ব্যম্ নমোভির্বি শ্লোক এতু পথ্যেব সূরেঃ।
শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা আ য়ে ধামানি দিব্যানি তস্থুঃ।। [য়জুঃ ১১|৫]
অর্থাৎ - বড়ো-বড়ো যজ্ঞ - য়াগকারী আর বিদ্বানদের থেকেও অধিক বিদ্বান্ তার নিজের মন আর বুদ্ধি সেই একই মহান্ দেবাধিদেব পরমাত্মার মধ্যে যুক্ত করেন। পুরো শক্তি দিয়ে আমরা সকলে স্বর্গীয় সুখের জন্য নিজের মনকে সবিতা দেবের মধ্যে জুড়ে দেই। সকলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন যে, পূর্বজগণ য়োগবল দ্বারাই সূর্যমার্গ দিয়ে যাত্রা করেছে, এইজন্য যিনি য়োগ করবেন -- ব্রহ্মের মধ্যে মন লাগাবেন -- তিনিই সেই উত্তম গতিকে প্রাপ্ত করবেন।
এই মন্ত্রগুলোর মধ্যে য়োগের অনেক বড়ো মহত্ব বলে দেওয়া হয়েছে, কারণ য়োগের সম্বন্ধ হল মনের সঙ্গে। আর মনকে একাগ্র করে তাকে পরমাত্মার মধ্যে লাগিয়ে দেওয়াই হল য়োগ (Yoga), এইজন্য বেদের মধ্যে মনকে কল্যাণকারী বানানোর অনেক বড়ো উপদেশ রয়েছে। য়জুর্বেদের শিবসঙ্কল্পমস্তু অধ্যায়ে বলা হয়েছে -
যজ্জাগ্র॑তো দূ॒রমু॒দৈতি॒ দৈবং॒ তদু॑ সু॒প্তস্য॒ তথৈ॒বৈতি॑।
দূ॒র॒ঙ্গ॒মং জ্যোতি॑ষাং॒ জ্যোতি॒রেকং॒ তন্মে॒ মনঃ॑ #শি॒বস॑ঙ্কল্পমস্তু॥১॥
যেন॒ কর্মা॑ণ্য॒পসো॑ মনী॒ষিণো॑ য॒জ্ঞে কৃ॒ণ্বন্তি॑ বি॒দথে॑ষু॒ ধীরাঃ॑।
যদ॑পূ॒র্বং য॒ক্ষম॒ন্তঃ প্র॒জানাং॒ তন্মে॒ মনঃ॑ শি॒বস॑ঙ্কল্পমস্তু॥২॥
যৎপ্র॒জ্ঞান॑মু॒ত চেতো॒ ধৃতি॑শ্চ॒ যজ্জ্যোতি॑র॒ন্তর॒মৃতং॑ প্র॒জাসু॑।
যস্মা॒ন্নঽঋ॒তে কিং চ॒ন কর্ম॑ ক্রি॒য়তে॒ তন্মে॒ মনঃ॑ শি॒বস॑ঙ্কল্পমস্তু॥৩॥
যেনে॒দং ভূ॒তং ভুব॑নং ভবি॒ষ্যৎ পরি॑গৃহীতম॒মৃতে॑ন॒ সর্ব॑ম্।
যেন॑ য॒জ্ঞস্তা॒য়তে॑ স॒প্তহো॑তা॒ তন্মে॒ মনঃ॑ শি॒বস॑ঙ্কল্পমস্তু॥৪॥
যস্মি॒ন্নৃচঃ॒ সাম॒ যজূ॑ষি॒ যস্মি॒ন্ প্রতি॑ষ্ঠিতা রথনা॒ভাবি॑বা॒রাঃ।
যস্মিঁ॑শ্চি॒ত্তꣳ সর্ব॒মোতং॑ প্র॒জানাং॒ তন্মে॒ মনঃ॑ শি॒বস॑ঙ্কল্পমস্তু॥৫॥
সু॒ষা॒র॒থিরশ্বা॑নিব॒ যন্ম॑নু॒ষ্যান্নে॑নী॒য়তে॒ঽভীশু॑ভির্বা॒জিন॑ঽইব।
হৃ॒ৎপ্রতি॑ষ্ঠং॒ যদ॑জি॒রং জবি॑ষ্ঠং॒ তন্মে॒ মনঃ॑ শি॒বস॑ঙ্কল্পমস্তু॥৬॥
[য়জুঃ ৩৪|১-৬]
অর্থাৎ - যা ঘুমন্ত আর জাগ্রত অবস্থায় দূরে-দূরে যায়, সেই দূর-দূর পর্যন্ত গমনকারী জ্যোতিরূপ আমার মন শুভ সংকল্পকারী হোক। যার দ্বারা বুদ্ধিমান্ আর ধীর পুরুষ নানা প্রকারের সুকর্মের অনুষ্ঠান করে, সেই সকলের ভিতর বসে থাকা অপূর্ব ক্ষমতাশালী আমার মন উত্তম বিচারশীল হোক। যেটি প্রজ্ঞান, চেতনা আর ধারণা ক্ষমতাশালী, যা অন্তর্জ্যোতি, যা সকল প্রাণীর মধ্যে অবিনাশী সত্তারূপে বিরাজমান রয়েছে আর যাকে ছাড়া কিঞ্চিৎমাত্রও কোনো কাজ করা সম্ভব নয়, আমার সেই মন শিবসঙ্কল্পকারী হোক। যে নিজের অমরতা দ্বারা ভূত, ভবিষ্যত্ আর বর্তমানকে গ্রহণ করে রেখেছে আর যার সহায়তায় চক্ষু, নাসিকা, কর্ণ আর জিহ্বা আদি সাত কর্মকর্ত্তা এই শরীরের ব্যবহারকে করছে, আমার সেই মন কল্যাণকারী বিচারশীল হোক। যার মধ্যে ঋগ্বেদ, য়জুর্বেদ আর সামবেদ রথচক্রের আরের নেয় জুড়ে রয়েছে আর যার মধ্যে সকল প্রাণীর চিত্ত ওতপ্রোত হয়ে রয়েছে, আমার সেই মন শুভ বিচারশীল হোক। যেভাবে ভালো সারথী রথের অশ্বকে চালায়, সেভাবে হৃদয়ে বসে থাকা আর নিজের ক্রিয়াবল দ্বারা মানুষকে নিয়মে নিয়ন্ত্রণকারী আমার মন শুভ সংকল্পকারী হোক।
এই মন্ত্রগুলোতে মনের মহত্তা বলার সঙ্গে তাকে উত্তম বিচারশীল বানানোর উপদেশ করা হয়েছে, যারদ্বারা য়োগসিদ্ধিতে যেন দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায়। এই য়োগ হল মানুষের অন্তিম পুরুষার্থ। মানুষ য়োগানুষ্ঠান করে জপ, তপ, তিতিক্ষা আর সমাধি পর্যন্ত নিজের পুরুষার্থ করতে পারে, কিন্তু যদি পরমাত্মা এতকিছুর পরও মুমুক্ষুর হৃদয়ে স্বয়ং প্রকট হয়ে তাকে দর্শন না দেন আর মোক্ষ প্রাপ্ত না হয় তবে সে নিজের পুরুষার্থ দ্বারা তাঁকে প্রকট হওয়ার জন্য আর মোক্ষ দেওয়ার জন্য বিবশ করতে পারবে না। এইজন্য তাঁর শরণাগত হয়ে আর মোক্ষের জন্য প্রার্থনা করতে থাকা উচিত। বেদের মধ্যে পরমাত্মার স্তুতি আর প্রার্থনা করার উপদেশ এইভাবে রয়েছে-
য়ত্র ব্রহ্মা পবমান ছন্দস্যাম্৩ বাচম্ বদন্।
গ্রাব্ণা সোমে মহীয়তে সোমেনানন্দম্জ নয়ন্নিন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব।।৬।।
য়ত্র জ্যোতিরজস্রম্ য়স্মিঁল্লোকে স্বর্হিতম্।
তস্মিন্মাম্ ধেহি পবমানামৃতে লোকে অক্ষিত ইন্দ্রায়েন্দ্রো পরি স্রব।।৭।।
য়ত্র রাজা বৈবস্বতো য়ত্রাবরোধনম্ দিবঃ।
য়ত্রামূর্য়হ্বতীরাপস্তত্র মামমৃতম্ কৃধীন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব।।৮।।
য়ত্রানুকামম্ চরণম্ ত্রিনাকে ত্রিদিবে দিবঃ।
লোকা য়ত্র জ্যোতিষ্মন্তস্তত্র মামমৃতম্ কৃধীন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব।।৯।।
য়ত্র কামা নিকামাশ্চ য়ত্র ব্রধ্নস্য বিষ্টপম্।
স্বধা চ য়ত্র তৃপ্তিশ্চ তত্র মামমৃতম্ কৃধীন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব।।১০।।
য়ত্রানন্দাশ্চ মোদাশ্চ মুদঃ প্রমুদ আসতে
কামস্য য়ত্রাপ্তাঃ কামাস্তত্র মামমৃতম্ কৃধীন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব।।১১।।
_______[ঋঃ ৯|১১৩|৬-১১]
য়ত্র ব্রহ্মবিদো য়ান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ ব্রহ্মা মা তত্র
নয়তু ব্রহ্মা ব্রহ্ম দধাতু মে।
ব্রহ্মণে স্বাহা।।_________ [অথর্বঃ ১৯|৪৩|৮]
অর্থাৎ - যেখানে বেদবেত্তা ব্রহ্মা অথর্ববাণীকে বলার সঙ্গে য়োগ দ্বারা পরমাত্মাকে প্রাপ্ত করে আর পরমাত্মা হতে আনন্দ পায়, সেরূপ হে পরমাত্মন্! এই য়োগীকেও অমৃতবিন্দু দিয়ে -- দর্শন দিয়ে পৌঁছে দিন। যেখানে নিরন্তর জ্যোতির প্রকাশ হয়, যেখানের দ্যুলোক দ্বার রয়েছে আর যেখানে অমৃত জলের বৃষ্টি হয়, সেখানে আমাকে অমর করুন। যেখানে ইচ্ছানুসারে বিচরণ করা যায় আর যেখানে জ্যোতিরূপ রয়েছে, এরকম তৃতীয় দ্যুলোকের ওই পারে আমাকে অমর করুন। যেখানে সব কামনা পূর্ণ হয়ে যায়, যেখানে সবথেকে বড়ো সুখ প্রাপ্ত হয় আর যেখানে স্বধা তথা প্রত্যেক ধরনের তৃপ্তি রয়েছে, সেখানে আমাকে অমর করুন। যেখানে পূর্ণ হর্ষ, পূর্ণ প্রসন্নতা, পূর্ণ সুখ আর পূর্ণ আনন্দ রয়েছে আর যেখানে সবধরনের ইচ্ছাগুলো পূর্ণ হয়ে যায়, হে পরমাত্মন্! দর্শন দিয়ে আমাকে সেখানে পৌঁছে দিন। যেখানে ব্রহ্মবিদ্ বিদ্বান্ তপ আর দীক্ষার প্রতাপ দ্বারা গমন করে, হে ব্রহ্ম! আমার মধ্যে ব্রহ্মকে ধারণ করে সেখানে পৌঁছে দিন।
এই মন্ত্রগুলোর মধ্যে পরমাত্মার নিকট প্রার্থনা করা হয়েছে যে, আমাকে প্রথমে দর্শন দিন, যাতে আমি জীবনমুক্ত হই আর তারপর মৃত্যুর পরে তৃতীয়লোকের বাইরে যেখানে প্রাকৃতিক জগতের লেশ মাত্রও নেই, আর যেখানে কেবল ব্রহ্মই-ব্রহ্ম রয়েছে সেখানে সর্বদার জন্য পৌঁছে দিন। এই ধরনের নিরন্তর প্রার্থনার দ্বারা সমাধিস্থ নিশ্চল আত্মার মধ্যে পরমাত্মা প্রকট হয়ে যায়। সেই সময় সেই জীবনমুক্ত বলেন যে -
যো ভূ॒তানা॒মধি॑পতি॒র্যস্মিঁ॑ল্লো॒কাঽঅধি॑ শ্রি॒তাঃ।
যঽঈশে॑ মহ॒তো ম॒হাঁস্তেন॑ গৃহ্ণামি॒ ত্বাম॒হং ময়ি॑ গৃহ্ণামি॒ ত্বাম॒হম্॥(য়জুঃ ২০|৩২)
অর্থাৎ - যিনি সকল ভূতের অধিপতি, যার মধ্যে সব ভুবন অবস্থান করছে, যিনি বড়ো থেকেও বড়োদের স্বামী, সেই পরমাত্মাকে আমি গ্রহণ করছি -- নিজের ভিতর আপনাকে গ্রহণ করছি।
এই মন্ত্রটির মধ্যে জীবনের অন্তিম সফলতার বর্ণনা রয়েছে। এইভাবে মানুষ ঈশ্বর দর্শন দ্বারা কৃতার্থ হয়ে, সব প্রকারের শঙ্কা থেকে নিবৃত্ত হয়ে আর সবকিছু জেনে শেষ জীবনে লোকেদের ব্রহ্মজ্ঞানের উপদেশ করার সঙ্গে প্রন্নতার সঙ্গে মৃত্যু প্রাপ্ত করে আর মুক্ত হয়ে যায়। এটাই হল বৈদিক উপনিষদের উত্তরার্দ্ধ।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

শ্রীরাম

মহাপ্লাবনের পর তিব্বতের দেবলোকে পরিশ্রমী দেবতারা বসবাস করতে থাকেন এবং অন্যান্য অঞ্চল যে সকল স্থান জলমগ্ন ছিলো না সেখানে কিছু মনুষ্য বসবাস শু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ