গনিমতের মাল - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

13 August, 2020

গনিমতের মাল

পাশ্চাত্য অনেক পণ্ডিত ইসলামকে একটি আঞ্চলিক বিষয় বলে মনে করেন। তাঁরা ইসলামের অনেক শাস্ত্রীয় নির্দেশকে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী বলে মানতে চান না। এ-নির্দেশের মধ্যে রয়েছে: নামাজের পূর্বে অজু করা, দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়া যা মসজিদে গিয়ে পড়াই উত্তম, চন্দ্রবৰ্ষ অনুযায়ী বার মাস গণনা করা, এবং রমজান মাসে উপবাস করে সূর্যোদয় হতে সূর্যস্ত পর্যন্ত প্রধান কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা – তা বিশ্বের যে কোনো স্থানেই হোক। মনে রাখা দরকার, বিশ্বের যেসব স্থান উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত সেখানে সূর্য অস্ত যায় না এবং সর্বদাই দিবস থাকে। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা মনে করেন যে সপ্তম শতাব্দীতে রমজান মাসের উপবাসের প্রথা করা হয়েছিল হেজাজের জন্য। কারণ ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের অন্যান্য স্থান সম্বন্ধে অজ্ঞাত ছিলেন। ইসলামে সুদের ব্যবসা নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা পুঁজি বিনিয়োগের এবং অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য ক্ষতিকর। ইসলামে দাসত্ব প্রথার মাধ্যমে মানুষকে পশুতুল্য ব্যবহারকে আইনসঙ্গত করা হয়েছে। নারীরা প্রায়শ অর্থনৈতিক কাজকর্মে তেমন অবদান রাখে না। তাই পুরুষদের চেয়ে তাদের বেশি অর্থের প্রয়োজন। ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে নারীদের প্রতি অসমতা রয়েছে। নারীরা পুরুষদের থেকে কম পান। তাই ইসলামের অসম উত্তরাধিকার আইনকে পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা অযৌক্তিক মনে করেন। ইসলামে নারীর সাক্ষ্যকে পুরুষদের অর্ধেক ধরা হয়। এই ব্যবস্থা হচ্ছে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কোরানের আদেশ অনুযায়ী একবার চুরির অপরাধে হাতকাটা এবং চুরির পুনরাবৃত্তির জন্য পা কেটে ফেলা একেবারেই অসামাজিক প্রথা। কারণ এরূপ শাস্তির ফলে অপরাধী অক্ষম, বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। যার ফলে তার কাজকর্ম করার কোনো ক্ষমতা থাকে না। ইসলাম পুরুষদের জন্য বহুবিবাহ প্রথা অনুমোদন করে। এক স্বামী একক সময়ে চার স্ত্রী নিতে পারে এবং অগুণিত ক্রীতদাসী উপপত্নী হিসাবে রাখতে পারে। আবার যুদ্ধবন্দিনী-এমন কী যাদের স্বামী জীবিত থাকে সেইসব যুদ্ধবন্দিনীদের সাথেও যৌন সঙ্গমের অনুমতি রয়েছে। ব্যভিচারের জন্য ইসলামে রয়েছে পাথর ছুড়ে হত্যার শাস্তি যা ইসলাম ধার করেছে ইহুদিদের শাস্তিব্যবস্থা থেকে। ইসলামে বিদ্যমান এই প্রথাগুলিকে পাশ্চাত্যে অমানবিক বলে নিন্দা করে। ইসলামি নীতিতে বলা হয়েছে: কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি ও দেহের উপর তার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ থাকবে। নিজস্ব সম্পত্তি উইল করার ব্যাপারে যে সীমাবদ্ধতা আছে সেটা ইসলামের নীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। মোদা কথা হল ধর্ম কোনোভাবে সর্বজনীন ও সর্বকালের জন্য নয়।
এটা সত্যি যে, আজকাল বেশিরভাগ মুসলিম দেশে ইসলামি আইন যেমন পাথর ছুড়ে হত্যা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কর্তন করা এবং চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত উত্তোলন করা হয় না। সব মুসলিম দেশে সুদসহ ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই তথ্যগুলো জানানো হলেও ইসলাম- সমালোচকেরা হজ নিয়ে কটাক্ষ করেন। হেজাজের পৌত্তলিকদের মূর্তিপূজার ঘরকে আল্লাহর ঘর বানানো, পৌত্তলিক- প্রথার মত কাবার কালো পাথরকে (হাজরে আসওয়াদ) চুম্বন করা, এবং হজ সংক্রান্ত অন্য সকল ধর্মীয় আচার। ইসলামের দাবি হচ্ছে, ইসলাম মানব সমাজকে পৌত্তলিকতা এবং কুসংস্কার থেকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু হজ সংক্রান্ত রীতিনীতি ইসলামের এ- দাবির সাথে পুরোপুরি খাপ খায় না।
এজন্য ইসলামকে একটি একক জাতির নিজস্ব চিন্তাধারা ও রীতিনীতির প্রকাশ হিসাবে ধরে নিতে হবে। যে ধর্ম কখনো বর্ণবৈষম্য ও অন্ধ গোঁড়ামির উর্ধ্বে উঠেনি এবং সমগ্র মানবসমাজকে ভালোর দিকে পথ নির্দেশ দেয় না সে ধর্ম কখনো সার্বজনীন ও স্থায়ী হতে পারে না।
ইসলাম- সমালোচকেরা একটা বিষয় ভুলে যান, সবচেয়ে উত্তম আইন হবে সেই আইন যা মানুষের প্রয়োজন ও যা সমাজে উপস্থিত সকল ক্ষতিকর অবস্থার মোকাবেলা করে। তৎকালীন আরব সমাজে হত্যা, লুটতরাজ, অন্যের অধিকার ও সমানে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করা ছিল সর্বত্র বিরাজমান। এ- রকম অস্থির সমাজে একমাত্র কঠোর আইনই ফলপ্রসূ হবে। শাস্তি হিসাবে অঙ্গাদি কর্তন করা, পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা এবং রক্তের বদলে রক্ত-একমাত্র এসব বিধান ছাড়া কোনো কিছু ফলপ্রসূ ছিল না। ইসলামের পূর্বে এবং ইসলাম প্রচারের সমসাময়িককালেও দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। ইসলামের পূর্বে রোমান, অসিরীয়ান, এবং ক্যালডিয়ান সভ্যতার সময়েও দাসপ্রথা চালু ছিল। ক্রীতদাসের মুক্তির বিনিময়ে অনেক পাপের প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা ইসলামে আছে। এ নিয়ে তৃতীয় অধ্যায়ের ইসলামে নারী পরিচ্ছেদে বেশকিছু মন্তব্য রয়েছে। পৌত্তলিক যুগে আরব- নারীদের অধিকার খুবই কম ছিল। মৃত স্বামীর স্ত্রীকে সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হত। যে ব্যক্তি মৃত স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হত তার বিধবা স্ত্রীও তার ভাগে পড়ত। কোরানে নারীদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তা সেই সময়ের নারী অধিকারের জন্য এক বিপ্লবাত্মক অগ্রগতি। কিন্তু সপ্তম শতাব্দীতে মুহাম্মদ যেসব আদেশ দিয়ে গেছেন তা আজকের উনবিংশ এবং বিংশ শতকের সমাজের মানদণ্ডে বিচার করা অযৌক্তিক। আব্রাহাম লিঙ্কন যেভাবে দাস প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন সেভাবে নবি মুহাম্মদ লড়বেন, এটা আশা করা একেবারে অবাস্তব। ইসলাম- সমালোচকদের আরও অনেক সমালোচনার যথার্থ জবাব দেয়া যায়। ইসলামে চিন্তা এবং বিশ্বাসের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে বলা যায় যে মুসলিমরা বিজিত দেশের বাসিন্দাদের উপর দুইটি পছন্দের একটি বেছে নেবার সুযোগ দেবে ইসলাম অথবা জিজিয়া কর।
এটাও সত্য যে, অনেক ক্ষেত্রে তরবারির লড়াইয়ে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে। আজকের বিংশ শতাব্দীর মানদণ্ডে যাচাই করলে এভাবে ইসলাম প্রচার করা অনুচিত ও অন্যায় মনে হবে। আধুনিক বিশ্ব কোনোভাবেই এই ধারণা গ্রহণ করবে না যে, আল্লাহ একমাত্র আরবদেরকেই নির্বাচিত করেছেন সমগ্র মানব- সমাজকে পথ দেখাতে। আল্লাহ সত্যিই যদি চাইতেন সিরিয়া, মিশর, এবং ইরানের বাসিন্দারা মুসলিম হবে, তবে তিনি যুদ্ধের আশ্রয় না নিয়ে অনেক মার্জিত ও শান্তিময় ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কারণ কোরানে বলা হয়েছে : . . . তিনি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন ও যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। (সুরা নাহল : আয়াত ৯৩)। কোরানে আরও বলা হয়েছে যে তরবারি দ্বারা কাউকে পথ দেখানো যায় না। . . . প্রকৃত প্রমাণ দ্বারাই আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করার তাদের ধ্বংস করেন, আর প্রকৃত প্রমাণ দ্বারাই যাদেরকে জীবিত রাখা প্রয়োজন তাদেরকে জীবিত রাখেন।’ ( সুরা আনফাল: আয়াত ৪২) । . . . তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আমার ধর্ম আমার। (সুরা কাফিরুন ; আয়াত ৬) । এইরকম আরও ডজন খানেক কোরানের আয়াত উদ্ধৃত করা যায়।
এই বিষয়ের গভীরে গেলে বুঝা যায় ইসলাম গ্রহণ অথবা জিজিয়া কর প্রদান করার যে শর্ত ছিল তা করা হয়েছিল আরববাসীর জন্য। মুহাম্মদ এই নীতি অবলম্বন করেন খায়বার দখল করার পর এবং মক্কা বিজয়ের পর যখন কুরাইশরা মুহাম্মদের প্রতি তাদের অধীনতা স্বীকার করে নেয়। নবি মুহাম্মদের উদ্দেশ্য ছিল আরবদেশকে একটি একক রাজনৈতিক ধারায় নিয়ে আসা। হাদিস থেকে জানা যায় যে নবি বলেছেন: আরব উপদ্বীপে একের বেশি ধর্ম থাকবে না। মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহ নবিকে পাঠালেন সুরা তওবা । এই সুরায় বলা হল যে, পৌত্তলিকরা অবিশুদ্ধ। তাই তারা আর কাবার মসজিদ প্রাঙ্গণে আসতে পারবে না। এই সুরার অনেক আয়াত থেকে বুঝা যায় যে ইসলামের ছত্রছায়ায় একটি আরব- জাতীয় পরিচয়ের জন্য নবি ছিলেন বদ্ধপরিকর। তাই বেদুইনদের জন্য কঠোর পদক্ষেপ এবং শক্তি প্রয়োগের ব্যবস্থা এই সুরায় রাখা হয়। অবিশ্বাস ও কপটতায় মরুবাসী আরবরা ( বেদুইন) বড় বেশি পোক্ত। আর আল্লাহ তাঁর রসুলের ওপর যা অবতীর্ণ করেছেন তার (ন্যায়নীতির) সীমারেখা না শেখার যোগ্যতা এদের বেশি।’ (সুরা তওবা ; আয়াত ৯৭) । সুরা শোআল্লারাতে আল্লাহ বলেছেন: “যদি এ কোনো অনারবের (ভিন্নবাসী) ওপর অবতীর্ণ করা হত। ( ২৬; ১৯৮) । এ- আয়াত থেকে বুঝা যায় আল্লাহ জানতেন যে আরবদের চাইতে অনারবরা দ্রুত কোরান বোঝে এবং সহজেই কোরানের বাণী মেনে নেয়।
ইউরোপের পণ্ডিতেরা ইসলাম প্রসঙ্গ অনেক মন্তব্য করেছেন। তার মধ্যে দুটি প্রসঙ্গের উত্তর দেয়া যায় না। একটা হচ্ছে আল্লাহ শুধুমাত্র হেজাজের লোকদেরকে নিয়োগ করলেন সমগ্র বিশ্বকে নৈতিকতা শিক্ষা দিতে এবং তরবারি দিয়ে লড়াই করে বিশ্বব্যাপী একেশ্বরবাদ প্রচার করতে। যেহেতু এই বক্তব্যটি বিশ্বাস করা কঠিন তাই এ-নিয়ে এখানে আলোচনা করা যাবে না। দ্বিতীয় হচ্ছে আরবদের অন্য দেশ দখলের পিছনে যে অর্থনৈতিক প্রেরণা ছিল তা নিয়ে।
এ অধ্যায়ের শুরুর দিকে বলা হয়েছে নবির মৃত্যুর পর নেতৃত্ব এবং রাজ্যশাসনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাজনৈতিক ইসলামের রূপরেখা তৈরি করেছে। আরব বেদুইন যে অন্যের ধনদৌলত কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জাতিকে পদানত করেছিল তার প্রচুর প্রমাণ আমরা পাই ইতিহাস থেকে। উষর, অনুর্বর, রৌদ্রতপ্ত আরব মরুভূমিতে বসবাস করত অতিশয় রুক্ষ যাযাবর বেদুইনরা। তারা অতিকষ্টে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করত। তারা জানতো তাদের সীমান্তের বাইরে আরও অনেক উর্বর, ধনী, এবং উন্নত রাষ্ট্র এবং নগর আছে। সেসব জায়গায় বিলাসিতা আছে প্রচুর এবং জীবিকা অর্জন সহজ। তবে দুঃখের বিষয় ছিল যে ওই জনবসতিপূর্ণ ভূখণ্ডগুলো প্রবল ক্ষমতাধর পারস্য ও রোমের অধীনে। বিছিন্নভাবে নিঃস্ব, সহায়হীন যাযাবরদের দ্বারা এই শক্তিমান রাজত্ব জয় করা সম্ভব ছিল না। যাযাবর আরব বেদুইন গোত্রের মাঝে পরস্পর ধ্বংসাত্মক হানাহানি তখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ইসলাম এই আন্তঃগোত্রীয় হানাহানির অবসান ঘটায়, তাদের মাঝে এনে দেয় দৃষ্টির প্রসারতা। দীর্ঘদিন ধরে বেদুইনদের শক্তি বিচ্ছিন্ন-বিভাজিত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ইসলাম সে শক্তিকে সুসংহত করে একত্র করে। ফলে আরব ভূখণ্ডে জন্ম হয় এক অতিশয় শক্তিধর জাতির, যা এতদিন অসম্ভব ছিল ইসলাম তাকে সম্ভাবনাময় করে দিল।
ইসলাম- পূর্ব যুগে আরব ভূখণ্ডে দরিদ্র বেদুইনরা তাদের লোভ চরিতার্থ করার জন্য দুর্বল গোত্রের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুশো থেকে তিনশ উট কুক্ষিগত করে নিয়ে যেত। যখন তাদের এই শক্তিকে একত্রিত করা হল তখন তারা দেখল তারা আরও প্রচুর মাল দখল নিতে পারে। দূর-দূরান্তের উর্বর জমি দখল করে নিতে পারে, বিদেশি সুন্দরী শ্বেতাঙ্গ নারীও পেতে পারে। আরব- বেদুইনদের বৈশিষ্ট্য ছিল লড়াই করে অন্যের মাল লুট করতে এবং কাম চরিতার্থ করতে তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করতে কুষ্ঠিত হতো না। ইসলাম তাদের এই উৎসর্গীকৃত জীবনাচরণ ও পেশাদারী বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগাল। আর বেদুইনরাও বুঝল যুদ্ধ জয় হলে অগণিত ধনসম্পদই শুধু হস্তগত হবে তাই নয় শক্রকে হত্যা করলে বেহেশত লাভ হবে কিংবা যুদ্ধের ময়দানে নিহত হলেও বেহেশতে যাবে। ইসলাম আরব বেদুইনদের লড়াকু জীবনাচরণের আধ্যাত্মিক প্রেরণা যোগান দেয়। ইসলাম গ্রহণের পর তামিম গোত্র দ্বারা তাগলিব গোত্রকে আক্রমণ, আউস গোত্র দ্বারা খাজরাজ, সাকিফ গোত্র দ্বারা গাতাফান গোত্রকে পরস্পর আক্রমণ করা সম্ভব হল না। তার বদলে আরব দৃষ্টিপাত করল সিরিয়া ও ইরাকের উপর।
তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে গনিমতের মাল লাভ করা ছিল মুসলিম সম্প্রদায়কে সুদৃঢ় করার অন্যতম হাতিয়ার। দ্বিতীয় হিজরি সালে মুহাম্মদ নাখলাতে কুরাইশদের মালবাহী কাফেলা আক্রমণ করে প্রচুর মালামাল হস্তগত করেন। ফলে মুসলিমরা নিজেদের একত্রিত শক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেলেন। এরপর বানু কায়নোকা, বানু কুরাইজার ধনসম্পদও হস্তগত হয় তাঁদের। ফলে মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্ত ভিত্তি লাভ করে। আরবদের যে গনিমতের মালের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে তা কোরানেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ ধনসম্পদ সংগ্রহের জন্য যাবে তখন যারা ঘরে থেকে গিয়েছিল তারা বলবে, আমাদেরকেও তোমাদের সঙ্গে যেতে দাও।. . (সুরা ফাতাহ আয়াত ১৫) । এই আয়াতে এক বেদুইনের কথা বলা হয়েছে। সেই বেদুইন কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে এবং এক বৃক্ষের তলে (হুদাইবিয়ার সফরের সময়) নবির পক্ষে সর্বদা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার নিতে অপরাগ ছিল। পরে যখন নবি খায়বারে ইহুদিদের বিরদ্ধে অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন সেই বেদুইন সংবাদ পেল যে আল্লাহ মুসলিমদেরকে অগাধ গনিমতের মাল লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই সে নবির অভিযানে যোগ দিতে চাইল। এদিকে গাতাফান গোত্র খায়বারের ইহুদিদের সাথে মিত্রতার চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। নবি যখন খায়বারে সামরিক অভিযান চালান তখন তিনি গাতাফান গোত্রকে খায়বারের গনিমতের মালের কিছু অংশ দেবার অঙ্গীকার করলেন যাতে তারা ইহুদিদের সাহায্যে এগিয়ে না যায়।
গনিমতের মালের প্রতি আরবদের যে কী অপরিসীম আকর্ষণ ছিল তার প্রচুর বিবরণ পাওয়া যায় হিজরির প্রথম দশকে। এর একটা বিশেষ উদাহরণ দেওয়া হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। সেখানে বলা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ হাওয়াজেন গোত্র থেকে পাওয়া গনিমতের মাল তাঁর কুরাইশ আত্মীয়দের মাঝে বিতরণ করে দিলেও আনসাররা কিছুই পেল না। ফলে আনসাররা নবির উপর গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এই বিবরণগুলি আরবদের বিশেষ মনোবৃত্তির প্রমাণ দেয়। আর এটাও প্রমাণ করে নবি তাঁর সমাজের লোকদের মানসিকতা খুব ভাল করে বুঝতেন। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। নবি যেসব পন্থা অবলম্বন করেছিলেন যেমন বাণিজ্য কাফেলায় আক্রমণ, ইহুদিদের উৎখাত করা বা তাদেরকে অধীনস্থ করা, এসবের পিছনে নবির এক উচ্চতর উদ্দেশ্য ছিল। যা আরবদের গনিমতের মালের প্রতি আকাঙ্ক্ষার চেয়ে ভিন্ন ছিল। মুহাম্মদ কেবল একজন ধর্মপ্রচারক নয়, একজন রাষ্ট্রনায়কও ছিলেন। রাষ্ট্রনায়কেরা মনে করেন তাঁদের উদ্দেশ্য সফলের জন্য যা দরকার তাই-ই করতে হবে। মুহামদের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের বীজ রোপণ করা, আরবদেশ থেকে দুনীতিপরায়ণ পৌত্তলিক, কপটাচারীদের নির্মুল করা, এবং ইসলামের পতাকায় এক সংযুক্ত আরব রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করা। তাই তাঁর এই সুউচ্চ লক্ষ অর্জনে তিনি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত ছিলেন।
গনিমতের মাল মুহাম্মদ কখনো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন না। সে- সময় মুসলিম সমাজ ছিল ছোট। তাই নবি গনিমতের মাল ব্যবহার করে এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সচেষ্ট হন। মুহামদ তাঁর অতি সাদাসিধা জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। বানু কুরাইজার বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পর নবির স্ত্রীগণও তাঁর কাছ থেকে অধিক ভাতা দাবি করলেন। কিন্তু নবি তাঁর স্ত্রীদের দুটির মধ্যে একটি পছন্দ করতে আহবান করলেন -তাদের বর্তমান ভাতা অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ। নবির সহচরেরা তাঁর মতই সাদাসিধে জীবন নির্বাহ করতেন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তাঁর কোনো সহচর লোভের বশবর্তী হননি। নবির মৃত্যুর পর মুসলমানরা অনেক দেশ জয় করেন। ফলে প্রচুর পরিমাণ গনিমতের মাল অর্জিত হয়। তখন নেতৃত্বের অনেকেই ধনদৌলতের প্রতি বশীভূত হন।
দ্বিতীয় খলিফা ওমর গনিমতের মাল বণ্টন কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুধু তাই নয় মুহাজির ও আনসার নেতাদের এবং অন্যান্য সুযোগ্য মদিনাবাসীদের বয়স্ক ভাতা ধার্যের সময়ও ন্যায়-নীতি মেনে চলতেন। সবাইকে নবির পথে রাখার জন্য ওমর নিজেও একান্ত অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। মুক্তক্রীতদাস সালেম ( শুরুর দিকের হাদিস বর্ণনাকারী) এক হাদিসে জানিয়েছেন, খলিফা থাকাকালীন সময়ে ওমরের পাগড়িসহ সমস্ত পোশাক, এবং জুতার মূল্য চোদ দিরহামের বেশি ছিল না। অথচ খলিফা হবার আগে এগুলির মূল্য ছিল চল্লিশ দিনার। ঐতিহাসিক এবং কোরানের তফসিরকারক আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জরির আল তাবারি লিখেছেন যে, ওমরের মিতব্যয়িতা এতোই কঠোর ছিল যে তাঁর শাসনের শেষের দিকে প্রচুর অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ওমর তা জানতে পেরে মসজিদের প্রচারবেদি থেকে ঘোষণা করলেন: ‘আমি ইসলামের পরিপালনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। ইসলাম এখন পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে। কুরাইশরা এখন চাইছে আল্লাহর দান (গনিমতের মাল) তাঁর ইবাদতকারীদের মুখ থেকে কেড়ে নিতে। আমি এই ব্যাপারে সতর্ক আছি। কুরাইশরা সহজ পথ (ইসলাম) থেকে বিচ্যুত হয়ে নরকের পথে পা বাড়ালে আমি তাদেরকে বাধা দিব। তাবারি আরও বলেছেন যে, খলিফা ওমরের অনুমতি ছাড়া নবির বিশিষ্ট সাহাবিদের পর্যন্ত মদিনার বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। ওমর কখনো অনুমতি দিলেও তা সীমাবদ্ধ থাকত শুধুমাত্র স্বল্পসময়ের জন্য, তাও শুধুমাত্র হেজাজ অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য। বিশিষ্ট সাহাবিরা বিজিত দেশে ভ্রমণ করলে মুসলমানরা ভাগ হয়ে যেতে পারে -এই চিন্তা নিয়ে ওমর সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকতেন। কখনো কোনো বিশিষ্ট কুরাইশ বিদেশিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করতে চাইলে ওমর বলতেন: নবির সময়ে আপনি যে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তাই আপনার জন্য যথেষ্ট। আপনি বিদেশ না দেখলেই ভাল, আর বিদেশিরা আপনাকে না দেখলেই ভাল।”
খলিফা ওমরের কঠোরতা প্রসঙ্গে মিশরীয় লেখক তাহা হোসেন তাঁর ‘ফেৎনাত আল কুবরা (২য় খণ্ড, কায়রো ১৯৪৭ এবং ১৯৫৩) বইয়ে লিখেছেন : ‘ক্ষমতা ও মুনাফার উপর কুরাইশদের প্রবল লোলুপতা ছিল। কুরাইশদের এই গোষ্ঠীগত মনোভাব খলিফা ওমর ভাল করে জানতেন। তাই ওমর কুরাইশদেরকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। সে-সময় কাবা ছিল আরবদের মূর্তিপূজা এবং তীর্থযাত্রার প্রধান কেন্দ্র। কুরাইশদের উপর ন্যস্ত ছিল কাবাঘর ও তীর্থযাত্রীদের দেখাশোনার ভার। এটাই একমাত্র কারণ যে, কুরাইশরা তাদের গোত্রের আভিজাত্যের দাবিদার ছিল। অর্থাৎ আরবদের ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় আচার, প্রথা-রীতিনীতির সুযোগ নিয়ে কুরাইশরা গোটা আরবের মধ্যে সবচেয়ে ধনী হয়ে উঠে। কুরাইশদের সৌভাগ্য যে, ধর্মীয় কারণে মক্কা এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল নিরাপদ। তাই কুরাইশরা পূর্ণভাবে বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতে পারতেন। তারা হেজাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। কুরাইশরা ছিল ওমরের গোত্রের লোক। তাই ওমরও জানতেন কুরাইশদের সব আভিজাত্য, সমান এবং ধনদৌলত সব কিছুর পিছনে রয়েছে ছিল কাবা ও এর মূর্তিগুলো। তা না হলে কুরাইশরা কোনোদিনই মূর্তি পূজা করত না। ওমর আরও জানতেন কুরাইশরা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেননি। মক্কা বিজয়ের পর নবি তাদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দিয়েছিলেন। কুরাইশরা মুসলমানদের ভয়ে পেত। তাছাড়া কুরাইশরা জানত যে, দীর্ঘদিনের বংশের ঐতিহ্য ভেঙে ইসলাম গ্রহণ তাদের জন্য এক ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। সেজন্যে ওমর ভাবলেন এই ধনসম্পদ লোলুপ সুযোগ-সন্ধানীদের যথেচ্ছার ভার দেওয়া বিপদজনক হবে।
ওমর যে আসলেই বিচক্ষণ ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর মৃত্যুর পর অনেক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। ওমরের উইলে লিখে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পরে যিনি খলিফা হবেন তিনি যেন ওমর নিয়োগকৃত শাসনকর্তাদের এক বছর তাদের পদে বহাল রাখেন। উসমান ওমরের ইচ্ছা পালন করলেন। এক বছর পর উসমান সরকারি পদগুলি থেকে নিয়োগকৃতদের রদবদল করেন। শাসনের শুরু হতেই উসমান মুহাজির ও আনসারদের সরকারি কোষাগার থেকে প্রচুর টাকা পয়সা দেয়া শুরু করেন। একবার উসমান বয়স্ক ভাতা শতকরা একশ ভাগ বাড়িয়ে দিলেন। উসমান ছিলেন তৃতীয় খলিফা। পূর্বগামীদের অনুরূপ ব্যক্তিগতভাবে উসমান সাধারণ জীবন নির্বাহ করতেন। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে উসমান কখনো সরকারি তহবিল তছরুপ করেননি। কিন্তু তিনি অযোগ্য ব্যক্তিদের অনেক দান, উপহার দিয়েছিলেন। এ কারণে অনেকের মাঝে পরশ্রীকাতরতা এবং লোভের জন্ম হয়, বাতিল হয়ে যায় আত্মসংযমী হবার প্রয়াস।
পূর্বেই বলা হয়েছে খলিফা ওমর অতি সাধারণ পোশাক পরিধান করতেন এবং সাধাসিধে জীবনযাপন করতেন। ইসলামের ইতিহাসে ওমর ছিলেন অন্যতম শক্তিশালী খলিফা। তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম খলিফা যার উপাধি ছিল বিশ্বাসীদের নৃপতি’। আলিও ছিলেন কঠোর আত্মসংযমী ব্যক্তি। এ-ব্যাপারে আলির শক্রমিত্র উভয়েই একমত। আলির পোশাক ভর্তি ছিল তালিতে। বার বার তাঁর পোশাক সেলাইয়ের জন্যে আলি তাঁর দর্জির কাছে লজ্জিত থাকতেন। একবার আলির ভাই আকিল তাঁর ঋণ পরিশোধের জন্য আলিকে অনুরোধ করলেন সরকারি তহবিল থেকে টাকা দিতে। আলি কঠোরভাবে তিরস্কার করলেন আকিলকে। পরে আকিল চলে যান আলির প্রতিপক্ষ মুয়াবিয়ার কাছে। এ- ঘটনা থেকে বুঝা যায় আরবদের মানসিকতায় আর্থিক বিষয় কত গুরুত্বপূর্ণ।
এ- প্রসঙ্গে নবির অন্যতম প্রসিদ্ধ সাহাবি সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা দরকার। মক্কায় নবুওতির প্রথম দিকে সাদ ইসলাম গ্রহণ করেন। নবি যে দশজনকে বেহেশতের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন সাদ ছিলেন তাঁদের একজন। হিজরি ১৬ সালে (৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ) ওমরের খেলাফতে সাদ কুদসিয়ার যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন এবং ইরানিদের পরাজিত করে তাদের রাজধানী কুটাসফন (অথবা তাসিবন) দখল করে নেন। এই জন্য সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসকে ইসলামের বীর উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এরপর সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস কুফার প্রথম শাসক নিয়োজিত হন। হিজরি ২৩ (৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) সালে ওমরের মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওমর নতুন খলিফা মনোনীত করার জন্য যে ছয় সদস্য বিশিষ্ট পরিষদ গঠন করেন তাতে সাদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে সাদও নতুন খলিফার জন্য একজন প্রার্থী হয়ে যান। হিজরি ৫৫ (৬৭৪-৫ খ্রিস্টাব্দ) সালে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস মদিনা শহরের নিকটবর্তী আল-আকিক উপত্যকায় অবস্থিত তাঁর বিশাল বাসভবনে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি প্রচুর ধনসম্পত্তি রেখে যান যার পরিমাণ ছিল আনুমানিক দুই থেকে তিন লক্ষ দিরহাম।
সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের পুত্র ওমর বিন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের কথাও বাদ দেয়া যায় না। হিজরি ৬১ সালে (৬৮১ খ্রিস্টাব্দ) ইরাকের শাসনকর্তা ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ, ওমর বিন সাদ বিন ওয়াক্কাসকে এক শর্তে ইরানের রায়ি অঞ্চলের শাসনকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব দেন। শর্ত ছিল প্রথমে ওমর বিন সাদকে এক অভিযানের নেতৃত্ব দিতে হবে যাতে তিনি হোসেন বিন আলিকে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার খেলাফত স্বীকার করাতে বাধ্য করেন। হোসেন এতে রাজি না হলে তার পরিণতি হোসেনকে বহন করতে হবে। অর্থাৎ হোসেনকে মেরে ফেলতে হবে। প্রথমে ওমর বিন সাদ এই শর্ত মানতে রাজি হলেন না। এক রাতে ওমর বিন সাদ তাঁর আত্মীয়দের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর আত্মীয়রা একমত হলেন তাঁর উচিত হবে না নবির দৌহিত্রের সাথে যুদ্ধ করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ সফল হলেন। ওমর বিন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাত্রা করলেন। যখন ওমর বিন সাদ হোসেনের সম্মুখীন হলেন তখন তিনি চাইলেন হোসেনের সাথে আপোষ করে নিতে। তিনদিন ধরে ওমর বিন সাদ হোসেনের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে বোঝাতে চাইলেন হোসেন যেন আত্মসমর্পণ করে ইয়াজিদের প্রতি তাঁর আনুগত্য ঘোষণা করেন। এই দীর্ঘস্থায়ী আলোচনার কথা শুনে ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভাবলেন ওমর বিন সাদ হয়ত হোসেনের ইসলামি ভাবাবেগে পড়ে যাবেন এবং তাঁর পক্ষে চলে যাবেন।
সে- জন্য ওবায়দুল্লাহ তাঁর সামরিক কর্মকর্তা শেমর বিন দিল- জোওশানকে বার্তা পাঠালেন যে, ওমর বিন সাদ যদি গড়িমসি চালাতে থাকেন তবে তিনি যেন সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে নেন। এই খবর শোনা মাত্র ওমর বিন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস ভুলে গেলেন ইসলামের জন্য তাঁর পিতার অবদানের কথা। তিনিই হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি নবির নাতিকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়ে মারেন। ধর্ম, সমান এবং নৈতিকতার চেয়ে ওমর বিন সাদের কাছে প্রাধান্য তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ ছিলেন নবির অন্যতম সাহাবি। যে দশ জন সহচরকে নবি বেহেশতের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন তালহাও তাঁদের অন্যতম। খলিফা ওমর যে ছয় সদস্যের পরিষদ গঠন করেছিলেন তালহাও তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আবার তালহা নিজেই খলিফা পদের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তালহা মদিনার বাহিরে থাকায় পরিষদের সভায় যোগ দিতে পারেননি। ফলে তালহার মতামত না জেনেই পরিষদ খলিফার মনোনয়ন দিয়ে দেন। মদিনায় ফিরে আসার পর তালহা খলিফার ব্যাপারে অনীহা দেখালেন এবং উসমানের প্রতি তাঁর আনুগত্য জানাতে অস্বীকার করলেন। শেষে উসমান ব্যক্তিগতভাবে তালহার বাসগৃহে যান এবং খলিফার পদ ছেড়ে দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তালহা বিব্রতবোধ করলেন এবং উসমানকে তাঁর আনুগত্য দিয়ে দিলেন। পুরস্কারস্বরূপ উসমান সরকারি তহবিল থেকে তালহাকে ৫০ হাজার দিরহাম দিয়ে দিলেন এবং জানিয়ে দিলেন এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। এরপর থেকে তালহা হয়ে গেলেন উসমানের কাছের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এরপরও তালহা উসমানের সাহায্যে আরও অনেক অর্থের লেনদেন করেন। যেমন একবার তালহা ইরাকের কিছু জমি বিনিময় করতে চাইলেন হেজাজ অথবা মিশরের সাথে। উসমান সাথে সাথে তৈরি হয়ে গেলেন তাঁর শাসিত ইসলামি সাম্রাজ্যের যে কোনো স্থানে উচ্চপদস্থ কর্মচারী পাঠিয়ে দিতে যাতে তালহা যা চান তা পেয়ে যান। এ- ব্যাপারে অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। প্রথমে তালহা উসমানকে সমর্থন জানালেন। যখন অসন্তোষের কণ্ঠ উচ্চ হতে লাগল তখন তালহা বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন নিজের জিহবা সংবরণ করে। যখন বিদ্রোহীরা উসমানের গৃহ অবরোধ করে ফেলে তখন তালহা তাড়াতাড়ি বিদ্রোহীদের পক্ষ নিলেন। হিজরি ৩৬ (৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ) সালে জামালের যুদ্ধে (উটের যুদ্ধ) তালহা নিহত হন। একটি তথ্য অনুযায়ী উসমানের চাচাত ভাই মারোয়ান বিন আল-হাকাম এক তীর নিক্ষেপ করে তালহাকে হত্যা করেন। এরপর মারোয়ান বিন আল-হাকাম বলেন, উসমানের খুনের প্রতিশোধের জন্য তালহার রক্তই যথেষ্ট।’ (মারোয়ান ছিলেন আলির বিপক্ষে। হিজরি ৬৪ (৬৮৪-৮৫ খ্রিস্টাব্দ) সালে মারোয়ান উমাইয়া খলিফা নিযুক্ত হন।) উল্লেখ্য তালহা যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তিনি মোটেও অর্থবিত্তের মালিক ছিলেন না। ওমরের সময়ও তালহা মধ্যবিত্ত পর্যায়ের ছিলেন। কিন্তু মৃত্যুকালে তাঁর সম্পত্তির মূল্য ছিল ত্রিশ লক্ষ দিরহাম। এর মধ্যে নগদ ছিল ২ লক্ষ দিনার আর বাকি ছিল দালানকোটা, কৃষিভূমি, ও অস্থাবর সম্পত্তি। ইবনে সাদে তাবাকাত গ্রন্থের বর্ণনায়, তালহার নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১০০টি চামড়ার বস্তা, প্রত্যেক বস্তায় ছিল ১০০ কিলোগ্রাম বিশুদ্ধ স্বর্ণ।
ওমরের উত্তরাধিকার নিয়োগের জন্য যে ছয়জনকে মনোনীত করা হয়েছিল তাদের মধ্যে আরও একজন ছিলেন জুবায়ের বিন আল- আওয়াম। তিনি নবির ফুফুর পুত্র। এছাড়াও নবির সাথে তাঁর অন্য আত্মীয়তাও ছিল। জুবায়ের বিন আল- আওয়াম ছিলেন প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারী। তিনিও সেই দশজনের একজন, যাকে বেহেশতের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। জুবায়ের নবির সঙ্গে অনেকগুলি যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। নবি জুবায়েরকে আখ্যা দিয়েছিলেন আমার শিষ্য। তাই তিনি ছিলেন নবির সাহবিদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত। অনেকে বলেন যে ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান জুবায়েরকে সরকারি তহবিল থেকে ছয় লক্ষ দিরহাম দেন। জুবায়ের ভেবে পেলেন না এত বিপুল অর্থ দিয়ে তিনি কি করবেন? তাঁর বন্ধুরা যা পরামর্শ দিলেন জুবায়ের তাই-ই করলেন। বিভিন্ন নগরীর আশেপাশে তিনি অনেক বাড়ি, কৃষিজমি ক্রয় করেন। তাঁর মৃত্যুকালে ফোসতাত (পরবর্তীকালে কায়রো) , আলেকজান্দ্রিয়া, বসরা, কুফায় প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক বনে যান। মদিনাতে জুবায়ের এগারটি বাড়ির মালিক ছিলেন এবং এই বাড়িগুলি ভাড়া দিয়ে দেন। অনুমান করা হয় তাঁর সমগ্র ভূ-সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৫, ২০০, ০০০ থেকে ৫২, ০০০, ০০০ দিরহাম। ইবনে সাদ তাঁর তাবাকাত বইয়ে লিখেছেন জুবায়ের অত্যন্ত ধাৰ্মিক ছিলেন। তিনি কারো কাছ থেকে কোনো কিছু গচ্ছিত রাখতে চাইতেন না। তাঁর ভয় ছিল যে কোনো মুহুর্তে তিনি চরম দুর্দশায় পতিত হতে পারেন। ফলে ওইসব গচ্ছিত মাল বা ধনসম্পদ হারিয়ে যেতে পারে অথবা নষ্ট হতে পারে। কিন্তু কেউ তাঁকে ঋণ দিলে তা গ্রহণ করতেন। এবং সেই অর্থ নিজের মনে করে লাভজনক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতেন। তবে শর্ত ছিল তিনি মারা গেলে ওইসব ঋণের অর্থ তাঁর উত্তরাধিকারীরা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। সত্যি বলতে মৃত্যুকালে তিনি প্রায় বিশ লক্ষ দিরহাম ঋণ রেখে যান যা তাঁর পুত্ররা পরিশোধ করে দেন।
আব্দুর রহমান বিন আউফ নবির আরেকজন নিকটতম সাহাবি। তিনিও দশজনের মধ্যে একজন যে বেহেশতের নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন নবির কাছ থেকে। এই সাহাবি অতিশয় বিচক্ষণ, অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী এবং খলিফা আবু বকর ও খলিফা ওমরের বিশ্বস্ত উপদেষ্টা। খলিফা নির্বাচনের জন্য ওমরের ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটির একজন তিনি। আব্দুর রহমান কখন দারিদ্রতা দেখেননি। তাই বদান্যতায় ছিলেন সর্বাগ্রে। তিনি যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ-সম্পত্তি রেখে যান তা কোনোক্রমেই শুধুমাত্র মদিনার বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা অর্জন করা সম্ভব ছিল না। মৃত্যুকালে তিনি চারজন স্ত্রী রেখে যান। প্রত্যেক স্ত্রী পান ৫০ হাজার স্বর্ণের দিনার, ১ হাজারটি উট এবং ৩ হাজার মেষ। আব্দুর রহমান উইলে তাঁর স্ত্রীদেরকে এই ধনসম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার নির্দেশ দিয়ে যান। খলিফা উসমানের আমলে হাকাম বিন হিজামের মতো গুণসম্পন্ন ব্যক্তি খুব কম ছিলেন। তিনি সরকারি তহবিল থেকে এক কপর্দকও নিতেন না। যখন সরকারি কোষাগার থেকে মুহাজির এবং আনসারদের মাঝে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করা হলো তখন তিনি সে ভাতা নিতে অস্বীকার করলেন।
আবুজর গিফারি* প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করে নবির ঘনিষ্ঠ সাহাবি হয়ে যান। গিফারি অতিশয় ধাৰ্মিক এবং কঠোর আত্মসংযমী বলে পরিচিত ছিলেন। অনেক হাদিসেরও বর্ণনাকারী। তিনি প্রায়ই বলতেন, সুরা তওবার ৩৪ আয়াতে যে বলা হয়েছে: . . . যারা সোনা ও রুপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মারাত্মক শাস্তির খবর দাও। (৯:৩৪) । এই আদেশ দেয়া হয়েছে সমগ্র মুসলিম সমাজকে যেন তারা সম্পদ কুক্ষিগত না করে তা দান করে দেয়। আবুজর গিফারি সিরিয়াতে থাকাকালীন শাসনকর্তা মুয়াবিয়াকে কোরানের ওই আদেশ লঙ্ঘন করার জন্য ভর্ৎসনা করেন। শাস্তিস্বরূপ মুয়াবিয়া আবুজরকে সিরিয়া থেকে নির্বাসিত করে হেজাজে পাঠিয়ে দেন। মদিনাতে এসে আবুজর একই কথা বললেন। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান তা শুনে আবুজরকে প্রহার করলেন এবং মদিনা থেকে বহিষ্কার করে দিলেন।
যাহোক এটা সত্যি যে, নবির কিছুসংখ্যক সাহাবি ধনসম্পত্তির লোভ সংবরণ করতে না পেরে তা হাসিল করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যান। অবস্থা এমন হয়ে উঠে যে, অদক্ষ এবং যারা নবি বা খলিফার সাথে জড়িত ছিল না তারাও পর্যন্ত নানা পন্থা অবলম্বন করে টাকা বানাতে লাগলেন। কথিত আছে জান্নাব নামে একজন দিনমুজুর মক্কায় বার্তাবাহক ভৃত্য হিসেবে কাজ করতেন, তিনিও কুফায় মৃত্যুকালে নগদ ৪০ হাজার দিরহাম রেখে যান।
যুদ্ধে যোগদানকারীরা গনিমতের মালের ভাগ পেয়ে এবং পরে বয়স্ক ভাতা পেয়ে অনেকে ধনী হয়ে যায়। যেসব অশ্বারোহী সৈনিক ইফ্রিকিয়ায় (বর্তমানে তিউনিসিয়া) আব্দুল্লাহ বিন সাদ বিন আবি সারাহের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিল তারা প্রত্যেকে ৩ হাজার মিথকাল (১ মিথকাল ৪, ৭ গ্রামের সমান) পরিমাণ বিশুদ্ধ স্বর্ণ পায়। একজন পদাতিক সৈন্য পায় ১ হাজার মিথকাল।
ইসলামের ইতিহাসের প্রাথমিক যুগের এইসব অজস্র নির্ভরযোগ্য উদাহরণে এটা পরিষ্কার হয়ে আসে যে, গনিমতের মালের ভাগ পাওয়া, অন্যের ভূমি জোরপূর্বক দখল করা, এবং অন্যের নারীদের অপহরণ করে তাদের দাসী বানিয়ে রাখা-এসবই ছিল আরব যোদ্ধাদের জন্য বড় আকর্ষণ। এজন্য তাদের সাহসের কোনো অভাব ছিল না। নির্মমতা দেখাতেও তারা কোনোপ্রকার কুষ্ঠা বোধ করতেন না। নবির আদর্শ, আদেশ-নিষেধকে অগ্রাহ্য করে ইসলামের ছত্রছায়ায় থেকে তাঁরা ক্ষমতা, ধনদৌলত, প্রভাবপ্রতিপত্তি হাসিলে ব্যস্ত ছিলেন। তারা ভুলে গেলেন ইসলামের সেই মহান বাণী, কোরানে যেমন বলা হয়েছে : “তোমাদের মধ্যে সে-ই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন যে বেশি পরহেজগার। (সুরা হুজুরাত ; আয়াত ১৩)। তবে এই ধরনের অসদাচরণের প্রতিক্রিয়াও অচিরেই শুরু হয়ে যায়। বিদেশিরা, বিশেষ করে ইরানিরা এই ধরনের অনৈতিক আচরণ- অত্যাচার মানতে চাইল না। তারা ইসলামের আধ্যাত্মিক এবং দয়ালু নীতিগুলো গ্রহণ করে। কিন্তু আরবদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের দাবি মানতে অস্বীকার করে। ইরানিরা আরবদের শোষণের স্বীকার হতে চাইল না। আরবদের জাত্যাভিমান আর শ্রেষ্ঠত্বের দাবির উত্তরে ইরানিরা তাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শোবিয়া গড়ে তুলে। এমন কী অনেকে ইসলামের বিরুদ্ধে (জিদিক) গিয়ে ধর্মবিরোধী হয়ে যান।
এই বইয়ের লেখক মিশর থেকে প্রকাশিত Al-zandaga wa-l-suʼubiyya fi-l-ʼasr al-“Abbasi al-awwat শিরোনামের একটি বই পড়েছিলেন। বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। তিনি সেখানে দাবি করেন, ইরানিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (শোবিয়া) পুরোপুরি ইসলামি নীতি- আর্দশের বিরোধী। এটি ধর্মবিরোধী। কিন্তু বইটিতে দেখানো হয়নি যে আরবেরাও কোরান লঙ্ঘন করেছে। অন্তত এই আয়াতটি : ‘আল্লাহ অবশ্যই ন্যায়পরায়ণতা, সদাচারণ ও আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন। আর তিনি অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালঙ্ঘন নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (সুরা নাহল : আয়াত ৯০) ।
যেসব খলিফাকে বিশ্বাসীদের নৃপতি (আমিরুল মুমেনিন) উপাধি দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই এতো ভ্রষ্টাচারী ছিলেন যে, কথিত আছে তারা মদের নদী’তে স্নান করতেন। নবি তাঁর মহান আদর্শ সততা এবং উৎকর্ষতাকে মানবতার মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এই খলিফারা নবির সেই মহত্ত্বের প্রতি কোনো ভ্ৰক্ষেপই করেননি। উমাইয়া খলিফারা অনারব মুসলমানদের উপর আরব মুসলমানদের কর্তৃত্ব এবং অন্য আরবদের উপর উমাইয়া গোত্রের আরবদের কর্তৃত্ব বহাল রাখতে সচেষ্ট থাকলেন।
আলি ছিলেন নবির সহচরদের মধ্যে অন্যতম ধর্মপ্রাণ এবং জ্ঞানী ব্যক্তি। তথাপি এই বিশ্বাসীদের শাহজাদা’রা মসজিদের প্রচারবেদি থেকে আলি বিন আবু তালিবের মৃত্যুর পরও তাঁকে নিয়ে গালিগালাজসহ কটুক্তি করতেন। বিশিষ্ট পণ্ডিত আব্দুল্লাহ বিন আল- আব্বাস ছিলেন নবির চাচাতো ভাই। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের বংশধর ছিলেন খলিফা মুতাওয়াক্কিল (২৩২- ২৪৭ হিজরি; ৮৪৭- ৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) । নিজের দরবারে উপস্থিত গণ্যমান্যদের চিত্তবিনোদনের জন্য তিনি এক ভাঁড়কে নিয়োজিত করলেন যে আলির বেশ ধারণ করে নর্তন- কুর্দন করতো। এছাড়াও খলিফা মুতাওয়াক্কিল নবির নাতি হোসেন বিন আলির সমাধিতে লাঙ্গল চালিয়ে দেন এবং সেচ করতে থাকেন যাতে করে ওই সমাধির কোনো চিহ্ন পাওয়া না যায়; লোকজনের মন থেকে যেন নবির দৌহিত্রের স্মৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তাই ইরানিরা সঠিকভাবেই বিবেচনা করেছিল যে যারা এতো অসচ্চরিত্র এবং নবির আদর্শের প্রতি সীমাহীন উদাসীন তারা কোনোক্রমেই বিশ্বাসীদের শাহজাদা বা নৃপতি (আমিরুল মুমেনিন) খেতাবে ভূষিত হতে পারেন না।

——————-
পাদটীকা
৮৮. ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরকে ২৬ জুলহজ হিজরি ২৩ (৩ নভেম্বর ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) সালে আৰু লুলু ছুরিকাহত করেন। আবু লুলু ছিলেন একজন ইরানি ক্রীতদাস। অনেক ঐতিহাসিক তাকে খ্রিস্টান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ওমর এক পরিষদ গঠন করেন খলিফা নির্বাচনের জন্য। এই পরিষদ উসমানকে ওমরের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করে।
৮৯. আবুজর গিফারি নবি মুহাম্মদের ধর্মপ্রচারের শুরুর দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি একজন কঠোর তপস্বী, সমালোচক এবং হাদিস- বর্ণনাকারী। উসমানের খেলাফতের সময় সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়া তাঁকে সিরিয়া থেকে বহিষ্কার করেন। আবুজর গিফারি হিজরি ৩২ সালে (৬৫২ খ্রিস্টাব্দ) সালে মারা যান। আবুজর গিফারি, আল মিকদাদ বিন আমর, এবং সালমান আল ফার্সিদেরকে প্রথমদিককার শিয়া’ বলা হয়।
৯০. আমার বিন ইয়াসিরও ধর্মপ্রচারের শুরুর দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি নবির সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খলিফা ওমরের সময় তিনি কুফার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং খুজিস্থান দখলে অনেক অবদান রাখেন। খলিফা উসমান তাঁকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেন। নবির স্ত্রী আয়েশার বিরুদ্ধে জামালের যুদ্ধে আমার বিন ইয়াসির খলিফা আলির পক্ষে লড়াই করেন। তবে সিফিফনের যুদ্ধে আলির পক্ষ নিয়ে লড়াই করার সময় মৃত্যুবরণ
করেন।
৯১. আরবি ভাষায় প্রাক-ইসলামি যুগ থেকে ইব্রাহিম আল মুয়াসেলির সময়কালের কবিতার সংকলন- গ্রন্থ। আব্বাসিয়া খলিফা হারুন আল-রশিদের আমলে ইব্রাহিম আল মুয়াসেলি ছিলেন রাজসভার সংগীতবিশারদ (হিজরি ১৭০ বা ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দ-হিজরি ১৯৩ বা ৮০৯ খ্রিস্টাব্দ) । গ্রন্থটির সংকলক ছিলেন আবুল ফরজ আলি আল-ইসফাহানি (হিজরি ২৮৪ বা ৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ-হিজরি ৩৫৬ বা ৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ) উমাইয়া বংশের আরব। বসবাস করতেন পারস্যের ইসফাহানে।
৯২. ফার্সি শব্দ খাসরাও- এর আরবি উচ্চারণ হচ্ছে খসরু। এটি ইরানের এক রূপকথার রাজার নাম ছিল। পরবর্তীতে এই নামের দুজন সাসানিদ সম্রাট পারস্য শাসন করেন। প্রথমজন খসরু- ১ অনুশিরবন (৫৩১- ৫৭৯ খ্রিস্টাব্দ) এবং দ্বিতীয়জন খসরু- ২ পারভেজ (৫৯১-৬২৮ খ্রিস্টাব্দ) ।
৯৩. আব্দুল্লাহ বিন কুতায়বা (হিজরি ২১৩ বা ৮২৮ খ্রিস্টাব্দ-হিজরি ২৭৬ বা ৮৮৯ খ্রিস্টাব্দ) ইরানি বংশোদ্ভূত। তিনি সরকারি কাজে নিয়োজিত ছিলেন বাগদাদে। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর রচিত আইন আল-আকবর আধ্যাত্মিক সত্য কাহিনির এবং কবিতার সংকলন। এ ছাড়াও এই গ্রন্থে আছে সচিবসংক্রান্ত কলাবিদ্যা ও অন্যান্য আরবি রচনা।
৯৪. তাহা হোসেন (১৮৮৯- ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ) শৈশবকাল থেকে অন্ধ ছিলেন। কোরান অধ্যয়ন করেন মাদ্রাসা থেকে। পরে মিশরের আল-আজহার ধর্মীয় কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে ফ্রান্সে পড়াশোনা করতে যান এবং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর ডক্টরেট গবেষণার শিরোনাম ছিল : “La philosophie Sociale d’Ibn | প্রাক-ইসলামি যুগের কবিতার উপর তাহা হোসেনের পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণা কায়রো থেকে প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে নামে। দীর্ঘ বিতর্কের মধ্য দিয়ে কায়রো দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় নবি মুহাম্মদের জীবনী (Ala laimeshes-sira) ১৯৩৩ এবং ১৯৩৮ সালে। এই জীবনীগ্রন্থটিই তাহা হোসেনের অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ। মিশরীয় জাতীয়তাবাদে তিনি উদারনীতির অনুসারী ছিলেন। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত মিশরীয় সংস্কৃতির ভবিষ্যত (Mosaqbal oth-headfa#Mer) নামের বইয়ে তাহা হোসেন মিশরের সাথে ভূমধ্যসাগরীয় অন্যান্য দেশের সহযোগিতার আহ্বান জানান। ১৯৫০ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি মিশরের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। সর্বোপরি তাঁকে সারণ করা হয় মাদ্রাসায় থাকাকালীন সময়ে কোরান অধ্যয়ন ও আজহার মহাবিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রজীবনের দিনগুলির উপর ভিত্তি করে আল আয়াম গ্রন্থের জন্য। কায়রো থেকে ২ খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯২৯ ও ১৯৩৯ সালে। ইংরেজিতে প্রথম খণ্ডের অনুবাদক E H. Paxon এবং বইটির শিরোনাম An Egyptian Childhood প্রকাশিত হয়েছে ১৯৩২ সালে লন্ডন থেকে। দ্বিতীয় খণ্ডের অনুবাদক H Wayment, প্রকাশিত হয়েছে ১৯৪৮ সালে লন্ডন থেকে। বইটির শিরোনাম The Stream of Days
৯৫. দ্রষ্টব্য ; পাদটীকা ৮৯।

নবী মুহাম্মদের প্রাথমিক অবস্থা

ছোটবেলা একটি বইতে পড়েছিলাম, শর্ষীনার পীরসাহেব নাকি বাঙালি নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে পাকবাহিনী এবং রাজাকার আলবদরদের ভোগ করার ফতোয়া দিয়েছেন। শুনে খুব অবাক লেগেছিল। মনে মনে ভেবেছিলাম, এই ধরণের পীর সাহেবরা ইসলামের মত শান্তির ধর্মকে বদনাম করছে। পবিত্র শান্তির ধর্ম ইসলামে কোথাও কখনও এরকম কথা বলা নেই, থাকতেই পারে না। একটু বড় হলাম যখন, কোরআনের বাঙলা অনুবাদ পড়লাম, সেই সাথে বুখারী হাদিস এবং সহি মুসলিম হাদিস। পড়ে অবাক বিস্ময়ে মাথা কাজ করছিল না। অনেকদিন অনেকবার ভেবেছি, এই কি সেই মুহাম্মদ, যাকে আমি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ভাবতাম? গনিমতের মাল ভোগ, যুদ্ধবন্দী নারীকে ধর্ষণ কি আসলেই ইসলামের বিধান কিনা, সেটা একটা গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন অবশ্যই। উল্লেখ্য, কোরআন এবং হাদিস হচ্ছে সর্বকালের, সর্বসময়ের জন্য মুসলমানদের বিধান বা আইন। সেখানে যা বলা হচ্ছে, বা মুহাম্মদ ব্যক্তিগত জীবনে যা করেছেন, মুসলমানদের ঠিক সেভাবেই সেই সব করা সুন্নত বলে গণ্য।

মুহাম্মদকে সবসময়ই খুব ভাল এবং আদর্শ মানুষ বলে জেনে এসেছি। ছোটবেলায় শুনতাম মুহাম্মদ তার চরম শত্রুকেও ক্ষমা করে দিতেন। কিন্তু বাস্তবে কোরআন হাদিস পড়ার পরে সেরকম কোন ঘটনা কোথাও খুঁজেই পেলাম না। পরে জেনেছিলাম, গৌতম বুদ্ধ থেকে শুরু করে এরকম অন্য কয়েকজন মহামানবের গল্প আসলে আমরা মুহাম্মদের নামে শুনি। সেগুলো আদৌ মুহাম্মদের গল্প নয়। তাহলে আসল মুহাম্মদ কেমন ছিলেন? এই বিষয়ে কোরআন হাদিস কী বলে?

এই বিষয়গুলো ভালভাবে জানতে আমাদের নজর দিতে হবে মুহাম্মদের সবচাইতে অথেনটিক জীবনী গ্রন্থের ওপর, সেই সাথে হাদিস এবং কোরআনের আয়াতের ওপর। এবং কোরআনের আয়াতের তাফসীরগুলো, শানে নুযূল বা ব্যাখ্যার ওপর। মুহাম্মাদের জীবন নিয়ে অনেক গুরুত্বপুর্ণ লেখক জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন। তার জীবনীগ্রন্থকে সাধারণভাবে “সিরাত” গ্রন্থ বলে। সকল জীবনীগ্রন্থের মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য হলো ইবনে ইসহাক রচিত মুহাম্মাদের সর্বাধিক প্রাচীনতম নির্ভরযোগ্য জীবনী সংকলন “সিরাতে ইবনে ইসহাক” এবং তা হতে সম্পাদিত সিরাতে ইবনে হিশামআল তাবারি রচিত “সিরাতে রাসুলাল্লাহ”, ইবনে কাসির রচিত “আল-সিরাত আল-নববিয়াত”, মার্টিন লিংসের “মুহাম্মাদ : হিজ লাইফ বেজড অন দ্য আর্লিয়েস্ট সোর্সেস”, ক্যারেন আর্মস্ট্রং রচিত “মুহাম্মাদ : এ বায়োগ্রাফি অব দ্য প্রফেট” এবং “মুহাম্মাদ : এ প্রফেট অব আওয়ার টাইম”, মার্মাডিউক পিকথাল রচিত “আল আমিন : এ বায়োগ্রাফি অব প্রফেট মুহাম্মাদ”, সাম্প্রতিককালে রচিত আর্-রাহিকুল মাখতুম, বাংলা ভাষায় গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্বনবী, এয়াকুব আলী চৌধুরীর নুরনবী, মওলানা আকরম খাঁ রচিত মুস্তাফা চরিত প্রভৃতি। এই লেখাটিতে তাই সতর্কতার সাথে সব রেফারেন্স যথাসম্ভব ক্রস চেক করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বইগুলোর ডাউনলোড লিঙ্ক দেয়া হচ্ছে। নিজেরাই পৃষ্ঠা নম্বর দেখে যাচাই করে নিন। (সহায়ক গ্রন্থ লিস্ট দেখুন)

নিজের ওপর আল্লাহর কাছ থেকে ওহী নাজিল হয়েছে দাবী করার পরে নতুন ধর্ম প্রচারের পরে পরে মুহাম্মদের প্রয়োজন হয়েছিল দল ভারী করবার। সেই সময়ে নানান পৌত্তলিক ধর্ম প্রচলিত ছিল, এক এক গোত্র এক এক দেবদেবীর উপাসনা করতো। ইহুদী এবং খ্রিস্টানও ছিল প্রচুর। মুহাম্মদ ঠিকই বুঝেছিল, মানুষ সব সময়েই দুটি জিনিসের বাধ্য- লোভ আর ভয়। মুহাম্মদ দোযখের ভয় জনগণকে এমনভাবেই দেখিয়েছেন যে সেই ভয়েই অনেক দুর্বল হৃদয়ের মানুষ সাথে সাথে ইসলাম কবুল করে। একই সাথে ছিল ইসলামে যোগ দিলে অশ্লীল লাভের প্রতিশ্রুতি, বেহেশত নামক পতিতাপল্লী এবং সুরীখানায় প্রবেশাধিকার। এই দুই-লোভ এবং ভয় দেখিয়ে মানুষকে দলে টানার কাজ ভালভাবেই চলছিল সে সময়ে। সেই সময়ে সংখ্য ছোট ছোট আরব বেদুইন দস্যু দল নানা জায়গাতে ডাকাতি করে বেড়াতো। সেই সব ডাকাতদের ডাকাতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেক আরব জাতীয়তাবাদী নেতাই। কিন্তু সফল হয়েছিলেন একজন। তিনি হযরত মুহাম্মদ।

জিহাদের প্রতি আগ্রহের কারণ

মুহাম্মদের বংশ
মুহাম্মদের জন্মও হাশেমী বংশে, কোরআইশদের মধ্যে হাশেমীরা ছিলেন বেশ সম্ভ্রান্ত বংশ।

আপনারা জানেন যে মুহাম্মদ ইসলাম ধর্মের ঘোষনা দেয়ার পরে তার দলে বেশ কিছু মানুষ যোগ দেয় এবং বিপুল পরিমাণে মানুষ তার প্রচারিত ধর্মের বিরোধীতা করে। বিরোধীতার প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্য ছিল রাজনৈতিক। সে সময়ে আরবের মক্কায় দুটো গ্রুপ শক্তিশালী ছিল, একটা গ্রুপের সদস্য মুহাম্মদ নবী হবার দাবী করায় অন্য গ্রুপটি নিজেদের কর্তৃত্ব হারাবার ভয়ে মুহাম্মদের প্রবল বিরোধীতা করে। সে সময়ে মুহাম্মদের প্রবর্তিত ইসলাম এবং সে সময়ের আরবের প্যাগান, খৃষ্টান এবং ইহুদীদের ভেতরে বেশ কিছু যুদ্ধ হয়। কোনও কোনও সময়ে মুহাম্মদের দল জয়লাভ করে, কোনও কোনও সময়ে কুরাইশরা বা বিধর্মীরা।

নতুন প্রচারিত ধর্মে যোগদানের জন্য মুহাম্মদকে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে, আল্লাহর নামে তিনি তার গ্রন্থ কোরআনে বলেছেন যে ইসলামের পথে জিহাদ করলে স্বর্গে অসংখ্য (৭২+) হুর গেলমান পাওয়া যাবে, দুধের সমুদ্র থেকে শুরু করে মদের নদী এমন কিছু নাই যে মুহাম্মদ লোভ দেখান নি। এ সকলই নতুন প্রবর্তিত ধর্মে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য। পরকালে নানা ধরণের সুখ সুবিধার কথা বলে মুহাম্মদ ক্রমশ দল ভারী করতে শুরু করেছিল। মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে শুধুমাত্র গনিমতের মাল ভোগের বিধান না থাকলেই এতো দ্রুত মুহাম্মদের সেনাবাহিনী খুব বেশি বৃদ্ধি পেতো না। নানা জায়গা থেকে ছোট ছোট দস্যু এবং ডাকাত দল জানতে পেরেছিল যে, নবী মুহাম্মদ একটা সেনাবাহিনী গঠন করেছে। যেই সেনাবাহিনী ছোট ছোট বাণিজ্য কাফেলা লুট করছে, ইহুদী গোত্রগুলোকে আক্রমণ করছে, এবং তাদের মালপত্র, স্ত্রী কন্যাদের গনিমতের মাল হিসেবে ভাগ করে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, জিহাদ করে মারা গেলে মুহাম্মদ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ৭২টি হুর, সেই হুর নামক বেশ্যারা এত্ত সুন্দরী যে, খোদ কোরআনেই তাদের রূপযৌবন বর্ণনা করা হচ্ছিল। হাদিসেও অসংখ্যবার সেইসব হুরের স্তন আর চিরঅক্ষত যোনীর লোভ দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলে গনিমতের মাল, মারা গেলে ৭২ খানা বেশ্যা। আরব বর্বর দস্যুদের সবচাইতে কামনার বস্তু। সে কারণে মুহাম্মদ খুব দ্রুত তার দলে অসংখ্য লোক ভিড়াতে সক্ষম হন।

কুরাইশ বা বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধে গনিমতের মাল বা যুদ্ধে শত্রু সম্পত্তি ভোগ এবং দখলকে কেন্দ্র করে জিহাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিল। কিছু মানুষ মুহাম্মদের কাছে জানতে চাইলো যুদ্ধে মৃত শত্রুর ফেলে যাওয়া সম্পদ, স্ত্রী, শিশু, বাচ্চাকাচ্চা, বৃদ্ধ মা বাবা, উট, অর্থ এগুলো ভোগ করা যাবে কিনা? আসুন দেখি আমাদের মানবতার মহান পূজারী মুহাম্মদ এ সম্পর্কে কি বলেছেন! বেশ কিছু সাহাবী মুহাম্মদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলো যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমতের মালের মধ্যে নারীদের ধর্ষণ করা জায়েজ কিনা। পরম করুনাময় আল্লাহ্‌ তায়ালা সাথে সাথে ওহী লাজিল করে বসলেন।

মা মালাকাত আইমানুকুম বা দাসী

ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে পরিষ্কারভাবে মালিকানাধীন দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক হালাল করা হয়েছে। দাসদাসীদের কেনাবেচা, যুদ্ধবন্দী নারী হিসেবে দাসী গ্রহণ করা, এগুলো সবই ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হালাল। 

আরবের হেরেমে বন্দী নারীগণ

সূরা মুমিনুন আয়াত ৫,৬

যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংরক্ষণ করে
Taisirul Quran
যারা নিজেদের যৌনাংগকে সংযত রাখে 
Sheikh Mujibur Rahman
আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী
Rawai Al-bayan
আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে রাখে সংরক্ষিত (১),
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত, কারণ এ ক্ষেত্রে তারা নিন্দা থেকে মুক্ত।
Taisirul Quran
নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবেনা।
Sheikh Mujibur Rahman
তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না।
Rawai Al-bayan
নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এতে তারা হবে না নিন্দিত (১),
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এবারে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে এর তাফসীরও পড়ে নিই,

ইসলাম
ইসলাম
ইসলাম

সুরা আল-মা’আরিজ আয়াত ২৯,৩০

যারা নিজেদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে
Taisirul Quran
এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
Sheikh Mujibur Rahman
আর যারা তাদের যৌনাংগসমূহের হিফাযতকারী।
Rawai Al-bayan
আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গসমূহের হিফাযতকারী (১),
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া, কেননা তাতে তারা তিরস্কৃত হবে না,
Taisirul Quran
তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্র ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবেনা –
Sheikh Mujibur Rahman
তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে সে দাসীগণের ক্ষেত্র ছাড়া। তাহলে তারা সে ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হবে না।
Rawai Al-bayan
তাদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না—
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

সুরা আল-আহযাব আয়াত ৫০

হে নবী (সা.)! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের মোহরানা তুমি প্রদান করেছ; আর বৈধ করেছি আল্লাহ ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ) হিসেবে তোমাকে যা দান করেছেন তার মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে, আর তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, তোমার মামার কন্যা ও তোমার খালার কন্যাকে যারা তোমার সঙ্গে হিজরাত করেছে। আর কোন মু’মিন নারী যদি নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করে আর নবী যদি তাকে বিয়ে করতে চায় সেও বৈধ, এটা মু’মিনদের বাদ দিয়ে বিশেষভাবে তোমার জন্য যাতে তোমার কোন অসুবিধে না হয়। মু’মিনগণের জন্য তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার তা জানা আছে। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Taisirul Quran
হে নাবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের মোহর তুমি প্রদান করেছ এবং বৈধ করেছি ‘ফায়’ হিসাবে আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তন্মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে এবং বিয়ের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে দেশ ত্যাগ করেছে এবং কোন মু’মিনা নারী নাবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে, এবং নাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও বৈধ। এটা বিশেষ করে তোমারই জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। মু’মিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীদের সম্বন্ধে যা আমি নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Sheikh Mujibur Rahman
হে নবী, আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ, আর আল্লাহ তোমাকে ফায়* হিসেবে যা দিয়েছেন তন্মধ্যে যারা তোমার মালিকানাধীন তাদেরকেও তোমার জন্য হালাল করেছি এবং (বিয়ের জন্য বৈধ করেছি) তোমার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে, আর কোন মুমিন নারী যদি নবীর জন্য নিজকে হেবা** করে, নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও তার জন্য বৈধ। এটা বিশেষভাবে তোমার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; আমি তাদের ওপর তাদের স্ত্রীদের ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তাদের ব্যাপারে যা ধার্য করেছি তা আমি নিশ্চয় জানি; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। * ‘ফায়’ হচ্ছে বিনা যুদ্ধে লব্ধ কাফিরদের সম্পদ।
Rawai Al-bayan
হে নবী! আমরা আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীগণকে, যাদের মাহর আপনি দিয়েছেন এবং বৈধ করেছি ফায় হিসেবে আল্লাহ আপনাকে যা দান করেছেন তাদের মধ্য থেকে যারা আপনার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে। আর বিয়ের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা আপনার সঙ্গে হিজরত করেছে এবং এমন মুমিন নারীকে (বৈধ করেছি) যে নবীর জন্যে নিজেকে সমৰ্পণ করে, যদি নবী তাকে বিয়ে করতে চায়— এটা বিশেষ করে আপনার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; যাতে আপনার কোনো অসুবিধা না হয়। আমরা অবশ্যই জানি মুমিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীগণ সম্বন্ধে তাদের উপর যা নির্ধারিত করেছি (১)। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

সুরা নিসা আয়াত ২৪

নারীদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নারীগণও তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, কিন্তু তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের বাদে, আল্লাহ এসব ব্যবস্থা তোমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন। তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ নারীদের ছাড়া অন্যান্য সকল নারীদেরকে মোহরের অর্থের বদলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। অতঃপর তাদের মধ্যে যাদের তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে তাদের ধার্যকৃত মোহর প্রদান কর। তোমাদের প্রতি কোনও গুনাহ নেই মোহর ধার্যের পরও তোমরা উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে মোহরের পরিমাণে হেরফের করলে, নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।
Taisirul Quran
এবং নারীদের মধ্যে বিবাহিতগণ তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু তোমাদের ডান হাত যাদের অধিকারী – আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদেরকে বিধিবদ্ধ করেছেন, এতদ্ব্যতীত তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে অন্যান্য নারীদের; তোমরা স্বীয় ধনের দ্বারা ব্যভিচারের উদ্দেশ্য ব্যতীত বিবাহ করার জন্য তাদের অনুসন্ধান কর; অনন্তর তাদের দ্বারা যে ফল ভোগ করবে তজ্জন্য তাদেরকে তাদের নির্ধারিত দেয় প্রদান কর এবং কোন অপরাধ হবেনা যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পর সম্মত হও, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়।
Sheikh Mujibur Rahman
আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে সধবাদেরকে। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসীগণ) তারা ছাড়া। এটি তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে চাইবে বিবাহ করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
Rawai Al-bayan
আর নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী (১) ছাড়া সব সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এগুলো আল্লাহর বিধান। উল্লেখিত নারীগণ ছাড়া অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিয়ে করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ তাদের নির্ধারিত মাহ্‌র অর্পণ করবে (২)। মাহ্‌র নির্ধারণের পর কোনো বিষয়ে পরস্পর রাযী হলে তাতে তোমাদের কোনো দোষ নেই (৩)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

দক্ষিণহস্ত বা মালিকানাভূক্ত বলতে কি বুঝায় নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। ডান হাত বলতে বুঝায় শক্তি প্রয়োগে প্রাপ্ত। ডান হাত শক্তি বা তলোয়ারের প্রতীক এটা নিশ্চয়ই জানা থাকার কথা। কোরআনের বাঙলা অনুবাদে ইদানীং এই আয়াতগুলোকে একটু বদলে দেয়া হচ্ছে। ভালভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন। অবশ্য তাফসীরগুলোতে বেশ খোলামেলা ভাবেই এই বিষয়ে সব বলা রয়েছে।

আরবে নারী কেনাবেচা

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় জালালাইনের তাফসীরকারকদ্বয় বলেন- “অর্থাৎ, যাদেরকে তারা যুদ্ধের ময়দানে আটক করেছে, তাদের সাথে সহবাস করা তাদের জন্যে বৈধ, যদি তাদের স্বামীগণ দারুল হরবে জীবিতও থাকে”। উল্লেখ্য,দারুল হরব অর্থ- অমুসলিম রাষ্ট্র বা দেশ।অর্থাৎ স্বামী জীবিত আছে, এমন যুদ্ধবন্দীও ধর্ষণের উপযোগী।
দক্ষিন হস্তের অধিকার বলতে বোঝায় ক্রীতদাস বা দাসী (স্লেভস কিংবা মেইডস), যা যুদ্ধবন্দী হিসেবে কিংবা বাজার হতে ক্রয়সূত্রে মুসলমানদের দখলে আসে। ক্রীতদাসী মুসলমানদের দখলে যেভাবেই হোক আসলে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ বা হালাল। বর্তমান যুগেও যদি কোন কাফেরদের দেশ মুসলমানদের অধিকারে আসে, এই নিয়ম পালন করা বৈধ বা সম্পূর্ণ হালাল। কারণ কোরআন রোজ কেয়ামত পর্যন্ত যেমন আছে তেমনই থাকবে, কোরআনের কোনও আয়াত পালটাবার, বা সময়ের প্রয়োজনে তা সংশোধন করার অনুমতি কাউকেই দেয়া হয় নি। সুরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর পড়ে নিই তাফসীরে জালালাইন থেকে ।

সুরা নিসা আয়াত ২৪
যুদ্ধবন্দী গনিমতের মাল

কোরআনের এই আয়াতটির তাফসির আমরা পড়তে পারি ইবনে কাসীরের প্রখ্যাত তাসফির গ্রন্থ থেকে। [7]

তাফসির ইবনে কাত্থির খণ্ড ৪,৫,৬,৭ পৃষ্ঠা ৩৪৩

এর আরো ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে পরবর্তী হাদিস সমূহ থেকে।

দাসী সঙ্গম করতেন খোদ নবী মুহাম্মদ

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, মুহাম্মদ নিজে কী দাসীদের সাথে যৌন সঙ্গম করতেন? এই বিষয়ে জানার জন্য নিচের হাদিসগুলো পড়া প্রয়োজন। নিচের হাদিসটি পাবেন সূনান নাসাঈ (ইফাঃ) খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ১০৬ তে ।

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার (كتاب عشرة النساء)
হাদিস নাম্বার: 3961
৩৯৬১. ইবরাহীম ইবন ইউনুস ইবন মুহাম্মাদ হারামী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি বাদি ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে লেগে থাকলেন। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক নাযিল করেনঃ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ) “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীমঃ ১) ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তাহক্বীকঃ সহীহ।

মুহাম্মদের দাসী ভোগ

এই দাসীটি হচ্ছে মারিয়া কিবতিয়া, যার গর্ভে নবী মুহাম্মদের একটি সন্তানও জন্ম নিয়েছিল। সেও একজন যুদ্ধবন্দী ছিলেন বলে জানা যায়। এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পাবেন এই লেখাটিতে। । 

ইসলাম

জিহাদ এবং গনিমতের মাল

ইসলামের জিহাদের মূল কনসেপ্ট বোঝার জন্য শুরুতেই সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতটির তাফসীর পড়ে নিই। এই তাফসীরটি আপনারা পাবেন তাফসীরে মাযহারী পঞ্চম খণ্ডে। এখানে তাফসীরে মাযহারীর সব খণ্ডের ডাউনলোড লিঙ্ক দেয়া হলো। আগ্রহী পাঠকগণ ডাউনলোড করে নিতে পারেন। উল্লেখ্য, তাফসীরে মাযহারী কোরআনের ১৩ তম শতাব্দীর তাফসির গ্রন্থ। হানাফী মাযহাবের একনিষ্ঠ অনুসারী বিশ্ববিখ্যাত সুন্নি ইসলামী পন্ডিত আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথীর লেখা এই তাফসীর কোরআনকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 

ইসলাম
ইসলাম
ইসলাম
ইসলাম

এবারে আসুন কোরআনের আরো কিছু আয়াত লক্ষ্য করি। অনুবাদ পড়ি দারুস সালাম প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বাংলা তাসফির কুর’আনুল কারিম – অনুবাদঃ প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান থেকে। (সহায়ক গ্রন্থ ৮)

But (now) enjoy what ye took in war (booty), lawful and good; but fear God
সুরা আনফাল আয়াত ৬৯

গনিমত

“when you meet the unbelievers, strike off their heads; then when you have made wide Slaughter among them, carefully tie up the remaining captives” [12]
অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।
সুরা মুহাম্মদ আয়াত ৪

কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করো

উপরের ৪ এবং ৭ নম্বর আয়াত দুটো মন দিয়ে পড়ুন। আল্লাহ পাক বান্দাদের সাহায্য চাচ্ছেন, কাফেরদের হত্যা করার জন্য। কী হাস্যকর! মহাবিশ্বের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহ পাকের কী করুন অবস্থা! মহান করুণাময় আল্লাহ তালাহ মুমিন বান্দাদের উৎসাহ দিচ্ছেন অবিশ্বাসীদের কল্লা ফেলতে, এবং তাদের মধ্য থেকে বন্দীদের টাইট করে বাধতে, দাস বানাতে!

যুদ্ধবন্দী নারী ভোগের হাদিস সমূহ

নিচের হাদিসটি পড়ুন। ইসলামে অতর্কিত আক্রমণ সম্পূর্ণ বৈধ, একইসাথে তাদের নারী শিশুদের বন্দী করাও ইসলামে সম্পূর্ণ জায়েজ। এইসব সহিহ হাদিসকে অস্বীকার করলে ইমানই থাকবে না ।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু ‘আউন (রহঃ)

অতর্কিত আক্রমণ
নারী ধর্ষণ

যুদ্ধবন্দী হিসেবে যেই সকল নারীদের জিহাদিগণ হস্তগত করতো, দেখা যেতো, যুদ্ধের ময়দানেই তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো মুহাম্মদের অনুসারীগণ। যুদ্ধ বা অতর্কিত আক্রমণে নারী এবং অলঙ্কার দেখলে উম্মত হয়ে উঠতো মুহাম্মদের জিহাদীগণ, তাদের আর আটকে রাখা যেতো না। এমনকি, নারীগণ দৌড়ে পালাতে চাইলে তাদের পেছনেই ধাওয়া করতো জিহাদীরা।

নিচের হাদিসটি পড়ুনঃ

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছেদঃ ২১৭৯. উহুদ যুদ্ধ। মহান আল্লাহর বাণীঃ (হে রাসুল!) স্মরণ করুন, যখন আপনি আপনার পরিজনবর্গের নিকট হতে প্রত্যুষে বের হয়ে যুদ্ধের জন্য মু’মিনদেরকে ঘাঁটিতে স্থাপন করেছিলেন। এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ (৩ঃ ১২১) আল্লাহ্‌র বাণীঃ তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী, যদি তোমরা মু’মিন হও। যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে তবে অনুরূপ আঘাত তাদেরও তো (বদর যুদ্ধে) লেগেছে। মানুষের মধ্যে এ দিনগুলোর পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই, যাতে আল্লাহ্‌ মু’মিনদেরকে জানতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কতককে শহীদরূপে গ্রহন করতে পারেন এবং আল্লাহ্‌ জালিমদের পছন্দ করেন না। আর যাতে আল্লাহ্‌ মু’মিনদের পরিশোধন করতে পারেন এবং কাফিরদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেন। তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যখন আল্লাহ্‌ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল তা এখনো জানেন না? মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে তোমরা তা কামনা করতে, এখন তো তোমরা তা স্বচক্ষে দেখলে! (৩ঃ ১৩৯-১৪৩) মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ আল্লাহ্‌ তোমাদের সাথে তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন যখন তোমরা আল্লাহ্‌র অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিনাশ করেছিলে, যে পর্যন্ত না তোমরা সাহস হারালে এবং (রাসুল (সাঃ) এর) নির্দেশ সম্বন্ধে মতভেদ সৃষ্টি করলে এবং যা তোমরা ভালবাস তা তোমাদেরকে দেখাবার পর তোমরা অবাধ্য হলে। তোমাদের কতক ইহকাল চেয়েছিল এবং কতক পরকাল চেয়েছিল। এরপর তিনি পরিক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে তাদের থেকে ফিরিয়ে দিলেন। অবশ্য তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল (৩ঃ ১৫২) মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ যারা আল্লাহ্‌র পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা কখনো মৃত মনে করো না বরং তারা জীবিত এবং তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত (৩ঃ ১৬৯)
৩৭৪৮। উবায়দুল্লাহ্‌ ইবনু মূসা (রহঃ) … বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঐ দিন (উহুদ যুদ্ধের দিন) আমরা মুশরিকদের মুকাবিলায় অবতীর্ণ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ‌ (ইবনু জুবাইর) (রাঃ) কে তীরন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে তাদেরকে (নির্ধারিত এক স্থানে) মোতায়েন করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা আমাদেরকে দেখ যে, আমরা তাদের উপর বিজয় লাভ করেছি, তাহলেও তোমরা এখান থেকে সরবে না। অথবা যদি তোমরা তাদেরকে দেখ যে, তারা আমাদের উপর জয় লাভ করেছে, তাহলেও তোমরা এই স্থান পরিত্যাগ করে আমাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসবে না। এরপর আমরা তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে তারা পালাতে আরম্ভ করল। এমনকি আমরা দেখতে পেলাম যে, মহিলাগণ দ্রুত দৌড়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা বস্ত্র পায়ের গোছা থেকে টেনে তুলছে, ফলে পায়ের অলংকারগুলো পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ছে। এ সময় তারা (তীরন্দাজ বাহিনীর লোকরা) বলতে লাগলেন, এই গনীমত-গনীমত! তখন আবদুল্লাহ‌ (ইবনু জুবাইর (রাঃ)) বললেন, তোমরা যেন এ স্থান না ছাড় এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা এ কথা অগ্রাহ্য করল।
যখন তারা এ কথা অগ্রাহ্য করল, তখন তাদের রোখ ফিরিয়ে দেয়া হল এবং শহীদ হলেন তাদের সত্তর জন সাহাবী। আবূ সুফিয়ান একটি উঁচু স্থানে উঠে বলল, কাওমের মধ্যে মুহাম্মদ জীবিত আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন উত্তর দিওনা। সে আবার বলল, কাওমের মধ্যে ইবনু আবূ কুহাফা (আবূ বকর) বেঁচে আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন জবাব দিও না। সে পুনরায় বলল, কওমের মধ্যে ইবনুল খাত্তাব কি জীবিত আছে? তারপর সে বলল, এরা সকলেই নিহত হয়েছে। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই জবাব দিত। এ সময় উমর (রাঃ) নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। যে জিনিসে তোমাকে লাঞ্ছিত করবে আল্লাহ তা বাকি রেখেছেন।
আবূ সুফিয়ান বলল, হুবালের জয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা তার উত্তর দাও। তারা বললেন, আমরা কি বলব? তিনি বললেন, তোমরা বল- اللَّهُ أَعْلَى وَأَجَلُّ ‘আল্লাহ সুমন্নত ও মহান’। আবূ সুফিয়ান বলল لَنَا الْعُزَّى وَلاَ عُزَّى لَكُمْ‏ আমাদের উয্‌যা আছে আছে, তোমাদের উয্‌যা নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার জবাব দাও। তারা বললেন, আমরা কি জবাব দেব? তিনি বললেন, বল- اللَّهُ مَوْلاَنَا وَلاَ مَوْلَى لَكُمْ ‘আল্লাহ আমাদের অভিভাবক, তোমাদের তো কোনো অভিভাবক নেই’। পরিশেষে আবূ সুফিয়ান বলল, আজকের দিন বদর যুদ্ধের বিনিময়ের দিন, যুদ্ধ কূপ থেকে পানি উঠানোর পাত্রের মত (অর্থাৎ একবার এক হাতে আরেকবার অন্য হাতে) (যুদ্ধের ময়দানে) তোমরা নাক-কান কাটা কিছু লাশ দেখতে পাবে। আমি এরূপ করতে আদেশ করিনি। অবশ্য আমি এতে অসন্তুষ্টও নই। আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলা শরাব পান করেছিলেন।* এরপর তাঁরা শাহাদাত বরণ করেন।
* তখন পর্যন্ত শরাব পান করা হারাম ঘোষিত হয়নি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ বারা’আ ইবনু আযিব (রাঃ)

যুদ্ধাভিযান

একটা ক্ষেত্রে মুহাম্মদের প্রশংসা করতেই হয় যে, তিনি এই ভয়াবহ বিকৃতরুচির জিহাদিদের উন্মত্ততা দেখে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অন্ততপক্ষে গর্ভবতী নারীদের ওপর যেন জিহাদিগণ হামলে না পরেন। পড়ুন নিচের হাদিসগুলো– 

গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
১৫৪. আমর ইবন আওন …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে তার সন্তান প্রসবের আগে এবং কোন রমনীর সাথে তার হায়েয হতে পবিত্র হওয়ার পূর্বে সহবাস করবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
২১৫৫. আন- নুফায়লী ….. রুওয়াইফি’ ইবন সাবিত আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তিনি (রুওয়াইফি’) আমাদের মধ্যে খুতবা প্রদানের সময় দন্ডায়মান হয়ে বলেন, আমি তোমাদেরকে তা-ই বলব, যা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি হুনায়নের (যুদ্ধের) সময় বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, সে যেন অন্যের খেতে পানি সেচ না করে অর্থাৎ অন্যের গর্ভবতী কোন নারীর সাথে সহবাস না করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, তার জন্য কোন বন্দিনী গর্ভবতী নারীর সাথে সহবাস করা বৈধ নয়, যতক্ষণ সে সন্তান প্রসব করে পবিত্র না হয়। আরো বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্য গণীমতের মাল বণ্টনের আগে বিক্রয় করা হালাল নয়।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ রুয়ায়ফি ইবন সাবিত (রাঃ)

বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস
যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে সহবাস

এবারে সহিহ মুসলিম গ্রন্থ থেকে আরেকটি হাদিস পড়ি ।

সহিহ মুসলিম যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস

এইরকম নির্দেশ দেয়ার কারণ বোঝার জন্য আইনস্টাইন হওয়ার দরকার হয় না। মুহাম্মদের অনুসারীগণ এতটাই উম্মত্ত ছিল গনিমতের মাল হিসেবে নারী ধর্ষণে, যে মুহাম্মদের মত মানুষকেও রীতিমত নিয়মজাড়ি করে বলে দিতে হয়েছিল যে, গর্ভবতী নারীর বাচ্চা জন্ম হওয়ার আগে তাকে ধর্ষণ করা যাবে না। তবে তাদের স্বামী যদি জীবিত থাকে, ইদ্দতের এবং বিলিবণ্টনের পরে তাদেরকে ধর্ষণ করতে মুহাম্মদ কোন বাধা দেন নি।

যুদ্ধে যেসব নারীদের বন্দী হতো, তাদের মধ্য থেকে মুহাম্মদ স্বয়ং বেশ কয়েকজনকে নিজের স্ত্রী কিংবা উপপত্নী হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকেই তিনি নিজের জন্যে রাখতেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হওয়া সহিহ বুখারী শরীফ থেকে নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন ।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৪. যুদ্ধে যে ব্যক্তি খিদমতের জন্য কিশোর নিয়ে যায়
২৬৯৪। কুতাইবা (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। তারপর আবূ তালহা (রাঃ) আমাকে তাঁর সওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমত করতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরন করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দুয়া করতে শুনতামঃ ‘ইয়া আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি।’ পরে আমরা খায়বারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। তারপর যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দুর্গের উপর বিজয়ী করলেন, তখন তাঁর কাছে সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই ইবনু আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হল, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে রওয়ানা হলেন।
আমরা যখন সাদ্দুস সাহবা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সাফিয়া (রাঃ) হায়েজ থেকে পবিত্র হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাঁর সাথে বাসর যাপন করেন। এরপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে ‘হায়সা’ (এক প্রকার খাদ্য) প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা। তারপর আমরা মদিনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পেছনের চাঁদর দিয়ে সাফিয়্যাকে পর্দা করছেন। উঠানামার প্রয়োজন হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর উপর পা রেখে উটে আরোহণ করতেন। এভাবে আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাঁকে ভালবাসি। তারপর মদিনার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ, এই কঙ্করময় দুটি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে আমি ‘হারাম’(সম্মানিত স্থান) ঘোষণা করছি। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের মুদ এবং সা’ তে বরকত দান করুন।’
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সাফিয়া

একইসাথে উল্লেখ্য, নবী মুহাম্মদ ৯ মতান্তরে ১১ জন স্ত্রীর সাথে একই দিনে বা রাতে পর্যায়ক্রমে যৌনসঙ্গম করতেন [18] ।

দাসীদের সাথে আজলের হুকুম

আরেকটি হাদিস, আজলের নিয়ম সম্পর্কিত  ।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২২. আযল এর হুকুম
৩৪৪০-(১২৯/…) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশশার, ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহিমাহুমুল্লাহ) ….. শুবাহ (রহঃ) এর সূত্রে আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে অনুরূপ সানাদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের হাদীসে রয়েছে- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযল সম্পর্কে বলেছেনঃ এ কাজ না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা এটা তাকদীরের অন্তর্গত।
রাবী বাহয এর বর্ণনায় রয়েছে যে, শুবাহ্ (রহঃ) বলেছেনঃ আমি তাকে (আনাস ইবনু সীরন) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে এ হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪১৩, ইসলামীক সেন্টার ৩৪১২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ শু’বা (রহঃ)

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২২. আযল এর হুকুম
৩৪৩৮-(১২৭/…) আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আয যুবাঈ (রহঃ) ….. আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দিনী লাভ করেছিলাম। (তাদের সাথে) আমরা ‘আযল করছিলাম। এরপর আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাদের বললেন, অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। (বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন) বস্তুত কিয়ামাত পর্যন্ত যত প্রাণী সৃষ্টি হওয়ার তা সৃষ্টি হবেই।” (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪১১, ইসলামীক সেন্টার ৩৪১০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে আযল পদ্ধতিতে ধর্ষণ

আজল সম্পর্কিত শরীয়তের হুকুম সম্পর্কিত হাদিসঃ 

"আযল" সম্পর্কে শরীয়তের হুকুম
সহিহ মুসলিম যুদ্ধবন্দিনী স্ত্রীলোক
সহিহ মুসলিম ক্রীতদাসী
সহিহ মুসলিম ক্রীতদাসী সহবাস

এই হাদিসটির পরিচ্ছদ পড়ুন  –

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (2093)
অধ্যায়ঃ ২৬/ ক্রয় – বিক্রয়
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১৩৮৬. ইসতিবরা অর্থাৎ জরায়ু গর্ভমুক্ত কি-না তা জানার পূর্বে বাঁদীকে নিয়ে সফর করা। হাসান বসরী (রঃ) তাকে চুম্বন করা বা তার সাথে মিলামিশা করায় কোন দোষ মনে করেননা। ইবন উমর (রাঃ) বলেন, সহবাসকৃত দাসীকে দান বা বিক্রি বা আযাদ করলে এক হায়য পর্যন্ত তার জরায়ু মুক্ত কি-না দেখতে হবে। কুমারীর বেলায় ইসতিবরার প্রয়োজন নেই। আতা (রঃ) বলেন, (অপর কর্তৃক) গর্ভবতী নিজ দাসীকে যৌনাঙ্গ ব্যতীত ভোগ করতে পারবে। মহান আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত বাঁদী ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবেনা.…..। (২৩:৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

জরায়ু গর্ভমুক্ত কিনা


বাঁদীর সাথে আজলে অনুমতির প্রয়োজন নেই

এখন আসুন সহিহ বুখারীর সপ্তম খণ্ড থেকে পড়ি আজলের নিয়ম কানুন। এখানে সহিহ বুখারী হাদিসের লিঙ্ক দেয়া হলো, যে কেউ ৩৮৩২ নম্বর হাদিসের নিচে কী লেখা তা ডাউনলোড করে পড়তে পারেন । লক্ষ্য করুন, হাদিসবিডিডট কমে আজলের টিকাটি ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্ত করা হয় নি।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছেদঃ ২১৯৬. বনূ মুসতালিকের যুদ্ধ। বনূ মুসতালিক খুযা’আর একটি শাখা গোত্র। এ যুদ্ধ কে মুরায়সীর যুদ্ধ ও বলা হয়। ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেছেন, এ যুদ্ধ ৬ষ্ঠ হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছে। মুসা ইবন উকবা (র) বলেছেন, ৪র্থ হিজরী সনে। নুমান ইবন রাশিদ (র) যুহরী (র) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইফকের ঘটনা মুরায়সীর যুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল।
৩৮৩২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু মুহায়রীয (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে প্রবেশ করে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম এবং তাকে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বানূ মুসতালিকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ যুদ্ধে আরবের বহু বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে খায়েস হল এবং বিবাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রীহীন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। তাই আমরা আয্‌ল করা পছন্দ করলাম এবং তা করার মনস্থ করলাম। তখন আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান। এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস না করেই আমরা আযল করতে যাচ্ছি। আমরা তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এরুপ না করলে তোমাদের ক্ষতি কি? জেনে রাখ, কিয়ামত পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনে মুহায়রীয (রহঃ)

আজল
নবী দাসী সঙ্গম করতে উৎসাহ দিতেন

এবারে এই বিষয়ে ইসলামিক স্কলার শায়েখ আহমদুল্লাহর বক্তব্য শুনে নিই- ( দাসীর সাথে আজল করা বিষয়ে- শায়েখ আহমদুল্লাহ )

যুদ্ধবন্দীদের সাথে আজলের কারণ

আজকাল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মুসলিমই এইসমস্ত বর্বর অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বলতে থাকেন, পরিবার পরিজনহীন অসহায় নারীরা কোথায় যাবে, কী করবে, সেই কারনে দয়াল নবী বাধ্য হয়ে তাদের বন্দী করে দাসী বানিয়ে সাহাবীদের ভোগ করতে দিতেন! এই সব নির্লজ্জ কথা বলতে তাদের একটুও সংকোচ হয় না। কিন্তু হাদিস থেকে জানা যায়, যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে সহবতই ছিল নবীর দলবলের প্রধান উদ্দেশ্য। নিচের হাদিসটি পড়লে সেটি স্পষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্য করে পড়ুন, বস্ত্র উন্মোচন করি নি, কথাটি নবীর সামনে কত স্বাভাবিকভাবেই না বলছেন এই সাহাবী, [26]

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১৪. নফল (বিশেষ পুরস্কার ও অনুদান) হিসাবে কিছু দেওয়া এবং বন্দীদের বিনিময়ে (আটকে পড়া) মুসলমানদের মুক্ত করা
৪৪২১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … ইয়াস ইবন সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমরা ফাযারা গোত্রের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের আমীর ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আমাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন যখন আমাদের এবং (গোত্রের) পানির স্থানের মাঝে এক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান ছিল, তখন আবূ বাকর (রাঃ) আমাদেরকে শেষ রাতের অবতরণের (বিশ্রামের) নির্দেশ দিলেন। সুতরাং আমরা রাতের শেষাংশেই সেখানে অবতরণ করলাম। এরপর বিভিন্ন দিক দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালালেন এবং পানি পর্যন্ত পৌছলেন। আর যাদের পেলেন হত্যা করলেন এবং বন্দী করলেন।
আমি লোকদের একটি দলের দিকে দেখছিলাম যাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছে। আমি আশংকা করছিলাম যে, তারা হয়তো আমার আগেই পাহাড়ে পৌছে যাবে। অতএব, আমি তাদের ও পাহাড়ের মাঝে তীর নিক্ষেপ করলাম। তারা যখন তীর দেখতে পেল থেমে গেল। তখন আমি তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে এলাম। তাদের মাঝে চামড়ার পোশাক পরিহিত বনী ফযরার একজন মহিলাও ছিল এবং তার সঙ্গে ছিল তার এক কন্যা। সে ছিল আরবের সব চাইতে সুন্দরী কন্যা। আমি সকলকেই হাকিয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে নিকট এলাম। আবূ বকর (রাঃ) কন্যাটিকে আমাকে নফল হিসাবে প্রদান করলেন।
এরপর আমি মদিনায় ফিরে এলাম। আমি তখনও তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরে বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার খবুই পছন্দ হয়েছে এবং এখনও আমি তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরের দিন আবারও বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। “আল্লাহ তোমার পিতাকে কতই সুপুত্র দান করেছেন।” তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে আপনার জন্যই আল্লাহর কসম! আমি তার বস্ত্র উমোচন করিনি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কন্যাটিকে মক্কায় পাঠিয়ে দিয়ে তার কয়েকজন মুসলমানের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন, যারা মক্কায় বন্দী ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়াহ (রহঃ)

জিহাদিদের উন্মত্ত ধর্ষণপ্রক্রিয়ার ফলে যদি বন্দিনীটির গর্ভসঞ্চার হয় তাহলে কী হবে? অনেক জিহাদিই চাইতো না যে তাদের সেক্স-মেশিনটি তাড়াতাড়ি গর্ভসঞ্চার করে বসুক, সুতরাং তারা আজল(আজল সম্পর্কে জানতে গুগল করুন) করতো। এই প্রথা সম্পর্কে মুহম্মদের মনোভাব ছিল ঘোলাটে, কখনও তাকে এই প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়, কখনও বা তাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। কিন্তু কোথাও সেই যুদ্ধবন্দিনীকে সাথে সাথে মুক্তি দিতে বলতে দেখা যায় না। সেই যুদ্ধবন্দিনীর সাথে আজল পদ্ধতিতে সেক্স করলো কি করলো না সেটা মহামানব মুহাম্মদের কাছে এত গুরুত্ত্বপূর্ণ, অথচ সেই যুদ্ধবন্দিনীটি মোটেও গুরুত্ত্বপূর্ণ নয়?একজন মহামানবের কাছ থেকে যদি আমি আশা করে থাকি, যে তিনি এই কথা শোনার সাথে সাথে ঐ জেহাদীর বিচারের ব্যাবস্থা করবেন, এবং সেই যুদ্ধবন্দিনীকে তৎক্ষণাত মুক্তি দেবেন, তাহলে কি খুব বেশি আশা করা হয়ে যায়?

আসুন নিচের হাদিসটি পড়ি। এখানে দেখা যাচ্ছে, সাফিয়্যা আরেকজন সাহাবীর ভাগে পড়েছিল, যাকে নবী পছন্দ করে নিজে নিয়ে নেন। হাদিসটির বাকি অংশে বর্ণনা করা হচ্ছে, আজল করার কারণ [27] !

সাফিয়্যা

বন্দীনী নারীগণ যেন দ্রুত গর্ভবতী না হয়ে যায়, সেই দিকে মুহাম্মদের জিহাদী সৈন্যদের ছিল খুব সজাগ দৃষ্টি। নিচের হাদিসটি পড়ুন 

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
হাদিস নম্বরঃ (7409)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৯৭/১৮. আল্লাহর বাণীঃ তিনিই আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদাতা। (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/২৪)
৭৪০৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বানী মুসতালিক যুদ্ধ বিষয়ে বর্ণনা করেন যে, মুসলিমগণ যুদ্ধে কতকগুলো বন্দিনী লাভ করলেন। এরপর তাঁরা এদেরকে ভোগ করতে চাইলেন। আবার তারা যেন গর্ভবতী হয়ে না পড়ে সে ইচ্ছাও তারা করছিলেন। তাই তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আযল বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতে তোমাদের কোন লাভ নেই। কারণ আল্লাহ্ ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত জীবন সৃষ্টি করবেন, তা সবই লিখে রেখেছেন। মুজাহিদ (রহ.) কাযআ (রহ.)-এর মাধ্যমে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যত জীবন সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তা সৃষ্টি করবেনই। (২২২৯) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদিসটির বই থেকে তোলা ছবি  –

বনী মুসতালিক যুদ্ধ
যুদ্ধবন্দী গর্ভবতী

এই হাদসটির ভিন্ন অনুবাদগুলোও পড়ি,

সহি বুখারিঃ ভলিউম ৯, বুক নং-৯৩, হাদিস নং-৫০৬:
আবুসাইদ আল খুদরি থেকে বর্ণিতঃ
বানুমুস্তালিক গোত্রের সাথে যুদ্ধকালে কিছু বন্দিনী তাদের (মুসলমানদের) দখলে আসে। তারা বন্দিনীদের সাথে এমনভাবে যৌনসম্পর্ক করতে চাইল যেন মেয়েগুলি গর্ভবতী না হয়ে পড়ে। সুতরাং বাইরে বীর্যপাতের বিষয়ে নবীর নিকট জানতে চাইল তারা। নবী বলেন- “এটা না করাই বরং তোমাদের জন্যে উত্তম। কারণ আল্লাহ যাকে সৃষ্টি করবেন তা লেখা হয়ে আছে, পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত”। ক্কাজা বলেন- “আমি আবু সাইদকে বলতে শুনেছি যে নবী বলেছেন -‘আল্লাহর আদেশে আত্মার সৃষ্টি, আল্লাহর আদেশ ছাড়া কোন আত্মার সৃষ্টি হয় না”।

সহী বুখারী হাদীস #143, page-700 :Sulaiman Ibne Harb…Aannas Ibne Malek (ra) narrated, “in the war of Khaiber after the inhabitants of Banu Qurayza was surrendered, Allah’s apostle killed all the able/adult men, and he (prophet) took all women and children as captives (Ghani mateer maal).. Among the captives Safiyya Bint Huyy Akhtab was taken by Allah’s Apostle as booty whom He married after freeing her and her freedom was her Mahr.”

অর্থাৎ যুদ্ধে জেতার পরে আল্লাহ রাসুল সকল প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষকে হত্যা করলেন এবং তিনি তাদের সকল নারী এবং শিশুকে বন্দী হিসেবে নিলেন।

এবারে আসুন, সহজ নসরুল বারী গ্রন্থে থেকে এই সম্পর্কিত হাদিসের ব্যাখ্যা পড়ে নিই ।

ইসলাম
ইসলাম

জামাতেকেও নারী উপহার দিতেন মুহাম্মদ

এমনকি নিজের জামাইদেরকেও তিনি যুদ্ধবন্দিনীদের ভাগ দিতে কসুর করেননি। হযরত আলী এবং হযরত ওসমানকেও তিনি উদারভাবে মালে গনিমত বন্টন করেছেন। নিচের হাদিসটিতে দেখা যাবে, কীভাবে হযরত ফাতেমার স্বামী নবী জামাতা শেরে খোদা হযরত আলী বন্দিনীর সাথে সেক্স করছেন, যে বন্দিনীকে তিনি শ্বশুরের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন।

মহান আমাদের দয়াল নবী মুস্তফা। নিজের কন্যার স্বামীর সাথে সেক্স করার জন্য যুদ্ধবন্দিনী দিতে এখনকার আধুনিক পিতারও বুক কেঁপে উঠবে, কিন্তু সেই সময়েই দয়াল নবী তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন 

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
হাদিস নম্বরঃ (4350) অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ) (كتاب المغازى)
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬২. বিদায় হাজ্জের পূর্বে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব এবং খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ।
৪৩৫০. বুরাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে খুমুস (গানীমাতের এক-পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। (রাবী বুরাইদাহ বলেন,) আমি ‘আলী (রাঃ)-এর প্রতি অসন্তুষ্ট, আর তিনি গোসলও করেছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি তার দিকে দেখছেন না? এরপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরাইদাহ! তুমি কি ‘আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি বললাম, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেক না। কারণ খুমুসে তার প্রাপ্য এর চেয়েও অধিক আছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১২)
Narrated Buraida: The Prophet (ﷺ) sent `Ali to Khalid to bring the Khumus (of the booty) and I hated `Ali, and `Ali had taken a bath (after a sexual act with a slave-girl from the Khumus). I said to Khalid, “Don’t you see this (i.e. `Ali)?” When we reached the Prophet (ﷺ) I mentioned that to him. He said, “O Buraida! Do you hate `Ali?” I said, “Yes.” He said, “Do you hate him, for he deserves more than that from the Khumlus.”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

পাঠক লক্ষ্য করুন, যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে যৌন কর্মের পরে গোছলের কথাটিকে বাঙলায় অনুবাদ করা হয়েছে শুধু গোছল হিসেবে। যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে নবী জামাতা আলী সেক্স করতেন তা গোপন করার জন্য। খুব কৌশলে আলীর চরিত্র রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে একই হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে সেটি পাওয়া যায়।

সহি বুখারিঃ ভলিউম-৫, বুক নং-৫৯, হাদিস নং-৬৩৭:
বুরাইদা কর্তৃক বর্ণিতঃ
নবী আলীকে ‘খুমুস’ আনতে খালিদের নিকট পাঠালেন (যুদ্ধলব্ধ মালের নাম খুমুস)। আলীর উপর আমার খুব হিংসা হচ্ছিল, সে (খুমুসের ভাগ হিসেবে প্রাপ্ত একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসঙ্গমের পর) গোসল সেরে নিয়েছে। আমি খালিদকে বললাম- “তুমি এসব দেখ না”? নবীর কাছে পৌছলে বিষয়টি আমি তাকে জানালাম। তিনি বললেন- “বুরাইদা, আলীর উপর কি তোমার হিংসা হচ্ছে”? আমি বললাম-“হ্যা, হচ্ছে”। তিনি বললেন-“তুমি অহেতুক ইর্ষা করছ, কারণ খুমুসের যেটুকু ভাগ সে পেয়েছে তার চেয়ে আরও বেশী পাওয়ার যোগ্য সে”।

সহজ ইনআমুল বারী যা সহিহ বুখারীর একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ, তা থেকে এই হাদিসটির ব্যাখ্যা যা জানা যায়, তাতে পিলে চমকে ওঠে। আলী আসলে যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পিরিয়ড পর্যন্ত না হওয়া এক বালিকার সাথে সহবত করেছিল ।

শরহে বুখারী
ইনআমুল বারী হায়েজ

মহম্মদের সবচেয়ে প্রামান্য এই জীবনচরিত ইবনে ইসহাকের লেখা সিরাত এ রাসুল্লাল্লাহ (যে রচনাকে মুসলিম বিশ্বে সর্বদা রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা হয়) পাঠ করে আমরা জানতে পারি, হুনায়েনের যুদ্ধে এক বৃদ্ধাকে ছেড়ে দেওয়া হলো, কারণ তার মুখমন্ডল ছিল শীতল, বক্ষদেশ সমতল, সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ছিল না তার এবং বুকে দুধের ধারা শুকিয়ে গেছে। সুতরাং ছয়টি উটের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হলো ।

life of muhammad
বুক সমান
সীরাতে রাসুলাল্লাহ শহীদ আখন্দ প্রথমা প্রকাশনী 

বিভিন্ন ইসলামিক বক্তার ভিডিও বক্তব্য

এবারে এই ভিডিওগুলো শুনুন ( শাইখ আইনুল হুদার বয়ানে যুদ্ধবন্দী নারী ) ( যুদ্ধবন্দী নারী সম্পর্কে জাকির নায়েক ) ( Female Islamic Cleric Teaches That ‘ Enslaving and Raping Little Girls is Permissible in Islam ’ ) ( দাসী কারা হবে? )

এবারে সৌদি আরবের আরেকজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার Sheikh Assim Al Hakeem এর বক্তব্য শুনে আসি- ( ইসলাম ও দাস প্রথা – Sheikh Assim Al Hakeem )

এরকম হাজার হাজার ভিডিও দেয়া যায়, যেখানে প্রখ্যাত সব ইসলামিক স্কলারই স্বীকার করেছেন যে, ইসলামে যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে সহবাস সম্পূর্ণ হালাল। আসুন শাইখ আখতারুল আমান মাদানীর কথাও শুনে নিই- ( দাসীর সাথে সহবাস বিষয়ে ইসলাম – শাইখ আখতারুল আমান মাদানী )

ছোটবেলা ভাবতাম, এই ধরণের ইসলামী বক্তা আসলে ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানে না। না জেনেই এসব কাঠমোল্লা আজেবাজে বলে। কিন্তু আসলে কে ইসলাম সম্পর্কে জানে, আর কে জানে না, সেটা কোরআন, বুখারী আর মুসলিম হাদিস বুঝে পড়লেই পরিষ্কার হয়ে যায়।

এ এক সীমাহীন লজ্জা আর কেলেঙ্কারীর ইতিহাস। লজ্জা ঢাকার জন্য ইসলামপন্থীরা অনেকেই হয়ত বলবেন যে মুহাম্মদ বড়োই দয়ালু ছিলেন, ঐসব অসহায় তরুনীদের দুঃখ দেখে তার কোমল প্রাণ কেঁদে উঠল। তাই তিনি তাদের গ্রহন করে দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়ার হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছেন। বা মুসলিম জেহাদীদের হাতে হত্যা হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। কি বিভৎস চিন্তা, মেয়েগুলোকে কেনই বা ধরা হলো, কেনই বা এত মানবতা দেখিয়ে বিছানায় নেয়া হলো? একবার ভেবে দেখবেন, কাল ভারত কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইসরাইল বাঙলাদেশ আক্রমণ করলে, পুরুষদের হত্যা করে আমাদের নারীদের বিছানায় তুললে কী হবে? আমাদের নারীরা স্বেচ্ছায় সেই সব সৈন্যদের সাথে বিছানায় উঠে যাবে?

যুদ্ধবন্দী নারীরা কী স্বেচ্ছায় সহবত করতো?

স্বভাবতই আমি যখন ছোট ছিলাম, ভাবতাম যে, মুহাম্মদের মত একজন অত্যন্ত সম্মানিত মহামানবের কাছ থেকে এসব আচরণ পাওয়া যাবে না। আশা করেছিলাম যে তিনি এই ধরণের কোন কাজের সাথে নিজেকে জড়িত করবেন না, বরঞ্চ তার দলের কেউ এই কাজে লিপ্ত হলে তার বিচার করবেন, মানবতাবিরোধী এই কাজগুলো নিষিদ্ধ করবেন। কিন্তু হতাশ হয়ে লক্ষ্য করলাম, তিনি তার কিছুই করেন নি, বরঞ্চ নিজেই সেই কাজগুলো করে তার উম্মতদের উৎসাহিত করেছেন!

নিজেকে অনেক প্রবোধ দিয়েছিলাম এই ভেবে যে, সেই সব যুদ্ধবন্দী নারীর ভালোর জন্যেই হয়তো এরকম বিধান রাখা হয়েছিল। হয়ত যুদ্ধবন্দী নারীদের সেই সময়ে যৌন চাহিদা ছিল, তা মেটাবার জন্যেই নবী এরকম বিধান রেখেছিলেন। কিন্তু নিজেকে এই বিষয়ে বোঝানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। আসলেই? সিরিয়াসলি? একজন যুদ্ধবন্দিনী, যার বাবা ভাই থেকে শুরু করে সব আত্মীয় স্বজন নিহত হলো মুহাম্মদের জিহাদীদের হাতে, সেই নারী নিশ্চয়ই খুব আনন্দের সাথে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে মুহাম্মদের অনুসারীদের কোলে উঠে গিয়েছিল, তাই না? জিহাদীদের কাছে কাকুতিমিনতি করতে শুরু করেছিল, যেন তাদের যৌন সুখ দেয়া হয়! তাই কী? নিজেকে এরকম অদ্ভুত বুঝ দেয়ার পরে নিজের কাছেই খটকা লাগতো, নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হতো।

ইতিহাসের অন্যরা কী একই কাজ করেন নি?


হ্যাঁ, এই যুক্তি গ্রহণ করতে আমার আপত্তি নেই। মুহাম্মদ যা করেছেন, সে যুগে তাই ছিল রীতি। অনেকেই করেছেন, আলেক্সান্ডার থেকে শুরু করে হিটলার, এইদিকে ইয়াহিয়া খান- প্রায় সকলেই। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে তারা কি পরম পূজনীয় হবার যোগ্যতা রাখে কিনা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হবার যোগ্যতা রাখেন কিনা! এই আধুনিক সময়ে আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে কতগুলি খোড়া যুক্তি দিয়ে সেই বন্য রীতিকে জাষ্টিফাই করা অমানবিক। মানবতার প্রতি চরম অবমাননাকর।

গনিমতের মাল ভাগ বাটোয়ারা

কাফের রমনীদের শরীরের প্রতি মুহাম্মদের জিহাদি বাহিনীর অদম্য লোভ ছিল, লোভ ছিল বেহেশতের ৭২ টি হুরের শরীরের প্রতিও। বিষয়গুলো এতটাই বিকৃত আকার ধারণ করেছিল যে, মুহাম্মদকে মাঝে মাঝেই লাগাম টেনে ধরতে হতো। বলতে হতো, গর্ভবতী হলে যেন জিহাদিগণ তাদের ওপর চরে না বসেন। কিংবা মাসিক যাদের হয়েছে তাদের মাসিকের ব্যাথা শেষ হওয়া পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করা হয়। ইত্যাদি নানা উদাহরণ রয়েছে। ঐসব ইসলামী সৈনিকদের যৌনতাড়না এতটাই বর্বর ও ঘৃন্য ছিল যে তারা এমনকি কোনপ্রকার গোপনীয়তা অবলম্বনেরও ধার ধারত না। এমনও হয়েছে যে স্বামীদের সামনেই বন্দিনীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে জিহাদিরা।স্ত্রীকে এক নরপশু খাবলে খাচ্ছে, বন্দী স্বামী চোখ মেলে তাই দেখছে। মহানবী এটাও বলে দিয়েছেন যে, যুদ্ধবন্দী হিসেবে পাওয়া নারীর স্বামী দারুল হরবে জীবিত থাকলেও সেই সব নারী বৈধ! ভেবে দেখুন একবার! অনেক জিহাদি আবার পৌত্তলিক স্বামীটির সামনে বা স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীর উপর চড়ে বসতে দ্বিধান্বিত ছিল। ঠিক সেই সময় মহান আল্লাহ কাফের রমনীদের (বিবাহিতা হলেও) ভোগ করার অনুমতি প্রদান করে ধন্য করলেন জিহাদিদের। কিছু কিছু জিহাদি স্বামী বর্তমান থাকতেও বন্দিনীদের সাথে সেক্স করে এবং কেউ কেউ তা করতে দ্বিধাগ্রস্থ হয়।

অন্যান্য হাদিস

সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-১১, হাদিস নং-২১৫০:
আবু সাইদ আল খুদরি বলেন- “হুনায়েন যুদ্ধের সময় আল্লাহর রাসুল (দঃ) আওতাসে এক অভিযান পাঠান। তাদের সাথে শত্রুদের মোকাবেলা হলো এবং যুদ্ধ হলো। তারা তাদের পরাজিত করল এবং বন্দী করল। রাসুলুল্লাহর (দঃ) কয়েকজন অনুচর বন্দিনীদের স্বামীদের সামনে তাদের সাথে যৌনসঙ্গম করতে অপছন্দ করলেন। তারা (স্বামীরা) ছিল অবিশ্বাসী কাফের। সুতরাং মহান আল্লাহ কোরআণের আয়াত নাজেল করলেন- “সমস্ত বিবাহিত স্ত্রীগণ (তোমাদের জন্যে অবৈধ); কিন্তু তোমাদের দক্ষিন হস্ত যাদের অধিকারী (যুদ্ধবন্দিনী)- আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন”। অর্থাৎ- পিরিয়ড শেষ হলে তারা তাদের জন্যে বৈধ (৪:২৪)।

যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস বৈধ, তবে শর্ত থাকে যে তার মাসিক স্রাব শেষ গেছে কিংবা গর্ভবতী হলে তার গর্ভ খালাস হয়ে গেছে। তার যদি স্বামী থেকে থাকে, বন্দী হওয়ার পর সে বিবাহ বাতিল বলে গন্য হবে। ( কোরআন-৪:২৪, সহি মুসলিম-৮:৩৪৩২)।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৪৩২:
আবু সাইদ আল খুদরি (রাঃ) বলেছেন যে হুনায়েনের যুদ্ধকালে আল্লাহর রাসুল (দঃ) আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠান। তারা তাদের মুখোমুখি হলো এবং তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। যুদ্ধে পরাজিত করার পর কিছু বন্দী তাদের হাতে আসল। রাসুলুল্লার কিছু সাহাবি ছিলেন যারা বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইলেন, কারণ তাদের স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু বহু ঈশ্বরবাদী। তখন মহান আল্লাহ এ সম্পর্কিত আয়াতটি নাজেল করলেন- “এবং বিবাহিত নারীগণ তোমাদের জন্যে অবৈধ, তবে যারা তোমাদের দক্ষিন হস্তের অধিকারে আছে তাদের ছাড়া”।

পরাজিত শত্রুটির সামনেই তার স্ত্রীকে ভোগ করা থেকে শুরু করে, এই সবই এক এক ধরণের যৌনবিকৃতি, যার কিছু নমুনা আমরা দেখেছি একাত্তরে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। অথবা ২০০১ এ বিএনপির বিজয়ের সময়। পাঞ্জাবি এবং পাঠান সৈন্যরা একাত্তরে বাঙালি রমনীদের উপর যা করেছে, তার পুর্ণ সমর্থন মেলে এই হাদিসগুলি হতে। ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী একাত্তরে যা কিছুই করে থাকুক, ইসলামী শাস্ত্রের বাইরে কিছু করেনি। ইসলামের প্রাথমিক অভিযানগুলোতে নবীর বাহিনী ঠিক এমনটিই করত।

উপসংহার

বিজয়ীরাই ইতিহাস লেখে। ইসলামের ইতিহাসে সেই সকল কাফের নারীর কান্না স্থান পায় নি। তাদের ধর্ষণ, তাদের রক্তের ইতিহাস কোথাও নেই, কিন্তু রয়ে গেছে মুহাম্মদের জীবনী এবং হাদিস-কোরআনের আয়াতগুলো। বিজয়ীরা অনেক রাখঢাক করেই লেখে, নিজেদের অমানবিক কর্মকান্ড ঢেকে রাখার জন্য। কিন্তু তারপরেও যে সকল বিষয় লেখা রয়েছে, সেটুকুই ভয়াবহ। মুসলিমরা চাইলেও এগুলো পালটে ফেলতে পারবে না। সেই সকল হাদিস কোরআনের আয়াত সামনে আনলে আমরা কি দেখতে পাই? সেই নারীদের কান্নার দাগ সেখানে দেখা না গেলেও সহজেই বোঝা যায় সে সময় কি নারকীয় ধর্ষণ আর হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল।

কিন্তু আমাদের আধুনিক মুসলিম ভাইয়েরা বলতে শুরু করেন, সেই সকল নারীর সম্মতিতেই নাকি ছহবত হয়েছিল, ওটা মোটেও রেপ ছিল না। যেই নারীর স্বামী, সন্তান, পিতা যুদ্ধে মারা গেছে মুহাম্মদের সৈন্যদের হাতে, সেই নারীরা মুহাম্মদের অসীম বীরত্ত্বে মুগ্ধ হয়ে তাদের বিছানায় উঠে গেল, এবং ছহবত করলো, দৃশ্যটা কল্পনা করতেই কেমন যেন গা গুলিয়ে আসছে। মনে পরে যাচ্ছে পাকিদের অপপ্রচারের কথা, যে আমাদের দেশের বীরাঙ্গনারা স্বেচ্ছায় পাকিদের দেহ দান করেছিল।

ইসলামপন্থীদের সমস্যাটা বুঝি। নবী মুহাম্মদের চরিত্রকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে তাদের নানা ধরনের কথাই বলতে হয়। কারণ নবী মুহাম্মদ যুদ্ধবন্দী নারীদের নিজে বিছানায় তুলতেন, অন্যদেরও তুলতে বলতেন, বিষয়গুলো অত্যন্ত ঘিনঘিনে আর নোংরা। তারা চাইতেই পারেন নবী মুহাম্মদের চরিত্রকে ফুলের মত পবিত্র বলে প্রচার করতে। কিন্তু সত্য, তা তো স্বীকার করতেই হবে। আজকের যুগে আমরা যদি বস্তুনিষ্ঠভাবে ইতিহাসকে পর্যালোচনা না করি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

এই আজকের দিনেও যখন ইসলামপন্থীরা গনিমতের নাম দিয়ে যুদ্ধবন্দিনী ধর্ষণ করে, সেই প্রেরণা তারা কোথা থেকে পায়, সেটাই আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন। সৌদী আরবে আমাদের দেশের নারীদের পাঠানো হচ্ছে, একজন নারীও তার সম্ভ্রম নিয়ে ফিরবেন না বলেই আমি মনে করি, সেই দাসী/মহিলা শ্রমিকদের সম্ভ্রম লুটে নিতে সৌদী আরবের মুসলিমরা কোথা থেকে প্রেরণা পাচ্ছে সেটাই আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা।

ইসলামপন্থীদের মুখে হয়তো আমরা শুনবো, ১৪০০ বছর আগের ব্যাবস্থা আর বর্তমান অবস্থা এক নয়। কিন্তু আমরা তো জানি ইসলামে কোরআন এবং হাদিসে যে সকল নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যে সকল পরামর্শ দেয়া হয়েছে তা সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য। ইসলামে নতুন করে কেউ যেমন নারী নেতৃত্ব বৈধ করতে পারবে না, তেমনি এই যুদ্ধবন্দিনী/দাসী ছহবতও কেউ অবৈধ ঘোষনা করতে পারবে না। হযরত মুহাম্মদ নিজেই তার সাহাবীদের নিয়ে যা করে গেছেন, তা অবৈধ কীভাবে হয়, আমার জানা নেই।

সেই সকল কোরআন হাদিস মেনে যদি এখন শর্ষিনার পীরের মত লোকেরা আমাদের দেশের নারীদের ধর্ষণ করে, তাহলে সেই দোষ কি ইসলামের উপরেও খানিকটা বর্তায় না? যেহেতু মুহাম্মদের সমস্ত কাজই প্রত্যেক মুসলিমকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে? 

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে তাঁর প্রশংসা করে বলেন; নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের অধিকারী।
সূরা আল কলম: ৪

হে নবী! লোকদের বলে দাও। তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহসমূহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
সূরা আল-ইমরান: ৩১

মহান আল্লাপাক আমাদের নবীর জীবন অনুসরন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। নবীর জীবনই হচ্ছে একজন মুমিনের জন্য উত্তম আদর্শ। আমরা কী এই আদর্শ অনুসরণ করবো? নাকি আমাদের বিবেক?


সহায়ক গ্রন্থসমূহ

১। বাংলা তাসফির কুর’আনুল কারিম – অনুবাদঃ প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান
২। সহিহ বুখারী শরীফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন (         ১০ খণ্ড)
৩। সহিহ বুখারী তাওহীদ পাবলিকেশন্স       খণ্ড
৪। সহিহ মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন       খণ্ড
৫। সহিহ মুসলিম শরীফ (       খণ্ড)
৬। সুনানে আবু দাউদ শরীফ    
৭। সূনানু নাসাঈ শরীফ     খণ্ড
৮। তাফসীরে ইবনে কাসীর- হাফেজ আল্লামা ইমাম্মুদিন ইবনু কাসীর (রহঃ)- তাফসীর পাবলিকেশন্স ১,২,৩ ৪,৫,৬,৭ ৮,৯,১০,১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
৯। তাফসীরে ইবনে কাসীর|ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১০। তাফসীরে জালালাইন        খণ্ড (প্রতি খণ্ডের সাইজ ৪০ মেগাবাইটের কাছাকাছি)
১১। সীরাতে রাসুলুল্লাহ (স.) – ইবনে ইসহাক। অনুবাদঃ শহীদ আখন্দ প্রকাশক ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১২। Ibn Ishaq’s Sirat Rasul Allah – The Life of Muhammad Translated by A. Guillaume
১৩। সহজ ইন আমুলবারী (শরহে বুখারী মাগাযী ও তাফসীর)

প্রাসঙ্গিক লেখা

পরিপ্রেক্ষিত, প্রেক্ষাপট এবং অন্যান্য
হযরতের অনুকরণীয় সুমহান চরিত্র
স্ত্রী কি স্বামীর দাসী সেক্স বিষয়ে আপত্তি করতে পারে?
অসহায় নিরপরাধ যুদ্ধবন্দী নারী ও দাসী ধর্ষণের বৈধতা – কুরআন হাদিসের দলিল
বনূ কুরায়যা অভিযান | ইবনে হিশাম
দাস প্রথা – কুরআন হাদিসের দলিল
দাসীর উম্মে ওয়ালাদ হওয়া | আল হিদায়া
হযরতের দাসীদের বিবরণ
মারিয়া কিবতিয়া | বাঁদী পত্নী সমাচার!
সুরা তাহরীম এর তাফসির – ইবনে কাসীর
সুরা তাহরীম | তাফসীরে জালালাইন
মুহাম্মদের গুপ্তহত্যা । অবমাননার শাস্তি

লেখকের বক্তব্য

লেখাটি সম্ভবত ২০০৭/২০০৮ সাল প্রথম লেখা। সেই সময়ে রেফারেন্সগুলো সংযোজন করতে নানা ভুলত্রুটি হয়েছিল, এবং প্রচুর বানান ভুলও ছিল। পুরনো লেখা থেকে খুঁজে বের করে লেখাটি ধীরে ধীরে নতুনভাবে লেখা হয়েছে।


তথ্যসূত্রঃ
  1. সুরা মুমিনুন আয়াত ৫, ৬ 
  2. সুরা আল-মা’আরিজ আয়াত ২৯-৩ 
  3. সুরা আল-আহযাব আয়াত ৫০ 
  4. সুরা নিসা আয়াত ২৪ 
  5. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৪, ৫১৯, ৫২০ 
  6. তাফসীরে জালালাইন। ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী। প্রথম খণ্ড। পৃষ্ঠা নম্বর ৭৯৫, ৭৯৭ 
  7. তাফসীর ইবনে কাসীর। হাফেজ আল্লামা ইমাম্মুদিন ইবনু কাসীর (রহঃ)। অনুবাদঃ ড। মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান। তাফসীর পাবলিকেশন্স কমিটি। খণ্ড ৪,৫,৬,৭। পৃষ্ঠা নম্বর ৩৪৩ 
  8. সূনান নাসাঈ শরীফ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। চতুর্থ খণ্ড। পৃষ্ঠা ১০৬ 
  9. মারিয়া কিবতিয়া | বাঁদী পত্নী সমাচার
  10. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৮৫, ডাউনলোড লিঙ্ক 
  11. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৭-১২০ 
  12. সুরা মুহাম্মদ আয়াত ৪ 
  13. সহিহ মুসলিম। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। ষষ্ঠ খণ্ড। পৃষ্ঠা ১৮১। হাদিস নম্বর ৪৩৭০ 
  14. সহীহ বুখারী শরীফ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সপ্তম খণ্ড। হাদিস নম্বর ৩৭৪৮ 
  15. সুনানু আবু দাউদ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তৃতীয় খণ্ড। হাদিস নম্বর ২১৫৫ 
  16. সহিহ মুসলিম। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। পঞ্চম খণ্ড। হাদিস নম্বর ৩৪৭২ 
  17. সহিহ বুখারী । ইসলামিক ফাউন্ডেশন। পঞ্চম খণ্ড। পৃষ্ঠা ১৬৬। হাদিস নম্বর ২৬৯৪ 
  18. সহিহ বুখারী। তাওহীদ পাবলিকেশন্স। প্রথম খণ্ড। পৃষ্ঠা ১৪০, ১৪১। হাদিস নম্বর ২৬৮, ২৭০ 
  19. সহীহ মুসলিম। হাদিস একাডেমী। হাদিস নম্বর ৩৪৪০ 
  20. সহিহ মুসলিম। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। পঞ্চম খণ্ড । পৃষ্ঠা ৭৭। হাদিস নম্বর ৩৪০৮ 
  21. সহিহ মুসলিম। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। পঞ্চম খণ্ড । পৃষ্ঠা ৭৮। হাদিস নম্বর ৩৪১০ 
  22. সহিহ মুসলিম। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। পঞ্চম খণ্ড । পৃষ্ঠা ৮০। হাদিস নম্বর ৩৪১৪ 
  23. সহিহ মুসলিম। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। পঞ্চম খণ্ড । পৃষ্ঠা ৮২। হাদিস নম্বর ৩৪২০ 
  24. বুখারী শরীফ । ইসলামিক ফাউন্ডেশন। চতুর্থ খণ্ড। পৃষ্ঠা ৯১। পরিচ্ছদ ১৩৮৬ 
  25. সহিহ বুখারী । ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সপ্তম খণ্ড। পৃষ্ঠা ৬৯। হাদিস নম্বর ৩৮৩২ 
  26. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪২১ 
  27. বুখারী শরীফ । ইসলামিক ফাউন্ডেশন। চতুর্থ খণ্ড। পৃষ্ঠা ৮৯। হাদিস নম্বর ২০৮৮ 
  28. সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বর- ৭৪০৯ 
  29. বুখারী শরীফ । ইসলামিক ফাউন্ডেশন। দশম খণ্ড । পৃষ্ঠা ৫৪৯। হাদিস নম্বর ৬৯০৫ 
  30. সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, ১১ তম খণ্ড, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৫০৭, ৫০৮ 
  31. সহীহুল বুখারী। তাওহীদ প্রকাশনী। চতুর্থ খণ্ড। পৃষ্ঠা নম্বর ২১০। হাদিস নম্বর ৪৩৫০ 
  32. সহজ ইনআমুল বারী। শরহে বুখারী মাগাযী ও তাফসীর অংশ। অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মাওলানা মুহাম্মদ আলমগীর হুসাইন। মাকতাবায়ে এমদাদিয়া প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২২৭, ২২৮ 
  33. Ibn Ishaq’s Sirat Rasul Allah – The Life of Muhammad Translated by A. Guillaume 
  34. সীরাতে রাসুলাল্লাহ। অনুবাদঃ শহীদ আখন্দ। প্রথমা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৬৩৬ 
  35. সূরা আল কলম: ৪ 
  36. সূরা আল-ইমরান: ৩১ 

1 comment:

  1. পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজ মেয়ের সাথে S__x করেছে
    কে?
    উত্তরঃ ব্রম্মা।
    ২/ পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার নিজ মেয়ের সাথে S__x করেছে
    কে?
    উত্তরঃ প্রজাপতি দক্ষ।
    ৩/ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজ মায়ের সাথে S__x করে কে?
    উত্তরঃ গণেশ।
    ৪/ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজের গুরুর স্ত্রীর সাথে S__x
    করে কে?
    উত্তরঃ দেবরাজ ইন্দ্র।
    ৫/ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজ মামির সাথে S__x (লীলা)
    করেছে কে?
    উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণ।
    ৬/ জলন্ধর এর স্ত্রী বিন্দা ও শঙ্কচুরের স্ত্রী তুলসী'কে
    প্রতারিত করে S__x করেছিল কে?
    উত্তরঃ বিষ্ণু।
    ৭/ সপ্তর্ষীর সাত স্ত্রীকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়েছিল
    কে?
    উত্তরঃ অগ্নি।
    ৮/ পৃথিবীতে প্রথম একসাথে ৫ জনের সাথে S__x (Group
    S__x) করেছিলো কোন নারী?
    উত্তরঃ দ্রৌপদী।
    ৯/ পৃথিবীতে প্রথম Anal S__x করতে রাজী হয়েছিলো
    কোন নারী?
    উত্তরঃ পার্বতী।
    ১০/ পুথিবীতে একাধারে ১০০ বছর S__x করেছিল কে?
    উত্তরঃ ব্রম্মা এবং সরস্বতী (বাবা-মেয়ে)।
    এমন যেন আর না হয় সেজন্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বলা
    হয়েছে----
    "পুরুষের উচিত নয় তার মা, বোন, অথবা কন্যার সাথে
    একাকী বসা, পাছে কী হতে কী হয়"। (মনুসংহিতা ২:২১৫)

    ReplyDelete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ঋগ্বেদ ১/৯০/৯

  ওম্ শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ শং নো ভবত্বর্যমা। শং ন ইন্দ্রো বৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ॥ ঋগ্বেদ ১।৯০।৯॥ - হে সচ্চিদানন্দানন্তস্বরূপ, হে ন...

Post Top Ad

ধন্যবাদ