বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ১/৩/২৮ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

26 December, 2018

বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ১/৩/২৮

"অসতো মা সদগময় তমসো মা জ্যেতির্গময় মৃত্যোর্মামৃতং গময়।।"


অথাতঃ পবমানানামেবাভ্যারোহঃ স বৈ খলু প্রস্তোতা সাম প্রস্তোতি স যত্র প্রস্তুয়াত্তদেতানি জপেত্ । "অসতো মা সদ্গময় তমসো মা জ্যোতির্গময় মৃত্যোর্মাঽমৃতং গময়েতি" স যদাহাসতো মা সদ্গময়েতি মৃত্যুর্বা অসৎ সদমৃতং মৃত্যোমমৃতং গময়ামৃতং মা কুর্বিত্যেবৈতদাহ তমসো মা জ্যোতির্গময়েতি মৃত্যুর্বৈতমো জ্যোতিরমৃতং মৃত্যোর্মাঽমৃতং গময়ামৃতং মা কুর্বিত্যেবৈতদাহ মৃত্যোর্মাঽমৃতং গময়েতি নাত্র তিরোহিতমিবাস্তি । অথ যানীতরাণিস্তোত্রাণি তেষ্ণাত্মনেঽন্নাদ্যমাগায়েত্তস্মাদু তেষু বরং বৃণীত যং কামং কাময়েত তং স এষ এবং বিদুদ্গাতাঽঽত্মনে বা যজমানায় বা যং কামং কাময়তে তমাগায়তি তদ্ধেতল্লোকজিদেব ন হৈবালোক্যতায়া আশাস্তি য এবমেতৎ সামবেদ ॥ বৃহ০১/৩/২৮ ॥

অনুবাদ-এখন এখান থেকে পবমান মন্ত্রগুলির অভ্যারোহ (জপবিধি) বলা হয়। নিশ্চয়ই, সেই প্রস্তোতা নামক ঋত্বিক সামের প্রস্তাব আরম্ভ করে। যখন সেই প্রস্তোতা প্রস্তাব আরম্ভ করে, তখন এই বাক্যগুলি জপ করবে—
“অসতো মা সদ গময়” ১ (অসৎ থেকে আমাকে সৎ-এর দিকে নিয়ে চলো),
“তমসো মা জ্যোতির্গময়” ২ (অন্ধকার থেকে আমাকে জ্যোতির দিকে নিয়ে চলো),
“মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়” ৩ (মৃত্যু থেকে আমাকে অমৃতের দিকে নিয়ে চলো)।এই তিনটি কণ্ডিকার অর্থ বলা হয়। যে মন্ত্রটি বলে, “অসৎ থেকে আমাকে সৎ-এর দিকে নিয়ে চলো,” এর অর্থ হলো— মৃত্যুই অসৎ এবং অমৃতই সৎ। মৃত্যু থেকে আমাকে অমৃতের দিকে নিয়ে চলো, অর্থাৎ আমাকে অমৃত (অমর) করো— এই কথাই বলে। || ১ ||

আর যে মন্ত্রটি বলে, “অন্ধকার থেকে আমাকে জ্যোতির দিকে নিয়ে চলো,” মৃত্যুই অন্ধকার এবং অমৃতই জ্যোতি। মৃত্যু থেকে আমাকে অমৃতের দিকে নিয়ে চলো, অর্থাৎ আমাকে অমৃত (অমর) করো— এই কথাই বলে। || ২ ||

এবং যখন বলে, “মৃত্যু থেকে আমাকে অমৃতের দিকে নিয়ে চলো,” এতে কিছু লুকানো নেই, অর্থাৎ এর অর্থ স্পষ্টই। || ৩ ||

এখন যে অন্যান্য মন্ত্রগুলি আছে, তাতে উদ্গাতা নিজের জন্য ভোজ্যান্ন গায়। তাই সেই মন্ত্রগুলিতে বর মাঙা হয়। এইভাবে যিনি এই জ্ঞান জানেন, সেই উদ্গাতা নিজের জন্য বা যজমানের জন্য যে যে কামনা চান, সেই সেই কামনা গান করে, অর্থাৎ গানের মাধ্যমে সেই কামনা পূর্ণ করেন। নিশ্চয়ই, যিনি এইভাবে এই সাম জানেন, তিনি এই বিজ্ঞানের মাধ্যমে লোক জয় করেন। তাঁর এই আশঙ্কা (ভয়) থাকে না যে তিনি লোকের যোগ্য হবেন না। || ২৮ ||

পদার্থ- এখন প্রাণোপাসকের জন্য মন্ত্র জপের বিধি বলা হচ্ছে - (অথ+অতঃ) এখন এখান থেকে (পবমানানাম্+এব) পবমান নামের স্তোত্রগুলিরই (অ-ভ্যারোহঃ) জপবিধি বলা হচ্ছে। (বৈ+খলু) নিশ্চয়ই এতে সন্দেহ নেই যে (সঃ+প্রস্তোতা) সেই প্রস্তোতা। প্রস্তোতা নামের ঋত্বিক (সাম+প্রস্তৌতি) সামগানের আরম্ভ করে। (যত্র) যখন (সঃ+প্রস্তুযাত্) সামগানের প্রস্তাববিধির আরম্ভ করে। (তদ্) সেই সময় (এতানি জপেত্) এই বাক্যগুলি জপ করবে। এই তিনটি বাক্য হল - (অসতঃ) অসৎ থেকে (মা) আমাকে (সদ্) সৎ-এর দিকে (গময়) নিয়ে চলো। (তমসঃ) তম = অন্ধকার থেকে (মা) আমাকে (জ্যোতিঃ) জ্যোতির দিকে (গময়) নিয়ে চলো। (মৃত্যোঃ) মৃত্যু থেকে (মা) আমাকে (অমৃতম্) অমৃতের দিকে (গময়+ইতি) নিয়ে চলো। এই তিনটি বাক্য। এগুলির নিজস্ব অর্থ করা হচ্ছে - (সঃ) সেই মন্ত্র (যদ্+আহ) যা বলছে যে "অসতো মা সদ্গময়" এতে (মৃত্যু+বৈ+অসৎ) মৃত্যুই অসৎ, অর্থাৎ অসৎ শব্দের অর্থ মৃত্যু। (সৎ+অমৃতম্) সৎ শব্দের অর্থ "অমৃত"। তাহলে এই বাক্যের অর্থ হল যে (মৃত্যোঃ+মা) মৃত্যু থেকে আমাকে (অমৃতম্) অমৃতের দিকে (গময়) নিয়ে চলো। অর্থাৎ (অমৃতম্+মা+কুরু) আমাকে অমৃত=অমর করো। (ইতি+এব+এতদ্+আহ) এটাই বলছে। (তমসঃ+মা+জ্যোতিঃ+গময়+ইতি) ইত্যাদি পদগুলিরও পূর্ববৎ একই ভাব। (মৃত্যোঃ+মা+অমৃতম্+গময়) এই যে বাক্য, (অত্র) এই বাক্যে (তিরোহিতম্+ই+ন+অস্তি) কোনও অর্থ তিরোহিত=লুকানো নেই। এটি স্পষ্টই আছে। এই তিনটি মন্ত্র বা বাক্য হল। (অথ) এখন (যানি+ইতরাণি) যে অন্যান্য (স্তোত্রাণি) স্তোত্র আছে, (তেষু) সেই স্তোত্রগুলিতে উদ্গাতা (আত্মনে) নিজের জন্য (অন্নাদ্যম্) খাওয়ার যোগ্য অন্নকে (আগায়ৎ) ভালোভাবে গায়। (তস্মাদ্+উ) এই কারণে (তেষু) সেই মন্ত্রগুলিতে (বরম্+বৃণীত) বর মাগে। (যম্+কামম্+কাময়েৎ+তম্) যে যে কামনা চায় তা তা মাগে। (সঃ+এষঃ) সেই এই (এবংবিদ্) এমন জানে যে (উদ্গাতা) উদ্গাতা নামের ঋত্বিক (আত্মনে+বা) নিজের জন্য অথবা (যজমানায়+বা) যজমানের জন্য (যম্+কামম্+কাময়তে) যে যে কামনা চায় (তম্+আগায়তি) সেই সেই কামনাকে উদ্গানের মাধ্যমে পূর্ণ করে। এরপর এই বিদ্যাবিজ্ঞানের প্রশংসা করা হচ্ছে - (তৎ+ই+এতৎ) সেই এই বিজ্ঞান (লোকজিৎ+এব) লোকজিৎই, অর্থাৎ এই বিজ্ঞানের মাধ্যমে সব লোকের জয় হয়। এরপর ফল বলা হচ্ছে - (যঃ+এবম্) যে উপাসক এইভাবে (এতৎ+সাম+বেদ) এই সাম জানে, তার (অলোক্যতায়ৈ) অলোক্যতার জন্য (আশা+ন+ছ+বৈ+অস্তি) আশা কখনও নেই, কিন্তু লোক্যতাই আশা আছে, অর্থাৎ এমন উপাসকের এই ভয় নেই যে আমি কোনও লোক পাব না। ॥ ২৮ ॥
ভাষ্যম্ - খয়মৃষিণা ব্যাখ্যাতেয়ং কণ্ডিকাঽত্রৈব ॥ ২৮ ॥ ( ভাষ্য-শিব শঙ্কর শর্মা)

সরলার্থঃ অসত্য হতে আমাকে সত্যে নিয়ে যাও, অন্ধকার হতে আমাকে আলোতে নিয়ে যাও, মৃত্যু হতে আমাকে অমৃতে নিয়ে যাও। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক সবার হৃদয়, দূর হোক অজ্ঞানতার অন্ধকার।
ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থ-

এই মন্ত্রত্রয়ে যে অর্থ প্রতিপাদিত হইয়াছে, শুক্ল যজুর্ব্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণের অংশ বৃহদারণ্যক উপনিষদের প্রথম অধ্যায় তৃতীয় ব্রাহ্মণের শ্রুতি নিজেই সেই সমুদয় অর্থ প্রকাশ করিয়া বলিতেছেন -‘অসতঃ মা সৎ গময়’ ইতি, মৃত্যুই অসৎ ; এখানে মৃত্যু শব্দে স্বাভাবিক জ্ঞান ও কৰ্ম্ম অভিহিত হইয়াছে । অত্যন্ত অধঃপতনের কারণ বলিয়া উহাই অসৎ ; আর ‘সৎ’ হইতেছে অমৃত ; শাস্ত্রোপদিষ্ট জ্ঞান ও কৰ্ম্ম মৃত্যুভয় নিবারণের হেতু বলিয়া, তাহারা সৎ-পদবাচ্য। অতএব ইহার অর্থ হইতেছে যে, অসৎ হইতে অর্থাৎ অসৎ কৰ্ম্ম ও জ্ঞান হইতে আমাকে সতে অর্থাৎ শাস্ত্রানুযায়ী কৰ্ম্ম ও জ্ঞানের দিকে লইয়া যাও, অর্থাৎ দেবভাব লাভের উপায়ভূত আত্মভাব লাভ করাও। বাক্যের তাৎপৰ্য্যাৰ্থ বলিতেছেন—আমাকে অমৃত কর ; এই অর্থই প্রথম মন্ত্রটা বলিয়াছেন। সেইরূপ, তমসঃ মা জ্যোতিঃ গময়’ এই মন্ত্রে ও অর্থ বলিতেছেন—‘তমঃ’ অর্থ—মৃত্যু ; কেন না, অজ্ঞানমাত্রই বোধশক্তির আবরক, আবরক বলিয়াই তমঃশব্দবাচ্য ; তাহাই আবার মৃত্যুর হেতুভূত বলিয়া মৃত্যুস্বরূপ ; আর ‘জ্যোতিঃ অর্থ—অমৃত, অর্থাং তমের বিপরীত দৈব রূপ। জ্ঞান স্বভাবতই প্রকাশাত্মক, এই কারণে জ্যোতিঃ-শব্দবাচ্য ; তাহাই আবার অবিনাশাত্মক বলিয়া অমৃত ; সেই তমঃ হইতে আমাকে জ্যোতিতে লইয়া যাও।‘মৃত্যোঃ মা অমৃতং গময়’ ইত্যাদির অর্থও পূর্ববৎ, অর্থাৎ আমাকে অমৃত কর, দিব্য প্রাজাপত্য ( প্রজাপতিত্বরূপ ) ফল আমাকে লাভ করাও, ইহাই ঐ মন্ত্রে বলা হইয়াছে। -(বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১।৩।২৮)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ ৩১/১১

  ব্রা॒হ্ম॒ণো᳖ऽস্য॒ মুখ॑মাসীদ্ বা॒হূ রা॑জ॒ন্যঃ᳖ কৃ॒তঃ । ঊ॒রূ তদ॑স্য॒ য়দ্বৈশ্যঃ॑ প॒দ্ভ্যাᳬশূ॒দ্রোऽঅ॑জায়ত ॥ #যজুর্বেদ ৩১।১১ ॥___  অথর্ববেদ ১৯....

Post Top Ad

ধন্যবাদ