গায়ত্রী মন্ত্র শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 July, 2021

গায়ত্রী মন্ত্র শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য

গায়ত্রী মন্ত্র শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য

ॐ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।

গায়ত্রী প্রাণায়াম-মন্ত্রঃ-
ॐ ভূঃ ॐ ভূবঃ ॐ স্বঃ ॐ মহঃ ॐ জনঃ ॐ তপঃ ॐ সত্যং, ॐ তত্সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ, আপো জ্যোতীরসোহমৃতং ব্রহ্ম ভূর্ভূবঃ স্বরোম্।
'ॐ' এই অক্ষরটি পরমাত্মার সন্নিহিত অভিধান অর্থাৎ বাচক নাম প্রণব।কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় উপনিষদের প্রথম শীক্ষাবল্লাধ্যায়ের পঞ্চম অনুবাক অনুসারে- ‘ভূ’ ‘ভুব’ ‘স্বর্’ এই তিনটি সুপ্রসিদ্ধ মহাব্যাহৃতি।পৃথিবীলোকই ভূঃ, অন্তরিক্ষলোকই ভুবঃ, ঐ দ্যুলোকই স্বর।ঋক্ সমূহই ভূঃ, সামসমূহ ভুবঃ, যজুঃসমূহ স্বর্। আর ওঙ্কারই মহঃ-কারণ ওঙ্কারের দ্বারাই সকল বেদ মহীয়ান্ হয়।
যোগী যাজ্ঞবল্ক্যের ব্যাখ্যাঃ-‘পঞ্চকর্ম্মেন্দ্রিয়, পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চইন্দ্রিয়ার্থ, পঞ্চমহাভূত, মন, বুদ্ধি, আত্মা আর অব্যক্ত- এই চতুর্বিংশতি গায়ত্রীর অক্ষর। পরমপুরুষ প্রণব লইয়া পঞ্চবিংশ।’
শাঙ্করভাষ্য ও অনুবাদঃ-ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হল-
যঃ = সবিতা দেবঃ,
নঃ = অস্মাকং
ধিয়ঃ = কর্মাণি ধর্মাদিবিষয়া বা বুদ্ধীঃ,
প্রচোদয়াৎঃ = প্রেরয়েৎ,
তৎঃ = তস্য সর্বাসু শ্রুতিষু প্রসিদ্ধস্য,
দেবস্যঃ = দ্যীতমানস্য,
সবিতুঃ = সর্বান্তর্যামিতয়া প্রেরকস্য জগত্সৃষ্টুঃ পরমেশ্বরস্য আত্মভূতং,
বরেণ্যং = সর্বরূপাস্যতয়াজ্ঞেয়তয়া চ সংভজনীয়ং,
ভর্গ = অবিদ্যা তত্কার্যয়োর্ভর্জনাদ্ভর্গঃ,
স্বয়ংজ্যোতিঃ = পরমব্রহ্মাত্মক তেজঃ,
ধীমহি = তদ্যোহং সোহসো যোহসো সোহহমিতি বয়ং ধ্যায়েম।
(সামান্য অর্থ)
১. যে সবিতা দেব আমাদের বুদ্ধি অর্থাৎ কর্মকে অথবা ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষলাভ বিষয়ে অন্তঃকরণ বুদ্ধিবৃত্তি প্রেরণ করে, যিনি সকল শ্রুতিতে প্রসিদ্ধ প্রকাশমান দেবতা সকলকে অন্তর্যামীরূপে প্রেরণাদানকারী জগৎ-স্রষ্টা পরমেশ্বর, অবিদ্যা এবং তার কর্মফল দূর করে শুভবুদ্ধিদানকারী , যিনি সবার আত্মা, যিনি সকলের বরণীয়, যিনি সকলের দ্বারা উপাস্য এবং জ্ঞেয় হওয়ার জন্য সাবধানের সাথে অর্চনা করার যোগ্য, স্বয়ং প্রকাশ (সকলের আত্মস্বরূপ) পরমব্রহ্মরূপ তেজ, আমরা অভেদভাবে সেই পরম জ্যোতির ধ্যান করছি।

যদ্বা তদিতি ভর্গো বিশেষণং = সবিতুর্দেবস্য তত্তাদশং ভর্গো ধীমহি।
কিং তদিত্যপেক্ষায়ামাহ = য ইতি লিংগব্যত্যয়ঃ, যদ্ভর্গো ধিয়ঃ প্রচোদয়াদিতি তদ্ভয়ায়েমেতি সমন্বয়ঃ।।

(আধ্যাত্মিক অর্থ)
২. ‘তৎ’ যা ভর্গ এর বিশেষণ। (ভর্গ শব্দের অর্থ অবিদ্যা এবং কর্মফল হতে চিত্তশুদ্ধির জন্য যে জ্ঞান), সবিতা দেবতা এর যে ভর্গ, আমরা তারই ধ্যান করি।

তিনি কে? আমরা অপেক্ষার সাথে করি ‘যঃ’ এই শব্দের প্রতীকী যা ভর্গ অর্থাৎ পরব্রহ্ম আমাদের বুদ্ধিকে প্রেরণাদান করে সেই ব্রহ্মেরই আমরা ধ্যান করছি। এভাবেই সমন্বয় করতে হবে।
যদ্বা যঃ সবিতা = সূর্য,
ধিয়ঃ = কর্মাণি,
প্রচোদয়াৎ = প্রেরয়তি,
স তস্য সবিতুঃ = সর্বস্য প্রসবিতুঃ,
দেবস্য = দ্যোতমানস্য সূর্যস্য,
তৎ = সর্বৈর্দৃশ্যতয়া প্রসিদ্ধং
বরেণ্যং = সর্বৈঃ সংভজনীয়ং,
ভর্গঃ = পাপানাং তাপক তে জোমণ্ডলং
ধীমহি = ধ্যায়েম,
মনসা ধারয়েম।।

(আধিদৈবিক অর্থ)
৩. যে সবিতা অর্থাৎ সূর্য বুদ্ধি-গত কর্মকে প্রেরণাদান করে, এই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের প্রসব কর্তা সবিতাদেব অর্থাৎ প্রকাশমান সূর্যের, যিনি সবার দ্বারা দর্শনীয় হয়ে প্রসিদ্ধ এবং সবার গন্তব্য – সকলের দ্বারা সাবধানের সাথে সেবন করার যোগ্য তেজ তথা পাপকে ভষ্ম করার অগ্নিতেজ মণ্ডল, আমরা তারই ধ্যান করছি অর্থাৎ তাকে আমরা মনে মনে ধারণ করছি।
যদ্বা ভর্গঃ শব্দেনাত্রান্নমভি = ধীয়তে যঃ সবিতা দেবো ধিয়ঃ প্রচোদয়তি তস্য প্রসাদাদ্ভর্গোহন্নাদি লক্ষণং ফলং ধীমহি ধারয়ামঃ তস্যাধারভূতা ভবেমেত্যর্থঃ।।

(আধিভৌতিক অর্থ)
৪. ভর্গ শব্দে যেখানে অন্ন বলা হয়। যে সূর্যদেব বুদ্ধিকে প্রেরণাদান করে তার প্রসাদে ভর্গ অর্থাৎ অন্ন আদি লক্ষ্মণযুক্ত পূণ্যফলের ধারণকারী, তিনিই আমাদের গন্তব্য, এরূপ অর্থ।

প্রাণায়াম গায়ত্রী মহামন্ত্র এর উপাসনা-
অথ সর্বদেবাত্মনঃ সর্বশক্তেঃ সর্বাবভাসকতেজোময়স্য পরমাত্মনঃ সর্বাত্মকত্ব প্রতিপাদক গায়ত্রীমহামন্ত্রস্যোপাসনা প্রকারঃ প্রকাশ্যতে – তত্র গায়ত্রী প্রণবাদি সপ্তব্যাহত্যুপেতাং, শিরঃ সমেতাং সর্ববেদসারমিতি বদন্তি, এবংবিশিষ্টা গায়ত্রী প্রাণায়ামৈরূপাস্যা।

এখন সর্বদেবরূপ, সর্বশক্তি, সবার অভবাসক, তেজরূপ পরমাত্মার সর্বাত্মকতাকে সিদ্ধকারী গায়ত্রী মহামন্ত্রের উপাসনার প্রকারভেদ বর্ণনা করছি-
এই বিষয়ে প্রণবাদি সাত (৭) প্রকার ব্যবহৃত পদ সহিত (সপ্তব্যাহতি- ওঁকারমাদিত পুরাকল্পে সমুতপন্ন ভূঃভূবঃস্বঃ সনাতনাঃ) এবং মূখ্যমন্ত্র সহিত গায়ত্রী মন্ত্রকে ‘সকল বেদের সার’ বলছি। এভাবেই গায়ত্রীকে সর্বশাস্ত্র এবং সর্বমন্ত্রের সার হিসেবেই প্রাণায়াম দ্বারা উপাসনা করা উচিৎ।

গায়ত্রী মন্ত্র শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য


শুদ্ধ গায়ত্রী জপ অনুযায়ী
স প্রণব ব্যাহতিত্রয়োপোতা, প্রণবান্তা, গায়ত্রী জপাদিভিরূপাস্যা। তত্র শুদ্ধা গায়ত্রী প্রত্যক্ ব্রহ্মৈক্যপ্রবোধিকা। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াদিতি – নোহস্মাকং ধিয়ো বুদ্ধির্যঃ প্রচোদয়াৎ-প্রেরয়েদিতি সর্ববুদ্ধিসংজ্ঞাহন্তঃকরণ প্রকাশক সর্বসাক্ষী প্রত্যগাত্মেত্যুচ্যতে, তস্য প্রচোদয়াচ্শব্দনির্দিষ্টস্যাত্মনঃ স্বরূপভূতং পরমব্রহ্ম তৎসবিতুরিত্যাদিপদৌর্নির্দিশ্যতে, তত্র ॐ তৎসদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃত ইতি তচ্ছব্দেন প্রত্যগ্ভূত স্বতঃ সিদ্ধং পরং ব্রহ্মোচ্যতে।
অনুবাদঃ- এই গায়ত্রী এর উপাসনা প্রণব এর সাথে তিন ব্যাহতিয়োং এবং শেষে প্রণব মন্ত্রাদি জপ করা উচিৎ। এই বিষয়ে শুদ্ধ গায়ত্রী অর্থাৎ ব্যাহৃতিত্রয় সহিত তথা শিরোমন্ত্র সহিত যেখানে মন্ত্র ব্রহ্মের সাথে জীবকে একত্ববোধ করায়।
‘ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ’ এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের বুদ্ধিকে যিনি প্রেরিত করেন’ এর দ্বারা আমাদের বুদ্ধি সংগায়িত সব অন্তঃকরণের প্রকাশক, সকল কিছুর সাক্ষী এবং প্রত্যাগাত্মা করে। সেই ‘প্রচোদয়াৎ’ শব্দ দ্বারা নির্দেশিত আত্মার স্বরূপ যিনি পরমব্রহ্ম, ‘তৎসবিতুঃ’ পদ দ্বারা নির্দেশ করা হয়। এই বিষয়ে ‘ॐ তৎসদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ’ অর্থাৎ ॐ তৎ সৎ, এমনই তিন প্রকারের সচ্চিদানন্দঘন ব্রহ্মের নাম বলা হয়, এই স্মৃতি প্রমাণ অনুসারে ‘তৎ’ শব্দ দ্বারা প্রত্যগ্ভূত তথা স্বতঃসিদ্ধ পরমব্রহ্ম বলা হয়।
সবিতুরিতি সৃষ্টিস্থিতিলয়লক্ষণকস্য সর্বপ্রপঞ্চস্য সমস্তদ্বৈতবিভ্রমস্যাধিষ্ঠানং লক্ষ্যতে।
অনুবাদঃ- ‘সবিতুঃ’ এর অর্থ হচ্ছে – যেখানে সৃষ্টি স্থিতি তথা লয় লক্ষণযুক্ত যে দ্বৈত প্রপঞ্চ (জগৎ সংসার) দেখি, সেই সকলের অধিষ্ঠান সবিতার অভেদভাব হেতু ধ্যান করছি।
বরেণ্যমিতি সর্ববরণীয় নিরতিশয়ানন্দরূপং
ভর্গ ইত্যবিদ্যাদিদোষ ভর্জনাত্মক-জ্ঞানৈকবিষয়ত্বং।

অনুবাদঃ ‘বরেণ্যং’ এর অর্থ হচ্ছে- সবার দ্বারা বরণীয় পরিপূর্ণ আনন্দ স্বরূপ,
‘ভর্গ’ এর অর্থ হচ্ছে- অবিদ্যাদি দোষের ভর্জনকারী কেবল জ্ঞানের বিষয়।
দেবস্যেতি সর্বদ্যোতনাত্মকাখণ্ডসদেকরকরসং সবিতুর্দেবস্যেত্যত্র ষষ্ঠয়র্থো রাহোঃ শিরোবদৌপচারিকঃ বুদ্ধয়াদি সর্বদৃশ্য সাক্ষীলক্ষণং যন্মে স্বরূপং তৎসর্বাধিষ্ঠানভূতং পরমানন্দং নিরস্তসমস্তানর্থরূপং স্বপ্রকাশচিদাত্মকং ব্রহ্মেত্যেবং ধীমহি ধ্যায়েম।

অনুবাদঃ ‘দেবস্য’ এর অর্থ হচ্ছে- সবাইকে প্রকাশকারী অখণ্ড সৎ একরস যিনি সেই দেবতার। ‘সবিতুর্দেবস্য’ (ভর্গঃ)’ এই ষষ্ঠী বিভক্তির পদের ঔপচারিক (কাল্পনিক) ভেদে অভেদ অর্থ। যেমন ‘রাহুর শির’ যেখানে রাহু এবং শির (মস্তক) বস্তুতঃ দুই ব্যাক্তি নয়। মস্তকই রাহু, রাহু থেকে মস্তক ভিন্ন নয়। দুটোই অভেদ। এই জন্য সেখানে ষষ্ঠী বিভক্তির ভেদকৃত অর্থ গৌণ।
[ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস অনুযায়ী “রাহুর শির= রাহুশির” অর্থাৎ ষষ্ঠী বিভক্তি ‘র’ লোপ পায়। অতএব রাহুর শির বললে ষষ্ঠী বিভক্তি এর জন্য রাহু এবং তার শির দুটি বুঝালেও এখানে ঔপচারিক ‘র’ লুপ্ত হয়ে সমাস অনুযায়ী একই অভেদ শব্দে (রাহুশির) ভেদ বিলুপ্ত হয়ে যায়]

যথা লক্ষিত-মূখ্য-অভেদার্থ যেখানে অন্তঃকরণাদি সকল দৃশ্যমান সাক্ষী যিনি আমার স্বরূপ তিনি হিলেন সবার অধিষ্ঠান পরমানন্দ, যাতে সকল প্রকার অনর্থের নিরসন হয় এবং যিনি স্বয়ংপ্রকাশ চিদাত্মারূপ ব্রহ্ম, আমরা তার – ‘ধীমহি’ অর্থাৎ অভেদভাবে চিন্তা করি।
এবং সতি সহব্রহ্মণা (হিরণ্যগর্ভেন সহ) স্ববিবর্ত্তজড়প্রপঞ্চেন সহ রজুসর্পন্যায়েনাপবাদ সামানাধিকরণ্য রূপ্যৈকত্বন্যায়ৈন সর্বসাক্ষী প্রত্যগাত্মনো ব্রহ্মণা সহ তাদাত্ম্যরূপমেকত্বং ভবতীতি সর্বাত্মক ব্রহ্মবোধকোহয়ং গায়ত্রী মন্ত্রঃ সংপদ্যতে।।
অনুবাদঃ- এমন ভাবেই, হিরণ্যগর্ভরূপ ব্রহ্মার সাথে নিজের স্বরূপে বিবর্ত্তভূত জড় প্রপঞ্চযুক্ত হয়ে এতে রজ্জুসর্পন্যায় আরোপ এবং শুক্তিকা-রজতের ন্যায়- রজতভাবের একতার ন্যায় সর্বসাক্ষী প্রত্যগাত্মার সাথে তাদাত্ম্যরূপ ঐক্য স্থাপিত হয়। এভাবেই সর্বাত্মরূপ ব্রহ্মের বোধ যা গায়ত্রী মন্ত্র সিদ্ধ হয়ে থাকে।
সাত ব্যাহৃতিয়াং —ॐ ভূঃ ॐ ভূবঃ ॐ স্বঃ ॐ মহঃ ॐ জনঃ ॐ তপঃ ॐ সত্যং,
সপ্তব্যাহৃতীনাময়মর্থঃ –
ভূরিতি সন্মাত্রমুচ্যতে, ভূব ইতি সর্ব ভাবং প্রকাশয়তোতি ব্যুৎপত্যা চিন্দ্রূপমুচ্যতে,
স্বরিতি সুব্রিয়ত ইতি ব্যুৎপত্যা সুবরিতি সুষ্ঠু সর্বৈব্রিয়মাণ সুখ স্বরূপমুচ্যতে,

সাত ব্যাহৃতি এর অর্থ হচ্ছে –
‘ভূঃ’ = থেকে সন্মাত্র (যার দ্বারা সমস্ত জগৎ উৎপন্ন হয়) এরূপ অর্থ।
‘ভূবঃ’ = যিনি সমস্ত সত্ত্বা এই ব্যুৎপত্তি চিদ্রূপ অর্থে বলা হয়।
‘স্বঃ’ = ‘ সুব্রিয়তঃ’ এই ব্যুৎপত্তি দ্বারা ‘সুবঃ’ যা সকল কিছুর দ্বারা উৎকৃষ্টতার সাথে বরণ করা হয়। তাকেই সেই সুখ স্বরূপ আনন্দ বলা হয়।

মহ ইতি মহীয়তে পূজ্যতে ইতি ব্যুৎপত্যা সর্বাতিশয়ত্বমুচ্যতে,
জন ইতি জনয়তীতি জন সকলকারণত্বমুচ্যতে,
তপ ইতি সর্বতেজোরূপত্ব,
সত্যামিতি সর্ববাধারহিতং।

‘মহঃ’ = যাকে মহান বলা হয়, যাকে পূজা করা হয়। এই ব্যুৎপত্তি দ্বারা যা সর্বাধিক তেজ স্বরূপ বুঝায়।
‘জনঃ’ = ‘যিনি উৎপন্ন করেন’ এই ব্যুৎপত্তি দ্বারা তাকে সমস্ত কিছুর কারণ বলা হয়।
‘তপঃ’ = এই শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞানস্বরূপ। ‘যস্য জ্ঞানময়ং তপঃ’ অর্থাৎ যিনি সবাইকে প্রকাশিত করেন।
‘সত্যম্’ = যা তিন কল্পে (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অথবা সুষুপ্তি, জাগ্রত এবং স্বপ্ন অবস্থায়) সকল বাধারহিত হয়। এক কথায় যা তিন কালে বাধিত হয় না সেটাই সত্য।

এতদুক্তং ভবতি – লোকে স্বরূপং তদোংকারবাচ্যং ব্রহ্মৈবাত্মনোহস্য সচ্চিদ্রুপস্বভাবাদিতি।
অথ ভূরাদয়ঃ সর্বেলোকাঃ ওঙ্কারবাচা ব্রহ্মাত্মকাঃ ন তদ্বয়তিরিক্তং কির্চিদস্তোতি ব্যাহতয়ঃ সর্বাত্মকব্রহ্মবোধিকাঃ।

এই বিষয়ে বলা হয় – সৎ চিৎ রূপ স্বভাবযুক্ত হওয়ায় এই আত্মার স্বরূপ যা ব্রহ্মই, লোকের কাছে তিনি ওঙ্কার নামে খ্যাত।
এবং ভূঃ আদিতে পুনঃ পুনঃ বলা হয়েছে প্রণব-মন্ত্র যা এই ভুবনে ব্রহ্মরূপতার প্রতিপাদন করে। এর দ্বারা ব্যাহতিয়া ব্রহ্মের সর্বাত্মকতার বোধ উপলদ্ধ করায়।

গায়ত্রী শিরোমন্ত্র – ‘ আপোজ্যোতীরসোহমৃতং ব্রহ্ম ভূর্ভূবঃ স্বরেম্।’
গায়ত্রীশিরসোপ্যয়মেবার্থঃ –
আপ ইতি আপ্নোতীতি ব্যুৎপত্যা ব্যাপকত্বমুচ্যতে,
জ্যোতিরিতি প্রকাশরূপত্বং (কাশ্দোপ্তৌ),
রস ইতিসর্বাতিশয়ত্বং,
অমৃতমিতি মরণাদি সংসারনির্মুক্তত্বং,
সর্বব্যাপি সর্বপ্রকাশকত্বং সর্বোৎকৃষ্টনিত্যমুক্তত্বমাত্মরূপং, সচ্চিদানন্দাত্মকং যদোংকারবাচ্যং ব্রহ্ম তদহমস্মীতি গায়ত্রীমন্ত্রস্যার্থঃ

অনুবাদঃ- গায়ত্রী শিরোমন্ত্র এর অর্থঃ-
‘আপলৃ ব্যাপ্তী’ ধাতু দ্বারা ‘আপঃ’ শব্দ নিষ্পন্ন হয়। এই ব্যুৎপত্তি শব্দে এর ব্যাপকতা বর্ণিত হয়েছে।
‘জ্যোতিঃ’ এর অর্থ প্রকাশ স্বরূপ। (কারণ ‘কাশ্’ দীপ্তির অর্থ দ্বারা এর স্বয়ং প্রকাশমানতা বুঝায়।)
সেই পরমানন্দ স্বভাবকে ‘রস’ বলা হয়। ‘রসো বৈ সঃ’
জগৎ সংসার ও মৃত্যু চক্রাদি হতে নির্মুক্ত হওয়ার জন্য সেটা ‘অমৃত’ নামে প্রসিদ্ধ।
তিনি সকল কিছুতে ব্যাপ্ত এবং সকলের প্রকাশক, সবার থেকে উৎকৃষ্ট এবং নিত্যমুক্ত আত্মরূপ, সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপ ‘ব্রহ্ম’ যিনি ওঙ্কার বাচ্য, আমিই তিনি। (অহম ব্রহ্মাস্মি) এরূপ অর্থ গায়ত্রী শিরোমন্ত্র এর।

শাস্ত্র-প্রমাণ
গুহাশয়ে ব্রহ্মহুতাশনেহহং কর্ত্তিদমংশাখ্যহবির্হুতং সৎ। বিলীয়তে নেদমহং ভবানীত্যেষ প্রকারস্ত্বভিধীয়তেহত্র।। যদস্তি যদ্ভাতি তদাত্মরূপং নান্যত্ততো ভাতি ন চান্যদস্তি। স্বভাবসংবিৎপ্রতিভাতি কেবলা গ্রাহ্যং গ্রহীতেতি মৃপৈব কল্পনা।।

অনুবাদঃ- “বুদ্ধি-গুহার ব্রহ্মরূপ অগ্নিতে ‘কর্তা’ এবং ‘ইদং’ অংশময় হবি হবন করায় জীবরূপ অহংভাব এর বিলয় হয়ে যায়। ‘আমি যে (দৃশ্যমান জগৎ প্রপঞ্চ) নই এই ভেবে উপাসনা করতে বলা হয়েছে। যা কিছু আছে এবং যা দৃশ্যমান সেই সমস্তই আত্মরূপ। আত্মা ভিন্ন অন্য কিছু নেই এবং না কিছু হতে পারে। স্বভাবের দ্বারাই কেবল সবিৎ প্রতিভাসিত হয়। অতঃপর গ্রাহ্য এবং গ্রহীতা (কর্তা ও ভোক্তা) কেবল মিথ্যা কল্পনা মাত্র।।
ইতি শ্রীমৎ শঙ্করভগবানঃ কৃতো গায়ত্রীভাষ্যং সমাপ্তম্।
ভগবান শঙ্করাচার্যকৃত গায়ত্রী ভাষ্য এর বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত হল।
গায়ত্রীতন্ত্রের ব্যাখ্যাঃ-'গায়ত্রীর ১ম অক্ষর অগ্নিদেবতা,২য় অক্ষর বায়ুদেবতা, ৩য় সূর্য,ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎ, যম, বরুণ, বৃহস্পতি, পর্জ্জন্য, ইন্দ্র, গন্ধর্ব্ব, পূষা, মিত্রাবরুণ, ত্বষ্টা, বাসব, মরুত, সোম,আঙ্গিরস, বিশ্বদেব, অশ্বিনীকুমার, প্রজাপতি, সর্ব্বদেবতা, রুদ্র, ব্রহ্মা, বিষ্ণু।'
সায়ন গায়ত্রীর ব্যাখ্যা কালে “তৎসবিতুঃ” ইতি বাক্যের অর্থ করেন, “জগৎপ্রসতুঃ”। কারণ “সু” ধাতু হতে সবিতৃ শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে। সবিতা অর্থে প্রসবিতা। কাহার প্রসবিতা? নিরুক্তকার যাস্কাচা্র্য্য বলেন, “সর্ব্বস্য প্রসবিতা”। যদি তাই হয়, তাহলে সবিতা, পরব্রহ্ম পরমেশ্বর। স্মার্ত্তভট্টাচার্য্য রঘুনন্দন প্রভৃতি পন্ডিতেরাও “তৎসবিতুঃ” শব্দের ব্যাখ্যা পরব্রহ্ম পক্ষে করে থাকেন। তাছাড়া ঋগ্বেদসংহিতা, ১ম মন্ডল, ১৬৪ সুক্ত, ৪৬ ঋক্ এ বলা হচ্ছে- ‘একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি’ অর্থাৎ সেই এক পরব্রহ্মকেই বিপ্রগণ ইন্দ্র,মিত্র, বরুণ, অগ্নি বহুনামে অভিহিত করিয়া থাকেন।
..................................................................................................................................................................................
তথ্যসূত্রঃ-
১.জ্ঞানবেদ,দুর্গাদাস লাহিড়ী।
২.বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় » প্রবন্ধ » দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম্ম » সবিতা ও গায়ত্রী।

৩.শংকরাচার্য কৃত সংস্কৃত ভাষ্যকে হিন্দীতে ভাষ্যানুবাদ করেছেন লোকেশ্বরানন্দ,বঙ্গানুবাদে সহায়তা ও কৃতজ্ঞতায় জয় বিশ্বাস।

1 comment:

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ঋগ্বেদ ১/৯০/৯

  ওম্ শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ শং নো ভবত্বর্যমা। শং ন ইন্দ্রো বৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ॥ ঋগ্বেদ ১।৯০।৯॥ - হে সচ্চিদানন্দানন্তস্বরূপ, হে ন...

Post Top Ad

ধন্যবাদ