বর্ণ ব্যবস্থা গুণ; কর্ম; স্বভাব থেকে হয় নাকি জন্ম থেকে ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 February, 2024

বর্ণ ব্যবস্থা গুণ; কর্ম; স্বভাব থেকে হয় নাকি জন্ম থেকে ?

বর্ণ ব্যবস্থা গুণ, কর্ম, স্বভাব থেকে হয় নাকি জন্ম থেকে ?


🍁 শাস্ত্রার্থ আরম্ভ 🍁

🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
মহানুভব! আজকের শাস্ত্রার্থ বিষয় হল বর্ণ-ব্যবস্থা। সনাতন ধর্ম, জন্ম প্রধান-গুণ কর্ম স্বভাবোপলক্ষিত বর্ণ ব্যবস্থাকে মানে, কিন্তু আর্য সমাজ কেবল গুণ, কর্ম, স্বভাব দ্বারা বর্ণ-ব্যবস্থাকেই স্বীকার করে, জন্ম থেকে স্বীকার করে না। বেদাদি শাস্ত্রের মধ্যে জন্ম প্রধান বর্ণ ব্যবস্থারই উল্লেখ পাওয়া যায়, এমনটা আমি মনে করি, দেখুন - "ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীদ্..." এটা বেদের মন্ত্র, যারমধ্যে জন্ম থেকেই তত্তদ্ বর্ণ উৎপন্ন হওয়ার স্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান আছে, ইতিহাসও জন্মের প্রাধান্যের সমর্থন করে, যেমন রাক্ষস কর্মকারী রাবণ, বীর শিরোমণী পরশুরাম, দ্রৌণাচার্য, কৃপাচার্য আর অশ্বথামা আদি ব্যক্তি ক্ষত্রিয়োচিত্ত, গুণ, কর্ম, স্বভাব থাকলেও জন্মের কারণে ব্রাহ্মণই প্রসিদ্ধ। এইভাবে ব্রহ্মজ্ঞানোপদেষ্টা রাজা জনক ক্ষত্রিয় প্রসিদ্ধ, শেঠ ভামাশাহ জন্মানুসারেই বৈশ্য বলা হয়, এখন দৃষ্টান্ত রূপে বুঝে নিন, যদি কোনো টাকা খারাপ হয় তাহলে সবাই সেটা খারাপ টাকাই বলবে। সেটা চললেও তার মূল্য নূন হবে, কিন্তু তাকে টাকার স্থানে অর্ধেক পয়সা বলা হবে না, ঠিক সেইরকম তত্তদ্ বর্ণের গুণ কর্ম স্বভাব না থাকা মানুষও আদরণীয় হবে না, কিন্তু থাকবে সেই বর্ণের যারমধ্যে তার জন্ম হয়েছে। যদি কেবল গুণ, কর্মের অনুসারে বর্ণ ব্যবস্থাকে মানা হয় তাহলে মহা অনর্থ হয়ে যাবে, কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি আবশ্যকতানুসারে সারাদিনে চার বর্ণের কাজ করে ফেলে। কল্পনা করুন এক দেবী নিজের ঘরে প্রাতঃ ঝাড়ু-লেপা বাসন মাজা, বাচ্চার কাপড় ধোয়া, ভোজন রান্না করে আর প্রয়োজন হলে বাচ্চার মল-মূত্রও পরিষ্কার করে, তাহলে কি সে এইসব বিভিন্ন কর্মের অনুসারে ক্রমশঃ দাসী, ধোবি, ভটিয়ারন আর রাঁধুনি হয়ে যাবে? কক্ষনো না, এরদ্বারা স্পষ্ট হয় যে গুণ, কর্ম, স্বভাব, প্রতিষ্ঠাদায়ক হলেও হতে পারে কিন্তু তত্তদ্ বর্ণের সত্তা তো জন্ম থেকেই যুক্তি সঙ্গত হতে পারে।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
সজ্জনগণ! আজকের শাস্ত্রার্থের বিষয় আপনারা সবাই শুনেছেন, আর এই সম্বন্ধে আর্য সমাজের যেটা সিদ্ধান্ত সেটাও সারা সংসার জানে। ভ্রাতাগণ! আর্য সমাজ যে পুরুষের মধ্যে যেমন গুণ, কর্ম, স্বভাব দেখে, তাকে সেই বর্ণের মধ্যে নিযুক্ত করতে চায়। যদি কেউ ব্রাহ্মণ হয়েও ব্রাহ্মণোচিত গুণ, কর্ম, স্বভাব না থাকে তাহলে আর্য সমাজ তাকে ব্রাহ্মণ মানে না আর যদি কোনো ভঙ্গী, চামার জাতিতে জন্ম হয়েছে কিন্তু তার গুণ, কর্ম, স্বভাব ব্রাহ্মণের মতো হয় তাহলে আর্য সমাজ তাকে ব্রাহ্মণ মানতে চায়, তার উন্নতি করতে চায়। অর্থাৎ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে - "বর্ণ ব্যবস্থা জন্ম থেকে নয় বরং গুণ কর্ম স্বভাব থেকে হয়" আর এই আজ্ঞা আমাদের বেদ দিয়েছে, আর এটাই মহর্ষি দয়ানন্দের সিদ্ধান্ত, এই ধরণের বর্ণ ব্যবস্থা মান্য হলে উঁচু বর্ণের ব্যক্তিদের মধ্যে নিচে নেমে যাওয়া ভয় থাকবে, তাই তারা সদা শ্রেষ্ট গুণ, কর্ম, স্বভাব স্থির রাখার চেষ্টা করবে তথা ছোট থেকে ছোট ব্যক্তিদেরও উন্নতি করার চাপ উৎপন্ন হবে। কিন্তু আমাদের সনাতন (পৌরাণিক) ধর্মী ভাইদের কথা হল - ব্রাহ্মণ যতই অশিক্ষিত, মাতাল, জুয়ারী পতিত হোক না কেন, সে ব্রাহ্মণই থাকবে, আর কোনো শূদ্র তা সে যতই বেদ-বেদাঙ্গ পড়ুক তথা যতই চরিত্রবান হোক না কেন, সে শূদ্রই থাকবে। ভ্রাতাগণ! আপনারা বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন? অথচ দেখুন, আমাদের বেদ আর বৈদিক গ্রন্থগুলো এই বিষয়ের বিরুদ্ধ কথা বলে। পণ্ডিত জী যে "ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীদ্..." বেদের প্রমাণ পেশ করেছেন, এখন আমি তার উপর বিচার করবো, যেটা উল্লেখ করে পণ্ডিত জী বলেছেন যে - "এই বেদ মন্ত্রটাও বর্ণ ব্যবস্থাকে জন্ম থেকেই মানার আদেশ করে।" কিন্তু পণ্ডিত জী এই মন্ত্রের অর্থ করেন নি, যদি অর্থ করতেন তাহলে পোল খুলে যেত। আমি বলে দিচ্ছি শুনুন, আর পণ্ডিত জী মন দিয়ে শুনুন - সনাতন ধর্মী এই মন্ত্রের অর্থ করে যে পরমাত্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণ উৎপন্ন হয়েছে আর ভূজা থেকে ক্ষত্রিয়াদি বর্ণ। তাহলে কি পরমাত্মা যাদুকরের মতো হাউ-হাউ করে গুলির মতো মুখ থেকে ব্রাহ্মণ বের করেছে? মোটেও না, বরং এটা ভাবা উচিত যে মুখের দ্বারা জ্ঞানের প্রসার হয়, এই অঙ্গের দ্বারাই দেখা, শোনা, বোঝা যায়, জ্ঞানের কেন্দ্র হল এটাই, ব্রাহ্মণের যেসব কাজ আছে সেটা এই অঙ্গেরই মতো এইজন্য বেদ একে ব্রাহ্মণের উপমা দিয়েছে। একইভাবে ভূজা, উরু ভাগ তথা পায়ের অংশ এগুলো সবই নিজের-নিজের গুণ, কর্ম, স্বভাব হওয়াতে বেদ এইসব অঙ্গের উপমা এই বিভিন্ন বর্ণের সঙ্গে দিয়েছে।
ছান্দোগ্য উপনিষদের (৪/৪) মধ্যে বর্ণনা আছে যে সত্যকাম জাবলি গৌতমের কাছে পড়তে যায় তো তাকে পিতার পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয়, তখন সে নিজের মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে যে আমার পিতা কে? বিদিত হয় নি। কিন্তু সে সরল স্বভাবে একথাই গৌতমকে বলে দেয়, যার উপর প্রসন্ন হয়ে গৌতম তাকে "ব্রাহ্মণ" বলে ডাকে। বিশ্বামিত্র ক্ষত্রিয় থেকে ব্রাহ্মণ হয়ে ছিলেন, এটা রামায়ণের মধ্যে প্রসিদ্ধ। রাবণ দুরাচারের কারণে রাক্ষস হয়ে যায়। দ্রৌণাচার্য আদি ধনুর্বেদের আচার্য ছিলেন, এইজন্য গুণ, কর্ম, স্বভাবানুসারে ব্রাহ্মণ ছিলেন। সজ্জনগণ! পণ্ডিত জী খারাপ টাকার উপমা দিয়েছেন, খারাপ টাকা তো বাজারের স্থানে-স্থানে অপমানিত হয়, এরথেকে তো সেই টাকাই ভালো যেটা বিনা কোনো বাঁধা বিপত্তিতে চলে যায়, অতঃ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে বর্ণ ব্যবস্থা জন্ম থেকে কখনও হতে পারে না বরং গুণ, কর্ম, স্বভাব থেকেই হতে পারে, এটাই আমার অটল সিদ্ধান্ত।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
আর্য সমাজ মানে যে ষোলো বছর পর্যন্ত কন্যা আর পঁচিশ বছর পর্যন্ত কুমার গুরুকুলে পড়তে থাকবে, জন্ম থেকে শুরু করে বিদ্যা সমাপ্ত পর্যন্ত এদের কোনো বিশেষ বর্ণ নেই, কিন্তু বিদ্বান হয়ে গেলে উপরোক্ত আয়ুর মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে যে কুমার-কুমারীর মধ্যে যে বর্ণের গুণ, কর্ম, স্বভাব বিদিত হবে, তাকে বিদ্যা সভা সেই বর্ণের সম্বন্ধ দিয়ে দিবে। যদি কোনো অশিক্ষিত (মুর্খ) বাপের সন্তান বিদ্বান হয়ে যায় তাহলে তাকে রাজ সভার আইনের জোরে সেই পিতা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কোনো পণ্ডিত পিতার সুপুত্র করে দেওয়া হবে আর তাকে কোনো বিদ্বান পিতার অশিক্ষিত সন্তান দিয়ে দেওয়া হবে। এইরকম ব্যবস্থা কন্যার জন্যও প্রযোজ্য। আমি মনে করি এই ব্যবস্থা যেমন বেদাদি শাস্ত্রের প্রতিকূল তেমনই অপ্রাকৃতিক হওয়ার কারণে গ্রহণ যোগ্য নয়। দেখুন, ঋগ্বেদ কি বলেছে - "ন অন্যোদর্য়্যো মনসা মনাবাঊ" (৫/৬/৩) অর্থাৎ অন্যের পেট থেকে জন্মা বাচ্চাকে মনের মধ্যেও নিজের মানবে না। কল্পনা করুন কোনো অনাথ বিধবা নিজের একমাত্র পুত্রকে চাক্কি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে কোনো রকমে পড়ায় আর আশা করে যে আমার বৃদ্ধাবস্থায় এই ছেলে আমাকে কাজ করে খাওয়াবে, বৃদ্ধাবস্থায় আমার লাঠি হবে। কিন্তু যখন সে লেখা পড়া করে বিদ্বান অর্থোপার্জন করার যোগ্য হয়ে যায় তো সমাজীদের রাজ সভা নিজের নাদিরশাহী আইনের জোরে তাকে সেই মাতা থেকে ছিনিয়ে কোনো শিক্ষিত বাবুর হাতে হস্তান্তরিত করে দেয়। আর এই বেচারীর বুকে কারোর বজ্র মুর্খ ছেলেকে জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়। বলুন, এই ব্যবস্থা এই বিধবার অধিকারে কতটা ন্যায় সঙ্গত হবে?
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
শ্রী পণ্ডিত জী ছেলে-মেয়ে বদলানোর স্কীম বলে এর উপহাস করেছেন। গ্রন্থকে কখনও স্পর্শ করেন না, বেদের মধ্যে বলা হয়েছে যে - "অহমেহ স্যয়ম্মিদম্ বদামি..." (ঋগ্বেদ ১০/১২৫/৫) অর্থাৎ রাষ্ট্র সভা যাকে ইচ্ছে ব্রাহ্মণ বানিয়ে দিবে তার গুণ, কর্ম, স্বভাবানুসারে। আমি পণ্ডিত জীর কাছে জিজ্ঞেস করছি যে আপনার কৃষ্ণ ভগবানকেও তো একটা মেয়ের সঙ্গে বদলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাহলে এটা কেমন আক্ষেপ হল?
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
এইদিকে সংস্কার বিধির মধ্যে স্বামী দয়ানন্দ জী নামকরণ সংস্কারের সময় অথচ বাচ্চার কেবল দশ দিনের আয়ু হয়, এই আজ্ঞা দেন যে ব্রাহ্মণের সন্তানের নাম "দেবশর্মা", ক্ষত্রিয় বালকের নাম "দেববর্মা", বৈশ্যের পুত্রের নাম "ভদ্রগুপ্ত" আর শূদ্রের পুত্রের নাম "দেবদাস" এইভাবে রাখা হবে। তো এই সময় দুধ খাওয়া বাচ্চার মধ্যে কোনো ধরণের গুণ, কর্ম, স্বভাবের বিকাশ হয় না কিন্তু পিতার বর্ণের অনুসারেই তার সন্তানের নামের সঙ্গে ব্রাহ্মণাদি বর্ণের সূচক - "শর্মা, বর্মা, গুপ্ত, দাস" উপাধি নিশ্চিত করা হয়। এই বিধান অবশ্যই জন্ম প্রধান বর্ণ ব্যবস্থার সমর্থন করে, এর দ্বারা এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে প্রত্যেক বালকের বর্ণ সমাজের গ্রন্থের অনুসারে দশম দিবস জন্ম মূলকই নিশ্চিত করা হয়, এইভাবে উপনয়ন সংস্কারের সম্বন্ধেও স্বামী দয়ানন্দ জী তাঁর গ্রন্থ "সংস্কার বিধি"র মধ্যে ব্রাহ্মণের অষ্টম বর্ষ, ক্ষত্রিয়ের একাদশ বর্ষ আর বৈশ্যের দ্বাদশ বর্ষে সংস্কার হওয়ার কথা লিখেছেন। অমুক-অমুক বর্ণের জন্য ভিন্ন-ভিন্ন প্রকারের উপবাস করা আর পৃথক-পৃথক কাষ্ঠের বিভিন্ন পরিণামযুক্ত দণ্ড (লাঠি) গ্রহণ করা, এবং "ভবতি ভিক্ষাম্ দেহি" এই বাক্য নিজের-নিজের বর্ণের মর্যাদা অনুসারে উচ্চারণ করা, আদি-আদি কথা লেখা আছে। নিঃসন্দেহে এত ছোটো আয়ুর বিদ্যা বিহীন বাচ্চার মধ্যে কোনো ধরণের গুণ, কর্ম, স্বভাবের সুস্থির প্রাদুর্ভাব স্বীকার করা যেতে পারে না, এইভাবে এই সংস্কার বিধিও জন্ম মূলক বর্ণ ব্যবস্থারই সম্পূর্ণ ভাবে সমর্থন করছে। এখানে এটা বললেও অনুচিত হিবে না যে স্বামী দয়ানন্দ জীর গ্রন্থের অনুসারেও নামকরণ আর উপনয়ন সংস্কারের সময় সন্তানের জন্ম মূলক বর্ণ নিশ্চিত হয়ে থাকে, তাহলে ষোলো আর পঁচিশ বর্ষের পরীক্ষার প্রতারণা কি অর্থ দাঁড়ায়? এর অতিরিক্ত স্বামী দয়ানন্দ জীর পরস্পর বিরুদ্ধ উপরোক্ত তিন অবস্থার উত্তরদায়িত্বও আর্য সমাজের উপরেই আছে, তিনি একটা স্থানে দশম দিবস দ্বিতীয় স্থানে অষ্টম তথা একাদশ আর দ্বাদশ আদি বর্ষের মধ্যে তৃতীয় স্থানে ষোলো আর পঁচিশ বর্ষের মধ্যে বর্ণ নির্ধারিত করার আদেশ করেছেন। এই গণ্ডগোল কেলেঙ্কারি মানে কি?
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
পণ্ডিত জী ব্যর্থ লম্বা-লম্বা ভাষণ দিয়েছেন যা একদম আধার রহিত। নামকরণ সংস্কারের সময় আর যজ্ঞোপবীত সংস্কারের সময় তো পিতা নিজের সন্তানকে যে বর্ণের বানাতে চায় সেইরকমই নাম রাখে, আর সেটা বেদোক্তই হয়। এই রীতিই সব শাস্ত্রের মধ্যে উল্লেখ আছে, যার দ্বারা বর্ণ ব্যবস্থা সম্বন্ধে স্পষ্ট বোঝা যায় যে সেটা জন্ম থেকে আধারিত নয়, বরং গুণ, কর্ম, স্বভাবের উপর আধারিত হয়।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
ব্যাকরণের রীত্যানুসারেও ব্রাহ্মণের বীর্য থেকে উৎপন্ন হওয়া বালককেই "ব্রাহ্মণ" বলা যেতে পারে। তৎসম্বন্ধি বস্তুকে কিভাবে "ব্রাহ্ম" বলা যাবে? এইভাবে ক্ষত্রীর "ঔরস" পুত্রকেই "ক্ষত্রিয়" বলা যেতে পারে। তৎসম্বন্ধিকে "ক্ষত্র" বলা হবে। "ব্রাহ্মোऽজাতৌ ক্ষত্রাদ্ঘঃ" আদি পাণিনীয় সূত্রের ব্যাখ্যা করেই স্বয়ং স্বামী দয়ানন্দ জীও তাঁর গ্রন্থ "বেদাঙ্গ প্রকাশ" এরমধ্যে এইরকম লিখেছেন। তাহলে "অনৌরস" ব্যক্তিদের কৃত্রিম পিতার বর্ণের অনুসারে কিভাবে ডাকা যেতে পারে? এইভাবে ব্রাহ্মণ আদি শব্দ অপত্যার্থক প্রত্যয় দ্বারাই সিদ্ধ হতে পারে, আর সেটা জন্ম মূলক বর্ণ ব্যবস্থাকে প্রমাণিত করে।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
সজ্জনগণ! পণ্ডিত জী কোনো গ্রন্থের উদাহরণ সহিত তার বিস্তার বলেন নি, আমিও এইভাবে বলতে পারি যে অমুক গ্রন্থের মধ্যে এটা লেখা আছে, অমুক স্থানে সেটা লেখা আছে, এইসব ভাবে আমার কথা প্রমাণিত হতে পারে না। কোথায় লেখা আছে তার উল্লেখ তো দেখান। পণ্ডিত জী ব্যাকরণের তোপ নিয়ে চলেছেন, যার দ্বারা এটা কক্ষনো সিদ্ধ হয় না যে বর্ণ ব্যবস্থা জন্ম থেকে হয়। বর্ণ ব্যবস্থার যে সুব্যবস্থা মহর্ষি দয়ানন্দ জী বলেছেন সেটা বেদোক্ত আর সেটাই মানার যোগ্য। সর্ব শাস্ত্র থেকে এটাই বিদিত হয় যে - বর্ণ ব্যবস্থা জন্ম থেকে নয় বরং গুণ, কর্ম, স্বভাবের উপর আধারিত। পণ্ডিত জী নিজের পক্ষ থেকে কোনো শক্ত প্রমাণ দিন। সময় ব্যর্থ নষ্ট করবেন না।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
আর্য সমাজের বর্ণ ব্যবস্থাতে সবথেকে বড় গণ্ডগোল হল - তার সঞ্চালন বিদ্যা সভা আর রাজ্য সভার নাদির শাহী ফাতয়া বিনা হতেই পারবে না। বর্তমান সময়ে ব্রিটিশ সরকারের রাজ্য আছে, এখন অন্য কারও সুপুত্রকে মাতা-পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না, আর না কোনো মানুষকে নিজের বিদ্বান পুত্রের বদলে মুর্খ পুত্রকে নেওয়ার জন্য বিবশ করা যেতে পারে। এইজন্য দয়ানন্দীয় বর্ণব্যবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত চালু হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যবশত "অন্ধের নগরী চৌপট রাজা"র রাজ্য না হয়। আপনার কাছে এইরকম কোনো সংস্থা আছে যেটা বর্ণ যুক্ত সনদ বিতরণ করে? যদি কেউ কোনো সনদ পেয়েছেন তাহলে পেশ করুন। আমি দাবি করে বলছি যে কোনো আর্য সমাজী এইরকম সনদ পেশ করতে পারবে না।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
সজ্জনগণ! শুনুন, পণ্ডিত জী এদিক সেদিকের কথা বলে মূল বিষয়কে ভুলিয়ে দিতে চান। বার-বার রাজ্য সভার কথা বলেন , যখন আমাদের রাজ্য হবে তখন রাজসভাও হবে, পণ্ডিত জী কি নিজের কোনো রাজ্যসভা বলতে পারবেন? এখন আসছি সনদের বিষয়ে! কিন্তু পণ্ডিত জী স্বয়ং ভাববেন যে যদি আমি নিজের কথা প্রমাণিত করতে গিয়ে পণ্ডিত জীর কাছে সেইরকমই সনদ চাই যে - এনার ব্রাহ্মণ হওয়ার কি প্রমাণ আছে, তাহলে ইনি কি পেশ করবেন? (নিস্তব্ধতা) শুনুন! আমি যখন গুরুকুল থেকে স্নাতক হয়ে বিদায় হই তখন আমাকে "ব্রাহ্মণ" বলা হয়েছে তো এটাই হচ্ছে আমার সনদ (উপাধিপত্র)। আরও অনেক বিদ্বান আছে যারা জন্ম থেকে ব্রাহ্মণ নয় কিন্তু আর্য সমাজ তাদের ব্রাহ্মণের উপাধি দিয়েছে, তথা আজও সমাজ তাদের ব্রাহ্মণই মানে। এখন আপনি নিজের কথা বলুন আর নিজের ব্রাহ্মণত্বের প্রমাণ দিন।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
আর্য সমাজীদের এইসব কথার কথা, ক্রিয়াতে কিছুই নেই। এইসব শূদ্রাদি বর্ণকে ধোকা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে কিন্তু দয়ানন্দী গ্রন্থ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে আর্য সমাজীরা শূদ্রদের কতটা ভালোবাসে! দেখুন, সত্যার্থ প্রকাশের দশম সমুল্লাসের মধ্যে লেখা আছে যে - আর্যদের রন্ধন করার সময় শূদ্র তার মুখ আর নাকে কাপড় বেঁধে নিবে, এইভাবে সমাজী বেচারা শূদ্রকে "নাকোদম" করার শাস্তি দেয়। তাদের শ্বাস পর্যন্ত রুদ্ধ করার অত্যাচার করে। হবনে শূদ্রের ঘরের আগুনও নিতে বারণ করা হয়েছে। তাদের এত অছুত মনে করে যে তাদের ঘরের আগুনকে পর্যন্ত অপবিত্র মনে করে। য়জুর্বেদ ভাষ্যের মধ্যে ভঙ্গিদের বাচ্চাকে জলাবতন করার নাদির শাহী হুকুম দিয়েছে। আর সত্যার্থ প্রকাশে শূদ্রকে যজ্ঞোপবীত না দেওয়ার আর বেদ না পড়ার আদেশ উল্লেখ আছে। নিঃসন্দেহে এইসব কথা শূদ্রদের সম্বন্ধে আর্য সমাজের আভ্যন্তরিক নীতির পর্দফাস করার জন্য যথেষ্ট।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
সজ্জনগণ! পণ্ডিত জী আর্য সমাজের উপর আক্ষেপ করছেন যে - দয়ানন্দ কৃত গ্রন্থের মধ্যে শূদ্রের অপমান উল্লেখ আছে। এই আক্ষেপটা মিথ্যা, অন্যথা পণ্ডিত জী সেই পাঠটা দেখাবেন? আর্য সমাজ তো প্রাণী মাত্রের উন্নতি চায়। শূদ্র নিজের ওখানে অভোজ্য পদার্থও বানায় এইজন্য আগুন নিয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। এখন পণ্ডিত জীর অন্য কথাতে আসছি। সেগুলো আপনাদের উত্তেজিত করার জন্য বলেছেন, যদি সেগুলো সত্য হয় তাহলে পণ্ডিত জী সেগুলো গ্রন্থ থেকে সেই পাঠের লেখা দেখাবেন, অন্যথা নিজের শব্দ ফিরিয়ে নিবেন। আমি প্রমাণ চেয়েছিলাম। আপনারা দেখছেন যে পণ্ডিত জী কত বেদোক্ত প্রমাণের ঝর্ণা লাগিয়ে দিয়েছেন। আরে ভাই লাগাবেন তো তখন, যখন প্রমাণ পাবেন। প্রমাণই যখন নেই তাহলে দিবেন কোথা থেকে, তাই এদিক-সেদিকের কথা বলে সময় নষ্ট করছেন। আর্য সমাজ দুই-একজনকে নয় অনেক জনকে তাদের গুণ, কর্ম, স্বভাবের অনুসারে ব্রাহ্মণ বানিয়েছে তাদের বিবাহ ব্রাহ্মণদের মধ্যে হয়েছে, সেটা প্রত্যক্ষ প্রমাণ। কিন্তু পণ্ডিত জীর কাছে "বর্ণ ব্যবস্থা জন্ম থেকে হয়" এই সম্বন্ধীয় কোনো প্রমাণ নেই।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
এইভাবে স্বামী দয়ানন্দ জী য়জুর্বেদ (১৪/৯) ভাষ্যতে রাজাকে "শুয়োর" তথা বৈশ্যকে "উট" আর শূদ্রকে "বৃষ" বলে এইসব বর্ণকে অপমানিত করেছেন। সনাতন ধর্মের মধ্যে তো ব্রাহ্মণ থেকে শুরু করে চাণ্ডাল পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের-নিজের বর্ণের কাজ করে-করেই মুক্ত হয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রাপ্ত আছে। এমন কোনো জাতি নেই যার ধর্ম নিষ্ঠ ব্যক্তির উচিত প্রতিষ্ঠা সনাতন ধর্ম করে নি। আমাদের এখানে ভক্ত হওয়ার জন্য ধন্না জাট, নন্দা নাই, রৈদাস চামার, সদনা কসাই, শবরী ভীলনী আর গণিকা (বেশ্যা) আদি ভক্তকে সেইরকম আদরপূর্বক দেখা হয় যেভাবে দেবর্ষি নারদ আর ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠকে দেখা হয়।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
আপনি যে য়জুর্বেদের কথা বলেছেন এগুলো সব উপমালঙ্কারের মধ্যে আছে। আপনি নিজের কথা বলুন, আপনার ওখানে কি কি নোংরা ভরে পড়ে আছে কখনও কি সেগুলোর বিষয়েও কিছু ভেবেছেন? শ্রীমদ্ভাগবতের (৫/৪/১৩) এর মধ্যে লেখা আছে যে নাভি রাজার ৮১ পুত্র তাদের গুণ, কর্ম, স্বভাব দ্বারা ব্রাহ্মণ হয়ে যায়, আরও অনেক প্রমাণ আছে। আপনারা এই ব্রাহ্মণ পদকে নিজের বাপের সম্পত্তি মনে করেন। কি সজ্জনগণ! যে ব্রাহ্মণ সর্বদা নীচ কর্ম করে, অশিক্ষিত, নিরক্ষক ভট্টাচারী হবে, সে কি ব্রাহ্মণ বলার যোগ্য? কক্ষনো না, কিন্তু পণ্ডিত জী বলছেন যে সে যাই করুক না কেন, যদি সে ব্রাহ্মণীর থেকে জন্মায় তাহলে সে আজন্ম ব্রাহ্মণই থাকবে। এটা কি গ্রহণ করার যোগ্য? এই দেশের যা কিছু পতন হয়েছে তা এই রীতির আধারে এই ব্রাহ্মণদের দ্বারা হয়নি কি? আমি এরপরের টার্নে সব কথা খুলে বলবো।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
যদি গুণ, কর্ম, স্বভাব দ্বারা বর্ণ বদলাতে পারে তাহলে মনুস্মৃতির মধ্যে যে অনুলোমজ-বিলোমজ বর্ণ সংকরের বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়, তার অর্থ কি হবে? কারণ বর্ণ সংকরতার তাৎপর্য তো বিভিন্ন দুই বর্ণের রজোবীর্যের মিশ্রণ হয়ে যাওয়াই হতে পারে, যেটা জন্মের সঙ্গে সম্বন্ধ রাখে। শ্রীমদ্ভাগবত গীতার মধ্যেও অর্জুন যে "সম্কর নরকামৈব" বলে বিধবাদের বর্ণান্তরের সঙ্গে মিলনের ফলে "সংকর" সন্তান উৎপন্ন হয়ে যাওয়ার ভবিষ্যৎ ভয় প্রকট করেছে সেটাও জন্ম প্রধান বর্ণ-ব্যবস্থারই প্রবল প্রমাণ।
🟠 শ্রী পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার -
সজ্জনগণ! শুনুন, পুরাণের মধ্যে তো লেখা আছে যে শৃঙ্গী ঋষি হরিণ থেকে জন্মেছে, শুকদেব তোতাপাখি থেকে, কণাদ উলুকী থেকে আর অমুক ঋষি ব্যাঙ থেকে জন্মে ছিল। ভবিষ্য পুরাণের (৪১/২২/২৩) মধ্যে লেখা আছে যে - বিশিষ্ঠ গণিকা (বেশ্যার) পুত্র ছিলেন, মন্দপাল মুনি মল্লাহ থেকে, ব্যাস জী ঝিবরি থেকে, পরাশর চাণ্ডালী থেকে জন্মেছে...
Note - এরইমধ্যে সনাতন ধর্মীরা কোলাহল শুরু করে দেয়, অনেক কষ্টে শান্তি স্থাপন করা হয়। এবং পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার জী পুনঃ বলা আরম্ভ করলেন -
.
হ্যাঁ, যা বলছিলাম মিত্রগণ! এখন আমি মুখ খুলতেই আপনারা দেখলেন তো কিভাবে আর্তনাদ বের হল! আমার প্রশ্ন হল - এদের কেন জন্ম থেকে মানা হয় না, এদের কেন ঋষি বলা হয়? এরা কি ঋষি মহর্ষিদের সন্তান ছিল? যদি না থাকে তাহলে যা ছিল সেটাই মানো! পরিষ্কার বোঝা যায় যে প্রত্যেক মানুষের তার গুণ, কর্ম, স্বভাবের অনুসারেই তার বর্ণ হয়। যেভাবে এইসব ঋষি নিজের জন্মের অধিকারে নয় বরং নিজের গুণ, কর্ম, স্বভাবের আধারে ঋষি হয়েছেন। দেখুন, ভবিষ্য পুরাণের মধ্যে উল্লেখ আছে যে মহর্ষি কণ্ব দশ হাজার ম্লেচ্ছোকে শুদ্ধ করে ব্রাহ্মণ আদি বর্ণের মধ্যে মিলিয়ে দেন, আপনিও কণ্ব মহর্ষির মতো উদ্যোগ করুন, এই ব্যর্থ হঠধর্মী ছেড়ে দিয়ে সঠিক সত্য সনাতন বৈদিক ধর্মের আধারে গুণ, কর্ম, স্বভাবের আধারে বর্ণ ব্যবস্থাকে গ্রহণ করুন। এতেই আমার, আপনার, দেশ আর সমাজের হিত হবে। এর দ্বারাই দেশ আর হিন্দু জাতির উন্নতি হওয়া সম্ভব। আজকে এটা স্পষ্ট ভাবে বোঝা গেল যে - "বর্ণ ব্যবস্থা জন্ম থেকে নয় বরং গুণ, কর্ম, স্বভাবের উপর আধারিত হয়।" এইভাবে আজকের এই প্রথম দিবসের শাস্ত্রার্থ সমাপ্ত হচ্ছে, কালকের শাস্ত্রার্থ শোনার জন্য শ্রোতাদের নিকট প্রার্থনা যে সঠিক সময়ে দর্শন দিবেন। ইতি শম্।।
🍁 শাস্ত্রার্থ সমাপ্ত 🍁

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

रामभद्राचार्य और आर्य समाज

 स्वामी भद्राचार्य जी का अनर्गल प्रलाप   स्वामी  रामभद्राचार्य  जी का एक वीडियो प्रचारित हो रहा हैं।  भद्राचार्य जी ने स्वामी दयानन्द जी पर ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ