শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

22 February, 2021

শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?

শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?

শ্রীকৃষ্ণ যে স্বয়ং ভগবান অনন্তজ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মা ছিলেন না। মহাভারতের অর্থাৎ ভারত-যুদ্ধের কিছু পরেই অর্জ্জুন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, " যত্তৎ ভগবতা প্রোত্তং পুরা কেশব ! সৌহৃদাৎতৎ সর্ব্ব পুরুষ-বাঘ্র্য। নষ্টং মে ভ্রষ্টচেতসঃ।"[আশ্বমেধিক, অনুগীতাপর্ব্ব,৬]

তার উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, "তুমি নির্ব্বোধ; যথাযথ শ্রদ্ধা তোমার নেই। এখন আমার আর সে স্মৃতিও নেই। যোগযুক্ত অবস্থায় পরব্রহ্ম বিষয়ে তখন যা বলেছিলাম তা এখন অশেষ ভাবে বলতে অক্ষম।[আশ্বমেধিক, অনুগীতাপর্ব্ব,১১,১২,১৩]

* এখন চিন্তা করে দেখুন, যদি 'কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং' হন, তাহলে তিনি পরব্রহ্ম বিষয়ে বলতে অক্ষম হলেন কেন..? একজন যোগী সমাধিতে যা অনুভব করেন সমাধি ভঙ্গের পর তিনি যেমন তা "অশেষতঃ" বলতে অক্ষম হন, শ্রীকৃষ্ণের ও সেই অবস্থা ! সর্ব্বজ্ঞ পরমাত্মাই যদি তিনি হচেন তাহলে, নিরবিচ্ছিন্ন, স্বতঃপ্রকাশ অনন্ত প্রজ্ঞার উৎস যিনি, তাঁর কি আত্মবিস্মৃতি ঘটে..? সমগ্র যোগিজনের যিনি ধ্যেয়, সমূহ যোগতপস্যা যাঁর উদ্দেশ্য করা হয় সেই অনন্ত পরমাত্মাস্বরূপের স্মৃতিভ্রংশ কিংবা যোগচ্যুতি সম্ভবপর..?

তাছাড়া আরও ভেবে দেখুন "অপ্রাকৃত চিণ্ময়দেহ'ধারী পূর্ণ পরমাত্মা যদি কাউকে উপদেশ দেন তাহলে তার যে সচ্চিদানন্দময় অবস্থা লাভ হয়, তার কোন ক্ষয় ব্যয় হ্রাস ব,দ্ধি বিস্মরণ আদি ঘটতে পারে না। সত্য বটে ভয়াল বিশ্বরূপ দর্শন করিয়ে এবং পর পর নানাধরনের

উপদেশ দিয়ে অর্জ্জুনকে তাঁর ইচ্ছার বিরূদ্ধেই যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ, একবার জ্ঞানযোগ একবার কর্ম্মযোগ বা পাদের কথামতো ভক্তিযোগের তত্ত্বকথা শুনিয়ে অর্জ্জুনের শঙ্কাও দূর করতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি, অর্জ্জুন সেই মাত্র যা দেখেছে(অনুধাবন) যা শুনেছে অদনুযায়ী বলেছিলেন বটে, " নষ্টমোহঃ স্মৃতির্লব্ধা তৎপ্রসাদাৎ ময়াচ্যুত !"[গীতা ১৮।৭৩] কিন্তু তাঁর এই মোহনাশ এবং স্মৃতিলাভ সাময়িক ভাবে হয়েছিল; সদ্যসদ্য পরোক্ষ জ্ঞানলাভের ক্ষণিক ফলমাত্র !

অর্জ্জুন অবশ্য বলেছিলেন,"ব্যমিশ্র বাক্যের দ্বারা আমার বুদ্ধিকে মোহাচ্ছন্ন করে দিও না, যাতে চিশ্চিত বাবে শ্রেয়লাভ হয় তাই বল, তদেকং বদনিশ্চিত্য যেন শ্রেয়োহমাপ্নুযাম [গীতা ৩।২]" অর্জ্জুনের যদি এই মোহ-মুক্তি, 'স্বয়ং ভগবান'-প্রদত্ত "শ্রেয়োলাভ' যদি সত্যকার  হতো, তাহলে তিনি ভারতযুদ্ধের কিছু পরেই কি করে বলেন, তৎসর্ব্বং পুরুষব্যাঘ্র ! নষ্টং মে ভ্রষ্ট চেতসঃ"? {মহাভারত,আশ্বমেধিক অনুগীতাপর্ব্ব, ১৬শ অধ্যায়}।

শ্রুতি বলেন, সেই পরমতত্ত্ব অনুভব করতে পারলে পরমাত্মা সক্ষাৎকার হলে হৃদয় গ্রন্থি ভেদ হয়, সর্ব্বসংশয় নাশ হয়,সকল কর্ম্মেরও হয় ক্ষয়[মুণ্ডক২।২।৮]; শ্রীকৃষ্ণ যদি "স্বয়ং ভগবান'ই হ'ন, তাহলে এহেন " নরাকৃতি পরব্রহ্মের" কাছে দেবদূর্লভ দিব্যচক্ষু লাভ করে অর্জ্জুনের 'দর্শন'টি কী ধরনের হ'ল যে তিনি অল্পদিন পরেই সব ভুলে গেলেন !! নিজেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ' হে অর্জ্জুন ! কৃপাপরবশ হয়ে আত্মযোগসামর্থে তোমাকে যে বিশ্বরূপ দর্শন করালাম, এরূপ দর্শন ইতিপূর্ব্বে কেউ কখনও করেননি; বেদ যজ্ঞধ্যয়ন দানক্রিয়া উগ্র তপস্যাদির দ্বারাও নরলোকে এরূপ দর্শনে কেউ সক্ষম হয় না{গীতাযথাযথ ১১শ ৪৭,৪৮}*এখানেও বৈষ্ণবদের 'নরাকৃতি পরব্রহ্ম' পূর্ণ ভগবানের কিঞ্চিৎ স্মৃতিভ্রংশ দেখা যাচ্ছে ! কারণ দিব্যচক্ষু দান না করেই বাল্যে মা যশোদাকে একবার আর কৌরব সভায় দুর্য্যোধন কর্ণাদি যখন তাঁকে বন্দী করতে চেয়েছিলেন তখন একবার-তাঁদেরকে বিশ্বরূপ দর্শন করিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন-[মহাভারত,উদ্যোগপর্ব্ব,১৩১অঃ]{যদিও ঘটনাটি এরূপ নয়}

"নরাকৃতি পরব্রহ্মের" আত্মাযোতসামর্য্য" এবং সকল শ্রমই ব্যর্থতায় পর্য্যবসিত হয়েছিল বলে মনে হয়, যখন অর্জ্জুন বলেন, "নষ্টং মে ভ্রষ্টচেতসঃ"! একটু সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে ভেবে দেখলে ঐ ঘটনা থেকে সহজেই বুঝতে পারবেন, পূর্ণ পরমাত্মা কর্ত্তৃক সঞ্চারিত বা উপার্জিত জ্ঞান কখনও বিস্মরণ হয় না; অথচ অর্জ্জুনের যখন তা হ'ল তাতে সহজেই বোঝা যায় কৃষ্ণকে "নরাকৃতি পরব্রহ্ম" বলা সাম্প্রদায়িক প্রচার মাত্র ! তাছাড়া কৃষ্ণ তো নিজেই বলছেন, "পরং হি ব্রহ্ম কথিতং যোগ যুক্তেন তণ্ময়া,আমা কর্ত্তৃক যোগ যুক্ত অবস্থায় পরব্রহ্ম বিষয়ে তাহা কথিত হইয়াছিল !" কৈ বলেননি তো, " আমাকর্ত্তৃক আমার নিজের বিষয়ে যাহা কথিত হইয়াছিল..?"

শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?

মেগাস্থিনিসের বিবরণে জানা যায়, তিনি যখন গ্রীক রাজদূতরূপে চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় এসেছিলেন তখন অর্থাৎ খৃঃপূঃ তৃতীয় শতাব্দী পর্য্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের দেবতা জ্ঞানে পূজা গুজরাটে সাত্বত বংশীয়দের মধ্যেই প্রচলিত ছিলো। ভারতের অন্যান্য লোকে শ্রীকৃষ্ণকে ঐ সময় পর্ষ্যন্ত আদর্শ মহামানবরূপেই মানতেন, মানতেন রাজনীতি লোকনীতি সর্ববিষয়েই একজন ভূয়োদর্শীরূপে। পরে সাত্বতদের এই অনুকরণে নব আভ্যুদিত বৈষ্ণব সম্পরদায়ের পাদ অভয়চরণারবিন্দ ও বিমলা প্রসাদ দত্তের (ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী) মহিমায় শ্রীকৃষ্ণ একেবারে পূর্ণ অবতারী পুরুষ পরমাত্মারূপে দেখা দিলেন। বেদব্যাসের নাম দিয়ে ভাগবত রচিত হ'ল এবং তাতেই এই বিকৃত প্রচেষ্টা চরমে উঠেছে। চতুর্ভূজধারী বিষ্ণুর সঙ্গে কৃষ্ণ হয়ে গেলেন একাত্ম,কখনও শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী পীতাম্বর, আবার ককনও বা দ্বিভূজ মূরলীধারী,কটিতে পীতবসন পীতধাড়া,মাথায় শিখিপুচ্ছ কেয়ুরকনককুন্ডলবান্, বক্ষে শ্রীবৎস লাঞ্ছিত কৌস্তূভমণি ! রসিকেন্দ্র চূড়ামনির [ভাগবতমতে] রসিক ভক্তরা নানা গ্রন্থের মাধ্যমে প্রচার করতে লাগলেন এ সমস্তই নাকি চিন্ময় ! পুনরায় আপনাদের বিচার করে দেকতে বলি শ্রীকৃষ্ণ যদি পূর্ণ পরব্রহ্মই হ'ন, তাহলে তাঁর ধাম তো প্রকৃতেঃ পরঃ[ন তদ্ভাসয়তে সূর্য্যো...তদ্ধামং পরমং মম; গীতা ১৫।১৬]..? প্রকৃতি পরপারে সেই পরম ধামে ভক্তের মনোহরণ বেশভূষা, শিথিপুচ্ছ পীতবসন, অলঙ্কার, বাঁশী প্রভৃতি তো আর কারো থাকার কথা নয় ! শিরে শিখি পুচ্ছের জন্য শিথি, অলঙ্কার নির্ম্মাতা স্বর্ণকার, পীতবসনের জন্য তন্তুবদয়, বাঁশী তৈয়ারীর জন্য শিল্পী-এরাও কি সৃষ্টির আদিতে ছিল..? ভক্ত-প্রাণতোষিণী সাম্প্রদায়িক বাখ্যা টীকার কথা বাদ দিয়ে, বিবেক বুদ্ধি সহ শাস্ত্র বাক্য আর স্বয়ং কৃষ্ণবাক্য বিচার করে দেখলেই বোঝা যায়, 'নরাকৃতি পরব্রহ্মত্ব', ধড়াচূড়া মূর্ত্তির চিণ্ময়ত্ব' ' মালা তিলক চন্দনের অপ্রাকৃত তত্ত্ব" প্রচারের মূলে কোন সত্য নেই। কেবল স্বতন্ত্র সম্প্রদায় সৃষ্টির একটা অপকৌশল ! 

খুব ভালো করে পূর্ব্বাপর বিচার করলে দেখা যায়, মাতাপিতার রজোবীর্য্য সংযোগে আর পাঁচ জন মানুষ যেমন জন্মগ্রহণ করে, দেবকীবসুদেবের শুক্র-শোনিত যোগে শ্রীকৃষ্ণেরও দেহ উৎপন্ন হয়েছিলো। তারপর শৈশব, বাল্য, কৈশর যৌবন বার্দ্ধক্যের ভিতর দিয়ে পরিণামশীল দেহের যেমন পরিবর্ত্তন হয় শ্রীকৃষ্ণের ও তেমনি হয়েছিল। তাঁর দেহ "অপ্রাকৃত" ছিল না। একশত কুড়ি বছর বয়সে নিজ জীবনের মধ্যদিয়ে নানা কার্যসম্পাদন করে যাদবগণের মৃত্যুর পর যোগস্থ হয়ে দেহ ত্যাগ করেন। পরে দারুকের কাছে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে, "অর্জ্জুন গিয়ে সকলের ঔর্দ্ধদেহিক ক্রিয়া করতে অসমর্থ হওয়ায় কেবলমাত্র বসুদেব,শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামের দেহগুলি অগ্নিসংস্কার করে হস্তিনাপুরে চলে যান।"[মহাভারত,আদিপর্ব,২অ]

কৃষ্ণ বিরহে শোকার্ত্ত অর্জ্জুনও ব্যাসের আশ্রমে গিয়ে তাঁর প্রাকৃত দেহ যে এই প্রাকৃত জগতেই আর পাঁচজনের মত মৃত্যুর সময় ফেলে রেখে গিয়েছিলেন তা বলেছিলেন-

"যস্য় মেঘবপুঃ শ্রীমান্ বৃহৎ পঙ্কজ লোচনঃ

স কৃষ্ণঃ সহ রামেন ত্যক্তাদেহং দিবং গতঃ"

কাজেই যে দেহ কৃষ্ণ নিজে পরিত্যাগ করে গেলেন, অর্জ্জুন নিজ হাতে অগ্নিসংস্কার করে যেটি পুড়িয়ে ফেললেন, তা অপ্রাকৃত দেহ হয় কিরূপে..? তথাকথিত কৃষ্ণ-ভক্তদের জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হয়, " অপ্রাকৃত চিন্ময় দেহ" কি দাহ করা যায়..? মহাভারতের বেদব্যাস ভগবান কৃষ্ণের যে অপ্রাকৃত দেহতত্ত্ব জানলেন না, বৈষ্ণবরা বুঝি তা Special ভাবক্লিন্ন দৃষ্টিতে অনুভব করেছিলেন, "ব্রজের গোপীপদরেণু'র মহিমায়..??

যে মহদেহকে শ্রীকৃষ্ণ এই ধূলির ধরনীতে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন জীর্ণ বস্ত্রবৎ, প্রাণপ্রিয়সখা যে দেহের অগ্নিসংস্কার করেছিলেন, এখন তাঁর মৃত্যুর হাজার হাজার বছর পরে মাটি কাঠ পাথারের একটি কৃষ্ণমূর্ত্তি গড়ে "অপ্রাকৃত চিন্ময় শ্রীবিগ্রহ' বলে পূজার্চ্চনা ভাবোন্মাদের খামখেয়াল ছাড়া কিছু নয় !

এখন বৈষ্ণবচুড়ামনি প্রশ্ন করবে গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ আমি যুগে যুগে পাপীদের বিনাশের জন্য আসি বলেছেন

তাহলে শোন ভাই বৈষ্ণবচুড়ামনি ! গীতাতে যেখানে যেখানে শ্রীকৃষ্ণ "মম ময়ি মাম্" ব্যবহার করেছেন, সেই সমস্তই তিনি ঋষি কপিল,ঋষভ ও শঙ্করাচার্য্যের মত আত্মাকে লক্ষ্য করে আত্মাতে সমাহিত হয়েই বলেছেন। উদঃ কপিলদেব তাঁর পিতাকে উপদেশ দিচ্ছেন-

"গচ্ছাকামং ময়া পৃষ্টো মায়সন্ন্যস্ত কর্ম্মনা

            জিত্বা সুদুর্জ্জয়ং মৃতত্বায় মাং ভজ"[ভাগ ৩।২৮।৩৮]

এখন যথা ইচ্ছা গমন কর, আমাতে সমস্ত কর্ম্ম সমর্পণ করে, দুর্জ্জয় মৃত্যুজয় এবং অমৃতত্ত্ব লাভের জন্য আমায় ভজনা ক'রো। ঋষভদেবও," আমার প্রীতির জন্য কর্ম্ম করা, আমার কথা বলা, আমার ভক্তগণের সঙ্গ, আমার গুনকীর্ত্তন- মৎকর্ম্মভির্মৎকথয়া চ নিত্যং মদ্দেবসঙ্গাদ্গুণকীর্ত্তনাম্মে' [৫।৫।১১] এই রকমের 'আমি আমার' সূচক উপদেশ দিয়ে পুত্রগণকে বলছেন, "স্থাবর জঙ্গম যা কিছু আছে সেই সকল পদার্থেই আমার অধিষ্ঠান জেনে পবিত্র দৃষ্টিতে সতত তাদের সস্মান করো তাহাই আমার পূজা [ভাগঃ৫।৫।২৬]। দশম স্কন্ধের উননব্বই অধ্যায়ে ভূমাপুরুষও উপদেশ কালে 'মম,মাম্,ময়ি' কথা ব্যবহার করেছেন। ঐ কৃষ্ণকেই তাঁর নিজের অলশ বলে বলেছেন(১০।৮৯।৩২) কৈ-এজন্য তো আপনারা কপিলদেব,ঋষভ এবং ভূমাপুরুষকে পূর্ণ ভগবান বলে মানেন না..?

ভাগবতকার, বিশেষ করে শ্রীজীব গোস্বামী তো তাঁদের অলশত্ব প্রতিপদানের জন্য "শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভে" প্রাণপন চেষ্টা করেছেন ! কেবল শ্রী কৃষ্ণের বেলাতেই 'মম ময়ি মাম্' কতাগুলি পূর্ণ ভগবত্ত্ব সূচনা করে..? শঙ্করাচার্য্য যখন বলেছেন, অহং নির্বিকল্পো নিরাকাররূপো বিভূর্ব্যাপী সর্ব্বত্র সর্ব্বেনন্দ্রিয়নাম্......" তখন কি আপনারা বলবেন তিনি নিজেকে পূর্ণ পরমাত্মা বলে declare করেছেন..? অধুনিক যুগে রমনমহর্ষি,জগত্গুরু শঙ্করাচার্য্য ব্রহ্মানন্দস্বামীও 'আমি আমার'কথা ব্যবহার করতেন। কৈ এজন্য তো তাঁরা 'স্বয়ং ভগবান্(পরমব্রহ্ম)" হয়ে যান নি..?

আত্মজ্ঞ মহাপুরুষ যখন ভূমি থেকে ভূমার ক্ষেত্রে উঠেন, তখন দ্বৈত-ভ্রান্তি দূরে যায়, জ্ঞাতা-জ্ঞেয়-জ্ঞান, দ্রষ্টা-দৃশ্য-দর্শন, এই ত্রিপুটুর হয় লয়; আত্মা যদি পরমাত্মা হয় তাহলে যোগ সমাধির সময় আত্মা কার সাধনা করে কিসে সমাধিস্থ হয়ে মোক্ষপ্রাপ্তি করেন..? ব্যুত্থানের পরেও যে চিত্তবৃত্তি মানুষকে দেশকালপাত্র দেহাত্মবুদ্ধি হওয়ায়, সর্বত্রই দেখেন, সেই একই আত্মা জ্ঞাতা জ্ঞেয় জ্ঞান, দ্রষ্টা দৃশ্য দর্শনরূপে Subjectively & Objectively অভিব্যক্ত ! তরঙ্গ যদি বলে আমি জল, স্বর্ণময় অলঙ্কার যদি নামরূপ উপাধির পরিবর্ত্তে বলে আমি সোনা, তাতে যেমন ভুল হয় না তেমনি নামরূপ উপাধি বিনির্ম্মুক্ত স্বরপোলব্ধির পর, সর্ব্বত্র অভেদ-দর্শনের জন্য আত্মঙ্গ পুরুষরা "আত্মাদেশ" বাক্য ব্যবহার না করে পারেন না। ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মৈব ভবতি। আত্মতত্ত্ববিদ্ মহাযোগৈশ্বর্য্যসালী মহাপুরুষরা যখন শিষ্যকে উপদেশ দেন, তখন আত্মাতে সমাহিত হয়েই উপদেশ দেন। দেহাত্মবোধ তাকে না বলে, পরমাত্মার সঙ্গে একাত্ববোধের জন্য, তাঁদের সেই সময়কার উপদেশগুলি পরমাত্মারই বাণীরূপে স্ফুরিত হয়। "যত্র নান্যৎ পশ্যতি, নান্যৎ শৃণোতি, নান্যাৎ বিজানাতি সভূমা। অথ যত্র অন্যৎ পস্যতি, অন্যৎ শৃণোতি, অন্যৎ বিজানাতি তদ্ অল্পম্। যো ভূমা তদ্ অমৃতম্, অথ যদ্ অল্পং,তৎ মর্ত্ত্যম্"-শ্রুতি বাক্য][-যে স্তলে অন্য দ্রষ্টব্য দর্শন করে না, অন্য শ্রোতব্য শ্রবণ করে না, অন্য জ্ঞাতব্য জানেন না, তাহাই ভূমা, তাহাই অমৃত; যাহা অল্প বা পরিচ্ছিন্ন, মনেন্দ্রিয় গ্রাহ্য, তাহাই নশ্বর।

আত্মজ্ঞ পুরুষেরা এই ভূমাবোধে প্রতিষ্ঠিত হয়েই মম,মায়,মাম্ ইত্যাদি কথা ব্যবহার করেন; তাঁদের সার্দ্ধত্রিহস্ত পরিমিত দেহ বা নিজের ব্যক্তিগত সত্ত্বা লক্ষ্য করে তাঁরা ওরকম কথা বলেন না। কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং অননুভবী সম্প্রদায়ী সাধুগুরুনামা ভন্ডগন নিজেদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী, তাঁদের কথার কদর্থ করে "উল্টা বুঝলি রাম" করে বসে আছে। পূর্ব্বতন আত্মজ্ঞ ঋষিদের মতই পরমাত্মবোধে চৈতন্য 'মুই সেই মুই সেই';রামকৃষ্ণও 'যেই রাম সেই কৃষ্ণ ইদানীং সেই রামকৃষ্ণ' বলেছিলেন। কিন্তু ভক্তিরসে বিপ্লাবিত চিত্ত দেহাত্মাবোধী ভক্তরা বসে আছেন- ওঁরাই পূর্ণ পরমেশ্বর ! অবতারী পুরুষ !! যুগাবতার ইত্যাদি !!!

পরোক্ষ এবং অপরোক্ষজ্ঞানের তারতম্যে, উপলব্ধ ভূমির তারতম্যানুযায়ী ঐ সর্বব্যাপক ব্রহ্মচৈতন্যের বিষয় বেদে বা শ্রুতিতে তিন উপায়ে উপদিষ্টা হয়েছে(১) কোথাও 'তদাদেশ' বাক্য কোথাও "আত্মাদেশ" এবং কোথাও বা "অহংকারাদেশ" বাক্য; আর 'অহং ব্রহ্মাহস্মি"- এটি 'অহংকারাদেশ' বাক্য।

তিনিই উর্দ্ধে, অধে,পশ্চাতে, সন্মুখে,দক্ষিনে,উত্তরে,আত্মাই এই সকল- 'আত্মা এব ইদং সর্ব্বমিতি-এটি আত্মাদেশ' বাক্য; আর (৩) আমি অধে, উদ্ধে, পশ্চাতে, সন্মুখে,দক্ষিণে,উত্তরে, আমিই এই সকল-'অহমেব অধঃস্তাৎ অহম্ উপরিষ্টাৎ, অহং পশ্চাৎ অহং পুরস্তাৎ..... অহমেব ইদং সর্ব্বমিতি'- এই হ'ল 'অহংকাদাদেশ' বাক্য।

অপরোক্ষনুভুতির পরমভুমিতে যিনি ঐঠেন তাঁর উপদেস বাক্য ঐরূপ-' অহংকারাদেশ' রূপে উপদিষ্ট হয়। শ্রীকৃষ্ণ যেমন গীতাতে বলেছেন, অহং ওষধীষু,বনস্পতিষু;, বেদের ঋষিরাও ঠিক ঐ সুরেই ঐ ভাবেই বলেছেন, 'অহং ওষধীষু' ভুবনেষু অহং বিশ্বেষু ভুবনেষু অন্তঃ;' অহং রুদ্রেভির্ব্বসুভিশ্চরাম্যহং"-[ঋগ্বেদ], 'অহং অদ্ধি পিতিস্পরি

মেধা মৃতস্য জগ্রহ, অহং সূর্য্য ইবাজানি' [সামবেদ], 'অহং পরস্তাৎ অহং অবস্তাৎ যদন্তরীক্ষঃ য অসৌ আদিত্যে পুরুষঃ স অসৌ অহম্"[যজুর্ব্বেদ]

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাক্য, 'অহং সর্ব্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্ব্বং প্রবর্ত্ততে' এবং ওদিকে ঋষি বাক্য ' অহং বিশ্বম্ ভুবনম্ অভ্যভবম্'-কি ঠিক একই রূপ নয়..?

ন চ মত্স্থানি ভূতানি পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্ ।
ভূতভৃন্ন চ ভূতস্থো মমত্মা ভূতভাবনঃ ।।(গীতা ৯/৫)

পদার্থঃ - ( মতস্থানি, ভুতানি,ন,চ) আমাতে ভূত স্থির নয় ( ন,চ,ভুতভৃত্) এবং না অামি সব প্রানীকে ধারন পোষনকারী ( মে) অামার ( যোগম্) যোগ ( ঐশ্বরম্= ঈশ্বরেভবঃ= ঐশ্বরঃ, তং ঐশ্বরং যোগম্) ঈশ্বরে যে যুক্ত তাহাকে ঐশ্বর বলা হয়, সেই ঐশ্বর যোগকে তুমি ( পশ্য) দেখ ( মাম, আত্মা) আমার আড়ত্মা ( ভূতভাবনঃ) ভূত সকলে সংকল্প করে থাকে।(গীতা ৯/৫)

ভাষ্যঃ এই শ্লোকে কৃষ্ণজী ঈশ্বরের সহিত যোগযুক্ত ছিল তাহার ' পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্' এই কথন করে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, অামার ঈশ্বরের সাথে এমন যোগ অাছে যাহা হতে অামি সব ভূতের কর্তা না হয়ে ও তাহাসকল করিবার অভিমান করিতে পারি, এখানে কৃষ্ণজী ঈশ্বরের সাথে অদ্ভুত যোগ ছিল যাহাকে সাধারন পুরুষ বুঝতে পারে না,

একমাত্র বেদ বেদজ্ঞ জ্ঞানী যোগী পুরুষগন বুঝতে পারে।

পাষাণ আদির মূর্তি পরমেশ্বর নয়,,

"য় এক ইদ্বিদয়তে বসু মর্তায় দাশুষে।

ঈশানো অপ্রতিম্কুত ইন্দ্রো অঙ্গঃ।।"-সাম-১৩৪১

পদার্থ -[প্রথম ] পরমাত্মার পক্ষে। (য়ঃ এ ইত্) যে একই,আর (দাশুষে) আত্মা সমর্পণকারী ( মর্তায়) মনুষ্যের (বসু) শ্রেষ্ঠ গুণ-কর্ম-স্বভাব রূপ ঐশ্বর্য (বিদয়তে) বিশেষ রূপ দান করেন।(অঙ্গ) হে ভাই! সে (ঈশানঃ) সবার শাসক (অপ্রতিম্কুতঃ)কেউই প্রতীকার করতে পারেন না (ইন্দ্রঃ)ইন্দ্র নামক পরমেশ্বর।

[দ্বিতীয়] রাজার পক্ষে। (য়ঃ এ ইত্) যে একাই সব শত্রুকে (বিদয়তে) বিনষ্ট করেন আর (দাশুষে) আর দানকারী (মর্তায়)প্রজাজনের (বসু) ঐশ্বর্য (বিদয়তে) প্রদান করেন আর যে (ঈশানঃ) শাসনে সমর্থ তথা ( অপ্রতিম্কুতঃ) না মূর্খ-নির্বোধশীল হোউন,(অঙ্গ) হে ভাই,তাহাকে (ইন্দ্র) রাজা বানানো উচিত।

ভাবার্থ- পাষাণ আদির মূর্তি পরমেশ্বর নয়, পরন্ত্তু যে এক,নিরাকার, স্তোহার ঐশ্বর্য দানকারী সর্বাধীশ্বর সেই পরমেশ্বর নাম দ্বারা আহ্বানীয়। এই প্রকার প্রজাদের দ্বারা সেখানে নর রাজা-রূপে নির্বাচিত করা উচিত যে একাও অনেক শত্রুকে পরাজিত করতে পারে আর নিজের প্রজাদের তুষ্টি- সাধন করে। 

আবার শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৯/১১ তে দেখুনঃ

অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্৷

পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্৷৷

পদার্থঃ- (মূঢ়াঃ) মূর্খ ব্যক্তি (মাম্) আমাকে (মানুষীং তনুম্ আশ্রিতং) মনুষ্য শরীর ধারণ করেছি ভেবে (মম পরং ভাবম্ অজানন্তঃ) আমার পরম ভাবকে না জেনে (অবজানন্তি) অবজ্ঞা করে থাকে, আমার পরমভাব কেমন? (ভূতমহেশ্বরং) যে সমস্ত প্রাণী থেকে উত্তম ।

ভাষ্যঃ এই শ্লোকে শ্রী কৃষ্ণ তদ্ধর্মতাপত্তিরূপ পরমভাবের কথন করেছেন কিন্তু ঈশ্বর জন্মগ্রহণ করেন একথা যাহারা বলেন তাহারা এর অর্থ করে থাকে যে - শ্রী কৃষ্ণকে পরমেশ্বর না জেনে সেই সময়ের মনুষ্যগন যারা শ্রী কৃষ্ণের অবজ্ঞা করতেন তাহাদের শ্রী কৃষ্ণ এখানে মূঢ় বলেছেন, এই টীকা কারির এই অর্থ যদিও সত্য বলে মেনে নিই তবুও শ্রী কৃষ্ণের ঈশ্বরাবতার হওয়া সিদ্ধ নয়। কেননা সেই সময়ের লোকজন কৃষ্ণকে তখনো মনুষ্য শরীরধারী জানতেন যখন তাহার ভৌতিক শরীরের ভাব হয়, আমাদের মতে এর অর্থ এই যে - প্রকৃতির তামস ভাবযুক্ত ব্যক্তি তাহার পরম ভাবের জ্ঞাতা নয় এইজন্য এই কথন করেছেন।

( আর্যমুনি ভাষ্য)

যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ,,পরমাত্মা সম্পর্কে কি বলেন??
আপনারাই দেখুন

জ্যোতিষামপি তজ্জ্যোতিস্তমসঃ পরমুচ্যতে৷
জ্ঞানং জ্ঞেয়ং জ্ঞানগম্যং হৃদি সর্বস্য বিষ্ঠিতম্৷৷
গীতা-১৩।১৮

অর্থ: তিনি সমস্ত জ্যোতিস্কের পরম জ্যোতি; তিনি সমস্ত অন্ধকারের অতীত এবং অব্যক্তসরুপ । তিনিই জ্ঞান, তিনিই জ্ঞেয় এবং তিনিই জ্ঞানগম্য, তিনিই সকলের হৃদয়ে অবস্থিত।

আমরা যারা শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর বলতে গিয়ে অন্যদের নিন্দা করি তো আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে শ্রীকৃষ্ণ কার উপাসনা করতো কোন মহামন্ত্র জপ করতো। আসুন আমরা আজ সবকিছু জেনে নিই।।।

এক স্বয়ং জ্যোতি রণস্তমব্যয়ম স্ব সংস্থয়ান্বিত্য নিত্যরিস্তকল্মষম।

 ব্রহ্মাথ্য মাসোদ্য ভবনাশ হেতুভিঃ স্বর্শক্তিভিলক্ষিত ভাবনিবৃতিম।।"
[ভাগবত ১০/৭০/৫]
.
ভাবার্থঃ-----
যিনি এক এবং জ্যোতি স্বরূপ, অনন্ত, অব্যয় অর্থাৎ একরুপ বা একরসে বিদ্যমান এব্য সর্বত্র নিজ অবস্থান হেতু নিয়ত অন্যায় কার্য দূর করেন এবং যাকে ব্রহ্ম বলা হয়, যিনি এই বিশ্ব চরাচর সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয় করার সামর্থ্য যুক্ত কৃষ্ণ তারই উপাসনা করতেন।
.ভাগবতের ১০ম স্কন্দের ৭০তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ সনাতন ব্রহ্মের ধ্যান তথা উপাসনা করতেনঃ--
.
"ব্রহ্ম মুহুর্তে উথ্থায় বায়ুর্সস্পৃশ্য মাধবঃ দধৌ প্রসন্ন করণ আত্মনং তমসঃ পরম।।"
[ভাগবত ১০/৭০/৪]
.
ভাবার্থঃ--
শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মমুহুর্তে শয্যা ত্যাগ করতঃ প্রাতঃ কৃত্যাদি সম্পন্ন করে প্রসন্ন চিত্তে তমোগুন হতে দুরে থেকে ঈশ্বর উপাসনা করতেন।
ভাগবতের ১০ম স্কন্দের ৭০তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্রের মাধ্যমে উপাসনা তথা সন্ধ্যা করতেনঃ--
.
"অথপুতো নির্মলস্য জলে যথাবিধি ক্রিয়া কলাপং পরিধায় ব্যাসসী।

 চকার সন্ধ্যাপগমাদি উত্তমো হুতানলো ব্রহ্ম জজাপ বাগযতঃ।।"
[ভাগবত ১০/৭০/৬]
.
ভাবার্থঃ--
অতঃপর তিনি বিধি অনুসারে নির্মল ও পবিত্র জলে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র ও উত্তরীয় ধারন করে যথাবিদি নিত্যকর্ম সন্ধ্যা বন্দনা করেন। অতঃপর তিনি যজ্ঞ করতে বসেন ও মৌন হয়ে গায়ত্রী জপ করেন।
ভাগবতের ১০ম স্কন্দের ৪৫তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্র এ দীক্ষিত হয়েছিলেনঃ---
.
"ততশ্চ লব্ধসংস্কারৌ দ্বিজত্বং প্রাপ্ত সুব্রতৌ।

 গর্গাদ যদুকুলাচার্যাদ্ গায়ত্রং ব্রতমাস্থিতৌ।।"
[ভাগবত ১০/৪৫/২৯]
.
ভাবার্থঃ--
এইপ্রকার শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম যদুকুলাচার্য গর্গের নিকট উপনয়ন সংস্কার প্রাপ্ত হয়ে দ্বিজত্বে উপনিত হলেন এবং গায়ত্রী ধারণ ধারণপূর্বক ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত হলেন।
.মহাভারতের শান্তিপর্বের ১৫২তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ সনাতন ব্রহ্মের ধ্যান তথা উপাসনা করতেনঃ--

"স ধ্যানপথমাবিশ্য সর্ব্বজ্ঞানানি মাধবঃ।
অবলোক্য ততঃ পশ্চাদ্দধৌ ব্রহ্ম সনাতনম্।।"
[মহাভারতঃ শান্তিপর্বঃঅধ্যায়ঃ৫২ শ্লোক ২ ]
.
ভাবার্থঃ----
তদনন্তর যাহাতে সমস্ত জ্ঞান উৎপন্ন হয়, সেইভাবে ধ্যান অবলম্বন করিয়া, তিনি নাসিকার অগ্রদেশ দেখিতে থাকিয়া, সনাতন ব্রহ্মের চিন্তা করিলেন।
মহাভারতের শান্তিপর্বের ১৫২তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্র এর মাধ্যমে উপাসনা তথা সন্ধ্যা করতেনঃ--
.
"তত উণ্থায় দাশার্হঃ স্নাতঃ প্রাঞ্জলিরচ্যুতঃ।
জপ্ত্বা গুহ্যং মহাবাহুরগ্নীনাশ্রিত্য তস্থিবান্।।"
[মহাভারতঃ শান্তিপর্বঃঅধ্যায়ঃ১৫২ শ্লোক ৭ ]
.
ভাবার্থঃ-----
অনন্তব মহাবাহু কৃষ্ণ শয্যা হইতে উঠিয়া, স্নান করিয়া, হস্তযুগল সংযোজন - পূর্ব্ব বেদমাতা গায়ত্রী মহামন্ত্র জপ ( প্রাতঃসন্ধ্যা) করিয়া,হোমাগ্নিব নিকটে যাইয়া, প্রাতঃকালীয় হোম করিবার জন্য অবস্থান করিলেন।।

পৌরাণিকদের দাবী -
তিনি পূর্বে জন্মগ্রহন করেছিলো তিনিই মাতৃগর্ভে স্থিত এবং তিনিই ভবিষ্যতে জন্মগ্রহন করবেন।
.

মন্ত্রের সঠিক অর্থঃ-
এষো হ দেবঃ প্রদিশো নূ সর্বাঃ পূর্বো হ জাতঃ স গর্ভে অন্তঃ।
স এব জাতঃ স জনিষ্যমাণঃ প্রত্যঙ জনাস্তিষ্ঠতি সর্বতোমুখ।।যজুর্বেদ-৩২।৪
.
পদার্থঃ (এষঃ দেব) এই দেব (সর্বা প্রদিশঃ) সমস্ত দিকে (অনু) ব্যপ্ত হয়ে (হ) নিশ্চিতরূপে (পূর্বে) পূর্বে (জাতঃ) উৎপন্ন [ প্রকাশিত] হয়েছেন। (স উ) এবং তিনিই ( অন্তঃ গর্ভে) [হিরণ্য] গর্ভের মধ্যে বিদ্যমান (সঃ এব) তিনিই (জাতঃ) উৎপন্ন [ প্রকাশিত ] হয়েছেন (সঃ) তিনি (জনিষ্যমান) ভবিষ্যতে প্রকাশিত হবেন। হে (জনাঃ) মনুষ্য! তিনি (প্রত্যঙ) প্রত্যেকড় পদার্থের মধ্যে (তিষ্ঠতি) অবস্থান করে (সর্বতঃমুখ) সর্বতমুখ হয়ে আছেন।
.
 মন্ত্রার্থ বিশ্লেষন-
উক্ত মন্ত্রে পৌরানিকরা গর্ভ শব্দটি দেখেই একেবারে মাতৃগর্ভের কথা স্মরনে এসে গেছে। মন্ত্রের ক্রম, প্রকরন না দেখলে যা হয়। এর পূর্ব মন্ত্রে স্পষ্ট "হিরণ্যগর্ভ" শব্দটির উল্লেখ রয়েছে, মাতৃগর্ভের নয়।
আমরা জানি যে, এই জগৎ সৃষ্টির পূর্বে অন্ধকারারচ্ছন্ন ছিলো (ঋগবেদ ১০।১২৯।৩) এবং সর্বপ্রথম হিরণ্যগর্ভ সৃষ্টিড় হয়েছে (ঋগবেদ ১০।১২১।১)।এবং সেই স্বয়ম্ভূ ভগবান এই আকাশাদি পঞ্চভূত মহতাদি যাহা প্রলয়কালে সুক্ষরূপেড় অব্যক্তবস্থায় ছিলো, সেই সমুদায় স্থুলরূপে প্রকাশ করিয়া নিজেই প্রকটিতড় হয়েছেন।(মনুস্মৃতি ১।৬)কোনমাতৃগর্ভ থেকে উৎপন্ন হন নি। কারণ ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ।ড় সৃষ্টির পূর্বে যখন কোন জীবরই সৃষ্টি হয় নি তখন ঈশ্বর কার গর্ভ থেকে জন্ম নেবেন? কারন তার তো কোন জনকইড় নেই (শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ ৬।৯)
এর পরে বলা আছে তিনি ভবিষ্যতেও উৎপন্ন( প্রকাশিত) হবেন। অর্থাৎ ভবিষ্যতড় কল্পারম্ভে সৃষ্টির জন্য ঈশ্বর পুনরায় উৎপন্ন (প্রকাশিত) হবেন।
কিন্তু পৌরাণিকরা উল্টো অর্থ করে বললেন তিনি ভবিষ্যতে জন্মগ্রহন করবেন।
গীতা ২।২৭ এ বলা আছে জন্মগ্রহনকারীর মৃত্যু নিশ্চিত এবং তার পুনরায় জন্মও নিশ্চিত। যদি ঈশ্বরের জন্ম স্বীকার করা হয় তবে ঈশ্বর জন্ম মৃত্যুরড় চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়বেন। তখনঈশ্বর অস্থায়ী [বিনাশী] অথবা অল্পজ্ঞ হবে। অবিনাশী বা সর্বজ্ঞ নয় (ব্রহ্মসূত্র ২।২ড়।৪১)
মন্ত্রের শেষ লাইনে তো মন্ত্রার্থ আরো পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি সব পদার্থের মধ্যে অবস্থান করে সর্বতোমুখ হয়ে আছেন। গীতাই ও ঠিক এই কথাটিই বলা রয়েছে-
"তিনি সর্বত্র পাণি ও পাদ বিশিষ্ট, সর্বত্র চক্ষু, মস্তক ও মুখ এবং শ্রবণেন্দ্রীয় বিশিষ্ট। এবং লোকে সমস্ত পদার্থ ব্যাপিয়া অবস্থিত রহিয়াছে" গীতা ১৩।১৪।
অতএব কোন দেহধারীর পক্ষে সর্ব পদার্থের মধ্যে সব জায়গায় থাকা অসম্ভব।কারন দেহ একটি সীমার মধ্যে আবদ্ধ। আর তার সর্বত পাণিপাদ এবং সর্বতমুখ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
অতএব বেদ ঈশ্বরের জন্ম স্বীকার করে না ইহা সিদ্ধ।

অবতারবাদ যে বেদ বিরুদ্ধ তার প্রমাণঃ-
আলােক তীর্থে অবতারবাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট বেদোক্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও
নিম্নলিখিত বেদ ও শ্রুতিমন্ত্রগুলিও আপনাদের অবগতির জন্য উদ্ধৃত করছি
১। স পৰ্য্যগাক্ৰমকায়মত্ৰণমবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম।
কবিৰ্মনীষী পরিভূ স্বয়্যাথাব্যতােহর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাধ্য।
(যজু ৪০। ৪]

তিনি সর্বব্যপক, শরীর রহিত, শারীরিক বিকার রহিত ইত্যাদি।
অজো অক্ষা দাধার পৃঙ্খীং তস্তম্ভ দ্বাং মন্ত্রেভিঃ সতৈঃ।
প্রিয় পদানি পশশ্যা নিপাহি বিশ্বায়ুরগ্নে গুহা গুহংগা।। [ঋক্ ১। ৬৭। ৩]
শন্নো অজ এক পান্দেববাহ (ঋক্ ৭। ৩৫। ১৩]
ব্রহ্ম বা অজঃ। [শতপথ ৬। ৪। ৪। ১৫]
বেদাহমেতমজরং পুরাণং সর্বাত্মানং সর্বগতং বিভূত্বাৎ।
জন্মনিরােধ প্রবদন্তি যস্য ব্রহ্মবাদিনাে হি প্ৰবদন্তি নিত্যম্।
[ শ্বেতাশ্বতর ৩। ২' 24
৬। একধৈবানুদ্রষ্টব্যমেদমেয়ং ধুবং।
বিরজঃ পর আকাশ অজঃ আত্মা মহান্ ধুবঃ ।। বৃহদারণ্যক ৪|৪২৭]
৭। দিব্যোহ্যমূঃ পুরুষঃ বাহ্যভ্যন্তরােহ্যজঃ।
অনােহমনাঃ শুভ্র হ্যক্ষরাই পরতঃ পরঃ।। [মুণ্ডক ২। ১]
এইভাবে বেদ এবং শ্রুতিতে সর্বত্রই যাঁকে “অজ, অকায়ম, অশুক্র, অাবিরং,
অমূৰ্ত্ত, অক্ষরাৎ পরতঃ পরঃ,” বলা হয়েছে, ব্রহ্মবাদিগণ যাঁকে ‘
নিত্য জেনে
‘জন্মনিরােধ” অর্থাৎ তার জন্ম হয় না বলেছেন, সেই সর্বান্তরাত্মা সর্বব্যাপক পরমাত্মা
অবতার গ্রহণ করেন না, এই কথাই স্বতঃসিদ্ধ। ডাঃ সেনগুপ্তের মিথ্যা আস্ফালন
সুধী পাঠকের হাসির উদ্রেক করবে মাত্র! হিটলারী নীতিতে দক্ষ, Micn Kampf এর আদর্শে দীক্ষিত, গােয়েবলস্ এর উত্তরসাধক ডাঃ সেনগুপ্তরা মিথ্যা রটনায় সিদ্ধহস্ত। যে কোনও শিষ্টলােক কারও রচনা থেকে কোনও অংশ উদ্ধৃত করলে সেই অংশ বা লাইনটি বিকৃত করেন না। কিন্তু ওঁদের কোনও শিষ্টনীতির বালাই নেই। “আলােক তীর্থকে লােকচক্ষে হেয় করবার জন্য স্বীয় “শাস্ত্ৰমৰ্যাদা রক্ষায় যেখানে যেখানে আলােক তীর্থের উদ্ধৃতি দিয়েছেন সেগুলি সবই খণ্ডাংশ মাত্র এবং বিকৃত। এমন কি, আমি যে প্রসঙ্গে যে। কথা বলিনি সেই অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে এনেই ‘উদোরপিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়েছে। বাক্যার্থ বােধের প্রধানতঃ চারটি কারণ :-আকাঙক্ষা, যােগ্যতা, আসক্তি এবং তাৎপৰ্য। পূর্বাপর প্রসঙ্গ, গ্রন্থকারের অভিপ্রায় ধরেই কোনও প্রস্থের অংশ বুঝতে হয়। কিন্তু যে ডাঃ সেনগুপ্তরা বেদ শ্রুতিবাক্যগুলির উপরেই নিজেদের সংকীর্ণত ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ-ছুরি মারতে পারেন, তারা আলােক তীর্থের অংশগুলি বিকৃত করে জনতাকে ধোঁকা দিবার জন্য লিখবেন তাতে আর আশ্চর্য কি?

 ঐ অবতারবাদ প্রসঙ্গেই ডাঃ সেনগুপ্ত লিখেছেন-“শৈলেন্দ্র ঘােষাল বলিতেছে, অবতারবান অশস্তব ; মানুষীর ক্ষুদ্র জরায়ু মধ্যে অমূর্ত, অসীম অবতার হয়ে আসা তাঁহার আত্মহত্যা। এই কথা খুব পণ্ডিতের মত বলিল অথচ অন্যত্র লিখিতেছে-“দরিয়ায়ে মহিতিদার শুবয়েদার সুরত খাক ইসমায়ে। অর্থাৎ একটি কলসীতে বিশাল সমুদ্র বন্ধ থাকার মত এই মনুষ্যদেহে তিনিও গুপ্ত আছে। এত ক্ষুদ্রস্থানে থাকিয়াও আত্মরক্ষা হইল। পরমাত্মার এখানে আত্মহত্যা হইল না। সে কি? শৈলেন্দ্র ঘােষাল পূর্বে বলিয়াছে যে ইহাতে আত্মহত্যা হয়। কিন্তু এখন বলিতেছে আত্মরক্ষা হয়। এমন অসহব লােক কখনও দেখিয়া কি?জবাব না! ডাঃ সেনগুপ্ত যেমন অবলীলাক্রমে এখানে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে, অংশবিশেষ ছিন্নভিন্নভাবে উদ্ধৃত করে, এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশ লাগিয়ে মিথ্যা প্রচারের কৌশল দেখালেন—এরকম কুটকৌশলী মিথ্যাচারী লােক, “শাস্ত্ৰমৰ্য্যাদা রক্ষার নামে শামৰ্য্যাদা নাকারী, বেদ প্রতিপাদিত ধর্মের গুপ্ত আততায়ী এর পূর্বে কখনও দেখিনি, এ কথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করছি। প্রথমেই বলি ঐ ফারসী দোঁহাটি ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। দরিয়ায়ে নয়—কথাটি ‘দরিয়ায়ে, ‘ঝয়ে নয়-‘শুবুয়ে’, ‘মহিতদর শুয়েন্দার’ নয়—কথাটি ‘মহিত দারশুবুয়ে', সুরত' নয় সুরতে। যে কথাটি যা, সেটিকে বিকৃত করে উদ্ধৃত করলে ব্যাকরণগত, ভাবগত এবং অর্থগত যে বিকৃতি ঘটে—তা কি অবতার-কিঙ্করদের জানা নেই। “ডাঃ নলিনী রঞ্জন রকে বসে আব–“ডাঃ নলিনীরঞ্জ নরকে বসে” একথার মধ্যে কি কি প্রভেদ নেই? আলােক তীর্থে ইহজীবনেই ঈশ্বর লাভ সম্ভব এই বিষয় আলােচনা করতে গিয়ে
লিখেছি—“তাই এই Dying while Living জিজিত্ মরণা’ প্রকৃত পক্ষে হল আলােক রাজ্যে নবজন্ম। এই New_birth না হলে এই দেহে, ইহলােকেই দয়ালকে জানা বোঝা যায় না। দেখা যায় না, বিন্দুর মাঝেই সিন্দুর নাচন “দরিয়ায় মহিত দারণ্ডবুয়ে। দার সুরতে আৰু ইসমায়ে।” অর্থাৎ একটি কলসীতে বিশাল সমুদ্র বন্ধ থাকার মত, এই মনুষ্যদেহে তিনি গুপ্ত আছে”। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আপনারা বুঝতে পারকেন আমার ঐকথায় অবতারবাদের কোনও কথাই আসে না। যে অনর্থকরী কদৰ্থকারীরা বৈদিক ঋষিদের মনে বা ঐশীবাণীতে অবতারবাদ মূৰ্ত্তিপূজার কথা না থাকলেও বেদে অবতারবান ও মূর্তিপূজার প্রসঙ্গ জোর করে লাগিয়েছে তারা আলােক তীর্থেরও কোনও কথার কমালের বিড়াল বাখ্যা করবে এতে আর বিচিত্র কি! সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মা সর্বত্র আছেন, সর্বত্রই তার প্রকাশ, মহত্তম বন্ধুর মধ্যেও তিনি আছেন, ক্ষুদ্রতম বস্তুতেও  আছে—এ কথা বলা আর সেই সর্বব্যাপক পরমাত্মা স্থান কাল পাত্রের দ্বারা পরিচ্ছিন্ন হয়ে, একটি নির্দিষ্ট স্থানে জন্মগ্রহণ করে রাম, বামন, শূকর, সীতারামদাস হয়ে লীলা করে বেড়াচ্ছেন, এ কথা কি এক? সূর্যের প্রতিবিম্ব বিরাট সমুদ্রে পড়ে। স্ফটিকে আয়নায় পড়ে আর এক টুকরাে কয়লাতেও তার প্রতিবিম্ব বা প্রকাশ পড়ে একথা বলা—আর বিরাট সূৰ্য্য অন্তরীক্ষ থেকে তত করে ষােলকলা সহ নেমে এসে এক টুকরাে কয়লা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এ কথাতে কি একই ভাবের দ্যোতনা? আলাে সব স্থানে আছে, ঐ কাঠ টুকুরােটার মধ্যেও
আছে এই কথা বলা আর বিশ্বের সমূহ আলে সংহত হয়ে ঐ কাঠটুকরােটা হয়ে পড়ে আছে, একথা কলম কি একই মর্ম? অবতারবাদীরা বলে--সেই পূর্ণ পরমাত্মা নাকি তাঁর ষােল আনা সত্ত্বা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্লিষ্ট দেহ নিয়ে জন্মেন, লীলা করেন তাদের এই কথা আর—পরমাত্মা সর্বত্র আছে স্বমহিমায় তিনি অণু পরমাণুতেও আছেন, এ কথার মধ্যে যে রাত দিন তফাৎ, এ কি জড়বাদীদের জড় মস্তিষ্কে ঢােকে না? “যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে এই ভাণ্ডে, 'বিন্দু মাঝে সিন্দুর নাচন'—এ সব কথার নিগুঢ় মর্ম বুঝলে, মনুষ্যদেহে তিনি গুপ্ত আছেন (অর্থাৎ মনুষ্যদেহের মধ্যেও তিনি বিরাজিত, তাঁর মহাচেতন সত্ত্বার প্রকাশ) এ কথা নিয়ে শ্লেষ কার দুর্মতি ডাঃ সেনগুপ্তের হত না। তিনি মনুষ্য, ‘দেহ' এই কথা কয়টি দেখেই অবতারদাস বড়ই ভাবস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ওখানে ঐ কথার অর্থ-অবতারবাদীদের ধারণার—ঈশ্বরের নরদেহ নিয়ে অবতরণের সম্পূর্ণ বিপরীত। যে অর্থে গীতায় বলা হয়েছে, “ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহৰ্জুন! তিষ্ঠতিহে অর্জুন! ঈশ্বর সকল প্রাণীর হৃদয়ে বিরাজমান”—ঠিক সেই রকম ভাবার্থেই ওখানে বলা হয়েছে “এই মনুষ্যদেহে তিনি গুপ্ত আছেন।” 

(ক) যে ভাব প্রকাশ করার জন্য বেদে বলা হয়েছে

“প্রজাপতিরতি গর্ভ অন্তর জায়মাননা বহুধা বিজায়তে” (যজু ৩১। ১৯]

“সেই অজ পরমাত্মা গর্ভস্থ জীবাত্মা এবং সকলের হৃদয়েই বিরাজ করছেন। অর্থাৎ তার সত্ত্বা, তাঁর প্রকাশ গর্ভস্থ জীবাত্মার মধ্যেও আছে,
(খ) যে ভাব প্রকাশ করার জন্য শ্রুতিমন্ত্র বলা হয়েছে
“তৎ সৃষ্ট তদেবানুপ্রাবিশৎ"
তিনি এই জগৎ সৃষ্টি করে তার মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট আছে, —ঠিকই ঐ রকম ভাবই ঐ দোহাটিতে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি অনুপ্রবিষ্ট আছেন একথা বললে যেমন সেই অসীম অনন্ত পরমেশ্বরের পূর্ণ সদ্য নিয়ে
জন্মগ্রহণ বােঝায় না, তেমনি একটি কলসিতে বিশাল সমুদ্র বন্ধ থাকার মত এই মনুষ্য দেহে জিন গুপ্ত আছেন—একথা বললেও অবতারবাদীদের Principle অনুযায়ীকুধারণা অনুযায়ী তিনি জন্মগ্রহণ করেন, এ কথা কোন মতেই বােঝায় না। কাজেই পূর্বাপর প্রসঙ্গ উপেক্ষা করে, কথা কয়টি বিকৃত করে আমাকে ব্যঙ্গ করায় তার
কিরূপ প্রবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে? ফহা মিথ্যা কল্পনার আশ্রয়ে, স্বকপােলকল্পিত কাহিনী রচনাতেও ডাঃ সেনগুপ্ত রহস্য রােমাঞ্চ সিরিজকেও হার মানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন—Alom Bomb পরীক্ষার প্রাক্কালে জগদ্বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক 0ppenheimer নাকি গীতার ‘কালােহমি লােকক্ষয়কৃৎ প্রবৃদ্ধো' এই শ্লোকটি মনে করে Aton Bomb এর switch টিপতে কিংবা Hydrogen Borth তৈরী করতে রাজী হন নাই।!! (শামৰ্য্যাদা রক্ষা]।
কৃষ্ণ বাক্য স্মরণ করেই যে Openheimer উদ্গত অঞ হয়ে, ভাববিহুল হয়ে পড়েছিলেন, সে কথা ডাঃ সেনগুপ্ত কোথায় পেলেন? Oppenheimer On মুহূর্থেই কৃষ্ণের বর্তমান সংস্করণ ‘অবতারের প্রিয় অনুচরকে কি টেলিফোন করে জানিয়েছিলেন? না- রাষ্ট্রীয় চরম গােপনীয়তা অবলম্বন করে যে Alom Bomb তৈরী করা হয়েছিল, সেই গােপন গবেষণাগারে United States Govt. Special Messenger HGW w সেনগুপ্তকে আবাহন করে নিয়ে গিয়ে স্বচক্ষে Oppenheimer এর ঐ ভাবস্থ অবস্থাটি নিরীক্ষণ করার সুযােগ দিয়েছিলে অথবা, আমারই ভুল হচ্ছে সঞ্জয় যেমন দিব্যদৃষ্টি প্রভাবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ নিরীক্ষন করতেন, কলির ‘সঞ্জয়' ডাঃ সেনগুপ্তও বুঝি দিব্যদৃষ্টি (!) প্রভাবে Oppenheimer এর ঐ মনের কথা টের পেয়েছিলেন। সম্প্রদায়ীদের ঐরূপ অগ্রাকৃতলীলা'
‘অপ্রাকৃত দৃষ্টিভ’ তাে আর নূতন গল্প নয়!! ডাঃ সেনগুপ্ত উপন্যাস রচনায় মন দিলে ভাল করতেন!!!
আলােক তীর্থে যা লেখা নেই, তাই বিকৃত করে পরিবেশন করে ডাঃ সেনগুপ্ত জনসাধারণের সামনে আলােক তীকে হেয় করবার জন্য বদ্ধপরিকর। আমি ভেবে আশ্চর্য হচ্ছি, যখন নিরপেক্ষ পাঠক ‘আলােক তীর্থ পঞ্চবেন, তখন যে, ডাঃ সেনগুপ্ত আলােক তীর্থের বিষয়বস্তু কি ভাবে misrepresent করেছেন, সে প্রবঞ্চনা ধরা পড়বে, তা কি তিনি বােঝেন না? ডাঃ সেনগুপ্ত পুরাণ এবং কিংবদন্তির যুগে থাকতে পারেন, কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাসের দোলনায় দোল খেতে পাব্লেন, কিন্তু যুগ এবং জাতি অনেক এগিয়ে গেছে, সে বােধ কি তার নেই। আত্মসচেতন সুধী পাঠকগণ এখন আর মুখে ঝাল খান না, কুৎসা রটনাকারীদের সম্প্রদায়ীদের অভিসন্ধি তাঁৱা বােঝেন। আলােক তীর্থ পড়ে ডাঃ সেনগুপ্তের বর্ণনার সত্যাসত্যটা যখন মিলিয়ে দেখবেন, তখনই বুঝবেন সম্প্রদায়ীদের গােয়েনীতির মহিমা! যেমন ডাঃ সেনগুপ্ত লিখেছেন—“শীতার বক্তা শৈলেন্দ্রনাথ ঘােষালের ন্যায় একজন সাধারণ মানুষ, এরূপ কথা শৈলেন্দ্র ঘােযালের মত উদ্ধত মুখেই বাহির হইতে জবাব  মিথ্যাবাদীদের এটি একটি জঘন্য মিথ্যা কথা। কারণ, আলােক তীর্থে আমি, শ্রীকৃষ্ণ মানুষ ছিলেন, সমাজনীতি, রাজনীতি, রণনীতি, তপস্যা এবং যােগশক্তিতে একজন অসাধারণ মানুষ ;—“পূর্ণ ভগবান” নন—এই কথাই প্রমাণ সহ উল্লেখ করেছি। কোথাও তিনি আমার মত মানুষ ছিলেন—এ কথা বলি নি আমি।
[লেখক শ্রীশৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রী ]

শ্রীকৃষ্ণ কী জন্ম গ্রহণ করেছিলেন?
বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।
তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেথ পরন্তপ।
গীতা-৪/৫
শ্রীকৃষ্ণ উবাচঃ হে পরন্তপ অর্জুন, আমার এবং তোমার বহুজন্ম অতীত হয়েছে, আমি সে সমস্ত জন্মের কথা মনে করতে পারি তুমি তা পার না।
ভাবার্থঃ এখানে স্পষ্ট যে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁহার সমস্তজন্মের কথা বলতে পারেন কারণ তিনি আপ্ত পুরুষ ছিলেন। পরের শ্লোকে তিনি আবার কি বলছেন?
অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্।
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়ায়।
গীতা-৪/৬
শ্রীকৃষ্ণ উবাচঃ যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা আমার আদি চিন্ময় রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।

যদিও আমি জন্ম রহিত এবং চিন্ময় দেহ অব্যয় (চিন্ময় দেহ অর্থাৎ চেতন শরীর যা সূক্ষ্ম শরীর এর কথা বলেছেন যা আমাদের এই পঞ্চভূতের শরীর হলো ক্ষনস্থায়ী যা ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু আমাদের সূক্ষ্ম শরীর নষ্ট হয় না যা একমাত্র যোগ বলে আত্মদর্শন হলেই তা বুঝানো সম্ভব।) আর তা এক কথায় আত্মা কারণ শ্রীকৃষ্ণ গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় এ ব্যাপারে বলেছেন-
ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ন ত্বং নেমে জনাধিপাঃ।
ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃ পরম্ ।
গীতা-২/১২
অর্থ- এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি, তুমি এবং এই সমস্ত রাজারা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও দেহী(দেহকে ধারণ করেন যিনি, আত্মা) কখনো আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না।
নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবো বিদ্যতে সতঃ।
উভয়োরপি দৃষ্টোন্তন্ত্বনয়োস্তত্ত্বদর্শিভিঃ।
গীতা-২/১৬
অর্থ- যারা তত্ত্বদ্রষ্টা তারা সিদ্ধান্ত করেছেন যে, অনিত্য জড়বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্যবস্তুর আত্মার কখনও বিনাশ হয় না। তত্ত্বদ্রষ্টাগণ উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
অর্থাৎ জড়বস্তুর স্থায়িত্ব নেই , জড়শরীর যা দিয়ে আমরা বড়াই করি যা আজ আছে কাল থাকবে না সে টাই জড় আর সেই জড় শরীর শ্রীকৃষ্ণেরও বিনষ্ট হয়েছে যার কারণে তিনি অনেক যুগে যুগে জন্মগ্রহণ করেছেন তা গীতার উদৃত শ্লোকদ্বারা প্রমাণিত আর যে কারণে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। আর আত্মার কখনো মৃত্যু হয় না তাহা নিম্নের শ্লোকে আবারও প্রমাণ দিচ্ছি-
অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি যেন সর্বমিদং ততম্।
বিনাশমব্যয়স্যাস্য ন কশ্চিতকর্তুমর্হতি।
গীতা-২/১৭
অর্থ- সমস্ত শরীরে পরিব্যাপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা, যেনে রেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।
ভাবার্থ- আর এই কথাই শ্রীকৃষ্ণ 4র্থ অধ্যায় 6নং শ্লোকে বলেছেন আমি জন্মরহিত, সর্বভূতের ঈশ্বর কারণ এই আত্মাই সমস্তভূতে যদি না থাকে তবে কোন জীবেরই অস্থিত্ব থাকবে না। তাই শ্রীকৃষ্ণের জড় শরীরের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু আত্মার নয় আর অন্যান্য আত্মার তুলনায় তিনার আত্মা ছিল নিষ্পাপ ও মুক্ত কারণ তিনি কোন পাপই করেন নাই সর্বদায় তিনি সংসারের কল্যাণে নিজের আত্মাশক্তির দ্বারা উজ্জ্বল উদাহরণ দিয়েগেছেন যা মহাভারতের চিত্র হতে বুঝা যায়। শত্রু নাশ করা, প্রত্যেকে তার সঠিক কর্মপথে ফিরে আনা, প্রত্যেক সনাতন ধর্মীয় মানুষের কর্তব্য। আবারও দেখুন অবিনশ্বর কে গীতায় হতে-
ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিস্নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।
গীতা-২/২০
অর্থৎ আত্মার কখনো জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না অথবা পুণঃ পুণঃ তার উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শ্বাশ্বত, নিত্য এবং নবীন শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনো বিনষ্ট হয় না।
ভাবার্থ- উপরের শ্লোক এর উদ্বৃতি থেকে প্রমাণিত যে শ্রীকৃষ্ণ যেখানে যেখানে আমি অমর, অবিনশ্বর, আমিই সব, আমিই বেদ, এই সমস্ত কথা তিনি জড়শরীরের অবস্থানরত আত্মায় স্থিত হয়ে বলেছেন কারণ তিনি একজন আত্মযোগী যাহার তুলনায় এই সংসারের আর কোন মহাপুরুষই হতে পারে না। কিন্তু এটা মানতে হবে যে তিনি ঈশ্বর অর্থাৎ পরমাত্মার কথাও অনেক শ্লোকে উল্লেখ্য করেছেন তারই প্রমাণ দিচ্ছি-
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশের্জুন তিষ্ঠতি।
ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়ায়।
গীতা-১৮/৬১
অর্থ- হে অর্জুনঃ ঈশ্বর সমস্ত জীবকে দেহরূপ যন্ত্রে আরোহণ করিয়া মায়ার দ্বারা ভ্রমণ করান।
কে বলছেন? শ্রীকৃষ্ণ, কার কথা বলছেন? ঈশ্বরের, কিসের দ্বারা ভ্রমণ করান? মায়ার দ্বারা ।
তবেম শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত।
ততপ্রসাদাতপরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শ্বাশ্বতম্।
গীতা-১৮/৬২
অর্থ- হে অর্জুন! সর্বত ভাবে তার শরণাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে।
ইতি তে জ্ঞানমাখ্যাতং গুহ্যাদগুহ্যতরং ময়া।
বিমৃশ্যৈতদশেষেণ যথেচ্ছসি তথা কুরু।
গীতা-১৮/৬৩
অর্থৎ হে অর্জুন! আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান দান করলাম। তুমি তা বিশেষভাবে বিচার করে যাহা ইচছা তাই কর।
আবারও বলছেন-
সর্বগুহ্যতমং ভূয়ঃ শৃণু যে পরমং বচঃ।
ইষ্টোসি মে দৃঢ়মিতি ততো বক্ষ্যাসি তে হিতম্ । গীতা-১৮/৬৪
অর্থ- হে অর্জুন! তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় তাই তোমার হিতের জন্য আমি সবচেয়ে গোপনীয় জ্ঞান উপদেশ তোমার হিতের জন্য বললাম।
ভাবার্থ - তাই শ্রীকৃষ্ণের সঠিক ভক্ত হতে হলে ঈশ্বরের আজ্ঞা বেদ অনুসরণ করতে হবে এবং আত্মদর্শী গুরুর কাছে আত্মতত্ব জানতে হবে সংসারের সকল তামসিকতাকে পিছনে ফেলে সংগ্রাম করে নিজেরে আত্মাকে পবিত্র করতে হবে আর শ্রীকৃষ্ণের প্রতিটি কর্মের অনুসরণ করতে হবে। পুরাণ গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে অনেক লীলা করা হয়েছে যা আদও সত্য নয় আর সে সব কর্ম কোন সভ্যমানুষের পক্ষে করা উচিত হবে না। আর শ্রীকৃষ্ণ গীতার কোথাও বলেন নাই যে আমার এত হাজার সন্তান এত হাজার সখি আছে আর তা ভন্ডের দল আমাদের মহানপুরুষকে একদিকে ননী চোরা, বস্ত্র হরণ করা, রাস লিলা বা নারী লীলা বানিয়েছেন আর একদিকে শ্রীকৃষ্ণকে সৃষ্টিকর্তা বানিয়েছেন আবার আর একদিকে তার মূর্তি তৈরি করে জড়োউপাসনায় মেতেছেন যার স্থায়িত্ব নাই তিনি স্বয়ং বলেগেছেন তার প্রমাণ উপরে দেওয়া আছে।
ন মে বিদুঃ সুরগণাঃ প্রভবং ন মহর্ষয়ঃ।
অহমাদির্হি দেবানাং মহর্ষীণাং চ সর্বশঃ।।
গীতা-১০।২
পদার্থঃ- হে অর্জুন! ( মে,প্রভবম্) আমার বিভূতিকে [যোগলব্ধ ঐশ্বর্য] ( সুরাগণাঃ) দেবতাগণও[ বিদ্বান মনুষ্য ] ( ন, বিদুঃ) জানিতে পারে না।( ন,মহর্ষয়ঃ) না মহর্ষিগণ জানেন, ( হি ) নিশ্চয় [এখন যে সকল ] ( দেবানাম্ ) দেবতা ( মহর্ষীনাম্, চ) ও মহর্ষিদেব ( সর্বশঃ) সকলের ( অহম্ আদিঃ) আদি [ শ্রেষ্ঠ ] আমি।।
ভাবার্থ- আমার এই যোগলব্ধ ঐশ্বর্য দেবতা [বিদ্বান মনুষ্যগণ ] জানিতে পারে না এবং না মহর্ষিগণ জানেন,কারণ আমিই সমম্ত দেব ও মহর্ষিদের শ্রেষ্ঠ।।

শ্রীকৃষ্ণ কি মূর্তি পূজায় বিশ্বাস করতেন
মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বচন শুনুন-
যস্যাত্নবুদ্ধি কুনপে ত্রিধাতুকে।
স্বধীঃ কলত্রাদিষু ভৌম ইজ্যধীঃ।।
যত্তীর্থ বুদ্ধিঃ সলিলে ন কর্হিচিজ্জনেষবভিজ্ঞেসু স এব গোখরঃ।।
ভাগবত পুরাণ 10/84/13
শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, যার, ত্রিধাতুযুক্ত (কফ-বায়ু-পিত্ত) দেহে আত্নবুদ্ধি,কলত্রাদিতে আত্নীয়বুদ্ধি,ভূবিকারে অর্থাৎ মৃন্ময়,পাষাণ মূর্তিতে দেবতাবুদ্ধি বা জলে তীর্থবুদ্ধি আছে, কিন্তু সাধুদের যে ব্যক্তি সেরূপ অর্থাৎ দেবতাজ্ঞান করে না,সে ব্যক্তি গরুর ঘাস বহনকারী গাধার মত।
অর্থাৎ,গাধা তেমন নিজে পশু হয়েও,অন্য পশু গরুর জন্য ঘাস বয়ে মরে অথচ নিজের জন্য ঘাস জোটে না,সেই রকম যে লোক ভগবানের প্রত্যক্ষ জীবন্ত স্বরূপ সাধু মহাপুরুষকে অবজ্ঞা করে জড়মূর্তির পূজার জন্য মন্দিরে এবং জলময় স্থানগুলোকে তীর্থ মনে করে দৌড়ে বেড়ায় সেই লোক ঠিক ওই গাধার মত কেবল পন্ডশ্রম করে মরে!!!
এইবার গীতার প্রমাণ দেখুন
যত্তু কৃৎস্নবদেকস্মিন্ কার্যে সক্তমহৈতুকম্।
অতত্ত্বার্থবদল্পং চ তত্তামসমুদাহৃতম্।।
গীতা_18/22
এই শ্লোকটির উপর প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব আচার্য ও চৈতন্য মহাপ্রভুর অতি প্রিয়,শ্রীধর স্বামীর টীকা দেখুন-------
"একস্মিন্ কার্যে দেহে বা প্রতিমাদৌ বা কৃৎস্নবৎ পরিপূর্ণবৎ সক্তম্ এতাবানেবাত্না ঈশ্বরো বেত্যাভিনিবেশ যুক্তম্।অহৈতুকম্ নিরুপপত্তিকম্।
অতত্ত্বার্থবৎ পরমার্থাবলম্বনশূন্যম্।
অতএবাল্পম্ তুচ্ছম্।অল্পবিষয়াত্বাৎ।অল্পফলত্বাচ্চ।যদেবম্ভূতম্ জ্ঞানম্ তত্তামসমুদাহৃতম্।।"
অর্থাৎ, যে জ্ঞানে একমাত্র দেহে বা প্রতিমাদিতে পরিপূর্ণ ঈশ্বর অবস্থিত আছেন,এইরূপ অভিনিবেশ জন্মে,এক পরিছিন্ন মূর্তি পরিপূর্ণবৎ প্রতীয়মান হয়,সেই জ্ঞানে কোন পরমার্থ লাভ হয় না।অতএব,অযথার্থ, যুক্তিহীন ও তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলা হয়।
অর্থাৎ,যে জ্ঞানে মনে হয়,ঈশ্বর শরীর ধারণ করেন,মূর্তির মধ্যে ঈশ্বর আছেন বা মূর্তিই ঈশ্বর,সেই জ্ঞান হল খুব নিম্নমানের,তামসিক জ্ঞান।
বৈষ্ণবরা তো শ্রীকৃষ্ণকে স্বয়ং ঈশ্বর বলেন।স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ মূর্তি পূজকদের গাধা বলেছেন।
আপনাদের চৈতন্য মহাপ্রভুর অতি প্রিয় বৈষ্ণব আচার্য,শ্রীধর স্বামী মূর্তিকে ঈশ্বর ভেবে পূজা করাকে তামসিক জ্ঞান বলেছেন!!!

কৃষ্ণের (অবতার) অবতরণ প্রসঙ্গ ও বেদে কৃষ্ণ নাম প্রসঙ্গ আলোচনাঃ কৃষ্ণ নিয়ানং হরয়ঃ সুপর্ণা অপো বসানা দিবমুৎপতন্তি। ত আববৃত্তন্ত্সদনাদৃতস্যাদিদ্ ঘৃতেন পৃথিবী ব্যুদ্যতে।। (ঋঃ ১।১৬৪।৪৭, অঃ ৯।১০।২২) উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন - " এই বরণীয় ভর্গদেব শ্রীকৃষ্ণকে (নিয়ানং) ধরাধামে অবতীর্ণ হইতে দেখিয়া (সুপর্ণা) শ্রীকৃষ্ণের শোভন পক্ষ গরুড়াদি বাহন (হরয়ঃ) যজ্ঞভাগ গ্রহনকারী সাধুপুরুষগণ ---- স্বর্গ হইতে আসিয়া (আববত্রন্) গোপ যাদবাদিরূপে শ্রীকৃষ্ণকে পরিবেষ্টন করিয়া অবস্থান করিয়াছিলেন। " (মন্ত্রভাগবতঃ গোকুলকান্ড, মন্ত্র সংখ্যা ৫)
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?
সমীক্ষাঃ মন্ত্রটিতে কৃষ্ণ শব্দটি দেখে নীলকন্ঠ জী কল্পনার রথে আরোহন করেছেন। প্রথমত তিনি কৃষ্ণকে ধরাধামে অবতীর্ণ করেছেন এবং সেই সাথে তাহার বাহন এর বর্ণনা করতেও ভূলে যান নি। তিনি যদি বৈদিক কোষ নিরুক্ত নিঘন্টু আদি ভালোভাবে অধ্যয়ন করতেন তবে এ ভূল তিনি করতেন না। নিরুক্তকার যাস্ক মন্ত্রটির সুন্দর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা করেছেন (
নিরুক্ত ৭।২৪)। কৃষ্ণ শব্দের অর্থ হচ্ছে - আকর্ষন, কালো, অন্ধকার ইত্যাদি। আর সুপর্ণ শব্দটির অর্থ হচ্ছে কীরণ ( সুপর্ণ ইতি রশ্মিনামানি ; নিঘন্টু ১।৫) যেটাকে কিনা নীলকন্ঠ জী গরুড় পাখি বানিয়েছেন । অর্থাৎ আকর্ষনযুক্ত সূর্যের কীরণ যে জলকে অন্তঃরিক্ষে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং সেই জল বৃষ্টির মাধ্যমে পুনরায় ফিরে আসে মন্ত্রে তারই বর্ণনা রয়েছে - পদার্থঃ (হরয়ঃ) রস হরণকারী (সুপর্ণঃ) কীরণ (অপঃ) জল (বসানাঃ) আহোরন করে (কৃষ্ণম্) আকর্ষন কারী (নি য়ানম্) নিত্য গমন স্থান অন্তরিক্ষে (দিবম্) প্রকাশময় সূর্যমন্ডলে (উত্ পতন্তি) চলে যায়। ( তে) তাহাই (আত্) পুনরায় (ঋতস্য) জলের (সদনাত্) ঘর থেকে (আ ববৃত্তন্) ফিরে আসে, এবং (ঘৃতেন) জল দ্বারা (পৃথিবীম্) পৃথিবীকে (বি) বিবিধ প্রকারে (উদ্যতে) সিঞ্চন করে।। (ঋঃ ১।১৬৪।৪৭, অঃ ৯।১০।২২) সায়ণ ভাষ্য:
এতো সুন্দর পানিচক্রের বর্ণনাকে নীলকন্ঠ জী কৃষ্ণের অবতরণ বানিয়ে ফেলেছেন। ♦ কালীয় নাগ দমন প্রসঙ্গ অপাদোহস্তো অপৃতন্যদিন্দ্রমাস্য বজ্রমধি সানৌ জঘান। বৃষ্ণো বধ্রিঃ প্রতিমানং বুভূষন্ পুরুত্রা বৃত্তো অশয়দ্ ব্যস্তঃ।। (ঋগবেদঃ ১।৩২।৭) উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন - " (অপাদহস্তঃ) হস্তপদহীন সেই কালীয় নাগ (ইন্দ্রং) শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হইয়া (অপূতন্যৎ) তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইলো। শ্রীকৃষ্ণ (অস্য সানৌ) এই কালিয়নাগের মস্তকে অর্থাৎ ফণার উপর (বজ্রং অঙ্ঘ ন) স্বীয় পদাঙ্করূপ বজ্র প্রহার করলেন --- (বৃত্ত) জলপ্রবাহ রোধকারী কালিয়-- (পুরুত্রা ব্যস্তঃ) বহুপ্রকারে সন্তাড়িত ও নিরন্ত হইয়া (অশয়ৎ) শয়ন করিল অর্থাৎ নিরুদ্যম হইয়া পড়িল " (মন্ত্রভাগবতঃ বৃন্দাবন কান্ড, মন্ত্র সংখ্যা ৪)
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?
সমীক্ষাঃ মন্ত্রে " বৃত্ত" শব্দটিকে "কালীয় নাগ" জ্ঞান করে করে নীলকন্ঠ জী সবাইকে ভ্রমে পতিত করেছেন। নিঘন্টুকার যাস্ক বৃত্ত শব্দের অর্থ করেছেন "মেঘ" (বৃত্ত ইতি মেঘস্য নাম; নিঘন্টু ১।১০)। এবং ইন্দ্র এস্থলে সূর্য (অথঃ যঃ স ইন্দ্রোহসৌ স আদিত্য ; শতঃ ৮।৫।৩।২)। মন্ত্রটিতে মেঘ এবং সূর্যের যুদ্ধ ইন্দ্র এবং বৃত্তের রূপকালঙ্কারে বর্ণনা করা হয়েছে। পদার্থঃ হে সব সেনার স্বামী! আপনি (বৃত্তঃ) যেমন মেঘ (বৃষ্ণঃ) বীর্য সেচনকারী পুরুষ কে (প্রতিমানম্) সমানতা কে (বুভূষন্) প্রার্থনা করে (বধ্রিঃ) নির্বল নপুংসকের সমান যেই (ইন্দ্রম্) সূর্যলোকের প্রতি (অপৃতন্যত্) যুদ্ধের জন্য ইচ্ছাকারীর সমান (অস্য) এই মেঘের (সানৌ অধি) পর্বতের শিখরের সমান মেঘের উপর সূর্যলোক (বজ্রম্) নিজ কিরণ রুপী বজ্র কে (আ জঘান) নিক্ষেপ করেন, তাহা দ্বারা মৃত মেঘ (অপাদহস্তঃ) হস্ত পদ কাটা মানুষের ন্যায় (ব্যস্তঃ) অনেক প্রকারে ছড়িয়ে পড়ে (পুরুত্রা) অনেক স্থানে (অশয়ত্) শয়ন প্রদান করেন, এই প্রকার শত্রুকে ছিন্ন ভিন্ন করে সদা বিজয় লাভ করো। (ঋগবেদঃ ১।৩২।৭) যেমন তেজ ধারী সূর্য নিজ বজ্ররূপী কিরণ দ্বারা বৃত্ত বা মেঘকে নাশ করেন। এবং সেই মেঘ হস্ত পদহীনের ন্যায় পৃথিবীতে পতিত হন। তখন সে পৃথিবীতে শয়ন করেন অর্থাৎ ভূমিতে ছড়িয়ে থাকেন। এরূপ চমৎকার বৈজ্ঞানিক বর্ণনা মন্ত্রটিতে এসেছে। অথচ নীলকন্ঠ জী মন্ত্রটিকে কৃষ্ণ এবং কালীয় নাগের যুদ্ধ বানিয়ে মন্ত্রটিকে ভাগবত বাননোর অপচেষ্টা করেছেন। সায়ণ ভাষ্য: English Vashya 7 Footless and handless still he challenged Indra, who smote him with his bolt between the shoulders. Emasculate yet claiming manly vigour, thus Vṛtra lay with scattered limbs dissevered. ♦ গোপীদের বস্ত্রহরণ প্রসঙ্গ গৌরীর্মিমায় সলিলানি তক্ষত্যেকপদী দ্বিপদী সা চতুষ্পদী। অষ্টাপদী নবপদী বভূবুষী সহস্রাক্ষরা পরমে ব্যোমন্।। (ঋগবেদ ১।১৬৪।৪১) উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন - "(পরমে ব্যোমন্) যমুনার তীরবর্তী কদম্ব তরুর উচ্চ প্রদেশে অবস্থা করিয়া (গৌরীঃ) পতিকামনাপরা গোপঙ্গনিনা গণকে (মিমায়) এই বলিয়া নিন্দা করিতে লাগিলেন যে,তোমরা (সলিলানি তক্ষতী) নগ্নাবস্থায় তীর্থ জল স্পর্শ করিয়া ভালো করো নাই ---- যদি সেই দোষ পরিহারের নিমিত্ত ঈশ্বরের নিকট তোমাদের ইচ্ছা থাকে তাহা হইলে ঐ নগ্নবস্থাতেই তোমরা (একপদী দ্বিপদী, চতুষ্পদী, অষ্টপদী নবপদী ভবতঃ) জল হইতে তীর্থেন দিকে অগ্রসর হও --" (মন্ত্র ভাগবতঃ বৃন্দাবন কান্ড, মন্ত্র সংখ্যা ৩০)
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?
সমীক্ষাঃ মন্ত্রে "পরমে ব্যোমন " শব্দটির মূলার্থ হচ্ছে " পরম আকাশ" সেটাকে " কদম গাছ" বলে কল্পনা করা কত বড় মূর্খামী সেটা আপনারাই বিচার করুন। সেখানে আবার তিনি যমুনার জল এবং গোপীগণকেও খুজে পেয়েছেন। এবং সেসব গোপীদের বস্ত্র চুরি করিয়েছেন। মন্ত্রের এমন অর্থ ভবিষ্যতে হবে জানলে ঋষিগণ লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখতেন। প্রাচীন মহর্ষি নিরুক্তাকার যাস্ক মন্ত্রটির অর্থ এই প্রকার করেছেন - " গৌ রীর্নির্মিমায় সলিলানি তক্ষতী কুর্বত্যেকপদী মধ্যমেন, দ্বিপদী মধ্যমেন বাদিত্যেন চাদিত্যেন চ, চতুষ্পদী দিগ্ভিরষ্টাপদী দিগ্ভিশ্বাবান্তরদিগ্ভিশ্চ, নবপদী দিগ্ভিশ্বাবান্তরাদিগ্ভিশ্বাদিত্যেন চ, সহস্রাক্ষরা বহুদকা পরমে ব্যবনে" (নিরুক্ত ১১।৪০) পদার্থঃ (গৌরী মিমায়) ধ্বনিকারক বাণী বিদ্যুৎ (সলিলানি) জল কে (তক্ষতি) উৎপন্ন করে, তাহা (একপদী) [মেঘরূপ এক আশ্রয়ে স্থিতির জন্য] একপদী (দ্বিপদী) [মেঘ এবং বায়ুর আশ্রিতের জন্য ] দ্বিপদী (চতুষ্পদী) [চারি দিশায় ব্যাপক হওয়ার কারনে] চতুষ্পদী (অষ্টাপদী) [ চারিদিশা এবং উপদিশায় ব্যাপক হওয়ার কারনে] অষ্টাপদী (নবপদী) [উপরের উর্ধ্ব দিশায় ব্যাপক হওয়ার কারনে ] নবপদী (বভূবুষী) হয়ে (সহস্রাক্ষরা) সহস্র প্রকারে জলপ্রস্রবন করে (পরমে ব্যোমন্) পরম আকাশে চমকাতে থাকে। (ঋগবেদ ১।১৬৪।৪১) সায়ণ ভাষ্য:
মন্ত্রটিতে আকাশে বিদ্যুৎ শব্দ করে যে বৃষ্টির উৎপন্ন করে তারই বর্ণনা এসেছে। অথচ নীলকন্ঠ জী সেখানে গোপীদের যমুনা নদীতে নগ্ন হয়ে স্নান তথা বস্ত্র চুরি ইত্যাদির মনোকল্পিত ব্যাখ্যা করেছেন। ♦ শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা প্রসঙ্গ সেনেব সৃষ্টামং দধাত্যস্তুর্ন দিদ্যুত্বেষপ্রতীকা। যমো হ জাতো যমো জনিত্বং জারঃ কনীনাং পতির্জনীনাম্।। (ঋগবেদ ১।৬৬।৪) উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন - " ভগবান শ্রীকৃষ্ণই (যমঃ) অগ্নিরূপ অন্তর্যামী........... এবং তিনিই (কনীনাং) কণ্যাগণের অর্থাৎ বজাঙ্গনাগনের (জার) উপপতি এবং (জনীনাং) ব্রজ যুবতীগণের অথবা দ্বারকাদি ধামে মহিষীগণের (পতি) স্বামীরূপে যেমন তাহাদের হৃদয়ে (অমং দধাতি) সুখ বিধান করিয়া থাকেন। সেইরূপ কন্যা ও যুবতী গণও তাহাদের সেই জার ও পতির হৃদয়ে সুখের অমৃতধারা বহাইয়া থাকেন। " (মন্ত্র ভাগবতঃ বৃন্দাবন কান্ড, মন্ত্র সংখ্যা ৩২)
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?
সমীক্ষাঃ মন্ত্রে নীলকন্ঠ জী শ্রীকৃষ্ণের কণ্যাগনের অর্থাৎ ব্রজাঙ্গনাদের (জার) উপপতি রূপে কল্পনা করেছেন। নিরুক্ত ১।১৬ তে আদিত্য অর্থাৎ সূর্যকে জার বলা হয়েছে " আদিত্যহত্রজার উচ্যতে, রাত্রের্জরয়িতা "। অর্থাৎ সূর্য রাত্রীর জীর্ণকারী বলে রাত্রীর জার। ঋগবেদ ১।১২৭।৮ এ রাত্রিকে "দিব দুহিত" রাত্রীর কণ্যা রূপে বর্ননা করা হয়েছে। অর্থাৎ সূর্যের উদয়ে রাত্রি ক্ষীণ হয়ে যায় এজন্য এ মন্ত্রে কণ্যাবত রাত্রীর জার আদিত্যের বর্ণনা করা হয়েছে। পদার্থঃ হে মনুষ্যো! তোমরা যে সেনাপতি (যমঃ) নিয়মকারী (জাতঃ) প্রকট (যমঃ) সর্বদা নিয়ম কর্তা (জনিত্বম্) জন্মাদি কারণযুক্ত (কনীনাম্) কন্যাবত্ বর্তমান রাত্রির (জারঃ) আয়ুর হননকর্তা সূর্যের সমান (জননীনাম্) উৎপন্ন প্রজার (পতি) পালনকর্তা (সৃষ্টা) প্রেরিত (সেনেব) উত্তম শিক্ষা কে প্রাপ্ত বীর পুরুষের বিজয় কারী সেনার সমান (অস্তুঃ) শত্রুর উপর অস্ত্র শস্ত্র চালনকারী (ত্বেষপ্রতীকা) দীপ্তির প্রতীতি কারী (দিদ্যুত্ত) বিজুলীর সমান (অমম্) অপরিপক্ব বিজ্ঞানযুক্ত জনকে (দধাতি) ধারন করেন, তাহার সেবন করো। (ঋগবেদ ১।৬৬।৪) সায়ণ ভাষ্য: English Vashya 4 He strikes with terror like a dart shot forth, e’en like an archer's arrow tipped with flame; Master of present and of future life, the maidens’ lover and the matrons’ Lord. অতএব নীল কন্ঠ জীর মন্ত্রে রাসলীলার বর্ননা খোজা কতটা কতটা যৌক্তিক আর সমীচিন হতে পারে? ♦ কংস বধ প্রসঙ্গ ইন্দ্রো বিশ্বৈবীর্যৈঃ পত্যমান উভে আ প্রপৌ রোদসী মহিত্বা। পুরংদরো বৃত্তহা ধৃষ্ণুষেণঃ সংগৃভ্যা ন আ ভরা ভূরি পশ্চঃ।।১৫।। (ঋগবেদ ৩।৫৪।১৫) উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন - "(ইন্দ্রঃ) শ্রীকৃষ্ণ (বিশ্বৈবীর্যে) সমস্ত বলের সহিত (পত্যমানং) পতিত হইয়া অর্থাৎ রঙ্গমঞ্চ হইতে ভূতলে নিপাতিত কংসের উপর পতিত হইয়া (মহিত্বা) মহত্বের দ্বারা (উভে রোদসী) অন্তরিক্ষ ও পৃথিবীমন্ডল (আপপ্রৌ) পূর্ণ করিলেন অর্থাৎ স্বীয় অন্তর্গত ত্রিলোকের ভার তাহার উপর নিক্ষিপ্ত করিলেন। " (মন্ত্র ভাগবতঃ মথুরা কান্ড, মন্ত্র সংখ্যা ২)
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?

সমীক্ষাঃ নীলকন্ঠ জী অত্যন্ত চতুরতার সহিত বেদ মন্ত্রটিকে ব্যবহার করেছেন। পূর্বের কালীয় নাগ দমন প্রসঙ্গে তিনি "বৃত্ত" অর্থ কালীয় নাগ করেছিলেন। এ স্থলে তিনি "বৃত্ত" অর্থ কংস করেছেন। অর্থাৎ ভাগবতের সাথে মিল করানোর জন্য তিনি প্রতিটা শব্দকে তিনি সুবিধামত অর্থ গ্রহন করে অনুবাদ করেছেন। প্রাচীন কোন বেদ ভাষ্যকারদের মধ্যে এরূপ কোন ভাষ্য দেখা যায় না যারা বেদের মধ্যে ভাগবত কে খুজে পেয়েছেন। মন্ত্রটিতে বৃত্ত হন্তার উপমা দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন বৈদিক কোষ নিঘন্টুতে বৃত্ত ইতি মেঘস্য নাম; নিঘন্টু ১।১০। অর্থাৎ মেঘের হন্তা সূর্যকে বলা হয়েছে - পদার্থঃ হে রাজন! যে (বৃত্তহা) মেঘের নাশকারী সূর্যের সদৃশ (পুরন্দরঃ) শত্রুর নগরীর নাশ কারী (পত্যমানঃ) স্বামীর সদৃশ আচরন করে (ধৃষ্ণুসেনঃ) দৃঢ সেনা এবং (ইন্দ্রঃ) অত্যন্ত ঐশ্বর্যযুক্ত রাজা আপনি (বিশ্বৈঃ) সম্পূর্ণ (বীর্যৈঃ) পরাক্রম দ্বারা (মহিত্বা) মহিমা দ্বারা (উভে) উভয় (রোদসী) ন্যায় এবং ভূমির রাজ্য কে (আ প্রপৌ) ব্যপ্ত করে, আপনি (ভূরি) অনেক (নঃ) আমাদের এবং (পশ্চঃ) পশুদের (সংগৃভ্য) উত্তম প্রকারে গ্রহন করে (আ, ভর) সব প্রকার পোষণ করুন।। ভাবার্থঃ যেমন ভূমি এবং সূর্য সব পদার্থের ধারণ এবং উত্তম প্রকার পোষণ করে বৃদ্ধি করে, ওইরূপই রাজা আদি অধ্যক্ষ্য সমস্ত উত্তম গুণের ধারণ, প্রজার পোষ্ণ, সেনার বৃদ্ধি এবং শত্রুর নাশ করে প্রজার বৃদ্ধি করবে। সায়ণ ভাষ্য:
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর ?
আমরা নীলকন্ঠ সুরি রচিত মন্ত্রভাগবত হতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রের উপস্থানপন এবং সেগুলোর সমীক্ষা করে দেখিয়েছি বেদের বর্ননা কোন ঐতিহাসিক চরিত্রের নয়। বরং বেদের বর্ননা নিত্য সত্য জ্ঞানের। পাঠকগণ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন নীলকন্ঠ সুরি জী কতটা চতুরতার সহিত বেদের মন্ত্রগুলোকে ভাগবতের সাথে মিল করানোর চেষ্টা করেছেন।


শ্রীকৃষ্ণের চিন্ময় শরীর: একটি সমীক্ষা 

বৈষ্ণবরা বলেন যে, শ্রীকৃষ্ণের শরীর জড় শরীর নয় তা অপ্রাকৃত বা চিন্ময়!!
এবং শ্রীকৃষ্ণ সশরীরে অর্থাৎ দেহত্যাগ না করে,গোলোক বৃন্দাবনে গমন করেছেন !!
অথচ, মহাভারত ও ভাগবত থেকে শ্রীকৃষ্ণের মৃতদেহ দাহ ও নাড়ী-কাটার প্রমাণ পাওয়া যায়!!
শ্রীকৃষ্ণের মৃত শরীর দাহ
ततः शरीरे रामस्य वासुदेवस्य चोभयोः।।
अन्विष्य दाहयामास पुरुषैराप्तकारिभिः।।३१।।
{ততঃ শরীরে রামস্য বাসুদেবস্য চোভয়োঃ।
অন্বিষ্য দাহয়ামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।।31।।}
অনুবাদ _তারপর,অর্জুন
বিশ্বস্ত পুরুষদের দ্বারা বাসুদেবের
পুত্র'দ্বয় বলরাম এবং শ্রীকৃষ্ণের মৃত দেহ খুঁজে পেয়ে তাদের দাহ সংস্কার করলেন।
स तेषां विधिवत् कृत्वा प्रेतकार्याणि पाण्डवः ।
सप्तमे दिवसे प्रायाद् रथमारुह्य सत्वरः ।। ३२।।
{স তেষাং বিধিবত্ কৃত্বা প্রেতকার্য়াণি পাণ্ডবঃ।
সপ্তমে দিবসে প্রায়াদ্ রথমারুহ্য সত্বরঃ।।32।।}
অনুবাদ _পাণ্ডুর ছেলে অর্জুন,
ওই মৃত সকলের [বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ আদি যদুবংশের মৃত ব্যক্তিদের] প্রেতকর্ম বিধি পূর্বক সম্পূর্ণ করে সাত দিন পর রথে করে দ্বারকা থেকে চলে যান।
•গ্ৰন্থ-সূত্র_মহাভারত_
মৌষলপর্ব_সপ্তম অধ্যায়_
শ্লোক_ 31,32
অনুবাদক_রামনারায়ণ দত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডে
প্রকাশক_গীতা প্রেস

শ্রীকৃষ্ণের নাড়ী কাটা ও জাতকর্ম

বৈষ্ণবরা বলেন যে, কারাগারে শ্রীকৃষ্ণ অবতরণ করেছেন অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্ৰহণ করেননি।
গীতা_4/6-7-8তে
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,আমার জন্ম মৃত্যু নেই কিন্তু যোগমায়ার দ্বারা শরীর ধারণ করে আবির্ভূত হই!!
ভাগবত পুরাণের,10.5.2 শ্লোকের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে 277 পৃষ্ঠায় প্রভুপাদ বলেছেন যে,
যখন নবজাত শিশুর নাড়ীচ্ছেদ করা হয় তখন জাতকর্ম অনুষ্ঠিত হয়।
যদিও কারাগারে বসুদেব কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের নাড়ী কাটলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, নন্দ মহারাজ শ্রীকৃষ্ণের জাতকর্মের অনুষ্ঠান করেছিলেন অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কোনো অপ্রাকৃত বিষয় নয় তা স্বাভাবিক ও প্রাকৃত বিষয় এই তথ্য নন্দ মহারাজ বসুদেবের কাছে পেয়েছিলেন!
অথবা,এই সম্ভাবনাও অঙ্কুরিত হয় যে, শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃতপক্ষে যশোদা ও নন্দ মহারাজের সন্তান বসুদেব ও দেবকীর সন্তান নয়!!
ভাগবত পুরাণের প্রমাণ দেখুন:-
বাচয়িত্বা স্বস্ত্যয়নং জাতকর্মাত্মজস্য বৈ।
কারয়ামাস বিধিবৎ পিতৃদেবার্চনং তথা।।
•ভাগবত পুরাণ
স্কন্ধ_10_অধ্যায়_5_শ্লোক_2
অনুবাদ_ ব্রাহ্মণদের দ্বারা স্বস্তিবাচন করিয়ে নন্দ মহারাজ যথাবিধি পুত্রের জাতকর্ম সম্পাদন করিয়েছিলেন,
এবং দেবতা ও পিতৃপুরুষদের পূজার আয়োজনও করেছিলেন।
বিশ্লেষণ _দেহধারী জীবের জন্ম ও মৃত্যু আছে।
জীবের দেহ গঠিত হয় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে আবার মৃত্যুতে সেই উপাদানগুলো প্রকৃতিতেই বিলীন হয়ে যায়।
ঋগ্বেদ_1.164.20 মন্ত্র প্রমাণ থেকে আমরা জানি যে, ঈশ্বর, জীবাত্মা ও প্রকৃতি অনাদি।
জীবাত্মা চিন্ময় হলেও শরীর চিন্ময় হয় না সুতরাং, শরীর'ধারী জীব মাত্রেই মৃত্যুর অধীন।
অপরদিকে,যজুর্বেদ_40.8 এর মন্ত্র প্রমাণ থেকে আমরা জানি যে, ঈশ্বর শরীর ধারণ করেন না।
ঈশ্বর শরীর ধারণ করলে,তাঁর ঈশ্বরত্ব লোপ পাবে কারণ শরীর ধারণ করতে হলে প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা সেই শরীর প্রস্তুত হবে এবং ঈশ্বর মৃত্যুর অধীন হয়ে যাবেন এবং ঈশ্বর সর্বব্যাপক থাকবেন না!!!
সুতরাং, ঈশ্বর জন্ম গ্ৰহণ করেন না।
শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্ৰহণ করেছিলেন, বসুদেব ও দেবকীর যৌনমিলনের ফলে অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে, জড় দেহ ধারণ করেই।
সুতরাং, শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নন।
শ্রীকৃষ্ণের নাড়ী কাটা হয়েছিল এবং তাঁর মৃতদেহ আগুনে পোড়ানো হয়েছিল সুতরাং শ্রীকৃষ্ণের দেহ, ভৌতিক দেহ মাত্র, চিন্ময় নয়।
ঈশ্বর পুরুষ বা নারী!
ঈশ্বর জন্ম গ্ৰহণ করেন!
ঈশ্বর বিবাহ করেন!
ঈশ্বর যৌনমিলন করেন!
ঈশ্বরের ছেলে-মেয়ে হয়!
ঈশ্বর,শুয়োর,মাছ,কচ্ছপ আদি রূপ ধারণ করেন!
ঈশ্বর সম্পর্কে এই ধরণের বিশ্বাস ও ভাবনা হল,বেদ না জানার ফল।
বৈষ্ণব প্রভুদের কাছে আমার প্রশ্ন হল যে, শ্রীকৃষ্ণের বীর্য চিন্ময় না ভৌতিক?
যদি চিন্ময় হয়,তাহলে সেই বীর্য থেকে উৎপন্ন শ্রীকৃষ্ণের ছেলে মেয়েদের আপনারা ঈশ্বর'রূপে পুজো করেন না কেনো?
কারণ,শুয়োরের সন্তান শুয়োর হয়।
মানুষের সন্তান মানুষ হয়।
তাহলে, ঈশ্বরের সন্তান ঈশ্বর নন কেনো?!!
আর, ঈশ্বরের বাবা মা বসুদেব ও দেবকী ঈশ্বর নন কেনো?!!

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাগ বিষয়ে ঋষি ব্যাসের লেখা মহাভারতে বর্ণনা রয়েছে,
মহাভারত অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এক বনে সমাধিতে ছিলেন সেই সময় জরানামক এক ব্যাধ মৃগ হত্যা করার জন্য সেখানে আসেন এবং শ্রীকৃষ্ণ কে মৃগ মনে করে বাণ মেরে দেন, যার হেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয় [ সংক্ষিপ্ত রূপে তুলে ধরা হলো]।
.
[মহাভারত,মৌসলপর্ব, চতুর্থ অধ্যায় ১২, ২২,২৩,২৪ শ্লোক। গীতা প্রেস, অনুবাদক- রামনারায়ণদত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডেয়, হিন্দি]

অর্জুন যদু বংশের অন্যান্য মৃত ব্যক্তিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করেন__
ততঃ শরীরে রামস্য বাসুদেবস্য চোভয়োঃ।
অন্বিষ্য দাহয়ামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।।৩১।।
.
তারপর বিশ্বস্ত পুরুষদের দ্বারা বাসুদেবনন্দন বলরাম এবং শ্রীকৃষ্ণের দেহ খুঁজে পেয়ে অর্জুন তাদের দাহ সংস্কার করেন।
স তেষাং বিধিবত্ কৃত্বা প্রেতকার্য়াণি পাণ্ডবঃ।
সপ্তমে দিবসে প্রায়াদ্ রথমারুহ্য সত্বরঃ।।৩২।।
.
পাণ্ডুনন্দন অর্জুন ওই সকলের [বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ আদি যদুবংশের মৃত ব্যক্তিদের] প্রেতকর্ম বিধি পূর্বক সম্পূর্ণ করে সাত দিন পর রথে করে দ্বারকা থেকে চলে যান।
.
[মহাভারত, মৌসলপর্ব, সপ্তম অধ্যায়, ৩১,৩২ শ্লোক। অনুবাদক-রামনারায়ণদত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডেয়, হিন্দি]

যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী।
অতএব অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় তোমার শোক করা উচিত নয়।
.জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।-গীতা: ২/২৭

ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কিত ৫০টি গ্রন্থ:-👇

শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাবের প্রাককালীন বর্ণনা (স্বামী সমর্পনানন্দ) - ১৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1xG.../view...
শ্রীশ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম (শ্রী নরোত্তম দাস) - ৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1sCmdlOLJKAYiRXNmcfb.../view...
মহাভারত (কালীপ্রসন্নসিংহ) - ৮৯ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1FjTC8H2ClFyPsV0zr5O.../view...
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (গিরীন্দ্রশেখর বসু) - ৩৮ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/f6LCZRsQob
শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা [মূল, সংক্ষিপ্ত] (অনিলবরণ রায়) - ৯৭ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/hRGDZCD2xFSa5uPBYZzhh3W63jgS
শ্রী অরবিন্দের গীতা (অনিলবরণ রায়) - ৩৬ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/abU3mFGFqN
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ) - ২০ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/9eEkkAaUjc
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (জগদীশ্বরানন্দ) - ২২ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/33YE3hc8O4
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা রহস্য (বাল গঙ্গাধর তিলক) - ৫৪ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/acIfbZPWuo
শ্রীশ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (বলদেব বিদ্যাভূষন) - ১৭৯ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/43G7fzOlFT
শ্রী গীতা (জগদীশচন্দ্র ঘোষ) - ৩৩ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/a3ZgqbhDyL
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (সুরধূণী দেবী) - ৬৬ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/42LquS9WHX
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও বিশ্বজনীন বার্তা (স্বামী রঙ্গনাথানন্দ) - ৫২ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/a3WTwEItvj
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, গূঢ়ার্থদীপিকা (মধুসূদন সরস্বতী) - ১২২ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/7fL8i2VtzT
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (রাজেন্দ্রনাথ ঘোষ) - ১১ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/fbCXa53TjB
শ্রীশ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (স্বামী অদ্বৈতানন্দ) - ৮৪ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/2cxJ3bjdcb
যথার্থ গীতা (স্বামী অড়গড়ানন্দ) - ৪ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/36x2ygRAGk
গীতা কথা [সরল গদ্য] (যোগেশানন্দ সরস্বতী) - ৭ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/93kzLBfSwS
অধ্যাত্ম সাধনা কর্মহীনতা নয় - ১০ মেগাবাইট। https://icedrive.net/s/50gLI46ibZ
গীতায় সমাজদর্শন (শ্রী ত্রিপুরাশঙ্কর শাস্ত্রী) - ১০ মেগাবাইট।
ভাগবত পুরাণ (গীতাপ্রেস) - ২টি ফাইল, প্রতিটি ৯০ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1e2Flys5ffxm9BhoQOV-C...
শ্রীমদ্ভগবতম্ (শ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী) - ১২টি ফাইল, প্রতিটি ৫০+- মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1_6vVqqnXUOsc9GDgayL...
বিষ্ণুপুরাণ (পঞ্চানন তর্করত্ন) - ৩৯ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../133gP2hdHQ5LArcARBf7.../view...
উপনিষদ্ ও শ্রীকৃষ্ণ (মহানামব্রত ব্রহ্মচারী) - ১১ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1GHmoc.../view...
ঐতিহাসিক মহামানব শ্রীকৃষ্ণ (শ্রীসাহাজী) - ১ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1Om8IsDzP7Lf1MDna0QA.../view...
কৃষ্ণচরিত্র (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) - ৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1W9de5ery9RrxGmm6LLo.../view...
কৃষ্ণচরিত্র [কিশোর-কিশোরীদের পাঠোপযোগী সংক্ষেপিত সংস্করণ] (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) - ৭ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1aNMIBbXz9eAKPHm41GU.../view...
কৃষ্ণের আহ্বান - ২ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1qsBTXEk5fA7odot4BPs.../view...
গোবিন্দ লীলামৃত (যদুনন্দন দাস) - ৬ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1tNJYPPSYvyaYkyM.../view...
পুরাণের কৃষ্ণ (রাম আর্য) - ২৪ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1P2DTGgv9kHtK8m6FVz8.../view...
বালক শ্রীকৃষ্ণ (রেবতী মোহন সেন) - ৬ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../164ojIEf2Q07UVFFJbJE.../view...
ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণ (সুধা বসু) - ২৫ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../17rKqQTB5lLfxDt.../view...
যদুবংশ, ব্রজপর্ব (বীরেন্দ্র মিত্র) - ১৫ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1qpjFSTOC6pPj4M5sWHT.../view...
যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (উমাকান্ত উপাধ্যায়) - ৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1ZcBRid2aCqwT8ovH39L.../view...
রণে ও রাজনীতিতে শ্রীকৃষ্ণ (সঞ্জীব ভট্রাচার্য) - ১৪ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1aP2qmwkxxCz2GS7Mv7g.../view...
রাধাতত্ত্ব ও রাসলীলা (শশিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) - ৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1WheOyWDnwlTVklK02yk.../view...
রাস লীলার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য - ৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1zOhAtvo1aVL7eIp9v2p.../view...
রাসলীলা (হীরেব্দ্রনাথ বেদান্তরত্ন) - ৭ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1qQNW3JQ5K8avK3elEKI.../view...
শ্রী কৃষ্ণ ও ভারতের ইতিহাস (শ্রী বিবেকানন্দ চৌধুরী) - https://drive.google.com/.../10ndspKu5LaEisNl3qEc.../view...
শ্রী কৃষ্ণ বা সার্বভৌমিক ধর্ম (বসন্ত মল্লিক) - ২০ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1_M2PHBk8yp0FqvE2jL9.../view...
শ্রী কৃষ্ণ-মাধুরী (রসিকমোহন বিদ্যাভূষণ) - ১৫ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1XgWgHEC.../view...
শ্রী কৃষ্ণের শেষ কটা দিন (সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়) - ১৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1jLcQ9RWQchS_8UberBf.../view...
শ্রী শ্রী রাসলীলা ও পদাঙ্ক দুত (দুর্গাদাস ঘোষ) - ৬ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1mBXbdCzSxEHFlF2Mw6K.../view...
শ্রীকৃষ্ণ ২ (গৌরচন্দ্র সাহা) - ৮ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../11vhwQPpidWL9yGU3tj5.../view...
শ্রীকৃষ্ণ অবতার (হারাধন মুখোপাধ্যায়) - ৭ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1LPJZ_w2GBOhizomU.../view...
শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত ধর্ম (জগদীশচন্দ্র ঘোষ) - ২৯ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1dSc_ftj62VSwWDQ.../view...
শ্রীকৃষ্ণ ও ভারত ইতিহাস (শ্রীবিবেকানন্দ চৌধুরী) - ১২ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../19.../view...
শ্রীকৃষ্ণ-৪ (গৌরচন্দ্র সাহা সাহিত্য বিশারদ) - ১৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1iMkLRQ5jCLzuRbSUrhT.../view...
শ্রীকৃষ্ণলীলা রহস্য (নবীন কৃষ্ণ লাহা) - ১০ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../13ffFpd40DH4ef4Ld.../view...
রাসলীলা আলেচনা (স্বামী সমর্পনানন্দ) - ৩ মেগাবাইট। https://drive.google.com/.../1ZEd6YNkDBf.../view...

2 comments:

  1. 70 শ্লোকের গীতা কোথায় পাবো?

    ReplyDelete
  2. কৃষ্ণকে লীলাধরও বলা হয়। তার বাক্য বোঝার জন্য শ্রদ্ধা ও ভক্তি আবশ্যক। যে অনুগিতার প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে সেখানে কৃষ্ণ এই জন্য বলেছিলেন "যে আমি আর সেই জ্ঞান প্রদান করতে পারবোনা" কারণ অর্জুনের হৃদয়ে সেই শ্রদ্ধা তিনি আর পুনরায় দেখতে পাননি। এই কথাটাও ওই অনুগীতা তেই লেখা আছে । এই নয় যে তিনি জানতেন না । বার বার একই জ্ঞান বিনা শ্রদ্ধায় প্রদান করতে থাকলে অমূল্য জ্ঞান খুবই সস্তার মনে হয়। যেমন:- প্রায় সবার ঘরেই গীতা থাকে কিন্তু পরে আর কয়জন? এমনকি ভগবৎ গীতাতেই অন্তিম অধ্যায় কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন এই জ্ঞান আর অন্য শ্রদ্ধা হীন ব্যক্তিকে সহজে না বলতে। আর মনে রাখা উচিৎ কৃষ্ণ পরমাত্মা কিনা সেটা কৃষ্ণের দেহ দেখে নয় তার আত্মার স্তর দেখে বোঝা উচিত কারণ কৃষ্ণ নিজেই দেহ কে নস্বর বলেছে। গীতার অধ্যায় 4 এর 1 থেকে 8 শ্লোক পড়লে সহজেই এই বিষয়টি বোঝা যাবে।

    ReplyDelete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ঋগ্বেদ ১/৯০/৯

  ওম্ শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ শং নো ভবত্বর্যমা। শং ন ইন্দ্রো বৃহস্পতিঃ শং নো বিষ্ণুরুরুক্রমঃ॥ ঋগ্বেদ ১।৯০।৯॥ - হে সচ্চিদানন্দানন্তস্বরূপ, হে ন...

Post Top Ad

ধন্যবাদ